প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৪

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৪
নওরিন কবির তিশা

গভীর নির্জন এক নিশুতি। কোলাহল শূন্য জমিদার বাড়ির মৃদু আলোকসজ্জিত আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো নবীন প্রাণ। রিশাদ, নিহিত,ফাহাদ,সামির আর জুনাইদ। সেই সঙ্গে জুটেছে আরেক নোবেল প্রাপ্ত বজ্জাত, সামিরের অতিব প্রিয় বন্ধু রুদ্র।
ঘড়ির কাঁটায় রাত দুটো চলমান। এই মধ্যরাতে এতগুলো মাথা একত্র হয়েছে এক মহা অকাজের উদ্দেশ্যে। রুদ্র রিশাদের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,,

—’হেই ব্রো!হোয়াটস আপ? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
পাশ থেকে সামির বলল,,—’হা’রাম’জাদা, আস্তে কথা বল। দাদিজান যদি জানতে পারে এই রাতে আমরা কয়জন মিলে কি করতে যাচ্ছি তাহলে কালকে থেকে রাস্তায় থালা হাতে নিয়ে বসা লাগবে।
জুনাইদ হেসে বলল,,—’ডোন্ট ওয়ারি, সঙ্গে একটু জিকির টানবি দেখবি সেই ইনকাম।
—’চুপ থাক।
রিশাদ রুদ্রর জবাবে বলল,,—’আ’ম আ গেস্ট।
—’কি বলো? তা তোমাকে এই ব্যাপারে ইনভলভ কে করল? শালারা নিজে তো জাহান্নামে যাবে সে সাথে তোমাকেও নেবে।
নিহিত:’আহারে সোনা গো আমার, তা মনে হচ্ছে তুমি একেবারে কনফার্ম জান্নাতি।
রুদ্র:’তোদের থেকে পাপের পরিমান কম আছে আমার।
জুনাইদ:’রাত কি বাড়ছে না কমছে? ফাজলামি না করে দ্রুত চল,রাত পোহালে বিয়ে। চারটের ভিতরে ফিরে আসতে হবে।
সামির:’হ্যাঁ হ্যাঁ চল চল। দ্রুত পাঁ চালা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পশ্চাৎ পাশের পাঁচিল টোপকে ‌বিশাল এক নারকেল বাগানে একে একে প্রবেশ করল সবগুলো। সারি সারি গাছগুলো বিন্যস্ত ভাবে সজ্জিত। দাম্ভিক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে। সবাই ধীরে সুস্থে নামতে পারলেও ফাহাদ নামার সময় সামান্য শব্দ হলো। রেগে তার মাথায় গাট্টা মারল জুনাইদ। লুকোচুরি পায়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে।
খানিকক্ষণ পর বাগানের প্রায় মধ্যভাগে এসে থামলো সবগুলো। সামির সতর্ক কণ্ঠে বললো,,—’এবার লাইট জ্বালা, ভালো করে দেখ কোনটায় ডাবের পরিমাণ বেশি। ওইটাই উঠবি।

ফাহাদ টর্চ জ্বালালো। তাদের সম্মুখে দন্ডায়মান গাছেই সারি সারি ডাব ঝুলে আছে। তা দেখে সামির বলল,,—’গাছে উঠবি কোনডা?
একসঙ্গে নাকচ করে সবাই বলল,,—’আমি গাছে উঠতে পারি না।
সবার একই উত্তরে, রেগে গিয়ে সামির বলল,,—’গাছে উঠতে পারো না তাহলে কি রাতের বেলায় এই বাগানে পে’ত্নীর সাথে লুঙ্গি ডান্স করতে এসেছো মরা কাঠের দল।
অতঃপর সে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,—’গাছে ওঠ বেডা। তুই না গাছে উঠতে ওস্তাদ।
—’না না বাবা একদম না, এত রাতে কাছে উঠে যদি আমার কিছু একটা হয়ে যায়। আমার বউটা বিয়ে করার আগেই বিধবা হয়ে যাবে রে।
তার কথায় নিহিত তার পিছনে লাথি মেরে বলল,,—’শা’লা বউহীন বউ পাগলা ওরফে রুদ্র ছাগলা গাছে উঠ।

