প্রেমসুধা পর্ব ৫৩

প্রেমসুধা পর্ব ৫৩
সাইয়্যারা খান

— আমরা কোথায় যাচ্ছি?
তৌসিফে’র পায়ের শুকনো ক্ষততে লোশন লাগাতে লাগাতে প্রশ্নটা করে পৌষ। ক্ষতটা শুকালেও দাগ যাচ্ছে না। তারমধ্য তৌসিফ প্রচুর খুঁতখুঁত স্বভাবের। দাগ নিয়ে খুবই চিন্তিত৷ কাঁচ দিয়ে কাটা দাগ যাচ্ছেও না সহজে। ডারমাটলজিস্ট দেখিয়ে এই লোশনটা আনানো হয়েছে দাগ যাওয়ার জন্য।
পৌষ পা ছেড়ে পিঠের দাগের দিকে এগিয়ে এলো। তৌসিফ উত্তর দিলো,
— আস্ট্রেলিয়া।
পৌষ’র মাঝে কোন উত্তেজনার দেখা মিললো না। তৌসিফ এতে খানিকটা অবাকই হলো। এমনটা হওয়ার কথা না। পৌষ হচ্ছে চঞ্চলা এক প্রাণ। তার তো ঘুরতে যাওয়ার কথা শোনা মাত্রই খুশিতে লাফানো উচিত ছিলো। তৌসিফে’র গলা জড়িয়ে শপিং এর বায়না করার কথা ছিলো কিন্তু এমন কিছু হচ্ছে না বরং মনে হচ্ছে খানিকটা বিরক্ত ও। তৌসিফ ওর হাত ধরে নিজের কাছে টানে। হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করে নরম স্বরে,

— মন খারাপ?
— না তো।
চোখ দুটো পিটপিট করে পৌষ। তৌসিফ ওকে চেনে। জানে। পুণরায় জিজ্ঞেস করে,
— কি হয়েছে হানি? আরেন্ট ইউ হ্যাপি?
— এত দূর গিয়ে কি হবে?
— হানিমুন পাওনা আমার। এখনও যাই নি। ঝামেলা কাল সব মিটি যাচ্ছে… তাই এই সপ্তাহের শেষ দিন যাচ্ছি৷ তোমার পাসপোর্ট রেডি।
— সব তো হয়েই গিয়েছে হানিমুনে গিয়ে কি হবে?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে পৌষ। তৌসিফ হেসে ফেলে। বউয়ের গাল দুটো টেনে কপালে আদরের সহিত হাত বুলায়। আজ অনেকদিন পরে তৌসিফ তার চিরায়ত থুতনির চুমুটা দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তোমাকে নিয়ে আমার আজীবন হানিমুন হবে পৌষরাত।
— দেশেই থাকি। সিলেট যাই? চা বাগানে? ওখানে গিয়ে চা পাতা আনব নে? নাহয় চলুন কক্সবাজার যাই? শুটকি আনব এত এত। আপনাকে ভর্তা বানিয়ে খাওয়াব।
তৌসিফ এবার এক টানে বুকের উপর নিলো ওকে। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আচ্ছা যাব।
— অস্ট্রেলিয়া ক্যান্সেল?
— উহু। বললাম না হানিমুন করব।

— টাকা এতই বেশি আপনার? দান করে দিন। কি দরকার যাওয়ার? ভালো লাগে না।
পৌষ মুখে বিতৃষ্ণা। তৌসিফ বুঝেও না বুঝার মতো আচরণ করে। নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
— গেলেই ভালো লাগবে। এখন ওখানে স্নো ফল হচ্ছে। ইউ উইল লাভ ইট হানি।
পৌষ’র ততটা হেলেদুল দেখা গেলো না। সে বুকে চুপ করে রইলো। তৌসিফ ওর চুলে হাত বুলায়। শান্ত স্বরে বলে,
— চুলগুলো ঝরঝরে হচ্ছে আবার। শ্যাম্পুটা কাজ করেছে তাহলে। এরপর থেকে চুলের অযত্ন আমি একদমই সহ্য করব না হানি।

