প্রিয় বেগম পর্ব ২২

প্রিয় বেগম পর্ব ২২
পুষ্পিতা প্রিমা

ভাইয়ের গাল স্পর্শ করামাত্রই সোহিনীকে টেনে নিয়ে আসেন শেরতাজ সাহেব। ধমকে বলেন,
তোমার ভাইজান তোমার জন্য আসেনি। এসেছে নিজের স্বার্থের জন্য। নাহলে জিজ্ঞেস করো এতগুলো বছর ও কোথায় ছিল। কেন আসেনি। এত আবেগি হওয়া ভালো নয়।
সোহিনী কাঁদতে থাকে। শেরহাম চোখ সরিয়ে নেয়। তার পাথরের মতো মুখাবয়বে বদল দেখলো না কেউ।
বাজখাঁই গলায় অপরূপাকে জিজ্ঞেস করে,

তোমাকে ওরা মেরেছে? মহল থেকে বের করে দিচ্ছিলো তাই না? এরা এসব ভালোই পারে । তুমি এদের আরও কত রূপ দেখবে। এরা এমনই নিষ্ঠুর, পাষাণ, হৃদয়হীন অপা।
সকলেই আঁতকে উঠে শেরহামের মুখ নিঃসৃত সম্বোধনে। শেহজাদ বিস্ময়াবহ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। অপা? ভাইজান রূপাকে চেনে? রূপাও? এজন্যই কি আজ ভাইজানের সম্বন্ধে সব জানতে চাচ্ছিলো রূপা?
অপরূপা নিস্তেজ, দুর্বলচিত্তে এখনো চেয়ে আছে। সত্যি সত্যি রহমান এসেছে? উনি অভিভাবকহীন নয় তাহলে? শেরহাম সুলতান! এই পরিবারের বড় সন্তান?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এজন্যই রাজ্যর প্রতি তার এত ঝোঁক? নিজের অধিকার আদায় করতে এসেছে? অপরূপার মাথায় যন্ত্রণা হয়। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। না, সে আর কিছু ভাবতে পারছে না। নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না।
শেরতাজ সাহেব কৌতূহল ভরা গলায় বলেন, তুমি ওকে চেনো? তারমানে তুমি ওকে পাঠিয়েছ? কেন পাঠিয়েছ? এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে? বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি তোমার মধ্যে। কি চাও তুমি?
খোদেজাসহ বাকি সবাই অবাকান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। শেরহাম খেঁকিয়ে উঠে বলে,
আমি প্রশ্ন করেছি। আমার উত্তর আগে চাই।
শেহজাদ রাশভারি গলায় ডেকে উঠলো,
বড় ভাইজান তুমি..

কথা শেষ করতে দেয় না শেরহাম। বলে,
আমি কারো ভাইজান নয়। একদম আমাকে ভাইজান ডাকবি না। সরে যা।
শেহজাদ পিছিয়ে যায়। দীর্ঘ পনের বছর পর দেখা হওয়া বড় ভাইয়ের মুখে এমন কঠোর উক্তি তার বোধগম্য হয় না। যার সাথে একসাথে পনেরটা বছর বেড়ে উঠা, একসাথে তলোয়ার শেখা, ধনুবিদ্যা শেখা, ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলা শিকারের উদ্দেশ্যে, কমলবিলে সাঁতার কাটা। ভাইজান আরও নির্দয়, পাষাণ নিষ্ঠুররূপে ফিরে এল।
শেরহাম পুনরায় কটমট গলায় বলে উঠে,
যার গায়ে হাত তুলেছিস। জানিস সে কে? কোনো ধারণা আছে তোদের?
শেহজাদ অপরূপার দিকে দৃষ্টি ফেলে। জানতে চায়,

কে?
অপরূপা নিভুনিভু চোখে বহুকষ্টে তাকায়। বড় বড় শ্বাস টানে। সিভান উঁকি দিয়ে বলল,
তুমি সুন্দর বউয়ের বর? এজন্য সবাইকে বকছো?
শেরহাম সিভানকে গভীর পর্যবেক্ষণ করে। বলে,
ঠিক।
শেহজাদ পুনঃ বিস্ময়-বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। অন্তঃপটে তীব্র ভাঙচুর হয়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে।
তারমানে ভাইজান এখনো সেই জাদুবিদ্যার কাজে অভ্যস্ত? ভালোবাসার নামে রূপাকে দিনের পর দিন ব্যবহার করেছে? এখনো ভালো সাজছে! এই সেই ছদ্মবেশী রহমান, সামাদ, মুরাদ। বাহ, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটা নিষ্পাপ ফুলের মতো মেয়েকে পর্যন্ত ছাড়লো না। কি চায় ভাইজান?

