প্রেমঘোর পর্ব ২৭+২৮
নার্গিস সুলতানা রিপা
“ও ভাবী,আগে আমাকে দাও না পরে সাজাও এগুলো…….”(নৌশিন)
“আরে বাবা,দাঁড়া ঠিক করে রাখি একটু……”(ভাবী)
“তাড়াতাড়ি…..প্লিজ…..”(নৌশিন)
“হুসসসস……থাম তো….”(আরফান)
“তুই চুপ থাক……তুই বুজবি না…..”(নৌশিন)
“আমার বুজার দরকার নাই,দেখ তোর ছোছড়ামি দেখে তোর বর ও হাঁসছে….”(আরফান)
“এই তুমি হাঁসছো কেন??তুমি কি জানো লেবু পাতা ভর্তার সাথে মলা শুটকি কত্ত মজা,জাস্ট অমৃত…..আর তার সাথে বেগুন ভাজা হলে তো সোনায় সোহাগা……..ও ভাবী কত কিছু রান্না করলে আর আমার জন্য একটা বেগুন ভাজলে না…….”
(নৌশিন)
সাদাদ নৌশিনের কাণ্ড দেখে মুচকি হেঁসে যাচ্ছে……
“আরে সময় তো লাগবে নাকি…..আমি তো এই শুটকি ই ভাজতে চাইছিলাম না-মামি জোর করলো তাই ভাজলাম…..”(ভাবী)
“আপাতা খা তোর এই কুখাদ্য,তারপর বেগুন ভাজা করে দিবে…….”(ভাই)
নৌশিন মন খারাপ করে বললো,
“ভাইয়া,এগুলো কু খাদ্য না…..অনেক টেস্ট চাইলে খেয়ে দেখতে পারো…..”(নৌশিন)
“তুই খা…..তোর তো ভালো খাদ্য পেটে শয় না……”
“বাবা,দেখলে তো ভাইয়া কি বলে…..তুমি ই বলো এগুলো তো নেচারাল খাবার…..এগুলোর সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা হতেই পারে না…..”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আচ্ছা আচ্ছা…..এই নে তোর সাদা ভাত……এখন খাওয়া শুরু কর…….”
“আহ্……উননননমমম কি সুন্দর ঘ্রাণ আসছে……”
“হুম,আসলেই লেবু লাতা ভর্তার গন্ধ টা জোশ…….এই যে নে তোর সব বাটি সামনে দিলাম,তুই নিয়ে নিয়ে খা……আর এইইইই যে তোর বেগুন ভাজা…….”
“আআআআআআআআ………ভাবীীীীীীীী…..ওওওওও,বেগুন ভাজা……আল্লাহ একদিন আমার ফেবরিট সব খাবার……ওওও দারুণ দারুণ………..”
“যাহ্…..বেগুন ভাজা ও করেছো ওর জন্য,এই না বলল করো নি….সব ওর জন্য ই করেছো ভাবী,এটা কিন্তু একদম ঠিক করো নি…”(আরফান)
“আরে হিংসা কেন করছিস….দেখ তোর প্রিয় কাতলা মাছের বিহারও তো করেছি……”(ভাবী)
“ঔ একটা ডিস ই করেছো আমার নিয়তে আর সব তোমার ননদের জন্য,দেবর তো পঁচে গেছে তাই না…..আর বেগুন ভাজা এনে ঢেকে রাখা হয়েছে দেন সারপ্রাইজ ও দেওয়া হলো……..”
“ওর সব খাবার বানাতে জাস্ট পনেরো মিনিট লেগেছে,আর তোদের এক এক ডিস বানাতে পুরো সকাল লেগে গেছে সব কটা লোকের…….এখন তো খেয়ে নে,দেখ অনেক কিছু ই আছে,লান্সে তোর জন্য তোর সব ফেবরিট ডিস করে দিবো আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে,এখন চুপ চাপ খা…..”
