প্রেমঘোর পর্ব ২৯+৩০
নার্গিস সুলতানা রিপা
“তোমার চা……..”
“হুম…..”
চা মুখে নিয়ে,
“এটা কি??চিনি দাও নি কেন?”
“দিলাম তো……এক চামচ দিতে বললে না……”
“এক ফোঁটাও চিনু নেই…….যত্তসব……”
“আমি চিনি দিয়ে আনছি,প্লিজ বসো একটু…….”
“টেস্ট করে দেখো কতটা চিনি লাগবে সে আন্দাজে চিনি দিবে……”
“আমি?….”
“হুম,তুমি দিবে না তো আমি টেস্ট করবো নাকি?একটা চা ও ঠিক ঠাক বানাতে পারো না…….”
মাথা নিঁচু করে নৌশিন সরি বলে……
“থাক আর সরি বলতে হবে না,যেটা বললাম সেটা করো…..”
নৌশিন চায়ে চুমুক দিয়ে,সাদাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকায়,
“চিনি তো ঠিক ই আছে……”
“দাও…….”
“কি হলো কাহিনী টা?”
“কিছু না…..কাপ দাও…..”
সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে চা নিয়ে খাচ্ছে,
“এইবার মিষ্ট টা পারফেক্ট……”
“আজিব তো……”
সাদাদ নৌশিনকে এনে নিজের পাশে বসায়-
“আরে বুদ্ধু তোর ঠোঁটের ছোঁয়া ছাড়া সব কিছু তিতো….”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ইশশশ….ঢং……”
“সে যাই বলো……চা টা ভালো ছিলো…..”
“হয়েছে…..আর বলতে হবে না….”
“আচ্ছা এখন আসি…..”
“হুম,আসসালামু আলাইকুম…..আর প্লিজ আস্তে ড্রাইভ করো….”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আর নো টেনশন আমি আস্তেই ড্রাইভ করবো……”
“মিটিং শেষ করে কল করবে কিন্তু……”
“ওকে ম্যাম…..চার বছর ধরে তো সেটাই করে আসছি….যে কেনো জরুরি কাজ শেষে প্রথমে আপনাকে ফোন……”
“হুম……আর শোনো না-আজ আসবো তো??”
“না কিছু কাজ আছে,পেপারসগুলো সব বাসায় তাই আজ আর আসবো না-ইনশাল্লাহ কাল আসবো আর আল্লাহ চায় তো লান্স এন্ড ডিনার টাও শশুড় বাড়িতে করবো…..আর হ্যাঁ পরশু দিন কিন্তু ব্যাক করতে হবে……”
ব্যাক করার কথা শোনে নৌশিনের মন টা যে একটু খারাপ হয়ে গেলো সাদাদের সেটা বুঝতে বাকী রইলো না………
“কিছু দিন পর আসবো আবার,বাসা তো জাস্ট শ্যামলী টু উত্তরা……..ইচ্ছে হলেই আসবে…….”
“হুম……..পরশু?”
“মা বলছিলো……”
“আচ্ছা…..”(মন খারাপ করেই জবার দেয় নৌশিন)
সাদাদ নৌশিনের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে,
“প্লিজ মন খারাপ করে না,আমি তো আছি নাকি?তোমার যখন আসতে মন চায় আসবে………আমি না নিয়ে আসতে পারলে গাড়ি নিয়ে তোমার যে দিন মন চায়……”
“মন খারাপ করি নি…..ঠিক আছে……”
“তাহলে হাঁসো…..”
নৌশিন জোর করেই ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফোঁটিয়ে তুলে,সাদাদ নৌশিনকে ভালোবাসে তাই ভালোবাসার মানষের নকল হাঁসি টাও সহজে ধরে ফেলে………………
সাদাদ নৌশিনকে আবারও জড়িয়ে ধরে-কপালে একটা আলতো করে চুমু এঁকে দেয়,
“আসি……কল করবো….ওকে?”
“হুম….আল্লাহ্ হাফেজ……”
সাদাদ বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে যায়…..ওর শাশুড়ী আর আমি শাশুড়ী অনেক করে বলে দিয়েছে বিকেলে চলে আসতে-কিন্তু সাদাদের কাজ আছে তাই বলছে কাল আসবে………
সাদাদ অফিসে কাজে ব্যস্ত,
আর নৌশিন ওর মা,মামী আর ভাবীর সাথে গল্প করছে………..মেয়ে কে পেয়ে গল্পের বাঁধ খুলে ফেলেছেন নৌশিনের মা…….
“আচ্ছা নৌশিন যা তো একটু ঘুমা…..অনেক গল্প হয়েছে……”(ভাবী)
“হুম……যা মা একটু ঘুমা….”(মা)
“না মা এখন আর ঘুমাবো না…..তুমি না বলেছিলে আমাকে পাপড় বানানো শিখাবে………”
“আজ??”
“হুম….আজকে পারবে না….”
“আজ না,আরেক দিন-অনেক কিছু করে রাখতে হবে….এখন করে রাখলে রাতে বানাতে হবে…..তার চেয়ে বরং আরেক সময় শিখিয়ে দিবো….তুই যা একটু শুয়ে নে……আযান দিলে আমি ডেকে দিবো…..”
“আচ্ছা……..”
