প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ১৭+১৮

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ১৭+১৮
পুষ্পিতা প্রিমা

ইমরান পলাতক। শেরহাম তাকে হন্য হয়ে খুঁজে ফিরেছে কিন্তু পায়নি। ইমরান কোথায় তার পরিবার পরিজন কেউ বলতে পারে না। তার চামচাগুলোকে শেরহাম বন্দী করলেও ইমরানের হদিস এখন অব্দি পাওয়া যায়নি।
শাহানা অসুস্থ হয়ে পড়েছে ক্রমশ। বাড়ির কারো মনে আনন্দ নেই। দুশ্চিন্তার প্রবল ছাপ সবার চোখেমুখে। এমনকি বাচ্চাগুলোর উপরও তার ছাপ পড়েছে। শেরহাম এ কয়দিন বাড়ি ফেরেনি। বাইরে বাইরে থেকেছে, খেয়েছে, ঘুমিয়েছে। শবনমের খোঁজ পাওয়ার জন্য সে পাগলের মতো ছুটছে যেদিকে সন্দেহ লাগছে সেদিকে। এমনকি অভিশপ্ত সেই পরাগ পাহাড়ে অব্দি গিয়েছে যেখানে আর কভু যাবে না বলে মনে মনে পণও করেছিল। কিন্তু গিয়ে দেখতে পেল পরাগ পাহাড়ের সেই বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে, পাহাড়িরা সেখানে চাষাবাদ করছে, জনপদও বাড়ছে সেখানে। যেখানে যেখানে তার সন্দেহ হয়েছিল সব জায়গায় গিয়েছে সে শবনমকে খুঁজতে। একটা জায়গাও বাদ রাখেনি।

কিন্তু না জাহাজ, না শবনম কোনোটিরই খোঁজ মেলেনি।
শেহজাদ আর সাফায়াত সৈন্যদের নিয়ে ইমরানদের গ্রাম থেকে জয়পুরের উদ্দেশ্যে ফিরছিলো। পথেই হঠাৎ দেখতে পেল কয়েকটা মহিলা আর পুরুষ তাদের সন্তানদের খোঁজে বেরিয়েছে। বিলাপ করছে ভীষণ। শেহজাদ আর সাফায়াত কৌতূহল বশত এগিয়ে গেল।
শেহজাদকে দেখামাত্র তারা জানালো, তাদের সন্তানরা আজ সতের দিন যাবত নিখোঁজ। তারা জাহাজে কাজ করে খায়। আবার সময়মতো বাড়িও ফেরে। কিন্তু গত সতেরদিন যাবত তাদের কোনো খোঁজখবর নেই। শেহজাদ কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলো, ” তাদের বয়স কত? ”
মহিলাগুলো জানালো আট নয় বছর হবে। এত অল্প বয়সী ছেলেদের কাজে দিয়ে দিয়েছে শুনে শেহজাদের রাগ হলেও এমতাবস্থায় সে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, আমরাও একই ভুক্তভোগী। আমাদের বোন ও নিখোঁজ। তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা এই কয়দিন ধরে। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাফায়াত তাদের জিজ্ঞেস করলো, ” আপনাদের বাচ্চারা কিসের কাজ করতো? ”
” তারা কুলির কাজ করতো সাহেব। যাত্রীদের বোঝাইপত্র নামিয়ে দিত। ”
” এসব ভারী কাজ করতো তারা? ”
” জ্বি, হুজুর। তবে তারা যাদের সাথে থাকতো তারা অনেক ভালো মানুষ হুজুর। ”
” কারা? ”
” ওই যাদের সাথে থাকতো তারা। ভাইজান বলে ডাকতো তাদের। সবাই বলছে তারা নাকি আমার বাছাদের ধরে নিয়ে গেছে। উনারা অমন কাজ করবেন না সাহেব। ”
শেহজাদ বলল, ” তাদের নাম জানেন আপনারা? ”
” না হুজুর। আমি খোদার কসম করে বলতে পারি বাছাদের ওরা ধরে নিয়ে যায়নি। তাদের অন্য কোনো বিপদ হয়েছে হুজুর। ”

