প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৭ (২)
জান্নাত নুসরাত
আরশকে চারটার দিকে চেক-আউট করে বাসায় নিয়ে আসছে মাহাদি।ডাক্তারা একদিন রাখার কথা বললে ও আরশ জিদ করে চলে এসেছে, তার নাকি শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ডাক্তারের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছে এই বলে, সুস্থ স্বাভাবিক তার মতো এক ব্যক্তিকে অসুস্থ বলে শুইয়ে রাখছে!সব টাকা নেওয়ার ধান্দা..! পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে দেখে মাহাদি বহু কষ্টে হসপিটালের সকল ফর্মালিটি শেষ করে নিয়ে এসেছে আরশকে। হাতে তখনো স্যালাইন লাগানো ছিল।
লিপি বেগম আগে থেকে জানেন অতিরিক্ত টেন্সড হলে আরশের এমন শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তাই কোনোরকম অভার রিয়েক্ট করেননি,কিন্তু হেলাল সাহেব করেছেন। বলেছেন পন্ডিতি করে তাকে কে বলেছিল আগে ওখানে যাওয়ার জন্য। লাস্ট ফ্রান্স থাকতে এমন অবস্থা হয়েছিল আরশের। ভার্সিটির এক ছেলের সাথে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল বলে। ঝগড়া থেকে হাতাহাতিতে পৌঁছায়, তারপর একদম কেটে ফেলা মেরে ফেলার পর্যায়ে। ছেলেটা কী যেন বলেছিল, এজন্য রেগে বোম হয়ে নাক মুখ ফাটিয়ে ছিল ওই ছেলের। অতিরিক্ত টানা হেঁচড়া করায় হাপিয়ে উঠে, ফলে তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয় ইমেডিয়েটলি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দু-দিন হসপিটালে থাকার পর যখন বাসায় এসেছিল ততক্ষণে ছেলেটার পরিবার পুলিশ কেস করে ফেলেছে। অনেক কষ্টে তা নিজেদের উপর থেকে সরিয়েছেন হেলাল সাহেব আর জায়িন মিলে। বাড়িতে ফিরার পর থেকে নীরব আছে সে৷ সাথে আটার মতো লেগে আছে মাহাদি। হাতে স্যালাইন এখনো লাগানো। অনিকার প্যা পু কান্না দেখে কিছুক্ষণ অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওই মুখপানে চেয়েছিল আরশ। মুখ দিয়ে বের হয়ে এসেছিল, আপনার মাথায় সমস্যা নাকি..! এরপর আর দেখেনি ওই মেয়েকে। মাহাদি হেল্পিং হ্যান্ড হয়ে তার স্যালাইন দু-হাতে চেপে ধরে হাঁটছে আরশের পেছন পেছন। জায়িনকে এসে যখন ছালিমা বেগম লুঙ্গি পরালেন তখন আরশের দিকে চেয়ে ভ্রু নাচালেন। হেসে হেসে শুধালেন,”কী গো নাত জামাই তুমি ও পরবা নাকি?
আরশ শুধু সামান্য হাসল কথা বলল না। জায়িনকে বগলদাবা করে নিয়ে চলে যেতেই আরশ এসে বসেছে বারান্দায়। আর তখন থেকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরে। সৈয়দ বাড়ির দু-তলার বারান্দায় বসলে নাছির মঞ্জিলের সামনা স্পষ্ট দেখা যায়। সবাই ওখানে জমা হয়ে যে জায়িনকে হলুদ মাখাচ্ছে তা নিশ্চুপ বসে দেখল। মাহাদি নিজেও ড্যাবড্যাব করে রীতিনীতি গুলো দেখছে,।এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছে যখন কোনো বিয়ে সম্পাদন হচ্ছে এখানে। বয়স্ক মহিলাদের গীত গাওয়া শুনে মাথা দোলাল মাহাদি। নিজেও মিনমিন করে গাইল। আরশকে রোবটের মতো বসে থাকতে দেখে নিজেও তার পাশে বসল। আড় চোখে দেখল কঠিন করে রাখা উজ্জ্বল শ্যাম মুখখানা। মুখ দেখলে যেমন কঠোরতা প্রকাশ পাচ্ছে তেমন চোখদুটোতে নমনীয়তা প্রকাশ পাচ্ছে। আরশের চোখে এত নমনীয়তার কারণ মাহাদি বুঝতে পারল। চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল নুসরাতকে।
হাত তুলে হেলেদুলে নাচছে সবার সাথে। ঠোঁট দুটো নড়ছে সমানতালে। ইরহামের একহাত চেপে ধরে রাখা। হাসতে হাসতে একবার ইরহামের গায়ে ঢলে পড়েছে তো একবার আহানের। দু-জনেই আবার তাকে বিরক্ত ভঙ্গিমায় ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, আবার তিনটা কানাঘুষা করছে আর হা হা করে হাসি দিচ্ছে। নুসরাতের পরণে ধুতি-ফ্রক-কুর্তি। গলায় ওড়না ঝুলানো, পায়ে সচারাচরের মতো স্লিপার, চুলদুটো পনিটেল করে বাঁধা। মেক-আপ বলতে কিছু নেই মুখে। মুখে হয়তো তৈল দিয়ে দিয়েছে। অস্তিমিত পশ্চিম সূর্যের আলোয় গালদুটো চকমক করছে। আরশ দূর থেকে বসে বসে খেয়াল করল নুসরাতকে খুঁটে খুঁটে। এর মধ্যে জায়িন উঠে দাঁড়াল। হেঁটে যেতে নিবে পূর্ব ক্ষণেই লুঙ্গি খুলে পরে গেল৷ মাহাদি হু হু করে হেসে ফেলল এটা দেখে।
বিদেশিকে দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য লুঙ্গি পরানো হয়েছে আর বিদেশিরই কিনা লুঙ্গি কোমর থেকে খসে পড়ল। জায়িনের মুখটা থমথমে! আরশ চোখ ঘোরাল নুসরাত, ইরহাম, আহানের দিকে। তিনটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদম চোখ নিচের দিকে নামাচ্ছে না। এটা দেখেই এতক্ষণের চেপে রাখা হাসি আরশ নিজেও ফোঁস করে ছেড়ে দিল। পরপর আবার ঠোঁট চেপে হাসি সংবরণ করে নিল দন্তপাটির আড়ালে। মাহাদি নাক কুঞ্চিত করে চেয়ে বলল,”সামান্য হাসলে তোর জাত যাবে না..!
