প্রেমঘোর পর্ব ১০২+১০৩+১০৪
নার্গিস সুলতানা রিপা
“রিদি,আর ইউ রেডি?”
“………….”
“রিদি????”
“ইশশশশ…..নক করার কি আছে???আসছি তো……”
“আর কত???অলরেডি ফরটি মিনিটস ডান……
তোমার তো রেডি হতে এত্ত সময় লাগে না……..”
“আরে ভাই,হচ্ছে হচ্ছে…..”
“কিহ্???ওয়াট আর ইউ কলিং??”
“……………”
রিদি আর কিছু বললো না।
কি বা বলবে???সে যে বর কে ভাই বলে সম্ভোধন করেছে!!!যা পরশের একদম ভালো লাগে না।
যাই হোক রিদি দু মিনিট পর দরজা খুললো।পরশ এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে।
রিদির দিকে তাঁকাতেই সমস্ত রাগ পানিতে পরিণত হয়ে গেলো মুহুর্তেই।
মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো,
“মাশাল্লাহ্………”
মুঁচকি হাঁসলো রিদি।
“কি হলো???এতক্ষণ তো খুব তাড়াহুড়ু করছিলেন??এখন লেট হচ্ছে না??”
“খুব সুন্দর লাগছে……একদম নতুন……”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লজ্জা লাগছে রিদির।পরশের চাহনী যে সব সময় লজ্জা বিলায় এই মেয়েটার সর্বাঙ্গে।
প্রিয়তমার পা থেকে মাথা অবদি একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো পরশ।
অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ রিদিকে।কালো রঙের জামদানী টা যেনো ফর্সা গোলাপী শরীরে সাথে এটে লেগে গেছে।মনে হচ্ছে কোনো মায়াবতী ভাস্কর্য।যার চোখ দুটো টানা,নাকের আদল টা জয়নুলের রঙ পেন্সিলেরর সুরু কারুকাজ,ঠোঁট দুটো শিশির পড়া ফুটন্ত গোলাপের পাঁপড়ি।মৌহিত করা এমন সৌন্দর্যে হারিয়ে যাচ্ছে পরশ।
ঘোর কাঁটানোর ক্ষমতা নেই তার।প্রেমঘোর যে!!!!
সে তো কোনো কিছুর সাথে আপশ করে না,নিজের মনের গহীনে জাগ্রত অনুভুতি গুলোর বহিঃপ্রকাশে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে।
“কি করছেন??ছাড়ুন…….”
রিদি কথায় হোশ আসে পরশের। এতক্ষণ পরশ নিজের মধ্যে ছিলো না।
অন্য কোনো মায়ায় বসবাস করছিলো সে।
“কি হলো??ছাড়ুন……..”
“আজকে না গেলে হয় না??”
“উমহু…..একদম না…….যাবো আজকে…..মা-বাবা সাথে বাকী সবাইকে নিয়ে আসবো এ বাড়িতে……..”
পরশ ছেড়ে দাঁড়ায়,রিদির হাত টা ধরে বলল,
“মা যদি রিফিউস করে????খারাপ লাগবে না??”
“কোনো মা যখন,নিজের একমাত্র ছেলের বউয়ের সর্ম্পকে এক অপ্রস্তুত সত্যের সম্মুখীন হয়…..তাও আবার বিয়ের আগের রাতে;তাহলে সে মায়ের ঠিক কতটা খারাপ লাগতে পারে?????”
পরশ অপলক তাঁকিয়ে আছে।
রিদির চোখ থেকে তাঁর চোখ সরছে না। আজ এ চোখে অন্য এক আবেশের জোর দেখতে পারছে সে।যা সহজেই আপন করার শক্তি যোগাতে পারে।
রিদি নিজেকে পরশের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।পরশের কাঁধে একটু টোকা দিয়ে বলল,
“চলুন…….যাবো এখন…..”
কোনো জবাব না দিয়ে পরশ রিদির হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে বসে।পরশের দিকে একবার ভালো করে খেয়াল করে রিদি জবাব দিলো,
“কি ব্যাপার??আপনি তো দেখছি বাসার পোশাক পড়ে বের হচ্ছেন??”
“আমি তো বাসাতেই যাচ্ছি……”
“তবুও…..একটা গোছানো ব্যাপার স্যাপার আছে তো??”
“সেটা নয় হলেও চলবে,তুমি পার্ফেক্ট তো সব কিছু পার্ফেক্ট আমার……….”
রিদির কোনো জবাব পেলো না পরশ।শুধু চোখের চাহনীতে মারাত্মক রকমের সুখের ঝলকানী খুঁজে পেলো।
গাড়ির ঝাকুনীতে চোখ মেলে তাঁকায় রিদি।
“নামো…….”
পরশের কথায় একটু হকচকিয়ে যায় রিদি।
“কি হলো??নামো??”
“না মানে আমরা কি এসে গেছি???”
“তো??না আসলে কি রাস্তায় বের হতে বলবো তোমায়??”
রিদি জানালার কাঁচ নামিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে দেখলো,ওরা হাসপাতালের সামনে এসে গেছে।”ল্যাবএইড”যেখানে ওর বাবা ভর্তি হয়ে আছে।
ঝলমল করছে রিদির কাজল রাঙা চোখ দুটি।সে তো ভাবতেই পারে নি,পরশ তাঁকে আগে এখানে নিয়ে আসবে।
পরশের প্রতিটা কাজে সত্যিই খুব মোহিত হয় রিদি।বারবার যেনো সত্যিকার মহৎ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয় প্রতিটা কাজে,প্রতিটা কথায়।
“কি ব্যাপার???বাইরে তাঁকিয়ে না থেকে নেমে আসো…….”