—’চাঠি খাবি কিন্তু নিহিত।
—’আরে তুই আগে গাছে ওঠ। বাদ বাকি কথা পরে হবে।
—’অসহায় নাদান পেয়ে ফাঁসিয়ে দিলি তো। ব্যাপার না, উঠতেছি আমি গাছে। তবে আমার যদি কিছু হয় সব দোষ তোদের। ঠ্যাং ধরে টেনে নিয়ে যাব আমার সঙ্গে সবগুলোকে।
—’ সে যাস না হয়।এখন গাছে ওঠে।
রুদ্র বাচ্চাদের মত মুখ করে গাছে উঠতে যেতেই রিশাদ বাঁধা দিয়ে বলল,,—’আরে দাঁড়াও।
রুদ্র হেসে বলল,,—’এই না হলে আমার বন্ধু। কিভাবে আমাকে বাঁচালো!আজ থেকে তুমি আমার কলিজার বন্ধু, রিশাদ।

—’তোমায় কে আটকালো?
—’তুমি না মাত্র বাধা দিলে?
—’ও তো আলাদা কারণে। তোমরা জানো না চুরি করার আগে দোয়া করতে হয়।
—’শালার জিন্দেগি। কোথায় ভাবলাম…! আচ্ছা কি বললে তুমি? দোয়া করতে হয় মানে?
—’আরে জানো না চুরি করার আগে, মালিকের নামে দোয়া করে নিতে হয় তাহলে গুনাহ টা একটু কম হয়। যাকে বলে লাইসেন্স প্রাপ্ত চুরি।
সবাই অবাক হয়ে বলল,,—’এটা তো জানা ছিল না।
—’ব্যাপার না আজ থেকে জানো।

—’আচ্ছা দোয়া করো তাহলে আমরাও আছি সাথে।
—’এমনে না তো দুই হাত উঁচু করে বলো,হে আল্লাহ।
তারা হাত উঁচু করে বলল,,হে আল্লাহ।
—’আমরা যার গাছের ডাব চুরি করছি সে যেনো…..!
সবাই একযোগে বলল,,‌—’আমরা যার গাছের ডাব চুরি করছি সে যেনো।
—’সে যেনো…..
—’সে যেনো…..

—’সে যেন দ্রুত পটল তোলে যাতে আমাদের আর চুরি করে ডাব না পাড়া লাগে।
সামির হেসে বলল,,—’ঝাক্কাস দোয়া করছো মামু। ওই ব্যাডার বয়স প্রায় একশো। আজরাইল তিনবার এসে ফিরে গেছে তাও এখনো শকুনের মত তাকিয়ে বসে থাকে বাগানের দিকে।
রুদ্র:’লও, বহুৎ হইছে। এবার তোরা পাহারা দে আমি গাছে উঠি।
সামির:’হ্যাঁ, জলদি উঠ।
রুদ্র সতর্কভাবে ধীরে ধীরে উঠে পড়ল গাছে। সে যখন ঠিক মধ্যমভাগে, তক্ষুনিশ ভেসে আসলো কোনো মধ্যবয়সী পুরুষের কন্ঠ,,,
—’কারা রে? ওখানে কারা?

সবগুলো বিস্ফোরিত নয়নে একে অপরের দিকে তাকালো, এদিকে গাছের মাঝে থাকা রুদ্র অসহায় দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে সাহায্য চাইতে যাবে তার মধ্যেই দেখতে পায় সবগুলো ইতিমধ্যেই তাকে রেখে দৌড় লাগিয়েছে। রুদ্র সবগুলোকে ইচ্ছামত গালি দিয়ে, নিজেকে বাঁচাবার প্রয়াসে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালো দ্রুত গাছে ওঠার।
এদিকে চিৎকার করা লোকটা টর্চ জ্বালিয়ে দ্রুত এদিকে এগিয়ে আসছে আর আরও জোরে চিৎকার করছে, অন্যদিকে দৌড়ে পালাতে গিয়ে রিশাদের জুতা খুলে থেকে গেছে। সে সেটা তুলতেও যায়নি। লোকটা এগিয়ে এসে পায়ে কিছু অনুভব করল। আলো নিচে ধরতেই দৃশ্যমান হলো জুতাটা। ব্যাস সে বুঝে গেল আসল কান্ডটা। জুতা তুলে দৌড়ে পালানো দলটার দিকে ছুঁড়ে মারল।
এদিকে তার ছুড়ে মারা জুতাটা নিহিতের কাঁধে এসে লাগতেই নিহিত বলল,,—’কোন ড্যাশের* বাচ্চা মারলো রে? বেডা তোর বিয়ে হবে না।
জুনাইদ পাশ থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,,—’আরে ওটা খালেক চাচা, বেডার বিয়ে হয়ে গেছে।
—’ও তাইলে বাচ্চা হবে না।
—’বাচ্চাও হয়ে গেছে শা*লা।

