প্রেমঘোর পর্ব ২২

প্রেমঘোর পর্ব ২২
নার্গিস সুলতানা রিপা

ওয়াশরোমের দরজা লক করা হয় নি,সাদাদ চলে যাওয়ার সময় শুধু ঠেলে রেখে গিয়েছিলো নৌশিন আর লক করে নি…………
ভেতর থেকে একবার ডাক দেওয়ায় সাদাদ শুনতে পায় নি……শুধু একটা পেডিকোট পড়ে কি আর রোমে যাওয়া যায় নাকি??তবু আবার ভেজা!রোমটাও ভিজবে আর এইভাবে সাদাদের সামনে গেলে আরও লজ্জায় পড়তে হবে…….তাই নৌশিন দরজার সামনে গিয়ে ডাকতে শুরু করে…..

“সাদাদ,এই সাদাদ…..শুনছো????”(নৌশিন)
“কি হলো???সাদাদ শুনতে পাচ্ছো????শুনো না দেখো ড্রেসিং এর পাশে দুটো টাওয়েল আছে আমার একটু দাও না প্লিজ…..”
সাদাদের কোনো সারা নেই….আসলে সাদাদ ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেছে তাই নৌশিনের ডাক তার কানে যাচ্ছে না……………
“সাদাদ….কি হলো???দাও….তুমি কি শুনতে পারছো???নাকি টাওয়েল পাও নি…….ড্রেসিং এর সামনে না থাকলে দেখো একটু বারান্দায় সোভায় নিশ্চয় আছে….ঠান্ডা লাগছে খুব অনেকক্ষণ ধরে ভিজে আছি…….একটু এনে দাও প্লিজ……………”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাহ্ সাদাদের কোনো সারা নেই…….নৌশিন এবার বুজলো-মনে হয় সাদাদ ওর কথা শুনতে পারছে না কিন্তু রোমে থাকলে তো ওয়াশরোমের আওয়াজ শুনবে…..তাহলে???ও কি রোমে নেই???না কি থেকেও সারা দিচ্ছে না…তাই নৌশিন দরজাটা হালকা ফাঁক করে রোমে উঁকি দেয়…..যা ভেবেছিলো তাই সাদাদ রোমে নেই……..
“যাহ্,এটা আবার কোথায় গেলো…..ওহ!ফোন এসেছিলো তো,নিশ্চয়ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে…….থাক আর না ডাকি আমিই বরং যাই….”

দরজাটা আবার একটু টেনে নেয় নৌশিন তারপর স্ট্রিমে থাকা বেনারশিটা শরীর কোনো মতো পেঁচিয়ে রোমে ডুকে….খাটের উপর জমা কাপড় রেখেছিলো ফ্রেস হয়ে পড়বে বলে কিন্তু সাদাদ টেনে ওয়াশরোমে নিয়ে গিয়েছে তাই এগুলো আর নেওয়া হয় নি……..তাই জামা-কাপড় আর টাওয়েল দুটো নিয়ে আবার ওয়াশরোমে যায়…..যাওয়ার সময় রোমের গ্লাস দিয়ে বারান্দার দিকে তাঁকিয়ে দেখে সাদাদ রেলিং এ হাত দিয়ে ফোনে কথা বলছে তাই আর ডেকে নি কিন্তু এতো রাতে কার সাথে এতো কথা বলছে সে-এটা ভেবে একটু কেমন জানি লাগছে নৌশিনের,আবার সে নিজেই ভাবে”না না কি ভাবছি!এগুলো ঠিক না….ধুর দু দিন হলো না বিয়ের এখনি আমি কি ভাবী…কার সাথে আবার নিশ্চয় কারও দরকারী ফোন….বাট এতো রাতে তো তাই মনে হয় একটু এমন লাগলো আমার যাই হোক আমার সাদাদ এমন না সো ওর সর্ম্পকে উল্টাপাল্টা ভাবার কোনো প্রশ্নই আসে না”……………

