প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ২

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ২
সাইয়্যারা খান

নরম বিছানায় শরীর উল্টে শুয়ে আছে তুহিন। ফর্সা পিঠটার মাঝ বরাবর থাকা মেরুদণ্ডের দারুন রেখা। চোখ এড়ায়না যেন। অর্ধ দৃশ্যমান মুখটায় থাকা সবটুকু মায়া দেখে পলক। চোখের পলকও ফেলা যায় না যেন। কত সুন্দর দেখতে পুরুষটি তার বর। বিয়ে করা বর। ইশ! হিংসা হয় পলকে’র। বরদের এত সুন্দর হতে নেই। চোখ ফিরিয়ে আয়নায় তাকালো পলক। আয়নায় নিজেকে দেখে একটু অবাক হয়। গালটা কি ঝুলে যাচ্ছে? দুই হাতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চামড়ায় ম্যাসেজ করতে লাগলো ও। কোন ভাবেই নষ্ট হওয়া যাবে না এই মুখ।

এই মুখের মায়ায় জড়িয়ে আছে একজন পুরুষ, তার মায়া কমতে দেয়া যাবে না। বেশ খানিক সময় পর শান্ত হয় পলক। বুকে থাকা ওরনাটা ফেলে দাঁড়িয়ে পরে। আয়নায় দেখে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। খুটিনাটি সবটা দেখে সে নিজেই অবাক হচ্ছে। যথেষ্ট যত্নে রাখে সে নিজেকে। এই লাস্যময়ী দেহটা কাঁপছে আজও ঠিক যেভাবে প্রথম দিন কেঁপেছিলো তুহিন’কে দেখে। চাপ দাঁড়ি ওয়ালা সুন্দর এক পুরুষ। পলক অস্বীকার করতে পারবে না, এই বাড়ীর প্রতিটি পুরুষই সুন্দর। যাদের র’ক্তে ক্ষমতা, তেজ আর দাপট তাদের সুন্দর হতেই হয়। এতসব গুন দেখেই তো পলক পা’গল হলো। প্রেমে ডুবে হাবুডুবু খেলো। আফসোস! ভীষণ আফসোস তার হাবুডুবু খেতে খেতে সে এখন ম’রার পথে অথচ তুহিন সাঁতরে যাচ্ছে। আচ্ছা, সে কি ভুলে গেলো তুহিন ছাড়া একা সাঁতরে যে পলক নামক এক বোঁকা মেয়েটা কোন কুল পাবে না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কেন এক সময় তার প্রেমে পা’গল থাকা তুহিন এখন নেশায় ডুবে থাকে? পলকের মাঝে ডুবার মতো কি কিছুই অবশিষ্ট নেই? পলক কি তবে সমুদ্র থেকে নর্দমা হয়ে গেলো? পলক তো কোন ভাবেই ছাড়বে না তুহিন’কে। প্রয়োজনে সমুদ্রে থাকা তিমি থেকে তুহিন এই নর্দমার মাগুর মাছ হোক তবুও তার স্থান একমাত্র পলক হোক।
“জান?”
ধ্বক করে ওঠে পলকের বুকটা। এই ডাকটা তুহিন কেন ডাকছে? সে যদি আজও তুহিনের জান হয়েই থাকে তাহলে কেন সে পলক বাদে অন্য কারো মাঝে ডুবে যাচ্ছে? ঘুম জড়ানো এই তো পলক সহ্য করতে পারছে না। তার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। ঘুম জড়ানো এই পুরুষ কণ্ঠ এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য তার কেন কোন নারীরই বোধহয় নেই। কোনরূপ সাড়া না পেয়ে পুণরায় ডাকলো তুহিন,

“জান?”
“হুঁ।”
“কাম হেয়ার না জান।”
পলক থাকতে পারলো না৷ তারাতাড়ি ওঠে কাছে এলো। তুহিন হাতটা বাড়িয়ে টেনে বসালো ওকে নিজের কাছে। মাথাটা তুলে দিলো পলকের কোলে। পলক নিরদ্বিধায় হাত রাখে তুহিনের চুলে। সিল্কি নরম চুল। তুহিন হালকা স্বরে আবদার ধরে,
“টেনে দাও।”
বলেই কোলের দিকে মুখটা গুঁজে দিলো। পলক চুলগুলো মুঠ করে টেনে দিতেই আরামে গুঙিয়ে ওঠে তুহিন। আরেকটু ঠেসে শুয়ে থাকে। পলক অপলক তাকিয়ে রয় তার পিঠের দিকে। সেথায় লাল লাল দাগের চিত্র যার কর্মকারী একমাত্র পলক। পলক আস্তে করে ডাকে,