আরশ চোখ রাঙিয়ে মাহাদি দেখল। যার মানে বোঝাচ্ছে, চুপ একদম চুপ…! মাহাদি কী চুপ হওয়ার পাত্র সে আরশকে ভেঙচিয়ে ভেঙচিয়ে বলল,”সম্মান দে দু-দিনের বড়..!
আরশ দম্ভ নিয়ে ঘাড় বাঁকাল। ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,”তো কী হয়েছে? আটচল্লিশ ঘন্টা আগে পৃথিবীতে এসে কোন দেশ জয় করেছিস তুই?
“কোনো দেশ জয় না করলেও, তোর আগে এসেছি দুনিয়াতে। গণে গণে আটচল্লিশ ঘন্টা, দু-হাজার আটশত আশি মিনিট, এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার আটশত সেকেন্ড আগে দুনিয়ায় পর্দাপণ করেছি আমি, এটাই আমার দম্ভ। হুহ….!
আরশ নির্বিকার চিত্তে বলে ওঠল,
“তো কী হয়েছে?
“হয়েছে তো অনেক কিছু, পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখ আমি বড়..!
আরশ সামনের দিকে ফিরে তাকাল। মুখটা গম্ভীর রেখে বলে ওঠল,”ইরেজার দিয়ে মিটিয়ে ফেলেছি তা..!
মাহাদি কটমট করে তাকাল। রাগে নাকের পাটা ফুলিয়ে, ধারালো চোয়ালে হাত বোলাতে বোলাতে আওড়াল,” খাটাশ..!
সামনে স্থির দৃষ্টি রেখে আরশ ধমকে উঠল। পুরু পুরুষালি ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে বলে ওঠল,”শাট-আপ..!
ছালিমা বেগম ফিক করে হেসে ফেললেন। সুর টেনে সামান্য হাসি তামাশা করতে বলে ওঠলেন,”নাত জামাইয়ের লুঙ্গির গিট্টু ঢিলা, নাতনীর কপাল খোলা।
কথা শেষে হেসে ফেললেন। জায়িন ঝুঁকে লুঙ্গি চেপে ধরে ছালিমা বেগমের পানে নেত্র নিবিষ্ট করল। বলে ওঠল,”দেখেছেন? আমি লুঙ্গি পরতে চাইছিলাম না এজন্য..! আজ আপনার কথা শুনে যদি শুধু লুঙ্গি পরতাম আমার মান সম্মান যেত কোথায়?
ছালিমা বেগম হেসে ফেললেন। জায়িনের সাথে দুষ্টুমি করে বললেন,”মান-সম্মানের কোনো কিছুই হতো না, দেখলে তো আমরাই দেখতাম।
চোখ টিপে বললেন,
“আমরাই-আমরাই..!
জায়িন ঠোঁটের কাছে আসা হাসি গিলে নিল। এতক্ষণে তার কাছে আসা ছালিমা বেগমের দিকে সামান্য ঝুঁকে এসে কানে কানে জিজ্ঞেস করল,” এজন্য বুঝি লুঙ্গি পরিয়েছিলেন?
ছালিমা বেগম হেসে ফেললেন। সহমত পোষণ করে বললেন,”হ্যাঁ! ভাবলাম নাত জামাইয়ের লুঙ্গি খুলে পরে যাবে আর আমরা সব দেখে নিব। তুমি তো আর এই বুড়ির সুখ দেখতে পারলে না, তাই তো লুঙ্গির নিচে প্যান্ট পরে আসছো, তাই আর দেখা হলো না।
ছালিমা বেগম শেষের কথা দুঃখি সুরে বললেন। চোখ দুটোতে তখনো হাসি খেলা করেছে। জায়িন ছালিমা বেগমের দিকে চেয়ে কানে কানে বলল,”একান্ত আসবেন আমার সাথে দেখা করতে।
ছালিমা বেগম হৈ হৈ করে উঠলেন। গলার আওয়াজ উঁচু করে বললেন,”আরে নাত জামাই কয় কী, ওর সাথে নাকি একান্তে দেখা করতে যাব! না বাবা না…! ওসব হবে না।
জায়িন ছালিমা বেগমের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল৷ তারপর এক হাতে লুঙ্গি পেটের কাছে চেপে হাঁটা ধরল বাড়ির উদ্দেশ্যে। নুসরাত ইরহামের মাথায় ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে ধমকে উঠল,”শালার শালা, একটু তো চোখ নামিয়ে নিচের দিকে দেখবি কী হচ্ছে না হচ্ছে।
ইরহাম ও সমানতালে নুসরাতের মাথায় একটা বসাল। কটমটিয়ে উঠে শুধাল,”তুই দেখলি না কেন?
দু-জনে দু-জনের দিকে ক্ষেপা ষাঁড়ের দিকে কিৎকাল চেয়ে রইল। তারপর একসাথে পাশে দাঁড়ানো আহানের মাথায় থাপ্পড় মেরে বলল,”দেখবি না তুই?
বেচারা আহান বোকা বনে চেয়ে রইল তাদের দিকে। নিষ্পাপ মুখ বানিয়ে গোল গোল করে ভাই বোনের দিকে চেয়ে মিনমিনিয়ে শুধাল,”আমি কী করেছি?
আরশের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় জায়িন এসে উপস্থিত হলো তার সামনে। আরশ ভ্রু উচাল, জায়িন ও উচাল৷ দু-জনে দু-জনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল। মাহাদি চুপচাপ দেখছে দু-জনের কান্ড কাউচে বসে। জায়িন গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল,”তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা, নাহলে তোর জন্য আমার বিয়ে আটকে যাবে।
আরশ থমকানো দৃষ্টিতে ভাইয়ের পানে চেয়ে রইল। ঠোঁট উচিয়ে ঈষৎ তাচ্ছিল্য করে বলল,”নিজের ভাইয়ের কথা চিন্তা করছ না, বাহ্ বা্হ…! এত অসুস্থ একজন মানুষ, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তাকে বলছ সুস্থ হয়ে যেতে তুমি বিয়ে করবে, দেটস নট ফেয়ার ব্রো, বুকে এসে লাগল কথাটা!
জায়িন এগিয়ে এসে আরশের ঘাড় চেপে ধরল। কপাল কুঞ্চন করে শুধাল,”নাটক শেষ?
আরশ মাথা নাড়াল। জায়িন জিজ্ঞেস করল,
“আগামীকালের ভেতর সুস্থ হয়ে যাবি?
আরশ উত্তর না দিয়ে, জায়িনকে উপহাস করল,
“ বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছ দেখছি ব্রো..!
২১ আগস্ট,
সন্ধ্যা ছয়টা ত্রিশ মিনিট…..