শেহজাদ বলল, ” বিপদের উপর বিপদ। কোথায় খুঁজবো জাহাজটাকে। সৈন্যরা সব গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে এখন অব্দি কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সাফায়াত বলল, ” ভাইজান আমার মনে হয় এই ছেলেগুলো অপহরণের পেছনেও ইমরানের হাত আছে। তারা হয়ত শবনমের সাথে সাথে অপহরণ হয়েছে। ”
শেহজাদ অধীর গলায় বলল,
” হ্যা ঠিক বলেছ। কিন্তু এখন কি করব বলো। অপহরণ করে কোথায় রাখবে তাদের? মাথায় কিছু আসছেনা। আজও খালি হাতে বাড়ি ফিরবো? আমি জানিনা কি হবে। ”
সাফায়াত অভয় দিয়ে বলল,
” ভাইজান আমরা শবনমকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আমরা যা করার করেছি কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা আরেকটু ভেবে দেখলে শবনমের খোঁজ পেয়ে যাব। ”
শেহজাদ বলল, ” কিন্তু শবনম নিখোঁজ হয়েছে সবে তিনদিনে পড়তে চললো, কিন্তু ওই ছেলেগুলো সতের দিন। এটা ভেবেছ? ”
সাফায়াত কপাল চাপড়ে বলল,

” হায় আল্লাহ! সেটা তো মাথায় আসেনি। তবে এখন? ”
শেহজাদ হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” এখন ভাইজানের কাছে যেতে হবে। সবটা খুলে বলতে হবে। হতেও পারে ভাইজান যা জানেন তা আমরা জানিনা। কারণ ভাইজানের অনেক জানাশোনা আছে। ”
সাফায়াত তার কথায় সম্মতি দিল। জয়পুরের বাড়ি ফিরতেই তারা দেখলো লাট্টু, মানিক আর আনোয়ার এসেছে। শেহজাদ তাদের দেখে এগিয়ে গেল। জানতে চাইলো,

” তোমরা কবে এসেছ? ”
” বড়সাহেব চিঠি পাঠিয়েছেন রওনা দেয়ার জন্য। সকালেই আগেই পৌঁছালাম। ”
” ভাইজানদের সাথে ছিলে? ”
” জ্বি সাহেব। ”
” কোথায় ভাইজান।”
” উত্তরের ঘাটে আছে। ”
” আমরা গেলে এখন পাব?”
” জ্বি সাহেব। ”
শেহজাদ আর একমুহূর্তও দেরী করলো না। তারা বাড়ির প্রাঙ্গন হতে বেরিয়ের যাওয়ার সময় তাদের ডাকতে ডাকতে ছুটে এল তটিনী। বলল,

” ভাইজান ওকে বাড়ি ফিরতে বলুন একবার। সারাদিন কোথায় থাকে, কি খায়। এভাবে চলতে থাকলে কি শবনমের খোঁজ পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে?”
সাফায়াত তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” আমি বলব। তুমি আম্মা আব্বাকে সামলাও। ”
তটিনী সজলনেত্রে তাদের বিদায় দিল। শোহরাব এসে তার পোশাক টেনে দাঁড়ালো। তটিনী তাকে কোলে তুলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তাদের প্রস্থান দেখলো। শোহরাব জিজ্ঞেস করলো,
” আম্মা, আব্বা কুথায়? ”
তটিনী তার গালে আদর করে বলল,

” আসবে। খুব শীঘ্রই আসবে সোনা। ”
তটিনী তাকে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল। আলিজা তাকে দেখে ছুটে এল। বলল,
” অ্যাই কালু ভাইচানেল আম্মা কালুআব্বা এখুনো আচেনাই কেন? তুমাল সাথি লাক কলচে? ”
তটিনী তার গালে হাত বুলিয়ে বলল,
” হ্যা। ”
” তুমি ডুক্কু পাচো? ”
” হুহহ। ”
” কালু আব্বা দুচতুমু কলচে আবাল? ”
” হ্যা। ”
” আমি আমাল আব্বাকে বুলে দিবো। আব্বা কালুআব্বাকে বোকা দিবে। কিমন? ”
তটিনী বলল,
” আচ্ছা। ”
তটিনীর সাথে কথা বলা শেষে দৌড়ে দৌড়ে চলে গেল সে। তটিনী শোহরাবকে নিয়ে তার কক্ষে চলে গেল। শোহরাব নাকিসুরে কান্নার তাল তুলে বলল,
” আব্বা! ”
তটিনী “চ” কারান্ত শব্দ করে বলল,
” কোথায় পাব আমি তোমার আব্বাকে? আজব!”
শোহরাব বকা খেয়ে দুচোখ তার কাঁধে চেপে ধরলো।