সাদাদ রোমে গিয়ে দেখে ১১.২৫ বাজে,তারমানে সাদাদের মিটিং শুরু হয় নি-কাজ করছে……তবু একট ফোন তো দেওয়া যায়……তাই ভেবে নৌশিন ওর মায়ের ফোন নিয়ে এসে সাদাদ কে কল করে,
সাদাদের কাছে নম্বর টা আন-নন তবুও কল রিসিভ করে,
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম…….”
“……………..”
“হ্যালো কে বলছেন?”
“……………..”
“আপনি কি কথা শোনতে পারছেন?হ্যালো……”
“………….”
“ডেমেইড……যত্তসব…….”
বলেই সাদাদ ফোন কেঁটে দিতে যাচ্ছিলো তখনি নৌশিন বলে উঠে,
“আমি………”
সাদাদ আমি শোনে ই মু্ঁচকি হেঁসে বলছে,
“কথা বলছিলেন না যে??”
“এমনি…..”
“আচ্ছা!মিস করছিলেন??”
“উম হুম……..তবে একটু….”
“যাক,বেশি করতে হবে না-একটু একটু করো……তা কি করছিলে?”
“ঘুমাতে বলছিলো মা…..”
“একা ঘুমাবে?”
“তো দুকলা কোথায় পাবো?”
“আসবো??”
“হুম এসো……”
“এতো টা?”
“কিসের এতটা?তোমাকে আসতে বলেছি নাকি-তুমি আসতে চাইলে তাই আমি হ্যাঁ জানালাম…….”
“থাকে আর বলতে হবে না…….”
“তুমি কি করছিলে?”
“কাজ করছিলাম…..”
“ড্রির্স্টাব করলাম আসলে আমার ভয়েস শুনতে ইচ্ছে করছিলো তাই……..”
“তোমার এসব ফরমালিটি আমার অসহ্য লাগে……….যখন খুশি কল করো তুমি রিসিভ না করলে বুঝবে মিটিং এ….বাকী সব সময় কথা বলতে রাজি……
“ওকে,ওকে!রাগ করতে হবে না….আমি এখন ঘুমাবো না-মায়ের সাথে রান্না করবো দেন খেয়ে দেয়ে ঘুম….তুমি কাজ করো আর হ্যাঁ ফোন দিবে কিন্তু………ও এটা মায়ের নম্বার……”
“আচ্ছা আচ্ছা,যাও………রাখছি….”
ফোন রেখে নৌশিন রান্না ঘরে যায়……নৌশিনদের বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কোক নেই-রান্না টা নৌশিনের মা আর ভাবী মিলেই করেন…….তবে কেনো দরকার পড়লে রান্নার কাজে কোনো সার্ভেন্টকে জাস্ট কুটি নাটি করতে বলেন, নৌশিনের মায়ের এক কথা-‘ঘরের বৌ এর তৈরী খাবার নাকি ঘরের সব মানুষকে সুস্থ্য সবল রাখে তাই তিনি নিজের ছেলের বউকে হাতে কলমে সব শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছেন…….এই সুবাধে তিনি নিজের মেয় কে ও প্রায় সব রান্না শিখিয়েছেন…………
সাদাদের বাড়ীর সাথে নৌশিনের বাড়ীর এই জায়গাতে অনেক মিল-যদিও সাদাদের বাড়িতে একজন রান্নার লোক আছে-তিনি শুধু ভাজাভাজি তে ই ব্যস্ত থাকেন আর পুরো রান্না সাদাদের কাকি আর ভাবী মিলে করে-সাদাদের মা ও দেখাশোনা করেন তবে বয়সের তাদিগে পড়ে গেলে যা হয় আর কি………………
নৌশিনের ভাবী,মামী জোর করলেও নৌশিন রান্না ঘর থেকে সরে নি,
“প্লিজ ভাবী,একটু কিছু করি…..”
“আচ্ছা আচ্ছা কর……”
“কি করবি??”
“তুমি বলো……”
“আচ্ছা এক কাজ কর….আরফানের জন্য মুগের ডাল টা করে দে……”
“ওকে ওকে……আই লাইক ইট…..”
“হুম খালি রান্না করতে খেতে না……”
নৌশিন ডাল টা খুব ভালোই করতে পারে….তাই অল্প সময়েই করে ফেলে…..
আর ওর ভাবী সকালের সব খাবার তেহেরী,ভাত,মাটান,গরুর বিফকেড,নৌশিনের বেগুন ভাজা সব গরম করে রাখে-নৌশিনের ডাল রান্না শেষ হওয়ার সময় টুকুতে…..
“মা,আর কি করবো???তেমার ছেলে অফিসে ই লান্স করে নিবে….আর বাবা তো এসে যা খাবে তা তো আছেই……আর কিছু করবো নাকি?সাদাদ তো আসবেই না……”(ভাবী)
“কি আর করবে,যা আছে তাতে ই কেটে যাবে,…..ও হ্যাঁ বৌ মা-তোমার মামা আসছে সিলেট থেকে ভুলে গিয়েছিলাম……এক কাজ করো মাংস তো আছেই তুমি ভাইয়ের জন্য চিংড়ি মাছের মালাইকাড়ি করো একটু……আরফানেরও প্রিয়…… ”
“ঠিক আছে মা……”
রান্না শেষ করে বাসার সবাই নামায পড়ে নিয়ে খেতে বসে,নৌশিনের মামাও সিলেট থেকে এসে গেছেন……….আরফান তো সকালের প্রিয় মাছের ডিসের সাথে নৌশিনের রান্না করা মুগ ডাল পেয়ে মহা খুশি…….সবাই সব কিছু খেলেও নৌশিন শুধু বেগুন ভাজা আর একটু মাটান দিয়ে ই তৃপ্তি করে খায়……….
