প্রেমতৃষা পর্ব ২৯ (২)

প্রেমতৃষা পর্ব ২৯ (২)
ইশরাত জাহান জেরিন

আজ সারাদিন ধরে বৃষ্টি। শিমলার সঙ্গে মাঝে অনেকদিন কথা হয়েছে। কয়বার বলল, ‘দেখ তৃষা তুই প্রেম ভাইকে ভালোবাসিস। খালি খালি প্রত্যুষকে বিয়ে করে কি প্রমাণ করতে চাইছিস?’ তৃষা জবাবে কেবল বলেছে, ‘কিছু না। আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে আমি কেবল সুযোগ নিচ্ছি। একদিন না একদিন তো প্রেম ফিরবেই। সেও তো ডিজার্ব করে আমার সুখ দেখার। ‘

কিন্তু একমাত্র তৃষা জানে সে কেন বিয়ে করছে? কেন রাজি হয়েছে। তার সামনে নতুন জীবন শুরুও হতে পারে কিংবা মৃত্যু দরজায় কড়া নাড়তেও পারে। দেখা যাক কি হয়। তৃষা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । আজকে সুন্দর করে মন মতো এতদিন পর সেজেছে। লাল একটা বেনারসিও পড়েছে। বহুদিনের ইচ্ছে ছিল নিজের বিয়েতে লাল টুকটুকে বউ সাজবে। বিয়ের সাজ নিজের হাতে করা। ইচ্ছে আজ পূরণ হয়েছে। বাইরে তখনো বৃষ্টি। নিচে বাড়ির মানুষ বসে আছে। কাজী বোধ-হয় এসেছে। প্রেমা এতক্ষণ এই ঘরেই ছিল। তৃষা তার ভাবী হবে ভাবতেই অবাক লাগছে। যাক এতদিনে একটা বউ তাহলে এই বাড়িতে আসছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তৃষা আয়নায় একবার নিজেকে দেখে বারান্দার দিকে তাকায়। এই ঘরে প্রেম আর তার কত স্মৃতি। সব স্মৃতি চাপা দিয়ে আজ অন্যের হবে ভাবলেই বুকটা চিলিক পেরে ওঠে। তৃষা ফোনে চেক করল। একটু আগে একটু দুঃখ জনক খবর পেয়েছে। আঁধারের যেই কনসার্টটা হবে বলেছিল তার সময় এখন পিছানো হয়েছে। ভালো লাগছে না তৃষার। সে আঁধারের গাওয়া একটা গান ছাড়ল। এই কণ্ঠও তাকে ঘুমাতে দেয় না, খেতে দেয় না,ভাবতেও দেয় না। দু’জন ভিন্ন মানুষের কণ্ঠ এক হওয়া কি সম্ভব? আবার দু’টো মানুষ কি একই হতে পারে? কেমন করে হুবুহু প্রেম আর আঁধারের একই গলা? প্রথম যেদিন প্রেমের গলায় গান শুনেছিল মনে হচ্ছিলো এই যে যার গান রাতে ছেড়ে না ঘুমালে ঘুম হয় সেই মানুষটা চোখের সামনে বসে আছে। তৃষা কানে এয়ারপড গুঁজে চোখ বন্ধ করে আঁধারের গলা অনুভব করতে লাগল। চোখের কোণে তার জল। চোখটা বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে প্রেম নামক মুখটা। তবে এই চোখের জল এখন আর তাকে না পাওয়ার আফসোস নিয়ে না বরং তাকে ঘৃণা করার তীব্র জিদের ফলে বইছে। গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৃষাও গায়,

~নীল অন্ধকার প্রেম বারে বার
এই বুকে ঢেউ তুলে
বাঁধভাঙা সুখ, লাজে রাঙা মুখ
দোলে স্বপ্নেরই কোণে
প্রেম আমার ওওওও প্রেম আমার~
হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ একজন তারই সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাইছে। একেবারে তার পেছন বরাবর দাঁড়িয়ে। পুরুষালী কণ্ঠটা একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। তৃষা পেছনে তাকাতের আগেই পেছন থেকে এক জোড়া হাত রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরল। বুঝে উঠার আগেই চোখের পাতা দু’টো এক হয়ে গেল।

