প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ২১+২২

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ২১+২২
ফিজা সিদ্দিকী

বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে তুহিনা বেগমের অভিমান গলাতে সক্ষম হলো তুহিন। অতঃপর জমজমাট একটা রাতের খাবারের আয়োজনে নেমে পড়লো নন্দিতা। গুটি গুটি পায়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালো লারা। আলতো হেসে বললো,
“আমিও একটু হেল্প করি?”
নন্দিতা মিষ্টি হেসে লারাকে কিছু করতে বারণ করলেও শুনল না সে। কিচেনের এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বলল,

“আমি ডেজার্ট অনেক ভালো বানাই, এটাই নাহয় করতে দাও একটু!”
নন্দিতা আর কথা বাড়ালো না। এই সংসার যতটুকু তার ততটুকু লারারও। তাই সখ করে কিছু করতে চাইলে তাকে না করা উচিত হবে না।
কাজ করতে করতে লারা নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আচমকা বলে উঠলো,
“তুমি কিন্তু বেশ সুন্দরী। পিকচারের চেয়ে সামনাসামনি বেশি সুন্দরী।”
লাজুক হেসে নন্দিতা সে কথার প্রতিবাদ করে বলে ওঠে,
“কী যে বলো না তুমি, আমি তো শুধু তোমাদেরকে দেখছি। কী সুন্দর গায়ের রং, চোখ, মুখের গড়ন। সবকিছু যেন পারফেক্ট।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমাদের দেশের মানুষ এশিয়ান স্কিন টোন অনেক বেশি পছন্দ করে জানো? তোমাদের মধ্যে একটা ন্যাচারাল ব্যাপার থাকে। আমাদের সবাই তো প্রায় একইরকম। অথচ এখানে কতো ধরনের স্কিন টোন দেখতে পাওয়া যায়।”
লারা এতো কথা একসাথে খুব কমই বলে। স্বল্পভাষী হওয়ায় খুব বেশি কথা বলার অভ্যাস তার নেই। তবুও সমবয়সী একজনকে পেয়ে আজ যেন অনেক কথা বেরিয়ে আসছে তার।

তুর্জয় আহসানের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন আজগার জলিল। বয়স তার খুব বেশি না হলেও অল্পও বলা যায়না। বিগত কয়েকদিনের দৌড়ঝাঁপ, নির্ঘুম রাত যাপন যেন বয়সের ভার আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে তার। বালা দুইটা বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। যার থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠিয়েছেন। আর স্ত্রীকে রেখে এসেছেন দূর সম্পর্কের এক চাচার বাড়ীতে। আর বাকি টাকাটুকু স্ত্রীর নামে একাউন্টে রেখে দিয়েছেন। যেন তার অবর্তমানে পরিবারের মানুষজনকে পথে না বসতে হয়।
সবটুকু কাজ সেরে অবশেষে তিনি এসেছেন তুর্জয়ের কাছে, ভদ্রমহিলার দেওয়া দায়িত্বটুকু থেকে নির্ভার হতে। কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই সামনের চেয়ারে বসে থাকা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার সাথে জরুরী কিছু কথা ছিল স্যার।”

আনসার তখন সামনে রাখা ফাইলগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিলো। আচমকা কারোর কণ্ঠস্বরে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে,
“আমি একটু ব্যস্ত আছি। যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”
“আপনার স্ত্রীর একটা আংটি আমার কাছে আছে। ওটাই দিতে এসেছিলাম স্যার।”
“কিন্তু আমি তো এখনো বিয়ে করিনি।”
আনসারের উত্তরে খানিকটা থতমত খেয়ে যায় জলিল। হালকা ঢোক গিলে শুকনো খটখটে কণ্ঠটাকে খানিকটা ভিজিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে বলে ওঠে,
“এডভোকেট তুর্জয় আহসান সাহেব না আপনি?”

“আমি আনসার, স্যারের অ্যাসিস্টেন্ট। আপনি বরং জিনিসটা আমাকে দিয়ে যান, আমি স্যারকে দিয়ে দেব।”
আনসার ফাইল চেক করতে করতে হাত বাড়িয়ে সামনে তাকাতেই ইতিমধ্যে লোকটা বেরিয়ে গেছে সেখান থেকে। খানিকটা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো আনসার। লোকটার আসল উদ্দেশ্য কি শুধুই নন্দিতাকে কোনো জিনিস দেওয়া ছিল নাকি অন্যকিছু ভেবে পেল না। তবে মনের মাঝে একটা খটকা লেগেই থাকলো।
বিগত তিনদিন ধরে পর পর তুর্জয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েছে জলিল। অথচ সেখানে একই ভাবে তালা ঝোলানো। অবশেষে সে হতাশা নিয়ে আবারও ফিরে গেল শিকদারের ডেরায়।
আজ তার রাতের ডিউটি। ডিউটি টাইমের বেশ খানিকটা সময় আগে এসে পড়েছে আজ সে। উদ্দেশ্য সেই ভদ্রমহিলার সাথে দেখা করা, পুরো ঘটনা তাকে জানানো। কিন্তু ডেরায় ঢোকার সাথে সাথেই ভেতর থেকে ভেসে আসা তীব্র শব্দের উৎসের দিকে ছুটে যায় সে। ভদ্রমহিলাকে কারেন্ট শক দেওয়া হচ্ছে। বিধ্বস্ত অবস্থা তার। তবুও তারই ফাঁকে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলছেন তিনি,