চেন্স করে ওয়াশরোম থেকে রোমে আসে কিন্তু সাদাদ এখনও কথা বলছে…নৌশিন মাথায় পেঁচানো টাওয়েল টা খুলে চুলগুলো একটু ঝেড়ে নিয়ে আবার আর একটা টাওয়েল দিয়ে চুল গুলো একটু উপরের দিকে পেঁচিয়ে বেঁধে আবারও ওয়াশরোমে ডুকে….আসলে মেয়েটার চুল বেশি লম্বা আর ঘন তো তাই আগের টাওয়েলটা ভিজে গেছে তাই আবার নতুন টাওয়েল নিতে হয়েছে রোজকার মতোই……..ওয়াশরোমে ডুকে সাদাদের ফেলে যাওয়া শার্ট,গেন্জি,পেন্ট ছোট বালতিতে করে নেয়…আর নিজের ব্লাউজ আর পেডিকোট টাও অন্য আর একটা ছোট বালতিতে করে নিয়ে বের হবে,তখন আবারও পেছন ফিরে চেন্স করা বেনারসিটা কাধেঁ নিতে যাবে হঠাৎ স্ট্রিমের নিচের দিকের ফ্লোরে ছোট কাপড়ের মতো দেখতে পায়…..ওর তো ছোট একটা ব্লাউজ তাহলে!!এটা কি??দেখার জন্য হাতে নেয়……..হাতে নিয়ে আবারও ছুড়ে ফেলে,নিজেই বকবক করতে থাকে…”এ মা!ছি ছি!সাদাদ কি খারাপ….এটাও আমার জন্য ফেলে রেখে গেছে…..এসব দেখলেই লজ্জা করে আবার হাত দিয়ে ধরেও ফেললাম এখন….ছিঃ ছিঃ….”

আবার কি যেন ভেবে কাপড়টা বালতিতে তুলে নেয়”যাহ্ কিসের লজ্জা…আমার বরের ই তো….সব ওয়াশ করতে পারলে এটাও পারবো…ভাবী যদি ওর এটা গুছিয়ে দিতে পারে আমি বউ হয়ে ওয়াশ করে দিতে পারবো না??….হুম নিশ্চয় পারবো…….”…ঠোঁটের কোনে হাঁসি টেনে ওয়াশরোম থেকে বেরিয়ে পড়ে দু হাতে দু বালতি নিয়ে,আর কাধেঁ বেনারসি টাও আছে…রোমে ডুকে বেনারসিটা খাটের ওপর রেখে বালতি দুটে নিয়ে বাইরে চলে যায়…..বসার ঘরের পাশেই ওয়াশিং মেশিং রাখা…সেখানে প্রথমে সাদাদের কাপড়গুলো ওয়াশিং করতে দিয়ে তারপর নিজের গুলো দেয়….একসাথে দেয় নি কারণ ওর ব্লাউজ আর পেডিকোডের রঙ উঠে যদি সাদাদের গুলোতে লেগে যায়!….

তাই আলাদা করে নিয়ে এসে আলাদা করেই ওয়াশ করে….যদিও এতো রাতে এগুলো ওর করার দরকার ছিলো না নিশ্চয় কাল সকালে কোনো সার্ভেন্ট কাজগুলো করে দিতো কিন্তু নৌশিন নিজে যে কাজ টা করতে পারে সেটা সাধারণত সার্ভেন্টদের দিয়ে করায় না আর কাজ জমিয়ে রাখতেও অভ্যস্ত নয় সে-সেজন্যই এখনি ওয়াশ করে নিলো…….তারপর বালতি আর কাপড় গুলো নিয়ে নিজের রোমে ফিরে যায়….বালতি দুটো বাথরোমে রেখে,কাপড়গুলো ভাজ করে আলমারিতে রাখছে কিন্তু সাদাদ এখনও কথা বলছে….এবার নৌশিনের আসলেই জানতে ইচ্ছে করছে,কে ফোন করেছে?? বাসায় কি কারও কিছু হলো??ওর বস ও তো অসুস্থ মানুষ আর ওর দাদীও আছে বাসায় কিন্তু অনেকক্ষণ তো হলো……তাই নৌশিন জানতেই চাইলো এবার “সাদাদ কি হলো???এনি প্রবলেম.??”