বাঘটা গোৎগোৎ শব্দ তুলে ধড়ফড় করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সেখানেই। হরিণ ছানা শিকারের লোভে বাঘটি ছুটে এসেছিল গহীন জঙ্গলের ভেতর থেকে। যদিও বাঘটাকে আসার পর থেকে এই পঞ্চম বারের মতো দেখা গিয়েছে। নাদির আর কাশিফ কেউই মারতে চায়নি, শুধুই তাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেটি এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে হরিণ ছানার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে কে জানতো?
শবনম ঢিবি থেকে পড়ে গিয়েছে। কোমরে তীব্র ব্যাথা পেয়েছে।
হরিণ ছানাটি আচমকা তার হাত ছুটতে ছুটতে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছিলো। শবনমও তার পেছন পেছন ছুটতে শুরু করলো তখন। কিন্তু বাঘের মুখে গিয়ে পড়বে তা কে জানতো?

বাঘটিকে দেখামাত্র হরিণ ছানা ফের শবনমের দিকে ছুটতে শুরু করলো আর বাঘটি হরিণ ছানার পিছুপিছু। শবনমও তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। বাঘটিকে দেখে সে ছুটবে নাকি হরিণছানার প্রাণ বাঁচাবে? তার মাথা কাজ করছিলো না তখন। তার চিৎকার শুনে কাশিফ নাদির সকলেই ছুটে এল তন্মধ্যে। ভাগ্যিস নাদিরের হাতে বন্দুক ছিলো। সে তাড়াহুড়ো করে বন্দুক ছুঁড়লো, গুলি খেয়ে বাঘটি এক জায়গায় পড়ে গেল। আর সাথে সাথে গুলির শব্দে ভয়ে সাথে হরিণ ছানা তার দিকে ছুটে আসায় শবনমও ধাক্কা খেলা গড়িয়ে নীচে পড়ে গেল।
ছানাটি এখন দাঁড়িয়ে গা ঝাড়ছে। নাদির শবনমের কাছে ছুটে এসে দেখলো শবনম ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। নাদির এসে তার হাত ধরতেই শবনম কেঁদে উঠে বলল, ” আমি দাঁড়াচ্ছি। ”

নাদির হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ” ধীরেধীরে উঠুন।’
শবনম তার হাতের উপর ভর রেখে ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ালো। হরিণছানাটি বাঘটি থেকে দূরে দাঁড়িয়ে এখনো গা ঝেড়ে চলেছে। বাঘটির মৃতদেহ দেখে তরতর করে ঘেমে উঠলো শবনম। নাদির তাকে লক্ষ্য করছিলো। শবনম তার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাতেই নাদির সশব্দে হেসে উঠে বলল,
” আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছে তাই মার খেয়েছে।”
বলেই সে হাসলো। শবনম সরু চোখে চেয়ে বলল,
” আমাকে নিয়ে গেলে আপনার কি?”
নাদিম হাঁটতে ঢিল ছুঁড়লো দূরে। বলল,
” আপনি আমার আত্মীয়। আপনার প্রাণ বাঁচানো আমার কাছে ফরজ। ”
শবনম বলল, ” একথা মনে থাকে যেন। পরবর্তীতে ভুলে যাবেন না আবার। ”
নাদির থেমে তার দিকে ফিরে তাকালো। শবনম ততক্ষণে মৃদু হেসে চলে গিয়েছে দূরে। নাদির চেয়েই রইলো।

শেরহামকে ওই ছেলেগুলোর বিষয়ে অবগত করার পর তাদের অভিভাবকদেরকে শেহজাদ ডেকে নিল। তার ঘাটেই বসা ছিলো। বিলাপ করে যাচ্ছিলো। শেরহাম তাদের অনেক ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো। তারা সব প্রশ্নের উত্তরও ঠিকঠাক দিল। শেরহামের প্রশ্নের ধরণ শেহজাদ বুঝতে পেরেছিল ভাইজান কিছু একটা বুঝতে পেরেছে তাই এতকিছু জানতে চায়ছে। প্রশ্নউত্তর পর্ব শেষে শেরহাম জানতে পারলো ছেলেগুলো যাদের সাথে কাজ করতো তারা বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, অনেক দূর-দূরান্ত অব্দি ঘুরতে যায়। কোনো সময় একদিন কি দুইদিন, কিংবা এক সপ্তাহের জন্য। অভিভাবকদের চিন্তার কারণ হচ্ছে তাদের বাচ্চারা ঘুরতে যাবে এটাও বলে যায়নি, তারপরও আজ সতেরটা দিন কোনো খোঁজ-খবর নেই। না তাদের সেই জাহাজটার কোনো হদিস আছে। কিছু পয়সাকড়ি দিয়ে ছেলেগুলোর অভিভাবকদের সে আশ্বাস দিল এই বলে তাদের ছেলেরা ফিরবে যদি ওই জাহাজটার হদিস পাওয়া যায়। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা। সন্তান শোকে কাতর মাতা-পিতা বিদায় নিতেই শেহজাদ বলল,