“হুম…..দেখা যাবে……”
ভাবী সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে,
আর নৌশিন নিজের টা নিয়ে অলরেডি কথা বন্ধ করে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,সাদাদ চেয়ে চেয়ে নৌশিনের খাওয়া দেখছে,
হাফ প্লেট গরম সাদা ভাত দেওয়া হয়েছে ওর প্লেট সামনে ছোট ছোট বাটিতে করে সব ভর্তা-নৌশিন প্রথমে ই লেবু পাতা ভর্তা নিয়ে ভাত মাখতে শুরু করেছে,তারপর লালশাক নিয়ে এক লোকমায় ভরে খেয়ে নিলো,দু-তিন লোকমা লাল শাক খেয়ে,
“ওম.।..জাস্ট ওসাম ভাবী,লেবু লাতা টা ওয়াও হয়েছে আর লাল শাকে ঝাল টা একদম পারফেক্ট নিশ্চয় লাল শাক টা মামী করেছে??আর লেবু লাতা ভর্তা তুমি….এম আই রাইট?”
ভাবী হেঁসে বলে,
“হ্যাঁ রে পাগলী,লেবু পাতা ভর্তা আর তোর শুটকি ভাজা আমি করেছি,মামী লাল শাক,আলু ভর্তা করেছে আর মা বেগুন ভাজা করেছে…..এবার তুই চুপচাপ সব ভাত শেষ কর……..”
“হুম, অবশ্যই করবো,তুমি জানো যদিও আমি খাবার কম খাই-কিন্তু খাবার নষ্ট করি না…..”
“হ্যাঁ,খা এখন……আরে সাদাদ খাওয়া শুরু করো ভাই……”(নৌশিনের ভাই)
“জ্বি ভাইয়া করছি…….”(সাদাদ)
“আরে খাও খাও…….তোমার জন্য ই তো কত কিছু করলো……”(নৌশিন)
ভাবী নৌশিনের কথা শুনে ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে,
“নৌশিন………”
নৌশিন আবার চুপ হয়ে খাওয়া শুরু করে,
লেবু পাতা ভর্তা দিয়ে আবার বেশ কিছু ভাত মাখিয়ে বেগুন ভাজা দিয়ে খাচ্ছে আর বাম হাতে মলা শুটকি নিয়ে এমনি ভাতের সাথে চিবিয়ে খাচ্ছে……….
“আরে,কি সব খাচ্ছো তুমি?এগুলো মানুষ খায়?”(সাদাদ)
“কি বলো তুমি,এগুলোর যা টেস্ট না খেলে তুমি বুজবে না……..এই নাও খেয়ে দেখো…..”-কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ই নৌশিন সাদাদের প্লেটে একটু লেবু পাতা ভর্তা আর একটা বেগুন ভাজা তুলে দেয়…………….
“আরে কি করছিস এটা,তেহেরীতে লেবু পাতা দিলি কেন?আজব তো…….
সাদাদ নৌশিনের দিকে চোখ বড় করে তাঁকিয়ে আছে,যে ছেলে চামচ ছাড়া খায় না সে খাবে লেবু পাতা ভর্তা………
“সাদাদ দাঁড়াও আমি প্লেট পাল্টে দিচ্ছি…….”
যদিও সাদাদ এসব খায় না তবুও বউ পাতে তুলে দিলো,শশুড় বাড়িতে এসে এখন খাবার প্লেট টা চেন্স করলে নিজের ইমেজ টা নষ্ট না হলেও-নৌশিনের খুশির জন্য প্লেট চেন্স করলো না সাদাদ…….
“না না ভাবী ঠিক আছে,চেন্স করতে হবে না……”
“ভাবী,খেয়ে দেখুক না একটু…….”
“একটু টেস্ট করো যদিও তেহেরীর সাথে এটা ভালো লাগবে না তবে গন্ধটা শুকে দেখো জোশ লাগবে আর বেগুন ভাজা টা তেহেরীর সাথে খাওয়া যাবে………রাগ করো না একটু খাও……”
সাদাদ চামচ দিয়ে খাচ্ছিলো,সেই চামচ দিয়েই নৌশিনের প্লেট থেকে সাদা ভাত তুলে নিয়ে লেবু পাতা ভর্তা দিয়ে খায়…..নৌশিন তো এই দৃশ্য দেখে পুরো হা…..নৌশিনকে আরও অবাক করে দিয়ে সাদাদ বেগুন ভাজা টাও খেয়ে নিলো……..
