প্রেমঘোর পর্ব ১১১+১১২+১১৩
নার্গিস সুলতানা রিপা
দেখতে দেখতে চার টা বছর কেটে গেলো রাইসার।
আজ তাঁর চার বছরের জন্মদিন।
একদম ছোট্ট বেলার মতোই পরী পরী ভাব আছে এখনো।
বেশ নাদুস-নুদুস আর সাদা ফর্সা।
সাদাদ-নৌশিন মেয়ে বলতে পাগল এখন।
আগের চেয়েও বেশী।
রাইসা আজকাল অরূপ আর নৌশিনকে সবচেয়ে বেশী অনুকরণ করে।
আর অরূপ কখনো কখনো রাগে খুব মারে রাইসাকে।
মারে বলতে গালে থুথনী দেয় বেশ জোরে।
আর রাইসার সাদা ধবধবে গাল টা লাল টকটকে হয়ে যায়।
আর ঠিক ছোট্ট বেলার মতোই ‘জেমম্মা,জেমম্মা…’ করে কাঁদে রাইসা।
আজ রাইসার জন্মদিন বলে বাসায় অনেক বড় করে মিলাদ পড়ানো হয়েছে।
কেক-টেক কাঁটা হয় নি।
নৌশিন ওসব চায় না তাই।
একমাত্র মেয়ের জন্মদিনে ওসবের চেয়ে মিলাদ টাই বেশী প্রিয় নৌশিনের কাছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনেকটা সময় হয়ে গেছে রাইসা পুরো রোমে কিছু একটা খুজচ্ছে।
সাদাদ-নৌশিন কেউ রোমে নেই।তাঁদের মেয়ে পুরো রোম তন্নতন্ন করে ফেলছে।
শেষ-মেষ বাধ্য হয়ে চেঁচাতে শুরু করলো রাইসা।
নিজে তো অনেক খুঁজেছে পায় নি।এবার ওর আম্মু একটু খুঁজুক।
“আম্মু,আম্মু……ও আম্মু……”
মেয়ের ডাকে ড্রয়িং রোমের কাজ ফেলে রোমে ছুটে আসে নৌশিন।
এসে তো রোমের অবস্থা দেখে পুরো অবাক সে।
কিচ্ছু ঠিক নেই রোমের।
বিছানার চাদর টা পর্যন্ত ফ্লোরে পড়ে আছে।
সমস্ত ছোট-খাটো জিনিস গুলো উল্টা-পাল্টা হয়ে পড়ে আছে।
“আম্মু!!!কি হয়েছে???”
দু হাত কমড়ে রেখে নৌশিনের দিকে ফিরে তাঁকায় রাইসা।
তারপর আঙ্গুল নাড়িয়ে বলতে থাকে,
“ফুপ্পি যে আমার জন্য চকলেট পাঠিয়েছিলো সেটা কোথায়??”
“তুমি চকলেটের জন্য পুরো রোম এমন করেছো??”
“হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি।তুমি আমার চকলেট কোথায় রেখছো??”
“রাইসা!!!এটা একদম ঠিক না……”
“না আমার চকলেট দাও আগে।ভাইয়া নেয় নি তো??”
“রাইসা!!!আম্মু খুব মন খারাপ করেছে।তুমি কেনো পুরো ঘর নষ্ট করেছো??আম্মুর তো গোছাতে কষ্ট হয়……তাই না??”
সাদাদ রাগ করলে যেমন নৌশিন ছোটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।অলৌলিক ভাবে এইগুণ টা রাইসা আরোপ করে নিয়েছে।
কখনো না দেখেই এই গুণ টা রাইসার মাঝে বিরাজ করে।
নৌশিন যখন কোনো কারণে এক বিন্দুও ওর ওপর রেগে কথা বলে সে দৌঁড়ে গিয়ে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরবে,নরম মায়াবী সুরে আদারী কন্ঠে কথা বলবে।
এটা তাঁর যবে থেকে ছোটার ক্ষমতা হয়েছে তখন থেকেই অভ্যাস।
এখনো ঠিক তাই করলো রাইসা।নৌশিনের রাগী মুখ দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
নৌশিনের কমড় পর্যন্ত হয়ে গেছে ওর মেয়ে।তাই জড়িয়ে ধরায় মুখটা মায়ের পেটের লেগে আছে বাচ্চাটার।
“সরি আম্মু……..”
কোনো বাচ্চা যদি এমন মায়াবী সুরে তার মাকে জড়িয়ে ধরে সরি বলে-
তাহলে সে মায়ের রাগ কি থাকে???
তবুও নৌশিন শাসনের ভঙ্গিতে থেকেই বলল,
“সরি বললে কি হবে??তুমি তো পুরো ঘর নষ্ট করে দিয়েছো।দেখো চাদর টাও ফেলে দিয়েছো,তোমার চকলেট তো আর বিছানায় রাখা হয় নি।আর দেখো তোমার বাবাইয়ের বুকসেল্ফেও হাত দিয়েছো।এগুলো কি ঠিক??”
আগের মতো ভঙ্গি করেই রাইসা ওর আম্মুকে বলল,
“আমার মন খুব চকলেট চকলেট করছিলো।তাই তো….”
“আমাকে আগে ডাকতে পারতে তুমি…..”
“সরি তো।সরি না???”
মেয়ের এমন কথায় ফিক করে হেঁসে ফেললো নৌশিন।
হাঁটু গেড়ে রাইসার সামনে বসা মাত্রই মায়ের মন আরোও গলাতে ঝাপটে ধরলো ধরলো রাইসা নৌশিনকে।
নৌশিনও মেয়েকে আগলে নিলো।
কাঁদো কাঁদো স্বরে রাইসা বলল,
“তুমি রাগ করেছো আম্মু??তাহলে আমি ঘর গুছাতে তোমায় হেল্প করবো।রাগ করো না???”
মেয়ের মুখ টা ধরে কপালে চুমু খেয়ে নৌশিন বলল,
“না সোনা।আম্মু একদম রাগ করে নি।তুমি তো তোমার আম্মুর বেস্ট গার্ল।তোমাকে কোনো হেল্প করতে হবে না।”
“তুমিও আমার বেস্ট আম্মু….”
“উমমমম্মা……”
“উমমম্মা…..তুমি আমার কপালে দিয়েছো আমি তোমার গালে কিসি দিলাম….এখন ফুপ্পি যে চকলেট পাঠিয়েছে ওগুলো দাও…….”
“উমমম…দেখি তোমার দাঁত দেখি আগে।হা করো……”
“আম্মু!!!”
“উমহু….হা করো…..”
“হাআআআআ……”
“ইশশশশ।দাঁতে কত্ত চকলেট লেগে আছে রে সোনামনি।সেই সক্কাল থেকে তোমার দাদুন,দাদু,বাবাই,পিউমনি সবার কাছ থেকে দেখলাম চকলেট নিচ্ছো……কেনো??এত চকলেট কেনো???”
“মজা লাগে তো….”
