প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১০
নওরিন কবির তিশা
রোজকার মত আজও দিগন্ত চিঁড়ে উদয় হয়েছে অরুণটা। তপ্ত অরুণের কমলাভ রঙটা ছড়িয়েছে সমগ্র অন্তরীক্ষ জুড়ে। জেগেছে পাখির আস্তানা,তাদের কিচিরমিচির ডাকে মুখর হচ্ছে রাঙ্গা সে প্রভাত। তবে আজকের পটভূমি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকাল থেকেও তিহু ব্যস্ত, রান্নাবান্নার কাজে।
নববধূ হিসেবে আজ বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু রান্না করতে হবে তাকে। এটা খান বাড়িরই একটা রীতি, যদিও এটা বিয়ের পরের দিন আয়োজিত হয়,তবে তিহুর ভার্সিটি থাকায় সময় অনুসারে সেটা সম্পন্ন করতে পারে নি সে। এমনিতেই রান্নাবান্না কখনো করা হয়নি তার, বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে ছিল সে। পড়াশোনার জন্য সেপারেট ফ্ল্যাটে থাকাকালীনও, কখনো রান্নাবাড়ার ধার দিয়েও হাঁটেনি সে।
তখন সমস্ত রান্নার কাছে দায়িত্ব ছিল মাহার। স্বভাবতই, গ্যাসটাও চালাতে পারে না সে। তবে সেকাজে তাকে, অবশ্য বাড়ির একজন মেড, আসিয়া হেল্প করেছে। বর্তমানে ইউটিউব থেকে, বিভিন্ন রেসিপি দেখছে সে। সবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে পায়েস বানানোটাই, সিলেক্ট করল সে। রেসিপি টিউটোরিয়াল অনুযায়ী পায়েস বানানো টা একদম ইজি।
শুধুমাত্র পর্যাপ্ত দুধ, পায়েসের চাল আরেকটু চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু দাও, নাড়াচাড়া করো শেষ। তিহুও সেই অনুযায়ী, প্রথমে দুধ গরম করতে গেল। তবে তারা ভাগ্য এতটাই খারাপ যে, অর্ধেক দুধ উতলে নিচেই পড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ পাশে রাফাটা ছিল বলে রক্ষে। সে দ্রুত গ্যাস অফ করে দিল। এদিকে দুধ ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছে-না-তাই অবস্থা। তিহু আশাহত ভঙ্গিমায় তাকালো রাফার দিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
———“ কি করব বলো তো রাফু? ইউটিউবে সবচেয়ে সহজ রেসিপি টিউটোরিয়াল এইটাই। কিন্তু এটাও তো আমি পারলাম না!”
রাফা:“কি করবা বউমনি? আমিও তো রান্না করতে পারি না । নীরা তুই পারিস?”
নীরা যান্ত্রিক গতিতে মাথা নড়লো। তিহু হতাশাগ্রস্থ কন্ঠে বলল,,,—“তাহলে এখন কি করবো?”
তারা তিনজন যখন এই সকল চিন্তায় মশগুল ঠিক তখনই, তাদের সামনে হাজির হলো নীল। সে এসেছিলো বেডটি’র জন্য। প্রতিদিন সকালে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার রুমে চা পৌঁছালেও, আজ কেন তার বিলম্ব হল সেটিই জানতে। তবে কিচেনে পৌঁছে এসে মূল কারণটা উদঘাটন করতে পারল সে । আজ যে কিচেনের সমস্ত দায়িত্ব তিহুর উপর ন্যাস্ত হয়েছে, আর তাই আজকে বাড়ির কাউকেই কিচেনে পাওয়া যাবে না।
নীল এগিয়ে এসে কিচেনের এমন হাল দেখে বলল,,,—“কি হয়েছে এখানে?”