“হুম,আসলেই অন্য রকম খাবার…….যদিও বেগুন ভাজা আমি খেয়েছি কিন্তু লেবু পাতাও যে এভাবে খাওয়া যায় আজ জানলাম……”
“বাহ্…….ভালোই তো,তোমাকে দিবো আর একটু?….”(ভাবী)
Extra part:
“তুমিও কি নৌশিনের মতো পাগল হয়ে গেলে,কি বলছো?এতো সব রেখে এগুলো খাবে নাকি??….”(ভাইয়া)
“তাও তো বটে,নাও সাদাদ তুমি তেহেরী টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও,নৌশিন বলেছিলো তোমার নাকি মটরশুঁটির পরটা অনেক প্রিয় আগে তেহেরী টা শেষ করে নাও-তারপর মটরশুঁটির পরটা সাথে মাটানও আছে……….”
“কি বলো ভাবী,মটরশুঁটির পরটা আগে বলবে না তাহলে তো আমি তেহেরী টা নিতাম ই না…..”(সাদাদ)
“বাবা,সব খেতে হবে কিন্তু……কোনো না শুনা হবে না…..”
“আরে খাও,তেহেরী একটু ই তো নিয়েছো-তারপর তোমার যতখুশি মটরশুঁটির পটরা খাও কেউ করবে না…….”
নৌশিনের বাবা সবজি দিয়ে দু টো রুটি খেয়ে ই উঠে পড়েন,বেচারা ডায়াবেটিসেরর রোগী,কত খাবার ইশ কিচ্ছু খেতে পারলো না………..
সাদাদকে নৌশিনের ভাবী জোর করে তেহেরী,বেশ কয়টা মটরশুঁটির পটরা,আর মাছ মাংসের কত রকমের ডিস কাবাব থেকে শুরু করে গরুর ফুফডেড পর্যন্ত প্রায়সব কিছু…..সাদাদের শেষ মেষ তো অসহ্য ই লাগছিলো…….অবশ্য নৌশনকে অনেক বার ইশারা করেছে যে ‘ভাবীকে না করতে’……কিন্তু নৌশিন তা না করে সাদাদের মুখ দেখে মিটমিট করে হাঁসছিলো আর ভাবী তো ভাবী ই জোর করেই খাবার তুলে দিচ্ছিলো………..
আরফানও খেয়ে দেয়ে উঠে যায়-নৌশিনের ভাইয়া খাবার সেরে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে……………………………..
নৌশিন সবটুকু ভাত শেষ করেছে ভর্তাগুলো আর শুটকি দিয়ে…………
খাওয়া শেষে সাদাদ-নৌশিন রোমে চলে যায়……
রোমে ডুকেই সাদাদ ধাপ করে বিছানায় শুয়ে,
“আল্লাহ্…….শশুড় বাড়ির আদর খাবো কত এক্সসাইটেড ছিলাম বাট তাই বলে এতো-গলায় লবণ ডুকার জায়গা টুকু বাকী নেই…….”
“হা হা হা……..”
“এই হাঁসবে না একদম……”
“আমি আবার কি করলাম?হাঁসলেও দোষ…….হুহুমমমম….”(নৌশিন)
“তবে আমি আজ খুব খুশি কতদিন পর আমার প্রিয় সব খাবার খেলাম….আহা প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো…….”(নৌশিন)
!
শুয়ে থেকে সাদাদের চোখ টা জাস্ট লেগে এসেছে,নৌশিন আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে………………….
আর এমন সময়………………
!
“এই আপু কি করিস?”(আরফান)
“দেখছিস না?”(নৌশিন)
“হুম,তোর এই ঘোড়ার লেজ ঠিক করছিস আর কি……”(আরফান)
“আআআআআ!!আরফান ব্যাথা লাগে কিন্তু!এমন করে কেউ চুল টানে,যত্তসব…….”
আরফান আর নৌশিনের বকবকে সাদাদের তন্দ্রা কেঁটে যায়-তারপর আবার আরফান চুল টান দেওয়ার কারণে নৌশিন চিৎকার করলো,তাতে কি আর সাদাদের ঘুম থাকে নাকি,
“আরফান,আমার সামনে আমার বউয়কে ব্যাথা দিচ্ছো??”(সাদাদ)
“ওরে ব্বাস,তোমার বউ কিন্তু আমার পুরনো জিএফ সো তোমার আগে ওর উপর আমার অধিকারগুলো বলবৎ হবে….”
