প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৭ (২)

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৭ (২)
নওরিন কবির তিশা

আকাশে চাঁদের ম্লান রশ্মি,রুম জুড়ে উত্তুরে হাওয়ার দাপট। জানালার পর্দাগুলো ফড় ফড় শব্দ করে হুটোপুটি লাগিয়েছে। এতো কিছুর মাঝেও নিঃসাড় শূন্যতায় থমথম করছে কক্ষটা। চওড়া দীঘল আরশিতে একটি নমনীয় মূর্তির চিন্তিত মুখাবয়বের কিঞ্চিৎ দৃশ্যমান ।

চিন্তিত ভঙ্গিমায় জানলার দিকে ঘুরে বসে আছে তিহু । অবাধ্য হাওয়ারা তাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে দুষ্টু প্রবল প্রেমিকের ন্যায়। আধ ভেজা চুল তখনো ছেড়ে রাখা। চঞ্চল হাওয়ার দল চোখে-মুখে ঝাপটা মাখিয়ে বিরক্ত করছে তাকে। ভাঁজকৃত কপালের উপর পড়া বাঁধনহারা একগুচ্ছ চুল বাঁ হাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজেই ফের ধ্যানে মগ্ন হলো সে।
কিছুক্ষণ আগেই মির্জা সূচনা ডেকেছিল তাকে । তার কথা অনুযায়ী তিহু যতদূর বুঝেছে, মনোয়ারা বিবি আর তার স্বামী নীলের ছোট মামা-মামী । আর তারা এখানে এসেছেন নীলের বড় মামার বড় ছেলের, বিয়ের নিমন্ত্রণ নিয়ে । বিয়ের অনুষ্ঠান সম্ভবত এই মাসেরই শেষের দিকে, আর বর্তমানে মাসের মধ্যভাগ চলমান ‌।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাই তারা একেবারে খান মহলের সকলকে নিয়ে পরশুই জাফলং অর্থাৎ নীলের মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। আর ঠিক সেখানেই বিপত্তিটা বেঁধেছে, মির্জা সূচনা চান তার (তিহুর) বাবা-মাসহ পরিবারের সকলের সাথে দেখা করতে। আর তাদেরকেও সাথে করে নিয়ে যেতে।তার ভাষ্যমতে যেহেতু নীল নিজে পছন্দ করে তিহুকে নিজের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেঁচেছে, তাই নিয়ে বা তার পরিবার নিয়ে তার(মির্জা সূচনার) কোনো আপত্তি নেই ।
তবে তিনি একবার তিহুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চান। শুধু তিনি একা নন, ওয়ালিদ খান স্বয়ং এ প্রস্তাব রেখেছেন । এদিকে যার জন্য এত কান্ড তার কোনো হেলদোল নেই।সে দিব্যি নিজের অফিসার পার্টি অফিস নিয়ে ব্যাস্ত, এদিকে যত জ্বালা সব হয়েছে তিহুর । দুশ্চিন্তা আর বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আসলো তার।
হঠাৎই পাশে পড়ে থাকা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটির ভাইব্রেশন দৃষ্টি কাড়লো তার । চটজলদি মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই কুঁচকানো ভ্রু শিথিল হলো তার । ভেতরে সামান্য ভীতি কাজ করলেও, মুখে ফুটলো মুচকি হাসি । রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো আদর মাখানো এক কণ্ঠস্বর,,,

——“আম্মাজান!”
ব্যাস, স্নেহ পূর্ণ সেই কণ্ঠে দুশ্চিন্তারা মুহূর্তেই উবে গেল তিহুর। আহ্লাদি কণ্ঠে বলল,,,
——“আব্বু।”
——“কেমন আছেন আম্মাজান? আপনার তো কোনো খোঁজ খবরই নাই । ছেলেটাকে কি ভুলে গেলেন?”
বাবার এমন কথা এখানে মুচকি হাসলো তিহু । অপর পাশ থেকে আবারও ভেসে আসলো নওশাদ হকের কণ্ঠ,,
——“কি অবস্থা আম্মাজান? পড়াশোনা কেমন চলছে?”
——“আলহামদুলিল্লাহ আব্বু, বেশ ভালোই।”
——“আমি তো জানি আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভালো। আর সে সবসময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এজন্যই তো তোমার মাকে ঘনঘন যেতে বারণ করেছি। কাল আবার তোমার ছোট চাচ্চু যেতে চাচ্ছিল,বলল তোমাকে অনেক মিস করছে। কিন্তু আমিই বারণ করেছি।”