— হুম।
তৌসিফ চুল ছেড়ে গালে হাত বুলায়। এই দফায় বলে,
— খাওয়া দাওয়ায় অমনোযোগী তুমি হানিই।
— এই খাই তো। আজ ডিম খেয়েছি কুসুম ছাড়া।
ফটাফট উত্তর এলো। তৌসিফ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— কুসুম ছাড়া?
— ফ্যাট তো।
— তাতে কি…..
বলতে গিয়েও থেমে গেলো তৌসিফ। নিশ্চিত ডক্টর পরামর্শ দিয়েছে ফ্যাট কাট আউট করার জন্য। এজন্য উঠে পরে লেগেছে পৌষ। তৌসিফ খেয়াল করেছিলো রাতে খাওয়ার সময়ও গরুর ভুনাটা পৌষ খায় নি। হাজার বলেও খাওয়ানো যাচ্ছিলো না। যেই তৌসিফ নিজের প্লেট থেকে তুলে দিলো তখন গিয়ে খেলো। এমনি সময় খাবার তুলে দিলো পৌষ যতটা খুশি হয় আজ তা হয় নি। তৌসিফ চট করে ধরে ফেললো সবকিছু। এখনই সঠিক সময় পৌষ’কে বুঝানোর। তাই বুকে থাকা পৌষ’কে নিয়েই উঠে বসে তৌসিফ। সোনালী রঙের লাইট গুলো জ্বলে উঠে সুইস চাপতেই। ঝলমলিয়ে উঠে তৌসিফে’র বিলাসবহুল মাস্টার বেডরুম।
পৌষ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

— কি হলো?
তৌসিফ পৌষ’র হাত দুটো ধরে। এই প্রথম দৃঢ় কণ্ঠে চোখে চোখ রেখে তৌসিফ বলে,
— তখন বিকেলে আমি কিছুই বলতে পারি নি পৌষরাত। এরমানে এটা না যে আমি তোমার কাছে জবাবদিহি চাইব না। আমার অনুমতি ছাড়া কিভাবে বাইরে যাও তুমি? তাও আমাদের পার্সোনাল ব্যাপারে?
মাথাটা সহসা নামিয়ে নিলো পৌষ। বুকটা সমানতালের ছন্দপতন ঘটিয়ে এলোমেলো ছুটছে। তৌসিফ বুঝলো। ভয় পাওয়াতে চায় না সে কিন্তু একেবারে নরম স্বর আবার পৌষ বুঝবে না।
হাতে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে পুণরায় জিজ্ঞেস করতেই গড়গড় করে পৌষ বলে উঠলো,

— আম.আমি ভেবেছিলাম আমার কোন সমস্যা আছে তাই ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। আপনি তো বাবু চাইছিলেন তাই আমিও পিল খাই না কিন্তু তবুও….
— কে বলেছে তুমি পিল খাও না?
গভীর অথচ তীক্ষ্ণ প্রশ্ন। পৌষ আমতা আমতা করে বলে,
— খাই না তো।
— আমি খাওয়াই তো রোজ সকালে দুধের সাথে।
পৌষ যেন আকাশ থেকে পরলো। ও তো পিল ছেড়েছে যবে প্রথম তৌসিফ বাচ্চার কথা বলেছিলো। তৌসিফ’কে খুশি রাখতে সদা গতিশীল পৌষ। যেহেতু তৌসিফ খাওয়াবেই তাহলে পৌষ’কে কেন বলেছিলো বাবুর কথা? প্রশ্নটা অবশ্য করা লাগলো না। তৌসিফ নিজ থেকেই বললো,