” কি বুঝেছ ভাইজান? দুটো জাহাজ নিরুদ্দেশ হওয়ার পেছনে কি ইমরানের লোকরা আছে? ”
” ওই শুয়োরের বাচ্চাকে হাতের কাছে পেলে সেটা নিশ্চিত হতাম। ”
শেহজাদ ভড়কে গেল শেরহামের কথা শুনে। বলল,
” তুমি কি দুপুরে খেয়েছ? ”
” হ্যা। খেয়েছি। তোরা বাড়ি যাহ। আমার কাজ আছে। ”
” তুমি কি কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছো? ”
শেরহাম এত প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয়ে বলল,
” তা জেনে তোদের কাজ নেই। বাড়ি যাহ। ”
সাফায়াত বলল,
” আমরা তো বাচ্চা নই ভাইজান। আপনি যদি কোথাও যাওয়ার নিয়ত করে থাকেন তাহলে আমাদেরও সাথে নিয়ে যান। আপনার বিপদ-আপদ হতে পারে। ”
শেরহাম কপাল কুঞ্চিত করে বলল,

” আমি যা জানি, যা চিনি, যে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে পারব তা তোরা পারবি? কথা না বাড়িয়ে বাড়ি যা। ”
শেহজাদ তার একথা শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
” তনী তোমার জন্য চিন্তা করছে। ও যদি জানে আমরা তোমার সঙ্গে যায়নি তাহলে..
শেরহাম কর্কশ গলায় বলল,
” কোথায় যাচ্ছি আমি যে তনীকে গিয়ে তোদের জবাবদিহি করতে হবে? ওকে বলে দিবি ওর বাপের বাড়ি আমি আর যাব না। শবনমকে নিয়ে আমি রূপনগরে যাব, ওদের বাপের বাড়িতে নয়। ”
সাফায়াত বলল,

” ভাইজান আপনি..
” আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তোরা বাড়ি যাহ..
শেহজাদ বলল, ” আমরা বাড়ি গিয়ে বসে থাকবো? ”
” দরকার পড়লে তা-ই থাক। তাও আমার মাথা খাস না। ”
শেহজাদ সাফায়াতের দিকে চেয়ে ইশারায় কিছু বললো। সাফায়াত বুঝতে পেরে শেরহামকে যেতে দিল। শেরহাম যেতেই শেহজাদ বলল,
” আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে ভাইজান কোথায় যাচ্ছে। ভাইজান নিশ্চয়ই কিছুর হদিস পেয়েছেন।”
সাফায়াত বলল, ” এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে আমরা খোঁজ নিইনি, এমনও জায়গা আছে যেখানে আমরা যায়নি এখনো? আমরা চিনিনা কিন্তু ভাইজান চেনে? ”
” হতেও পারে। ভাইজান এমন অনেক জায়গায় বিচরণ করেছে যা আমরা চোখেও দেখিনি। ”
সাফায়াত শেহজাদের কথায় আশার আলো দেখতে পেল। খানিকতা আশ্বস্ত হলো, বুকের ভার কমলো এই ভেবে বোনটা হয়ত ফিরবে সুস্থ অবস্থায়! আল্লাহ যেন কোনো দুঃসংবাদ না দেন।

বালুচরি দ্বীপে জংলীদের বসবাস। তাদের ভয়ে কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত এই দ্বীপ বসতি গড়ে তুলতে পারেনি। এমনও শোনা গেছে মানুষ মেরে তারা ঝুলিয়ে রেখেছিল যাতে পরবর্তীতে কোনো মানুষ এই দ্বীপের দিকে পা বাড়াতে ভয় পায়। সমুদ্রের নিকটে আগে তাদের ঘেরাও থাকলেও সমুদ্রের দখলের তোপে পড়ে তার জঙ্গলের গহীনে বাস করা শুরু করেছে। সুযোগ পেলেই হামলে পড়ে মানুষের উপর। আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা। শেরহাম সুলতান মহল থেকে বিতাড়িত হওয়ার তিন বছর পর চন্দ্রলালের সাথে এই নির্জন দ্বীপে এসেছিল চন্দ্রলালের কোনো এক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে। শেরহাম তখন শুধুই তার সঙ্গ দিয়েছে।

