প্রেমঘোর পর্ব ৯১+৯২

প্রেমঘোর পর্ব ৯১+৯২
নার্গিস সুলতানা রিপা

নৌশিনের ভাই নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে ঘাবড়ে যায়।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মেয়েটার আরর সারা মুখে ঘেমে ভিজে গেছে;যা শীতের রাতে অসম্ভব ব্যাপার।
রাফসা কোনো কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি নৌশিন-সাদাদ এর রোমে ডুকে।
নৌশিন-সাদাদের বেডে সাদাদ আর রিদি একসাথে শুয়ে এইদৃশ্য যেনো চোখে দেখতে পারছেন না তিনি।
“রিদি!!!!!!!”

এতক্ষণ পর রিদি বুঝতে পারলো,রোমে কেউ এসেছে।
ওরা তো কোনো শব্দ পর্যন্ত করে নি,দেখা মাত্র ই আঁতকে গেছে।
রাফসার ফুসানো ডাকে রিদি দ্রুত সাদাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে আসে।রিদির ধাক্কায় ঘুম ভাঙে সাদাদেরও।
“কি হলো??”বলে চোখ খুলতেই সাদাদ বুঝতে পারলো;সে এতক্ষণ নৌশিনকে না রিদিকে জড়িয়ে রেখেছিলো।
সাদাদ আকাশ থেকে পড়লো,যখন দরজার দিকে তাঁকাতেই দেখলো নৌশিন দাঁড়ানো।
সাদাদ আর কিছু ভাবে নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দৌঁড়ে নৌশিনের কাছে আসে।নৌশিনের কাতর,ক্লান্ত মুখ টা দেখে ভীতর টা চমকে উঠে।
রাফসা কি করবে বুঝতে পারবে না।
রিদি কাছে গিয়ে,ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো গালে।বেগ সামলাতে না পরে ফ্লোরে পড়ে যায় রিদি।
সবার নজর রিদির দিকে চলে যায়।
রাফসা আবার টেনে তুলে রিদিকে;
“ছিঃ,এতটা নিচ তুমি??আজ না তোমার গাঁয়ে হলুদ গেলো।বিশ্বাস ঘাতক তুমি একটা।এক পুরুষের লাগানো হলুদ পড়ে,এখন আবার….ছিঃ।।।।ঘৃণা লাগছে আমার তোমার মুখটা দেখে…….”

রিদি থমকে গেছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।নিজেলে কন্ট্রোল না করে কি করে ফেলেছে সে……ফলাফল ভাবতে পারছে না ও।
শরীর কাঁপছে।
সাদাদ সব দিক থেকে নজর ফিরিয়ে,নৌশিনের গালে হাত দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে,
“নৌশিন,বিশ্বাস করো,আমি…”
স্পর্শ করতে পারে নি নৌশিনকে সাদাদ।তার আগেই নৌশিনের ভাই নৌশিনকে টান দিতে পেছনের দিকে নিয়ে আসে।
সাদাদের কলার চেঁপে ধরে সাথে সাথে।

“ইউউউউউউ……….আমার বোনের সাথে এসব করার সাহস হলো কি করে তোর???”
নৌশিনের ভাইয়ের চিৎকার শোনে,ড্রয়িং রোম থেকে সাদাদের বাবা-মা,নিপা,ওয়ালিদ,সাদ,নৌশিনের বাবা-মা,রিদির মা,প্রাপ্তির মা-বাবা,প্রাপ্তি সবাই ছুটে আসে।
নৌশিনের ভাই সাদাদের কলার চেঁপে ধরেছে,রাফসা ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে।
এই দৃশ্য দেখে থমকে গেছে সবাই।
রাগে সাদাদের উপর ঘুষি লাগানোর জন্য হাত উঠালো সাদ নৌশিনের ভাইয়ের হাত টা ধরে ফেলে।
“প্লিজ,ভাই শান্ত হন……..”

