প্রেমসুধা পর্ব ৪৯
সাইয়্যারা খান
বাইরে আলো ফুটেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির কলকাকলি। তৌসিফ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই ফজর পড়ে পৌষ’র স্যালাইন খুলে ঘুমালো ও। মাথাটা ভো ভো করছিলো যেন। ক্যানোল খুলতে গিয়ে এই ভোরে ভালোই হ্যাসেল হলো। পৌষ খুলতে দিবে না। ব্যথায় হাত ফুলে উঠেছে। নার্স ভয়ে ভয়ে পাইপ ধরার আগেই পৌষ চিৎকার করে উঠে। এদিকে তৌসিফ চোখ গরম করে বউ ধরে আছে। তায়েফাও ছুটে এসেছে। ঘন্টা তিন এক আগে কি এক ঘটনাই না ঘটে গেলো।
কত কষ্টে ঘুমালো পৌষ অতঃপর বিদায় নিলো তায়েফা। তৌসিফ তখন থেকেই দরজা লক করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। পৌষ’কে যে বুকে নিবে সেই সুযোগটা ছিলো না। হাত ফুলে তার ব্যাঙ হয়ে আছে। তৌসিফ হতাশ! বড়ই হতাশ। দুধের স্বাদ সে ঘোলেও মিটাতে পারছে না। কলিযুগ চলমান বোধহয়।
দরজায় অতি ক্ষীণ শব্দ হচ্ছে। যেই নক করছে সে খুব ভয়ে ভয়েই করছে কাজটা। পৌষ সজাগ হলো। চোখ দুটো যেন কাঠাল গাছের আঠা দিয়ে লেগে আছে। খোলা বড় দায়। পৌষ টেনে খুললো৷ উঠে বসে ক্লান্ত অনুভব করলো। জামাটা কাঁধের উপর টেনে গায়ে ওরনা দিতে গিয়ে দেখলো ওরা তৌসিফের মুখের উপর। বউয়ের ঘ্রাণ নিতে বেচারা এই পাঁয়তারা গ্রহণ করেছিলো।
পৌষ তা গায়ে দিয়ে উঠে গেলো৷ দরজা খুলতেই দেখা মিললো নার্সটির। সে পৌষ’কে দেখে ভেতরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। পৌষ না বুঝে প্রশ্ন করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— কিছু খুঁজছেন?
নার্সটি চমকালো। উত্তরে বললো,
— ইয়ে মানে…. আপনার খালি পেটে ঔষধ ছিলো ম্যাম।
— ওহ।
ছোট্ট উত্তর দিলো পৌষ অতঃপর বললো,
— মুখ ধুঁয়ে আসছি। যান।
— স্যার….
তাকে শেষ করতে না দিয়ে পৌষ বললো,
— উনি ঘুমাচ্ছেন। যান আপনি।
— না মানে ম্যাম….
— আজব তো! বললাম না ঘুমাচ্ছেন। তার সাথে কিসের কাজ আপনার। যান আপনি।
আচমকা পৌষ ধমকে উঠতেই নার্স তড়িঘড়ি করে চলে গেলো। জামাই নিয়ে পৌষ বড় সেনসিটিভ। এতটা সেনসেটিভ সে কিছু নিয়ে না। জামাই তার কলিজার টুকরো। কলিজার ভিতর আদর যত্নে তাকে পুষে রাখে পৌষ। তার বিয়োগ শোকে আজও পৌষ সুচের খোঁচা খাচ্ছে। এদিকে যদি ঘরের ভিতর ছুঁকছুঁক করা মেয়ে মানুষ থাকে তাহলে কি সহ্য হয়?