ক্যামেরা হাতে এসে হেলাল সাহবের সামনে দাঁড়াল আহান। হেলাল সাহেব জায়নামাজ রেখেপেছনে ফিরতেই প্রথমে চমকে গেলেন, পরপর আবার হেসে ফেললেন আহানকে দেখে। নতুন পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়েছেন। গোসল সেড়েছেন মাগরিবের আজানের সময়। চুলগুলো এখনো ভিজে। মাথা থেকে টুপি নামিয়ে আহানকে শুধালেন,”কী চাই?
আহান কোনো দেনামোনা ছাড়াই বলল,
“আজ আপনার অনুভূতি কী, তা বলুন..! এবং কী কী মনে উপলব্ধি হচ্ছে সব শেয়ার করুন! ভবিষ্যৎ আপনার জন্য কোনো কথা থাকলে সেটা ও বলুন। যখন বিয়ের অনেক বছর কেটে যাবে তখন আমরা এই ভিডিওটা চালু করব, আর পুরনো স্মৃতিগুলো আবারো স্মৃতিচারণ করব। তখন আপনার বয়স ও অনেক হয়ে যাবে আর আমাদেরও। কোনো এক বিকেলে এই ভিডিওটা লনে বসে দেখতে দেখতে সবাই হাসব সামান্য।
হেলাল সাহেব শ্বাস ফেললেন। বললেন,
” শুরু কর..!
আহান ভিডিও শুরু করতেই হেলাল সাহেব গলা খাঁকারি দিলেন। বলে ওঠলেন,”আজকের দিনটা সুন্দর। এতদিনের গরমের প্রভাব কিছুটা মিইয়ে পড়েছে আজকের ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে। হৃদয়ে চলাচল করা সকল চিন্তা আজ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে কোনো একটা কারণে। কারণটা কী হতে পারে? আমি সারাদিন ভর ভাবলাম, উত্তর মিলল না। মাত্র নামাজ শেষে যখন সালাম ফিরালাম তখন আমার এই আঁখিদ্বয়ে ভেসে উঠল নাছিরের বড় মেয়ের হাসি হাসি মুখটা। কী স্নিগ্ধ সেই মুখটা। আজ হয়তো তার পা এই বাড়ির মেঝে স্পর্শ করবে বলে প্রকৃতি আজ এত শান্ত, নির্মল। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসছে বলেই হয়তো আজকে মনে কোনো অশান্তি হচ্ছে না।
হেলাল সাহেব সামান্য হেঁটে গিয়ে বাহিরের মৃদু আলোয় বারান্দায় বসলেন। থামলেন দশ সেকেন্ডের মতো। ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে ওঠলেন,”কয়েক বছর পর একদিন হয়তো আমি বসব তখন হয়তো ভিডিওটা চলবে ল্যাপটপে। আশা রাখছি ততদিনের ভেতর দাদা হয়ে যাব। তখন ছোট ছোট পা দুটো হাঁটবে, গল্প করবে, তাদের হাসিতে, কলরবে রমরমে হবে। কোলে থাকবে চার-পাঁচ বছরের জায়িনের ছেলে বা মেয়ে, তখন হয়তো আমার চোখের পাওয়ার আরো কমে যাবে, এই চশমটা ছাড়িয়ে নিয়ে আরো বেশি পাওয়ারী চশমা ব্যবহার করব। নাতনী বা নাতিকে কোলে নিয়ে দেখব এইদিনের ভিডিওটা। দেখতে দেখতে হয়তো সামান্য হাসি ফুটবে ঠোঁটের কোণে। আল্লাহ যেন ততদিন বাঁচিয়ে রাখে আমায়। আজকের দিনটা কেমন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, শুধু এইটুকু বলব দারুণ উপভোগ্য দিন। অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার মতো না।
হেলাল সাহেব কথা শেষ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। আহান হেলাল সাহেবকে থামজআপ দেখিয়ে বলল,”দারুণ হয়েছে।
এরপর লিপি বেগমের সামনে ক্যামেরা ধরল। লিপি বেগম নিজের মাথায় হিজাব বাঁধতে বাঁধতে বললেন,”এই ভিডিওটা যখন চলছে হয়তো আমি বেঁচে নেই, আবার হয়তো ভিডিওটা আমি নিজেই দেখছি বলতে পারছি না ভবিষ্যতের কথা। আজকের দিনটা আমার জন্য স্পেশাল, কারণ মেয়ের শখ ছিল আমার অনেক। আল্লাহ আমায় মেয়ে দেয়নি তাই মেঝো এর মেয়েগুলোকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। সাময়িক সময়ের জন্য সে এখান থেকে চলে গিয়েছিল কিন্তু আজ আবার তাকে তার নিজের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য নিয়ে আসতে যাচ্ছি। আল্লাহ যেন তাদের বিবাহের সম্পর্কে বরকত দান করেন। আমিন..! ভবিষ্যৎ লিপির জন্য একটাই কথা, আমি জানি তুমি একজন গ্রেট শাশুড়ী হবে।
নাছির মঞ্জিল,
সময় ছয়টা পঞ্চাশ মিনিট,
নাছির সাহবে নিজেও কালা পাঞ্জাবি পরিধান করেছেন। চারভাই এক ধরণের আজকে পাঞ্জাবি পরবেন৷ ছেলেরাও বাপ চাচার সাথে মিলিয়ে কালো রঙের পাঞ্জাবি পরছে, আর মেয়েরা কী পরবে তার ধারণা এখনো কারোর নেই। কাউকে জানায়নি তাদের থিম কেমন!
নাছির সাহেব চোখের চশমা ঠিক করে নিয়ে নিজের উরুর উপর পা তুলে বসলেন। ঠোঁটে হাসি নিয়ে বললেন,”মনে কিছুটা দোলাচাল চলছে, এতবছর যাকে বড় করলাম আজ সে নিজের বাড়ি চলে যাবে। হয়তো চলাচল থাকবে আগের মতো কিন্তু…..
কথাটা শেষ করার আগেই নাছির সাহেবের চোখ পানি জমা হলো। টিস্যু বের করে চোখ মুছলেন তিনি। আহান নিজেও হাতের মধ্যে চোখ ঘষল। নাছির সাহেব বললেন,”মনে হয় এই সেদিন জন্ম হয়েছিল তার, ঠুকঠুক করে বড় হলো কখন এত বড় হয়ে গেল যে আজ স্বামীর বাড়িও চলে যাবে সে। সম্পর্ক বদলাবে, সম্পর্ক বাড়বে, দায়িত্ব এসে পড়বে কাঁধের উপর, হয়তো দায়িত্বের বোঝা সামলাতে সামলাতে দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে যাবে, আমাদের জন্য সময় থাকবে না…. আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে সকল পরীক্ষায় উর্ত্তীণ করেন। যে পথে পা বাড়িয়েছেন সেই পথে চলাচল করা সহজ নয়, সম্পর্ক গড়া যতটা কঠিন ততটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া সহজ। উনার জীবনের এই বিশেষ সময়টা যেন সুন্দর, সহজ, নির্মল হয়, বাবা হিসেবে এই দোয়া শুধু করব। আল্লাহ উনার ভাগ্যে যেন সুখ রাখেন, কোনো দুঃখ যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে ।
আহান জানতে চাইল,
“ভবিষ্যৎ আপনার জন্য কোনো কথা?
