প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৭
জান্নাত নুসরাত
আজকের দিনের শুরুটা খিটখিটে মেজাজ দিয়ে শুরু হয়েছে জায়িনের। মুখ কেমন ভার করে বসে আছে ড্রয়িং রুমের সোফার মধ্যে। চুল হাতের মুঠোয় পুরে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে। জায়িন কে অতিরিক্ত চুপচাপ দেখে লিপি বেগম এসে পাশে বসলেন। পিঠে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বাবা শরীর খারাপ করেছে ? কাজে যাবি না?
জায়িনের সোজাসাপ্টা উত্তর,
” না আম্মু!
“কিছু খাবি?
“এই মুহুর্তে ব্ল্যাক কফি দিলে বেশি ভালো হয়।
“আচ্ছা, তুই রুমে গিয়ে রেস্ট কর আমি কফি নিয়ে আসছি।
জায়িন রুমে যাওয়ার জন্য সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে উঠলো। সোফার হাতল এক হাত দিয়ে চেপে ধরে নিজেকে সামলালো। চোখের সামনে সবকিছু তিনটা করে ভাসলো। ধুম করে সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিল। যখন স্থির হলো, তখন উঠে হাঁটা ধরলো নিজের রুমের দিকে।
“আপনাদের স্যার টো দেখছি সময়ের বিষয়ে একটু ও পাঞ্চুয়াল না। মিটিং হওয়ার কঠা ছিল সকাল ১০:০০ টায়, এখন বাজছে ১০:০৫। আপনাদের স্যার কোথায়?
মেয়েটার কথা শেষ হওয়ার পূর্বে কনফারেন্স রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো সুঠাম দেহের অধিকারী সুদর্শন পুরুষ। কালো রঙের কোট কালো রঙের প্যান্ট পুরুষটার সৌন্দর্যের পরিমাণ আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।
” আই এম সো স্যারি, মিস ডেলা আমান।
হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বলল পুরুষ টা, “সেভেন মিনিট লেইট। এগেইন স্যরি!
“ইট’স ওকেই মিস্টার আরশ।
” তাহলে শুরু করা যাক।
“ইয়াহ সিউর!
নিজেদের মধ্যে কথা বলা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো কনফারেন্স রুম থেকে বের হওয়ার জন্য। দরজার কাছে গিয়ে আরশ এক হাত দিয়ে সামনের দিকে ডেলা কে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। ডেলা সামান্য হেসে সামনের দিকে চলে গেল। কনফারেন্স রুম থেকে বের হওয়ার পর আরশ এবং ডেলা এক সাথে হেঁটে যাচ্ছিল।
” আই এম ইমপ্রেস অন ইউ মিস্টার আরশ।
আরশ সৌজন্যতা রক্ষাতে হালকা হেসে ধন্যবাদ জানালো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
জায়ান চুপচাপ শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে এই ফ্যান যদি খুলে ঠাস করে তার উপর পড়ে যায় তাহলে তার মুখ ফেটে গিয়ে দেখতে কি রকম হবে? ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে জায়ান নিজের চিন্তাভাবনা দু দিকে ঝেড়ে ফেলে বিছানা হাতড়ে মোবাইল হাতে নিল। সেইভ নাম্বারে যখন নাম লেখা দেখলো ইনায়া তখন নাক মুখ কুঁচকে রইলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “এই শাকচুন্নি এখন আমাকে কল দিচ্ছে কেন?
রিং বাজতে বাজতে কল টা কেটে গেল।
“যার প্রয়োজন সে কল দিবে বলে ফোন রাখতে যাবে এর মধ্যে আবার কল আসলো।
ফোনটা কানে লাগিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
“হ্যালো!
মিহি সুরে ইনায়া বলল,
” বাবু কল ধরছো না কেন? রাগ করেছ?
জায়ান অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকলো। মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,”আজ এ এতো ভালো করে কথা বলছে কেন?