“দাঁতে পোকা হয় বাবু……”
“তুমি এখন একটু দাও।খেয়ে ব্রাশ করে ফেলবো।”
“খুব না??পাঁকনী বুড়ি আমার একটা……”
“দাও না আম্মু।দাও দাও…..”
“আচ্ছা বাবা দাঁড়াও…দিচ্ছি…..দিচ্ছি…..”
কার্বাডের ড্রয়ার খুলে রাইসার জন্য নিপার পাঠানো জন্মদিনের গিফ্ট হিসাবে অনেকগুলো চকলেট আর একটা ড্রেস বের করলো নৌশিন।
জামা টা দেখেই রাইসা লাফাতে শুরু করলো।
“আম্মু….ফুপ্পি জামাও পাঠিয়েছে???আম্মু আম্মু দাও দাও……”
“আরে আরে দাঁড়াও না বাবা।এজন্য আগে বের করি নি।তুমি…… ”
এমন সময় সাদাদ রোমে ডুকায় নৌশিন পুরো কথাটা শেষ করতে পারে নি।
রাইসা জামা টা ছো মেরে নৌশিনের কাছ থেকে নিয়ে সাদাদের কাছে চলে গেলো।
“বাবাই,বাবাই!!দেখো…….”
মেয়েকে কোলে তুলে নিলো সাদাদ।তারপর জামা টা দেখে রাইসার সাথে তাল মেলানোর জন্য বলল,
“খুব তো সুন্দর জামাটা।কোথায় পেলে??”
“আম্মু,এটা ফুপ্পি পাঠানো গিফ্টের মধ্যে থেকে দিয়েছে তার মানে ফুপ্পি দিয়েছে…..”
নৌশিন কার্বাড টা বন্ধ করে হাতে একটা চকলেট নিয়ে ওদের বাপ-বেটির পাশে বিছানায় বসলো।
রাইসা গলার সুর টেনে টেনে গল্প করছে সাদাদের সাথে।
“মামনি,জামাটা ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে।তুমি জামার উপরে বসে আছো তো!!দাও রেখে দিই……”
“না আম্মু।এটা পড়বো,পড়বো…..সবাইকে পড়ে দেখাবো……”
“রাইসা!!!তুমি তো নতুন একটা ড্রেস পড়েই আছো…..”
“এটা বেশি সুন্দর আম্মু।এটা পড়বো…..”
“তুমি কালকে নতুন স্কুলে যাবে তো।তখন পড়ো এটা??”
“সত্যি!!!!বাবাই সত্যিই কি যাবো??”
“হ্যাঁ মামনি।তোমার আম্মু একদম ঠিক বলছে।কালকে আমার রাইসা বেটা নতুন স্কুলে যাবে।”
“আমি কি ভাইয়ার স্কুলে যাবো??”
“না রে পাঁকনী।তোমাকে আরেকটা স্কুলে নিয়ে যাবো…..”
“আমি ভাইয়ার মতো ক্লাস ফোর এ পড়বো??”
“ওফফফ,সাদাদ!!!তোমার মেয়েকে সামলাও তো তুমি।এতো প্রশ্ন করে মেয়েটা…….”
“হা হা হা……মামনি…….”
নৌশিনের কথা শোনে মেয়েকে আরও বিগড়ে দিলো সাদাদ।
পায়ের উপর বসিয়ে দোল খাওয়াতে শুরু করেছে।
খিলখিল করে হাঁসছে রাইসা।
সাথে তাল মিলাচ্ছে সাদাদ।
নৌশিন জামাটা তুল রাখলো।
যেই না চকলেট টা ড্রয়ারে রাখবে ওমনি রাইসার চোখ যায় নৌশিনের দিকে।
সাদাদের বুকের উপর শুয়ে দুষ্টুমি করছিলো এতক্ষণ রাইসা ছোটে নেমে আসে নৌশিনের কাছে।
“আমার চকলেট দাও আম্মু…..”
“বেশ তো ছিলে।এখন আবার চকলেট???”
“দাও না।।।দাও আম্মু………”
নৌশিন চকলেট দেওয়া মাত্রই রাইসা ছোটে বেরিয়ে গেলো রোম থেকে।
যাওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথমে সাদাদ পরে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে বলছিল,
“বাই বাবাই…….বাই আম্মু……”
“ওফফফ বাবা!!কি যে পাঁকা হচ্ছে মেয়েটা……”
“হ্যাঁ…..হয়তো তুমিও এমন ছিলে……”
“বাব্বাহ????কোন কথা বললেন গো আপনি।’মেয়ে পুরো তাঁর বাবার মতো হয়েছে’-আমার শাশুড়ী মা বলেছে।আমি মোটেও এমন ছিলাম না।ভাইয়া বলে আমি নাকি দরকার ছাড়া দিনে বেশী কথাও বলতাম না……”
“তা জানা আছে।মন কলা খেয়ে দুষ্টুমি করতে।আমার রাইসা মনি প্রকাশ্যে করে……”
“এই সাদাদ!!!ভালো হবে না কিন্তু।কেনো বানিয়ে বানিয়ে বলছো??”
“একদম না…….”
“আচ্ছা???”
বলে সাদাদ উঠে দাঁড়ায়।ঘামে ভেজা শার্ট টা খুলে নৌশিনের শরীরে ছুড়ে মেরে বলল,
“কি আচ্ছা???তুমি কেমন পাঁজি তা আর কেউ না জানুক আমি জানি……”
নৌশিনের রাগ আর দেখে কে???
সে ও শার্ট টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে সাদাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
“কি হচ্ছে???আমি কিন্তু!!!”
নৌশিনের কমড়ে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে সাদাদ জবাব দিলো,
“তুমি কিন্তু আজকে অনেক সুন্দর করে সেজেছিলে।রাজকুমারী মাকে একদম রাণী রাণী লাগছিলো……….”
“হয়েছে!!!আর তেক দিতে হবে না।বাপ-বেটিতে পারো ভালোই।তা আমি নাকি পাঁজি বললা একটু আগে…..”
“ঠিকই তো বলেছি…..”
“সাদাদ!!!”
নৌশিনের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলে সাদাদ।চুপ করিয়ে দিলো নৌশিনকে।
খুনসুটিতে জমিয়ে রেখে ভুলিয়ে দিলো নৌশিনকে।
নৌশিনও বরাবর যেমন!!
গলে যায় সাদাদের কাছে।
আজও তাই।
না কোনো রাগ!!না কোনো অভিমান!!
সবকিছু ভুলে যায় নৌশিন এই মানুষটার ভালোবাসায়।
কেমন একটা ঘোরে বদলে যায় প্রতিটা মুহুর্ত।
প্রেমঘোরে আষ্টেপিষ্টে যায় দুটি মানব-মানবী।
“আম্মু,আম্মু,আম্মু……..”
কেঁদে কেঁদে রোমে ছুটে আসছে রাইসা।
সাদাদকে একরম ধাক্কা দিয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়ালো নৌশিন।
সাদাদও ঘটনা টা বুঝতে পেরে দ্রুত ফ্লোরে থাকা শার্ট টা তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
রাইসা দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো নৌশিনকে।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।
“কি হয়েছে আমার আম্মুনের????দেখি দেখি…..”