নাছির সাহেব হাসি মুখে বললেন,
“ নাছির তুমি যদি এই ভিডিও দেখে থাকো তাহলে আমি তোমাকেই বলছি তুমি একজন ভালো নানা হবে।
নাজমিনে বেগম ক্যাটক্যাট করছিলেন নুসরাতের সাথে। আহানকে ক্যামেরা নিয়ে এসে দাঁড়াতে দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। জানতে চাইলেন,”কী চাই?
আহান আবারো বিস্তারিত বলল। নাজমিন বেগম কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বসলেন সোফার উপর গিয়ে। কোমল কন্ঠে বললেন,”সারাটাদিন আমার কেটেছে ওই বেয়াদব এর পেছনে৷ একদিকে আমি বাড়ি গুছিয়ে রাখছি অন্যদিকে ও ছড়িয়ে রাখছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ আমার দ্বারা কী সব একা সামলানো সম্ভব! আচ্ছা যাক গে… আজকের দিনটা বিশেষ। কারণ প্রায় আঠারো বছর পর এমন রমরমে ভাবে বিয়ে হচ্ছে এই বাড়িতে। চারিদিকে এই দু-দিনে যতটা বাড়িটা উৎফুল্ল হয়েছে এই বিয়ে শেষে হয়তো ততটা নীরব হয়ে যাবে। তখন হয়তো আমি বসে বসে এই ভিডিওটা দেখব আর মুচকি মুচকি হাসব। সবসময় ইসরাতের জন্য আমার দোয়া ছিল আর আজও দোয়া দোয়া রইল। এইটুকু বলব ইসরাত যার হাত ধরেছে সে যেন তার হাত সবসময় এমন করে ধরে রাখে, আর আমি এটা ও বিশ্বাস করি, ইসরাত কখনো জায়িনের হাত ছেড়ে দিতে চাইলে জায়িন কখনো ইসরাতের হাত ছাড়বে না, যতদিন বেঁচে আছে সেই হাত মুঠো বন্দী করে রাখবে নিজের সাথে।
সৈয়দ বাড়ি,
সাতটা পনেরো মিনিট, ড্রয়িং রুম,
এরপর শোহেব সাহেবের পালা আসলো। তিনি আহানের পানে চেয়ে বারবার হেসে ফেললেন। বললেন,”তোকে কাঠবিড়ালির মতো দেখাচ্ছে।
আহান নিজেও হেসে বলল,
“তাড়াতাড়ি বলো, এখনো বাড়ির অনেকে রয়েছে।
শোহেব সাহেব চুল পেছনে ঠেলে দিলেন। কালো পাঞ্জাবি পরিহিত শরীরটা একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে নিয়ে বসলেন সোফায়। গম্ভীর কন্ঠে আওড়ালেন,” কোনো এক বিষন্ন দুপুরে কোলে নাতনী নিয়ে বসে আছি হয়তো! প্রশ্ন জাগছে নাতনী কে তাই না..! আরে আমার জায়িনের মেয়ে..! আমি চাই জায়িনের একটা মেয়ে হোক সর্বপ্রথম। যে সারাদিন আমাদের জ্বালাবে। যার সকালের কান্নায় আমাদের ঘুম ভাঙবে, রাতের যার কান্নায় আমরা ঘুমাতে পারব না, কোলে নিয়ে যাকে বিকেলে হাঁটতে যাব। যে হ্যান্ডসাম দাদা দাদা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। দু-হাজার বারো সালে, শ্রদ্ধেয় মেঝ ভাই উরফে মীরজাফর নাছির উদ্দিন আমাদের মেয়েকে দূরে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই মেয়েকে আজ আনতে যাচ্ছি, তাও চাচা শ্বশুর হিসেবে। একদম নিজেদের নামে লিখিয়ে নিয়ে আসব, যাতে আর নিয়ে যেতে না পারেন উনি। আরো কিছুদিন পর ওই মেয়েকেও ছিনিয়ে নিয়ে আসব আপনার কাছ থেকে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আজ এসব কথা ভেবে ভেবে নাচতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু নাচা যাবে না চাচা শ্বশুর হয়ে যাচ্ছি আমি। আর কয়েক বছর দাদা শ্বশুরও হয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ..!
সিনেমার ভিলেনের মতো ঠোঁট উচিয়ে হাসলেন শোহেব সাহেব।
সৈয়দ বাড়ি,
সময় সাতটা পঁচিশ।
ঝর্ণা বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে ভাবলেন, তারপর বললেন,”অনুভূতিটা ভিন্ন, কারণ আজ চাচি শাশুড়ী হয়ে যাব। হয়তো ভালো চাচি শাশুড়ী হবো, আবার হয়তো খারাপ বলতে পারছি না। সবাই তো আদর, যত্ন করবে, আমি নাহয় একটু আকটু শাসন করব, ভুল গুলো শক্ত কন্ঠে কুটনি শাশুড়ীদের মতো ধরিয়ে দিব। কখনো ভুল হলে লাঠি দিয়ে দুটো পিঠে বারি দিব। অতঃপর বলব, মা কিছু শিখিয়ে পাঠায়নি।!তখন বড় আপা, আর ছোট এসে ওকে নিজেদের কাছে আগলে নিবে।
এমন করে চলবে আমাদের সংসার। ভাবতেই তো লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি কুটনী শাশুড়ী হবো, আর ইসরাত আমার শিকার হবে৷ বাংলা সিনেমার মতো অনেক সময় ওর হাত চেপে ধরে আগুনের কাছে নিয়ে তাপ দিব, তখন হাতে লালচে দাগ পড়বে। জায়িন রেগেমেগে আসবে, যখন জিজ্ঞেস করবে, এমন ব্যবহার কেন! আমি দেয়ালে মাথা ঠুকে বলব, বউ পেয়ে মাকে ভুলে গেলি, কতরাত না ঘুমিয়ে, না খেয়ে তোকে বড় করেছি, আর আজ বউয়ের জন্য তুই আমাকে অগ্রাহ্য করলি। পরপর দেয়ালে গিয়ে ঠুসঠাস করে মাথা বারি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলব৷ আইডিয়াটা ভালো না..সবাই ভালো শাশুড়ী হবে আর আমি হবো খারাপ শাশুড়ী..!