” বাবু কি বলছ?
” না কিছু না।
” একটা ভিডিও কল দাও?
” এখন বাবু?
” হুম!
” একটু পর কল দিবে দেই?
” না এক্ষুণি দিবে তুমি কল। এতো তামাশা করার কি আছে?
জায়ান বিড়বিড় করে বলল,
” এই তো আসল রুপ বের হয়ে আসছে। এতোক্ষণ নাটক করছিল কেন শালী?
” বাবু কিছু বলছো?
” না জান কিছুই বলিনি।
” তাহলে কলে আসো!
” হুম!
কাঁদো কাঁদো মুখ করে জায়ান ভিডিও কলে গেল। নিজ মনে হাজারটা গালি দিল ইনায়া কে সাথে নিজেকেও গালি দিল। কেন যে গিয়েছিল এর সাথে রিলেশনে? আবার নিজেই উত্তর দিল,”আল্লাহ ভালো জানে!
ভার্সিটি থেকে আসার পর শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে নুসরাত। শরীরে কোন শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না? এমনি বিছানার মধ্যে শুয়ে চিৎকার করছিল।যখন দেখল, চিৎকার শুনেও কেউ আসছে না, তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিকট শব্দে আম্মা বলে চিৎকার করল। নাজমিন বেগম নিচ থেকে সেই চিৎকার শুনলেন, একবার উপরে তাকিয়ে দেখলেন, তারপর আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন।
লিপি বেগম বললেন,
“নাজমিন যাচ্ছিস না কেন? মেয়েটা তোকে ডাকছে?
“ভাবি এমনি ডাকছে! ওসবে পাত্তা দিও না।
“যাস না গিয়ে দেখ, দেখবি কোনো দরকারে ডাকছে?
রুহিনি কথার মধ্যে ফোড়ন কেটে বলল,
” গিয়ে দেখো বড় ভাবি, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! চোখের ডার্ক সার্কেল দেখছে আর চিৎকার করছে। এটা প্রতি সপ্তাহে হয়। ভার্সিটি তে যেদিন যাবে সেদিন এরকম কান্ডকারখানা হবে এটা নিশ্চিত থাকবেন।
লিপি বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
“ওহ বলে!
নিচ তলা থেকে নুসরাতের চিৎকার শোনে কেউ না আসলে ও পাশের রুম থেকে আরশ দৌড়ে নুসরাতের রুমে আসলো। মনে করলো হয়তো কোন বিপদ হয়েছে। দরজার বাহির থেকে দেখলো নুসরাত কার্লি চুলগুলো মুখের সামনে এনে মুখ দিয়ে “হাউ হাউ শব্দ উচ্চারণ করছে। তারপর আবার সোজা হয়ে চুলগুলো সুন্দর ভাবে আঁচড়ালো। হাতের মুঠোয় চুল নিয়ে, চুল গুলো একবার এপাশে আরেকবার আরেকপাশে নিয়ে পোজ দিতে লাগলো। এখন অব্দি দরজার সামনে দাঁড়ানো আরশ কে খেয়াল করেনি নুসরাত।
” আমি তোর জিনের মতো চিৎকার শুনে মনে করলাম কি না কি বিপদ হয়েছে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুই নিজেই একটা বড় বিপদ?
নুসরাত হঠাৎ কথা বলার শব্দ শুনে হালকা কেঁপে উঠলো। দরজার দিকে তাকিয়ে যখন আরশ দেখলো তখন এক লাফে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব কি করছিলি?
মিনমিন করে উত্তর দিল নুসরাত,
” কিছু না।
“কিছু তো একটা করছিলি? আমি দেখেছি! বল কি করছিলি?
” আসলে,চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল হয়েছে কি না তাই দেখছিলাম!
“কোথায় আমি তো দেখতে পাচ্ছি না তোর ডার্ক সার্কেল? এদিকে আয়!