— তোমাকে বাবুর কথা বলেছিলাম যাতে তুমি নিজেকে প্রস্তুত রাখো পৌষরাত আর কিছু না। আমার যদি ওতই তারাহুরো থাকতো তাহলে আমি নিজ থেকেই কনসালটেন্টের পরামর্শে যেতাম। তোমার শরীর দেখেছো? একেতো আয়রন ডেফিসিয়েন্সি তারমধ্য এবার গেলো ডেঙ্গু। আমি বউ মে’রে বাচ্চা নিব পৌষরাত? আমার সেন্স নেই? বিবেক নেই আমার? তুমি কোন সাহসে আজ ডাক্তারের কাছে গেলে? হাত লুকিয়ে আছো কেন? হাত সামনে আনো। সূচের খোঁচা ইচ্ছে করে খেয়েছো। এখন হাত নাড়াতে পারো না।
বলেই হাতটা টেনে ধরে তৌসিফ। পৌষ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তৌসিফ হাত ছাড়ে না। না ই নরম আচরণ করে। কত বড় সাহস একা একা গিয়ে টেস্ট করায় ও? পৌষ মিনমিন করে হাত ছাড়াতে চাইলেও তৌসিফ ছাড়ে না। পৌষ অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,

— ছড়ুন না। হাতে ব্যথা পাই তো।
— তখন পাও নি।
— আমি… আমি…
বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে উঠে ও। সেকেন্ডর ব্যবধানে তৌসিফে’র বুকটায় ঠাই হয় কিন্তু কণ্ঠ শক্তই থাকলো। পৌষ বুকে নাক ঘঁষে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
— মাফ করে দিন না। আর যাব না।
— যাওয়ার আগে মনে পরে নি।
— আমি শুধু আপনাকে খুশি করতে চাইছিলাম।
— আমি তোমাকে নিয়েই খুশি পৌষরাত। প্লিজ আমার কষ্ট বাড়িয়ো না।
পৌষ চুপ করে রইলো। তৌসিফ শক্ত হাতে ওকে বুক থেকে তুলে বললো,

— আমি তোমার নাড়ী নক্ষত্র চিনেছি পৌষরাত। আমার উপর যাওয়ার চেষ্টা করো না।
পৌষ মাথাটা নামিয়ে রাখলো। এই ভয়টা ও তৌসিফ’কে পায়। তৌসিফ ওর থুতনি ধরে মুখটা তুলে বললো,
— এই ভুল যাতে আর না হয়। মনে থাকবে?
— হুম।
— ঠিক করে বলো।
— মনে থাকবে।

তৌসিফ ওকে ছেড়ে উঠে গেলো। পৌষ আটকে রাখা শ্বাস ত্যাগ করে। নজর দেয় তৌসিফে’র দিকে। বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরিয়েছে সে। পৌষ’র চোখ দুটো ভরে উঠে। তৌসিফ এত কেন রাগ দেখাচ্ছে? সে কি বাচ্চা চায় নি? একবার না বরং কয়েকবার চেয়েছে। পৌষ কিভাবে বুঝতো ওটা কোনরূপ চাওয়া ছিলো? তার মাথায় তো অত গভীর ভাবনা ঢুকে না। ধপ করে মাথাটা বালিশে দিয়ে রাখে ও। যাবে না তৌসিফে’র কাছে। এত রাগ কেন দেখাচ্ছে? কি ই বা এমন করলো পৌষ?
মাথাটা বালিশে দিলেও তেমন একটা শান্তি পাওয়া গেলো না। পৌষ উঠে দাঁড়ালো। ভয় লাগছে তার তৌসিফে’র কাছে যেতে। বিয়ের পর ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা আছে তার। ঢোক গিললো পৌষ। পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হতে নেয়া মাত্র বারান্দা থেকে গম্ভীর কণ্ঠে শোনা গেলো,