আহান ক্যামেরা নিয়ে এবার ধরল রুহিনী বেগম আর সোহেদ সাহবের দিকে। দু-জনেই হাসি হাসি মুখে বললেন,”একটাই কথা বলব, বাড়ির মেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতে যাচ্ছি..!
নাছির মঞ্জিল,
সময় সাতটা পঞ্চান্ন মিনিট…।
“আজকের দিনটা আজব। কেমন অনুভূতি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আপনারা জানলে অবাক হবেন আমি নুসরাত নাছির আজকের দিন নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ভুগছি। কারণ কী..! উত্তর নেই আমার কাছে। সবাই বলছে তারা অনেক বছর পর এই ভিডিও দেখবে তখন নাকি অনুভূতি গুলোও নতুন হবে। আমার কাছে ওসব মনে হয় না, আর যদিও আমি এই ভিডিও দেখি তাহলে নুসরাত নাছির তোমাকেই বলছি কী ঠেকা মাথায় এসে পড়েছে এই ভিডিওটা তুমি দেখছ, যাও নিজের কাজে যাও… নিজের সময় এসব ফালতু জিনিস ওয়েস্ট করো না। আমি জানি তুমি এখনো যেমন হাসি খুশি আছো সামনেও হাসি খুশি থাকবে। তুমি নিশ্চয়ই এই নুসরাত নাছিরের উপর বিরক্ত হচ্ছো, ঠিক! কারণ এখন তো তুমি সৈয়দ চয়েসের সিও। যতদিনে এই ভিডিওটা তুমি দেখবে হয়তো ততদিনে তুমি সৈয়দ চয়েসের সিও হিসেবে জয়েন করে ফেলেছ অফিসিয়ালি। তাহলে বসে এখনো কেন এই ভিডিও দেখছ?
আমি জানি তুমি আগের থেকেও দ্বিগুণ সুন্দর হয়েছ, তোমার কাপড় চুস করার চয়েস এখনো আগের মতো ক্লাসি আছে তাই না! আমি জানি এখনো আছে, কারণ পৃথিবী চেঞ্জ হতে পারে কিন্তু নুসরাত নাছির না..! অহো এখনো বসে বসে এটা দেখছ, যাও, তোমার ডিলগুলো সামলাও, তোমার ক্লায়েন্ট এসে বসে আছে নুসরাত নাছির তাদের সময় দাও, প্লিজ গো..! এভাবে নিজের বিজনেস জলে যেতে দিও না..! আমি জানি তুমি উঠে দাঁড়িয়েছ, আর এখন হাঁটার প্ল্যান করছ, তাহলে অপেক্ষা করছ কীসের..! প্লিজ রান নুসরাত নাছির রান..! আই নো ইউ আর হেলথি এন্ড ওয়েলথি..! কতটাকার মালিক এখন তুমি? মিলিয়ন, বিলিয়ন, নাকি ট্রিলিয়ন? কোনো ক্লাবে নিজের নাম লিখিয়েছ? লিখিয়ে থাকলে কোন ক্লাবে? আমি জানি তুমি এখন ট্রিলিয়ন ক্লাবে নাম লেখানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো..! এই বোরিং নুসরাতের কথা এখনো দাঁড়িয়ে শুনছো, যাচ্ছো না কেন! প্লিজ যাও…! তোমার ক্লায়েন্ট চলে যাচ্ছে!
আহান হেসে ফেলল। নুসরাত নিজের কথা শেষে নিজেও হেসে ফেলল। এবার ইরহামের পালা আসলো। সে ক্যামেরার দিকে চেয়ে রইল অদ্ভুত ভঙ্গিমায়। নিজের মুখে লাগানো ব্ল্যাক ফেইস মাস্ক নিয়েই নুসরাতের পাশাপাশি বসল। ক্যামেরার দিকে আঙুল তাক করে বলল,” হেই ইউ সৈয়দ ইরহাম শোহেব, তুমি কী এই ভিডিওটা দেখছ! তোমাকে এখন দেখতে কেমন..! পেট উঁচু, চোখে চশমা, চামড়া খসখসে, হবেই তো, ঠিকমতো স্কিন কেয়ার করোনি আমি সিওর। দেখছ আমাকে কতটা হ্যান্ডসাম আমি, যখন আমি তোমাকে ল্যাপটপের সামনে বসে দেখব তখন যেন তুমি আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে যাও..! আর আরেকটা কথা পেট উঁচু যেন না থাকে..!
আহান ক্যামেরা হস্তান্তর করল ইরহামের কাছে। নিজে ভাবসাব নিয়ে বসে দাঁত মেলিয়ে একটা হাসি দিল। সাথে নুসরাতকেও যোগ করল। ব্যাঙ্গাত্মক কন্ঠে বলল,”জানি তুমি সাইন্টিস্ট হতে পারোনি তাই বলে কী নুসরাত নাছিরের ব্যাগ ধরে হাঁটছ? দয়া করে এটা করো না, যদি করেও থাকো তাহলেও কোনো সমস্যা নেই।
পরপর দু-জনে গলা মিলিয়ে একসাথে বলে ওঠল,
“নুসরাত নাছির যাও নিজের কাজে যাও আর আহান নাওফিল তুমি এখনো বসে কেন, তোমার বস চলে যাচ্ছে, নিজের চাকরি বাঁচাতে চাইলে বসের ব্যাগ নিজের হাতে নাও…!
সৈয়দ বাড়ি,
আটটা দশ মিনিট।
“আমি ভবিষ্যৎ আরশ হেলালকে বলছি তুমি এই ভিডিওটা দেখছ? তাহলে দেখছ কেন? তোমার কাজ নেই, প্লিজ গো ব্যাক ইউ্যের ওয়ার্ক। আমি জানি তুমি আগের মতো এখনো স্বাস্থ্যসম্মত আছো। তুমি কী ওই জেদি মহিলাকে নিজের আয়ত্ত্বে এনেছ নাকি এখনো এমন ঘুরছ। যদি এনে থাকো তোমার বাচ্চা কয়টা। বারোটা নাকি চৌদ্দটা। আই থিংক দশটা তো হবে। তোমার প্রথম বাচ্চাটা কী ছেলে নাকি মেয়ে! আমি আশা করি মেয়ে হবে, আমি ফাস্ট বাচ্চা মেয়ে চাই..!তোমার স্ত্রী কী এখন তোমের কথা শুনে নাকি আগের মতো জিদ্দি রয়েছে। আরশ তুমি কী তাকে ভালোবাসো, আগেই বলে দিচ্ছি আমি তাকে ভালো টালো বাসি না। সে শুধু আমার দায়িত্ব..! তুমি কী ভালোবাসো..!
