প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৮

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৮
ফিজা সিদ্দিকী

বৃষ্টিস্নাত রক্তিম সন্ধ্যা। একদিকে যেমন রক্তে রাঙা আকাশে সূর্য ডুবতে শুরু করেছে অন্যদিকে আকাশ ভেদ করে ঝরে পড়ছে মাঝারি আকারের বৃষ্টির ফোঁটা। আর এই দুই পরিবেশের মিলন সন্ধিতে নন্দিতা তুর্জয়কে জাপটে ধরে মাথা এলিয়েছে তার বুকে।
কাকভেজা বদনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তুর্জয়। তার ভাবমূর্তির মাঝে খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়না। রাগ কিংবা খুশি কোনো অনুভূতিই সঠিকভাবে প্রকাশ করে না সে। এখনও তার ব্যতিক্রম হলো না। শুধু খানিকটা নরম কণ্ঠে বলল,

“আমি আছি।”
এটা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ। এ যেন কোনো শব্দ নয় আস্ত এক অনুভূতির পশরা, একটা ভরসার কাঁধ। যা এক কথায় বুঝিয়ে দেয় তোমার সুখ কিংবা দুঃখে সাথী হয়ে পাবে আমাকে।
তুর্জয়ের কণ্ঠস্বর শোনামাত্র খানিকটা বিব্রত হলো নন্দিতা। তবে তা মুখে প্রকাশ করে না। পরিবর্তে একগাল ফিকে হেঁসে বলে ওঠে,
“ক্লাবের মেয়েগুলোকে মনে ধরলো না বুঝি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“নাহ, ঘরোয়া আনকোরা জিনিস লাগে আমার। এসব রাস্তার খোলা ব্র্যান্ডের জিনিস আমার ঠিক পোষায় না।”
নন্দিতা কোনো জবাব না দিয়ে উল্টো পিঠ ফিরে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়। অতঃপর আনমনে মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে,
“আপনাকে ভালোবাসলে কি আমার খুব বেশি পাপ হবে?”
বৃষ্টি ভেজা মেয়েলী শরীরের প্রয়তা ভাঁজ আজ বড্ডো অন্যরকম লাগছে তুর্জয়ের। চাইলেও যেন দূরে যেতে পারছে না। অথচ এই কয়েকটা মাস তারা একসাথে ছিলো। এমনকি একই বিছানায় শুয়েও এমনটা অনুভব করেনি কখনও। ঠিক যেন অনেকটা জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের কাছে একটুকরো শুকনো কাঠ এনে রেখে দিলে দপ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি নন্দিতার সামনে এলেই কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতির দোলা খেলছে শরীর জুড়ে।

তুর্জয় আচমকা এগিয়ে গেল নন্দিতার কাছে। কাঁধে উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোঁয়া পেতেই ভ্রু কুঁচকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নন্দিতা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা ডানহাতে তার কোমর আগলে নিলো তুর্জয়। নন্দিতা প্রচণ্ড রকম শক খাওয়ার মত চোখ বড় বড় করে তাকালো তুর্জয়ের দিকে। অথচ সেদিকে কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই তুর্জয়ের। কপালে লেপ্টে থাকা লম্বাটে চুলগুলো বামহাতের মাধ্যমে উপরে ঠেলে দিয়ে অন্যরকম এক দৃষ্টিতে তাকালো সে নন্দিতার দিকে। ভেজা কোমরে উষ্ণ পুরুষালী হাতের অবাধ বিচরণে খেই হারাতে নেয় নন্দিতা। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণ করে ধীর কণ্ঠে বলে ওঠে,