“আচ্ছা!!!!”(সাদাদ)
“এই নাও……”বলেই আরফান নৌশিনের চুল ধরে জোরে একটা টান দেয়,আসলেই এবার বেশি লেগে গেছে,
“অওওওওও,ও মা গো…………..(নৌশিন)
“আরে,আস্তে ভাই লেগে যাবে………”(সাদাদ)
“হা হা হা হা হা……..”(আরফান)
“দাঁড়া তোর হাঁসি বন্ধ করছি,…….” আরফানকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য উঠা মাত্রই দৌঁড়ে রোম থেকে বের হয়ে যায়-পেছন পেছন নৌশিনও ছুটতে থাকে,
ড্রয়িং রোমের সোভাকে ঘিরে নৌশিন আর আরফান ছুটাছুটি করছে,
“এই কি হলো তোদের??”(মামী)
“দেখো মা,আপু আমাকে মরার জন্য তাড়া করছে….”(আরফান)
“মামী,তোমার ছেলে আমার চুল ধরে টানাটানি করে…..আমার কি লাগে না!তুমি ওকে কিছু বলো…..”(নৌশিন)
“আরফান,তোকে কতবার বলেছি,’যে আপুর চুলে হাত দিবি না’?…..তোর বাবা আসুক,দেখ তোর কি করি……”
“এই এই,এখানে বাবা আসলো কোথা থেকে…..আচ্ছা!এই বসলাম আমি,আপু আয় আমার চুলে টান দে-তো হয়ে গেলো না শোদবোধ?…..আয় দে…..”
নৌশিন আরফানের চুল ধরার সাথে সাথে আরফান নৌশিনের চুল ধরে জোরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে এক দৌঁড়ে নিজের রোমে,
“আআআআআআআ,ওমাগো………আমি শেষ……..আআআআআআ”(নৌশিন)
“আরফান!!!!!!”(মামী)
“ওওওও……হারামী তুই বের হ একবার রোম থেকে তোর খাওয়া বন্ধ দুপুর বেলা-দেখছো মামী তোমার ছেলে কি বদমাইশ?।।।সকাল বেলা ই মাথা ব্যাথা তুলে দিলো একদম………”
“রাগ করিস না মা,জানিস ই তো দুষ্টু একটু তাও শুধু তোর সাথে ই করে………”
“উফফফ,মামী কি যে বলো না তুমি-রাগ করতে কেন যাবো!…….”
“আচ্ছা,মা শোন না-বলছি যে তোর শশুড় বাড়ির লোকগুলো কেমন রে?মানে একদিন তো ছিলি কেমন বুজলি?”
এতক্ষণে নৌশিনের মা ও নৌশিন আর আরফানের চিল্লাচিল্লিরর জন্য ড্রয়িং রোমে আসেন,
নৌশিনের পাশে বসে,
“হ্যাঁ,মা বল…..আমি ই জিঙ্গেড করবো ভালছিলাম এখন তোর মামী ই করে দিলো……বল তো একটু…..”
“মা,মামী…….কিসব বলো না তোমরা খারাপ কেন হতে যাবে সবাই খুব ভালো…..”
“না না খারাপ তো বলছি না,শুধু জানতে চাইলাম তোর সাথে কেমন?…”(মামী)
“হুম….সবাই ভালো মামী…..”(নৌশিন)
“তবে রিদি তোর সাথে রাতে খারাপ ভাবে কথা বলেছিলো কেন?”(মা)
কাল রাতে সাদাদের বাড়ি পৌঁছালে সবাই নৌশিনকে নিয়ে মাতামাতি করছিলো আর রিদি নামের মেয়ে টা নৌশিনকে এমন সব প্রশ্ন করেছিলো সবার সামনে যেসব মোটেই ভালো মানের নয়,
“কি হলো?বল…..”(মামী)
“তোমরা কি করে জানলে?”(নৌশিন)
“আমরা কি করে জানলাম তোর জানার দরকার নেই,তুই শুধু বল রিদি কি তোকে খারাপ কিছু বলেছে??”(মামী)
“না গো মামী….তেমন কিছু ই বলে নি…..তাছাড়া রিদি আপু এমনি একটু ওমনি….সবার সাথে লাউডে কথা বলে……বলো না তোমাদের কে বললো?”