চমকে উঠে রিদি।এতক্ষণ খেয়াল করে নি পরশ যে গাড়ি থেকে নেমে গেছে।শুধু নেমে গেছে বললে ভুল হবে;গাড়ি থেকে নেমে ইতিমধ্যে দরজার দরজাও খুলে দিয়েছে যেনো রিদি নেমে আসে।
গাড়ি থাকে নামে রিদি,পরশের চোখের আড়ালেই নিজের চোখের কোণা রা মুঁছে নিলো।
আশেপাশে অনেক লোক;তাই রিদি চাইলেও পরশকে আকড়ে ধরতে পারছে না।
অথচ ওর ইচ্ছা হচ্ছে এই মুহুর্তে পরশকে জড়িয়ে ধরে কৃতঙ্গতায় ভালোবাসা জানানোর।কিন্তু সেটা এখন সম্ভব না তাই রিদি পরশের পিছু পিছু পা ফেলে হাসপাতলের ভেতরে ডুকে যায়।
চারপাশে কত লোক!!!অনেক বেশি কিছু চাই না ওদের।শুধু একটু ভালোভাবে নিশ্বাস টা নিতে চাইছে,কেউ বা আবার নিজের পায়ে হেঁটে ব্যাথরোমে যাওয়ার জন্য সেবা আশা করছে।কত বিচিত্র এই পৃথিবী।
কত চাওয়া পাওয়া আমাদের।
মাঝে মাঝে তো তরকারী তে একটু লবণ বেশি পড়লেই অসন্তুষ্ট হই আমরা।ঝাড়ি দেওয়া শুরু করি মায়েদের….যে কিনা কমড়ে ব্যাথা নিয়েও আমাদের জন্য রান্না করেছেন।স্ত্রীদের গুন নিয়েও প্রশ্ন তুলি ঘটনা সামাল দিতে অথচ সে-যে হাতে এক গ্লাস পানি গড়িয়ে খায় নি,সে কি না বরের জন্য সিল্কি চুলগুলো খোপায় মুড়ে হাত পুড়িয়ে রান্না করছে।
একটা নতুন শাড়ি না পেলেই বরের সাথে আড়ি।
ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠি,
“তোমার তো আমার প্রতি কোনো ভালোবাসাই নেই…..থাকলে সামন্য একটা শাড়ি চাইলাম সেটা দিলে না!!”
বোকা আমরা।সত্যিই খুব বোকা।না হলে একটা আকশো টাকার টপ্সের জন্য মায়ের সাথে রাগ করে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিই।যদি সত্যই বুদ্ধিমান হতাম,তাহলে এনড্রোয়েড ফোনের জন্য যখন বায়না ধরেও আশা টা পূরণ হয় না তখন জেদের বশে বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করতাম না।
সব কিছুর আড়ালে যে ওদের কত চেষ্ঠা আর আশা লুকিয়ে আছে সেগুলো আমাদের চোখে পড়ে না।আমরা তো শুধু দোষারপ করি আমদের মা দের…..স্ত্রীদের…..বাবার আর বরেরও।অথচ তারা সব টা দিতে চেষ্ঠা করে যায় আমাদের জন্য।তবুও আমাদের কত রকমের অসন্তুষ্টি।অথচ হাসপাতালে পড়ে থাকা মানুষগুলো??তাদের কি চাই??
না নতুন জামা,না নতুন ফোন।
শুধু ভালোভাবে একটু শ্বাস নিতে চায়।নিজের পায়ে হেঁটে বারান্দায় পদচারণ করতে চায়।ডায়ালাইসিস না করেই প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাই।
কত রকমের চাওয়ার মাঝে তাদের টা কতটা!!!একটু তো বাঁচার আকুতি।অথচ আমরা,কত ভালো আছি,তারপরও কত বিরক্তি!!!
প্রতিটা রোগীর দিকে তাঁকিয়ে রিদির মনে আজ এসবই রেখা কাঁটছে।সব কিছুর পরও ওর বাবার কেবিনের সামনে এসে ভেতরে অজানা একটা ভয়ও কাজ করছে।মনের মধ্যে বারবার একটা প্রশ্নই উদিত হচ্ছে,
“সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো??”
“সাদাদ,এই সাদাদ……উঠো…….সাদাদ…….”
“উমমম…….”
“উঠো….আমার কষ্ট হচ্ছে……সাদাদ…….”
মুহুর্তেই চোখ মেলে তাঁকায় সাদাদ।তার নৌশিনের কষ্ট হচ্ছে!!আর সে নাকি ঘুমাবে!!!
“কি হয়েছে???হুম???কি কষ্ট হচ্ছে?? ”
“ব্যথা করছে খুব……..”
সাদাদ নৌশিনের চোখ-মুখের ভাব দেখে বেশ বুঝতে পারলো নৌশিনের খুব খারাপ লাগছে।
নৌশিনের চোখ দুটো ভিজে এসেছে।এটাই তো হওয়ার ছিলো।ডাক্তার তো সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছিলো,এই কনসিভের প্রতিটা মুহুর্তে নৌশিনের শারীরিক অবনতি ঘটবে।
“কাঁদো না…..খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না??”