“শুনছো?”
“হুঁ।”
পলক কথা বলে না৷ কথা তার মুখ দিয়ে বের হতে চায় না৷ কথাগুলো গলা পর্যন্ত এসে দলা পাকিয়ে কেমন জানি জটলা বেঁধে আছে। ঢোক গিলেও তা থামাতে পারে না পলক বরং কণ্ঠে আটকানো কথা তার চোখের পানি বেয়ে টপটপ করে পড়ে। না দেখেও তা ঠাওর করে তুহিন। অস্পষ্ট ভাবে জিজ্ঞেস করে,
“কাঁদছো?”
পলক উত্তর করে না। তুহিন শরীর উল্টে সোজা হলো। টেনেটুনে চোখ খুলছে সে। পলক তাকিয়ে রয় ওর পানে। তাকে এত বুঝার মানুষটা হঠাৎ করে হারিয়ে গেলো যেন৷ নেশার দাপট এখনও কি এতটাই তীব্র যে সে চোখ মেলার শক্তি পাচ্ছে না? তুহিন হাত বাড়িয়ে গাল ছুঁয়ে দিলো ওর। আস্তে করে বললো,
“আর খাব না। কেঁদো না।”
এই এক কথা তুহিন কত বছর বলছে পলকের স্মরণে আসে না৷ মানসপটে তার ঝাপসা প্রেম। সময়ের ধুলা জমতে জমতে আস্তরণ পড়েছে মনের ডায়রিতে এখন পৃষ্ঠা উল্টাতেই হাত ময়লা হচ্ছে। পলক আস্তে করে শুধু বললো,

“ঐ মেয়ে দুটোর সাথে কি করেছিলেন আপনি?”
“কোন মেয়ে?”
তুহিন অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করে। পলক শুকনো কণ্ঠে বললো,
“যাদের গতকাল মিলে আটকে রেখেছিলেন।”
“কিছুই তো করতে পারলাম না৷ মেঝ ভাই ছেড়ে দিলো।”
“করার ইচ্ছে ছিলো?”
“করতাম মানে? টানা তিন দিন না খায়িয়ে আটকে রাখতাম। বুঝতো মৃত্যু স্বাদটা আসলে কেমন?”
“স্বাদ তো মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। কারো জন্য মিষ্টি আবার কারো জন্য তেতো। আমার জন্য কিন্তু ভিন্ন।”
তুহিন অবাক স্বরেই যেন বলে,

“মানে?”
“মানে নেই কোন। আমার জন্য মৃত্যু হচ্ছে মুক্তি।”
“আমার থেকে?”
“উঁহু। নিজের দেহ থেকে নিজের মুক্তি।”
তুহিনে’র বুক তখন এলোমেলো ছন্দে চলছে। ফোনের শব্দে তার ধ্যান ভাঙে। মেঝ ভাই লেখা দেখেই সামান্য চমকে ফোন তুলতেই অপর পাশ থেকে বেশ জঘন্য এক গালি এলো। তৌসিফ শুধু বললো,
“উপরে আয়।”
গায়ে টিশার্ট না দিতেই যেতে নিতেই পলক বলে উঠলো,
“আস্তে যাও। চোখে দেখবে না নাহয়।”
তুহিন কিছু বলতে গিয়েও থামে। চপ্পল পায়েই ছুটে দোতলায়। তৌসিফ ওকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। সোজা গিয়ে টিশার্টের কলার ধরে বললো,

” সাহস খুব বেড়েছে? নেশাখোর কোথাকার!”
“ভাই…”
“বাসায় এসেছিস কখন?”
“ভোরে।”
“এখন সময় কি?”
“সকাল।”
উত্তরে অবশ্য জোর নেই। তৌসিফ ওর বুকে ধাাক্কা দিয়ে বললো,
“দুপুর এখন। নেশাখোরের মতো উলোটপালোট উত্তর দিবি না খবরদার। সোজা গোসল করে পার্টি অফিসে যা।”
“ক্ষুধা লেগেছে। খেতে দাও কিছু।”
“গু’লি খা দুটো। দিব?”
তুহিন চোখ ডলে হাসে। বলে,
“নাহ। বউ’কে অনেক ভালোবাসি তো। এখন মে’রো না ওকে।”
তৌসিফ গম্ভীর হলো। তুহিন টলমলে পায়ে বেরিয়ে গেলো। তার ধারণা অনুযায়ী পলক খাবার নিয়ে বসে আছে। তুহিন গোসলে যেতে যেতেই বললো,
” জান, হেল্প মি আউট।”