“ড্রাইভার…..কালকে আমাদের একটা গাড়ী ওদের কিছু গেস্টকে ড্রপ করে দিয়ে গেছে ভালুকা থেকে যেটা তোদের গাড়ির পেছনে ই ছিলো আর তোর শশুড় মশাই জোর করে ওনাকে বাসার ভেতরে নিয়ে যায়-আর তখন তুই হল রোমে ছিলি তোকে নাকি রিদি কি সব প্রশ্ন করছিলো?….”(মা)
“মা,সেসব কিচ্ছু না….তুমি টেনশন করো না……তাছাড়া সবাই তো খুব ভালো….রিদি আপু এমনিতে সারা দিন অফিসেই থাকে আর সাদাদ ও ওকে খুব বেশি পচ্ছন্দ করে না তাই ওর সাথে সারা দিনে আমার খুব বেশি একটা কথা হবে না……”
“তোকে কি বলেছে ও?”(মা)
“ও মা,তুমি কি শুরু করলে বলো তো?আমি বসে আছি তোমাদের কাছে আর তোমরা আমাকে আদর না করে কিসব নিয়ে পড়ে আছো,রিদি আপু আমাকে যেসব বলছে সেগুলোর উত্তর আমি তো দিয়েছি নাকি….তাছাড়া আমার জা রিদি আপুকে তখনি সবার সামনে বারণ করে ‘আমার সাথে এমন করে কথা বলতে’ তাহলে তো আর কিছু আসে যায় না……..এখন বাদ দাও না সেসব কথা……”
“আচ্ছা!আচ্ছা!বাদ দিলাম,কিন্তু শোন কোনো সমস্যা হলে জানাবি কিন্তু তোর যা চাপা স্বভাব নিজে নিজে চেঁপে রাখছিস না কিছু আমাদের থেকে আমাদের টেনশন হবে মা…..”(মামী)
“তোমরা কেন এতো চিন্তা করছো,বলো তো,আমার কোনো প্রব হলে বলবো তোমাদের…..হয়েছে এবার?”
“আচ্ছা যা এখন রোমে যা,দেখ জামাইয়ের কিছু লাগে কি না-আর শোন ওর কাছে জানতে চাস দুপুরে কি কি খেতে ভালোবাসে……আবার সরাসরি বলিস না যে ‘মা জানতে চেয়েছে’…….”
“আর কত খাওয়াবে?সকাল বেলা ই তো দুপুরের সব খাওয়া খাইয়ে দিলে…..”
“হা হা হা মেয়ে কি বলে রে সোহানা(নৌশিনের মামী)…..”(নৌশিনের মা)
“আরে বুদ্ধু-নতুন জামাই একটু খাতির যন্ত না করলে হয়!….. “(সোহানা বেগম)
“এখন যা,রোমে যা…….”(মা)
“হুম,যাচ্ছি……”(নৌশিন)
নৌশিন রোমে ডুকে দেখে সাদাদ ঘুমাচ্ছে আর নৌশিনের অর্থব ফোন টা বেজে চলেছে,ফোন হাতে নিয়ে দেখে আন-নন নাম্বর,
নৌশিন কোনো কথা বলার আগেই ওপাশ থেকে,
“স্যার,আসসালামু আলাইকুম………”
নৌশিনের ততক্ষনাৎ মনে পড়ে যায় ‘ওর ফোনে সাদাদের সিম’…….
তাই কোনো জবাব না দিয়ে হুট করে ফোন টা কেটে দিয়েয়ে,সাদাদ কে ডাকতে শুরু করে,
“সাদাদ……সাদাদ…..শুনছো?…..”(নৌশিন)
সাদাদ একটু নড়েচড়ে শুলো বাট কোনো সারা দিলো না………
“এই সাদাদ,বলছিলাম তোমাকে মে বি অফিস থেকে কল করেছিলো…..”