“ছাড়ুন আমাকে।”
তুর্জয় অবাধ্য প্রেমিকের মতো কাঁপা কাঁপা হাত রাখলো নন্দিতার বাম গালে। অতঃপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে লাগামছাড়া কণ্ঠে বলে উঠলো,
“পাগল করার স্পর্ধা দেখিয়েছ, সহ্য করার জন্য প্রস্তুত তো?”
“কিসব বলছেন আপনি?” নন্দিতার ভয়ার্ত কন্ঠে শুনে একদফা বাঁকা হাসে তুর্জয়। অতঃপর মাদক কণ্ঠে বলে ওঠে,
“আমার তোমাকে চাই। এখনই চাই, সবটুকু আমার করে চাই।”
নন্দিতা ছিটকে দূরে সরে যায়। অবাধ ওঠা নামা করতে থাকা হৃদস্পন্দনকে কঠিন শাসনে বেঁধে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“আপনাকে অন্যরকম লাগছে। আপনি সম্ভবত নিজের মধ্যে নেই। আমাদের নীচে যাওয়া উচিত।”
তুর্জয় আচমকা পিছন থেকে দুইহাতে কোমর আঁকড়ে ধরে নন্দিতার। ম্রিয়মান কণ্ঠে বলে,
“তোমাকে এত গভীরভাবে কেন চাইছি জানিনা। শুধু জানি এই মুহূর্তে তোমার প্রত্যাখান আমাকে ভীষণভাবে আহত করবে। প্লীজ, আমাকে সঙ্গ দাও শুধু, বাকিটা আমি দেখে নেব।”
উন্মুক্ত কাঁধে উষ্ণ চুমুর শিহরণে পুরোপুরি খেই হারালো নন্দিতা। শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো তুর্জয়ের উপর। সম্মতি পেয়ে তুর্জয়ও তাকে পাঁজাকোলে তুলে নেমে এলো সিড়ি দিয়ে। অতঃপর নন্দিতাকে বিছানার উপর নামিয়ে চলে গেল দরজা লক করতে।

ফাঁকা ঘরে একপলক চোখ বুলিয়ে তাকালো নন্দিতা। অতঃপর বামহাত এগিয়ে বন্ধ করে দিলো ঘরের সবগুলো লাইট। অতঃপর মনে মনে বেশ বড়সড় এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়তেই পুরুষালী একজোড়া বাহু গভীরভাবে আঁকড়ে ধরলো তাকে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বেপরোয়া কণ্ঠে বলে উঠলো,
“পুরুষমানুষ বাঘের মতো। শিকল ভেঙে বের হওয়া ক্ষুধার্ত বাঘের অত্যাচার একটু সহ্য করে নিও।”
লজ্জায় বেকাবু নন্দিতা আচমকাই দুইহাতে মুখ চেপে ধরলো তুর্জয়ের। অতঃপর লাজুক কণ্ঠে বলল,
“কিছু ছাইপাশ গিলে এসেছেন নাকি আজ? আপনার এই রূপ তো জানা ছিল না আমার।”
“আরও অনেক রূপ দেখতে পাবে আজ এই রাতে। যেটা কেউ কখনও দেখেনি, কেউ কখনও দেখবে না।”
লজ্জায় হাঁসফাঁস করার বদলে নন্দিতা আচমকা হো হো করে হেসে উঠলো। ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে আটকাতে বললো,

“মাথায় দুইটা শিং গজাবে নাকি আজ রাতে? নাকি ফ্যান্টাসি গল্পের মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবেন।”
“কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী আমি।”
কথাটুকু শেষ করেই তুর্জয় ডুব দিল নন্দিতার ভেজা ঠোঁটে। উষ্ণ শীতল ছোঁয়ায় আবেশে চোখ বুঁজে ফেললো নন্দিতা। পরপর চোখের কোল ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ল এক আহ্লাদী অশ্রু।

মধ্যরাত্রি। তুর্জয়ের উন্মুক্ত বুকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে নন্দিতা। ঘুমের মাঝেও বাম হাতে তাকে ভীষণ যত্নে আগলে রেখেছে তুর্জয়। নন্দিতা চোখ খুলে তাকায় তুর্জয়ের দিকে। এই সেই শান্ত, আদুরে চেহারা, যার প্রেমে বারবার পড়ে সে। আচমকা সন্ধ্যার পরের ঘটনা একে একে মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে ওঠে সে। আজকে রাতটা তার কাছে স্বপ্নের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই অপ্রত্যাশিত রাত তার জীবনে আর কখনও আসবে কিনা জানে না। কিংবা এই মানুষটার এই ভালোবাসা, বিশ্বাস আর কখনও পাবে কিনা জানেনা। তাই এই স্মৃতিটুকুই সম্বল তার। একটা শীতল রাত, প্রিয় পুরুষের উষ্ণ বুক, তার সর্বাঙ্গে মিশে যাওয়ার রেশ কখনও না কাটলে কি খুব ক্ষতি হতো? খুব ক্ষতি হতো, যদি জীবনটা এতো ট্র্যাজেডির না হতো।

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৭

নন্দিতা আলতো করে মাথা তুলে তাকায় তুর্জয়ের দিকে। অতঃপর আলতো করে চুমু খায় তার রুক্ষ সিগারেট পোড়া কালচে ঠোঁটে। এরপর দুইগালে, কপালে অজস্র চুমু খেতে খেতে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে ওঠে,
“আমি নিরূপায়। বিশ্বাস করুন, এই জঘন্যতম অপরাধটুকু শুধু আপনার জন্যই।”

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৯