“আমাকে জানে মেরে ফেলার ক্ষমতা তোর নেই। তোর কলিজা এখনও এতোটা সাহস যুগিয়ে উঠতে পারেনি। কমিশনার নওশের শেখরের স্ত্রী আমি। বাঘের সাথে ঘর একমাত্র বাঘিনীই করতে পারে। এটুকু এখনও বুঝলি না?”
মুখোশধারী অজ্ঞাত লোকটা তার জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে শরীর এলিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। অতঃপর রাজকীয় ভঙ্গিতে পা নাড়াতে নাড়াতে বলে উঠলো,
“তোর একমাত্র কলিজার টুকরা মেয়েটার টুকরো টুকরো শরীর কুড়ানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছি এখনও তোকে। নাহলে আমার আর কোনো কাজের না তুই।”

ভদ্রমহিলা হো হো করে হেসে উঠে খানিকটা উচ্চস্বরে বললো,
“যেটার জন্য আমাদের মারলি সেটা না নিয়েই ছেড়ে দিবি? ডকুমেন্টারিটা লাগবে না? ওটা লিক হলেই তো পুরো শিকদার এম্পায়ার নিশ্চিহ্ন।”
লোকটার চালচলনে এবার স্পষ্ট রাগের আভাস লক্ষ করা গেল। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চেয়ারের হাতলে মারলো। অতঃপর রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“মেয়ে, জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গেছে। রাতারাতি গোটা বাড়িতে আগুন লেগে গেলে ব্যাপারটা কেমন হয়? শিকদারের সব শত্রু একসাথে শেষ।”

“আগুন কেন, ওই বাড়ির আশেপাশে একটা চিঙ্গারিও তুর্জয় আহসানের অনুমতি ছাড়া ঢোকার সাহস দেখাতে পারবে না।”
নওরীনের কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে ওঠে মুখোশধারী লোকটা। সাথে সাথেই মুখের উপর থেকে মাস্কটা সরিয়ে তুখোড় দৃষ্টিতে তাকায় সামনে লোহার চেয়ারে বসে থাকা নওরীনের দিকে। ধীর কণ্ঠে বলে,
“এবার ঢুকতে দেবে?”
নওরীন আঁতকে ওঠে। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলে ওঠে,
“তুমি?”

আনসার হাসতে হাসতেই আগের মতো আয়েশী ভঙ্গিতে বসে পড়ে চেয়ারে।
আজগার জলিল ডেরা থেকে বেরিয়ে পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। এখান থেকে তুর্জয়ের বাড়ির রাস্তা প্রায় ঘণ্টা খানেকের পথ। এই অল্প সময়ে গিয়ে আবার ফিরে আসা বেশ কষ্টকর। তাই ডিউটিরত গার্ডের পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে ওঠে,
“ছেলেটার আমার বড় অসুখ রে মতিন। আইজকা হেরে নিয়া ছুটাছুটি করতি হবে। সাহেব ছুটি দিতো না, তুই আইজকা আমার ডিউটি দেইখা লস ভাই। আই আর একদিন তোর ডিউটি দেইখা নিমু।”