ছোট চাচ্চুর নাম শুনেই তিহুর চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল। মানুষটা যতটা ভালো ঠিক ততটাই রক্ষণশীল।তিহুর উপর তার যত্নটা যেমন মাত্রাতিরিক্ত, তেমনই বাড়ির অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় তার ব্যাপারে অতিরিক্ত রক্ষণশীল তিনি, এমনকি নওশাদ হকের চেয়েও।তিহু চুপ করে থাকায় অপর পাশ থেকে নওশাদ হক বলল,,,
——“আম্মাজান? কি হলো?”
——“ক-কিছু না আব্বু। আসলে পড়ছিলাম তো।”
——“তুমি পড়ছিলে?”
——“জ্বী;”
——“আচ্ছা আম্মাজান আপনি পড়েন। আমি রাখি। আর কোনো প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন করবেন।ঠিক আছে?”
নওশাদ হক ফোন রেখে দিতে যেতেই তিহু দ্রুত কন্ঠে বলল,,,——“আব্বু, চাচ্চু কি আসবে?”

——“না আম্মাজান, আমি মানা করেছি। কিন্তু আপনি যদি চান…”
——“দরকার নেই আব্বু, আসলে আমার টেস্ট চলছে তো। আর বাসায় আমার সাথে মাহাও থাকে। তাই….”
পড়াশোনায় মেয়েরা আগ্রহ দেখে, খানিক মুচকি হাসলেন নওশাদ হক। অতঃপর বললেন,,,
——“আপনি পড়ুন, এমনিতেই অনেক সময় নিয়েছি। আর বেশি রাত জেগে পড়বেন না, অসুস্থ হয়ে পড়বেন। খাবারগুলো সময়মতো খেয়ে নিবেন। কোনো প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিবেন।”
——“আচ্ছা আব্বু । আল্লাহ হাফেজ আর আসসালামু আলাইকুম।”
——“ওয়ালাইকুম আসসালাম ।”
বাবা ফোন কেটে দিতেই, যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল তিহু। মোবাইলটা দূরে ছুঁড়ে ফেলল, ঠোঁট গোল করে একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে দরজার দিকে তাকালো । সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি থামল তার, দ্রুত বিছানা থেকে উঠে কাঙ্খিত ব্যক্তিটির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,,,

——“আরে নাহু তুমি? কখন এলে? আর ভেতরে না এসে দাঁড়িয়ে আছো কেন? টেস্ট কেমন হয়েছে?”
নাহা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,
——“ওরে বাবা, এতগুলো প্রশ্ন? কোনটা রেখে কোনটার অ্যান্সার দিব?”
তিহু হাসলো,,——“কোনটারই দিতে হবে না আগে তুমি বসো ।”
নাহা বসতে বসতে একবার, তিহুর চুলের পানে তাকায়,,——“মাশাআল্লাহ বউমনি, তোমার চুলগুলো কিন্তু মারাত্মক!”
বলতে বলতেই তিহুর সুদীর্ঘ কেশরাজে আলতো স্পর্শ করে নাহা। সঙ্গে সঙ্গে দুষ্টু হেসে তিহুর পানে চেয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,,,