খাওয়া শেষ করে যে যার রোমে রেস্ট নিচ্ছে,
নৌশিন ঘুমানোর জন্য এপাশ ওপাশ করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যায়……..সাদাদের মিটিং শেষ হয় নি তখনও……..
ঘড়ির কাঁটায় ২.৩০……..
বাসার ল্যান্ড ফোন বেজে চলেছে,ফোন উঠায় নৌশিনের মা……..
“হ্যালো,কে বলছেন?”
“আসসালামু আলাইকুম ভাবী,আমি সাদাদের মা বলছিলাম……”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম…আল্লাহ্!আপা যে,কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ….. আপনি?”
“ভালো ভালো…..বাড়ির সব খবর ভালো?”
“হ্যাঁ ভাবী…..ভাবী একটা কথা ছিলো….”
“জ্বি বলেন…..”
“বলছিলাম…..সাদাদের দাদু কাল গ্রামে যাবে তো ওনি বৌ মা একটু দেখে যেতে চাইছেন…..বুজতেই তো পারেন বৃদ্ধ মানুষ….আর নীলাও আজ রাতে চলে যাবে……যদি ছোট বৌ মা কে…….”
নৌশিনের মায়ের কি আর বুঝার বাকী আছে ওনি কি বলবেন-মনের ভেতর টা কেমন জানি দুমড়ে-মুচড়ে উঠেছে,মেয়টা আসলো রাতে একটা দিনও পার হয় নি তবুও সব কিছু চেপে রেখে জবাব দেয়,
“বুজেছি বুজেছি আমার মেয়ে চাই তো…..এতো এভাবে বলার কি আছে আমার মেয়ে তো এখন আপনাদেরও মেয়ে আপা…..আমি বলছি নৌশিনকে পৌঁছে যাবে….কিন্তু আপনারা কেউ এসে ওকপ নিয়ে যাবেন তো?মানে প্রথম বার বাপের বাড়ি থেকে নতুন বউ কে তো শশুড় বাড়ির লোক রা এসে নিয়ে যায়…..”
“ভাবী,আজ কেউ যাতে পারছে না…..আমার শাশুড়ি মায়ের শরীর টা খুব একটা ভালো না হলে আমি যেতাম….তবে কথা দিচ্ছি কিছু দিন পরেই বউ মা কে আবার পাঠাবো…..তখন সবাই মিলে যাবো…..আজ আমি সাদাদকে ফোন করে দিচ্ছি ও কাজ শেষ করে বিকেল নাগাদ বউ মা কে নিয়ে আসবে…….আপনি একটু বউ মা বুঝিয়ে বলবেন, ‘বুজেন ই তো ছোট মানুষ’…..”
নৌশিনের মায়ের মনও যে মানছে না………..হাজার হোক মা তো,
“আচ্ছা,আপনি চিন্তা করবেন না……..”
“আচ্ছা ভাবী, রাখছি-কষ্ট নিয়েন না…..”
“আরে না না….রাখি-আসসালামু আলাইকুম….”
…………….ফোন রেখে নৌশিনের মা কান্না যেনো থামাতে পারছে না-মেয়ে কে কি করে বলবে ‘আজি যেতে হবে’……………..
নৌশিনের ভাবীকে ডেকে সাদাদ আসার খবর জানায়……নৌশিনের ভাবীরও মন টা খারাপ হয়ে যায় নৌশিনের যাওয়ার কথা শোনে…..তবুও মায়ের কথা মতো রান্না করতে যায়…………
“নৌশিন, নৌশিন…..মা উঠ…..”
বিকেল বেলা তাই একটু ডাকে ই নৌশিনের ঘুম ভাঙে,
“হুম…..”বলেই নৌশিন মায়ের কোলে মাথা রাখে,
“মা,একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও……”
মা যেন আর চোখের পানি সামলে রাখতে পারছে না-দু ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে যায়…….
শক্ত হয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“মা,উঠ….রেডি হয়ে নে…..”
চোখ বন্ধ করেই নৌশিন জানতে চায়,
“কেনো মা??কোথাও যাবো?”
“হ্যাঁ,সাদাদ আসবে ও বাড়িতে নিয়ে যাবে….”
মায়ের মুখপ হঠাৎ এমন কথা শুনে এক রকম চমকে উঠে নৌশিন……চোখ খুলে মায়ের মুখের দিকে তাঁকায়,
“কি বলছো???ও তো বললো পরশু যাবো তাহলে আজ কেনো?”
“তোর শাশুড়ি মা ফোন করেছিলো আজকে যেতে বলেছে আবার কিছু দিন পর…….”
কথা শেষ করার আগেই নৌশিন বলে,
“ও মা….এসেছি তো একটা দিনও হলো না….শুনেছি সবাই নাকি দু-তিন থাকে….তাহলে??”
“আজ দরকার…..সোনা মা আমার রেডি হয়ে নে….তোর ভাবী সব গুছিয়ে দিবে…….”
নৌশিন এবার কেঁদে ফেলে মাকে জড়িয়ে মা ও আর সামলে পারছে না….মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওনিও কান্না শুরু করে,
“ও মা আজ না,কাল যাই
??”