সাদাদের কলার ছেড়ে স্বজোরে বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সে;
নৌশিনের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,
“যোগ্য নস তুই আমার বোনের।তোর জন্য…..”
সাদাদের দিকে আবারও তেড়ে আসে মারার জন্য।কিন্তু সাদাদের মায়ের চিৎকার আর ভারী কিছু পড়ার শব্দে সবার চোখ যায় নৌশিনের দিকে।
হ্যাঁ,সব কিছু দেখে জ্ঞান হারায় নৌশিন।
স্থিতি না পেয়ে সরাসরি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে সে।
“নৌশিন!!!!!!”

সবার আগে রাফসা ছোটে এস ফ্লোর থেকে মাথা টা নিজের কোলে তুলে।
টাইলসে এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পড়ে যাওয়ায়,কপালের সাইডে বেশ খানিক টা লেগেছে।
মেয়ের কপালে রক্ত দেখে,মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নৌশিনের বাবা-মা দুজনেই।
কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।
কি হচ্ছে এসব।

সাদাদ নৌশিনের কাছে এগিয়ে আসতে চাইলে,বাঁধা দেয় নৌশিনের ভাই।
“খবর দার।আমার বোনের দিকে এক পাও আগানোর চেষ্ঠা করবি না তুই…….”
সবাই অবাক!!!!কি সব বলছে নৌশিনের ভাই,আর কেন ই বা বলছে!!!!!
“ভাইয়া,প্লিজ….ও পড়ে গেছে…..”
“যাক….তাতে তোর কি??”বলেই আবারও ধাক্কা দেয়।দূরে গিয়ে পড়ে সাদাদ।
“ভাই,প্লিজ….আগে নৌশিনের দিকে তাঁকান…তারপর অন্য কিছু….”
রাফসার কথায়,এগিয়ে এসে বোনকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো বোন পাগল ভাইটা।
সিড়ি দিয়ে দ্রুত নামছে,

“বোন,এই বোন….চোখ খুল…..বোন…….”
কাঁদছে নৌশিনের মা।কি থেকে কি হলো হঠাৎ!!!ওনার মেয়ে তো এমনিতে অসুস্থ।
নৌশিনের ভাইয়ের পেছনে ছুটে আসে সবাই।
নিঁচে নেমে,ওর বাবাকে উদ্দশ্য করে বলে,
“বাবা,রাফিনকে নিয়ে এক্ষুণি বের হতে বলো তোমাদের বউ মাকে।আর আমি গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি ওকে।তাড়াতাড়ি আসবে তোমরা।”

সাদাদ সামনেই ছিলো,ওর দিকে নজর এনে বললো,
“আর তুই!!!!তোকে তো আমি শেষ করে দিবো….তোর জন্য আমার বোনের চোখে পানি দেখেছি আমি….যদি ওর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় না,তোর দুনিয়াতে থাকা আর হবে না…….”
বাড়ির সবাইকে উদ্দশ্য করে আবারও বাঘের কন্ঠে বলে উঠে,
“শেষ দেখে ছাড়বো আমি।শেষ করে দিবো আপনাদের।আমার বোনের এই অবস্থার জন্য আপনারা দায়ী……. আর বাকী রইলো ঐ মেয়ে….কোথায় সে????আসতে বলুন…..জানিয়ে দিবেন ওকে,বোনকে হসপিটালে নিয়ে যাই আগে।তারপর ওকে দেখে নিচ্ছি আমি….আমার বোনের হাঁসি কেড়ে নিলে কতটা খারাপ হতে পারে বুঝাবো আমি……”
আর অপেক্ষা করে নি।
গাড়িতে চলে যায় দৌঁড়ে।

কপলা থেকে রক্ত পড়ছে,পকেট থেকে রুমাল বের করে বোনের কপালে বেঁধে দিলো।ওর মা,বাবা কোনো কিছু না বুঝেও মেয়ের জন্য উদ্বেগ হয়ে ছুটে আসে গাড়িতে।
“কি হলো??রাফিনের আম্মগ কোথায়??”
“রাফিন তো ঘুমে,ছোট বাচ্চা।ওরা থাকুক….”
পাশ থেকে জবাব দেয় প্রাপ্তির মা।
“না,তা সম্ভব না….”
নিজেই ছুটে যায় ভেতরে।
ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে তুলে,স্ত্রীর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে বাইরে।