সকাল থেকেই সারা বাড়ি জুড়ে হুলুস্থুল, বরযাত্রী যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।ঘড়ির কাঁটায় দশটা চলমান। কিছুক্ষণের মাঝে সবাই রওনা হবে কোনে বাড়ির উদ্দেশ্যে। মেয়েরা সবাই জুনাইয়ার রুমে। রেডি হচ্ছে একে একে। তিহুকে আজ জোর করে শাড়ি পরিয়েছে জুনাইয়া। চুলগুলো ভেঁজা থাকায় এখনো বাঁধনহারা তারা। সামান্য মেকআপেই স্বর্গীয় অপ্সরা লাগছে তাকে।
তাকে রেডি করে জুনাইয়া বলল,,—’মাশাআল্লাহ! কি মিষ্টি লাগছে। নজর না লাগুক।
তিহু সামান্য মুচকি হাসলো। জুনাইয়া ফের বলল,,—’সুইটহার্ট, তাহলে তুমি একটু হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নাও প্লিজ। আমিও একটু রেডি হয়ে নেই। আমিই শুকিয়ে দিতাম কিন্তু আইরাতকে আম্মু নিয়ে গেছে, আর আমার কাছে আসলে প্রচুর জ্বালাবে । রেডি হতে দেবে না।
—’ইটস ওকে আপু তুমি, রেডি হও আমি চুল শুকিয়ে আসছি।
—’থ্যাংক ইউ সুইটহার্ট। আচ্ছা যাও, দ্রুত যাও।
তিহু মুচকি হেসে মাহা,নাহা,রাফা,নীরাদের থেকে বিদায় নিয়ে, এগিয়ে চললো রুমের দিকে।

রুমের সামনে এসে থামল তিহু। পর্যায়ক্রমে মনে পড়লো কাল রাতের ঘটনাগুলো। সামান্য মুচকি হাসলো সে। অতঃপর রুমে ঢুকে, হেয়ার ড্রায়ার খুঁজতে গিয়ে নীলকে না দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ল সে। তার চঞ্চল চক্ষুজোড়া এক সুদর্শন পুরুষকে খোঁজার প্রয়াসে তীব্র চেষ্টা চালালো।
কোথাও তাকে না দেখতে পেয়ে, যেই না সে ওয়াশরুমের দিকে উঁকি মারবে তখনই পিছন থেকে, নীল বললো,—’আমাকে খুঁজছেন ম্যাডাম?
হঠাৎ নীলের এমন কন্ঠে ভূত দেখার মত চমকে উঠল তিহু। দ্রুত পিছন ঘুরে অপ্রস্তুত কণ্ঠে বল,,—’ন-না না তো। আমি তো দেখছিলাম ওয়াশরুমে কে আছে?
নীল বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ানো, তিহুকে এমন তোতলাতে দেখে, বাঁকা হেসে বলল,,—’তাই নাকি?
—’তা নয় তো আর কি?