রাফা:“দেখো না ভাইয়া, বউমনি পায়েস করছিল। তবে সবটুকু দুধ নিচে পড়ে গিছে।”
নীল এক ঝলক তাকালো সেই, দুধ পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া, গ্যাসের চুলা আর ফ্লোরের দিকে। অতঃপর রাফা আর নীরার উদ্দেশ্যে বলল,,,—“তোরা কিচেনে কি করছিস? এক্ষুনি যা । আর গিয়ে পড়তে বস!”
নীলের ধমকানিতে দুজনে, ভীত স্বরে মাথা নিচু করে বলল,,,—“আসলে ভাইয়া বউমনিকে হেল্প করতে এসেছিলাম।”
নীল:“হয়েছে হেল্প করা?”
দুজনেই মাথা নাড়লো। নীল,,—“তবে যা এখন । আর একটা কেউ যেন আমি কিচেনের ত্রিসীমান না দেখি। গট ইট?”
দুজনেই সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে ধীর পায়ে সেখান থেকে চলে যায়। তিহু অসহায় দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। এতক্ষণ তো তারা হেল্প করছিল, এখন তারাও চলে গেলে সে একা একা কি করবে? তিহুকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল বললো,,—“আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? সরো।”
তিহু মুখ কুঁচকে বলল,,,—“আপনি ওদেরকে তাড়িয়ে দিলেন কেন? ওরা তো আমাকে হেল্প করছিল না কি?”
নীল তার কথার জবাবে কিচেনের ঢুকে, আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলতে লাগলো,,,—“সে তো দেখতেই পাচ্ছি। কেমন হেল্প করছিল। আরেকটু হলেই তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত।”
তিহু মুখে গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকল। নীল আশেপাশে তাকিয়ে বলল,,,—“সুগার কন্টেনারটা কই?”
তিহু ভ্রু কুঁচকে বলল,,,—“সেটা জেনে আপনি কি করবেন? রান্না করে দিবেন নাকি?”
নীল তিহুর এমন কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,,—“শাট আপ, বেশি কথা কেন বলো? যেটা বললাম সেটা করো কন্টেইনারটা এনে দাও।”
তিহু মুখে বিরক্তির ভাব টেনে বলল,,,—“শাট আপ বলাটা কি আপনার স্বভাব? বিরক্তিকর!”
অতঃপর বিপরীত পাশের একটা শেলফ থেকে চিনির কৌটাটা এনে দিয়ে বলল,,—“এই যে নিন, আপনার সুগার কন্টেনার।মিস্টার শাট আপ সাহেব!”
নীল চিনির কৌটাটা নিতে নিতে এক ঝলক তার দিকে তাকালো। অতঃপর আরেকটা চুলা জ্বালিয়ে, একটা প্যানে পরিমাণমতো দুধ, পায়েসের চাল দিয়ে দক্ষ হতে কুক করতে লাগলো। তিহু অবাক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো নীলকে। বিষ্ময় সূচক কণ্ঠে হঠাৎই বলে উঠলো,,,—“আপনি রান্না করতে পারেন?”
নীল পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে, একবার টেস্ট করল। অতঃপর আরেকবার এক চামচ চিনি দিয়ে বলল,,,—“অ্যাট লিস্ট তোমার থেকে ভালো পারি।”
তার জবাবের সামান্য ভ্রু জড়ালো তিহু। অতঃপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আসছে কিনা। তবে আজকে কিচেনটা সম্পূর্ণ ফাঁকা। কেননা রান্নাটা তাকে সম্পূর্ণ একাই করতে হবে। সে নীলের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। কি দারুন ভাবে দক্ষ শেফ এর মত সবটা নিজের হাতে হ্যান্ডেল করছে সে। তিহু যখন এক মনে তাকে দেখতে ব্যস্ত তখন হঠাৎই নীল বললো ,,,
—“শুধু কি পায়েস বানাতে বলেছে?”
নীলের কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো তিহুর। কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে সে বলে উঠে,,,—“উম-কি বললেন?”