কিন্তু সাদাদ কোনো উত্তর দেয় নি….তাই খাট থেকে শাড়ি নিয়ে ভাজ করতে করতে আবারও জিগেঙ্গ করে “কি হলো মাই ডিয়ার??কারও কি কিছু হয়েছে???”……
সাদাদ কোনো উত্তর দিলো না…..
নৌশিনের এবার আসলেই খারাপ লাগছে…মনে মনে ভাবছে”যাই হোক,আর যে ই হোক…আমি কত বার জানতে চাইলাম কিছু তো বলতে পারতো….” আবার পরক্ষনেই ভাবে “আরে!আমি কি বোকা ফোনে কথা বলছে তার মাঝে আমার প্রশ্নের উত্তর কি করে দিবে……..”
…”আমি না একটা পাগল….”এসব ভেবে আবারও মুচকি হাঁসে নৌশিন….আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলো…..হঠাৎ বারান্দায় কিছু একটার জোরে আওয়াজ হওয়ায় চমকে উঠে নৌশিন……কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ…..

কিন্তু বারান্দায় তো ভাঙার মতো কিছু নেই,যে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে-বারান্দায় তো সাদাদ….তাই নৌশিন একরকম দৌঁড়েই বারান্দায় যায়…..
হায় আল্লাহ্ একি সাদাদ নিজের ফোনকে আছাড় দিয়েছে….বারান্দার পুরো ফ্লোরটুকুই আরটিভিসিলাস ঘাসে ভরা…তাতে তো ফোনটা এভাবে চৌঁচির হওয়ার কথা না,তাহলে?? নিশ্চয় ওয়ালে ছুড়ে মেরেছে……
নৌশিন সাদাদের দিকে তাঁকায়-আর সাদাদ বাইরের দিকে তাঁকিয়ে…
নৌশিন সাদাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়-দেখতে পায় সাদাদ রাগে ফুসে উঠছে,লাল হয়ে গেছে সাদাদের চোখ মুখ….দাঁতে দাঁত চেপে আছে সাদাদ….
নৌশিন খুব ভালো করে বুঝতে পারছে সাদাদের মেজাজ চরম পর্যায়ে বিগরে আছে…কিন্তু কি কারণে সেটা অজনা…..

তাই আস্তে করে সাদাদকে ডাক দেয়,আসলে সাদাদের এমন রাগী ভাব দেখলে নৌশিনের ই কেমন ভয় ভয় লাগে……”সাদাদ….”
“সাদাদ…”
নৌশিন ওর হাতটা সাদাদের উপর রেখে আবারও ডাকে “সাদাদ….”
সাদাদ এবার নৌশিনের দিকে ফিরে তাঁকায়…..
সাদাদের চোখগুলো পুরো আগুনের মতো লাল হয়ে আছে-যা দেখে নৌশিন আরও ভয় পেয়ে যায়….
ঢোক গিলে জানতে চায়
“কি হয়েছে??”
সাদাদ:….(নিশ্চুপ)……..
শুধু নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে আছে……..