মা অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে নেয়-কারণ ওনি না সামলালে ওনার মেয়ে যে আরও ভেঙে পড়বে,
“না মা,আজ যা-কিছু দিন পর আমরা যাবো……আর তোকে নিয়ে আসবে…..”
নৌশিনের কান্না যেন থামেই না…………
“আমার মা না তুই,এভাবে কাঁদে না………..প্লিজ মা কাঁদিস না……চোখ মুছ….”
“মা আমার যেতে মন চাইছে না আজ……সাদাদ তো সকালেও বলে গেলো পরশু দিন যাবো…….”
“মা মা, কান্না থামা….সাদাদ ও জানতো না ওর মা ওকে ফোন করে বলবে বিকালে তোকে নিতে যেতে……….”
“মা………………”
নৌশিন সব গুছিয়ে নিচ্ছে ওর ভাবী হেল্প করে দেওয়ায় তাড়াতাড়ি ই সব গুছানো শেষ………………..
“কি রে মন খারাপ?”(ভাবী)
মাথা নেড়ে বারণ করে নৌশিন…………
“মিথ্যা কেন বলিস,শোন আমরা যাবো তোর বাসায় তুই একদম মন খারাপ করিস না প্লিজ………..”
“তোমাদের খুব মিস করবো….. ”
বলেই নৌশিন আবারও কান্না শুরু করে দেয়……
ভাবী গিয়ে জড়িয়ে ধরে,
“বোন আমার এভাবে কাঁদিস না……….”
ভাবীও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না-ভাবী,ননদের সর্ম্পক টা যে বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম হয়ে উঠে নি এতো দিন তাই দূরে যাওয়ার কষ্ট টা যে লুকিয়ে রাখা দায়…….
ভাবী নৌশিনকে ছেড়ে ওর চোখ মুছিয়ে বলছে,
“এই পাগলী,কাঁদবি না…..আমরা কি চলে যাচ্ছি নাকি?যে তুই এভাবে কাঁদছিস?রোজ কথা হবে আর সাদাদ আছে না সে বাড়িতে দেখবি আস্তে আস্তে ঐ বাড়ির সবাই তোর কত আপন হয়ে গেছে…..তখন তো আমাদের কথা তোর মনেই পড়বে না…..”
“ভাবী………”
“এই যে আবার কান্না করে……..থাম,চুপ একদম চুপ……..”
“তাহলে কি করে বললে তোমাদের ভুলে যাবো?……”
“ধীরে ধীরে যে সো বাড়ি ই তোর সব হয়ে যাবে,ভুলবি না জানি সেটা তো কথার কথা বললাম দেখবি এমন এক সময় আসবে ‘এই বাড়িতে আসে দু দিনেরর বেশি থাকতে ভালো ই লাগবে না….আর যত দিন থাকবি মন পড়ে থাকবে ও বাড়িতে………”
“আমাকে কিন্তু দিন কয়েক বার কল করবে ভাবী……”
“আচ্ছা,সেটা করবো এখন চল রেডি হয়ে নে…….”
“কি পড়বো??”
“কি আবার শাড়ী পড়বি…..”
“আমার ভালো ই লাগছে না এলাম চব্বিশ ঘন্টাও হলো না……সবাই কত দিন থাকে…..”
“কি আর করার বল……থাক মন খারাপ করে তো আর লাভ নেই তুই সাদাদকে নিয়ে যেদিন মন চায় আসবি বাসা তো জাস্ট এক ঘন্টার রাস্তা……”
“আচ্ছা আর কোনো কথা না বলে শাড়ি বের কর,আবার সাদাদ এসে যাবে………”
“বের করে দাও কোন শাড়ি পড়বো………”
“দিচ্ছি……”
এরমধ্যে আরফান ঘরে ডুকে,
“আপু,তোর ফোন-ফুপু দিলো…..”
“কে কল করেছে?”
“বললো ভাইয়া দিয়েছে…..”
“ওও……আচ্ছা তুই যা…..”
নৌশিন কল ব্যাক করে কোনো সালাম দেয় নি আজ,সাদাদ খুব ভালো করেই বুজতে পারছে নৌশিনের ভীষণ মন খারাপ……..বিয়ের দিন যেভাবে কান্না করছিলো আজও নিশ্চয় কান্না করবে………………..
“হ্যালো,কল করেছিলে?”
“হুম……”
“আসছো কখন?”
“মন খারাপ করো না জান প্লিজ,আমি কিছু দিন পর ই তোমায় নিয়ে আসবো দেন অনেক দিন থাকবে……..”
“না মন খারাপ করি নি……মিটিং শেষ?”
“হ্যাঁ,আধা ঘন্টা আগে শেষ হলো…….লান্স করেছো?”
“হুম….তুমি?”
“কফি,টাইম হয় নি আর কিছু খাওয়ার……”
“সে কি……চার টা বেজে গেলো প্রায় আর তুমি লান্স করো নি এখনো…..”
“কি করবো বলো চাপ ছিলো……”
“আচ্ছা তুমি তাড়াতাড়ি এসো,বাইরে কিছু খাওয়ার দরকার নেই এখন……এখানো এসো তাড়াতাড়ি…….”
“হুম,গাড়িতে বসেই তোমায় ফোন করেছি…….”
“ও….তাহলে আমি রাখছি……তৈরী হতে হবে…..আল্লাহ হাফেজ…..”
“হুম…..”
“আস্তে ড্রাইভ করো…..”