“আদি?”
পৌষ’র কণ্ঠে বাইক চালু দিতে গিয়েও থেমে গেলো আদিত্য। পৌষ দৌড়ে আসছে৷ ভার্সিটির মাঠ থেকে দৌড়ে এসেছে ও। আদিত্য হেলমেট খুলে হাসি মুখে তাকালো। পৌষ দম ফেলারও সময় নিলো না। একদমে বলতে লাগলো,
“কোথায় যাচ্ছো? অ্যই তোমার ছোট চাচ্চু নাকি কাল দুটো মেয়ে আটকে রেখেছিলো? আমি ওখান দিয়ে কাল পিহা’কে নিয়ে একটু মার্কেটে যাচ্ছিলাম তখন একটা লোক’কে দেখেছিলাম। কি করেছে মেয়ে দুটোকে?”
আদিত্য এত এত কথায় থমকালো। কথা গোছানোর সময় পেলো না। পৌষ আবার বললো,
“কি হলো? বলো। আর হ্যাঁ, তোমার বাবা’কে নাকি বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে কিন্তু আগের সভাপতি তো এখনও আছেন। উনি তো বাতিল হন নি তাহলে কিভাবে কি হলো?”

আদিত্য এই দফায় হেসে ফেললো। লম্বা চিকন শরীরটা হাসির দরুন কাঁপছে। পৌষ কড়া রোদে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে ভীষণ প্রশ্ন। উত্তর গুলো তার কাছে নেই। আদিত্য হাসি থামাচ্ছে না দেখে পৌষ ঝটপট করে বললো,
“হাসিলে হাঁস কাউয়ায় খায়, যেজন হাসে সেজন কু’ত্তা খায়।”
এহেন অবান্তর, বানোয়াট প্রবাদ বাক্যে আদিত্য’র মুখটায় থাকা হাসি উবে গেলো। একপ্রকার থতমত খেয়ে বললো,
“এসব কোন কথা?”
“না তো, কথা না। এগুলো হলো কথার মাথা। তুমি এবার তারাতাড়ি বলো।”
“আসলে পুষি…”
“ধুরু! পুষি’কে আজ দুটো লাত্থি মা’রব আমি। শা’লা আমাকে কাল রাতে খামচি দিয়েছে। কাইল্লা বোটকা বিলাই একটা।”

“খামচি দিয়েছে? বিড়াল! কিভাবে?”
“সে এক গ্রীষ্মের কাহিনী আদিত্য। এখন তুমি প্রশ্নের উত্তর দাও।”
গেলো তো আদিত্য চুপ করে। এই মেয়ের সাথে কথায় সে কেন বড় বড় উকিলরা পর্যন্ত বোধহয় হেরে যাবে। এই পৌষ আবার গর্ব করে করে, “আছে এক চাপা, যত পারি নাড়িয়ে যাই। যার চোপা নেই সে বোবা। চোপা করা একটা ট্যালেন্ট আর ট্যালেন্ট দেখাতে হয়। কেয়া পাতা, কাল হো না হো।”
ওর কথা মনে করতে করতে আদিত্য বললো,
” ছোট চাচ্চু আটকে ছিলো কিন্তু মেঝ চাচ্চু ছেড়ে দিয়েছে। ও হ্যাঁ, আব্বুকে সভাপতি করার প্রস্তাব তো আগেরই কথা। মাঝখান দিয়ে রাজনৈতিক কোন এক কারণে আব্বু সভাপতি হতে পারে নি। তাছাড়া বংশ পরম্পরায়ও আমাদেরই হওয়ার কথা। সম্রাট চেয়ারম্যানই তো সভাপতিত্ব করেছেন।”