মুখ, হাত ধুঁয়ে পৌষ বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে ফর্সা সেই পুরুষ কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতেও ভুলে নি ও।
আজ নিজ হাতে নাস্তা বানাবে পৌষ। তার জামাই উঠে নিশ্চিত খুশি হবে। এর অবশ্য একটা কারণ আছে। হেমু ভাইয়ের ছেলে হয়েছে। শ্রেয়া’র শরীর অসুস্থ তাকে দেখতে যাবে পৌষ। একটু থাকার বায়নাও করবে। আগেই জামাইকে আদর যত্ন করলে এতে সুবিধা হয়। না করতে সে বার দুই ভাববে।
কাক ডাকা ভোরে উঠেছে সোহা। রুটি গুলো ভাজতে আজ দেড়ী হয়েছে তার। মেহেদী বেরিয়ে যাবে। তাকে না খায়িয়ে পাঠালে সোহা’রই খারাপ লাগবে। গতকাল না খেয়েই ছুটেছে মানুষটা। সোহা’র খারাপ লেগেছে। সেই খারাপ লাগাটা বেড়েছে যখন শাশুড়ীও নারাজ হয়ে কথা বলে নি। দশ, পনেরো দিনের সংসার। সোহা সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। হোঁচট খাচ্ছে বারবার। কোথায় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আচ্ছা, গতকাল দেড়ীটা কার জন্য হলো? মেহেদী যদি সকাল সকাল পাগলামি না করতো তাহলে তো দেড়ীটা হতো না। এই কথা সোহা’র মন চাইলো শাশুড়ীর মুখের উপর বলে দিতে কিন্তু আফসোস শুধু মাত্র মেহেদীর কথা ভেবে সে কথাটা বলে নি। মানুষরা বাসর রাতেই তাকে বলেছে মা-বাবার সাথে যাতে সোহা ভালো আচরণ করে। এর বাইরে সহ্য করবে না মেহেদী। সোহা’র চোখ ভিজে উঠে। আলু ভাজিটা প্লেটে বেরে দৌড়ে ছুটে আসে টেবিলে। চারজন বসার মতো ছোট্ট একটা কাঠের টেবিল। সোহা চারটা রুটি রেখেই দৌড়ে গেলো মেহেদী’কে ডাকতে। মেহেদী তখন তারাহুরো করে টাই বাঁধছে। সোহা এগিয়ে এসে ব্যাগ গুছিয়ে দিলো। মেহেদী টেনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আজ তারাতাড়ি ফিরব। শুনো নীল শাড়ীটা যে দিলাম না পরসু ওটা পরবে। চুল যেন ছেড়ে রেখো না। আজ বোনাস পাব। সেটা দিয়ে শুধু ঘুরব আমরা। তোমায় নিয়ে আজ প্রেমপ্রেম খেলা খেলব। সারারাত রাস্তায় হাঁটব। তোমায় আজ অনেক ভালোবাসব।
সোহা’র ক্লান্তি হারিয়ে গেলো। চোখ দুটো খুশিতে ছলছল করে উঠলো। এই সংসারটায় টাকার সংকট হলেও মেহেদী থেকে ভালোবাসার সংকট এখনও দেখি নি সোহা।
মেহেদী চলে গেলো দ্রুত পায়ে। সোহা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে রান্নাঘরে গেলো। ঝটপট হাতে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রাখতেই ওর শশুর এলো। মাত্রই হেঁটে এসেছেন উনি। রোজ সকালেই যান। ডায়াবেটিসের সমস্যা। লোকটা ভালো। সোহা’কে আদর করে। “মা” বলে ডাকে। সোহা অবশ্য বাবা’র ভালোবাসা পায় নি কখনো।
পানিটা টেবিলে রাখতে রাখতে সোহা বললো,
— বাবা, চা দিব এখন?
— না মা। আলুভাজিই খাব আগে।
সোহা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে বলার চেষ্টা করলো,
— আপনি আলু খেয়েছেন শুনলে…..