“ওকে ম্যাম,রাখছি……”
নৌশিন কালো স্কাই কালারের একটা জামদানী পড়ছে-শাড়ির পাড়টা অবশ্য কালো………শাড়ি টটা এতো গর্জিয়াস না,আর নৌশিনও এতো জাকজমক পচ্ছন্দ করে নে,শাড়ীটাতে বেশ মানিয়েছে মেয়ে টাকে……………
ওর ভাবী ওর চুল রেডি করে দিচ্ছে,এমন সময় সাদাদ এসে যায়………………..
“ও সাদাদ এসে গেছো,বসো ভাই……..”
“জ্বি ভাবী……”
নৌশিন কোনো কথা বলছে না সাদাদের সাথে……সাদাদ আয়নার দিকে চোখ রেখে নৌশিনকে দেখলেও নৌশিন মাথা নিচু করে আছে………..
খোপা করে দেওয়ায় শাড়ীটার সাথে বেশ মানানসই লাগছে…..সাথে কানে ঝুমকো,গলায় মাঝারি সাইজের একটা সোনার হার….হাতে বালার সাথে কিছু চুরিও আছে-হালকা কাজল,হালকা রঙের লিপস্টিকে বলতে গেলে সাধারণের মাঝে অসাধারণ লাগছে……..
নৌশিনের মা রোমে এসে,
“সাদাদ বাবা চলো,খেয়ে নিবে……”
“হ্যাঁ সাদাদ যাও ভাই…….”
“বৌ মা,তুমি জামাই কে নিয়ে আসো আমি সব রেডি করে রাখছি…….”
“আচ্ছা,মা যান আমি আসছি…..”
…………………..নৌশিনের মা চলে গেলে ভাবীও চলে যায়-সাদাদকে যেতে বললে ও জানায় একটু পর আসছে,ভাবী বুজতে পারে নৌশিনের সাথে কথা বলবে তাই আর জোরাজোরি না করে তিনিও রোম থেকে চলে আসেন…………………………
নৌশিন রেডি হয়ে খাটে গিয়ে বসে,সাদাদকে বলছে,
“খেয়ে নাও…….”
সাদাদ নৌশিনের পাশে গিয়ে বসে…………….
“আমি একা যাবো???”
“ও….আচ্ছা চলো……”
নৌশিন উঠতে চাইলে সাদাদ হাত ধরে আবার বসিয়ে দেয়…..নৌশিন এখনও সাদাদের দিকে মুখ তুলে চায় নি……সাদাদ দু হাতে নৌশিনের মুখ টা উঁচু করে বলে,
“কার কাছে কি লুকাচ্ছো??ভালোবাসি তোমায়-তোমার কখন মন খারাপ হয় আমি বুজবো না?……”
নৌশিনের চোখ দুটো ছলছল করছে,সাদাদের মুখের তাঁকিয়ে যেন আরও কান্না পাচ্ছে………………কান্না আটকে দিতে সাদাদ নৌশিনকে বুকে জড়িয়ে নেয়-খুব শক্ত করে আগলে নিলো…….”একদম চোখ থেকে পানি বের করবে না-দাদী অসুস্থ গ্রামে যাওয়ার আগে তোমাকে দেখতে চাইছে না হলে মা কোনো দিন আজ তোমায় নিতে বলতো না…..আমি কথা দিচ্ছি তোমার ক্লাস অন হওয়ার আগে ই তোমায় নিয়ে আবার আসবো……….”
সাদাদের বুকে মাথা রেখেই নৌশিন জবাব দেয়,
“আমি সবাইকে খুব মিস করবো…..”
“আমি জানি হয়তো তোমার মতো এত টা ফিল করতে পারছি না তবুও আমি যতটা বুঝি ‘তোমার সাথে যখন একদিন দেখা না হতো রিলেশন কালীন মনে হতো এই বুঝি সব শেষ আমার’ তো সেই সুবাদে এট লিস্ট এটা বুজি নিজের ভালোবাসার মানুষদের না দেখতে পেলে কতটা কষ্ট হয়……তবুও নিয়ম বলে একটা কিছু আমাদের সবাইকে বেঁধে রেখেছে আমি চাইলেও এখন তোমাকে এ বাড়িতে আগের মতো রেখে যেতে পারবো না খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ আর নরমালি হলে দু-এক দিন……বাট আগের মতো না…..আজকে নিয়ে যাচ্ছি তোমার এতে যতটা কষ্ট হচ্ছে পরশু নিয়ে গেলেও ঠিক তত টাই কষ্ট হতো…..যদিও এটা ভেবে ভালো লাগগো দু দিন বেশি থেকেছো বাট যেতে কিন্তু হতোই…….তাই একদম কান্না কাটি না করে চলো দেখবে ঐ বাড়িতেওও বেশ ভালো লাগবে……..”
“হুম…….”
“আমার কিন্ত প্রচুর ক্ষুদা লাগছে নৌশিন……এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে খাবো কি করে??”
নৌশিন মাথা তুলে হেঁদে দিয়ে বলে,
“আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমার খাওয়ার কথা…..চলো….”
“হুম চলো…..”
খাওয়া শেষে এবার নৌশিনের যাবার পালা……….
সাদাদ নৌশিনের ভাবীকে ডেকে নিয়ে নৌশিনকে যাওয়ার জন্য তৈরী করে দিতে বলে……….