— সাইড টেবিলে ব্রেড রোল ঢেকে রাখা আছে।
পৌষ অসহায় অনুভব করলো। তৌসিফ তাহলে ভেবেছে পৌষ’র ক্ষুধা লেগেছে। পা ঘুরিয়ে এই দফায় বারান্দায়ই যায় ও। তৌসিফ তখন দূরে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। পৌষ নিজেও তাকালো। ঘন কালো কুচকুচে চারপাশ। পুকুরটায় আবারও কচুরি জমা হয়েছে। পাশেই ইট পাথর দিয়ে কাজ চলছে। এই দিক দিয়েই বাজার। মেইন রোডের রাস্তা। ভ্রু উঁচু করে পৌষ ভাবে কতদিন বারান্দায় আসে না ও। বেশ ভালোই দিন হলো পৌষ এখানে আসে না তাই হয়তো এই কাজ ধরার ব্যাপারটা দেখে নি ও। ওখানকার গাছগুলো কি তাহলে কেটে ফেলবে? পৌষ ভাবুক হয়। আস্তে করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তৌসিফ’কে। তৌসিফ মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছাড়ে বাতাসে। ঠান্ডা বাতাস বইছে তখন। পৌষ’র লোম দাঁড়িয়ে গেলো। তৌসিফে’র সাথে আরেকটু লেগে যায় ও। খুক খুক কাশির শব্দ হতেই সিগারেটটা অ্যাশ ট্রে তে পিষে ফেলে তৌসিফ। যথাসম্ভব কাঁশি চাপে পৌষ যার দরুন চোখ দুটো লাল হয়ে উঠে ক্রমশ। তৌসিফে’র বুকের দিকে আরেকটু চেপে ধরে পিঠে ঠোঁট ছোঁয়াতেই তৌসিফ বলে,

— ভেতরে যাও।
— উহু।
— ঠান্ডা লাগবে।
— লাগুক।
তৌসিফ ফিরে দাঁড়িয়ে বুকের মাঝে নিলো পৌষ’কে। চুলের ভাজে আঙুল চালিয়ে বাঁকা হাসলো। এইটুকু ছিলো পৌষ’র ভাষায় বউকে হাতের মুঠোয় রাখার টোটকা যা তৌসিফ খুব নিদারুণ ভাবে করেছে।
তৌসিফ সফলও বটে। এখন সময় বউকে আদর আদরে আহ্লাদী করা। ভয়ে বুকেই মুখ লুকিয়ে আছে। তৌসিফ ঠান্ডা স্বরে বলে,

— শীত লাগছে না?
— না তো।
— এত বাতাস তবুও লাগছে না?
— উহু।
— কারণ?
— আপনি আছেন না।
— তাহলে আরেকটু উষ্ণতা দেই?
বুক থেকে মুখটা তুলে যেই না কিছু বলবে ওমনিই তৌসিফ ওকে পাঁজা কোলে তুলে। রুমে ঢুকে বিছানায় সযত্নে ওকে রেখে নিজেও পাশে এলো। পৌষ’র দৃষ্টি এলোমেলো তখন। তৌসিফে’র গাঢ় চোখের চাহনি তার আবদার জাহির করে বারংবার। পৌষ সেই দৃষ্টিতে বোধহারা হয়৷ বাকশক্তি হ্রাস পায় তার। হীম হওয়া শরীরটা তখন আগ্নি তাপে ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়। গভীর ভাবে যখন দু’জন মিশে যায় তখন প্রকৃতি নাটকীয় ভাবে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা বৃদ্ধি করে। বাতাস আরেকটু শীতল হয়। তৌসিফ ঠিক ততটাই উষ্ণতা ছড়ালো পৌষ’র মাঝে। আবেগে গা ভাসায় পৌষ৷ ভুলে যায় কিছুক্ষণ পূর্বের স্বামীর হুমকি ধামকি।

— মিনু’কে এখানে নিয়ে আসি?
এই নিয়ে পঞ্চম বার সোহা মেহেদী’কে বললো কথাটা।
মেহেদী প্রথম দিন ভাবছি বললেও এরপর থেকে আর কিছু বলছে না। হু হা কোনটাই না৷ সোহা উত্তর না পেয়ে পুণরায় বলে,
— মেহেদী আপনি শুনছেন? মিনু’কে আনার কথা ছিলো তো।
মেহেদী তখন কিছু খাতা দেখছে। সোহা উত্তর না পেয়ে বাথরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। মেহেদী’র জন্য চা এনে টেবিলে দিতেই মুচকি হাসলো ও। সোহা আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— হেল্প করব?
— আরে না। হয়ে গেলো বলে।
সোহা ভাবলো কাজটা শেষ হলে বলবে। আজ মেহেদী’র মন ভালো। সকালে সোহা’র চুলে ফুলের মালা পেঁচিয়ে সে মাফ চেয়েছে। সোহা’র মনে কথাটা যদিও এখনও গেঁথে আছে তবুও মৌখিক মাফ সে করেছে। মেহেদী যতক্ষণ খাতা দেখলো সোহা পাশে বসে রইলো। একবার গিয়ে শাশুড়ীকে দেখে এসেছে। তার কোমড়ের ব্যথা সারে নি এখনও।
অনেকটা সময় পর মেহেদী’র খাতা দেখা শেষ হতেই সে সব গুছালো। বিছানাটা ঝাড়তে ঝাড়তে সোহা বললো,