“আরে কি হয়েছে???বলবে তো……”
প্রশ্ন করে নৌশিনের ভাবী।
কোনো জবাব দেয় নি তার স্বামী,গাড়িতে নিতেই চিৎকার করে নৌশিনকে দেখে।
“আআআ…..এটা কি করে হলো??”
“ছেলেকে নিয়ে ওর পাশে বসো…..”
কথা বাড়ালো না আর।তাড়াতাড়ি উঠে বসে সবাই।
দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে নৌশিনের ভাই।উদ্দেশ্য হসপিটাল।
সবাই জানতে চাচ্ছে কি এমন হয়েছে,যার জন্য নৌশিনের এই অবস্থা।
কোনো জবাব দেয় নি,নৌশিনের ভাই।
কি জবাব দিবে??
বাবা-মা কে কি করে বলবে;যে ওদের মেয়ে জামাই অন্য কারও সাথে এক বিছানায়!!!!!!
হসপিটালে এডমিট করায় নৌশিনকে।
ড্রাইভার কে ফোন করে হসপিটালে আসতে বলে,স্ত্রীকে জোর করে ছেলেকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
কেবিনের বাইরে অপেক্ষা করছে ওরা।

রাফসার কাছে সব কিছু শোনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে।
রিদির বাবা,মা আর ওয়ালিদ মাথা নিঁচু করে বসে আছে।
মান,সম্মান আর কিছু রইলো না।ওদের মেয়ে এমন একটা কাজ করেছে,ভাবতেই পারছে না ওরা।রাফসা সবাইকে সবটা খুলে বলে।সাদাদের বাবা এতক্ষণ সাদাদকে দোষী ভাবলেও রাফসার কাছে সব শোনে;সবকিছু পরিষ্কার ওনার কাছে।
“আমার যে করেই হোক…..বউ মা কে চাই….আমি আর কিছু শোনতে চাই না।আর শুধু চাই না সুস্থ অবস্থায় এ বাড়িতে দেখতে চাই…..”
বলে উঠে যান সাদাদের বাবা।
সাদাদের মা তো সেই কখন থেকে কেঁদে যাচ্ছে।
আর সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে যাওয়ার পর পর ই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে,ওদের গাড়ির পেছন পেছন ছুটেছে।

সাদাদকে হসপিটালে দেখা মাত্রই নৌশিনের ভাই তেড়ে আসে মারার জন্য।
বাঁধা দেয় নৌশিনের বাবা।
রাগে ফুসছে নৌশিনের ভাই।
বাবার জন্য কিছু করতে পারছে না,না হলে এক্ষণি সাদাদের অবস্থা নাজেহাল করতো।
“ভাইয়া,প্লিজ….আমাকে একবার ভেতরে যেতে দিন….বাবা প্লিজ,একবার…..”
“ঐ তোকে না বলছি….”
“খোকা!!!!এটা হসপিটাল……আর তুমি কিভাবে কথা বলছো ওর সাথে??ভুলে যেও না সে তোমার একমাত্র ভগ্নিপতী….”

“বাবা,তুমি কি সব বলছো??কিচ্ছু জানো না তুমি ওর সম্পর্কে।আমার বোনের আজকের এই অবস্থার জন্য ও দায়ী বাবা……আমি নিজের চোখে….”
“ভাইয়া,আপনি সব টা না জানে বলছেন।ভাইয়া,প্লিজ যেতে দিন……”
“বলেছি যখন না তো না…..বাবা তুমি যদি ওকে ভেতরে যেতে যাও তাহলে আমি কিন্তু……”
“বাবু,বাবা আমার….রাগ করিস না।আগে তো আমার মেয়ে টা ঠিক হোক।কখন থেকে তো ডক্টর দেখছে….”
কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছে নৌশিনের মা।
“সাদাদ,তুমি ওয়েট করো।ডক্টর আসুক তারপর কি বলেন শোনো…….”