ভাবী নৌশিনকে গিয়ে বলে যাওয়ার কথা আর সার্ভন্ট দিয়ে নৌশিনের ব্যাগ গুলো সাদাদের গাড়িতে উঠিয়ে দেয়…………..
সবাই ড্রয়িং রোমে,নৌশিনের ভাই নৌশিনের আজ যাওয়ার কথা শোনে এক রকম রেগে আছেন……তার বক্তব্য,
“আমার বোন এলো একদিন হলো না-আজ কেন যাবে?কারও দেখার ইচ্ছে হলে থেকে যেতে পারতো দু দিন তারপর বোন গেলে দেখবে……..”
অনেক কষ্টে নৌশিনের মা আর ভাবী-ব্যাচারার রাগ সামলেছে………………….
ছোট বেলায় যে বোন ছোট বোনকে জ্বালিয়ে মারতো বোধবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সে বোনের গাঁয়ে একটা ফুলের টোকাও আসতে দেয় নি……..
এমনি কলেজ শেষ করা পর্যন্ত যত কাজ ই থাক…বন্ধুদের সাথে আড্ডা বাদ দিয়েও বোনকে নিয়ে একবার দিয়ে আসতো তো আবার নিয়ে আসতো………ভার্সিটিতে ওঠার পর একা একা যাওয়া আসার জন্য পাঠাতো তবুও সবসময়ের জন্য গাড়ি থাকতো নৌশিনের সাথে……………আজ সে বোন এভাবে চলে যাচ্ছে ঠিক যেন মেনে নিতে পারছে না নৌশিনের বড় ভাই…………..
“আপু,আবার কবে আসবি?তুই আসলে কিন্তু আমায় বলবি আমি সে দিন ই যশোর থেকে চলে আসবো………আমায় কিন্তু ভুলে যাস না কল করিস,আর স্টাডিতে হেল্প লাগলে আগে যেমন কল করতাম এখন করলে বোরিং হবি না তো……”(আরফান)
নৌশিন এগক্ষণ অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিলো ছোট ভাইয়ের মুখে কথাগুলো শোনে চোখের পানিগুলো আর থেমে থাকতে পারে নি……………
আরফান নৌশিনের কাছে এসে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়………দুজনেই পুরো বাকরুদ্ধ ওদের হয়ে কথা বলে যাচ্ছে গড়িয়ে পড়া অজস্র নোনাজল……………
“আরফান,এটা কিন্তু ঠিক না যারা হ্যান্ডসাম হয় তারা কিন্তু এতো সহজে কাঁদে না……বাট ওয়াট আর ইউ ডুয়িং……..”(সাদাদ)
“আরফান বাবা এমন করে না……ছাড়ো তোমার আপুকে….”(নৌশিনের বাবা)
“ফোন দিবি কিন্তু……”(আরফান)
“দিবো……বাদরামো করিস না একদম পড়াশোনায় মন দিস……”(নৌশিন)
“এতো পড়তে পারবো না……তুই ই ঠিক মতো পড়িস তোর হাজব্যান্ডের মতো বার বার ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হোস…..”
“পাগল ছেলে………”(নৌশিনের বাবা)
“আরফান,তুমি তোমার আপুকে ই সব ভালোবাসা দিয়ে দিচ্ছো আমাকে তো কিছু হলেই দাও…….”(সাদাদ)
“ওকে দিচ্ছি-ভাগ করে নিও দুজনে………কাপলের সব কিছু ভাগাভাগি হয়……”(আরফান)
“হা হা হা……..”(সাদাদ)
নৌশিনের মা একদৃষ্টিতে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে,নৌশিন ওর মায়ের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে,
মায়ের চোখের পানির সাথে মেয়েরও আবেগ বাঁধা মানছে না………..নৌশিনের ভাইয়া বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখতে রাজি নয় তাই বিয়ের দিন যেভাবে পালিয়ে বাঁচার চেষ্ঠা করেছিলো আজও সেই চেষ্টা টাই করছে কিন্তু সে দিনের মতো আজও বোনের চোখ ফাঁকি দিতে পারে নি…..
“শোন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি,কোনো সমস্যা হলে জামাইয়ের সাথে শেয়ার করবি……না খেয়ে ঘুমাবি না কোনো দিন……”(মামী)
“সাদাদ বাড়ির লাইটিং টা মনে করে ঠিক করে নিও……”(ভাইয়া)
“জ্বি ভাইয়া…….আজ লোক পাঠিয়েছিলাম হয়ে গেছে মনে হয়…..আপনারা টেনশন নিবেন না…..”(সাদাদ)
……….সবার কাছ থেকে আরও বিদায় নিতে হয় নৌশিনকে…….নৌশিনের ভাবী সাদাদের হাতে নৌশিনের কিছগ মেডিকেল রিপোর্ট দেন….মেয়েটা জন্মগত ভাবে একটা রোগ নিয়ে এসেছে সেটার ই রিপোর্ট……..জন্মানোর কিছু দিন পরেই ওর মা এই অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেন…..বিয়ের আগে সাদাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নৌশিনের বাবা সবটা খুলে বলেছিলেন………..
“একটু খেয়াল রেখো ভাই……”(ভাবী)
“ভাবী এভাবে বলবেন না……নৌশিন তো আমারও তাই না……..”