মতিন মিঞা ভালো লোক। এমন একজন সহজ সরল আর ভালো লোক কিভাবে যে এই শয়তানের ডেরায় পাহারাদার হিসেবে এলো, জানা নেই। মতিন পকেট থেকে টাকাটা বের করে জলিলের হাতে দিতে দিতে বললো,
“পয়সাডা তুমি রাখো জলিল। আমারও একখান মাইয়া ছেলো, হের জন্য মনটা বড্ডো পোড়ে। তোমার ব্যটার ওষুধ কিইনো এই টেহা দিয়ে। আই এমনিই ডিউটিতে থাকুম। হুকুম কিছু কইলে কমু তোমার শইলটা ভালা না।”
জলিল সাথে সাথেই হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে পড়ে সোনারপুরের উদ্দেশ্যে। বালিগঞ্জ থেকে কয়েকটা স্টেশনের পথ সোনারপুর। এরপর সেখান থেকে মিনিট কুড়ির পথ পেরোলেই সাইয়্যাদ মহর আলী শাহ সরকার দরগাহ। এর কাছেই অবস্থিত গোছানো, পরিমার্জিত দ্বিতল বাড়িটা এডভোকেট তুর্জয় আহসানের পিতৃভিটে।
তুর্জয়ের বালিগঞ্জ এপার্টমেন্টের ওয়াচম্যানের কাছ থেকে খোঁজ পেয়েছিল সে এই ঠিকানা। তবে সেখানে যাওয়ার আগে পুরো ঘটনা সম্পর্কে নওরীনকে জানাতে চাওয়ার উদ্দেশ্যে ডেরায় ফিরেছিল জলিল। কিন্তু সেখানে ভয়াবহ অবস্থা দেখে আর দেরী না করে নির্দিষ্ট কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে সে।

গোটা দিনে তুলাকে একপ্রকার কোলে কোলেই রাখে নন্দিতা। তুলাও বোধহয় তার বকবক করার সঙ্গী পেয়ে সময়টা বেশ এনজয় করছে। রাতে ঘুমানো থেকে শুরু করে তার গোসল, খাওয়া সবটুকুর তদারকি দক্ষ হাতে করছে নন্দিতা।
রুমে ঢুকে নন্দিতা আর তুলাকে একসাথে হাসাহাসি করতে দেখে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তুর্জয়। নন্দিতার গলা দুই হাতে আঁকড়ে অনবরত খিলখিল করে হেসে চলেছে তুলা। আর নন্দিতা তার হাসি আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতে গলায়, পেটে অনরবত নাক ঘষে চলেছে। অতঃপর দুজনে একসাথে হেসে লুটোপুটি করে শুয়ে পড়ে বেডে।
মানুষ অত্যন্ত লোভী এক প্রাণী। লোভ, অহংকার, আত্মঅহমিকা যার শিরায় শিরায় বয়ে বেড়ায় রক্তের সাথে। কারোর সুখী সংসার দেখলেই লালসায় ভরে ওঠে মন। সেই সুখে সুখী হওয়ার সর্বোচ্চ ইচ্ছে পোষণ করতে আগ্রাসী হয়ে পড়ে মন। কখনও নিজেকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে খুঁজে পেতে চায় সেই সুখ আবার কখনও লোভের তাগিদে ছিনিয়ে নিতে চায় সামনের মানুষটার সুখ।

মানুষের সুখ ছিনিয়ে নেওয়ার মানুষ তুর্জয় নয়। তবে লোভী বটে। সুখের লোভ, ভালো থাকার লোভ। এই লোভ আমাদের প্রত্যেকেরই থাকা উচিত। তুলার আশেপাশে নন্দিতাকে যতটুকু সুখী হিতে সে দেখেছে, এ যাবৎ আর কখনোই এমনটা দেখেনি। তুলা যেন সবটুকু সুখের ভাণ্ডার। যার থেকে একটু একটু করে সুখ আহরণ করে বেড়ায় সে রোজ। তার নন্দিতার মুখের অকৃত্রিম হাসিটুকু কিভাবে যেন তার ঠোঁটের কোণ চওড়া করে ফেলে। পুরুষ মানুষের সুখ তো এখানেই। প্রিয়জনের সুখে সুখী অনুভব না করতে পারলে এ আর কেমন পুরুষ মানুষ!
দুজনকে একসাথে দেখতে দেখতে তুর্জয়ের মনে পড়ে গেল নিজেদের সংসারের কথা। নন্দিতাকে নিয়ে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার কথা, তার অভাবনীয় পরিবর্তনের কথা। বিশ্বাস, অবিশ্বাসের দোলাচলে তুর্জয় বিশ্বাসকে খুঁটি করে এগিয়ে চলেছে জীবনে। ভালোবাসার মতো ঠুনকো জিনিসে আজকাল তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে। এই বিশ্বাস যদি তার বোকামী হয়, তবে বোকামিতেই শেষ হোক সে। তবুও জিতে যাক ভালোবাসা। মৃত্যুর শিয়রে দাঁড়িয়ে আধো আধো কণ্ঠে সে বলুক,