——“কি ব্যাপার বউ মনি? (একবার আশেপাশে তাকায় সে) কোথাও তো আমার, ভাইয়াকে দেখছি না । আমি যতদূর জানি ও বাসায়ও নেই। তাহলে অসময়ে তোমার গোসল করার কারণ?”
নাহার কথার মর্ম বুঝে,তিহু আরক্ত হয়ে ওঠে। পরক্ষণেই তার কথার জবাবে সে দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,
——“মেয়ে দেখে বড় হয়ে গিছে! বিয়ে দিতে হবে, দেখছি! আজই আম্মুর সাথে কথা বলবো।আর আমি ভার্সিটি থেকে এসে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম বলে ফ্রেশ হতে একটু শাওয়ার নিলাম।”
——“ওহ,তাই বলো। আমি ভাবলাম কি নাকি! বাই দ্যা ওয়ে, আমি এসেছিলাম তোমাকে ডাকতে। চলো আমার রুমে, আজ জমিয়ে মুভি দেখব। অনেকদিন ধরেই সিলেক্ট করে রেখেছি। নিহিত,নীরা রাফা সবাই আমার রুম। দ্রুত চলো।”
নাহা একপ্রকার টেনেই বের করে নিয়ে গেল তিহুকে।

ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ঃ৩০ এসে থেমেছে‌ । রুমের সামনে এসে থামলো তিহুর চঞ্চল পা জোড়া । স্তব্ধ হলো নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ । আলতো স্পর্শে ভাজানো দরজাটা খুললো সে । দরজার আড়ালে থাকা, রুমের ডিম লাইটের নিয়ন আলোয় ডাগর চক্ষুদ্বয় সামান্য সন্ধিহান হলো। এতক্ষণ তো সে নাহা’র রুমে ছিলো । তাহলে রুমে কে? নীল এসেছে?
কিন্তু কেউ তো তাকে ডাকলো না । পরক্ষণেই তার মনে পড়ল, তারা সবাই রুমের দরজা দিয়ে, রুম টাকে পুরো সিনেমা হল করে বসেছিল । কারো ঢোকাও নিষিদ্ধ ছিল। ভাবতে ভাবতে এসেই রুমের লাইট জ্বালালো তিহু। এক ঝলক সোফা তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হলো, ঘুমন্ত নীলের নিষ্পাপ মুখশ্রী। হঠাৎ তীব্র আলোয় ঘুমন্ত চোখ দুটো খিঁচে রেখেছে সে । তিহু আনমনে মুচকি হাসলো।

পরক্ষণেই মুখ বাঁকালো। এই লোকটার জন্যই যত জ্বালা তিহুর, অথচ তিহুকে রেখে দিব্যি ঘুমাচ্ছে সে। আজ সারাদিন কোনো খোঁজ খবর ছিল না তার, তিহুকে হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন করে নিজের দিদারসে নিজ কাজে লিপ্ত ছিলো। তিহু অবশ্য দুপুরে একবার কল করেছিল, সে খেয়েছে কিনা জানার জন্য। সে না খেলে তো আবার তিহু খেতে পারবে না!
জ্বালার শেষ আছে, সে ভালো লাগলে খাবে না লাগলে খাবে না। তাতে এই লোকের খাওয়া,না খাওয়া দিয়ে কি যায় আসে! বিরক্তি! ভাবতে ভাবতেই তিহুর চোখ যায়, নিচে পড়ে থাকা কুশনটির দিকে। নীলের ডান পাশ থেকে, পড়ে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে সে। তিহু কিছু একটা ভেবে, সেটা তুলে যথাস্থানে রাখার জন্য পা বাড়ালো।
বোকা সে খেয়ালই করল না, নিচেই তরল জাতীয় কিছু পড়ে স্থানটাকে পিচ্ছিল করে তুলেছে। দু’পা বাড়াতেই অসাবধানতাবশত তীব্র বেগে আছাড় খেলো সে। তবে পরবর্তী অভিজ্ঞতাটা আরো বেশি করুন।আছাড় খেয়ে পড়বে তো পড়বে, ঠিক গিয়ে নীলের প্রশস্ত বক্ষদেশের মধ্যেখানে, গিয়ে পড়েছে। মাথাটা ঠেকেছে নীলের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আবৃত তীক্ষ্ণ জ-লাইনের চিবুকটার নিচে।