নীল একবার তার দিকে তাকাল অতঃপর বলল,,,
—“শুধু কি পায়েসই বানাতে বলেছে?”
তিহু অন্যদিকে ঘুরে বললো,,,—“স্পেসিফিকালি তো কিছুই বলেনি । জাস্ট বলছে কিছু একটা তৈরি করতে।”
নীল অবাক হয়ে বলল,,,—“সেজন্য তুমি পায়েস তৈরি করছো?”
তিহু:“তা নয় তো কি?”
নীল:“আর ইউ ক্রেজি? সকালের নাস্তায় কেউ এমন মিষ্টি খাবার খায়? তার উপর আব্বুর সুগার আছে!”
তিহু চমকে তাকালো ,,—“বলেন কি? আমি তো জানতাম না, আর তাছাড়া কেউ আমাকে বলেও নি। আর এমনিতেও আমি কোনো রান্না পারি না, ইউটিউবে দেখছিলাম এই রেসিপিটা সহজ সেজন্যই…”
নীল:“সেজন্য তুমি সকাল সকাল এমন একটা মিষ্টি খাবার বানাবা স্টুপিড!”
তিহু ঠোঁট উল্টে বলল,,,—“তা নয় তো কি?”
নীল একবার আশেপাশে তাকালো। অতঃপর তিহুকে এমন আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক ধমক দিয়ে বলল,,,—“স্টুপিডের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? গিয়ে দেখো ডান সাইডের লেফ্ট কর্নারে ফ্লাওয়ার ক্যানিস্টার আছে দ্রুত আনো।”
তিহু দ্রুত গিয়ে কাঙ্খিত শেফটা খুলল। তবে বিপত্তি বাধঁলো অন্য জায়গায়। শেফটা বেশ উঁচুতে, আর তিহুর হাইট সে তুলনায় অনেকটা কম। উপায়ন্ত না পেয়ে, দু পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুলের উপর ভর করে, যেই না সে কন্টেনার টা টান দিল অমনি ভারী বর্ষণের মতো সমস্ত আটা টুকু, হরহরিয়ে, তার মাথার উপর পড়ল।
কিছুটা চোখের ভেতরেও গেল তার, যার দরুন চোখগুলো পিটপিটিয়ে খুলল সে। এদিকে নীল ঝলক পিছনে ঘুরল,তিহুর দেরি হওয়ার কারণ উদঘাটনে। সঙ্গে সঙ্গে তিহু এমন কান্ডে অবাকের চূড়ান্ত সীমায় আরোহন করে ঠোঁটজোড়া কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে গেল তার। ফিসফিসিয়ে সে বলে উঠলো,,,—“What the!”
এদিকে চোখে মুখে আটা পড়ে, বেহাল দশা তিহুর।সে দ্রুত কন্ঠে বলল,,,—“এই যে শুনছেন?এদিকে একটু আসবেন প্লিজ!”
নীল দ্রুত এগিয়ে গেল তিহুর দিকে। অতঃপর বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠে বলল,,,—“এসব কি?”
তিহু:“কৌটাটা পাড়তে গিয়ে পড়ে গিছে! প্লিজ একটু ঝেড়ে দিন না, দেখতে পাচ্ছি না কিছু।”
নীল ফিসফিসিয়ে উচ্চারণ করলো,,—“স্টুপিড কোথাকার!”