“কি হলো???আমি কি কিছু করেছি??এভাবে রেগে আছো কেন??”
সাদাদ কোনো কথা না বলে নৌশিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে….হুম অনেক অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে…..নৌশিন হঠাৎ সাদাদ এমন ব্যবহারের কারণ বুজতে পারছে না কিন্তু এরকম করে জড়িয়ে ধরায় এইটুকু বুজতে পারছে যে ওর ওপর রাগ করে নি…..
সেজন্য ভয় টাও কম লাগছে…….
“সাদাদ কি হয়েছে???কে ফোন করেছিলো???”
“কিছু হয় নি…আর কেউ ফোন করে নি….”
“ফোন তো বেঁজে চলেছিলো…তুলো নি তুমি?”
“করুক যার দরকার সে করছে……আমি পড়ে দেখপ নিবো…তুমি আগে বলো….’আমায় ছেড়ে যাবে না তো কোনো দিন’…”

“সাদাদ এটা কেমন প্রশ্ন?কোথায় যাবো আমি তোমাকে ছেড়ে….সাদাদ তুমি আমার ভালোবাসা আর এখন তুমি আমার অস্তিত্ব হয়ে গেছো….তোমাকে ছাড়া আমি কোনো কিছু ভাবতে পারি না…….আর পারবোও না…..”
সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে-নৌশিনের দুগালে হাত দিয়ে “আমিও পরবো না ভাবতে……”
সাদাদের চোখের দিকে তাঁকায় নৌশিন…….নাহ্,কোনো রাগের ছাপ নেই চোখে এখন কিন্তু দেখে খুব ভালো করে বুজা যাচ্ছে যে একটু আগে চরম পরিমাণে রেগে ছিলো………..
“আচ্ছা!হঠাৎ এমন কথা কেন বললে তুমি?তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটুকু চাই….এমন প্রশ্ন আর কোনো করবে না…..আজকেই লাস্ট,এই বলে দিলাম…..”

“আচ্ছা বাবা আর করবো না…..”
“হুম,এখন বলো রাগ হয়েছে কার উপর….আর ফোনের কি অবস্থা করেছো!…..কি হয়েছে??”
“কিছু না…..”
“বলবে না তাই তো?….”
“বাদ দাও না…..একজন থার্ড ক্লাস ফোন করেছিলো তার উপর রাগ করেই ফোন ছুড়ে মেরেছি…..ওর কথা প্লিজ এখন আর না……”
নৌশিনকে আরও কাছে টেনে নেয় সাদাদ…..”এখন আমাদের রোমান্স করার সময়….সো অন্য সবকিছু বাদ…”
“জি না,ছাড়ো…..”
“উমমম হুমমমম….ছাড়ার জন্য ধরেছি না কি……”

“এই তোমার ঘুম পাচ্ছে না কাল তো একফোঁটাও ঘুমাও নি….আর আজও সারাদিন নির্ঘুম-এখন রাত দেড় টা বাজে আর তুমার ঘুমের কোনো নমুনা ই তো দেখছি না আমি……”
“আমিও বুজতে পারছি না….আমার মনে হয়-তোমাকে পেয়ে আমার ঘুম উধাও হয়ে গেছে…..”
“তাই বুজি!….তা ছাড়ুন এখন আর যান ঘুমান…..”
“এই…একটা কথা বলো তো….”
“কি??…”

“তখন যে ওয়াশ রোমে তোমাকে ঐ ভাবে রেখে আসলাম-তোমার খারাপ লাগে নি??আই মিন তোমার আরও আদর পেতে ইচ্ছা করছিলো….এম আই রাইট???”
!নৌশিন কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে…..লজ্জা করছে খুব আসলে ই তো সাদাদ ওকে যে ভালবাসা দিচ্ছিলো তখন-সেটার তৃন্ষা যে এখনও রয়ে গেছে….আরও আদর পেয়ে ইচ্ছে করছে,সাদাদের ভালবাসায় মাতাল হতে চায় ও…….কিন্তু সেটা কি মুখে বলা যায় নাকি!…….

প্রেমঘোর পর্ব ২১

“ও আচ্ছা…..নীরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ…..”
“ধ্যাত….ছাড়ো তো……”
নৌশিন নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্ঠা চালাচ্ছে-সাদাদ কি সব বলছে আর যেভাবে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে তাতে তো নৌশিনের লজ্জায় যায় যায় অবস্থা…..

প্রেমঘোর পর্ব ২৩