“হুমমম…..”(সাদাদ)
“হুম কিসের,উঠো……”
নৌশিন ধাক্কা দিতেই সাদাদ চোখ মেলে তাঁকায়,
“কি হয়েছে,ডাকাডাকি করো কেনো.?”(সাদাদ)
“ঘুম কন্ঠ টা ঠিক করে,কল এসেছিলো সেটা ব্যাক করেন……”
সাদাদ কোনো কথা না বলে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে আছে শুধু,
“কি হলো?ফোন টা ব্যাক করো,অফিস থেকে কেউ…..”
কথাটা পুরোপুরি বলার আগেই সাদাদ নৌশিনকে টেনে ওর বুকে নিয়ে নেয়,
“কিইইই……..”(নৌশিন)
“কিছু না,জাস্ট জড়িয়ে ধরলাম……..”(সাদাদ)
“ছাড়ো তো,ফোন এসেছিলো-আমার তো মনেই ছিলো না তোমার সিম ডুকানো তাই আন-নন একটা নম্বার থেকে কল আসলো দেন ধরলাম,যখন স্যারর বলে সালাম দিয়েছে তখন মনে পড়ছে তোমার সিমের কথা…..তাই কোনো কথা না বলে মুখে ওপর কল কেঁটে দিয়েছি…….”
“বেশ করেছো……এখন আমার সাথে রোমান্স করো…..”
নৌশিনের এলোমেলো চুলগুলো সাদাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে,কিছু চুল মুখেও পড়েছে-সেগুলো সরিয়ে নিয়ে সাদাদ নৌশিনকে বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে নিজে নৌশিনের ওপর,
“এই কি করছো???দরজা খোলা…..”
“থাকুক কেউ আসবে না…..”
নৌশিনের মুখের দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাদাদ,
“আরে,ভাবী বা আরফান ডুকে পড়বে কিন্তু…..ছাড়ো আমায়……”
“একদম না…..দরজা কেন লক করে ডুকো নি?”
“আজিব তো,আমি কি জানি নাকি তোমার রোমান্সের শখ জাগবে এখন…….”
“আজকের পর থেকে আমি যখন রোমে থাকবো আর তুই যখন রোমে একা আসবি তখন অবশ্যই দরজা টা ভেতর থেকে লক করে আসবি…….কজ আমার না সব সময় তোর সাথে রোমান্স করার ইচ্ছে হয়……..”
“ধুর…..সরো তো……”
“উমম হুমমম……”
নৌশিনের চুলে নাক ডুবিয়ে,
“এতো কিসের স্মেইল?….চুলেও এতো সুভাস?…..”
“তুমি না……..প্লিজ আগে কল টা ব্যাক করো….আর দরজা খুলা যদি আরফান ডুকে পড়ে তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ,প্রাপ্তির চেয়ে ডাবল বিটিশ ও…..কখন কিভাবে কার পিক নেয়,আল্লাহ্ ই জানে….প্লিজ প্লিজ প্লিজ উঠো…..”
“ওফফ,বোরিং রোমান্স করবো তার উপায়ও নেই….”(সাদাদ)
“হি হি হি……”(নৌশিন)
“হাঁসিস না বেশি কিউট দেখায়……”
মুচকি হাঁসে নৌশিন,
“আচ্ছা ঠিক আছে,কল টা ব্যাক করো……..”
“হুম…..কি আর করার……”
সাদাদ উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অফিসের একজন স্টাফ ফোন করেছে,
কল ব্যাক করে,
“হ্যালো…..”
“স্যার,কবির বলছিলাম,একটু আর্জেন্ট ছিলো….”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন….কি ব্যাপার…..”
“স্যার আপনি কি ঢাকার বাইরে আছেন? না মানে কল টা কেটে গিয়েছিলো….”
“না না আমি উত্তরাতে আছি,নম্বার সেভ করা ছিলো না এটা,তোমার ভাবী রিসিভ করেছিলো আমি একটু ঘুমাচ্ছিলাম,দেন ডেকে দিলো……”
“ও আচ্ছা,কথা বলেন নি তো তাই ভেবেছিলাম সার্ভারে প্রবলেম হচ্ছে…..”
