প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৫
সাইয়্যারা খান
কুটুরমুটুর করে চোখ দুটো পাকাচ্ছে পৌষ। মনে আপাতত শান্তি নেই তার। একটু আগে হাতের কনুই ছুলেছে তার সাথে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। ব্যথায় মুখটা সামাল দেয়া যাচ্ছে না। হেমন্তকে দেখে নার্স একটু স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো। এমন পাগলাটে রুগী সামলানো দায়। হেমন্ত ছুটতে ছুটতে এসেছে পৌষ’র ভার্সিটি। ফোনটা করেছিলো আদিত্য। পৌষ হেমন্তকে দেখা মাত্রই দ্বিগুণ হারে চেঁচাচ্ছে। গলা উঁচিয়ে বলছে,
“প্রতি সেমিস্টারে পনেরোশত টাকা অতিরিক্ত দেই চিকিৎসা খাতের জন্য অথচ এখান এদের উমুক নেই তমুক নেই। কেন নেই? পনেরোশত টাকা কি করে এরা? চিকিৎসা কেন ঠিক ভাবে পাব না? হুদা নাপা খাইয়ে আমাকে বলে ঘুমাতে। কেন রে বইন, আমি কেন ঘুমাব? টাকা দিয়ে পড়ি না আমি? নাকি চাড়া দিয়ে পড়ি? রোজ রোজ আসি এখানে? ঘুরার জায়গা এটা?”
হেমন্ত এসেই বোনের কপালে হাত দিয়ে দেখলো। কপালে তার দুশ্চিন্তার ছাপ। পৌষ ভাইকে দেখে একগাল হেসে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি এভাবে ঘামছো কেন হেমু ভাই?”
“তুই আমাকে বাঁচতে দিবি না পৌষ।”
“না, দিব না। দু’দিন পর বউ আসবে তোমার তখন তো আর পাত্তা দিবে না।”
হেমন্ত বিরক্ত চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“তোর গায়ে কি ব্যথা লাগে না? ব্যথা লাগলে তো অন্তত মুখটা থেমে থাকতো।”
পৌষ’র যেন হঠাৎই মনে পরলো ওর গায়ে ব্যথা। তারমধ্যে যথাযথ চিকিৎসা সে পায়নি। অধিকার পৌষ হাড়ে হাড়ে বুঝে নিতে জানে। হেমন্তের হাত ধরে উঠে বসে বললো,
“স্যাভলন দিয়ে দুটো ডলা দিয়ে বড় বড় গজ বেঁধেছে হাতে পায়ে। ঔষধ নাকি বাইরে থেকে কিনে খাব? কেন খাব আমি কিনে? এখানে টাকা দেই না?”
“চটকানা মা’রব একটা। মুখ বন্ধ রাখ।”
“মারো না। না করেছে কে? আজ এদের একদিন তো আমার যতদিন লাগে।”
আদিত্য ততক্ষণে ভেতরে ঢুকেছে। হাতে জালি ব্যাগ ভর্তি মেডিসিন। পৌষ প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি ছুঁড়ে বললো,
” এখান থেকে দিলো নাকি তুমি কিনে আনলে?”
আদিত্য থতমত খেলো। কথা গুছিয়ে উত্তর দিলো,
“এখান থেকেই দিয়েছে পুষি।”
“রাখ তোমার কুত্তা বিলাই এর ডাক। উষি, পুষি ডাকবে না। সেজো চাচির কানে গেলো এলাকায় বলবে তোমার সাথে ভেগে গিয়েছি আমি।”
হেমন্ত এক গাট্টা মা’রলো পৌষ’র মাথায়। পৌষ মাথা ডলে বললো,
“জোর যার মুল্লুক তার। দেখলে কিভাবে এদের পেট থেকে ঔষধ বের করলাম?”
আদিত্য ঢোক গিলে। এখান থেকে শুধু সাময়িক চিকিৎসা দেয়া হয়, এই কথা পৌষ’কে বললে আদিত্য’র নামেই মুখে মুখে কবর খনন করবে এই মেয়ে। বড়ই বিপদ জনক কি না৷
হেমন্ত আদিত্য’র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কিভাবে হলো এসব? ও রিক্সায় আসে নি আজ?”