পৌষ’র চোখে ভেসে ওঠে মান্নার চেয়ারা। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল, ক্লিন শেভ করা উঁচা লম্বা এক পুরুষ। যে কেউ দেখলে সম্রাট চেয়ারম্যানকে একবাক্যে বলতো নায়ক মান্না। পৌষ তাকে দেখার জন্য কত কান্ডই না করেছে। এলাকায় বছর বছর পোস্টার টানানো হয়। পৌষ’র সংরক্ষণে আপাতত একটা ছেড়া পোস্টার আছে। ভেবেছে আজ রাতে আরেকটা পোস্টার ও চুরি করবে। ওদের বাড়ীর গেইট বরাবর দোকানটার দেয়ালে লাগানো আছে সম্রাট চেয়ারম্যানের এক দারুন ছবি। পৌষ আড় চোখে রোজ দেখে। তার এক কাঁচা মনে যদি কখনো প্রেমের আউলা বাতাস লেগে থাকে তার একমাত্র হকদার সম্রাট। সম্রাট চেয়ারম্যান। পৌষ গুনগুন করে গাইলো,
“আউলা প্রেমের বাউলা বাতাস লাগায়ও না গায়ে বন্ধু, লাগায়ো না গায়ে।”
গাইতে গাইতে পৌষ হাটা ধরেছে অন্য পথে। আদিত্য পেছন থেকে ডাকতে লাগলো,

“পুষি শুনে যাও৷ বাসায় যাবে? আমি নামিয়ে দিয়ে যাই?”
পৌষ কপাল কুঁচকে পেছনে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে যাই এরপর তোমার চাচা নিজের ডাইয়িং নামক আয়না ঘরে আমাকে আটকে রাখুক।”
আদিত্য ফিক করে হেসে ফেললো। বললো,
“বাজারে যাব না তো।”
“বাসে যাব আমি।”
“গুলিস্তান পর্যন্ত চলো?”

“প্রশ্নই ওঠে না। তোমার বাইক চালানো সুবিধার না আর হেমু ভাই আসবে আজ রাজধানীতে। গেলাম। টাট্টুবাট্টু।”
“টাট্টুবাট্টু” এই অদ্ভুত শব্দ ব্যবহার করে একমাত্র পৌষ বিদায় দেয়। আদিত্য’র ভীষণ হাসি পায় কিন্তু মজাও লাগে। তাদের প্রথম পরিচয়টা অবশ্য মজার। পৌষ’র ভাষায়, ‘শত্রুর শত্রু পরস্পর বন্ধু তাই আমরা বন্ধু’। ওদের একমাত্র শত্রু ছিলো ক্লাস টেন থেকে ইন্টার পর্যন্ত পড়ানো এক স্যার। তিনি রোজ রোজ আদিত্য’র বদনাম করতো পৌষ’র কাছে আর পৌষ’র বদনাম আদিত্য’র কাছে। স্যারের মাধ্যমেই বই আদান-প্রদান হতো দু’জনের। একবার পৌষ’র বইতে এলোমেলো কিছু লিখা দেখে তা হাইলাইটার দিয়ে দাগিয়ে দিয়েছিলো আদিত্য। ব্যাস! কেলেঙ্কারি একখানা লাগিয়েছিলো পৌষ।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাইক চালু দিলো আদিত্য। বাসায় মা আজ তারাতাড়ি যেতে বলেছে।

বাসে উঠে মেজাজ চরম খারাপ হলো আজ। মহিলা সিট ভর্তি পুরুষ। পৌষ খিটমিট করে ডেকে উঠলো,
“আন্টি আপানারা একটু চেপে বসুন। চারজনের সিট আপনারা তো তিনজন। আমিও বসব।”
লোক তিনটা তাদের আন্টি ডাকায় হা করে তাকিয়ে রইতেই পৌষ পুণরায় বললো,
“মোটা আন্টি আপনি একটু চাপ দিন সাইডে।”
মোটা দেখতে টাক লোকটা চমকালো। কয়েকজন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছেন। পৌষ তাদের দিকে ফিরে কটমট করে বললো,

“হাসছেন কেন? এই গরমে হাঁস খেয়ে এসেছেন?”
মহিলা সিটে বসা লোক তিনটা বুঝতে পারছে না মেয়েটা তার পক্ষে। পৌষ তাকাতেই দেখলো কাচুমাচু করে তিনজন নামলো সেখান থেকে। পৌষ সহ বাকি কয়েকজন মেয়েও ওখানে বসলো। পৌষ বুঝলো সাময়িক সময়ের জন্য নারী হলেও আন্টি ডাক তাদের পুরুষত্বে লেগেছে তাই বোধ-হয় উঠে গেলো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে হেমন্ত ফোন দিলো। কিটিমিটি করে বললো,
“মাজারের সামনে দাঁড়াও হেমু ভাই৷ আমি কাকরাইল আছি।”
হেমন্তের সাথে ঘুরঘুর করে মোটে তিনটা জামা কিনলো পৌষ। হেমন্ত বিরক্ত হয়ে বললো,
“নিউমার্কেট যাবি?”
“এই গরমে ম’রতে যাব?”
“তাহলে বাসায় চল। তোকে আনা ভুল হয়েছে।”