আধা ঘন্টা পর ডক্টর নৌশিনের কেবিন থেকে বের হয়।
“আচ্ছা,নৌশিনের বাড়ির কে আছেন??”
সবার আগে গলা বাড়িয়ে দেয় সাদাদ….”জ্বি আমি….”
“ঐ……খব….”
“খোকা!!!!!!!!বসো……”
“বাট বাবা…..”
“বললাম তো বসো স্থির হয়ে…..হ্যাঁ ডক্টর ওনাকেই বলুন…..সে হচ্ছে নৌশিনের হাসবেন্ড।আর আমরা বাবা-মা,ও বড় ভাই…..আপনি বলতে পারেন…..”

“আসলে দেখুন।নৌশিনকে তো আগেও দেখেছি একবার…..ডা.রাফসা নিয়ে এসেছিলেন আমার কাছে।
প্রেগনেন্টের আগেও দেখেছিলাম একবার।ও যথেষ্ঠ দূর্বল।রক্তে হিমোগ্লোবিন প্রেগন্যান্সির আগে যে পরিমাণ কম ছিলো এখন তার চেয়ে আরও কমে গেছে।আর আজকের যে এক্সিডেন্ট টা ওনার সাথে ঘটেছে,ওনি তো মাথায় আঘাত খেয়েছেন সাথে কমড়েও….এজন্য আমার মনে হয় ওনার বেবীর পজিশন টা তিন মাস সময়েই অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে পজিশন রা আরও ক্রিটিক্যাল হতে থাকবে।তো আপনারা বুঝতেই তো পারছেন,মিসেস.নৌশিন খুব একটা ভালো নেই।যথেষ্ঠ সাবধানে রাখতে হবে ওনাকে।
আর যে ভাবেই হোক হেলদি ফুড খাওয়ান না হলে রক্তশূণ্যতা দেখা দিবে।

আর মোস্ট অফ অল।ওনি শারীরিক কোনো আঘাতের জন্য সেন্স হারান নি।তীব্র মানসিক চাপে হঠাৎ করে এমনটা হয়েছে,যাকে মেডিকেলের ভাষায়”হাইপারটেন্টনিউরো”বলা হয়।হঠাৎ করে কোনো প্রকার ভয় বা চাপ পড়লে নিউরো বা স্নায়ুতে এমন আঘাতের ফলে পেসেন্টের এমন অবস্থা হয়ে থাকে।আর আমি যত দূর জানি,তাঁর প্রিডিমন্যাশিয়া আছে।একটা বিষয় কিছুতেই বুঝলাম না আমি,সব কিছু জানার পরও আপনারা ওনাকে কি করে একটা মানসিক চাপ দিতে পারলেন??আর ওনি পড়লেন ই বা কিভাবে??আগে অবস্থা যতটা ছিলো মানশীল ছিলো।

ভালো মতো একটু কেয়ার করলেই হতো।আর আজকে পড়ে যাওয়া,বেবীর জন্য তো হার্মফুল বটেই ওনার জন্যও….বেবী বড় হওয়ার সাথে সাথে ওনার কষ্ট টা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বেশি হবে।আর আপনাদের মেয়ে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এমনিতেই দূর্বল।সো বুঝতেই পারছেন।হাউইভার,আল্লাহকে ডাকবেন বেশি বেশি,আর এই মুহুর্তে আপনাকে(সাদাদকে উদ্দেশ্য করে)সারাক্ষণ পেসেন্টের কাছাকাছি থাকতে হবে।একটা দু-তিন মাসের বাচ্চা কে তার মা যেভাবে হাঁসায়,খাওয়ায় আপনারও আপনার ওয়াইফের সে পরিমাণ সেবা করতে হবে।তাতেই ওনার কষ্ট কম হবে,কোনো প্রকার মানসিক চাপ ওনার জন্য ভালো হবে না,যেহেতু জন্মগত ভাবে প্রিডিমন্যাশিয়া তে ভুগছেন ওনি।ওনার ভালো থাকা এখন প্রথমত আল্লাহ,আর দ্বিতীয়ত আপনাদের উপর নির্ভর করছে……..”