অপরূপা যন্ত্রণাদগ্ধ, আঘাতে মর্মাহত। তার কথা বলার শক্তিটুকু নেই। ঝিমিয়ে আসে শরীর। বন্ধ হয়ে আসে দুচোখ। টলতে টলতে আবছা আবছা
চোখে শেরহামকে দেখতে থাকে। অক্ষিপটে ভাসে দাদীর মৃত্যুর দৃশ্য। মিঠির মৃতদেহ। নিজের অসুস্থতার কথা। শেরহামের হাত খামচে ধরে ভগ্নকন্ঠে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এখানে থাকব না। এতদিন কোথায় ছিলেন? আমি এতগুলো জন্তুজানোয়ারের সাথে থাকব না। একমুহূর্তও না।
সবাই তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তার কপাল বেয়ে রক্ত ঝড়ছে।
শেহজাদ ব্যথিত চোখে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলে,
সাফায়াত ডাক্তারকে খবর পাঠাও।
জ্বি ভাইজান।,

সাফায়াত চলে যায়।
অপরূপা শেহজাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝরঝরে কেঁদে উঠে বলে,
দরকার নেই। আপনি আমায় এই মহলে থাকতে বলবেন না। আপনি আদেশ দিন। কেউ আমাকে ঘাটের কাছে রেখে আসুক। আমি আমার বাড়িতে চলে যাব।
তার প্রস্থানের কথায় শেহজাদের হৃদকম্পন বেড়ে যায় অচিরাৎ । অজানা আশঙ্কার সুনামি উত্তাল উঠে। শেরহাম অপরূপার হাত শক্ত করে ধরে কুপিতস্বরে বলে,
কোথাও যাবে না তুমি। এখানেই থাকবে। এটা তোমারও মহল। তুমি আমার ভাবী বেগম। এই মহলে তোমার অধিকার আছে অপা।
অপরূপা উচ্চবাক্য করার পর আর শক্তি খুঁজে পায় না। রক্তলাল চোখে চেয়ে থাকতে থাকতে
নির্জীব হয়ে আসে। টলতে থাকে। মাথা চেপে ধরে টলতে টলতে অচৈতন্য বরণ করে নেয়।
শেরহাম ওকে পাঁজাখোলা করে কোলে তুলে নেয়।হুংকার ছেড়ে বলে,

পথ ছাড়ো সবাই।
সকলেই পথ থেকে সরে দাঁড়ায়।
মহলে প্রবেশ করে সে। তার কোলে অপরূপার সুস্থির দেহ। সোহিনী তাকে নিয়ে যায় নির্দিষ্ট কক্ষের দিকে। শেরহাম সোহিনীকে অনুসরণ করে পা বাড়ায়। কক্ষে প্রবেশ করে অপরূপাকে চৌকিতে শায়িত করিয়ে দেয়। গালের পাশে আলতো চাপড় দিতে দিতে ডাকে,
অপা চোখ খোলো।
সায়রা, সোহিনী তাকে বাতাস করতে থাকে। ডাক্তার এসে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। শেরহাম ঢোকার আদেশ দিতেই ডাক্তার ভীতমনে পা বাড়ায়। মহলের থমথমে পরিবেশ দেখে যে কারো মনে ভয় জাগারই কথা। ডাক্তারও বেশ ভয় পেয়েছেন।