“আমাকে জিজ্ঞেস করো হেমু ভাই।”
“থাপ্পড় খেতে না চাইলে মুখে চাবিহীনা তালা লাগা পৌষ।”
পৌষ মুখে লাগাম দিতেই আদিত্য জানালো,
“আসলে এখান দিয়ে মিছিল যাচ্ছিলো। পুষি রিক্সা থেকে নেমে ওদের মাঝখান দিয়ে আসতে নেয়ার সময় ভীরে ধাক্কা লেগেছে কারো সাথে তখন ও ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তায়। রাস্তায় তখন একটা প্রাইভেট গাড়ি ছিলো। ওটার সাথেই ধাক্কা লেগেছে।”
মুখের কথা কেড়ে পৌষ বলে উঠলো,
“একটু ভুল আছে কথায় হেমু ভাই। আমি মাঝখান দিয়ে ঢুকি নি৷ ওরা ভাগ হয়ে ছিলো। অনেকখানি জায়গা ফাঁকা ছিলো মাঝে।”
হেমন্ত’কে চিন্তিত দেখালো। এটা কি নিছক বা বিছিন্ন কোন ঘটনা নাকি কোন এক পরিকল্পনা? পৌষ’কে নিয়ে হেমন্ত বেরিয়ে যেতেই আদিত্যও থাকলো না। মেঝ চাচ্চু আজ দেখা করতে বলেছিলো তাকে।
আদিত্য’কে অফিসে ঢুকতে দেখেই তৌসিফ না তুলে জিজ্ঞেস করলো,
“এত দেড়ীতে আসলে?”
“আসলে চাচ্চু আমার এক ফ্রেন্ডের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো। তার সাথে ছিলাম।”
তৌসিফ ছোট্ট করে ‘ওহ’ উচ্চারণ করে বললো,
“এখন ভালো আছে?”
“মোটামুটি।”
আদিত্য তৌসিফে’র বরাবর বসলো। তার বাপ-চাচাদের মুখের আদলে যথেষ্ট মিল। তারমধ্যে সবচাইতে সুন্দরই বোধহয় মেঝ চাচ্চু। তৌসিফ হাতের ফাইলটা রনিকে দিয়ে বললো,
“টনিকে পাঠাও এগুলো সব যাতে সোজা ফরিদকে পাঠিয়ে দেয়। ও এবার নমিনেশন তুলবে না।”
“জি ভাই।”
রনি চলে যেতেই আদিত্য অবাক হয়ে গেলো। অবাক কণ্ঠেই প্রশ্ন করলো,
“উপজেলা চেয়ারম্যান তাহলে কে হবে এবার চাচ্চু?”
“বিপরীত দল।”
“কিহ!”
“জয়নাল এলো তো সেদিন। তখনই তোমার আব্বু আর ছোট চাচ্চুর সামনে কথা দিলাম আমি। তার দলকে এবার জিতিয়ে দিব আমি নিজ দায়িত্বে।”
আদিত্য থতমত খেয়েই বসে আছে। তৌসিফ সামান্য কপাল কুঁচকে বললো,
“এত চিন্তার কিছু নেই আদি।”
“তুমি দাঁড়ালে ভোট সব তোমার। এ কথা সবাই জানে চাচ্চু। এবার তুমি দাঁড়ালে হতো না?”
তৌসিফের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। তীর যেন নিশানা বরাবর তাক করা। শুধু বললো,
“তুমি আমার পরবর্তী প্রজন্ম আদি তাই প্রায় সময়ই তোমাকে দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে বলি আমি। ধীরে ধীরে পাকা হও। সময় আছে এখনও।”
“জয়নাল আঙ্কেল কাকে দাঁড় করাবে উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে?”