আহানকে চেপে ধরেছেন সুফি খাতুন। আহান সুফি খাতুনের পানে চোখ উল্টে চেয়ে জানতে চাইল,”কী হয়েছে?
আহানের মুখের উপর বিরক্তির চাপা ছাপ। ভদ্রমহিলা তার নানি হলেও সে মোটেও পছন্দ করে না তাকে। ইসরাত আপির নানিও তো কত্ত ভালো, তার নানি এমন খারাপ কেন সে বুঝে পায় না..! তার মা টা ও তো কতো ভদ্র তাহলে এই খারাপ মহিলা তার নানি হলো কেন! সুফি খাতুনের কর্কশ কন্ঠ কানে যেতেই চিন্তায়করণে আঘাত পড়ল আহানের। তার নানি বলছেন,”কী করছিস ওই ক্যামেরা দিয়ে?
আহান বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ বের করল। সামান্য লাফ মেরে উঠে বলল,”ভিডিও করছি..!
আহান দ্রুত পায়ে পালাতে যাবে সুফি খাতুন তার বাহু চেপে ধরলেন। ভ্রু একপেশে করে তুলে বললেন,”আমার ভিডিও করলি না কেন?
আহান অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কী পরিবারের মানুষ?
” অবশ্যই আমি। যা ভিডিও কর গিয়ে..!
আহান ক্যামেরা নানির মুখের পানে নিবিষ্ট করল। বিরক্তির শেষ পরিশেষে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,”তোমার অনুভূতি কী?
“আমার অনুভূতি সম্পর্কে কী বলব,আমি তো স্পষ্ট ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি, ছেলেটার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর তা নষ্ট করতে যাচ্ছে ওই কালনাগিনী..! নাগিন হয়ে এসে প্রবেশ করছে এই বাড়ি সদর দরজা দিয়ে, সকলের ভেতর এবার বিষ গুলে দিবে।
আহান ঠুস করে ক্যামেরা বন্ধ করে নিল। সুফি খাতুন প্রশ্নাতীত দৃষ্টি ছুঁড়ে দিতেই বলল,” আমার ক্যামেরার চার্জ শেষ, ইমিডিয়েটলি চার্জে দিতে হবে, না হলে বোম ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভবনা আছে।
সুফি খাতুন চোখদুটো বড় বড় করে বলে ওঠল,
“যা যা এক্ষুণি চার্জে দেয়, নাহলে অঘটন ঘটে যাবে।
জায়িন নিজের গায়ে আইভরি কালারের, গোল্ডেন শ্যাম্পেইন এর কারুকার্য করা শেরওয়ানি জড়াল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে আতর হাতে তুলে নিতেই ক্যামেরা হাতে এসে দাঁড়াল আহান আর ইরহাম। জায়িন হাতে আতর দিতে দিতে ভ্রু উচাল। তখনই আহান বলে ওঠল,”আপনার অনুভূতিটা কী আজ?
জায়িন গায়ে আতর ডলতে ডলতে ইশারা করল ক্যামেরা চালু করার জন্য। গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে সামলে নিল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে অধিপত্য বিস্তারকারী রাশভারী কন্ঠে বলে ওঠল,” জীবনে অনেক এক্সামের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, অনেক ইভেন্ট জয়েন করেছি কিন্তু আজকের ইভেন্টটা ভিন্ন। ইভেন্ট বললে ভুল হবে, আজ একটা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। আর আশা রাখছি এই পরীক্ষা উর্ত্তীণ করব আমি। আজকের জন্য অনুভূতিটা কিছুটা মিশ্র হচ্ছে। কখনো ঘেমে যাচ্ছি, কখনো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি, আবার কখনো আজব আজব খেয়াল আসছে..! আমি ভীষণ নার্ভাস।
ইরহাম এবার আরেকটা কথা জানতে চাইল,
“ভবিষ্যৎ জায়িনের জন্য কোনো কথা বলবেন বড় ভাইয়া?
জায়িন ক্যামেরার দিকে কোমল চোখে চেয়ে, মোলায়েম সুরে বলে ওঠল,” আমি জানি তুমি এখনো ইসরাতকে ভালোবাসো। ইসরাত তোমার সাথে আছে নিশ্চয়ই। এতদিন ইসরাতের যত্নআত্মি কেমন করেছ! ওকে কষ্ট দিয়েছ তুমি, যদি কষ্ট দিয়ে থাকো তাহলে জায়িন হেলাল তোমাকেই বলছি যাও আগে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নাও! আমি তোমার থেকেও বেশি আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি। ও এ বাড়ির চৌকাঠ যেন কখনো রাগ নিয়ে না মাড়ায়। চৌকাঠ মাড়ানোর আগেই ওকে মানিয়ে নিও জায়িন, নাহলে তোমাকে আমি নিঃশেষ করে ফেলব।
আটটা ত্রিশ মিনিট,
সিলেট টিলাগড় পয়েন্ট..!
নুসরাত ক্যামেরা ইসরাতের অর্ধশেষ হওয়া মুখের দিকে তাক করল। শুধাল,”হেই ইসরাত নাছির, আজকের অনুভূতি কী?
ইসরাত হাসি মুখে ফিরে চাইল নুসরাতের পানে। ঠোঁটে হাসির অস্তিত্ব রেখেই বলল,”আমার লাইফের আজ বিশেষ একটা দিন। সবকিছু কেমন ধোয়াশা মনে হচ্ছে..! আমি সবসময় চাইতাম আমার বিয়েটা মসজিদ হোক কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না, তাই একটু মন খারাপ। সকাল সকাল উঠে কত পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়েছি, আজকের প্রিপারেশনটা ভিন্ন। ক্যান ইউ রিয়েলি ইমেজিন আজ তোমার বিয়ে! অহ মাই গস..! আমার অনুভূতিটা আমার কাছে কেমন ঠেকছে আমি জানিন না, বাট আ’ম সো হ্যাপি। এট লাস্ট আমি আমার দাদু বাড়িতে ফিরছি। যেখানে আমি নিজের বাড়ি থেকেও বেশি কম্ফোর্টনেস ফিল করি।
নুসরাত আবার বলল,
“ভবিষ্যৎ ইসরাতের জন্য কী বলবি তুই..!