অতঃপর তিহুর দিকে এগিয়ে গিয়ে, তার চুল আর চোখের উপরে পড়ে থাকা গমের আটাগুলো অতি যত্নের সহিত ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিতে লাগলো। তার দেওয়া আলতো ফুঁৎকার, আর তার এমন কাছাকাছি উপস্থিতিতে তিহুর দেহে অজানা শিহরণ জাগলো। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হলো তার তরু দেহ,সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে তার হৃদযন্ত্রটা আর স্বাভাবিক নেই। বেপরোয়াভাবে, অস্থির নৃত্য করছে সেটি।
এদিকে নীল মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করছে, তার দেওয়া ফুঁৎকারের কারণে,তিহুর কপালের উপর পড়ে থাকা,বেবি হেয়ারগুলোর অপূর্ব সঞ্চালন। মৃদুমন্দ সেই ফুঁৎকারে, কি দারুণভাবে দুলে উঠছে তারা। মাঝে মাঝে বেবি হেয়ারের অধিকারীনি রমণীটি নিজের চোখ মুখ খিঁজে বন্ধ করে নিচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ লাগছে নীলের কাছে, সুন্দরতম মুহূর্ত হিসেবে ধরা দিচ্ছে তার দৃষ্টিতে।
এদিকে……
দুই তলার করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল মুন্নি। হঠাৎই তার চোখ গেল কিচেনের এমন একটা দৃশ্যের দিকে। দৃষ্টি থমকালো তার, বুকের মাঝে ধু ধু মরুভূমির ন্যায় শূন্যতা অনুভূত হলো । কই সেও তো রান্না করত, কখনো তো নীল ভাই তাকে হেল্প করেনি, ইভেন কখনও তো ঠিকমতো টেস্টও করেনি তার করা রেসিপিটা। আর আজ! মুন্নির বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো একরাশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস। দ্রুত সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে,পিঠ ঠেকালো রেলিংয়ে। মনের মাঝে কোথাও যেন বেজে উঠল পুরাতন গানের সেই সুরটা,,,,
🎶 ওগো নাগর আমার নিঠুর বড়…..
মনও বোঝে না……
আমার ভাঙা খাঁচা পড়েই আছে….
সে তো আসে না……
পোড়া মনে ভালোবাসা…
বাসা বাঁধে না…. 🎶
ডাইনিংয়ে খাওয়া-দাওয়ার ধুম লেগেছে,তিহুর পায়েসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। অথচ কেউ জানেই না যে,যাকে তারা সাধুবাদ জানাচ্ছে, সে পায়েসের ‘প’ও তৈরি করতে জানেনা। তিহুর ভীষণ ইচ্ছা করছে, মানুষগুলোকে সত্য বলে দিতে। তবে নীলের ইশারার দরুন কিছুই করতে পারছে না সে। হঠাৎই খাবার মাঝে ওয়ালিদ খান বললেন,,,
———“মা নুরাইন।”
পিতৃ মমতায় পূর্ণ সেই ডাকে, ঘুরে তাকালো তিহু। রিনরিনে কন্ঠে বলল,,,——“জ্বী আব্বু?”
ওয়ালিদ খান মৃদু হেসে বললেন,,,——“এদিকে এসো।”
“জ্বী আব্বু”——তিহু এগিয়ে আসলো ওয়ালিদ খানের দিকে। ওয়ালিদ খান পকেট থেকে হাজার টাকার কয়েকটা কচকচে নোট বের করে দিয়ে তার হাতে দিয়ে বলেন,,,—“এই নাও এটা তোমার । রান্না করার পুরস্কার স্বরূপ।”
তিহু ইতস্তবোধ করে। টাকার পরিমান নেহাতই কম নয়। কম করে হলেও তাতে ১০ হাজার টাকা তো থাকবেই। সে ইতোস্তো বোধ করছে দেখে মির্জা সূচনা পাশ থেকে বললেন,,,—“নে,নুরাইন। এটা আমাদের বাড়ির নিয়ম।”
হাজারো অস্বস্তি কাজ করলেও সম্মান রক্ষার্থে, তিহু সেটা গ্রহণ করল। অতঃপর পাশ থেকে ওয়ালিমুজ্জামান খানও একই কাজ করলেন। একে একে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু দিলেন নববধূকে। তিহু বেশ অস্বস্তিতে পড়ল, এমনিতেই পায়েসটা সে নিজে তৈরি করিনি, তার উপর এতকিছু! হঠাৎই মির্জা সূচনা নীলের উদ্দেশ্যে বললেন,,,—“নীল!”
