প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০ (২)
জান্নাত নুসরাত

কিছু মুহুর্ত পূর্বেই জায়িন আর ইসরাত নিজ নিজ রুমে প্রবেশ করেছে রেস্ট নেওয়ার জন্য, তারপরই নুসরাত, ইরহাম, আহান মমো এমনকি মাহাদি দরজার সাথে কান লাগিয়ে বসে আছে। অনেকক্ষণ যাবত বসে থাকার পরও কোনো শব্দ আসলো না ওপাশ হতে। একে অন্ধকার তার উপর মশার উৎপাতে ততক্ষণে কান পেতে বসে থাকা সকলেরই অবস্থা কাহিল।

টিকটিক করে ঘড়ির কাটায় বারোটা বাজছে। মাহাদি মশার কামড় খেতে খেতে একসময় বিরক্ত হয়ে নুসরাতের দিকে সরাসরি তাকাল। আধো অন্ধকারে তার নিকট ঠেকল নুসরাত একদম লক করা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যাবে। অবাক কন্ঠে ফিসফিসিয়ে ডাক দিল,”নুসরাত..!
পেছন থেকে মাহাদির কথা শুধরে দিয়ে আরশ বলে ওঠল,”নট নুসরাত, কল হার ভাবী।
মাহাদি মাথা দোলাল উপর নিচ। নিজে নিজেকে বলল,”তা তো ঠিক আছে, কিন্তু আরশের…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথা শেষ করে পিছু ফিরতেই খেয়াল হলো আরশ দাঁড়িয়ে আছে নিজের সুঠাম দেহ নিয়ে। কিছু বলতে নিবে আরশ দাঁত কিড়মিড়িয়ে মাহাদির শোনার মতো ধমকাল,”এখানে কী, এদের সাথে মিলে তুই ও বাচ্চা হয়েছিস?
মাহাদি হাত দিয়ে নিজের গলার কাছে চেপে ধরে কসম কাটল। বলল,”আমি আসতে চাইনি, নুসরাআ..
আরশকে ভ্রু উচাতে দেখেই মাহাদি মুখে জিপার টানার মতো দেখাল। মৃদু সুরে বলল,”আই মিন ভাবী নিয়ে আসছে।

আরশ হাত তুলে করিডোরের দিকে ইশারা করতেই মাহাদি পালাল। যেতে যেতে ইরহাম, আহানকে চিমটি কাটতে ভুলল না। চিমটি খেয়ে ইরহাম গালি দিল,”কোন সাউয়া চিমটি কাটছেএএ..
বলা শেষ করতে পারল না দৃষ্টি সীমা ভাসল আরশের গম্ভীর মুখখানি। চুপচাপ অবলোকন করা শেষে আলগোছে উঠে গেল সে। সাথে করে নিয়ে গেল মমো আর আহানকে। আরশের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ইরহামের কান ঘেঁষে বয়ে গেল একটা কথা। সেটা হলো,”সাউন্ডপ্রুফ রুমের দরজার সামনে কান পেতে বসে আছে, মাথামোটা, গাধা।

ইরহামের টনক নড়ল তখনই আরেব্বাস, সে তো ভুলেই বসেছিল ওই রুম সাউন্ড প্রুফ। ইরহাম পিছু ফিরে তাকাতেই দেখল ছুরির মতো চোখা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরশ, পিছনে আর পা বাড়ানো হলো না তার। বিব্রত হেসে করিডোরের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। দু-মিনিট পরই দেখা মিলল তিনটা মাথার পিলারের পেছন থেকে৷ একে অন্যের উপর ঠেস দিয়ে বসে চুপিচুপি সামনের দৃশ্য দেখার চেষ্টা চালাচ্ছে যারা। এর মধ্যে তিনজনের কানের কাছে ভেসে আসলো এতক্ষণের সকল খবর থেকে বেখবর নুসরাতের কন্ঠ,”এই ইরহাইম্মা, কিছু শোনা যায় না কেন?
সকলেই নিজেদের মাথায় হাত দিয়ে থাপ্পড় মারল। এই মেয়ের মাথার রগ নির্ঘাত একটা ছিঁড়া না হয় নিজের পাশ থেকে এতক্ষণে জ্যান্ত চারটা মানুষ উধাও হয়ে গেছে তার ধারণাটুকু থাকবে না কেন!
নুসরাতের প্রশ্নের উত্তর দিতে আরশের গমগমে গলার আওয়াজ ভেসে আসলো,”সাউন্ডপ্রুফ রুম..!
নুসরাত মাথা দোলাল দরজা সাথে মাথা লাগিয়ে রেখে। অবাক কন্ঠে বলল,”কিন্তু তোর গলাটা এমন কেন শোনাচ্ছে?
আরশ শুধাল,