এদিকে নিজের উপর ক্ষীণ তবে সামর্থ্য কিছুর হঠাৎ বর্ষণে তড়িৎ বেগে চোখ খুলল নীল। রুমের প্রচন্ড আলোক রশ্মিতে, চোখ দুটো বুঁজে আসলেও সমস্ত শক্তি সেটি খুলল নীল। পরক্ষণে নিচে তাকাতে গিয়ে তার চিবুকটা বিধলো এক সুরভিত নরম কেশগুচ্ছের মাঝে। সে বুঝলো আর বেপরোয়া, উড়নচণ্ডী বউটা বর্তমানে তার বক্ষ দেশে অবস্থান করছে। সামান্য মুচকি হাসলো সে, পরক্ষণেই গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
“আছাড় খেয়ে পড়ার জন্য কি সব সময় আমাকেই খুঁজে পাও?”
তার কথায় ধীরে ধীরে মাথাটা তুললো তিহু, চোখ পিটপিট করে তাকালো নীলের পানে ‌। এতে নীল বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্তির কারণ হিসেবে তিহু মনে মনে নিজের এমন হঠাৎ আছাড় খাওয়াকে দায়ী করলেও, নীল আদতে বিরক্ত হয়েছে তার এমন মাথা তোলায়। এতক্ষণ বেশ, তার কেশরাজিতে মুখ ডুবিয়ে, সেই মিষ্টি সুবাস অনুভব করছিল সে। তবে তিহু হুট করে মাথা তোলায়, অনুভূতিতে জল ঢালল নীলের ‌। ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তিহু শোধরানো কণ্ঠে বললো,,,

“স্যরি, আসলে আমি বুঝতে পারিনি;যে এখানটা এমন পিচ্ছিল হয়ে আছে।”
বলে সে উঠতে যেতেই,অসতর্ক পদক্ষেপে সদ্য-উত্থিত চরণদ্বয় ফের একই ভঙ্গিমায় দুলে উঠলো।উদ্ভট আকর্ষণে ফের ‌নীলের প্রশস্ত বক্ষের উপর ধড়াস করে পড়লো।তবে, অনাকাঙ্ক্ষিত একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে এবার মুখের উপর মুখ! মিলিত হলো ওষ্টদ্বয়। ঘটনার আকস্মিকতায় নীল কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ভীতি লজ্জার মিশ্রণে বড় বড় হয়ে গেল তিহুর ডাগর চক্ষুদ্বয়।
রুমের দরজাটা খোলাই ছিল, তিহু না খেয়েই রুমে চলে এসেছে ‌। তাই নাহা একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে তার জন্য আনছিল। হঠাৎ রুমের সামনে আসতেই এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্যে, চোখ বড় বড় হল তার। কিঞ্চিৎ হাঁ হলো গেলো গোলাপি অধর। সামান্য শব্দ বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে।
যদিও ততক্ষণে তিহু নিজের ঠোঁট নীলের ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এখনো নীলের ওপরে ঠিক সেভাবেই উপুড় হয়ে পড়ে আছে সে।নাহা’র কণ্ঠে হচকিত হয়ে, বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো দুজনেই।নীল দ্রুত উঠে বসলো;তিহু একপ্রকার ছিটকে সরে আসল,বেপরোয়া গতিতে ছুটে এসে নাহা’র পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“ত-তুমি?”
নাহা পিছনে না তাকিয়েই বলল,,
“আসলে তুমি তো কিছু খাওনি, এজন্যই ‌খাবার দিতে এসেছিলাম!”
“আমি খাব না । তুমি বরং নিয়ে যাও, তখন তো কত কিছু খেলাম। চিপস আর পপকনের ঢেকুর এখনো উঠেছে।”
“আচ্ছা।”
কোনোমতে জবাবটা দিয়েই চট জলদি পায়ে সেখান থেকে ‌একপ্রকার দৌড়ে পালালো নাহা। সে দৃষ্টির আড়ালে যেতেই দ্রুত রুমে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিল তিহু। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে একবার পেছনে ঘুরে তাকালো। নীল সবে ফোনটা খুলে কিছু একটা স্ক্রল করছে, তিহু কোনো কথা না বলে বিছানায় গিয়ে; যেই না লাইট নিভাতে যাবে তক্ষুনি নীল বাঁধা দিয়ে বলল,,,