ইসরাত চোখ টিপ দিয়ে ভ্রু নাচাল সামান্য। কপালের মধ্যিখানি তীক্ষ্ণ ভাঁজ ফেলে বলল,” ইসরাত নাছির, তোমার এখন কয়টা বাচ্চা? দুটো নাকি তিনটে, এটলিস্ট তো পাঁচটে বাচ্চা হবে। কেমন চলছে তোমার সাংসারিক জীবন..! আই থিংক তোমার সাংসারিক জীবন খুব ভালো চলছে। জায়িন কী তোমায় এখনো আগের মতো ভালোবাসে নাকি তার তুলনায় বেশি..! যদি কম ভালোবাসে তাহলে ওর ঘাড়টা মাথা হতে আলাদা করে দাও, কারণ কম ভালোবাসে এমন স্বামীর প্রয়োজন তোমার নেই। আমি জানি ইসরাত নাছির জায়িন তোমাকে ভালোবাসে আগের মতোই, মজা করে শুধু বললাম। আরো সতেরো বছর পর যখন তোমাকে দেখব তখন যেন এমন হাসি তোমার ঠোঁটে থাকে, ততদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকো, পরিবার নিয়ে সুখী থাকো, দুই বাচ্চার মা হয়ে যাও, বায় বায়, উম্মাহ..!
ঘড়ির কাটায় টিকটিক করে নয়টায় পৌঁছেছে। নুসরাত দু-হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে দোয়া করছে,”ইয়া আল্লাহ, বৃষ্টি যেন না হয়, নাহলে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।
নুসরাতের দোয়া হয়তো কবুল হয়ে গেল, মেঘের গর্জন কিছুক্ষণ চলার পর তা থেমে গেল। গগনে আজ মেঘ জমেছে। মেঘের ঘনঘটা আসমানটুকুও কালো হয়ে আছে। যেদিক দিয়ে চোখ যায় সেদিক দিয়ে শুধু মেঘের আনাগোনা। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই একজন আর্টিস্ট এসে নুসরাতকে জানাল,”ব্রাইডের মেক-আপ ডান..!
নুসরাত সামান্য হাসল। হেসে বলল,
“প্লিজ ব্রাইডকে গাড়িতে বসিয়ে দিন আমরা উনার ফুল লুক একসাথে দেখব।
ইসরাতকে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো নুসরাতের অনুরোধে। নুসরাতের গায়েও কালো রঙের গ্রাউন। মেয়েরা প্যাস্টেল মিন্ট গ্রিন কালার এর শাড়ি পরলেও নুসরাতকে পরানো সম্ভব হয়নি। পারলে সে কালো কালারের স্যুট কোট পরে ফেলে, তাই তার জিদের কাছে হেরে কালো রঙের কাপড় তাকে পরতে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ কোনো কাজ নেই তার কাপড়ে। হাতে, গ্রাউনের নিচের দিকে আর গলার কাছে কাজ। তাও খুবই সামান্য ডায়মন্ড পাথরের কারচুপির কাজ। পায়ে স্লিপার পরা। চার ঘন্টা পূর্বে ইসরাত যেমন রেখে এসেছিল এখনো পর্যন্ত সে সেরকম। এখান থেকে তারা সোজা যাবে নিজেদের ডেস্টিনেশন এ..!
কনভেনশন হলের বাহিরে সাজানো হয়েছে প্রথমে সেখানে আকদ হবে তারপর ভেতরে ফটোসেশন হবে। গাড়ি ড্রাইভিং করতে করতে নুসরাত আজ উঁকি দিল না ইসরাতকে দেখার জন্য। চুপচাপ সামনে দৃষ্টি নিবিষ্ট করে গাড়ি চালাল। সময় অতিবাহিত হলো, আধঘন্টা পর তারা তাদের ডেস্টিনেশন এ পৌঁছে গেল। নুসরাত প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দরজা খুলে দিল। ইসরাতের দিকে তাকাল না, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইসরাত গাড়ি থেকে বের হতেই তার ভারী লেহেঙ্গার পেছন চেপে ধরে হাঁটা ধরল নুসরাত। ইসরাত সামনে হেঁটে গেল পেছন পেছন সে। রেস্ট রুমে যেতেই ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,”সবাই প্রায় চলে আসছে, আমিও আসছি।
নুসরাত দৌড় দিল দ্রুত। নিজেকে পরিপাটি করল সামান্য। নাকের রিংটা খুলে ফেলল কেন জানি..! গলা খালি রাখল, গালে ব্লাশঅন, ঠোঁটে সামান্য নুড কালার লিপিস্টিক ইউজ করল, চোখে মাস্কারা। সামনে দু-গাছি চুল এনে পনিটেল করে নিল। নিজের দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করল,”ইউ আর পারফেক্ট নুসরাত নাছির..!
জায়িন এখনো পৌঁছায়নি কনভেনশন হলে। শোহেব সাহেব, রুহিনী পাত্র পক্ষ, আর সোহেদ সাহেব ঝর্ণা পাত্রী পক্ষ। এদিকে মেয়েদের পক্ষে মমো, ইরহাম, আহান। নুসরাতের মামা বাড়ির ও কিছু কাজিন এসেছে বিয়েতে। ওরা গেইটে কত টাকা নিবে তার প্ল্যান করছে। ঝর্ণা বেগম ,নাজমিন বেগম, নুসরাত, নাছির সাহেব, মমো, সৌরভি দাঁড়াল পেছন ঘুরে। একজন সার্ভেন্ট এসে বলে গিয়েছে ব্রাইড আসছে। ইসরাত রেস্ট রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো। উল্টো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের সবাইকে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের জানান দিল। সবাই ফিরে তাকাতেই ইসরাত হাসল। নুসরাত বিস্ময়ে দু-হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে,, ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত হয়,”ইসরাত ইউ লুক এবসোলুটলি স্টানিং।
নাছির সাহেব দু-হাত মেলে দিতেই ইসরাত এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। তারপর নাজমিন বেগম তাকে জড়িয়ে ধরলেন নিজের সাথে। নুসরাত ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে ইসরাতের দিকে। ইসরাত নিজে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। কানে আসলো গ্রুম আসছে গ্রুম। নুসরাত ইসরাতকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াল গেটের দিকে। পেছন পেছন আসলো মমো সৌরভি। গেটের কাছে এসেই দাঁড়াতে পরপর বিশটা গাড়ি এসে থেমেছে পার্কিং লটের সামনে৷ সবার গাড়ি থেকে বরযাত্রী নেমে দাঁড়াতেই হৈ হুল্লোড় পড়ে গেল সবদিকে। ক্যামেরা ম্যানেরা ভিডিও করছে সবাই। জায়িন এসে গেটের সামনে দাঁড়াতেই নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলল। জায়িন ও ভাঁজ ফেলল। শুধাল,”কী চাই?