…………………….আরফান,ভাবী আর বাবা এরা মেয়েকে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য নিচে আসেন…………
গাড়িতে উঠার আগে,
“বাবা আবারও আমার মেয়ের হাত টা তোমার হাতে দিলাম….আমার জীবনের শ্রষ্ঠ সম্পদ এটা-কষ্ট দিও না কোনো দিন…..ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ দিও তবু হাত টা ছেড়ো না…….”
“বাবা আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে আপনার মেয়েকে আগলে রাখবো……..আপনি এসব নিয়ে প্লিজ কিছু ভাববেন না……..”
বাবা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে……..বাবার মন মেয়েকে ছাড়তে চাইছে না দিয়ে দিয়েছে তো মেয়ে তবুও আজও বুক টা ফেঁটে যাচ্ছে…..
“বাবা যেতে দিন ওদের……সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে…..”(ভাবী)
বাবা মেয়েকে ছেড়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন,
“খেয়াল রাখবে নিজের……খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম করো না…….আর মন খারাপ করে থাকার কিছু নেই ভার্সিটির ক্লাস শুরু এটেন করলে দেখবে সব আগের মতে লাগছে……..আর ট্রাই করবে ঐ বাড়িতে যেন সবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারো……..”
নৌশিন মাথা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতে মাথা নাঁড়ায়…………..
গাড়িতে উঠবে এমন সময় আরফান নৌশিনের মাথায় একটা টুকা মেরে বলে,
“খোপা করছিস কেন?তোর চুলে টান দিয়ে পারলাম না…তাই টোকা দিলাম……যা এখন…..”
নৌশিনও ভাইয়ের মাথায় আস্তে করে একটু টোকা দিয়ে বললো, ‘পাঁজি একটা……”
!
চলে গেলো বাড়ির একমাত্র মেয়ে……যতদূর পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় বাবার চোখের পলক পড়ে নি……..নৌশিনও জানালা দিয়ে ওর বাবা,ছোট ভাই আর ভাবীকে দেখে যাচ্ছিলো………….
গাড়ি চলে গেলে ওরাও বাসায় চলে আসে………….
সাদাদ ড্রাইভ করছে আর নৌশিন মুখ গোমড়া করে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে…….
সাদাদ কোনে কিছু বললো না….কারণ ও জানে যত তো ই সাত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করুক এই কষ্ট টা কমবে না স্বাভাবিক ভাবেই সব টা ঠিক হয়ে যাবে তাই নৌশিনকে নিজের মতো করে একটু সময় কাটানোর সুযোগ দেয় সাদাদ……………………………
কিছু দূর যেতেই সাদাদের চোখ পড়ে ফুচকার দোকানের উপর….নৌশিন অবশ্য আকাশ দেখায় ব্যস্ত থাকায় সেটা খেয়াল করে নি…………….
সাদাদ গাড়ি থামায়……..মনে মনে ভাবছে ‘ওর মন খারাপ দূরর করার সর্বোউত্তম মাধ্যম এই ফুচকা”
নৌশিন সাদাদের দিকে তাঁকায় এবার….কিন্তু কিছু বললো না………………..
“ফুচকা খাবে??”(সাদাদ)
“এখন?”(নৌশিন)
“হুম….ঐ যে স্টল…..নামো…..”
“না না খাবো না আমি…..”
“নৌশিন তুমি ফুচকা খাবে না এটা হতে পারে না……সো মোড ঠিক করতে গেলে চলো ফুচকা খাই…..”
“খাই মানে তুমিও খাবে?”
“আআআ ট্রাই করে দেখতে পারি,তুমি সে দিন বললে না আমার কারণে তোমার রাগ হলে শাস্তি স্বরূপ ফুচকা খাওয়াবে সো আগে থেকেই প্রেকটিস করতে চাচ্ছিলাম……”
“না না এখন খাতে হবে না সন্ধ্যা লেগে আসছে……….”
“তো??আমি আছি না-ভয় কিসের……সন্ধ্যা হোক বা রাত…..চলো…..”
“শাড়ি পড়ে রাস্তায় দাঁড়াবো না আমি…..”
“ওয়াট?শাড়ি পরে গেলে কি হবে?”
“কিছু না,হিজাব নাই মাথায় আমি যাবো না……তুমি গাড়ি স্টার্ট দাও…….”
“হিজাব……!”
“হুম…….চুল দেখাবো নাকি মানুষকে?জানালা বন্ধ করতাম না হিজাব থাকলে……..”
আনমনেই সাদাদে মুখে হাঁসির রেখা ভেসে উঠে,
“হাসছো যে???”(নৌশিন)
“না….এমনি…..বসো তুমি আমি আসছি……….”
“আরে কোথায় যাচ্ছো?…….”
!
সাদাদ আবার গাড়িতে ব্যাক করে,
“এই তোমার হাতে কি?”
“ফুচকা…….”
“ফুচকার কি দরকার ছিলো,অন্য দিন খেতাম…..”
“অন্য দিনের টা অন্য দিন আজকের টা আজ……….”কথা শেষ করে সাদাদ গাড়ি স্টার্ট দিতে শুরু করে………….
“ওয়েট ওয়েট……..স্টার্ট শুরু করো না…….”
সাদাদ অলরেডি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিয়েছিলো নৌশিন বলায় কোনোভাবে তাড়াহুড়ো করে থামায়…………..
“কি হলো??থামতে বললে কেনো??”
“এই কটা ফুচকায় হবে না……”
“কিহ্???দু প্লেট ফুচকা আছে এখানে ঝাল ও পারফেক্ট দেওয়া হয়েছে তোমার জন্য…….হবে না এতে??”