কেঁদেকেঁদেই প্রতিবাদী সুরে চেঁচিয়ে উঠলো রাইসা,
“ভাইয়া আমার চকলেট নিয়ে নিয়েছে……..”
সাদাদও এতক্ষণে রাইসার পাশে এসে বসলো।
মেয়েকে কোলে বসিয়ে বলল,
“আরও অনেক চকলেট তো আছে তো মামনি……”
“হ্যাঁ।আরও অনেক আছে।কেঁদো না সোনা……এখনি দিচ্ছি……”
“ভাইয়া জোর করে নিয়ে নিয়েছে আম্মু।জেমম্মা আসলে আমি বলবো…..”
“না সোনা।ভাইয়া তো।আমি দিচ্ছি তোমায়।দেখি,চোখে কত পানি……কাঁদে না আম্মু….”
“না আমি বলবো জেমম্মাকে…….”
নৌশিন এবার দু হাতে দুটো চকলেট দিলো রাইসা।
চকলেট দেখা কান্নায় বেগ কমছে রাইসার।
তবুও কাঁদো স্বরে সাদাদকে বলল,
“বাবাই,আমি বলবো জেমম্মাকে।ভাইয়া খুব দুষ্টু হয়ে গেছে……”
হো হো করে হেঁসে ফেললো সাদাদ।সাথে নৌশিনও।
এতে বোধহয় ছোট্ট রাইসা মনি অপমানিত বোধ করলো।
তাই দুহাতের চকলেট দুটোই বিছানায় ছুড়ে দিয়ে আবারও গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলো।
“হায় আল্লাহ!!!!না আম্মু……”
ব্যস্ত হয়ে মেয়েকে সামলাতে শুরু করলো সাদাদ-নৌশিন।
কিন্তু এ যে সাদাদের উত্তোশরী।
ওরই রক্ত যে বইছে শরীরে।
জেদটাও তো ওমন ই হবে!!!
অনেক কষ্টে মেয়েকে শান্ত করিয়েছে নৌশিন।
একদম সাদাদের মতো জেদ।
একবার রাগ উঠলে সহজে থামে না। ঠিক সাদাদের কার্বন কপি।
সন্ধ্যার দিকে সাদাদ অরূপ আর রাইসাকে নিয়ে হলরুমে বসে টিভি দেখছে।
নৌশিন একটা ট্রে তে করে সাদাদের জন্য কফি আর বাচ্চা দুটোর জন্য সুপ নিয়ে এল।
নৌশিন সাদাদের পাশে বসে সেট টেবিলের উপর ট্রে টা রেখে সাদাদের কফির মগ টা তার দিকে এগিয়ে দিল।
রাইসা সাদাদের কোলে বসে আছে।
তাই নৌশিন বলল,
“তোমার বাবাই কফি খাবে।তুমি আমার কোলে আসো……”
“না আমি বাবাইয়ের কোলেই বসবো…..”
“থাকুক।নো প্রবলেম…..”
নৌশিন আর কিছু বলল না।
সাদাদের অপর পাশে অরূপ বসা ছিলো।
অরূপকে নৌশিন নিজের কাছে ডাকল।
অরূপ কোনো কথা না বলেই টিভির দিকে চোখ রেখেই নৌশিনের পাশে বসলো।
অরূপের কান্ড দেখে নৌশিন বলল,
“কি যে হচ্ছোছো না তুমি বাবা!!!এভাবে টিভি তে চোখ রাখে কেউ।একটু তো বাইরেও দেখতে হয় সোনা….”
অরূপ কিছু বলে জাস্ট সোফা থেকে উঠে নৌশিনের কোলে বসে গেলো।
কিন্তু চোখ টা ঠিক টিভির দিকে।
সাদাদ-নৌশিন দুজনের হাঁসলো এ ছেলের কান্ড দেখে।
নৌশিন পরম আদরে অরূপ আর রাইসাকে নিজের হাতে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে।
দুজনেই চুপচাপ খেয়েও নিচ্ছে।
রাফসা রান্নাঘর থেকে নৌশিনকে ডেকে বলল-আর কিছু লাগবে কি না।
নৌশিন কিছু বলার আগেই রাইসা সাদাদের কোল থেকে নেমে ছুটতে শুরু করলো রান্না ঘরের দিকে।
“আরে??কি হলো???রাইসা……মা মনি…..”
নৌশিনের ডাকে সারা দিলে না মেয়েটা।
নৌশিন উঠলো না।
বাকী সুপটুকু অরূপকে খাওয়াতে লাগলো।
রান্না ঘরে তো রাফসা আছেই তাই নিশ্চিত সে।
কিন্তু অরূপকে খাওয়াতে খাওয়াতেই ড্রয়িং রোমে আওয়াজ আসলো রাইসার চিৎকারের।
চিৎকার না ঠিক।
মেয়েটা জোরে জোরে চেঁচিয়ে মজা করে কথা বলে মাঝে মাঝে।
কি আদুরী সুরে বায়নাও করতে জানে।
সেটাই করছে এখন।
কিন্তু বায়না ধরেছে ভুল বায়না।
“জেম্মমা।আমি রান্না করবো….সরো সরো……”
“এই না…..কি করছো মামনি।সরো…..দেখি এই মামনি তেল ছিটে যাবে সোনা…..”
রাইসা লাফাতে লাগলো রাফসার সামনে গিয়ে।
রাফসা তখন লুচি ভাজাতে ব্যস্ত।
গরম তেল ছিটে রাইসার লাগতে পারে তাই চুলা টা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিয়ে রাইসাকে কোলে তুলে নিলো।
এদিকে সাদাদ-নৌশিন রাইসার সব কথা শুনছে আর হাঁসছে।
“নতুন বউ!!হেঁসো না। দাঁড়াও ঐ দুষ্টু টাকে আমি কি করি দেখো……”
বলেই অরূপ নৌশিনের কোল থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেলো।
“এই অরূপ!!বাবা।কাঁদাস না।একটু আগে অনেক কেঁদেছে।বাবা শোন…..”
নৌশিনের কথায় থামল না অরূপ।
সাদাদ নৌশিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“যাও…..নিয়ে আসো অরূপকে।”
নৌশিন গিয়ে দৌঁড়ে অরূপকে রান্না ঘরের দরজা থেকে কোলে তুলে নিয়ে আসল।
“ওফফফ!!বাবা রে বাবা।কি ভারী হয়ে গেছিস বাবা তুই!!”
“নতুন বউ!!আমি যাই না??”
“না তুমি পড়তে বসবে এখন…..”
“একটু পরে বসলে কি হয়??”
“অরূপ তোমার নতুন বউয়ের সাথে যাও আর স্টাডি শেষ করো…..”