“কেমন শোনাচ্ছে?
নুসরাত সেকেন্ড খানেকের জন্য থামল। পায়ের কাছে আশেপাশে উড়োউড়ি করা মশা হাত দিয়ে মারতে মারতে বলল,” ওই আরশ ষাঁড়ের মতো।
নুসরাতের কথায় লুকিয়ে থাকা তিনজন মাথায় আবারো হাত দিল। আকস্মিক ভুতের ন্যায় তাদের পাশ ঘেঁষে উদয় হলো মাহাদির চাঁদ মুখখানি। সকলেই ভয় পেয়ে কেঁপে উঠতেই মাহাদি আশ্বস্থ করল,”এটা আমি, মাহাদি!
মাহাদির কথায় সকলে হাফ ছেড়ে বাচল। মৃদু কন্ঠে বলে ওঠল,”ভয় পেয়ে গেছিলাম একদম।
সকলেই সামনের দিকে তাকাল আবার। মনোযোগ দিল নুসরাত আর আরশের কথায়। আরশ হিসহিসিয়ে শুধাল,”ওয়াআট দ্যা ফা..? আমি ষাঁড়?

নুসরাত আরশের মুখে ঠাস করে থাপ্পড় মারল। ঠোঁট দিয়ে বাক্য বের করার আগেই আবারো গোৎ গোৎ করে আরশ শুধাল,”ওয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুয়িং, নুসরাত নাছির!
নুসরাত বিরক্ত হয়ে ফিরে তাকাল আরশের দিকে। মুখে তখন চলছে অনবরত কথার বাহার,”কী বাল ছাল লাগিয়ে রেখেছিস, শুধু ওয়াট দ্যা, ওয়াট দ্যা করছিস কেন?

নুসরাত নিজের কথা শেষে ঠোঁট দুটো একত্রিত করতে পারল না, নিজের সামনে স্বয়ং আরশকে দেখে। অবিশ্বাস্য গোল গোল চোখে রণমূর্তি হয়ে হাঁটু গেড়ে তার সামনে দাঁড়ানো আরশকে দেখা শেষে আশপাশ খুঁজল সবাইকে। পিলারের পেছনে চোখ যেতেই মাহাদি দু-হাত উপরে তুলে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে ডেকে ওঠল,”ভাআআ
তার মুখ দু-হাতে চেপে ধরে ইরহাম টেনে নিয়ে চলে গেল। যতক্ষণে ইরহাম মাহাদিকে সরিয়ে নিবে ততক্ষণে আরশের কানের কাছে ওই শব্দটুকু পৌঁছে গেছে। শব্দের উৎস খুঁজতে তড়াক করে পিছু ফিরতেই নুসরাত উঠে দৌড় দেওয়ার পয়তারা করল, যেমন ভাবল তেমন কাজ করতে উঠে দৌড় দিতে নিবে আরশ শক্ত হাতে তার কব্জা চেপে ধরল। একটানে মেয়েলি শরীরটা নিজের সামনে এনে দাঁড় করাল। নিজে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শুধাল,”আমি ষাঁড়?
নুসরাত উপর নিচ একসাথে মাথা নাড়াতে নাড়াতে আবারো দু-দিকে মাথা নাড়াল। বলে ওঠল,”হ্যাঁ, না!
আরশ হিসহিসিয়ে বলে ওঠল,

“কোনটা বলবে সেটা আগে ঠিক করে নাও বেয়াদব!
নুসরাত নিজের হাত টেনে ছাড়াতে চাইল আরশের হাত থেকে, সে আরো বেশি শক্তি খাটিয়ে তা চেপে ধরল। এক পা দু-পা করে এগোলো সামনে। নুসরাত নিজেও সমান তালে পিছু যেতে লাগল। চোখের আকার সরু করে শুধাল,”সমস্যা কী? আগাচ্ছেন কেন আমার দিকে?
আরশ নুসরাতের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজে প্রশ্ন করল। সামান্য ভ্রু উচিয়ে নুসরাতের মতো করে জানতে চাইল,“সমস্যা কী? পিছু সরছ কেন তুমি?
নুসরাত তেতো কন্ঠে বলে ওঠল,

“আপনি আমার দিকে আগাচ্ছেন তাই তো আমি পিছনের দিকে সরে যাচ্ছি!
নুসরাতের কথা শেষ হতেই আরশের উত্তর আসলো এবার,“তুমি পিছনে সরে যাও তাই আমি সামনে আগাই। এত ভয় পাচ্ছো কেন আমায়, আমি কী তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?
নুসরাত মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“ আপনার উপর ভরসা নেই, খেয়ে ফেলতেই পারেন। আপনার মুখ চোখ দেখে তেমনই মনে হয়।
আরশ ঠোঁটের কোণ উচিয়ে ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠল,”ওয়াট রাবিশ!
নুসরাত একহাত আরশের মুখের সামনে তুলে ধরে বলে ওঠল“ইংরেজি এত ঝাড়েন কেন ভাই, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলুন।