ডাক্তারের কথা শোনে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে নৌশিনের মা।এখনো সাত মাস বাকী বাচ্চার;যদি এখনি পজিশন নষ্ট হয়ে যায় ওনার মেয়ে কি করে এতো কষ্ট বয়ে বেড়াবে এতোগুলো দিন।
মেয়ের জন্য বাবা,ভাইয়ের অবস্থাও খারাপ।
সাদাদের চোখ ঝপসা হয়ে গেছে।ওর প্রিয়তমার কষ্টের কথা শোনে।ডক্টের কাছে ছুটে যায়,কখন ফিরবে নৌশিনের জ্ঞান…..জবাবে ডাক্তার জানান ওনারা ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছেন নৌশিনকে।কারণ উপুড় হয়ে পড়ে পেট এবং কমড়ে চাপ লেগেছে খুব তাই এখন জ্ঞান ফিরলে তীব্র ব্যথা অনুভব করবে।তবে আগামী দশ সাত-আট ঘন্টার মতো ওনি ঘুমাবেন।
সাদাদ ধপাস করে বসে পড়ে।
এখন রাত বারো টা তার মানে সকাল আট টার পর নৌশিন চোখ খুলবে।

রিদির মা সাদাদের রোমে যায়।রিদি এখনো আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে।
দরজ টা লাগিয়ে দিলো ভেতর থেকে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েছে।
যখন ছেলে-মেয়ের জন্য মান-সম্মান নষ্ট হয় তখন যে একটা বাবা-মায়ের কতটা কষ্ট হয়!!!তা বাইরে থেকে আপনি আর আমি উপলদ্ধি করতে পারবো না।
“কি করলি এটা???কেনো করলি???এই শিক্ষা দিয়ে তোকে মানুষ করেছিলাম??এতো লেখাপড়া করিয়ে কি লাভ হলো??একবারও আমাদের কথা ভাবলি না??

আমাদের কথা না ভাবলি;এট লিস্ট তোর ভাইয়ার কথা তো ভাবতি…কি করবে সে এখন??আমরা তো বছরে একবারও আসবো না।।।তোর ভাইয়া??কি করে মুখ দেখাবে ওর শশুড় বাড়ির লোকদের??আর নৌশিন!!!
ওর অবস্থা একদম ভালো না,তুই জানিস।একটা কমপ্লিকেটেড প্রেগন্যান্সি যাচ্ছে ওর,আর আজ তোর জন্য মানসিক চাপে বেঁহুশ হয়ে এমন ভাবে উপুড় হয়ে পড়ে গেছে।রাফসা ডক্টরকে ফোন করেছিলো,ডক্টর বলেছে,বেবীর পজিশন পাল্টে গেছে।বাচ্চা টা যত বড় হবে নৌশিনের পরস্থিতও ততটা খারাপ হবে?????কেনো করলি এমন বল??”
কেঁদে যাচ্ছে রিদি।

ও বুঝতে পারছে না কি থেকে কি হচ্ছে…….
যখন সাদাদের রোমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো।
দরজা টা খোলা থাকায়,চোখ যায় বিছানায়।
সাদাদ শীতের মাঝেও খোলা শরীরে শুয়ে ছিলো।
খোলা,লোমান্ষ বুকটা দেখে,রিদির ভেতরে অজনা কিছু বয়ে যায়।
পরশের ছোঁয়া ভুলে গিয়ে মুহুর্তেই শয়তানের ফাঁদে পা রাখে।
তবে ও বিছানায় যায় নি প্রথমে,সাদাদের কাছে গিয়ে এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে।
মায়া টা আরও বেড়ে গেছিলো।
ভাবে নি কোনো কিছু।

বুঝতে পেরেছিলো,নৌশিন ঘরে নেই।তাই সাদাদের উন্মুক্ত বুকে মাথার রাখার স্বাধ নিতে চেয়েছিলো।মনে মনে ভেবেছিলো,”পরশের বুকে যা পাই সাদাদের বুকেও কি এক রকমের অনুভুতি ই পাই কি না”
কিন্তু না,পায় নি রিদি।
কেমন যেনো উসফিস লাগছিলো ওর।
পরশের বুকে মাথা রাখলে এরকম লাগে না।শান্তি লাগে খুব,একটা অচেনা অনুভুতি কাজ করে।যা সাদাদের বুকে মাথা রেখে পায় নি সে।
মুঁচকি হাঁসে রিদি,কারণ তখন সে বুঝে গেছিলো;সত্যিই সে পরশকে ভালোবাসে।সবটা দিয়েই বাসে।
উঠে আসতে নেয়,সে সময়ে।
দুই মিনিটেই বুঝে যায় সব।
ওর সবটা জোরে পরশের অসত্বি খুঁজে পায়।
কিন্তু!!!ঐ যে বলে না তকদীর।
কোনো নৌশিন জানে নি,
আর আজ মাত্র দু-তিন মিনিটের ঘটনায় এমন এক অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে যায়।