“কেমন জানি উপরের দিকে চাপ লাগে……”
সাদাদ নৌশিনকে আধ শোঁয়া করে শুইয়ে দিলো।
মেডিসিন খাওয়ানোর পর,বুকে নিয়ে মাথায় হাত রেখে ঘুম পাড়ানোর চেষ্ঠা করছে।
ঘড়ির কাঁটায় রাত:৩.৪০ অথচ নৌশিনকে বুকে নিয়ে সাদাদ এখনো জেগে।যদিও নৌশিন বেশ খানিক আগে ঘুমিয়ে পড়ছে।তবুও সাদাদ দু চোখের পাতা আর এক করে নি।যদি নৌশিন জেগে যায়!!ওর যদি আবার কষ্ট হয়!!তাহলে???তাই সাদাদ বাকী রাতটুকু নৌশিনকে দেখেই পাড় করবে বলে সিধান্ত নিলো।
দরজার কড়া নাড়ানোর শব্দে চোখ মেলে তাঁকায় নৌশিন।
নিজেকে সাদাদের বুকে আবিস্কার করে।
নৌশিন সাদাদের মুখের আভাস দেখে,ধারণা করতে পারলো।যে তার সাদাদ রাতে ঠিক মতো ঘুমায় নি।
কারণ সাদাদের ঠিকমতো ঘুম না হলে,মুখ কেমন একটা ফুলাফুলা লাগে।
তাই সাদাদের খুব কাছের লোকজন,নিমিসেই সাদাদের সকালবেলার মুখ দেখে বলে দিবে পারবে,সাদাদ কতটা ঘুমিয়েছে।
নৌশিন বিছানা ছেড়ে উঠে আসে।আজ কাল শরীর টা বড্ড খারাপ থাকে।তাই ফযরের সকাল আর টের পায় না।পাবে কি করে!!সারা রাত তো ঘুম আসে না।শেষ রাতে চোখ লেগে আসলে কি আর সকাল সকাল উঠা যায়।তাই ফযরের নামায টা কাযা পড়ে নেয়।সাদাদ কোনো ভোরে টের পেলেও নৌশিনকে ডাকে না।
নিজে নামায পড়ে আবার শুয়ে পড়ে।আবার কখনো নৌশিনের জন্য জেগে থাকতে হলে;ভোরে ঘুমায়।আর তারপর নৌশিনের সাথে কাযা আদায় করে নেয়।
আজও কাযা নামায আদায় করতে হবে নৌশিনকে।
ফ্রেস হয়ে ওযু করে ওয়াশরোম থেকে বেরিয়ে খেয়াল করলো,সাদাদ উঠে গেছে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে নৌশুনের দিকে।
নৌশিন টাওয়াল টা খাটে রেখপ বলল,
“কি???”
“তুমি উঠে গেছো,ডাকো নি কেনো আমায়??”
“তুমি তো সারা রাত ঘুমাও নি…….”
“তো??তোমার সমস্যা টা কি???বেশি পাকনামো করো তাই না??শরীর ভালো না আর তুমি একা একা চলা ফেরা করছো!!!”
“সরি……আর হবে না।”
“ওপফফফ…….”
“বললাম তো সরি।আর হবে না।কোনো রাগ করছো??”
কোনো জবাব না দিয়ে অন্য দিকে মুক ঘুরিয়ে নিলো সাদাদ।আর নৌশিন সাদাদের রাগ ভাঙতে আতলো করে বাঁ গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
অবাক চোখে তাঁকায় সাদাদ,
“কি হলো এটা??”
“ব্যাস,রাগ কমে গেলো??”
“আচ্ছা!!!!!”
“হুম….এবার যাও ওযু করে আসো….নামায পড়বো…..”
হাঁসলো সাদাদ।নৌশিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে যাচ্ছিলো সে।
পেছন থেকে নৌশিন বলে উঠলো,
“আরে সাদাদ,তুমি তো পুরো গলদ করে দিলে……”
বিষ্ময়ে তাঁকায় সাদাদ।
ভ্রু কুঁচকে জিঙ্গাসা করল,
“কি করলাম??”
নৌশিন পেটে হাত রেখে বলল,
“বাবু তো রাগারাগি শুরু করেছে।বলছে,”পাপাই শুধু মাম্মাকেই আদর করে,আমাকে তো করে না…..”।।।।।খুব রাগ করছে……এখন কি হবে??”
সাদাদ তো নৌশিনের কথায় পুরো থ।ও ভাবতেই পারে নি নৌশিন এমন কিছু বলবে।
মুঁচকি হেঁসে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।নৌশিনের কমড়ের দুপাশে হাত রেখে বলল,
“মামনি…..রাগ করেছো???আম সরি পাপা।আর হবে না।এই যে তোমাকে আদর করে দিচ্ছি……”
অসংখ্য চুমু দিচ্ছে সাদাদ নৌশিনের পেটে।প্রথমে নৌশিন শিহরিত হলেও পড়ে সাদাদের পাগলামো দেখে না হেঁসে পাড়ছে না।
রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে হাঁসতে হাঁসতে।
“উফফ,,সাদাদ আর না।বাবুর মনে হয় সুরসুরি লাগছে…….ছাড়ো ছাড়ো….আর আদর চায় না ওর…….”
সাদাদ তবু ছাড়ছে না।
কিন্তু হাঁসতে হাঁসতে হঠাৎ নৌশিনের কাঁশি শুরু হয়ে যায়।
ভয় পেয়ে যায় সাদাদ।
তরিঘরি করে উঠে বসে নৌশিনের পাশে,
“ও মাই গড……প্লিজ,এই পানি টুকু খাও…..”
নৌশিন যেনো পানি খেয়ে বাঁচলো।কিন্তু হাজার কষ্টের মাঝেও কাঁশি থামা মাত্রই আবারো হাঁসতে শুরু করলো।
সাদাদের মুখে এখন চিন্তার ভাব টা নেই,কিন্তু নৌশিন আবারও হাঁসতে শুরু করায় কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“নৌশিন!!!কি হচ্ছে??আবার কাঁশি শুরু হবে তো…….”
“হবে না,হবে না…..”
“হাঁসি থামাও বলছি……”
“ওকে,ওকে…..তবুও রাগ করো না…….”
সাদাদ ওয়াশরোমে চলে গেলো।দুজনে নামায পড়লো একসাথে।
সাদাদ জায়নামায দুটো ভাঁজ করে তুলে রাখলো।আর নৌশিন কি যেনো মনে করে,সোফায় বসে মিটমিটি হাঁসছে।
“কি ব্যাপার???আবার হাঁসছো যে……”
চুলের বেণুনী খুলছে নৌশিন।বলল,
“এদিকে আসো…..মাথায় তেল দিয়ে দাও……”
সাদাদ আজকাল এই কাজ টা খুব ভালো পাড়ে।যখনি নৌশিনের মাথা ধরে,তখনি যত্ন সহকারে তেল মালিশ করে দেয়।
আজও তাই করছে।
“সাদাদ…..”
“বলো…..”
“বাসায় যাবো…..অরূপকে কতদিন হলো দেখি না।তুমি তো রোজ গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসছো…..আমি তো পারছি না।”
“আচ্ছা,আজ বিকালে চলো যাবো।”
“সত্যি??”
“হ্যাঁ…..”