“লাইট অফ করবে না একদম।”
“কেন?”——তিহুর কণ্ঠে বিস্ময় ।
“ঘুম আসছে না আমার।”
“আপনার ঘুম না আসলে আমি কি করবো?”
“যা ইচ্ছা করো। কিন্তু লাইট নেভানো যাবে না।”
“আরে আজব লোক তো! বলছি তো আমার ঘুম আসছে। ঘড়ির কাঁটায় কয়টা বাজে দেখেছেন?”
“ওকে, অ্যাজ ইউর উইশ। তুমি লাইট নেভাও। আমি বাইরে যাচ্ছি।”
“জাহান্নামে যান। তাতে আমার কি?”——ফিসফিস করে বলল তিহু।
তবে তার ফিসফিসানিও যেন শুনে ফেলল নীল। তেমনি ভঙ্গিমায় বলল,,,——“সুইমিংপুলের অধিবাসীদের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই?”

“ভয় দেখাচ্ছেন?”
“না, তোমার সমগোত্রীয়দের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি ।”
“মানে? আপনি কি আমাকে ভূত বললেন?”
“না,না। একদম না। তুমি ভূত হতে যাবে কেন? তুমি তো পেত্নী। ওই শ্যাওড়া গাছে ঝুলে থাকা পেত্নী।”
তিহু এবার তেড়ে আসলো যেন,,,——“ইউউউউউ…..! আমি পেত্নী হলে আপনিও মামদো। মেছো ভূত কোথাকার!”
সে সামান্য এগিয়ে আসতেই, নীল হাতে থাকা রিমোট টা দিয়ে,রুমের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিলো। কুটিল এক অন্ধকারে পরিণত হলো সমগ্র রুম । ভয়ে কম্পিত হলো তিহুর ক্ষীণ কায়া। দ্রুত দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরল নীলকে। নীল পাশে থাকা লাইটারটা অন করে, মৃদু হলদেটে আলোয় তিহুর ভীত মুখশ্রী দেখে বাঁকা হেসে বলল,,,

“শেষমেষ ভয় পেয়ে সেই মামদো, মেছো ভূতের কাছেই আসলে?”
তিহু কিছুটা লজ্জা পেলেও, মুখে সেটা প্রকাশ না করে বলল,,,
“আপনি সিগারেট খেয়েছেন না? এইজন্যই তো বলি লাইটার কেন কাছে?”
“লাইটার থাকলেই সিগারেট খাওয়া হয়ে যায়?”
“তাছাড়া লাইটার আর কোন কাজে লাগে?”
“হুম..? পেত্নী তাড়াতেও কিন্তু মানুষ আগুন ব্যবহার করে,আর আগুন জ্বালাতে লাইটার!”
“বাজে কথা বাদ দিন, আর রুমের লাইট জ্বালান।”
“যদি না জ্বালাই?”
“তাহলে কিন্তু আমি সারারাত এখানে এভাবেই বসে থাকবো। ”

“ডোন্ট প্রবলেম।থাকো বসে।”
“ঘুমাতে দিবো না কিন্তু আপনাকে।”
“শুধু একরাত কেন? তুমি পাশে থাকলে জীবনের প্রতিটা ‌রাত নির্ঘুম কাটাতে প্রস্তুত আছি।”
“দেখুন আমার ঘুম আসছে।”
“তো ঘুমাও।কে বারণ করেছে?”
তিহু খুঁতখুঁতে কেঁদে বলল,,,——“লাইট জ্বালান,নইলে কামড়ে দিবো কিন্তু।”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৭

নীল তিহুর এমন বাচ্চা-বাচ্চা হুমকিতে প্রসারিত হেসে বলল,,——“সমস্যা নেই লাভ বাইট বলে চালিয়ে নিব।”
“ধুর কচু,কি বলি আর কি অ্যান্সার দেয়।”
“যেমন প্রশ্ন,তেমন অ্যান্সার।”
“আরে ধ্যাত!”
“ধ্যাত টু !”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here