রিদি উঠে আসতে নিলে,সাদাদ ঘুমের ঘুরে জড়িয়ে ধরে তাঁকে।
সাদাদ তো নৌশিনের সাথেই ঘুমিয়েছিলো।নৌশিনের মাথাটা সাদাদের বুকে ছিলো।
আর রিদিও শাড়ি পড়া ছিলো তখন।সাদাদ নৌশিন ভেবে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিদিকে।
এক মিনিট সময়ও পাড় হয় নি,ঠিক সেই মুহুর্তে রোমে চলে আসে ওরা।
আর নৌশিন!!!!!
বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছিলো না যে সাদাদ বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছিলো।
মনে হচ্ছিলো সাদাদ রিদির গলায় মুখ দিয়ে রেখেছে।
কিন্তু না সাদাদ একটু উপুড় হয়ে বালিশে মাথা রাখায় এমন দেখাচ্ছিলো।
রিদি ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছিলো।

আর সেটাকেই দরজায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিলো।
হয়তো ওরা গভীর কোনো মুহুর্ত পাড় করছিলো।
নৌশিনের দেখার কিছু ছিলো না।ও শুধু সাদাদের হাতের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো যেটা রিদির শাড়ির ফাঁকে,উন্মুক্ত পেটে খুব শক্ত করে এঁটে আছে।
ব্যাস,নৌশিনের জাস্ট এই টুকুতেই ভেতরে তীব্র ঝড় বয়ে যায়।কারণ ওর সাদাদ যে ওর উন্মুক্ত পেটে এক রকম ভাবেই………………
মাথার মগজে জ্বালা করছিলো খুব।তীব্র শিরশির ব্যথা ঘাড় বেয়ে মাথায় উঠতে শুরু করে।
আর ওর ভাই যখন সাদাদকে মারতে যায়,সহ্য করতে পারে নি সে দৃশ্য।লুটিয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।

রিদির মা রিদিকে অনেক কথা শোনাচ্ছে।আর রিদি ভেবে পাচ্ছে না কি করবে এখন।
রিদি যে ভয় টা পাচ্ছিলো ওর মায়ের শেষ কথা শোনে ভয়টা তাঁকে ঘ্রাস করে ফেলে।
“শোন,বাসায় কিছু গেস্ট আছে,ওরা না তোর এই মহান কীর্তি জেনে গেছে সবাই।তোর ডেড কে এই বয়সে শেষ করে দিলি তুই এভাবে…….ছিঃ।।আর তোর কি মনে হয়??পরশ জানবে না??বোকা তুই…..বড্ড বোকা…..জেনে গেছে পরশ এতক্ষণে….কি জবাব দিবি ছেলেটাকে???রেজেস্ট্রি হয়ে গেছে তোর সাথে……স্বামী হয় তোর.???কি করবি এখন তুই???এখন সাড়ে বারো টা রাত পোহালেই বাজনা বাজার কথা যদি বন্ধ করে দেয় সব??তখন???স্বামীর বাড়ি পা রাখা আর হবে না তোর……”

দরজা খুলে বেরিয়ে যায় রিদির মা।
চোখের পানিতে সাগর বানিয়ে ফেলছে,এক অসহায় মা।
রিদি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।যদি পরশ ওকে ছেড়ে চলে যায়,তাহলে তো ও মরে যাবে।
“না না পরশ তো বলেছিলো,যাই হোক না কেনো সে আমাকেই ভালোবাসবে।
আমি তো সাদাদের সাথে রাত কাটাতে আসি নি।আমি তো দেখতে এসেছিলাম আর কি থেকে কি হয়ে গেলো।
নৌশিন যদি সাদাদের বউ হয়।তাহলে আমিও তো পরশের বউ।নৌশিন কি সাদাদকে বিশ্বাস করবে???
আমার পরশকো যদি কখনো এভাবে কারও সাথে দেখতাম তাহলে আমি কি বিশ্বাস করতাম ওকে???
হয়তো না….
তাহলে নৌশিন কি করবে???