বালুচরীতে পা দেয়ার সাথে সাথেই জংলীরা তাদের উপর হামলা করে। চন্দ্রলালের তন্ত্রমন্ত্র তখনো অতটা শক্তিশালী নয়। তবে শেরহাম সুলতান তখন দানবের মতো শক্তিশালী, রগচটা, টগবগে যুবক। সে একাহাতে জংলীদের পরাস্ত করলো সেদিন। পরিবার থেকে পাওয়া অস্ত্রশিক্ষায় দীক্ষিত ছিল সে। দাদাজান নিজহাতে তাকে আর শেহজাদকে অস্ত্র চালনা শিখিয়েছিলেন। সেই অস্ত্রশিক্ষার বলে সে জংলীদের পরাজিত করে সেদিন নিজেকে আর চন্দ্রলালের প্রাণ বাঁচায় জংলীদের হাত থেকে। তারপর প্রায় দুই সপ্তাহের মতো থাকে সেই বালুচরী দ্বীপে ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে, জংলীদের সাথে দিনেরাতে যুদ্ধ করে। তার এত এত সংগ্রাম সব যে অসৎ ছিল, এবং বিফলেই যাবে তা নিয়ে মনে কখনো প্রশ্নই উঠেনি তখন। প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধস্পৃহা তাকে অন্ধ করে চন্দ্রলালের কুকর্মের সঙ্গী হতে বাধ্য করেছিল। অথচ আজ সেই বিশ্রী, জঘন্য, ভয়ংকর, ঘৃণিত অতীত কোথায় আর সে কোথায়?

ভুলে হোক কিংবা জেদে, কোনো এক দিন এক টুকরো আলো এসে তাকে আচমকা টেনে নিয়ে গেল সেই অন্ধকুঠুরি হতে। যে আলো তাকে চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছে, জীবনের মানে চিনতে শিখিয়েছে, অন্ধকার আর মিথ্যার খবল থেকে মুক্ত করেছে, সেই আলোর রোশনাই আজ সে খাঁটি সোনা। আগের চাইতেও অধিক শক্তিশালী। এখন তার শরীর নয়, নিজের ভেতরকারও মনোবল অত্যধিক প্রগাঢ়, শক্তিধর ও মজবুত। বালুচরী দ্বীপের উদ্দেশ্য আজ সে রওনা দিয়েছে পূর্বের অহংকারী, বদমেজাজি, অসৎ, লোভী জাদুকর হয়ে নয়, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে যার আজ সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। বিপদের সম্মুখীন হতে হবে জেনেও সে ঝু্ঁকি নিয়ে বালুচরী জংলীদের দ্বীপে রওনা দিল প্রায় দুপুরের পরপর আর পৌঁছেছে মাঝ রাত্রিরে।

তার সাথে মানিক আর আনোয়ার ছিল, আর জাহাজের এক ক্যাপ্টেন। তারা বালুচরীর দ্বীপের কাছাকাছি যেতে না যেতেই দেখতে পেল দুটো ভাঙা জাহাজ, একটি কয়েকদিন আগের ভাঙা জাহাজ যেটিতে অবশিষ্ট কিছুই নেই, কিন্তু অপরটও এখনো ভাঙনের কাজ চলছে। আর মস্তবড় বড় অস্ত্র দিয়ে জাহাজটি ভেঙে চলেছে জংলীরা। মানিক আনোয়ার সকলেই আতঙ্কিত হলো। শেরহাম আতঙ্কের চাইতে আনন্দিত হলো বেশি। কারণ জংলীরা যে জাহাজটি ভেঙে চলেছে এটি সেই জাহাজ যেটিতে শবনমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারমানে শবনমকে এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু পরেই বুক ধ্বক করে উঠলো এই ভেবে শবনম কোথায়?