“ওওও হু……তোমাকে তো আর একটা কথা বলাই হয় নি!!”
“কি কথা??”
“কাল রিদি আপু আর পরশ ভাইয়া হসপিটালে গিয়েছিলো।
প্রথমে ওয়ালিদ ভাইয়া নাকী রাগারাগী শুরু করেছিলো।তারপর আপু কিভাবে কিভাবে যেনো মানিয়ে নিয়েছে।”
“যাক,মানলেই হলো।কে বললো তোমায়??”
“রাফসা ভাবী।আমার যে কথা টা শোনে কি যে ভালো লাগছিলো।জাস্ট বলে বুঝাতে পারবো না…..”
“হুম তা হবেই।এখন ওদের বিষয় ওদের ভাবতে দাও…..আপাতত তোমার,আমার কথা ভাবো।”
“উমমমমম…..”
“এভাবে মুখ ভেঙচি দিলে মুখ বেঁকে যাবে।তেল দেওয়া তো শেষ।চলো এবার খেতে হবে।”
শশুড় বাড়িতে আছে সাদাদ।অথচ নৌশিনের সমস্ত দেখাশোনা সে নিজে করছে।
নৌশিনের মা আর ভাবীর কিচ্ছু করতে হচ্ছে না।
“এই নিন তো খেয়ে দেখুন,চা টা কেমন হয়েছে???”
“উমমম….কাজ করছি….”
“ধুর রাখুন আপনার কাজ।আগে চা টা একটু চেঁকে দেখুন।কেমন হয়েছে!!”
এবার পরশ চোখ ফেরায় রিদির দিকে।এতক্ষণ ফাইলে পড়ে ছিলো।
“আমি কখন চায়ের কথা বললাম।”
“আরে,আমি আপনার জন্য চা বানায় নি।মা বাবার জন্য করলাম।আপনি তাড়াতাড়ি একটু টেস্ট করুন।কেমন হয়েছে আমি তো জানি না।আর বানায় নি তো…”
“সেটা তো তুমি নিজেও দেখতে পারতে।”
“উফফ,আপনি না সব সময় কথা বাড়ান।আমি তো দুধ চা কোনো দিন খাই না।”
“ও তাই বলো।”
পরশ রিদির হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিলো।
তারপর রিদির দিকে কেমন একটা ভাব করে তাঁকালো।
রিদি বুঝতে পারছে না,কি বুঝাতে চাইছে পরশ।
তাই প্রশ্ন করলো,
“ভালো হয় নি না??”
“তুমি করেছো এটা??”
মাথা নিঁচু করে জবাব দিলো রিদি,
“হ্যাঁ……”
মুঁচকি হাসলো পরশ।চা টা রিদির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“যাও দিয়ে আসো তোমার শাশুড়ি মাকে।অনেক ভালো হয়েছে।”
মুহুর্তেই মুক তুলে তাঁকায় রিদি।পরশের মুখ দেখে বুঝতে পারলো যে পরশ ফাযলামো করছে না।মুখে বিশ্বজয়ের হাঁসি এনে একরকম ছুটে বেরিয়ে আসলো চা হাতে।
চেয়ে রইলো পরশ।
সত্যি মন দিয়ে করলে,সব কিছু সম্ভব।ঠিক যেমন কাল রিদি মনের জোরে নিজের শাশুরীর মান একটু হলেও ভাঙাতে পেরেছে।যদিও শাশুড়ী পুরোটা গলে নি তারপরও তো এ বাড়িতে যে এসেছে!এই অনেক।
রিদি খুব সুন্দরকরে মাথায় কাপড় টেনে শশুড়-শাশুড়ীর জন্য চা নিয়ে গেলো।প্রতিটা পা ফেলছে,আর মনের মাঝে ধুকধুক শব্দ টা যেনো আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
যদি না খায় ওর শাশুড়ী!!
শশুড় তো খাবে।কিন্তু রিদি তো এসব কিছু করছে,শাশুড়ীর মন পাওয়ার জন্য।এক মা ছেড়ে এসেছে অন্য মায়ের কাছে।সে মা ই যদি দূরে ফেলে রাখে তাহলে কার ভালো লাগে!
দরজায় পা রাখলো রিদি।
মনে অনেক সাহস এনে রোমে উঁকি দিলো।তাঁর শশুড় খবরের কাগজ পড়ছে।আর শাশুড়ী জানালার বাইরে তাঁকিয়ে কিছু একটা দেখছে।
গলাটা একটু ঝেঁড়ে নিয়ে রিদি বলল,
“মা আসবো??”
রিদি শাশুড়ী শুধু পেছন ফিরে একটু দেখলো।আর কিছু বললো না।খুব খারাপ লাগলো রিদির।তবু নিজেকে সামলে নিলো।রিদির শশুড় বুঝতে পারলো ব্যাপাটা।তাই ঘটনা সামলাতে বলল,
“আরে রিদি মা যে,এসো এসো।”
শশুড়ের ডাকে সমস্ত কষ্ট ভুলে রিদি হাঁসি মুখে ঘরে ডুকলো।
“আসলে,চা…….”
রিদি আী কিছু বলার আগেই পরশ মা বিছানায় বসতে বসতে বলল,
“চা করে এনেছো??পারো করতে??আমি তো ভেবেছি শুধু নষ্টামিই করতে পারো।”
ধুক করে উঠলো রিদির বুকটা।এই আঘাত নিতে না নিতেই পরশের মা আবারও ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,
“লজ্জা করে না তোমার?একজনের সাথে ছিঃ…ছিঃ……মুখে আনতেও লজ্জা করছে।”
রিদি চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
সব কিছুর পরও রিদি নিজের মায়ের মতো শাশুড়ীর মুখে এসব আশা করে নি।
পরশের বাবা রাগী চোখে তাঁকালো পরশের মায়ের দিকে,
“থামবে তুমি??বেশি বকে ফেলছো কিন্তু……”
“কি আর বেশি বকলাম গো?