হাত দিয়ে ইশারা করলো নুসরাত কে আরশ। নুসরাত কে ঠায় হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমক দিল,
” এদিকে আসতে বলছি না?
ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসলো নুসরাত। আরশের সামনে দাঁড়াতেই ঠাস করে থাপ্পড় পড়ল গালে। থাপ্পড় খেয়ে নুসরাতের মুখ হা হয়ে গেল। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আরেকটা থাপ্পড় পড়ল গালে। থাপ্পড় খেয়ে শ্যামলা গালে পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে গেল। আরশের দিকে ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে রইল নুসরাত। আরশ সেসবে পাত্তা না দিয়ে বলল,
“প্রথম থাপ্পড় খেয়েছিস সেদিন আমার পিঠে থাপ্পড় মারার জন্য এবং দ্বিতীয় থাপ্পড় খেয়েছিস বড় ভাইয়ের সাথে বেয়াদবির জন্য।
নিজের কথা শেষ করে, নুসরাত কে কোনো কথা বলার
সুযোগ না দিয়ে চলে গেল নিজ রুমে আরশ। নুসরাত গালে এক হাত দিয়ে বিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ওই জায়গায়।
রাত ২:০০ কি ২:৩০? দু-তলা বিশিষ্ট বাড়িটি থেকে শোনা যাচ্ছে বড় বড় গাড়ি মেইন রোড দিয়ে যাওয়ার শব্দ। নিস্তব্ধ রাত, নিশাচর প্রানীর ঝিকঝিক শব্দ, ঝিঝি পোকার ঝিঝি শব্দ শোনা যাচ্ছে। সারা-বাড়ির লাইট অফ এই অন্ধকারের মধ্যে দু-তলার প্রথম রুমের দরজা খোলে গেল। রুম থেকে বের হয়ে আসলো নুসরাতের মাথা। চারিদিকে তাকিয়ে যখন বুঝলো বাহিরে কেউ নেই। ধীর পা আগালো আরশের রুমের দিকে। আরশের রুমে সতর্ক পায়ে প্রবেশ করলো। চুপচাপ আরশের বিছানা কাছে বসলো। হাত দিয়ে মুখের উপর নাড়া-চাড়া করে দেখলো আরশ জেগে আছে কি না?যখন কোনো নড়চড় দেখলো না তখন আরশের মুখে আস্তে করে দু-তিনটা থাপ্পড় মারলো। আরশের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া না দেখে ঠাস করে থাপ্পড় মারলো গালে। তখনি ধুম করে চোখ মেলে তাকালো আরশ। আরেকটা থাপ্পড় মারার জন্য তোলা হাত ঐভাবে তোলা রইলো। আরশকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকতে দেখে বিমূঢ় হয়ে গেল নুসরাত। নড়চড় করার শক্তি খুঁজে পেল না। নিজ মনে ভাবল “রেডি কর গাল, থাপ্পড় খাওয়ার জন্য। কে বলেছিল এরে থাপ্পড় মারার জন্য এতো রাতে আসার জন্য? আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও! আর কোনো দিন আমার সামনে বসে থাকে ব্যাক্তির সাথে পাঙ্গা নিব না। সুযোগ পেলে অবশ্যই নিব!
আরশ এক ভ্রু তুলে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।জিজ্ঞেস করল ” কি? এতো রাতে আমার রুমে কেন?
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬
“আসলে ভাইয়া…
কথা শেষ করার পূর্বেই ভেসে আসলো কর্কশ গলার শব্দ,
” বের হ!
নুসরাত বুঝলো না জিজ্ঞেস করলো,
“জি!
” আউট!
আবার জিজ্ঞেস করলো,
“হু।
” তোকে সোজা বাংলায় বলছি আমার রুম থেকে বের হ!
নুসরাত কে এক জায়গায় বসে থাকতে দেখে কর্কশ গলায় ধমক দিল আরশ,”আউট! আই সে গেট আউট ইডিয়েট!