নীল খাওয়া থামিয়ে বলল,,,—“জী আম্মু”
মির্জা সূচনা:“আজ তুমি নুরাইনকে নিয়ে, ঘুরতে যাবে।”
নীল কিছু বলতে যেতেই তিনি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,,—“উহু কোনো কথা হবে না। আজকে অফিসে বা পার্টি অফিসে যাওয়া বন্ধ। আজকে তুমি সারাদিন নুরাইনের সাথে থাকবে। বুঝেছ?”
নীল বুঝল এখন না করাটা ঠিক হবে না। এমনিতেই সবাই জানে তাদের লাভ ম্যারেজ, এখন না বললে সবার সন্দেহ জন্মাতে পারে। তাই সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
ভার্সিটির ক্লাস শেষে বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে দিতে, বের হচ্ছিলো নাহা। হঠাৎই প্রধান গেটের দিকে, দৃষ্টি যেতেই থমকালো তার পথচারণা। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, আইয়াজ।আইয়াজকে দেখেই বুকের ভেতর ধুকুপুকু শুরু হয়ে গেল তার । শুকনো ঢোক গিলে সে তার বান্ধবী ওহীর উদ্দেশ্যে বলল,,,—“ওহু,আইয়াজ ভাই!”
তার কথায় ওহী এক ঝলক তাকালো সম্মুখে পুরুষটির পানে। সুঠামদেহি পুরুষটি উচ্চতায়, প্রায় ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি । গায়ের বর্ণ বেশ উজ্জ্বল, তবে মুখের গড়ন অনেকটা ব্রিটিশদের মত। সব মিলিয়ে লোকটা দেখতে মোটামুটি সুন্দরই আছে। ওহী নাহা’র দিকে ফিরে বলল,,,—“হুম, তোর পছন্দ আছে দেখছি!”
নাহা লাজুক হেসে বলল,,—“তা তো থাকতেই হবে! আচ্ছা তাহলে তুই যা । আমিও বরং যাই।”
ওহী দুষ্টু হেসে বিদায় জানালো তাকে। সে চলে যেতেই নাহা এগিয়ে আসলো আইয়াজের দিকে। খাদে নামানো মোলায়েম কন্ঠে বলল,,,—“আজকে আপনি?”
আইয়াজ বরাবরই খুব চাপা স্বভাবের ছেলে। একটু লাজুক টাইপের। মেয়েদের দিকে,চোখে চোখ রেখে কখনোই কথা বলা হয়নি তার। স্বভাবত মাথা নিচু রেখে সে বলল,,,—“জ্বী, আজকে নীল ভাই ভাবীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন। এজন্য তিনি আসতে পারেনি বিধায় আমাকে পাঠিয়েছেন।”
“ওহ আচ্ছা”——— মৃদু কন্ঠে কথাটা বলে গাড়িতে উঠল নাহা। আইয়াজ ও গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল । গাড়ি চলাকালে আর কোন কথোপকথন হলো না তাদের। তবে চোখ,সে ভাষা কি আর বাধা মানে? নাহা’র চোখ বারংবার চলে যাচ্ছিল বহু প্রতীক্ষিত পুরুষটির পানে। তবে আইয়াজ তার দিকে তাকাচ্ছিলো কিনা? বলা দায়।
ঢাকার একটা উন্নত মানের আইসক্রিম পার্লারে বসে আছে তিহু আর নীল । আইসক্রিম তিহুর সবচেয়ে পছন্দের ফাস্টফুডের তালিকায় অন্যতম। আর এই পার্লারের আইসক্রিমই তার অধিক প্রিয় । ভেতরে হলদেটে আলোকরশ্মির ঝলকানি, দেওয়াল গুলো কোমল ধূসর রঙে রঞ্জিত।এক কোণে, কাঁচের বাক্সের আড়ালে সারি সারি আইসক্রিমের সম্ভার! নীল সেখান থেকে একটা স্টাফকে ডেকে বলল,,,—“এই যে ব্রাদার, এদিকে একটু আসো তো ।”
ছেলেটি এগিয়ে এসে নম্রভাবে বলল,,—“জ্বী স্যার বলুন, কি হেল্প করতে পারি?”