“কিন্তু কাকাই,বোন তো পড়তে বসে না।”
“অরূপ!!রাইসা কি স্কুলে ভর্তি হয়েছে??যে ও তোমার মতো হোম ওর্য়াক করবে এখন।সে তোমার নতুন কাকির কাছে আলাদা সময়ে পড়ে।ছোট তো ও।
তুমি যাও পড়তে…..”
অরূপ মুখ টা ভার করে নৌশিনের হাত ধরে উপরে চলে গেলো।
আর ঐ দিকে রাইসা কোনো বিষয় নিয়ে রাফসার সাথে খিল খিল করে হাঁসছে।
“মাম্মি….মাম্মি…….”
“এই তো মাম্মি…..”
“পাপাই……”
“আসবে সোনা…..”
“পাপাই,পাপাই…….”
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল।
রিদি তার ছোট্ট তিন বছরের মেয়ে আলিভাকে কোলে নিয়ে মেইন ডোর খোলার জন্য পা বাড়ালো।
ম্যাজিক আই এ চোখ রেখে দেখলো এতক্ষণ ওরা যার জন্য অপেক্ষা করছিল সে এসে গেছে।
রিদি আলিভার গালে একটা চুমু খেয়ে হেঁসে বলল,
“এই তো তোমার পাপাই এসে গেছে…..”
বলে দরজা টা খোলে দিলো।
পরশ হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়ের দিকে।
রিদি আলিভাকে পরশের কোলে দিয়ে,তার হাত থেকে লেপটপ ব্যাগ টা নিয়ে দরজা লাগিয়ে বলল,
“মেয়ে তো অপেক্ষা করছিলো।লেট হলেই ওর পাপাই,পাপাই শুর হয়ে যায়।”
“হা হা হা….দেখতে হবে না মেয়ে টা কার!!”
“হুমমমম…তাই তো…..”
পরশ মেয়েকে নিয়ে সোফায় বসে রিদিকে বলল,
“মা-বাবা এসেছে??”
রিদিও পাশে বসে বলল,
“না।মাকে সন্ধ্যায় কল করলাম বলল-পরশু আসবে।”
“এতো লেট??”
“অনেক দিন পর গেলো তাই নাকি কেউ আসতে দিচ্ছে না….”
“ও…..”
আলিভা পরশের কাঁধে মাথা রেখে কাঁচুমুচু হয়ে একবার ওর পাপাই তো আর একবার ওর মাম্মির দিকে নজর দিচ্ছে।
রিদি হাত বাড়িয়ে বলল,
“মাম্মি আসো আমার কোলে।তোমার পাপাই চেন্স করবে…..”
“আমি দাবো না।পাপাই….পাপাই…..”
বলে পাপাইয়ের কাঁধে মুখ লুকালো।
ভীষণ মিষ্টি আলিভা।
আধো আধো বুলিতে খুব সুন্দর মিষ্টি গলায় কথা বলে।
“না না আমার পাপাই যাবে না তোমার কোলে।পাপাই আমার কোলেই থাকবে।”
বলে পরশ মেয়েকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলো।
আলিভাও মুখ তুলে পাপাইয়ের দু গাল আর কপালে চুমু দিলো।
রিদি আর পরশ হাঁসছে।
রিদি মেয়ের দিকে চোখ ছোট করে তাঁকিয়ে বলল,
“শুধু তো তোমার পাপাইকেই আদর করছো।মাম্মি একদম বাদ।তাই না??”
আলিভা খিল খিল করে হেঁসে উঠলো।
পাপাইয়ের কোলে বসেই আলিভা তার মাম্মির দু গালে কিস করলো।
তারপর আবার খিলখিল করে হাঁসতে থাকল।
রিদিও মেয়েকে আদর করে উঠে যায়।পরশের ব্যাগ টা রোমে রেখে পরশের জন্য পানি নিয়ে এলো।
বড্ড গৃহিনী হয়ে উঠেছে রিদি।
আগের রিদি আর এখনকার রিদির মাঝে অনেক তফাত।
তবে রূপে না গুণে।রূপে সে আগের মতোই চকচকে।
তবে এই চার-পাঁচ বছর সময়ের মাঝে নিজেকে একটা মেয়ের যা যা সাবলীল গুণ থাকা দরকার সবকিছু দিতে পূর্ণ করে নিয়েছে।
রিদি এখনো মাঝে মাঝে টপস প্যান্ট পড়ে।তবে সেটা বাসায়।শুধু পরশ আর আলিভা যে দিন থাকে।শশুড় শাশুড়ির সামনে না।স্লিভলেস ব্লাউজ দিয়ে পরশের জন্য শাড়ি পড়তে বেশ ভালো লাগে রিদির।
পরশের সারা রাত ভর দুষ্টুমি আর আদরের পর সকালে হালকা রঙের কোনো শাড়ি পড়ে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে আয়নায় দেখতে রিদির কাছে নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।আর সব চেয়ে আনন্দ হয় কমড়ে কাপড় গুছে নিজের হাতে পরশের পচ্ছন্দের রান্না করতে।
ভালোবাসা সব পাড়ে।
সব মানুষের মাঝেই ভালো-খারাপ দিক আছে।
কোনো সময় বা পরিস্থিতে সেটা খারাপ বা ভালো থাকে।
যেমন রিদির হয়েছিলো সাদাদকে দেখার পর থেকে।সাদাদকে না পাওয়াতে সেটা আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছিলো।
তবে যখন পরশ এসে ভালোবাসা বিলিয়ে দিলো-ঠিক তখনি বদলের ছোয়া পায় রিদি।
আজকের এই রিদি যেনো পরশের ভালোবাসার উদ্যান!!
তবে সত্যি বলতে প্রত্যেক মানুষের নিজের একটা বিশেষত্ব থাকে।যেমন নৌশিন সব সময় শান্ত শিষ্টি-মিষ্টি,হাঁসি-খুশী,সাদাদ-প্রেমী-ভীতু।
ঠিক তেমনি রিদিও পরশ প্রেমী,তবে নৌশিনের মতো শান্ত শিষ্ট নয় চঞ্চলতার মিষ্টি ছোয়া আছে তার মাঝে,তবে রাগী বেশ!!