সে বেঁচে আছে তো? জংলীরা তাকে বাঁচতে দিয়েছে? কিভাবে সে শবনমের খোঁজ পাবে? ইতোমধ্যে জংলীরা তাদের জাহাজটিকে লক্ষ্য করেছে। জাহাজটি ভেঙে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বোঝাই করে নিয়ে যেতে থাকলো তারা। শেরহাম জাহাজটিকে থামাতে বলে দূরবীন দিয়ে তাদের কাজকর্ম দেখতে লাগলো। বুঝতে পারলো, তাদের জাহাজকে আক্রমণ করার জন্য ওঁৎপেতে দাঁড়িয়ে আছে তারা। শেরহাম ভাবতে লাগলো কিভাবে তাদের মুখোমুখি হওয়া যায়। এতগুলো জংলীর সামনে একা একা যুদ্ধে নামা ঠিক হবে? তাও শবনমের কোনো খোঁজ পাওয়ার আগেই? পরম করুণাময় আল্লাহ পাককে সে স্মরণে আনলো। যার করুণায়, যার ইচ্ছেয় সে আজ একজন বিশুদ্ধ মানবে পরিণত হয়েছে, যিনি তার জীবনটাকে আলোকিত করার জন্য একজন উত্তম জীবনসঙ্গী দিয়েছে, প্রাপ্তি হিসেবে একটা ফুটফুটে সন্তান দিয়েছে তিনি নিশ্চয়ই এই ভয়ানক বিপদের সময়ও তাকে সাহায্য করবেন।

সে ক্যাপ্টেনকে বলল, জাহাজ ঘুরাতে, যাতে জংলীরা বুঝে তারা চলে যাচ্ছে। আর তা ভেবে চলে যায়। ক্যাপ্টেন তাই করলো। জাহাজ চলতে চলতে তাদের আড়াল হয়ে যেতেই তারা জাহাজের বাকি অংশ আগামীকালের জন্য বরাদ্দ রেখে চলে গেল। শেরহাম তারপরেই পা বালুচরি পাহাড়ে। কিন্তু যেতে না যেতেই দস্যুদল পড়ে গেল তাদের সম্মুখে। তাদের জাহাজের ভাঙচুর দূর থেকে দেখছিলো তারা। এমনিতেই তারা ক্ষুদার্ত তারউপর জংলীরা তাদের চাইতে হাজারগুন ভয়ংকর, তাদের সাথে লড়াই করার কথা ভুলেও ভাবতে পারেনি তারা। কিন্তু পরক্ষণে আরও একটি জাহাজের আগমন দেখে খুশিতে মনটা ভরে উঠলো তাদের কিন্তু যখন দেখলো সেই জাহাজ থেকে স্বয়ং শেরহাম সুলতান নামছেন তখন ভয়ে রক্ত হিম হয়ে এল। কারণ এই শেরহাম সুলতানের জন্যই তো ওই মেয়েগুলোকে তারা অপহরণ করেছিল। শেরহাম মানিক আর আনোয়ারকে ইশারা করতেই তারা দস্যুদের বেঁধে ফেলার জন্য ছুটে গেল। শেরহাম পিস্তল বের করে বলল,

” একজনও নড়বি না। নইলে জীবন্ত কবর দেব বললাম। বল, শবনম কোথায়? ”
মানিক আর আনোয়ার দলের প্রধান দুইজনকে ধরে ফেললো। বাকিরাও পালালো না। বসে পড়লো হাঁট গেড়ে। মাথা নামিয়ে হাতজোড় করে বলল,
” মাফ করেন হুজুর। মাইয়্যাগুলারে আমরা ছাইড়া দিছি। তারা কোথায় আছে জানিনা। ”
” মানে? ”
শেরহামের গর্জনে কেঁপে উঠে সকলে। আঁতকে উঠে। শেরহাম বলল,
” এই সবকটাকে জাহাজে বেঁধে রাখ। যদি শবনমকে আমি না পাই তাহলে তোদের ছিঁড়ে কুকুরকে খেতে দেব। সরা এদের। ”
মানিক, আনোয়ার আর জাহাজের ক্যাপ্টেন মিলে একে একে সবাইকে বেঁধে টানতে টানতে জাহাজে নিয়ে যায়। তারপর শবনমকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।

বাঘটিকে সবাই মিলে মাটি চাপা দিয়েছে। এত কাছ থেকে বাঘটিকে দেখে শবনমের বুকের কম্পন এখনো যায়নি। আজ তাদের রাতের খাবারেও বকের মাংস। রান্না বসাতে দেরী হয়েছে নাদিরের। শবনমের গায়ে জ্বর এসেছে তাই সে আর রান্নায় যায়নি। নাদির অবশ্য তাকে লেবুর গরমপানি করে দিয়েছিলো। শবনমের চোখমুখ জ্বলজ্বল করছে। শুকনো কাঠ আগুনে ফেলে তার চারপায়ে ছেলেগুলো সহ গোল করে বসেছে শবনম। বাঘটাকে কবর দিতে দিতে কাশিফ খবর নিয়ে এল দস্যুদের জাহাজটিও ভাঙচুর করছে জংলীরা। এদিকে ভুলেক্রমে চলে এলে শেষ। যেটুকু আশা ছিল নাদিরের সবটা শেষ জাহাজটা ভাঙচুর করছে শুনে। শবনমের শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। অসুস্থ শরীরে তার পরিবারের সবার কথা মনে পড়ছে। বিশেষ করে মায়ের কথা। ছেলেমেয়ের কিছু হলে আম্মা পাগলের মতো হয়ে যান। শবনমের এত কষ্ট হচ্ছে দেখলে উনি নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেত।