“ভালোবাসা জিতে গেল, জিতে গেলাম আমিও। অথচ আমাকে হারাতে গিয়ে সবটুকু হারলে তুমি।”
বিশ্বাসের অবিশ্বাসের খুঁটিটুকু আরও খানিকটা মজবুত করতে এবার বোধহয় কারোর আসা প্রয়োজন। তাদের একান্ত আপন কেউ। তাদের অংশ কেউ।
ভাবনায় বিভোর তুর্জয় ওয়াশরুমে ঢুকেই বেশ জোরালোভাবে স্লিপ খেল। শব্দ পেয়ে ছুটে এলো নন্দিতা আর তুলা দুজনেই। তুলাকে গোসল করাতে করাতে দুষ্টুমিতে এলোমেলো ভাবে সাবানপানি ছড়িয়েছিল সে। অথচ সে কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে দুপুর থেকে এখন বিকাল। আর সেই সাবানপানিতেই অসাবধানে বাজেভাবে স্লিপ করেছে তুর্জয়।
ব্যাথাতুর তুর্জয়কে দেখে ফিক করে হেসে দেয় তুলা। ব্যাপারটাতে সে যেন ভারী মজা পেয়েছে। পাবে নাই বা কেন? যে লোকটা তার প্রিটি আন্টিকে ব্যথা দেয় এতো বাজেভাবে, তাকে ব্যথা পেতে দেখে তো আনন্দ হওয়ারই কথা তার। হাসবে না হাসবে না করে নন্দিতাও শব্দ করে হেসে উঠলো তুলার সঙ্গে। তুর্জয় রাগী দৃষ্টিতে নন্দিতার দিকে তাকালে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নন্দিতা। অতঃপর আবারও শব্দ করে হেসে ফেলে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আকাশে। ঘনীভূত মেঘের ফাঁক ফোকর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে চাঁদের আবছা আলো। কোমরে বেশ ব্যথা পেয়েছে তুর্জয়। ঘটনা শোনার পর লারা বেশ দুঃখী দুঃখী মুখে ক্ষমা চেয়েছে বেশ কয়েকবার। যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে গেছে তুলাকে। তুর্জয় হাসিমুখে ব্যপারটা মেনে নিলেও মানতে পারছে না নন্দিতা। এই কয়েকটা দিন তুলা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্তত এই মুখ গোমরা সাইলেন্সার লোকের থেকে তো ঢের ভালো।
ব্যালকনি থেকে আনমনে তাকিয়ে নন্দিতা। আকাশের দিকে চেয়ে কি যেন ভাবছে। এই বাড়িতে আসার পর থেকেই বাবা মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে তার। এতদিনে তুলাকে কাছে পেয়ে ভুলে ছিলো সবকিছু, কিন্তু আজ! আচ্ছা তার কি কাঁদা উচিৎ? ঠিক যেমন করে মেঘযুক্ত ভারী আকাশ গর্জে ওঠে, বর্ষা করে তার ধরণীতে। তারও কি তর্জনে গর্জনে বর্ষা আনা প্রয়োজন এ চোখে? চোখ যে জ্বালাপোড়া করে, তাও বৃষ্টি নামে না।

বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে নন্দিতাকে একঠাঁয় দেখছে তুর্জয়। নন্দিতার ভারী হৃদয়ের ভারযুক্ত নিঃশ্বাস যেন এখান থেকেই টের পাচ্ছে সে। মেয়েটাকে সে সর্বোচ্চ সুখ দিতে চায়, অথচ কিভাবে তার আজলায় সবটুকু সুখ ঢেলে দেবে খুঁজে পায়না। একসাথে থেকেও কোথাও একটা দূরত্ব যেন থেকেই গেছে তাদের মধ্যে। তপ্ত শ্বাস ফেলে তুর্জয় একরাশ মুগ্ধতা ঢেলে ডেকে উঠল নন্দিতাকে।
“নন্দিতা!”
“বলুন” আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে বলে উঠলো নন্দিতা।
“মন খারাপ?”
“কিজানি”

তুর্জয় স্পষ্ট শুনতে পেল নন্দিতার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। সাথে সাথেই কণ্ঠে দুষ্টুমি এনে বলল,
“কাছে আসুন, প্রত্যেক বছর একটা করে লিটল আহসান আপনার কোলে ধরিয়ে দেব, আই প্রমিজ।”
তুর্জয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো নন্দিতা। বললো,

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ২০

“আগে নিজের ভাঙ্গা কোমরটা নিয়ে একা একা উঠে দাঁড়াতে শিখুন, এরপর বড়ো বড়ো লেকচার দেবেন মিস্টার।”
“শুধু কোমরটাই একটু ভাঙ্গা, বাকি বডি পার্টস্ আমার একদম ঠিকঠাক আছে মিসেস আহসান, ট্রাস্ট মি।”
নন্দিতা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো। তুর্জয় চোখে মুখে ইনোসেন্ট একটা ভাব ধরে বলল,
“বিশ্বাস না হলে, চেক করে দেখতে পারেন।”
“অসভ্য”

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ২৩+২৪