রাগী বা শান্ত দুটো ই মানুষের আলাদা বৈশিষ্ট্য।রাগী মানুষও ভালোবাসতে জানে যেমন রিদি জানে।
রিদি আর নৌশিনের জীবনে অদ্ভুত মিল আছে।তা হচ্ছে তাদের দুজনের স্বামীই খুব রাগী।তবে তফাত একটু আছে এখানে-নৌশিন নরম হয়ে ভালেবেসে সাদাদের রাগ ভাঙায়।কখনো এমন হয় সাদাদ রাগে বকাবকি করছে তাকে আর সে পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে।আর সাদাদ বেশ খানের সময় যাওয়ার পর ভালোবাসার মানুষ টার চোখের পানি সহ্য না করতে পেরে কাছে এসে শান্ত গলায় কথা বলে জড়িয়ে নিয়েছে।
আবার এমন হয়-সাদাদ রাগে ঘরে পুরো আগুন লাগানোর অবস্থা নৌশিন ছুটে এসে ঝাপটে ধরে সাদাদকে শান্ত করে।💜💜💜💜
আর রিদি পরশের রাগের সময় এমনও দেখা যায় পরশ যদি চিল্লানো শুরু করল তো রিদি এক গ্লাস পানি নিয়ে পরশের মাথায় ঢেলে দিল।
তো পরশের রাগ কমার বদলে মাথা আরও গরম!!!রিদিকে পাঁজা কোলে করে নিয়ে সাওয়ারেই ছেড়ে দিলো।
তারপর কিছু সময় পর রাগে রিদির কথা বলাই বন্ধ।
পরশের কথা বন্ধ তবে দুজনের মনেই খচখচ।
আর তখন ইচ্ছা করেই দুজন পাশাপাশি টিভি দেখতে বসে-দূর থেকে ক্রমশ পাশাপাশি এসে একসময় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে খুনসুটিতে মেতে উঠে।
এমন যে কত কি হয় এদের মাঝে।
দুই দম্পতিই সুখী।
ভালোবাসা কম না কারও।
রিদি শক্ত হয়েও পরশের শক্ত হাতের ছোয়ায় যেমন হারিয়ে যায় ঠিক তেমনি নরম বৈশিষ্ট্যের নৌশিনেরও সব উলট-পালট হয়ে যায় সাদাদের ভালোবাসায়।
রিদি আলিভাকে নিজের কোলে নিয়ে পরশকে ফ্রেস হওয়ার জন্য পাঠাল।
আলিভা বারবার রিদির গালে হাত রেখে বলছে,
“পাপাই,গোসো(গোসল)….পাপাপাই গোসো????”
“হ্যাঁ মাম্মি।গোসল করবে…..”
পানি আলিভার খুব পচ্ছন্দ।
যেখানে একটু বেশি পানি দেখবে সেখানেই হাত পা ছুড়তে চায়।
আর গোসলের সময় তো কথায় নেই।এমন কোনে দিন নেই যে আলিভার সাথে সাথে রিদি গোসল করতে হয় নি।
এমন ভাবে পানিতে লাফালাফি করে যে পুরো শরীর ভিজে যায় রিদির।
বাধ্য হয়ে রোজ রোজ মেয়ের সাথে মায়েরও গোসল করতে হয়।
এই তো সেদিন।রিদি একবার গোসল করিয়ে খাইয়ে দিয়ে বিছানায় খেলনা-পত্র দিয়ে বসিয়ে রান্না করছিলো।
পরশের অফিস ছিলো না তো সে বাসায় থাকায় দুপুরেই গোসল করতে যায়।
পাপাইকে ওয়াশরোমে ডুকতে দেখে আলিভার সে কি মায়াবী আধোআধো বায়না গোসলের জন্য।
শেষমেষ রিদির অগোচরে মেয়েকে নিয়ে পরশের একটা লম্বা সাওয়ার শুরু হয়।
কিছু সময় পর রিদি রোমে এসে দেখে-মেয়ে ঘরে নেয়।
শাশুড়ির ঘরে তবুও নেই।
বউ-শাশুড়ির তো মাথায় বাজ!!
মেয়ে কোথায়!!!
রিদি তো প্রায় কান্নাই করে ফেলবে।
এমন সময় শাশুড়ি বলে,
“পরশ কোথায়??”
কান্না স্বরে রিদির জবাব,
“ও তো সাওয়ারে ডুকেছে।
আমি বাবুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়েছিলাম।”
দৌঁড়ে গিয়ে মেইন ডোর সহ সব গুজে রিদি।কাজের মেয়েকে ছাদে পাঠায় যদি আলিভা হেঁটে ছাদে চলে যায়!!
কিন্তু দশ মিনিটেও পায় না মেয়েকে।
এদিকে পরশ এই যে ওয়াশরোমে বের হচ্ছে না।
রিদি ছুটে আবার রোমে যায়।
ওয়াশরোমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল,
“পরশ!!!আলিভাকে পাচ্ছি না।পরশ!!!….”
এবার রিদির চোখে পানি এসেই গেলো।
পরশ রিদির কথাটা ঠিক বুঝে নি।সাওয়ার ফুল স্প্রিডে দেওয়া ছিলো-সেজন্য।
তবে দরজার ধাক্কায় সাওয়ার বন্ধ করে।
আর তখনি রিদি ওয়াশরোমের ভেতর থেকে পিচ্চি আলিভার খিলখিল হাঁসির শব্দ শোনতে পায়।
ওমনি রিদি নিজের ভেতরে প্রাণ ফিরে পায়।
ভয় কেটে যায়-আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।
আর পরশ ভেতর থেকে আতেলের মতো এতক্ষণে জানতে চায়,
“কি ব্যাপার রিদি??”
পরমুহুর্তেই বাপ-বেটির উপর রাগ উঠে যায় রিদির।
কোনে কথা না বলে রোম থেকে বেরিয়ে এলো রিদি।
শাশুড়িকে বলল মেয়ে ওর পাপাইয়ের সাথে ওয়াশরোমে।
বলেই রান্না ঘরে ডুকে চুলা টা কমিয়ে আবার রোমে যায়।
ততক্ষণে পরশ মেয়েকে নিয়ে ওয়াশরোম থেকে বের হয়।
দুজনেই টাওয়েল প্যাঁচানো।
রিদির মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো।
মেয়েকে একটানে পরশের কোল থেকে নিয়ে বিছানায় দাঁড় করিয়ে ককর্শ গলায় বলল,
“এই মেয়ে!!একটু আগে না সাওয়ার করিয়েছি তোমায়??হ্যাঁ??এখন আবার আধা ঘন্টা পানিতে সাওয়ার নিলে তাই না??”
মায়ের এমন রূপ দেখে ভয় পেয়ে যায় আলিভা।
হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
পরশ এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে,
“কি হচ্ছে কি রিদি!!!ওর সাথে এমন করে কথা…..”
“চুপ একদম চুপ…..আমি দশ মিনিট ধরে খুঁজে ওকে পায় নি।আমি ভাবি মেয়ে কোথায়…আর ও তোমার সাথে ওয়াশরোমে।ওও সিট…আমি ওকপ কেনো বলছি।সব দোষ তোমার।তুমি না নিয়ে গেলে ও কি করে যায়??তুমি দেখলে না আমি ওকে সাওয়ার করিয়ে দিয়েছিলাম। দেখো নি??বলো??”
“আরে বাবা।গরম লাগছিলো ওর তাই গোসল করিয়ে আনলাম….”
“ওফফফ,পরশ মজা করবে না।একদিনে দুবার গোসল করে এমন বাচ্চা??ঘরে এসি আর তোমার মেয়ের গরম তাই না??তুমি যদি…….”
আলিভা পাপাইয়ের ঘাড়ে মুখ গুছে কাঁদছে দেখে থেমে যায় রিদি,
“এই মেয়ে…আসো….আসো বলছি….”