নেহাত কাল কে হাতে পায়ে ধরেছিলো।একমাত্র ছেলের বউ তাই না আসলে ছেলে দুঃখ পেতে পারে।তাই এসেছি….আর ও কি না এখন এসেছে চা নিয়ে……আমার না জাস্ট সহ্য হচ্ছে না এসব।কত ভালোবেসে নিজের হাতে আংটি পড়িয়ে এলাম।আর সে মেয়ে কি না……”
রিদির এবার লজ্জা লাগছে।
ওর শাশুড়ী কত টা আশা নিয়ে ওকে ঘরের বউ করে আনতে চেয়েছিলো।আর ও কি না কিভাবে এলো!!নাহ্…কাঁদলে চলবে না।একটু বলতেই পারেন ওনি।এতে যদি মায়ের মন টা একটু শান্তি পায়।
রিদি কাঁপা কাঁপা হাতে সাইড টেবিলে ট্রে টা রেখে চলে আসলো।বুঝতে পারছে,ওর শাশুড়ী এখন কাঁদবে।
নিজেকে একটা মাত্র ছেলের বউকে এসব বলে যে ওনিও শান্তি পাচ্ছেন না।
তাই দুঃখ ভুলার সুযোগ দিয়ে চলে আসলো রিদি।
এখন রোমে যাওয়া যাবে না।
রোমে ডুকলেই পরশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছা করবে।আর পরশ যা ছেলে!
কান্নার কারণ না জেনে ছাড়বে না।আর সব কিছু শোনার পর পরশের খুব একটা ভালোও লাগবে না।
তাই রিদি পা বাড়ালো দাদি শাশুড়ীর ঘরের দিকে।
এই মানুষটা সব জেনেও রিদিকে খুব করে মেনে নিয়েছে।তাঁর বক্তব্য,
“ভুল যখন করছে,সে ভুল ওর জামাই ই শোধরে দিক।এমন সোনার চাঁদ মুখ ওনি হারাতে চান না।তার নাতির জন্য নাকী এই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।”
রিদিকে ঘরে ডুকতে দেখে পরশের দাদি বলে উঠে,
“কি রে ছুড়ি।আমার ঘরে তুই?”
“কেনো গো বুঁড়ি আসতে পারি না বুঝি??”
“তোর জামাই ঘরে।আর তুই আমার ঘরে!”
“তোমার জামাই যখন ছিলো তখন কি তুমি সারাক্ষণ তার সাথেই শুয়ে বসে ছিলে নাকি গো??”
“হাই রে ছুড়ি কয় কি।লজ্জা শরম নাই লো??”
“তোমারর থাকলে তো আমার থাকবে!”
অট্ট হাঁসি হাঁসলো পরশের দাদি।তারপর হাঁসি থামিয়ে বলল,
“কি রে?শাশুড়ির কথায় মনে লাগছে??”
চমকে উঠলো রিদি।
জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাঁকালো।
“পান আনতে যাচ্ছিলাম…..সব শুনতে পেলাম…..”
এতক্ষণ শক্ত থাকতে পারলেও এবার আর পারলো না রিদি।
হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
পরশের দাদি বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে মান মানলো রিদির।
রিদি সত্যই খুব অনুতপ্ত।
সেটা বেশ ভালোই বুজতে পারলো সে।আর রিদিকে যে সব ভুলে সবার সাথে নতুন করে জীবন গড়তে চায় সেটাও বেশ বুঝতে পারছেন তিনি।
তাই তো রিদিকে সংসার গড়ার দারুণ একটা টিস্পস দিয়ে দিলো।আর টিস্পস টা শোনা মাত্রই রিদি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো।অথচ কোনো এক মহাসুখে মুখে দীপ্তমান হলো মিষ্টি একটা হাঁসি।
“হয়েছে যা,যা।আসল কাজটা কর…….”
রিদি কোনো কথা না বলে মুঁচকি হেঁসে দ্রুত বেরিয়ে আসলো ঘর থেকে।
মনে তাঁর নতুন আশার আলো ফুটেছে।নতুনভাবে গড়বে সবকিছু।
আজকে রিদি সব রান্না নিজের হাতে করেছে।
আগে তো কখনো রান্না করে নি তাই সবটা তেমন গুছিয়ে করতে পারে নি।
তবে যথেষ্ঠ চেষ্ঠা করেছে।
রাফসা কে ফোন করে রান্নার টিপস আর ইউটিউব এর সহায়তায় পুরো রান্না কমপ্লিট করে নিয়েছে।
পরশ যে কতবার রিদিকে রোমে ডেকে পাঠিয়েছিলো এরমধ্যে!!!তবে রিদি যায় নি।
জানে তো সবটা পরশের বাহনা।শুধু শুধু কাছে নিয়ে যাওয়ার বাহনা।
সবকিছু গুছিয়ে সাওয়ার নেওয়ার জন্য রোমের দিকে যায়।
শাশুড়ীর রোমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো তিনি কারও সাথে ফোনে কথা বলছেন।
“হ্যাঁ,হ্যাঁ…..মাশাল্লাহ্ অনেক ভালো।পুরো হিরার টুকরা বউ আমার।”
“………..।”
ওপাশ থেকে কি কথা আসছে সেটা শুনতে পারছে না রিদি।
তবুও সুখীমনে একটু দাঁড়িয়ে গেলো।
“আরে না না।ছোট মানুষ….বয়সি আর বা কত??ঠিকই আছে।আস্তে আস্তেই সব গুছাতে শিখবে।”
আর দাঁড়ালো না রিদি।
পরে যদি আবার শাশুড়ি টের পেয়ে যায়।না বাবা!!!
যেটুকু শুনেছে তাতেই হবে।
তার মানে ওর শাশুড়ী শুধু উপরে উপরে রেগে আছে।
খুশীতে নাঁচতে ইচ্ছা করছে রিদির।মানুষগুলো এতো ভালো!!!
রীতিমতো দৌঁড়ে নিজের রোমে যায় রিদি।এতোটাই খুশি হয়েছে যে হেঁটে যাওয়ার মতো স্থিতি সইলো না আর।
রিদির এনন দৌঁড়ানো দেখে বাড়ির কাজের লোকগুলো হা হয়ে তাঁকিয়ে রইলো।
বাড়ীর বউ এমনভাবে দৌঁড়াচ্ছে বাড়ির মধ্যে-বিষয়টা বোধহয় ওদের হজম হয় নি।
তাতে রিদির কি!!!