বাকিটা বলার আগেই ওর শাশুড়ী এগিয়ে এলো। বসতে বসতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— খেতে চাইছে খাক। ডায়াবেটিস বাড়ুক একবার।
শশুর বউয়ের কথা শুনলো না। মুখে রুটি পুরতে পুরতে সোহা’কেও বসতে বললো। সোহা শাশুড়ীকে রুটি দিয়ে নিজে গিয়ে চা এনে অতঃপর বসলো। শাশুড়ীর মুখ গম্ভীর। তার ভাবসাব বুঝে না সোহা।
তায়েফা বাইরে এসেই জোরে এক ধমক লাগালো পৌষ’কে। আচমকা ধমকে যেন পৌষ’র বুকটা এখনও লাগাচ্ছে। এরা ভাই-বোনগুলো এমন কেন পৌষ বুঝে না। ধমকে অবশ্য ভয় পেয়েছে। তায়েফা’কে দেখে এই মুহুর্তে তার ভালোই ভয় লাগছে। শাশুড়ী ছাড়া সংসার পৌষ’র ননাস তো আগেই। না জানি পৌষ তোর কপাল পুড়লো। জামাইকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সিংহ থেকে বিড়াল বানালেও ননাস পোষ মানাবে কিভাবে? পৌষ’র জানা নেই। ওর মনে হচ্ছে তায়েফা এসেই ওর চুল টেনে ধরবে। পিঠে চার পাঁচটা পরতেও পারে। তায়েফা এসেই পৌষ’র হাত ধরে বের করলো রান্নাঘর থেকে। রাগী কণ্ঠে ধমকালো,
— কি করছিলি ওখানে? এই তোর লজ্জা নেই। রাতভর কাঁতরেছিস জ্বরে। উঠেই আবার এখানে এসেছিস!
পৌষ মাথা নিচু করে রাখলো৷ তায়েফা বুঝলো হয়তো ধমকটা বেশিই জোড়ে ছিলো। আস্তে করে পৌষ’র হাত ধরে সোফায় বসিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
— সোনা, তুই অসুস্থ। এসব করতে কেন এসেছিস? বুয়া আছে তো।
— উনি আমার রান্না পছন্দ করে আপা।
— তোর উনি তোর রান্না থেকে বেশি তোকে পছন্দ করে পা’গল। তোকে অসুস্থ দেখে ও নিজেই ভেঙে গিয়েছে। শক্ত মনের ভাইটা আমার একদম বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ওর সাথে সাথে থাক। ভালো লাগবে দু’জনেরই।
— তার মন ভালো করতেই তো রান্না করছিলাম।
মিনমিন করে কথাটা বলে পৌষ। সেই মুহুর্তেই ডাক এলো তৌসিফে’র। পৌষ ঝট করে উঠলো। অনুমতি নেয়ার ভঙ্গিতে বললো,
— আপা, যাই?
— যাহ।
তায়েফা হেসে ফেললো। দুই জামাই-বউই পা’গল। একটা কঠিন শিলাকে পৌষ কিভাবে এতটা নরম বানালো তা ঠিক ঠাওর করতে পারে না তায়েফা। সে মন থেকে দোয়া করে তার এই ভাইটা সুখী হোক।
পৌষ দেখলো বিছানায় শুয়ে শুয়েই তৌসিফ ডাকাডাকি করছে। কপাল কুঁচকে পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
— কেন ডাকলেন?
তৌসিফ উল্টো ছিলো। সে সোজা হয়ে শুয়ে বললো,
— কাছে এসো।
— একদমই না। উঠুন।
— তুমি বাইরে কি করছো?
— ট্যাডাং ট্যাডাং করে নাচছিলাম। আপনিও আসুন। একসাথে নাচি।
বলেই হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পৌষ। তৌসিফ ওর হাত ধরে কাছাকাছি আনে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
— আমার ঘুম হারাম করে তুমি ভালোই আনন্দে আছো।
— কই?
— দেখতে পাচ্ছি।
— কানা আপনি।
— তাই নাকি?
— হু।
তৌসিফ আরেকটু দূরত্ব ঘোচাতেই পৌষ মুখ সরালো। পিতপিত করে বললো,
— খাচ্চর ব্যাটা! নো ব্রাশ, নো উম্মা!