“উমাইর’কে।”
“ওহ।”
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানই উমায়ের শিকদার। এরমানে সেই থাকবে। তাদের পাশের এলাকার এক বখাটে ছিলো এই উমায়ের। লেখাপড়াটা ছুটেছে সেই শৈশবে। আদিত্য তখন ছোট। শুনেছে সম্রাট চাচ্চুর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন তিনজন সংসদ সদস্য সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। ফিরতি পথে উমায়ের তাদের গাড়িতে বো’মা মে’রেছিলো। যদিও কেউ আহত হয় নি কিন্তু সেই এক বো’মা কপাল খুলে দিয়েছিলো সেই বখাটে উমায়েরে’র। বিপক্ষের দল তখন তাকে ডেকে নিলো নিজেদের কাছে। ২০০৮ সালে যখন সেই দল ক্ষমতা লাভ করলো তখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো উমায়রের।
সেবার যখন একসাথে তিন নেতাকে খু’নের দায়ে তাকে জেলে দেয়া হয়েছিলো তারপর খালাস পেতেই সরাসরি তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান করা হলো। ভোট কেন্দ্র তখন পুরোটা দখল। এক নামে উমায়ের শিকদার তখন চেয়ারম্যান পদ প্রাপ্ত হলো। সেই সাথে দাপুটে তালুকদার বাড়ী কিছুটা থিতিয়ে গেলো।
সম্রাট নামক দাপটটা অবশ্য কমলো না বরং হয়তো দিন দিন শুধু বাড়লো অথচ পুরো তালুকদার বিপরীত দল। নাম, ডাক, দাপট কোনটাতেই তারা পিছিয়ে নেই। আজও একনামে এলাকায় চেয়ারম্যান বাড়ী মানেই তালুকদার বাড়ী।
যদিও তালুকদার বাড়ী এরপর থেকে শুধু হারিয়েছে। কত কত বিষাক্ত রাত পার করেছে। কিছুটা ধ্বংসের তো তখন সবে মাত্র সূচনা লিখা হচ্ছিলো অথচ পুরো রচনা জুড়ে ছাপ ফেলে গিয়েছিলো এই তালুকদাররা। সেই ছাপের অস্তিত্ব এলাকার রাস্তা থেকে শুরু করে কতশত নির্মান।
তৌসিফ আদিত্য’র দিকে তাকিয়ে বললো,
“পড়াশোনা ঠিকমতো চলছে তো?”
“জি, চাচ্চু।”
“কেন্দ্রে থাকিস।”
“স্কুল মাঠে?”
“হুঁ।”
আদিত্য মাথা নেড়ে উঠে গেলো। উপরে যেতেই মীরা ধমকে উঠলো,
“এখন বাসায় ফেরার সময় হলো? তোর আব্বু কয়বার ফোন দিলো?”
“নিচেই ছিলাম অফিসে।”
মীরা দমলো কিছুটা। ছেলেকে ফ্রেশ হতে বলে মীরা খাবার বাড়লো। তুরাগ ততক্ষণে নিজেও এসেছে। মীরা খেতে খেতে তুরাগকে জানালো তার পুরাতন স্বর্নের ব্রেসলেটটা বদলাতে হবে। নতুন ডিজাইনেরটা লাগবে। তুরাগ খেতে খেতেই বললো,
“নির্বাচনটা যাক। এটা বদলাতে হবে না। নতুন একটা নিও।”
মীরা খুশিতে তখন গদগদ। তার সুখ বলতেই স্বর্ন। ছোট থেকেই তার ভীষণ বিলাসিতা পছন্দ। পলকের হাতে সে নতুন ডিজাইনের ব্রেসলেট দেখেছে যা আপাতত তারও চাই।
পৌষের ছোট্ট ঘরটায় ছয় ভাই-বোন গোল হয়ে বসে আছে। এসেছে থেকে পিহা আর ইনি, মিনি কেঁদেছে কতক্ষণ অথচ ওদের কান্নায় দাঁত বের করে হেসেছে পৌষ। চাচা তিনজন একবার জিজ্ঞেস করে গিয়েছেন৷
পৌষ ওসব গায়ে মাখে না। তাকে জিজ্ঞেস না করলেই বরং ভালো। ওসব আদিখ্যেতায় পৌষ’র বদহজমি আছে। বেশি ভালো ব্যবহার তার গায়ে সয় না। একথা বড় চাচি বলে। পৌষ এই একটা বিষয়ে বড় চাচির সাথে সহমত। সত্যিই তার ভালো ব্যবহার গায়ে সয় না। পৌষ’র পায়ের আঙুলগুলো নেড়ে নেড়ে দেখছে পিহা। জিজ্ঞেস করে,
“আপা, ব্যথা আছে?”