“না না,বলুন কি যেন বলতে চাচ্ছিলেন…..”
“জ্বি স্যার,আসলে গতকাল যে মিটিং টা বস ক্যান্সেল করেছিলো,সে ক্লাইন্ড রা আজ ই-মেইল করেছে ‘ওরা আজ মিটিং না করলে কাল কানাডায় ব্যাক করবে’….বসকে বললাম ওনি বললেন আপনাকে জানাতে…….”
“আচ্ছা তাহলে ওনাদের আসতে বলো…….আমি এটেন করছি মিটিং এ……”
“ওকে স্যার…..স্যার,টাইম কয়টায় ফিক্সড করবো?”
“ওনারা যেহেতু কাল ফেরার চিন্তা করেছেন তাই আগে ভাগেই ওনাদের কাজ শেষ করে দিবো……..ওমমম এখনো দশ টা বাজে নি তুমি সাড়ে বারো টায় টাইম জানিয়ে দাও ওদের…….”(সাদাদ)
“ওকে স্যার…….”
“হুম…..বাই….”
“জ্বু স্যার আসসালামু আলাইকুম…….”
সাদাদ ফোন রাখলে-নৌশিন বলছে,
“তুমি কি আজ অফিস যাবে?”
“হুম,যেতে হবে কালকের মিটিং টা আজ করে ফেলতে হবে-বস কালকে এটেন্ড করে নি…..আজ না করলে এই মাসে আর প্রজেক্ট টা করা হবে না তাই যাবো………”
“ও,কখন যাবে?”
“এখনি বের হবো,প্রজেক্ট ফাইল চেক করে দেন মিটিং এ…….”
“তারমানে তুমি দুপুরে এখানে আসছো না বাট মা তো তোমার জন্য কত কিছু করছে…..”
“কাল তো আসছি…….কাল সব খাবো আর একটু আগে যা খেলাম তাতে দু-তিন না খেয়ে থাকতে পারবো………”
“যাও তো,তোমার চেয়ে আমি আজ বেশি খেয়েছি…….”
“কিহ্???”
“হুম।।।।।সত্যি ই তো বললাম…..”
“ঐ হাফ প্লেটেরও কম ভাত আর দুটো বেগুন ভাজা…….হাঁসিও না আর…..”
“বেশি বলবা না কিন্তু আমি অনেক খেয়েছি আজ……..”
“আচ্ছা মানলাম তোমার কথা,হয়েছে???”
“হুম…..”(মুঁচিক হাঁসে নৌশিন)
“ওকে,তাহলে দাও আমার ড্রেস বের করো……”
“তুমি ফ্রেস হও,দিচ্ছি……..”
সাদাদ ওয়াশ রোমে গেলে নৌশিন সাদাদের ড্রেস বের করে রাখে………….
তারপর আবার আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করতে লাগে,মেয়টার চুল ঠিক করতেই যেন হিমশিম লেগে যাওয়ার অবস্থা,
সাদাদ ওয়াশরোম থেকে এসে দেখে নৌশিন বেনুনি করছে,
“ওয়াও……..ফার্স্ট দেখলাম……”
“কি??”
“এই যে বেণুনী করছো……দাঁড়াও তো দেখবো….”
“আগে করে নিই,শেষ করে নি তো………”
“হুম জলদি……”
নৌশিন বেণুনী শেষ করে পাশে নিয়ে সাদাদের সামনে গিয়ে সুন্দর একটা হাঁসি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
“লুক………”
সাদাদ নৌশিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে,
“কি বলবো??”
“কি বলবে??তুমি ই তো দেখতে চাইলে………”
“আগে বেণুনী করে দেখাও নি কেনো?”
“এমনি…..আমি কি বাইরে কোনো দিন বেণুনী করে গেয়েছিলাম যে তুমি দেখবে……”
“এতো কিউটি কিউটি লাগছে আমার লোভ লাগছে তোমার বেণুনীতে…..”
“থু থু…..নজর দিবা না……”
“এই কি করলে এটা…..”
“থু থু দিলাম যেন নজর না লাগে……”
“হ্যাৎ,সব তো আমার জন্য ই তাই নয় কি…??”