নাদির আমড়া দিয়ে টকপাতা রান্না করেছে। আর বকের মাংস পোঁড়া পোঁড়া করে রেঁধেছে। থানকুনি পাতা আর পোঁড়া মরিচের ভর্তাও করেছে। শবনমের খেতে ভালো লাগবে। কারণ জ্বর হলে ঝাল খাবার খেতে ভালো লাগে। ছেলেগুলো খেতে বসে গেছে। শবনম একা একা আগুনের পাশে বসে আছে।
নাদির হাতমুখ ধুঁয়ে এসে শবনমকে বলল,
” আপনি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন শবনম। বাঘটাকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। আর কোনো বাঘ এদিকে আসবে না। ”
শবনম চোখ তুলে তাকে দেখলো। জানতে চাইলো,
” আর কতদিন এখানে থাকবো ক্যাপ্টেন সাহেব? ”
নাদির চুপ হয়ে গেল। সে জানেনা এই কষ্টের দিনগুলি কবে ফুরোবে! কি উত্তর দেবে সে? শবনমের চোখ জ্বলজ্বল করছে। নাদির বুঝে পায় না এই মেয়েটার হুট করে মন খারাপ হয়ে যায়, আবার হুট করে কেমন হাসিখুশি। অদ্ভুত!
নাদির বলল

” আমার জাদু জানা থাকলে আপনাকে রূপনগরে রেখে আসতাম। এই কষ্টের মধ্যে রাখতাম না। কিন্তু আমি তো জাদুকর নই। ”
শবনম আগুনের আলোয় চকচক করা তার চোখের দিকে বিভ্রম চেয়ে থেকে বলল,
” জাদুকর হতে চান, তাও আমার জন্য? ”
নাদির আর কথা খুঁজে পেল না। শবনম মৃদু হেসে বলল,
” আপনার মামা-মামী, মামাতো ভাইদের কাছ থেকে আর কতদিন নিজেকে আড়ালে রাখবেন? ”
” আমি আড়ালে থাকতে চাইলেও, আপনি জেনেশুনে আড়ালে থাকতে দেবেন কেন? ”
শবনম গলায় জোর দিয়ে বলল,
” আমি আপনার কথা কাউকেই বলব না। ”
” কেন? ”
” কারণ বলার মতো আমি কেউ নই। আপনি যা আড়ালে রেখেছেন তা আমি কেন বলতে যাব? আপনি তো আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন।”

নাদির বসে উনুনে ছোট ছোট কাঠখড় ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলল,
” আমি নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করি। কে কি ভাববে তা নিয়ে ভাবি না। আমি আড়ালে থাকিনি, পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো হয়ত তাদের কাছে মনে হয়েছে আমি আর নেই। ”
শবনম দু-হাঁটু কুড়িয়ে বসে তাতে থুঁতনি রেখে ভাবুক গলায় বলল,
” আপনার মামা আপনার শোকে কাতর ছিল সেবার। উনি নিজেকে দোষারোপ করছিলেন। ”
” মায়ের পর আপু, আর আপুর পর মামারা আমাকে অনেকে ভালোবাসে। আমার কথা ছাড়ুন। আপনার কথা বলুন। ”
শবনম হেসে বলল,

” আমার কথা? আমার কথা বলার মতো কিছু নেই। নিকাহ করব, তারপর ঘর-সংসার করব, বাচ্চা-কাচ্চা মানুষ করব, স্বামীর সেবা করব, একজন কর্তব্যপরায়ণ বেগম হবো। এই তো এতটুকুই!”
নাদির এবার চমৎকার হেসে বলল,
” না না এটা এভাবে বলার মতো না। যা আপনার কাছে এতটুকুই তা আমার চোখে বিশাল। এত এত দায়-দায়িত্ব নিয়ে যারা সুখী তারা অসম্ভব শক্তিধর মানুষ। সে জায়গায় আমি নেহাতই দুর্বল। আমাকে ওসব টানে না। এই যে আপনার এখানে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি চমৎকার সময় কাটাচ্ছি। আমি সারাজীবন এভাবে থাকতে চাই। ”