— ইয়েস উম্মা।
— ইয়েস ব্রাশ।
— ফাস্ট উম্মা।
লাভ অবশ্য হলো না। পৌষ উঠে দাঁড়ালো। রুমের পর্দা গুলো মেলে দিয়ে বললো,
— শুনুন না।
— বলুন না হানি।
— আজ না….
— আজ কি?
— বাইরে যাব।
— কারণ?
— হেমু ভাইর ছেলে হলো তো। ভাবীও অসুস্থ। আমি দেখতে যাব।
— একা যাওয়া নিষেধ।
— একা কেন যাব আমি? জামাই নিয়ে যাব। আপনিও চলুন।
— সমস্যা আছে একটা।
পৌষ ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
— এখানে আবার কিসের সমস্যা?
— ওবাড়ী ঢুকলেই তুমি বেরুতে চাও না। খুবই বিরক্ত লাগে।
পৌষ বিড়াল পায়ে এগিয়ে এলো। পেশি বহুল বাগুতে মাথাটা এলিয়ে পৌষ বললো,
— প্লিজ যাব। সত্যি বলছি বায়না করব না।
তৌসিফ ওর মাথায় হাত রাখে। অসন্তোষ গলায় বলে,
— এই চুলগুলো আমার ভীষণ পছন্দের। তুমি জানো। আমার অনুপস্থিতিতে তাদের যত্ন নিলে না।
— ভালো লাগে না।
তৌসিফ উঠে গিয়ে তেলের বোতল নিলো। বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কিছুক্ষণ পরই ফিরলো গরম তেলের বাটি নিয়ে। পৌষ’কে অবাক করে দিয়ে ওর চুলে তেল লাগালো তৌসিফ। নিজ হাতে অতি যত্ন সহকারে কাজটা করে তৌসিফ। আগা থেকে আঁচড়ে দেয় আলতো হাতে। একটা চুল উঠলেও যেন তার কলিজায় লাগে।
তায়েফা দরজায় নক করতেই তৌসিফ বলে উঠলো,
— আপা? গুড মর্নিং। ভেতরে এসো না।
তায়েফা রুমে ঢুকলো। আগে এই রুমটায় ঢুকার অনুমতি থাকতো না। পিয়াসী পছন্দ করতো না একদমই। তায়েফা দেখলো পৌষ ঠোঁট উল্টে আছে। তায়েফা বসতে বসতে প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে? মুখটা চোখা কেন?
— তেল ভালো লাগে না আপা।
পৌষ উত্তর দিলো। তৌসিফ চপচপা করে তেল দিয়ে বললো,
— চুলগুলো আঠা আঠা হয়ে জট পাকিয়ে আছে।
— তাতে কি? সাধু বাবা হয়ে যেতাম আমি।
মাথায় একটা চাটি পরতেই পৌষ চুপ রইলো। তায়েফা মনে মনে হাসলো। তৌসিফ বউয়ের দুষ্টামিতে এতটা শান্ত থাকে। মানা যায় এসব?
তৌসিফ উঠে বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
— দুপুরে শ্যাম্পু করে দিব। একটু সুস্থ হও। স্যালোন যাওয়া দরকার আমার সাথে তোমারও।
পৌষ মুখ ভেঙালো। ওসব স্যালোন ফ্যালোন তার সাথে যায় না। এসব মূলত পৌষ ততটা কোনদিনই পছন্দ করে নি। তাই তো উল্টো এক ব্যাপার ঘটলো। তার কপালে জামাই জুটলো একদম টিপটপ ধরনের।
তায়েফা উঠতে উঠতে বললো,
— বাইরে বসছি। আয় দু’জন।
— বসুন না আপা।
— আড্ডা দিব তো। সারাদিন আছে।
পৌষ মাথা নাড়ে। তৌসিফ সবেই উদাম গায়ে বের হলো ওমনই দেখা গেলো দরজায় হাজির নার্স। পৌষ’র নজর পরতে দেড়ী কিন্তু হামলে তৌসিফে’র উপর পরতে দেড়ী হলো না। নিজের ফিনফিনে শরীরটা দিয়ে সুঠাম দেহের তৌসিফ’কে ঢাকতে ঢাকতে বললো,
— কি চাই?