ঘড়ির কাঁটায় কয়টা বাজে কে জানে। তৃষা যখন চোখ দু’টো পির পির করে খুলল তখন বাইরে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি। ত্ষা শুনেছিল নতুন একটা ঘূর্ণিঝড় আসছে। তারই কারনে সারা দেশে বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল। তৃষার মাথাটা ঝিমঝিম করছে। সে নিজের শরীরের দিকে তাকায়। লাল বেনারসিটা এখনো গায়ে জড়ানো। এখনো বুঝতে পারছে না সে এখন স্বপ্ন দেখছে নাকি আগে যা দেখেছিল সেটা তার স্বপ্ন ছিল? সাদা বিছানাটার দিকে একবার তাকিয়ে রুমটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। অদ্ভুত কালোরঙা ডিজাইন ঘরটার। কি সুবিশাল। তৃষাদের পুরো বাড়িও তো এই রুমের সমান হবে না। তবে সে এখন কোথায় আছে? ঘরের একপাশে গানের সরঞ্জাম রাখা। একপাশের দেয়ালে ছোট ছোট গিটারের অ্যান্টিক জিনিসপত্র রাখা।

তৃষার চোখ গেল হঠাৎ সামনের দেয়ালে। দেয়াল বললেও ভুল হবে। কারণ দেখে মনে হচ্ছে কাঠের বাড়ি৷ সেথায় বিরাট একটা ফ্রেম বাঁধানো ছবি। ছবিটা তৃষার। কিন্তু তার ছবি এখানে কি করে? আর তার এই ছবি এখানে কি করে এলো? এটা সেই দিনের ছবি না যেদিন ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল? তৃষা সেদিন শাড়ি পড়েছিল। জর্জেটের ডার্ক মেরুন রঙের একটা শাড়ি। ওটাই তো ঝুলছে৷ তৃষা চারপাশে তাকানোর চেষ্টা করে। শরীর তার বড্ড বেশি খারাপ লাগছে। হঠাৎ কানে একটা গান এসে ঠেকতেই আঁটকে ওঠে বুক। আবারও চেনা সেই কণ্ঠ। এখনো মনে আছে বারান্দায় সে দাঁড়িয়ে গান শুনছিল।

ঠিক এই গানটাই শুনতে পেয়েছিল। আচমকা বারান্দায় চোখ যায় তৃষার। বাইরের দৃশ্য চোখে লাগল। ওমা কত উঁচুতে এই বাড়িটা? পাহাড়ের ওপর নাকি? মনে হচ্ছে এই তো কালো মেঘ গুলো ছুঁতে পারবে। বারান্দায় উল্টো পাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লম্বায় চওড়া একজন মানুষ। মেয়ে নাকি ছেলে বুঝতে পারছে না তৃষা। তবে ছেলেই যে হবে বুঝতে পারছে। কারণ মেয়েদের শারিরীক গঠন তো আর ওইরকম হয় না। লোকটি গান গাইতে গাইতে পেছন ফিরে। বারান্দার দরজা লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। মুখটা তৃষা দেখতে পাচ্ছে না। মুখে যে একটা কালো মাক্স পড়া। কি করে দেখবে? তৃষার ভয় হচ্ছে। তবুও সে সাহস করে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনি?’

প্রেমতৃষা পর্ব ২৯

লোকটি কাছে এগিয়ে এলো। একেবারে তৃষার নিশ্বাসের শব্দ যত কাছে গেলে শোনা যায় ঠিক তততাই কাছে। তৃষার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উচু করে তাকে বলল, ‘ একজনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা? আই মিন ধোঁকা?’ লোকটি তৃষার চুলে হাত দিতেই তৃষা খানিকটা দূরে সরে গেল। তাতে লোকটি বোধ-হয় খুব বিরক্ত হলো। নইলে কি সে তৃষার চুলের মুঠি ধরে তাকে নিজের আরো কাছে টেনে আনে? সে দাঁত পিষে বলল, ‘কোন পদ্ধতিতে এই ছোট্ট শরীর থেকে জানটা বের করলে তুমি কষ্ট কম পাবে সোনা? ডোন্ট ওয়রি বেবস, আই উইল বি জেন্টল।’

প্রেমতৃষা পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here