বেচারী কত খুশি আজকে।
সবার মন জয় করার অস্ত্র শিখিয়ে দিয়েছে দাদী শাশুড়ি
তারউপর একইদিনে শাশুড়ীর এমন কথা।খুশি না হয়ে পাড়া যায় নাকি!!!!
পরশ কাজ করছিলো সোফায় বসে।রিদি রোমে ডুকায় চমকে উঠে সে।ভেবেছে কে না কে এলো।
তবে রিদি পরশকে দেখেও না দেখার ভাব করলো।
গুনগুন করে গান গাইছে আর কার্বাড থেকে শাড়ি বের করছে।কয়েকটা দেখে কালো রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরোমে ডুকে গেলো।
পরশ তো অবাক হচ্ছে।
কি হলো কি মেয়ের??
সকালে সে যে রোম থেকে বের হয়েছিলো।আর তো পাত্তা নেই।এখন যাও আবার এলো-কোনে পাত্তা নেই????
রাগ হচ্ছে পরশের।কতবার ডেকেওছিলো মহারানীকে তবুও পায় নি।
একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে আজকে।
বিকালের দিকে সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে নিজেদের বাসায় চলে আসে।
অরূপ দৌঁড়ে আসে নৌশিনের কোলে উঠার জন্য।
আর নৌশিনও বেখেয়ালিভাবে অরূপকে কোলে তুলে নিচ্ছিলো।
“আরে আরে কি করছিস??”
বলেই অরূপকে খপ করে কোলে তুলে নিলো রাফসা।
“পাগলী নাকি তুই??বোকা!!!”
মুঁচকি হাঁসলো নৌশিন।
সাদাদও রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।কি যে করে না এই নৌশিন!!!
“অরূপ সোনা,আজকাল না নতুন বউয়ের কোলে চড়া যাবে না…..”
“কেনো????”
“বা রে।নতুন বউকে দেখছো তো তুমি।ইল তো সে…..”
“ওওওওও….আচ্ছা ঠিক আছে।আদর তো করতে পারবো??”
“হুমম।সেটা পারে বাট পেটে যেনো ব্যথা না পায় তোমার নতুন বউ।ওকে??”
“ওকে ডান…..”
ছেলের বউকে পেয়ে সাদাদের মা পারছে না শুধু মাথায় তুলে রাখতে।বাকী সব করছে।
রাফসা নৌশিনের জন্য নিঁচতলার একটা রোম রেডি করে দিয়েছে।যেনো সিড়ি ভাঙতে না হয়।
ওয়ালিদরা ওর বাবাকে নিয়ে সিলেট চলে গেছে।এখন মোটামোটি সুস্থ আছেন রিদির বাবা।তাই ডক্টরের পরামর্শেই সিলেটে নিজের বাড়িতে আছে ওরা সবাই।
রাতে ফোন করে নৌশিনের সাথে কথা বলে নিপা।
মা কথা বলছে আর পাশ থেকে পিচ্চি মেয়েটা বলছে,
“মাম্মি,আমিও কথা বলবো মামিমনির সাথে।দাও দাও…..”
“আরে বাবা।দেখছো তো কথা বলছি…..ওয়েট তো করো একটু…..”
কে শোনে কার কথা!!তুবার বায়নায় ওর মা নৌশিনের সাথে কথাই বলতে পারছে না ঠিক করে।
বাধ্য হয়ে ফোন টা তুবার হাতেই তুলে দিলো।
“নাও….কথা বলো তোমার মামি মনি……”
সেকি খুশি তুবা!!!
“মামিমনি!!!!কেমন আছো??”
“এইতো সোনা,ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি।মামি মনি,তুমি আসো আমাদের বাসায়…….”
“আসবো বাবু।তুমি এখানে কবে আসবে??”
“দাদু তো একটু একটু ইল এখনো।দাদু ভালো হয়ে গেলে আসবো।অরূপ কোথায়??ও কি তোমার সাথে ঘুমাবে আজকে??”
“হা হা হা।কেনো??ও ঘুমালে কি হবে??”
“না তো।তবুও আমি থাকতাম যে তোমার পাশে।মিস করছি তোমার…..”
“ওরে পাকনী আমার।আম মিস ইউ টু।তাড়াতাড়ি চলে আসো।।।।”
“আচ্ছা।আচ্ছা।রাখি বাই।ঘুমাও তুমি।না হলে ইল হয়ে যাবা।”
“ওকে মাম্মাম।বাই…..”
তুবাই ফোন কেটে দিলো।
তুবার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগছে নৌশিনের।
মনে হচ্ছে অনেকটা সুস্থ সে।
সেই যে লান্স করে বাইরে গেছিলো পরশ-কেবল ফিরলো বাসায়।
কলিং বেল বাজতেই রিদি গিয়ে দরজা খুললো।
চোখ ছোট করে পরশকে দেখছে রিদি।পরশ যে বাসার ভেতরে ডুকবে সে উপায়ও নেই।রিদি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে।
রাগী গলায় প্রশ্ন করে রিদি,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলেন??”
কোনো উত্তর দিলো না পরশ।
রিদিকে সাইড করে ভেতরে চলে আসলো।
রোমের দিকে যাওয়া শুরু করেছে। কোনো কথাই বললো না রিদির সাথে।
রিদির রাগ যেনো আরও বেড়ে যায় এতে।
দরজা লাগিয়ে সেও পরশের পেছন পেছন রোমে আসে দাঁড়ালো।
“কি হলে??আপনাকে কি বলছি আমি??শুনতে পান নি আপনি??”
পরশ ফোন,ওয়ালেট,ঘড়ি এসব ড্রেসিং এর সামনে রেখে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো।
রিদিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না সে।ইচ্ছা করেই দিচ্ছে না।
সারা দিন রিদি যেমন দেয় নি।
এখন সেও দিবে না।
এটাই রিদির শাস্তি।
“পরশ!!!!আমি কিছু বলছি তো…..”