অপরূপার জ্ঞান ফিরে অনেকক্ষণ পর। জ্ঞান ফেরামাত্রই কপালে জ্বলুনির টের পায়। শেরহাম তার কাছে ঘেঁষে বসে কপালে ফুঁ দিতে দিতে বলে,
কমে যাবে।
অপরূপা চোখ বুঁজে থাকে। জ্বলুনি কমে আসতেই চট করে চোখ মেলে। ফুঁ দিতে থাকা মানুষটাকে সেদিন ডাকাতরূপে দেখেছিল মনে হতেই দূরে সরে পড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়ে। সায়রা আর সোহিনী কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। তারা বেরোতেই শেরহাম তাকে টেনে নিজের সাথে চেপে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
এবার নিকাহ না করে পালাবো না অপা।
অপরূপার বেড়ে উঠা নখের পুরোটা তখন তার গলায় গেঁথে গিয়েছে। তীব্র জ্বলুনি অনুভব হতেই সে অপরূপাকে ছেড়ে দেয়। বলে,
কি হয়েছে? এত রাগ দেখাচ্ছ কেন? আমার অনেক কথা বলার আছে তোমাকে।
দূরে যান।

সে যায় না। বরং অপরূপার গালের একপাশ হাত দিয়ে আগলে ধরে সে। বলে,
ওরা আমার মাকে মেরেছে। আমাকে মহল থেকে বের করে দিয়েছে। সব সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়ে কাকে দিয়েছে জানো? এক পালিত পুত্রকে।
অপরূপার অক্ষিকোটর হতে বিস্ময় স্ফুরিত হয়।
কে পালিত পুত্র?
শেহজাদ। ওর সাথে এই বংশের কারো সম্পর্ক নেই। তারপরও সব পেয়েছে ও। আমি ওদের রক্ত হয়ে কিছু পাইনি। ও আমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এই রাজ্যটা আমার। সম্রাট হওয়ার কথা আমার। অথচ সিংহাসনে কে বসে আছে দেখো।
আমি জানতাম না উনি পালিত পুত্র।
তুমি না। স্বয়ং সম্রাট নিজেও জানেনা তার সাথে এই মহলের কারো রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোমার গায়ে হাত তুলেছিল?

অপরূপা শব্দহীন চেয়ে থাকে। দু’পাশে মাথা নাড়ায়। বলে,
না। উনি ভালো মানুষ।
মুখোশ পড়ে থাকে ভালো মানুষের।
অপরূপা গর্জে উঠে,
মুখোশ তো আপনি পড়ে ছিলেন।
শেরহাম ওর কথায় হতচকিত হয়ে তাকায়।
আপনি ডাকাত সর্দার। আপনি আমাকে কোকেনের নেশা করিয়েছেন। আপনি আমার দাদীজানের মৃত্যুর কারণ। আপনি ওই নিষ্পাপ খরগোশটারও মৃত্যুর কারণ। আমাকে নেশাগ্রস্ত করিয়ে আপনার কি লাভ হলো? কি পেয়েছেন আপনি?

কলার ধরে ঝাঁকায় অপরূপা। শেরহাম ওর গাল আঁকড়ে ধরে বলে,
শান্ত হও। আমি তোমাকে সব বলব।
অপরূপা তার হাত সরিয়ে দেয়। বলে,
আমাকে ছুঁবেন না। খোদার কসম আপনি আমাকে ছুঁলে আমি নিজেকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করব।
শেরহাম ভীত হয় না। একজন পাষাণ, হৃদয়হীন ডাকাত সর্দার এমন ছোটখাটো ধমকে ভয় পায় না। বরং সে শক্ত করে নিজের সাথে অপরূপাকে চেপে ধরে বলে,
নিজের ভালো চাও তো আমার কথা শোনো অপা। ওরা তোমাকে বের করে দিলে আমি ছাড়া তোমার গতি কি?
অপরূপার হাত শিথিল হয়ে আসে। শেরহাম ওকে ছেড়ে দেয়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ওর মুখপানে চেয়ে থাকে অপরূপা।
আমার দুর্বলতাকে তাই কাজে লাগাচ্ছেন?

মোটেও না। আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে আমার হয়ে কাজ করতে হবে। আমার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। জীবনটা অনেক কঠিন। তুমি কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে? বেরিয়ে দেখো। শেয়াল কুকুর ছিঁড়ে খাবে। আমার দিকে তাকাও। আমার কথা শোনো। আমি তোমার খারাপ চাই না অপা। তুমি এই মহলের বেগম হবে। আমাদের সুখের সংসার হবে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি ডাকাতি ছেড়ে দেব। সব ছেড়ে দেব।
অপরূপার কোমলমতি মন গলে আসে। তার গাল আঁকড়ে ধরা হাতদুটের উপর হাত চেপে ধরে বলে,
সত্যি?