নীল এক ঝলক তিহুর দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসুদৃষ্টি মেলে বলল,,,—“ আইসক্রিমের ফ্লেভার কোনটা দিবে?”
তিহু কিছু না ভেবেই দ্রুত বলে উঠলো,,,—“চকলেট কাম স্ট্রবেরি ফ্লেভার।”
নীল এমন অদ্ভুত ফ্লেভারের নাম শুনে ভ্রু জড়ালো। চোখ কুঁচকে বলল,,,—“মানে?”
স্টাফ বয়টাও অবাক হয়ে বলল,,—“স্যরি ম্যাম, বাট এই টাইপের ফ্লেভার তো এখানে নাই।”
তিহু স্টাফ বয়টার দিকে ফিরে বলল—“আপনি বুঝি নতুন?”
ছেলেটা ও মাথা নাড়িয়ে বললো,,,—“জ্বী, কিন্তু ম্যাম আমি শিওর এখানে এই টাইপের কোনো ফ্লেভার নাই।”
তাদের এমন কথোপকথনের মাঝে,এগিয়ে আসলো, একজন পুরাতন স্টাফ। তিহুকে দেখে ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করে,স্টাফ বয়টাকে নির্দেশ দিল একটা চকলেট আর একটা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের আইসক্রিম আনতে। ছেলেটিও বেকুবের মত, সেই নির্দেশ অনুসারে একটা স্ট্রাবেরি ফ্লেভার আর একটা চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম এনে তিহুর সম্মুখে রাখল।
তিহু অতি দ্রুত, আইসক্রিম গুলোকে প্যাকেট থেকে আলাদা করে। স্ট্রবেরি ফ্লেভারটার উপর চকলেট ফ্লেভারের একটা প্রলেপ দিয়ে, তৃপ্তি করে খেতে থাকলো। স্টাফগুলো চলে গেল। এদিকে নীল মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে তিহুর পানে। কি মিষ্টি দেখাচ্ছে তাকে। হঠাৎই তিহু তার দিকে তাকালো। অতঃপর একটুখানি আইসক্রিম তার দিকে এগিয়ে দিয়ে খাওয়ার জন্য বলল।
নীল মাথা নাড়িয়ে জানালো,সে এগুলো পছন্দ করে না। তবে তিহুও নাছোড় বান্দা। আইসক্রিম তো সে নীলকে খাইয়েই ছাড়বে। জোরাজোরিতে একপ্রকার বাধ্য হয়ে শেষমেষ নীল একটু খানি আইসক্রিম গ্রহণ করল। তিহু জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল,,—“কি ভালো না?”
নীল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি সজানালে, তিহু মুচকি হেসে বলল,,—“বলেছিলামই তো,দেখলেন না?”
এদিকে নীল টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে দেখল,তিহুর ঠোঁটের এক প্রান্তে সামান্য আইসক্রিম লেগে আছে। যার দরুন তাকে আরো বেশি মিষ্টি লাগছে। নীল সেদিকে পলকহীনভাবে চেয়েই রইলো। হৃদ কোণে কোথাও যেন আকস্মিক বেজে উঠল,
প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৯
🎶 তোমার নামের রোদ্দুরে….
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে…..
জানিনা যাব কত দূরে এখনো……
আমার পোড়া কপালে….
আর আর আমার সন্ধে সকালে…..
তুমি কেন এলে জানি না এখনো….🎶