পৌষ মুখ ঝামটা দিয়ে সামনে হাঁটছে। তার কেনাকাটা ইদানীং হেমন্তই করে দেয়। ছোট বেলায় কে দিতো ওর মনে পরে না। বাবা বোধ-হয় দিতো নাকি মা দিতো। পৌষ’র স্মৃতি শক্তি তা ঠাওর করতে পারে না।
রিক্সা থেকে নামতেই কপাল কুঁচকে তাকালো পৌষ। জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে আবার কার ম’রা গাড়া হচ্ছে? রাস্তা আটকে রাখে হুদাই। অসহ্য লাগে একদম।”
হেমন্ত রিক্সা ভাড়া দিচ্ছে তখন। বাজারে নামতে হয়েছে তাদের। কোন কারণ ছাড়াই রাস্তা বন্ধ। কারণ অবশ্য জানা গেলো তালুকদার বাড়ীতে প্রতিমন্ত্রী আসছে। সেই সুবাদে জ্যাম এড়াতেই রাস্তা বন্ধ। পৌষ রাগে গজগজ করতে করতে সামনে হাঁটছে ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা সাদা গাড়ি ওকে সামান্য টক্কর দিয়ে যেতেই বোরকায় পেঁচিয়ে ধপ করে পড়লো পৌষ। দুই আনার ব্যথা পেলো কি না সন্দেহ তবে চিৎকার দিলো হাজার টাকার। অবশ্য একটুর জন্য কাটার তারে পরে নি। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়েছে ততক্ষণে। হেমন্ত দৌড়ে আসতে আসতে গাড়ি থেকে রোদচশমা চোখে নেমে দাঁড়িয়েছে স্বয়ং তৌসিফ তালুকদার। এদিকে মাটিতে বসেই সমান তালে চেঁচাচ্ছে পৌষ,

“চোখ কই থাকে হ্যাঁ? গাড়ি চালায় নাকি রিক্সা? জান নিতে চেয়েছিলো আমার। কেন রে ভাই, আমি কি গরু? গরু হলেই মা’রতে হবে? আমার হাড্ডি-গুড্ডিতে জং লেগে গেলো রে। ওওও হেমু ভাই তুমি কই?”
পৌষ দেখলোও না ওর দিকে রোদচশমার আড়ালে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো এক যৌবনপোড়া পুরুষ যার চোখের কালো কুচকুচে মনিতে ততক্ষণে আটকেছে এক মাটিতে বসে আহাজারি করা কন্যা। হেমন্ত দৌড়ে এসে পৌষ’কে তোলা মাত্রই পৌষ হাত-পা ঝাড়লো। নিজে নিজেই এগিয়ে এসে ফ্রন্ট সিটের কাঁচে টোক্কা দিলো অথচ ওর পেছনে তৌসিফ দাঁড়িয়ে। ড্রাইভার কাঁচ নামাতেই পৌষ দুই পাটি দাঁত বের করে বললো,

“গাড়ি কার?”
“এই বাড়ীরই।”
” ওওও, শুনুন ক্ষতিপূরণ পাঁচ হাজার টাকা দিন ঝটপট।”
পাশের সিট থেকে রনি বলে উঠলো,
” ক্ষতি কি হয়েছে?”
“জান বেঁচেছে আমার। কাল জানের ছতকা দিব। আড়াই কেজি বালুসাই বিলাব মসজিদের সামনে। খেয়ে দোয়া দিবে সবাই।”

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১

“ছতকা আবার কি?”
গম্ভীর কণ্ঠে পেছন থেকে শোনা গেলো,
“সাদকা।”
পৌষ ঘুরে তাকে দেখার আগেই তৌসিফ বাকিটুকু রাস্তা হেঁটেই বাড়ীতে ঢুকলো। হেমন্ত’র সাথে অবশ্য হাত মিলিয়ে গেলো যা পৌষ’র চক্ষুর আড়ালে।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