ও কি???”
ওয়ালিদ আর নিপা রোমে আসায় কথা বন্ধ করে রিদি।
ওয়ালিদ রেগে আগুন হয়ে আছে।নিপা ওয়ালিদের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসেছে।আটকানোর চেষ্ঠা করেও পারে নি।
“ওয়ালিদ,প্লিজ…..”
নিপা হাত ধরে ফেলে ওয়ালিদের।যেনো রিদির কাছাকাছি না যায়।
ওয়ালিদের রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেছে….নিপাকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে,রিদির কাছে গাঁয়ে গালে ঠাসসস করে থাপ্পর বসিয়ে দিলো।
তাল সামলাতে পারে নি।

ছেলে মানুষের হাত যে শক্ত।তাদের হাতের সর্বশক্তির থাপ্পরে কি একটা মেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নাকি।
পরে যায় রিদি,ড্রেসিং টেবিলের কোণায় লেগে থুতনী কেঁটে গেছে।
আবারও টেনে তুলে এক,দুই না চার চারটা থাপ্পর লাগায়।
নিপা বারবার ওয়ালিদের হাত ধরেও কোনো লাভ হয় নি।
আর রিদিও কোনো চিৎকার করছে না এতো ব্যথা পাওয়ার পরও।শুধু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েছে।
যে ভাইয়াকে কোনো দিন শরীরে একটু টোকাও দেয় নি।
সে ভাইয়া আজ এতো মারছে।
মোট পাঁচ থাপ্পার।গাল দুটো সাথে সাথে ফুলে গেছে রিদির।
প্রথম থাপ্পরের চোটে থুতনী তো কেটেছেই পরের চার রা থাপ্পরও বেশ জোরে লেগেছে।নাক দিয়ে রক্তও পড়েছে।
আরও একটা থাপ্পর লাগাতে যায় ওয়ালিদ।আর সে মুহুর্তে রিদির সামনে এসে দাঁড়ায় নিপা।
থাপ্পর টা নিপার গায়েই লাগতো যদি না ওয়ালিদ ঠিক সময়ে হাত টা আয়ত্তে না আনতো।তাহলে হয়তো এ জীবনে বউয়ের গায়ো হাত তুলাও হয়ে যেতো।

“কি হলো??থামলে কেনো??মারো…..”
“নিপা!!!!!”
“কি হ্যাঁ???পাগল হয়ে গেছো তুমি???কিভাবে মারছো তুমি মেয়েটাকে??”
“মারছি??ওকে তো মেরে ফেলে উচিত।ও আমার বোন না…..আজ থেকে আমি ভাববো আমার বোন মরে গেছে।আমার একটা বোন ছিলো কিন্তু আজ মরে গেছে সে।দাফন দিয়ে দিলাম তাঁকে আমি…..”
রিদি ঢুক গিয়ে তাঁকায় ওর ভাইয়ের দিকে।কি বলছে ওর ভাই!!!বোন মরে গেছে!!!
আর দাঁড়ায় নি ওয়ালিদ।
চলে আসে।আর আসার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে বলে,

“শোন,আজ থেকে ভুলে যাবি;ওয়ালদি নামের কেউ তোর ভাইয়া ছিলো।মনে কর তোর ভাইয়া কোনো দিন বেঁচেই ছিলো না।আর যে ছিলোই না সে বর্তমান হবে কি করে??সো ওয়ালিদ মরে গেছে তোর জন্য,তোর জন্মের অনেক আগে।হ্যাঁ মরে গেছে,এতোদিন তুই তোর মৃত্য ভাইয়ের সাথে সময় কাটিয়েছিলি।আর আজ থেকে মৃত্য ভাইটাও হারালি….আমি তোর কেউ না।আর না তুই আমার ছোট বোন…….”
“ভাইয়া!!!!!!”
“চুপপপপপ…….আমার বোনকে কবর দিলাম আমি……বোন বেঁচে নেই আমার…….”
থমকে যায় রিদি।দু কদম পিছিয়ে যায়।পৃথিবী টা এমন কেনো???
সময় এতো বেঈমান???
কত বছর কত কিছু হলো।
কত আবেগ ছিলো।আর সব আবেগ যখন মরে গেলো,ঠিক তখন????সবার চোখে ধরা পড়লো……কেনো হলো এমন??