শবনম তার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল,
” আর যদি চলতে চলতে হঠাৎ আপনার মতো কাউকে পেয়ে যান, যে আমার মতো দুঃসময় না বলে বলবে চমৎকার সময় কাটাচ্ছি, তাকেও ঠাঁই দেবেন না? ”
নাদির ধীরেধীরে দাঁড়িয়ে পড়লো এবার। আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, কথা বলা যাবে না, এই মেয়ের সাথে। দাঁড়িয়ে দুহাত ঝাড়া দিয়ে, ঘাড় ডানেবামে বেঁকিয়ে, গায়ের আলসেমি ঝেড়ে বলল,
” মোটেও না। আমি একাই পথ চলতে ভালোবাসি। খেতে আসুন। ”
বলেই সে চলে যাচ্ছিলো।
শবনমকে তাকে থমকে দিয়ে বলল,

” যারা দায়িত্ব এড়িয়ে থাকতে পছন্দ করে, আত্নকেন্দ্রীক হয়, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাদের কাপুরুষ বলে ক্যাপ্টেন নাদির মেহমাদ। আমার ভাইজানদের দুচোখ ভরে দেখবেন, তারা বাইরেও বীর, ঘরেও। ”
নাদির আলোআঁধারিতে তার টলটলে দুচোখ জোড়ার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,
” কিন্তু আমি তো নিজেকে বীরপুরুষই দাবি করি। ”
শবনম শক্ত গলায় বলল,
” হ্যা, আপনি বনে-বাদাড়ের বীরপুরুষ। ”
নাদির হেসে উঠলো। শবনম রাগত স্বরে বলল,
” হাসবেন না। আমার রাগ লাগে। ”
নাদির আরও জোরে হাসতে হাসতে পাশে এসে ধপাস করে বসে বলল,
” কেউ একজন একসময় এই বনে-বাদাড়ের বীরপুরুষকে নিকাহ করতেই চায়নি। ”
শবনম সাথে সাথে উত্তর দিল,
” বীরপুরুষটাও চায়নি। ”
নাদির বলল, ” আজও চায় না। ”

শবনম দাঁড়িয়ে পড়লো। নাদির এই প্রথমবার তার হাত খপ করে ধরে ফেললো। শবনম স্তম্ভিত চোখে তাকালো। নাদির নিজেও স্তব্ধ। কেন সে আটকালো? কি উত্তর দেবে সে? কেন সে হাতটা ধরেছে? হাতটা ছেড়ে দিয়ে সে দ্রুতপদে তাদের তাঁবুতে চলে গেল এলোমেলো পায়ে হেঁটে। শবনম হা করে চেয়ে রইলো শুধু।
পরপর আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে গেল। শবনম দেখলো উঁচুনীচু ঢিবিতে উপরনীচ হাঁটতে হাঁটতে কয়েককটা লোক এগিয়ে আসছে এদিকে। শবনমের হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে এল। এরা আবার কারা? জংলী নয়ত? কিন্তু দৈবাৎ মশাল হাতে এগিয়ে আসতে থাকা মানুষটার চেহারায় আগুনের ঝলকানি পড়ায় সে হতভম্ব, স্তব্ধ, বাকহারা। বড় ভাইজান? শেরহাম তার নাম ডাকতে ডাকতে তাঁবুর দিকে এগিয়ে আসছে। শবনমের গাল বেয়ে গরম জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সে একমুহূর্তই অপেক্ষা করলো না। ছুটে গেল সেদিকে। কাশিফ বলল,

” আরেহ মাহমুদা কোথায় যাচ্ছেন আপনি? যাবেন না। আরেহ! ”
শবনম দৌড়াতে দৌড়াডে শেরহামের কিছুটা দূরে মুখ থুবড়ে পড়লো। শেরহাম নেমে এল উঁচু ঢিবি হতে। আনোয়ারকে মশাল দিয়ে শবনমকে পড়ে যাওয়া থেকে তুলতেই শবনম ঝরঝরে কেঁদে উঠলো। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে লাগলো। শেরহাম বলল,

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ১৫+১৬

” তুই ঠিক আছিস? ”
শবনম বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো। তাঁবুর ভেতর থেকে বের হয়ে নাদির কাশিফকে নিয়ে এগিয়ে এল। তারা যত নিকটে এল ততই স্পষ্ট হলো শেরহামের সামনে। কাউকে না চিনলেও সোহিনীর ফুপুশ্বাশুড়ির এই ছেলেকে সে চিনতে পেরেছে।

 সিজন ৩ পর্ব ১৯+২০