“নাহ। ব্যথা নাপা খেতেই চিচিংফাঁক হয়ে গিয়েছে।”
ইনি, মিনি না বুঝে প্রশ্ন করে,
“তিতিংচাক কি আপা?”
“তোর মায়ের আম্মুর নানীর মন্ডু।”
ইনি, মিনি না বুঝলেও বাকি সবাই ঘর কাঁপিয়ে হেসে ফেললো। হেমন্ত গলা ছেড়ে মা’কে ডেকে বললো,
“আমাদের খাবার এখানেই খাব আম্মু।”
বলতে বলতে সব গুলো ছুটলো আজ প্লেট আনতে। পৌষ অবশ্য উঠে নি। তার পা’টা যন্ত্রণা দিচ্ছে আজ। ভালো মুসিবত হলো তো। এমনিতেও তার খাওয়ার সময় এখন না৷ রাত বারোটার পর এক চোট খাবে পৌষ। চোখের পলকে ওর ঘরের মধ্যে হিড়িক পরলো খাওয়া দাওয়ার। হেমন্ত খুব জোর করে শুধু দুই লোকমা খায়িয়েছে কারণ রাতে ঔষধ আছে। আর খেলেই ঘুমের মধ্যে বমি করবে। পৌষ’টা আসলে আগা থেকে গোড়া পুরোটাই এক চমক।
বাড়ীতে তখন হেমন্তের বিয়ের কথা চলছে। মেয়ে বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। নাম শ্রেয়া। পড়াশোনা অনার্স অব্দি। দেখতে, শুনলে সব দিক থেকেই যথেষ্ট মানানসই। আজ ঘটা করে দেখতে যাবে সকলে। পছন্দ হলে আকদ সেড়ে রাখবে।
সকালে খাবার টেবিলে আলোচনা হলো। বড় চাচি সবাইকে টেবিলে দেখে নিজে গেলেন পৌষ’র ঘরে। পায়ের ব্যথাটা তখন মাত্রই কমেছে কিছুটা। বড় চাচি নাস্তাটা খাটে রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“ব্যথা কমেছে?”
“ব্যথা চিনে না আমাকে? আমি হলাম পৌষরাত চাচি। দুটো শট মে’রেছি রাতে। ব্যাস ব্যথা সাই সাই করে পালালো।”
বড় চাচি মুখ কুঁচকালেন। পৌষ দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো,
“কি বলবে ঝট করে বলে ফেলো। বিনা কারণে তো আর নাস্তা আনো নি চাচি।”
দাঁত বের করে হাসছে পৌষ। চাচি নাকের পাটা ফুলিয়ে তাকালেন। মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন,
“আজ হেমন্তের বউ দেখতে যাব। খবরদার পৌষ তুই যাবি না। সাধলেও না। শুভ কাজে অশুভ প্রতীক সাথে নেয়া ঠিক না।”
“কে অশুভ?”
গলাটা সামান্য উঁচিয়ে বলে পৌষ। বড় চাচি সামান্য ভয় পেলেন। বাড়ীতে সবাই উপস্থিত। হেমন্ত শুনলে না আবার বিয়েই না করে দেয়? চাপা স্বরে বললেন,
“চুপ থাক। খবরদার বলে দিলাম পৌষ। আমার ছেলের সুখ নষ্ট করিস না।”
পৌষ নাস্তার থালা থেকে পরোটা তুলে বিছানায় রাখলো। খালি স্টিলের প্লেটটা ছুঁড়ে মারলো মেঝেতে। ঝনঝন শব্দে কান তব্দা লাগার মতো। বড় চাচি চমকালেন। পৌষ মুখে পরোটা দিতে দিতে বললো,
” না গেলাম। খবরদার চাচি যদি দেখি আপনার ছেলে খোঁচা দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন যাব না৷ এক শব্দে তালোই এর রাখা নামটা বলে দিব আমি।”
প্লেট তুলে বড় চাচি বেরিয়ে গেলেন। ভয়ে তার বুকটা ধুকপুক করছে। পৌষ’কে ভরসা নেই। ওর যখন যা মন চায় ও তাই করে। তাই বলে। মা-বাবা না থাকলে সন্তান যে চরম উশৃংখল হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ যেন পৌষ।
হেমন্ত অবশ্য হাজার বলেও পৌষ’কে নিতে পারলো না৷ ওর পায়ে ব্যথা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা সহ নানান অজুহাত। হেমন্ত শেষে ধমকে উঠলো,
“কেউ কিছু বলেছে তোকে?”