ভয়ে রিদির দিকে তাঁকায় না পর্যন্ত আলিভা।
“এতো জোরে চেঁচালে মেয়ে তো ভয় পাবেই….”
রিদি পরশের দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে মেয়েকে জোর করে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।
গলা টা নরম করে বলল,
“চুপ…আর কাঁদতে হবে না।থামো…..”
টাওয়েল খুলে জামা-কাপড় পড়িয়ে লৌশন দেওয়ার জন্য কোলে বসালেই আলিভা কান্না থামিয়ে বলল,
“সলি……”
আর ওমনি মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসি ফুটে উঠে।
কিন্তু পরশের সাথে কথা বলছিলো একদম রাতে।
তার আগে একটা কথাও বলে নি।
আজও আলিভার রিদির কাছে বায়না ধরেছে সে ওর পাপাইয়ের সাথে।
রিদি করতে দিলে তো!!!
এই রাতের বেলা!!অসম্ভব!!
“মাম্মি…..গোসো(গোসল)কলবো…..গোসো গোসো……”
“না সোনা।ঠান্ডা লাগবে…..”
“পাপাই কলে…..পাপাই যাই….গোসো গোসো….”
রিদি আর দেরী না করে মেয়েকে নিয়ে রোম থেকে বেরিয়ে গেলো।
তা না হলে ওয়াশরোমে যাওয়ার বায়না চলতেই থাকবে।
“গোসো…গোসো…..কলবো….মাম্মি….”
ড্রয়িং রোমে এসে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছে আলিভা।
“সোনা মানিক রে….এই দেখো কি!!!”
বলেই রিদি কার্টুন অন করে দিলো।
তবুও মানতে চায় না মেয়ে।
কত আকিঁবুঁকি বলে মানিয়ে নিয়েছে রিদি।
পরশ রেডি হয়ে এসে রিদির পাশে বসলো।
আলিভা মাম্মির বুকে মাথা রেখে তখন চুপটি করে কার্টুনের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
পরশ মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“পাপাই!!!”
আলিভা চোখ দুটো ঢিপঢিপ করলো শুধু।
রিদি মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে-পরশের মুখের দিকে তাঁকালো।মুঁচকি হেঁসে বলল,
“ঘুম পাচ্ছে হয়তো……”
“ওরে মা!!!!দেখি দেখি…..”
বলে পরশ কোলে নিলো আলিভাকে।কিন্তু আলিভা থাকতে চায় না পাপাইয়ের কোলে মাম্মির দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।ঘুম পাচ্ছে মেয়েটার।সারা দিন পরশ সামলাতে পারবে এই মেয়েকে।
কিন্তু যখন ঘুম পায়!!!তখন কখনো না।
কারণ মেয়ে যে মায়ের কোল ছাড়া আর কোলেই ঘুমায় না।
রিদি পরশের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে সোফায় আধসোয়া হয়ে বসল।
পরশ কার্টুন চেন্স করে খবরের চ্যানেলে যায়।
রিদি মেয়েকে বুকে জাপটে ধরে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে।
ঘুমিয়ে গেছে আলিভা।
পরশ অফিস থেকে এমনিতে লেট করে এসেছে।তারউপর সাওয়ার নিয়েছে সেই কত আগে!!নিশ্চয় খোদা পেয়েছে।
স্বাভাবিক পাবেই-সে তো রাতের খাবার নয়টায় শেষ করে।আর এখন সাড়ে দশটার মতো।রিদির খুব খারাপ লাগছে।মেয়েটা আগে একটু ঘুমালে হতো!!
“বসো না প্লিজ আর একটু কষ্ট করে।আমি শুইয়ে দিয়ে ই আসছি…..”
পরশ টি.ভি তে চোখ রেখে বলল,
“হুমমম….নো প্রবলেম….”
কিন্তু প্রবলেম যদি থাকে কপালে কে আর আটকাবে!!
আলিভাকে বিছানায় রেখে জাস্ট উঠতে নিবে রিদি-এমন সময় ঘুম ভেঙে যায় ওর।
“মাম্মি,মাম্মি,মাম্মি………”
ঘুম গলায় কাঁন্না শুরু হচ্ছিলো প্রায়।
তার আগেই রিদি জড়িয়ে ধরল,
“এই তো সোনা আমি।মাম্মি এই যে….. হুমমমম…….”
“মাম্মি মাম্মি……”
বেশ কিছুক্ষণ পর পরশ রোমে এসে রিদির পাশে আস্তে করে শুয়ে পড়ল।আলিভা এখনো জেগে তাই রিদি যেতে পারে নি।আর এখনে উঠতে পারছে না।
রিদি অসহায় মুখ করে পরশের দিকে তাঁকালে পরশ মুঁচকি হেঁসে রিদির কমড় জড়িয়ে ধরল।
আলিভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রিদি।একটু একটু চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার।
রিদি নীচু স্বরে বলল,
“কি!!”
পরশ কিছু না বলে রিদির পিঠে একদম লেগে যায়।
আলিভার দিকে তাঁকিয়ে দেখল তার চোখ বন্ধ।
আর ওমনি সে রিূদির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ভালোবাসার রং ছড়াতে শুরু করল।
“উমমমমমম…….মেয়ে তো….”
“হুশশশশ ঘুমাচ্ছে……চুপ…..”
রিদিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরশ রিদিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
নিজের ভালোবাসায় মাতোয়াড়া হয়ে রয়ে দুজন দুজনের ভালোবাসায়।
পরশ রিদির ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ গুজতে যাবে ঠিক এমন হয় রিদি পরশের মুখের সামনে হাত দিয়ে আটকে নেয়।
“আগে ডিনার করবে চলো……”
পরশের মুখটা প্রথমে ভার হলেও এবারে মুঁচকি হেঁসে বলল,
“ডিনার করা কেনো লাগবে??আগে তো এটাও করা যায় তাই না??”
“উফফ পরশ!!!!তুমি না!! সরো তো…..”
“হুম আমি।তখন যে বললে -মেয়ে খুব মিস করছিলো।তা মেয়ে কি একাই মিস করছিলে নাকি মেয়ের মাম্মিও একটু আধটু মিস করছিলো??হুম??”
রিদি পরশের দিকে ফিরে তাঁকাল।বুকে মাথা রেখে আদুরী সুরে বলল,
“করছিলাম তো…….”
“আচ্ছা!!!!”
“হুম……”
“ওকে,পুষিয়ে দিচ্ছি……..”
পরশ রিদির চুল থেকে কাঁটাটা খোলে নিলো।
এলোমেলো চুলে রিদিকে দেখতে বেশ লাগে পরশের।
চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে পরশ।কী এক অপরূপ তৃপ্ততায় ঘিরে রাখে পরশকে রিদির চুলগুলো।
রিদি পরশের বুকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল,
“প্লিজ না।চলো ডিনার করবে…..”