বেশ জোড়েই চেঁচিয়ে উঠে রিদি।ভাগ্যিস শশুড় শাশুড়ীর রোমে গলার আওয়াজ টা যায় নি।একটু দূরে রোম হওয়ায় সুবিধাই হয়েছে।
তা না হলে রিদির হঠাৎ হঠাৎ জোরে চিৎকার করা ওদের কানেও পৌঁছাতো।
রিদির আওয়াজে পরশ তাঁকায় রিদির দিকে।
এমন একটা ভাব করে যেনো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
“কি হয়েছে??”
“কোথায় ছিলেন??”
“কাজ ছিলো….”
ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলে পরশ,
“তোমাকে বলতে চাই না।”
রিদির রাগ আর দেখে কে।
ডিরেক্ট পরশের কলার ধরে বসে মেয়েটা।রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে গেছে মেয়েটার।তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“বলতে চাইলেও বলতে হবে।না চাইলেও বলতে হবে।আপনি জানেন??সেই নয়টায় আমার ক্ষুদা লেগেছে।আর এখন বাজে রাত বারো টা।তবুও আমি খাই নি।আর আপনি কোথায় কোথায় ঘুড়ে এই মাঝ রাতে বাড়ি ফিরলেন।”
ইশশশ পরশ টা আসলেই বেশি করে ফেলেছে।
এতো রাতে কেউ বাড়ি ফিরে!!
অফিসে থাকলে তাও না হয় কথা।কোনো কারণ ছাড়াই!!
রিদিকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই এতো রাতে বাড়ি ফেরা পরশের।কিন্তু এবার ওর মনে হচ্ছে নিশ্চয় সে বেশি করে ফেলেছে।বিকালে বের হওয়ার সময়ও মেয়েটাকে পাত্তা দেয় নি।রাত নয়টা থেকে বারো টা অবদি একের পর এক কল করে গেছে মেয়েটা।
একটা কলও ধরে নি পরশ।
তো কেনো রিদির রাগ হবে না??
তবুও পরশ নিজেকে ঠিক রেখে বলল,
“রিদি কলার ছাড়ো….”
“না ছাড়বো না আমি।কি করবেন কি আপনি??”
“আরে চিল্লাচ্ছো তো আবার কাঁদছো কেনো??”
“আপনার তাতে কি??”
আবারও চিল্লায় রিদি।
তবে আওয়াজের চেয়ে চোখের পানিই বেশি ঝড়ছে।
কলার টা ছেড়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো পরশকে,
“আপনি কি সত্যিই দেখেন নি,আপনাকে কত বার কল করেছি আমি??তিন ঘন্টা যাবত কল করছি আমি।
আপনি একটাও ফোন ধরেন নি।যানেন মা কি বলেছ??”
পরশের এবার আসলেই খারাপ লাগছে।সব কিছু বাদ দিয়ে সে ও রিদিকে জড়িয়ে ধরলো।রিদিকে শান্ত করতে জানতে চাইলো,
“কি বলেছে মা??”
“দুপুরে মা কারও সাথে ফোনে আমার খুব প্রশংসা করছিলো।আমি তো জানি মা আমাকে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু আপনি যখন রাত সাড়ে এগারো টাও বাসায় আসেন নি আর আমার ফোন ধরেন নি তখন মা বলল……”
“আরে আমি তো আশে পাশেই ছিলাম।জাস্ট…..”
“মা বলল,’আপনি নাকি আমার জন্যই বাড়ি ফিরছেন না।আমাকে নাকি…….”
পরশ রিদিকে আর বলতে দিলো না।
ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“হুশশশ।আর না।কে বলেছে!!হুমমমম……তোর জন্যই তো এলাম।আর হ্যাঁ তোর জন্যই এতো রাতে ফিরলাম।”
“তাহলে ফোন ধরেন নি কেনো আমার।আমি না মায়ের কথা শোনে খুব ভয় পেয়েছিলাম।”
“বিশ্বাস নেই নাকি??”
“আছে তো।আপনি তো ফোনও ধরছিলেন না….”
মুঁচকি হেঁসে পরশ বলল,
“শাস্তি দিচ্ছিলাম।”
“কিসের??”
“সারা দিন কাছে আসো নি তাই…….”
রিদি ভেবলার মতো তাঁকিয়ে আছে পরশের দিকে।
পরশ রিদির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“দুপুরে রান্না টা খুব ভালো হয়েছিলো।আমাকে কি সেই খাবার গুলো আবার দেওয়া যাবে??খুব ক্ষুদা লাগলো যে…..”
“দিচ্ছি ফ্রেস হয়ে নিন আপনি……”
পরশ রিদিকে নিয়ে ডাইনিং এ বসে খাচ্ছে।দুজন দুজনকে খাইয়ে দিচ্ছে।অবশ্য পরশ খাবারের চেয়ে রিদির হাতই বেশি খাচ্ছে।পরশের মা ছেলে এসেছে কি না দেখার জন্য বাইরে এলে এই দৃশ্য দেখতে পান।বেচারী লজ্জায় পড়ে যায় খুব।তবে তার চেয়ে বহুগুণ খুশিও হন।
মনে মনে আল্লাহর কাছে এই পার্থ্যনা করেন যেনো সারা জীবন ওনার পুত্র আর পুত্রবধু এইভাবে দুজন দুজনের পাশে থাকে।
পরশের বুকে শুয়ে আছে রিদি।পরশের দুষ্টু হাত দুটে রিদির সারা শরীরে দুষ্টুমি করছে।
রিদিরও ভালো লাগছে খুব।
তাই সেও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে পরশের দুষ্টুমিতে।
পরশ বোধহয় আরও কাছে চাইছে রিদিকে।তাই তো এবার রিদির শরীরের উপর সে নিজেই শায়িত হয়ে পড়ে।
রিদিও বুঝতে পারছে কি চায় পরশ।
তাই সেও ললনাময়ী ভাব ফুটিয়ে তুলছে।
“ভালোবাসি……”
অস্ফষ্ট স্বরে রিদিও সাই দিলো,
“ভালোবাসি…..”