আরশ ঠোঁটের কোণ উচিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নুসরাতের হাত তখনো তার হাতের মুষ্টিতে বন্দী। দু-জনে পেছনে সরতে সরতে একসময় পিঠ ঠেকে গেল নুসরাতের দরজার সাথে। নুসরাত চোখ তুলে তাকাতেই আরশ গ্রীবা বাঁকিয়ে নিচের দিকে নেমে আসলো, আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। নুসরাত নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরাতে নিবে, সেই মুহুর্তে হাতের ব্যালেন্স হারিয়ে আরশের গাল বরাবর একটা থাপ্পড় মেরে বসল। সম্পূর্ণ এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নুসরাত যতটা অবাক হলো তার থেকে দ্বিগুণ রেগে গেল আরশ। থাপ্পড়ের জোরে একপাশ হয়ে যাওয়া মুখটা যখন তুলে ধরল সামনে তখন নুসরাত একদম দেয়ালের সাথে সেটে গেল। আগুনের লেলিহান দাবানলের মতো ফোঁসফোঁসিয়ে জ্বলে উঠে চিৎকার করতে নিবে গিলে নিল ভেতরে৷ দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে উঠল। নুসরাত বিব্রত মুখে বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে মুখ খিঁচিয়ে নিয়ে মিনমিনিয়ে বলে ওঠল,”ভাই এ ভাই…আমি মারতে চাইনি, আল্লাহর কসম ভুলে মেরে দিয়েছি। ওহ আল্লাহ, বেশি লেগেছে?

নুসরাত হাত বাড়িয়ে আরশের গাল স্পর্শ করতে নিবে আরশ নুসরাতের হাত সরিয়ে দিল। পকেট থেকে দেশলাই বের করে আগুন জ্বালাতেই মৃদু লাল আলোয় দেখা মিলল নুসরাতের শ্যাম মুখখানি। আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে এদিকে তাকিয়ে সে। আরশ হাতের দেশলাই ধরে রাখল নুসরাতের মুখের সামনে। কপালে ভাঁজ ফেলে শীতল কন্ঠে বলে ওঠল,”ভীষণ ব্যথা লেগেছে, কী করবে তুমি? ব্যথা উধাও করে দিবে সুপারওমেন হয়ে।
নুসরাত গোল গোল চোখে চেয়ে রইল আরশের দিকে। মৃদু স্বরে কিছু বলতে নিবে আরশ কেটে দিল তাকে। বলল,”তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরেছ এবার আমারও কিছু একটা করা উচিত! তাহলে কী করা যায় নুসরাত নাছির, প্লিজ বলো, ওয়াট ক্যান আই ডু!
আরশ থুতনিতে হাত রেখে ভাববার মতো মুখের আকার ভঙ্গি করল। নুসরাত চোরা চোখে তাকিয়ে শুধাল,”কী করবেন আপনি?

আরশ গাল ঠেলে ঠোঁট উচিয়ে হাসল স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। একহাতে দেয়ালে ভর দিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে আসলো। হাতের নিভু নিভু আলোয় দেখল নুসরাতের প্রশ্নাত্মক চেহারাখানা। হিসহিসিয়ে নুসরাতের কানের কাছে বলল,”ওয়েট আ মিনিট প্রিন্সেসপেসা! নিজ চোখেই না হয় দেখে নিবে কী করি আমি!

নুসরাত নিজের মনে গুটি কয়েক শব্দ সাজিয়ে নিচের দিকে ঝোঁকানো মুখ উপরের দিকে তুলে কিছু বলতে ঠোঁট চোখা করল, আর তখনই তার ধ্যান, জ্ঞান, হুঁশ উড়িয়ে দিয়ে শীতল এক জোড়া পরশ বয়ে গেল মুখের নরম জায়গা জুড়ে। নুসরাত হকচকাল! হতবিহ্বল, নির্বাক, নির্বোধ চেহারা নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে অবিচল চেয়ে রইল সামনের অন্ধকারে। খোচা খোচা দাড়ির স্পর্শ লাগল গালে, সেই স্পর্শে নুসরাত নিজের স্বাভাবিক হুঁশে ফিরল, নড়েচড়ে উঠতেই দীর্ঘ সময় নিয়ে খাওয়া চুম্বন এর সমাপ্তি ঘটল।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০ 

কর্ণপাত হলো মৃদু শব্দের। নুসরাত সেই যে হা করেছিল আর তা হা-ই রইল মিনিট দশেক। বৃহৎকার অক্ষিগোলক আরশের দিকে ঘুরাল হতবিহ্বল মুখে। নির্বিকার চিত্তে গা ছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়ানো আরশকে দেখে মুখ ফসকে বলে ফেলল,”করলেনটা কী আপনি?
আরশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নুসরাতের দিকে ঝুঁকে থেকে দ্বিধাহীন কন্ঠে উত্তর দিল,“ইউ স্লেপড মি ওয়ান্স, এন্ড আই গট আ কিস। বাই দ্যা ওয়ে, থ্যাংক্সস ফর দ্যা স্লেপ, আই ওয়ান্ট দিজ টাইপ অফ স্লেপ এভ্রিডে।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪১

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here