পরশ কোনো কথা বলল না।
ধীরে ধীরে রিদির শরীরের উপর নিজের শরীর নিয়ে আসতে চলেছে।
মিষ্টি সুবাসের আকর্ষণে কমশ্র চুল থেকে ঘাড়ের দিকে….আস্তে আস্তে গলায়….ঠোঁটে।
আর তারপর ভালোবাসার চুম্বন।
রিদি পরশের মাথার পেছেনের চুলগুলো আকড়ে ধরলো।
লাইট অন।যদি মেয়ে জেগে যায়!!!
কি হবে???
“পরশ!!!!!……”
“উমমম…..”
“বাবু জেগে যাবে…..”
পরশ মাথা তুলে বলল,
“হুশশশ….আমি তো বাবুর মাকে আদর করছি।বাবু একদম ডিস্টার্ব করবে না…..”
পরশের চোখে ভালোবাসার নেশা।তাতে রিদিও মাতিয়ে যাচ্ছে।
কম্পিত গলায় বলল,
“ডিনার??”
“করবো তো।”
“চলো…..”
“উমহু…..যেতে হবে না।”
“তাহলে??”
“তোমাকে খাবো……”
লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিল রিদি।
পরশ বলল,
“তোমাকে খাওয়া আগে অন্য ডিনার নাই বা করলাম।আমার তোমাতেই চলবে।বাই দা ওয়ে আজকে শাড়ি পড়ে ভালোই করছো…..না হলে টপস বা জামা খুলতে আমার আবার একটু কষ্ট হয়।সাথে সময় তো যায় ই……”
রিদি চোখ বন্ধ করে ফেলল।
পরশ দু চোখে চুমু দিয়ে কপালেও উষ্মতার ছোঁয়া দিয়ে বলল,
“ভালোবাসি…..”
সমর্থনে চোখ বন্ধ রেখেই রিদি মুঁচকি হেঁসে জড়িয়ে নিল পরশকে।
কিছুক্ষণ পর পরশ হাত বাড়িয়ে রিমোট টা নিয়ে রোমের লাইট টা বন্ধ করে দিল।
রিদির শাড়ি টা খসে পড়লো। তারপর ব্লাউজ টাও ছিটকে পড়লো ফ্লোরে।
গভীর সুখে পাড়ি দিচ্ছিলো দুজন প্রেমবিলাসী।
রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ভালোবাসা টাও সময়ের সাথে আরও গভীরতর হয়ে উঠছে।
রাইসাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হবে আজ।
তাই সকাল থেকে সে কি আনন্দ তার।
নৌশিন যখন সাদাদকে নামাযের জন্য ডেকেছে তখন সেও উঠে গেছে।
অথচ রাইসা ঠিক নৌশিনের মতো সকাল বেলার ঘুম কাতুরে।
আট টায় স্কুল।এখন সাত টা বাজে।অরূপ স্কুলের জন্য বের হচ্ছে সেটা দেখেই দৌঁড়ে অরূপের কাছে গেল,
“ভাইয়া!!আমিও যাবো…..”
“কোথায়??”
“স্কুলে….”
“যা তোকে নিবো না…..”
“আমি তো যাবো।আমার নতুন স্কুলে….”
“ওওও…..আজকে যাবি….”
রাইসা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হুমমমম….”
আর অরূপ রাইসা ঝুটি দুটো টেনে দিয়ে বলল,
“আচ্ছা যাস।কাঁদিস না,তুই তো আবার কাঁদুনী বুড়ি….”
“আমি তো বড় হয়ে গেছি ভাইয়া।কাঁদি না….”
কি জানি অরূপের আজ কি হলো!!খুব ভালো ব্যবহার করছে রাইসার সাথে।
আরও অবাক করা বিষয় হলো অরূপ তাঁর স্কুল ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে রাইসার হাতে দিয়ে বলল,
“এই নে তোর ফার্স্ট ডে স্কুলে যাওয়ার গিফ্ট……”
রাইসা তো মহাখুশী।
লাফাতে শুরু করছে একদম।
“এএএএএ…..ভাইয়া আমাকে গিফ্ট দিয়েছে।কি মজা কি মজা!!!চকলেট….এএএএ্যা…কি মজা!!কি মজা!!!”
অরূপকে ড্রাইভার ডাকছে স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে তাই সে আর কিছু না বলে ছুটে বেড়িয়ে গেলো।
অথচ রাইসা সারা ড্রয়িং ঘুরেছে আর চকলেট হাতে চেঁচামেঁচি করছে।
“রাইসা মনি,কি হয়েছে সোনা??”
“জেম্মাম দেখো….ভাইয়া চকলেট দিয়েছে আমায়….”
“তাই!!!!!”
“হ্যাঁ….নতুন স্কুলে যাবো যে তার গিফ্ট…..”
“ওলে আমার মাম্মাম টা রে।বড় হয়ে গেছে একদম……”
“তুমি গিফ্ট দাও……”
“আআআ!!সত্যিই তো আমার তো গিফ্ট দেওয়া উচিত।আমি কি দিই বলো তো??আমার কাছে তো চকলেট নেই…..”
“উমমমমম….তাহলে যা আছে তাই দাও…..”
রাফসা একটু ভেবে মুঁচকি হাঁসলো।তারপর নিজের গলার সোনার চেইন টা খোলে রাইসার গলায় সযত্নে পড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“এই তো আমার মা মনির প্রথম স্কুলে যাওয়ার গিফ্ট…..”
সাদাদ আর নৌশিন দুজনে সিরি দিয়ে নামছিলো।
রাইসার গিফ্ট চাওয়া থেকে শুরু করে রাফসার চেইন দেওয়া সব টা নজরে আসে তাদের।
নৌশিন সাদাদের দিকে একবার তাঁকিয়ে দ্রুত নিচে আসে।রাইসার কাছে গিয়ে রাইসাকে বলল,
“সেনামনি???কি ব্যাপার তুমি সবার কাছে এভাবে গিফ্ট কেনো চাইছো??”
রাইসা কিছু বলল না।
নৌশিন রাফসাকে বলল,
“ভাবী!!!তুমি এটা???”
“থাক না।বাদ দে।তাছাড়া প্রথম দিন স্কুলে যাচ্ছে….”
“ভাবী ওর বায়না কিন্তু দিন দিন বেড়ে চলেছে…..”
“আচ্ছা বাবা আচ্ছা।আজ থাক….অন্য দিন ওকে আমি বুঝিয়ে বলবো…..”
“হ্যাঁ।।।চিনি আমি তোমাদের,মাথায় তুলে ফেলছো একে…..”
রাইসা অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“আম্মু,আমি তো দাঁড়িয়ে আছি……মাথায় উঠি না তো কোনোদিন….দাদু শুধু পিঠে চড়িয়ে ঘোড়া হয়।।।।”
হাঁসলো সবাই রাইসার কথায়।
শুধু নৌশিন হাঁসে নি।
চোখ বেটে মেয়ের দিকে তাঁকায়।
কিন্তু মেয়ের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাঁকিয়ে আর না হেঁসে পাড়ে নি।
“আচ্ছা,হয়েছে এবার চল।রেডি হবে।স্কুলে লেট হবে তা না হলে…..”