“ওমা, যার যার মুখ সে সে বলবে তাতে আমার কি হেমু ভাই?”
“আজ যাচ্ছি পৌষ। মনে রাখিস তুই।”
পৌষ মাথা নাড়ে। হেমন্ত চলে গেলে উঠে গিয়ে বাড়ীর মেইন ফটক লাগিয়ে আসে। গুনগুন করে গান গায় পৌষ। কান্না করা নিজের জন্য হারাম করেছে পৌষ। ও কাঁদে না। এই যে হাত-কা ছিলেছুঁলে বেগতিক অবস্থা, এখন পর্যন্ত ও কাঁদে নি। হয় হাসবে নাহয় নিজের ছুটন্ত মুখে তেঁতো কথা বলবে। বুলবুলি পাখির মতো তার মুখটা থেমে থাকে না। এখনও গান গাইছে সে।
“কমলার নাচনে
বাগিচার পেছনে
চাঁদও ঝলমল করে রে….”
হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই পৌষ’র গান থামলো। রাগ উঠলো একটুখানিক। গানটা শেষ করতে পারে নি সে। রাগে গজরাতে গজরাতে ভাঙা পা যখন টেনেটুনে আসছিলো ততক্ষণে চার পাঁচবার আরো বাজলো বেলটা। পৌষ’র মেজাজের ডিগ্রি তখন শতকের ঘর ছাড়ালো। দরজা খুলতে খুলতে গলা খেঁকিয়ে বলতে লাগলো,
“কোন নবাবজাদা রে হ্যাঁ? লুলাটুন্ডা মানুষ আমি আসতেও তো সময় লাগে নাকি? উড়ে উড়ে কি আর আসা যায়? কুত্তা পা’গল হয়ে বেল দিচ্ছে। কেন রে বাপ দুই মিনিট অপেক্ষা করলে কি কারো বউ পালাবে?”
বাইরে থেকে স্পষ্ট সবটা শুনা গেলো। সদর দরজা খুলতেই পৌষ’র মুখটা তালাবদ্ধ হলো। একসাথে পনেরো থেকে বিশজন পুরুষ দাঁড়িয়ে তাও বেশিরভাগ চেনা মুখ। এদের হয় পোস্টার নাহয় ভাষণের সময় দেখেছে পৌষ। দামড়া দামড়া এত পুরুষদের মাঝে শুধু আদিত্যকেই ছোট লাগলো তার। আদিত্য পরিস্থিতি সামলাতে বললো,
” সামনের মঙ্গলবার কেন্দ্রে যাবেন কিন্তু…”
ওকে থামিয়ে গম্ভীর এক পুরুষ কণ্ঠে হঠাৎ শোনা গেলো,
“আমাদের এলাকার হয়ে ভোট চাইতে এসেছে। তুমি সহ বাড়ীর সকলে যাবে কেন্দ্রে। ভোটার আইডি আছে?”
পৌষ’র চোখ দুটো আটকে গেলো পুরুষটার মুখে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পুরুষটার চোখ… এই চোখ। পৌষ মাথা নেড়ে বললো,
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৪
” আসলটা নেই। ফটোকপি আছে।”
“বাড়ীতে কেউ নেই?”
পৌষ মাথা নাড়ে। পুরুষটা ওর হাতে কাগজ দিলো একটা। বিদায় জানিয়ে পাশের বাড়ীতে গেলো। পৌষ বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো,
“সম্রাট।”