“হুম,তাই……সেজন্য ই বিয়ের আগে দেখায় নি…..বুজলে…..”
বেণুনী টা হাতে নিয়ে সাদাদের মুখে একটা বারি দিয়ে অন্য দিকপ ঘুরে যায় নৌশিন,
“আউউউ…….”
“সরি সরি,বেশি জোরে লাগছে……আমি আস্তে দিতে চেয়েছিলাম…….”
“এটা চুলের বারি ছিলো?নাকি চাবুকের?…..”
“হি হি হি,বেশি লোভ লাগেছিলো না তাই এতো জোরে লাগে গেছে…….”
“খুশি লাগছে তাই না?তাড়া না থাকলে বুজিয়ে দিতাম……”
“সরি তো,আর হবে না……”
“কি আর হবে না,বাসায় সব সময় বেণুনী করো তুমি বলেছিলে বাট আমি কত পিক চেয়েছিলাম দাও নি সো তোমার নতুন বাড়িতে গিয়ে সবসময় এই ভাবে বেণুনী করে ছুটে বেড়াবে আর আমি দেখবো,বেশ লাগে তোমায় বেণুনীতে জাস্ট লাইক পনেরো বছরের কিশোরী……. ”
“কিহ্,শাড়ীর সাথে বেণুনী করবো?”
“কিসের শাড়ী,তুমি শাড়ী কি পরিমাণ সামলাতে পারো আমার জানা আছে…..শুধু মাত্র ফরমালিটির জন্য শাড়ি পরার দরকার নেই-তুমি যেটা তে কমফরটেবল ফিল করবে সেটা ই পড়বে………..”
“ওকে ওকে……সে পড়ে দেখা যাবে…….এখন বলো চা না কফি?”
“চা……চিনি এক চামচ……”
“ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে নাও,আমি আনছি।।”
নৌশিন চলে যাচ্ছিলো,
“শোনো……”(সাদাদ)
পেছন ফিরে,
“হুম……”(নৌশিন)
“চা কিন্তু তুমি করে আনবে……”
নৌশিন মিষ্টি হেঁসে জবার দেয়,
“ঠিক আছে…..”
রান্নাঘরে……………………..
“কি রে মা রান্না ঘরে কেনো এলি?
“মা সাদাদ অফিস যাবে,তাই একটু চা করতে এলাম…..”
“কিহ্,অফিস যাবে মানে কি?”(ভাবী)
“হ্যাঁ,একটা জরুরি মিটিং পড়ে গেছে,আজকে না গেলে নাকি এক মাস পরে করতে হবে তাই যাচ্ছে……”
“তাই বলে,আজও……পারেও বটে,মনে হয় তোর ভাইয়ার মতো কাজ ছাড়া কিছু চোখে দেখে না……”
“কি আর করার জরুরি কাজ পড়ে গেছে,দুপুরে আসবে না?”(মামী)
“মনে হয় না……”(নৌশিন)
“ও মা সে কি,কত কিছু রান্না করার আছে জামাইয়ের জন্য….আর ও আসবে না?”(মা)
“আমি জানি না মা,তোমার জামাইকে জিগেঙ্গ করো-আমাকে চা করতে বলেছে আমি করে নিয়ে যাই…..আর কিছু জানি না”(নৌশিন)
“তোর করতে হবে না,আমি করে দিচ্ছি নিয়ে যা……”(ভাবী)
“না না ভাবী তুমি কাজ করো এক কাপ চা ই তো আমি করে নিচ্ছি……”(নৌশিন)
“আচ্ছা কর……চিনি ঠিক করে দিস……”(ভাবী)
“ওকে…….”
প্রেমঘোর পর্ব ২৬
চা নিয়ে রোমের দিকে এগুচ্ছে নৌশিন,
“কি রে,কার চা….”(আরফান)
“তোর ভাইয়ার…..”(নৌশিন)
“আমার জন্যও একটু করে দে না আপু……”
“তুই পুচকে ছেলে তোর চা খেতে হবে না…..”
“আমি পুচকে?????তোর এতো বড় সাহস…..”
“এই সর তো তোর সাথে বকবক করার সময় নেই,চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে……সাদাদ অফিসে যাবে……..”
“যা আজাইরা……………..”