ঠোঁট মিলিয়ে দিলো পরশ রিদির ঠোঁটে।
মুহুর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে দুজনাতে।
পরশের ভালোবাসায় গলে যাচ্ছে রিদি।
একপর্যায়ে রিদি আবেদননয়ী সুরে বলল,
“পরশ!!”
নেশাতুর হয়েই জবাব দিলো পরশ,
“উমমমম……”
“আই ওয়ান্ট টু বি আ মাদার।প্লিজ……..”
রিদির গলা থেকে মুখ তুললো পরশ।রিদির চোখে চোখ রেখে বলল,
“কি বললে??”
“আ আআ মি মা হতে চাই……..”
মুঁচকি হাঁসলো পরশ।নিজের ঠোঁটে লিক লিক করে গভীর নেশায় তাঁকিয়ে থাকলো রিদির দিকে।
লজ্জায় চোখ চোখ বন্ধ করে ফেলে রিদি।
পরশ আর একমুহুর্তও দেরী করে নি,
রিদির আঁচল টা একটানে সরিয়ে দিলো সে।
সকাল বেলা শাশুড়ীর মন যোগানোর এই দারুণ যুক্তিটাই রিদি পেয়েছিলো তার দাদি শাশুড়ীর কাছে।
বলবে বলবে করে নিজেকে তৈরী করেছে সারা দিন।
আর এমন একটা সুযোগে শেষমেষ বলেই ফেললো।
তবে শুধু সংসারে শান্তি আনতেই নয়,নারী হয়ে জন্মানো টা সার্থক করতে চায় এআার রিদি।
তাই তো বিয়ের এক মাস পাড় না হতেই নিজের স্বামীর কাছে সবচেয়ে বড় আবদার টা করে বসলো।
“শুনছেন?????”
“এই যে।পরশ!!!উঠুন……নয়টা বাজে আর কত??”
“উমমমম রিদি।আর একটু……”
“অফিস যাবেন না???”
“ওফফফ….সারা রাত ঘুম হয় নি রিদি।আসো তুমিও শুয়ে পড়ো।ঘুমাই আর একটু।”
বলেই পরশ রিদিকে টেনে বিছানায় ফেলে দিলো।
তবে বেচারা চোখ খোলে নি।
“আহ্…..পরশ।ছাড়ুন…..নয়টা বাজে।আর এখন কি না আমি ঘুমাবো আবার।দেখি ছাড়ুন…..”
চোখ খোলে পরশ।রিদিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“সারা রাত ঘুমাতে পারি নি তোমার জন্য।এখনো কি ঘুমাতে দিবে না???”
রিদি তো অবাক।কি বলে এই লোক!!
ওর জন্য নাকি ঘুমাতে পারে নি সে।আসলে ঘটনা পুরো উল্টো প্রায় রাত চারটার দিকেও যখন রিদি পরশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলো তখনও পরশ রিদির নেশায় মেতে ছিলো।
কিছুতেই ছাড়ছিলো না রিদিকে।সারা রাত রিদিটাকে জ্বালিয়েছে।যখন আযান হচ্ছিলো তখন বেচারী রিদি ছাড়া পেয়েছিলো।
আর এখন কি না!!!তাকেই কথা শোনতে হচ্ছে।
“এই কি বললেন আপনি??”
“হুমমমমম…..”
“দেখি ছাড়ুন আমায়।আমি সারা রাত আপনার জন্য ঘুনাতে পারি নি।আর এখন উল্টো আপনি…..”
“ইশশশ…..চুপ বউ।জড়িয়ে ধরো না একটু।আদর করো।কথা কেনো বলছো??”
“ছাড়ুন আপনি আমায়।বেশি বেশি।……”
“আরে রাগ করছো কেনো।সব দোষ তো তোমারই।নিজেই তো মা হতে চাইলে…..”
“মা হতে চাইলাম মানে??
হতে না করছেন নাকি আপনি??”
“আরে পাগলী।না করলে কি সারা রাত……”
রিদি পরশের মুখে হাত রেখে থামিয়ে দিলো,
“লজ্জা করে না আপনার??”
মাথা নাড়িয়ে না জানালো পরশ।রিদি যে হাতে মুখ আটকে রেখেছিলো সে হাত চেপে ধরে কমড় বসিয়ে দিলে একটা।
বেশ জোড়েই দিয়েছে।
“আউচচচচচ।।ওহুহুহুহু……..”
হাঁসছে পরশ।আর রিদি হাত টা অন্য হাত দিয়ে ঘষছে।
“ওহু হুু।।।।আপনি!!!!!খুব খারাপ….ও মা।।দাঁত বসিয়ে দিয়েছেন একদম…..ওহু ওহু ব্যথা করছে…..”
“কোথায় দেখি দেখি……”
বলে আবারও পরশ রিদির একই জায়গায় কামড় বসিয়ে দিলো।
“আওওওওও…….ওওওওওমমম……”
চিৎকার শেষ করতে পারে নি রিদি।তার আগেই পরশ ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে দিয়েছে।
জোড়ে জোড়ে দুটো কামড় দিয়েছে একই হাতের একই জায়গায়।ব্যথা হচ্ছে রিদির।
আর পরশ!!!রাগে দুঃখে পরশের ঘাড়ে ইচ্ছা মতো খাঁমচি দিচ্ছে রিদি।
তবুও পরশ থামছে না।
বেচারা মনে হয় খামচিগুলোতো আরও ফিল পাচ্ছে।
বেশি সময় লাগে নি পরশের।
প্রেমঘোর পর্ব ১০০+১০১
খুব সহজেই রিদিকে ঘায়েল করে নিলো।বাধ্য মেয়ের মতো রিদিও তাল মিলাতে শুরু করলো পরশের উন্মাদনায়।
যেখানে না আছে কোনো ব্যথা,না আছে কোনো কষ্ট।
শুধু সুখের উথাল-পাথাল জোয়াড়।।।