— এসে পরুন। গোছানো শেষ।
মেহেদী মা-বাবা’কে দেখে দরজার লকটা চেক দিয়ে এলো। চোর বাড়ছে ইদানীং। মেহেদী বিছানায় উঠতেই সোহা পা তুলে বসে। মেহেদী লাইট নিভিয়ে কাছে টানতেই সোহা বলে,
— বললেন না?
মেহেদী ওর হাতটা নিজের বুকে রেখে বলে,
— কি বলব সোহা রাণী’কে?
— মিনুকে আনার কথা।
— ঘুমাবে আসো।
বলেই বুকে টেনে নিলো। সোহা কথা বলার চেষ্টা করেও পারলো না। মেহেদী এরিয়ে যাচ্ছে কথাটা বারবার।

ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দুটো হাঁচি দিলো পৌষ। বুকের মাঝখানে চেপে ধরলো ততক্ষণই। হাঁচির দাপটে ব্যথা হচ্ছে বুকে। তৌসিফ তখন গরম পানি হাতে এলো। পৌষ’কে জোর করা লাগলো পানিটুকু খেতে। তৌসিফ ভাবলো ধমক একটা লাগাবে। ট্যাবটা ঘুরালেই গরম পানি আসে তবুও এই মেয়ের ত্যড়ামি। গরম পানি দিয়ে গোসল করলে নাকি গোসল গোসল লাগে না৷ কি আশ্চর্য কথাবার্তা। পানি খেয়েই পৌষ কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— ক্ষুধা।
তৌসিফ শুনতে পেলো গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে বউয়ের পেটে। রোল গুলো নিয়ে নিজেও কম্বলের নীচে ঢুকে পৌষ’র মুখে তুলে দিলো। গরম করে এনেছে মাত্র আবার।
তৌসিফ নিজেও মুখে তুলে। “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে” তৌসিফ এটা হারে হারে টের পেলো। যেই তৌসিফ খাওয়া নিয়ে এতটা কনসাস ছিলো সে কি না দিন দাহারে এমন হাবিজাবি খাচ্ছে। পৌষ তৌসিফ’কে খেতে দেখে খুশি হলো। উঁচু এক ঢেকুর তুলে বললো,

— সস দেই?
তৌসিফ মলিন চোখে তাকালো। পৌষ নিজেই সস দিতে দিতে বললো,
— এই সস কিন্তু আমি বানিয়েছি। একদম হোম মেইড যেমন আমি।
তৌসিফ পলকহীন তাকিয়ে রইলো। একটু আগে কাকে ধমকালো, কাকে উঁচু স্বরে শাসালো, কাকে ই বা এত কথা শোনালো বিনা দোষে। এই মেয়ে দিব্যি তৌসিফে’র ন্যাওটা এখনও। তৌসিফ পাশ থেকে টিস্যু দিয়ে পৌষ’র মুখ মুছে দিতে দিতে বললো,

প্রেমসুধা পর্ব ৫২

— সকালের খবর দেখবে। ভালো একটা হেডলাইন পাবে তাতে।
পৌষ গোটা গোটা চোখে তাকিয়ে রইলো। তৌসিফ চোখে হাসলো। কাল বড় এক ঝামেলার সমাপ্তি হবে।

প্রেমসুধা পর্ব ৫৪