বেশ খ্যাকিয়েই বলেছে পৌষ। নার্সটি লজ্জায় লাল হওয়ার ভান ধরেছে। পৌষ’র গা, পিত্তি জ্বলে উঠে। চোখ, মুখ খিঁচে বলে উঠে,
— বেহায়া, নিলাজ, ফুটা চোখের নার্স। কি চাই! যান এখান থেকে। বাড়ীর বাইরে যাবেন একদম। আমার জামাই এর দিকে নজর দিবেন না। লজ্জা লাগে না?
নার্সটি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। মাথা নামিয়ে নিতেই পৌষ পুণরায় বলে উঠলো,
— যান!
তৌসিফ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে। গম্ভীর কণ্ঠে নার্সকে বলে,
— বাইরে অপেক্ষা করুন। আসছি আমি।
নার্স যেতেই পৌষ’র মুখ ছাড়ে ও। পৌষ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
— এটাকে বিদায় করুন। আমি সুস্থ। শা*লী! কত্ত বড় কলিজা আমার জামাইকে নজর দেয়। আজ তো বৃহস্পতিবার, আসুন তো শুকনো মরিচ পুড়ে দেই। নজর লাগলো বলে।
তৌসিফে’র ঠোঁট চওড়া হলো। এক হাতে পৌষ’কে বুকে টেনে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— ওহহো আমার তোতাপাখি, তুমি কত কথা বলো।
তৌসিফের হাসির দাপটে চোখে পানি চলে এলো। পৌষ বুকে মুখ গুজে মিনমিন করে বললো,
— ওকে তাড়িয়ে দিন। বদ নজরে দেখে আপনাকে। আমার সহ্য হয় না।
— আচ্ছা।
— সত্যি তো।
— তিন সত্যি।
বিকেল নাগাদ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সোহা। শাড়ীটা বের করেছে। একটু পরই তৈরি হবে ও। চোখ বুজে কল্পনা করে ও। ভাবছে মেহেদী’কে আজ আবদার ধরে জানাবে মিনুর কথা। ছোট্ট মিনু তার হৃদয়ের অনেকটা জুড়ে। কতটুকুই বা খায় ও। এখানে থাকবে ওর আপার কাছে। পেলেপুষে বড় করলো সোহা।
উঠে শাড়ীটা হাতে নিতেই চিৎকার শোনা গেলো। দৌড়ে এসে সোহা হা হয়ে গেলো। বাথরুমে পা পিছলে শাশুড়ী পরে আছে৷ সোহা বাড়ীতে এখন একা। টেনে তুলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন উনি।
সোহা কোনমতে তাকে নিয়ে ছুটলো পাশের ক্লিনিকে।
প্রেমসুধা পর্ব ৪৮
খবর পেয়ে দৌড়ে মেহেদী আর ওর বাবা এলো। ভালোই চোট পেয়েছেন উনি। হাতে মেহেদীর বোনাসের টাকা। মায়ের ঔষধ আর ভিজিটে সবটা চলে গেলো। সবটা অবশ্য না। হাজার টাকা আছে এখনও। মধ্যবিত্তদের এমন হুটহাট খরচ এলে খেই হারাতেই হয়। তারা মানিয়ে চলা জানে। ছোট থেকে শিখে এসেছে।
সোহা মেহেদীর দিকেই তাকিয়ে রইলো। আজ না ঘুরতে যাওয়ার কথা? তাদের প্রেম করার কথা? আচ্ছা, সোহা কি স্বার্থপর হচ্ছে নাকি তার চাওয়াটা ভুল?