হ্যা সত্যি।
অপরূপা ওর হাত গাল থেকে নামিয়ে দেয়। বলে,
বিবাহের আগে এত কাছে আসা ভালো না।
শেরহাম বলে, আচ্ছা। যাব না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিকাহ করে নেব।
অপরূপা তোতলে বলে,
ক-খ-ন?
দলিলপত্র বুঝে নেই । তারপর। এই সপ্তাহেই। তোমাকে ঘাটে রেখে পালিয়েছি বলে রেগে আছ?
অপরূপা পিছু হাঁটে। কান্না চেপে রেখে বলে,
বললাম তো কাছে আসবেন না। দূরে থেকে কথা বলুন। নিকাহ হলে তখন কাছে আসবেন।
আচ্ছা যাচ্ছি না। কিন্তু তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছ কেন? কথা বলতে বলতে কাঁদছো।
না ভয় পাচ্ছি না। বলুন সেদিন কোথায় চলে গিয়েছিলেন।

ওইদিন বাজার থেকে ফিরে দেখি দূরের জাহাজে শেহজাদ আর সাফায়াত ছিল। আমি তাদের জাহাজটা চিনি। জাহাজটা আমার দাদাজানের। ওরা সরে পড়ার পর যেই তোমার কাছে আসবো তখনি দেখি চাচা তোমার সাথে কথা বলছে। আর তুমি চাচার সাথে চলে এলে। আমি ওদের সামনে আসতে পারতাম না অপা। তাই তোমার কাছে আসতে পারিনি। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি জানি। সেদিনই আমাদের নিকাহ হতো।
অপরূপা দেয়ালে চেপে গিয়ে ভেতরে কান্না গিলে বলে, কক্ষ থেকে যান। হুটহাট এই কক্ষে আসবেন না। নিকাহ হলে তখন।

শেরহাম একদম তার কাছাকাছি এগিয়ে আসে। অপরূপা মুখ তুলে বলে,
আপনাকে কি বললাম শুনতে পাননি? আমি এমনিতেই অপবিত্র হয়ে গিয়েছি। আপনার সাথে কি করে আমি বাড়ি ছাড়লাম তা ভেবে খোদার কাছে লজ্জিত হচ্ছি। দয়া করে যান। আমার পাপ আর বাড়াবেন না।
শেরহাম বলে,
আচ্ছা যাচ্ছি। তুমি কেঁদোনা।
বেরুবে ঠিক তখনি অপরূপা ডাক দেয়।
আপনার ছোট ভাই যে পালিতপুত্র তা উনাকে বলবেন না এখন।
শেরহাম ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়।
কেন? কেন বলব না?
অপরূপা দেয়ালে পিঠ চেপে লম্বা দম ফেলে বলে,
খোদার কসম আপনি যদি তা উনাকে বলে দেন আমি আপনার কোনো শর্ত মানব না।
ঠিক আছে। কিন্তু একসময় ঠিক বলব।
বেরিয়ে যায় সে। অপরূপা দেয়াল ঘেঁসে বসে পড়ে। কাঁদতে থাকে মাথার কাপড় টেনে ধরে। বিলাপ করে বলে “আমায় পথ দেখান খোদা, আমি পালাতে চাই এই মহল থেকে”।

রাতের খাবার দাবার কারো খাওয়া হয়নি। সকাল সকাল সবাই জেগে উঠেছে। ভোরের আলো ফুটেনি তখন। বোনদের কক্ষ হতে ভেসে আসা কোরআন তেলওয়াতের শব্দে পা থমকে যায় শেহজাদের। সেই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পর্দা সরিয়ে উঁকি দেয়। তটিনী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তেলওয়াত শেষ করে কোরআন শরিফটা নির্দিষ্ট স্থানে স্বসম্মানে রেখে দিয়ে এগিয়ে এল।
শেহজাদের হাতের মুঠোয় চাদর রাখা। মাথার চুল এলোমেলো হয়ে আছে। পান্ডুর, ফ্যাকাশে, রক্তশূণ্য মুখখানা দেখে তটিনীর মায়া হলো। খানিকটা ভীতমনে জানতে চাইলো,
মামীমা কাঁদছিলেন তোমাকে ফিরতে না দেখে। রাতে কিছু খাওনি।
মসজিদে ছিলাম। শিরনী খেয়েছি। মহলের কি অবস্থা?
কার কথা জানতে চেয়েছে তটিনীর বুঝতে অসুবিধে হলো না।

রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়েছে।
তার লোকজন?
তারা খায়নি। সাফায়াত ভাইজান বলল ঘোড়াশাল থেকে নাকি তিনটে ঘোড়া নিয়ে তারা পালিয়েছে। শেরহাম ভাইজানকে বলতেই উনি বললেন তারা পুনরায় ফিরে আসবে। তাদের উগ্র মেজাজের অশ্বগুলি ঘোড়াশালে দুটো ঘোড়াকে আহত করেছে।
শেহজাদের মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তটিনীর পেছন থেকে সায়রা ছুটে এল। শেহজাদকে দেখে তার মন খারাপে কান্না এল।
ভাইজান আপনি আম্মাকে দেখা দিয়ে আসুন। কেন উনার উপর রেগে আছেন? উনি আপনাকে নিয়ে আতঙ্কে থাকে তাই রূপার সাথে অমন ব্যবহার করে ফেলেছে।
আমি কারো উপর রেগে নেই।
তাহলে কেন মসজিদে রাত কাটিয়ে এলেন? আপনার অপেক্ষায় জেগে ছিলাম মধ্যরাত অব্দি। আপনি আমাদের শক্তি। মহলের ভীত তো আপনি। আপনাকে এভাবে দেখতে কষ্ট হচ্ছে।
শেহজাদ মুখ শক্ত করে বল,

আমি ক্ষণিকের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। কক্ষে খাবার পাঠিয়ে দাও। একসাথে খাব না।
জ্বি আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে কক্ষের দিকে পা বাড়ায় শেহজাদ। কেমন এক অদৃশ্য ভোজবাজিতে পা দুটো নিজকক্ষের দিকে যেতে যেতে থমকে যায় অন্য একটি কক্ষের সামনে। সে থামে জানালার কাছে গিয়ে। জানালা খোলা। পর্দা জড়ানো। শেহজাদ পর্দা সরায় ধীরেধীরে আলগোছে। পর্দা সরাতেই হ্দয় কম্পিত হয়।
সাদা ওড়নায় মাথা ঢাকা মেয়েটাকে দু-হাত তুলে জায়নামাজে বসে কাঁদতে দেখে পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়ে উঠে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় অচিরাৎ। কোথাও একটা তীব্র হাহাকার জুড়ে থাকে। সমস্ত ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়। রূপাকে সে সুস্থ করেছে, এবার দুঃখও ঘুচিয়ে দেবে।

একজোড়া পুরুষালী পদধ্বনি এসে থামে শেহজাদের কিছুটা পেছনে। শেহজাদ আর দাঁড়ায় না। চাদরটা কাঁধে তুলে নিজ কক্ষের দিকে এগুতেই থেমে যায় উপহাসবাক্যে।
রূপনগরের সম্রাট যুবতী মেয়েদের ঘরেও উঁকিঝুঁকি দেয় নাকি?
শেহজাদ ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। শেরহাম তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্রুর হাসে শেহজাদ। শেরহামের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বলে,
শুধু উঁকিঝুঁকি কেন কোকেইনও রাখি সাথে। জাদুবিদ্যাও ভালোই পারি।
শেহজাদ!!!

প্রিয় বেগম পর্ব ২১

প্রচন্ড আক্রোশে ফেটে পড়ে গর্জে উঠে শেরহাম। চট করে দরজা খুলে অপরূপা। দু’জনকে দেখে অতি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শেহজাদ একঝলক তার বদনখানি দেখে হাতের চাদরটা কাঁধে তুলে নিগূঢ় ভঙ্গিতে হেঁটে চলে যায়। শেরহাম অপরূপার দিকে তাকিয়ে বলে,
দরজা জানালা অযথা খোলা রাখবে না অপা।
অপরূপা তার মুখের উপর ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলে,
বেশ।

প্রিয় বেগম পর্ব ২৩