“না……”
“হেয়……নিয়েছি এটাই বেশি আর নিতে পারবো না……”
“না নিতে হবে……এটা রেখে যাও…..আর আরও আরও এগারো প্লেট ফুচকা আনো মিডিয়াম ঝাল দিয়ে……দেন আরও এক প্লেট অর্ডার করো ঝাল ছাড়া……..”
“পাগল নাকি???এতো ফুচকা মানুষ খায়?? ”
“আরে যাও না তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে……..”
“পারবো না আমি……..”
“উফফ…..সাদাদ তুমি না……”
“আমি কি সেটা তুমি জানো-আমি এতো ফুচকা তোমাকে খেতে দিবো না……এরপর আর কোনো কথা বলবে না…..”
“আজব…..তোমার কমন সেন্স কই গেলো?খুব তো বলো আমার কমন সেন্স নেই……”
“এখানে কমন সেন্সের কি হলো?”
“এই এত্ত এত্ত ফুচকা কি আমি একা খাবো?এটা তুমি কি করে ভাবলে…….আমি কি রাক্ষসী?”
“তো কি হবে এতো ফুচকা দিয়ে?”
“আল্লহ্….সব খুলে বলতে হয়……তুমি আমার জন্য ফুচকা আনলে-এটা আমরা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি……তো আমি এটা একা খাবো নাকি?তাই বাসার সবার জন্যও প্যাক করে আনো……”
“হায় রে জিনিস তুমি একখান!একা খেলে কি প্রব….তাই বলে এই ফুচকাও গাট্টি বেঁধে নিতে হবে…..”
“হবে…..এখান যাও নামো……”
“যাই আর কি করার…….এখানে দু প্লেট আছে ঝাল বেশি আর কত প্লেট লাগবে?”
“এগারো প্লেট আনো মিডিয়াম ঝাল দিয়ে মানে আমার টার চেয়ে কম ঝাল দিয়ে…..আর এক্সট্রা এক প্লেট আনো ঝাল ছাড়া…….তো টোটাল বারো প্লেট…….”
“এত্ত??”
“হুম……দাঁড়াও হিসেবও দিয়ে দিচ্ছি…..বাবা,মা,নীলা আপু,ওর বর,মেজো কাকা-কাকী,ছোট কাকা,প্রাপ্তি,রিদি আপু আর ভাইয়া-ভাবী এদের জন্য এগারো প্লেট ঝাল আমার টার চেয়ে কম……আর এক্সটা প্লেটের ফুচকা দু ভাগ হবে হাফ দাদী খাবে আর হাফ অরূপ……হয়েছে???????”
“আল্লহ্…..হেল্প মি……”
“এই এই দাঁড়াও……এই বোতল টাও নিয়ে যাও বেশি করে তেঁতুল পানি আনবে……”
“উফফফফ…………”
“হুম,যাও…….তাড়াতাড়ি দিতে বলবে………”
প্রায় বিশ মিনিট পর সাদাদ বারো প্লেট ফুচকা প্যাক করে নিয়ে গাড়িতে উঠে,
“আমার না তোমাকে আছাড় দিতে মন চাচ্ছে……”(সাদাদ)
নৌশিন সাদাদে কথা শোনে থমমত খেয়ে প্রশ্ন করে, “কিহ্??”
“একদম মনের কথা বলছি……”
“তোমার মন আছাড় দিতে চাচ্ছে আমায়???কাজ টা করলে আমার একটা হাড়ও ঠিক থাকবে কি না আমার সন্দেহ আছে…..যা বডি তোমার……তা হঠাৎ সব কিছু রেখে তোমার মন এমন কিছু কেন চাচ্ছে??”
“রাগ উঠাবা না…..এতো ফুচকা কিনালে আবার কথা বলো বিশ মিনট দাঁড়িয়ে ছিলাম………”
“হি হি হি হি……….” (নৌশিন হাঁসতে থাকে ওর হাঁসি যেন থামছেই না….এক পর্যায়ে মুখে হাত দিয়ে হাঁসতে থাকে-এই হাঁসি সাদাদের সব রাগ ভেঙে দিয়েছে,সাদাদ পলকহীন দৃষ্টিতে নৌশিন হাঁসি দেখছে………নৌশিন হাঁসতে হাঁসতে এক সময় খেলায় করলো সাদাদ ওর দিকে অবাক নয়নে তাঁকিয়ে আছে,
হাঁসি কোনো রকম আটকে নৌশিন বলে,
“কি দেখছো এভাবে???”
“ব্যাস আর কিছু চাই না…..জাস্ট সারা জীবন এই হাঁসি মুখ টা ই দেখতে চাই…..”
এবার নৌশিন মুচকি হাঁসে…..
“হয়েছে,এবার আমরা যাই….না হলে রাতে বাড়ি ফিরতে হবে…..”(নৌশিন)
“ও….সিউর……”(সাদাদ)
প্রেমঘোর পর্ব ২৭+২৮
সাদাদ গাড়ি চালানো শুরু করে-এক ঘন্টার আগেই পৌঁছে বাসায় পৌঁছে যায়….
সাদাদ একা থাকলে আরও পনেরো মিনিট আগে আসতো কারণ খুব দ্রুত গাড়ি চালায় সে………..নৌশিন থাকায় এতো টা দ্রুত চালায় নি……….