“আম্মু!!আমি ফুপির পাঠানো জমা পড়বো….”
“আচ্ছা ঠিক আছে আসো….”
সাদাদ সাওয়ার নিচ্ছে।
নৌশিন রাইসাকে রেডি করিয়ে দিচ্ছে।এইটুকু বয়সেই রাইসার চুল পিঠে পড়ে।
জামা পড়িয়ে মেয়ের চুলগুলো খুব যত্ন করে বেঁধে দিচ্ছে নৌশিন।
দুটো জুটি কাঁধের দু সাইডে ফেলে কপালের চুলগুলো সামনের দিকে এনে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নৌশিন।
“আমার রাজকন্যা……উমমম্মা…..”
“হি হি হি হি…..”
“ওরে মানিকপাখি……কি সুন্দর হাঁসি!!!”
“হি হি চলো আম্মু…..”
“কোথায়??”
“স্কুলে??”
“ও….তুমি খেয়েছো??না খেয়ে কেউ স্কুলে যায়??”
“ওহ্….তাহলে চলো খাবো….”
“হ্যাঁ তো খাবো।তুমি একটু বসো।তোমার বাবাই আসুক….”
“আচ্ছা।আম্মু একটা চকলেট দাও…..”
“কিহ??”
রাইসা হাঁসি মুখে মায়ের সামনে হাত পেতে বলল,
“একটু দাও…..”
“মামনি,তোমার ভাইয়া তো দিয়েছে একটা সেটা স্কুল থেকে ফেরার সময় খাবে।এখন তো অন্য কিছু খাবে….”
“একটু চকলেট খেলে কি হয়??”
“স্কুলে যাবে যদি দাঁতে চকলেট লেগে থাকে??তখন তো পঁচা দেখাবে…..”
“ও তাই তো।ঠিক আছে।তাহলে পড়ে কিন্তু দুইটা দিবে…..”
“আচ্ছা মা…..”
রাইসা বিছানা থেকে নেমে হাঁসি মুখে রোম থেকে বেরিয়ে গেল।
সাদাদের সাওয়ার শেষ।নৌশিনেরও রেডি হতে হবে।
তাই শাড়ি বের করে ওয়াশরোমে চলে গেলো।
শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো নৌশিন।
সাদাদ রেডি হচ্ছে।শুধু কোর্ট টা পড়া বাকী।নৌশিনকে ছাড়া এটা কখনোই একা করবে না।
তাই অপেক্ষা করছে।
“সাদাদ!!আজও….তুমি কি একা পড়তে পারো না??”
“আগে পাড়তাম বিয়ের পর থেকে না…..”
মুঁচকি হাঁসলো নৌশিন।
সাদাদকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো ঘুরিয়ে কোর্ট ধরে,তারপর সাদাদের কোর্ট পড়া শেষ হয়।
আয়নার সামনে বসে যায় নৌশিন।
চুল গুলো মেলে দিয়ে আঁচড়ে নিচ্ছে।
আর সাদাদ পলকহীন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার দিকে।
নৌশিন চুলগুলো আচঁড়ে ঘাড়ের কাছে নুইয়ে খোপা করে নিলো।এই মেয়ের খোপাটা যা বড়!!!!
একদম পুরো ঘাড় ঢেকে যায়।
খোলা চুল আর এমন খোপায় সাদাদ নৌশিনকে হা হয়ে দেখে।আর একপাশ বেনুনী!!
থ্রিপিসের সাথে বেনুনী টা করলে নৌশিনকে একদম বাচ্চা লাগে।কিন্তু আজকাল নৌশিন এই কাজ টা করে না।
রাইসা হওয়ার পর থেকে থ্রি-পিস পড়া একদম বাদ দিয়েছে মেয়েটা।সাদাদ অনেক সময় বলেছে কিন্তু উত্তরে নৌশিন বলেছে,
“শাড়ি পড়লে নিজেকে বড় বড় লাগে।মা মা একটা ফিলিংস আসে……”
তাই সাদাদ সম্মতি জানিয়েছে।
শাড়ি পড়া নৌশিনকে যে তার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে।
নৌশিন একটা সাদা হিজাব নিয়ে পড়ছে।সাদাদ উঠে গিয়ে নৌশিনকে পেছন থেকে আকড়ে ধরে।
“এই….কি হচ্ছে?”
সাদাদ নৌশিনের কাঁধে থুতনী রেখে বলল,
“সুন্দর লাগছে খুব….”
নৌশিন আয়নায় দুজনকে দেখছে।বলল,
“তোমাকেও….”
“আমাদের….”
“হুমমম। এবার ছাড়ো।হিজাব পড়বো…..”
“উমম….আদর করতে ইচ্ছা করছে…..”
“ইসস..সরো তো।মেয়ের স্কুলের লেট হবে……”
“হবে না…..”
বলে সাদাদ আরও শক্ত করে আগলে নিল নৌশিনকে।
নৌশিন ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে না।করেই বা লাভ কি!!
সাদাদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া এত সোজা নাকি!!!
সাদাদ নৌশিনের চুলে আতল করে চুমু দিলো।যেনো বাঁধা চুল নষ্ট না হয়।
মেয়ের স্কুলে যেতে হবে তো আবার তাই।
সাদাদ নৌশিনকে নিজের দিকে ফিরিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
কানের পাশে একহাত আর অন্য হাত নৌশিনের কমড়ে নিয়ে ঠোঁটের দিকে নজর দিচ্ছে সাদাদ।
নৌশিন আবেশিত হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
বন্ধ চোখে এই মায়াবতীকে সাদাদের কাছে আরও মায়াবী মনে হয়।
সাদাদ ঠোঁট রাখল নৌশিনের ঠোঁটে।নৌশিনের হাত টা হিজাব টা ফ্লোরে।
নৌশিন দু হাতে আকড়ে ধরল সাদাদের শার্ট।
সাদাদ কম্রশ ডুবে যাচ্ছে নৌশিনের ঠোঁটে।
সাই দিচ্ছে নৌশিনও।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর সাদাদ নৌশিনকে ছাড়ে।
নৌশিন লজ্জা সাদাদকের বুকে মাথা রেখে মুঁচকি হাঁসে।
সাদাদ নৌশিনকে বুকে চেঁপে রাখল।বলল,
“এখনও এতো লজ্জা পাও??
আর কবে তোমার লজ্জা যাবে বল তো??”
“জানি না…..”
প্রেমঘোর পর্ব ১০৯+১১০
“তাহলে তো আমি সারা জীবন-ই এমন লজ্জায় ফেলবো তোমায়…..”
“ধুর…..”
নৌশিন সরে গেলো সাদাদের কাছ থেকে।
হাঁসল সাদাদ।
নৌশিন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“মেয়ের স্কুল কিন্তু….”
সাদাদ আবারও হাঁসল।
“হাঁসছো কেনো??”
“ওকে হাঁসছি না।আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো….”
“হুমম……”