ফ্লোরে বসে পড়ে রিদি।
চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
নিপাও পাশে বসে।
কি বলবে ও??
কি বলার আছে ওর।
আজ যে ওর জন্যই ওর ভাইকেও এতো কথা শুনিয়ে গেলো নৌশিনের ভাই।
আজকে যে ওর জন্যই নৌশিনের অবস্থা এত বিপন্ন।
আজকে যে ওর জন্যই ছোট্ট ভাইয়ের ওরশজাত ছোট্ট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জাইগোট কষ্টের শিকার।
তবুও সব কিছু ফেলে নিপা হাত রাখে রিদির কাঁধে।
জড়িয়ে ধরে রিদি নিপাকে।
হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

অনেক চেষ্ঠার পর নিপা সক্ষম হয় রিদিকে শান্ত করাতে।
বিছানায় বসিয়ে গ্লাস টা বাড়িয়ে দেয় পানি খাওয়ার জন্য।
ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো রিদি।
দুটো গাল ভীষণ রকম ফুলে আছে।দুপাশেই ওয়ালিদের আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে।
নিপা ফাস্ট এইড বক্স টা এনে,থুতনি আর নাক পরিষ্কার করে দিলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“যদি ভালোই বাসতে আমার ভাই টাকে তাহলে আগে বলো নি কেনো???ওর বিয়ের আগে তো আমাদের জানাতে পারতে……আর কাউকে না হোক আমাকে একবার বলে দেখতে…….”
“ভাবী,সাদাদ তো আমাকে কখনো ভালোবাসতো না…….”
“নৌশিনকে যে…..”

“হ্যাঁ…ভাবী….হ্যাঁ….ওর সব টা জুড়ে শুধু নৌশিন।কিন্তু ভাবী বিশ্বাস করে আমি আগে সাদাদের সাথে যা যা করেছি নিজের ইচ্ছা করেছি,নৌশিনের ক্ষতি পর্যন্তও নিজের ইচ্ছায় করেছি।ভাবী,তুমি বিশ্বাস করো,আমি সাদাদকে ভালোবাসতাম……সত্যি ই পাগলের মতো ভালোবাসতাম….কিন্তু এখন সে ভালোবাসা অন্য কারও হয়ে গেছে ভাবী।আমি আজ সাদাদের বুকে মাথা রেখে জাস্ট একটা জিনিস ই বুঝতে চেয়েছিলাম;পরশেরর বুকে মাথা রাখলে আমার যে সুখ হয় সাদাদের বুকে মাথা রাখলে সেটা হয় কিনা??ভাবী,তুমি ই বলো আমিও তো একটা সময় সাদাদকে ভালোবাসতাম।আমি চাইলে আগেও তো ওর বুকে মাথা রাখতে পারতাম ওর ঘুমন্ত অবস্থায়।কিন্তু আমি তো কখনো ওর অচেতনতার সুযোগ নেই নি…..আর আজ যখন…..সাদাদের বুক থেকে মাথা তুলতে নিলিয়েই সাদাদ নৌশিন ভেবে আমাকে জড়িয়ে ধরে…..আমি ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছিলাম আর ঐ সময়…..”

প্রেমঘোর পর্ব ৮৯+৯০

আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে রিদি।
নিপা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
দাঁড়িয়ে যায় বসা থেকে…..চলে আসতে নিলে দরজায় চোখ পড়তেই থমকে যায়।
কি হবে এখন??
স্বয়ং পরশ যে দরজায় দাঁড়িয়ে….

প্রেমঘোর পর্ব ৯৩+৯৪