নুসরাত নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
“গেট ধরার টাকা।
জায়িন ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,
“কতটাকা চাই?
নুসরাত, আহান, ইরহাম আর মমো একসাথে বলল,
“উমম দশ লাখ..!
জায়িন বলল,
“ টাকা কী গাছে ধরে, বিশ লাখ দিব। বিশ লাখের মতো চেহারা তোমাদের?
নুসরাত ঝাঁঝিয়ে উঠল, তেতো কন্ঠে কিছু বলতে নিবে ইরহাম বলল,”ভাই আমরা অনেকজন, আর আপনার ব্রাইডকেও দেখতে হবে। আকাশের চাঁদ নিয়ে যাবেন আর কিছু খরচ করবেন না তা কী করে হয়..!
জায়িন সরাসরি বলল,
“এমন হলে এক টাকাও দিব না।
লিপি বেগম এসে দাঁড়ালেন তার পাশে। তীক্ষ্ণ সুরে জানতে চাইলেন,” কী বলছে ওরা?
জায়িন নম্র কন্ঠে বলল,
“দশ চাচ্ছে..!
লিপি বেগম গলায় জোর ঢেলে বললেন,
“ওরা দশ চাচ্ছে, তুই বিশ দিয়ে দেয়। তোর টাকার কী অভাব..! মেয়েও তো দেখতে হবে আমাদের।
লিপি বেগমের কথায় উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠল সবাই। নুসরাত চোখ উল্টিয়ে চেয়ে আছে জায়িনের দিকে। জায়িন বলে ওঠল,”বাড়িতে গিয়ে চেক দিয়ে দিব।
সবাই জিদ্দি সুরে বলল,
“আমাদের এখনই চাই!
সবার জিদের কাছে হেরে হেলাল সাহেব আর শোহেব সাহবে মিলে নিজেরা কিছু টাকা দিলেন। পরে টাকা দিবেন বলে আশ্বাস দিয়ে রাখলেন।
কনভেনশন হলের ভেতর প্রথমে জায়িনদের এন্ট্রি হলো এরপর ব্রাইডের। ব্রাইডের সময় আলোটা সামান্য কমিয়ে দেওয়া হলো। শব্দ করে খুলে গেল দরজা। সেখান থেকে থুতনি পর্যন্ত ঘোমটা টানা ইসরাত বের হয়ে আসলো। এসে দাঁড়াল সুন্দর করে সাজানো জায়গায়। যেখান দিয়ে তার এন্ট্রি হবে সেখানে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে oonchi oonchi deewarein. ইসরাতের হাত চেপে ধরে রেখেছে নুসরাত, তার পেছনের কাপড় সামলাচ্ছে ইরহাম, মমো, সৌরভি। কিছুদূর হেঁটে যেতেই এসে বাপ চাচা সবাই তার পাশে দাঁড়াল। নুসরাত ইসরাতের হাতের ভার হস্তান্তর করল নাছির সাহেবের হাতে। পুরো পরিবারের পুরুষেরা সবাই বুকে আড়াআড়ি হাত বেঁধে তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল। আরশ জায়িনের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে বলে ওঠল,”মনে হচ্ছে, পলিটিক্স করতে যাচ্ছেন উনারা। এমনভাবে দাঁড়ানো মানে কী..!
জায়িন নিজেও অদ্ভুতভাবে চেয়ে আছে সবার দিকে। তাদের কথা বলার ভেতর আবার আলো নিভে গেল। অন্ধকার হয়ে গেল পুরো কনভেনশন হল৷ এর মধ্যে মৌলভী সাহেব এসে হাজির হলেন সেখানে।
বাহিরে ঘুরি ঘুরি বৃষ্টি হওয়ায় ঠিক করা হলো কনভেনশন হলের ভেতর আকদ করানো হবে। স্টেজের চারিপাশে থাকা ক্লাসি চেয়ারে বসে আছেন আত্মীয় স্বজন। ইসরাতকে এনে জায়িনের পাশে বসানো হলো না৷ জায়িনের বিপরীত পাশে বসেনো হলো৷ মাঝখানে ফুল দিয়ে সাজানো ছিল এপাশে জায়িন ওপাশে ইসরাত। জায়িনের কাছে অদ্ভুত ঠেকল ইসরাতকে। ফুলের আড়ালে থেকে দেখে মনে হলো একটু বেশি মোটা আজ ইসরাতকে দেখাচ্ছে। ইসরাত তো এত স্বাস্থ্যবান না। পরপর মনে হলো হতে পারে মোটা কাপড় পরায় এমন দেখাচ্ছে, কিন্তু..! নিজের চিন্তা একপাশে ফেলে সে বসল নড়েচড়ে। মৌলভী সাহেবের হাতে মাইক। জায়িনের পাশে মাইক হাতে আরশ দাঁড়িয়ে আর ইসরাতের পাশে মমো। আহান, ইরহাম, নুসরাত তিনটাই উধাও। আশেপাশে কোথাও তারা নেই। এটা দেখেও জায়িনের কাছে সন্দেহজনক লাগল। ইসরাতকে রেখে তিন মাথা উধাও হওয়ার মতো না, তাহলে এরা উধাও হলো কেন..! মৌলভী সাহেব একে একে সব জিজ্ঞেস করা শেষে বলে ওঠলেন,”এই বিয়েতে রাজী থাকলে বলো মা কবুল..!
ইসরাত নিজের মুখের সামনে মাইক নিয়ে ধরতেই, শব্দ হলো,”কবুল,কবুল, কবুল..!
জায়িনকে বলতেই সে ত্যাড়া চোখে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠল,”কবুল..!
পরপর উঠে দাঁড়াল নিজের জায়গা থেকে। সন্দেহজনক দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রেখে সামনে থাকা ফুলের আবরণ গুলো সরাল। সবাই যখন আলহামদুলিল্লাহ বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন সামনে থেকে জায়িনের বিকট শব্দের চিৎকার ভেসে আসলো ,”আমার বউ কোথায়?
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৭
আলহামদুলিল্লাহ বলতে ভুলে গিয়ে সবাই জায়িনের পানে চাইলেন। দেখলেন জায়িনের সাথে গুলুমুলু দেখতে একটা মেয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে অস্বস্তিজনক হাসি। সবাই বিস্মিত, বিমূর্ত নয়নে চেয়ে থেকে একই সুরে বললেন,”আমার বউ কই? আর এ বা কে?
কনভেনশন হল জুড়ে রবো পড়ে গেল বউ কোথায়, বউ কোথায়, কিন্তু বউকে কেউ কোথাও খুঁজে পেল না।