“আমি তো ভাবছিলাম আপনি আমাকে খুজছেন?”——কথাটা বলতে বলতে তার দিকে সামান্য এগোলো নীল।
‘বয়েই গেছে’——তার এমন কান্ডে দু কদম পিছনে তিহু।
তবে নীল থামলো না, এগিয়ে যেতে যেতে বললো,-—‘এতটা ভুল করলাম?
নীলের এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে পিছোচ্ছে তিহু,,—’করতে পারেন।
নীল এগিয়ে চলেছে। তিহু পিছাতে পিছাতে এক পর্যায়ে টের পেল তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। সে সরতে করতে যাবে তার আগেই তার পেছনের দেওয়ালে শক্তপোক্ত হাত রাখল নীল। বাঁ পাশে বাধা পেয়ে, অপর পাশ দিয়ে তিহু যেতে নিলেই তাকে টেনে নিজের কাছাকাছি এনে পিছন ঘুরালো নীল। নীলের এমন কাণ্ডে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে তিহুর, অস্থির-বিচলিত হয়ে অদ্ভুত রকম ছটফটাচ্ছে।
তার এমন কাণ্ডে নীল সামান্য বাঁকা হাসলো। ধীরেসুস্থে লাগিয়ে দিল তার খুলে থাকা ব্লাউজের হুকটা। বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তিহু, আসলে বড্ড হাবা সে। ব্লাউজের হুক খোলা আর তার কোনো হেলদোল নেই, দিব্যি লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সারা বাড়ি। লজ্জায় মিনমিনিয়ে সে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই, তার জলসিক্ত চুলে মুখ ডোবালো নীল।
নীলের এমন কান্ডে চোখ যেন কোটর থেকে বের হয়ে আসবে তিহুর। লজ্জায় আরক্ত হলো সে। সামান্য নড়তেই নীল তাকে বাধা দিয়ে তার কোমর জড়িয়ে নিজেই কাছে টেনে, গভীর কণ্ঠে বললো,,,
—’উসস, ডোন্ট মুভ।
শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা তিহুর। লজ্জায় লাজুক লতার ন্যায় নুইয়ে পরলো সে। কিছু বলার আগেই নীল বলল,,—’হেজাব বাঁধো নাই কেন?

—’চ-চুল ভেঁজা।
—’শুকালেই বেঁধে নিবা।
—’আ-আচ্ছা।
—’কি শ্যাম্পু ইউজ করো বলোতো?
তার কথার মানে বুঝতে না পেরে তিহু বলল —’হু?
—’বলছি কি শ্যাম্পু ইউজ করো? এতো পুরোই মা’তা’ল করে দিচ্ছে আমায়, তুমি কি জানো? তোমার এই চুলের ঘ্রাণ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মা’দ’ককেও হার মানাতে সক্ষম।
লজ্জায় আরক্ত হলো তিহু, পৃথিবীর সব লাজুকতা যেন আজ তাহাতে মিশেছে। নীলের প্রতিটি কথায় দেহে নাম না জানা শিহরণ জাগছে তার, হৃদয়ের তৈরি হচ্ছে অদ্ভুত দোলাচল।

প্রস্তুতি শেষে বেলা প্রায় এগারোটার দিকে সকলে রওনা হলো কুহেলিকার অর্থাৎ কোণে বাড়ির উদ্দেশ্য। মির্জা মহল থেকে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। প্রবীণ সদস্যদের মধ্যে আছেন বাড়ির তিন কর্তা। তারা অবশ্য আলাদা গাড়িতে উঠেছেন। সৌভিকের সাথে উঠেছে তার সব ভাইয়েরা। তবে নীল আর তিহু যাবে একান্তে, সেই ব্যবস্থাই করেছেন নুরজাহান বেগম।
একে একে নবীন প্রাণ গুলোর বেরোবার কালে, নুরজাহান বেগম ফের নিশ্চিত হতে শুধালেন,,—’আমার হুর পরীকে নিয়ে আলাদা যাচ্ছ তো নানু ভাই?
নীল সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাওফিন অভিমানী সুরে বলল,,—’এক নানু ভাইতে পড়ে আছো নানু? আমার দিকে কোনো খেয়াল আছে তোমার?

—’তোমার তো বিয়েরই খোঁজ নেই, ছোট ছোট ভাইয়েরা সব বিয়ে করে নিচ্ছে আর তোমার?
তখনই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল মাহা, শ্যামপরিটিকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। রাওফিন কিছুটা থমকালো তার এ রূপে, অতঃপর নুরজাহান বেগমের দিকে ফিরে আফসোসের কন্ঠে বলল,,,
—’কি আর করব বলো নানু? বিয়ে করার জন্য তো আমি এক পায়ে খাড়া। তবে বউটাই রাজি হচ্ছে না।
মাহার পদচারনা মুহুর্তেই থমকে গেল, রাওফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সে। এদিকে রাওফিনের কথায় নুরজাহান বেগম বললেন,,
—’তা কে সে নারী শুনি? যে আমার এত সুন্দর নাতিটিকে মানা করতে পারে?

—’আছে, আছে নানু। সে বড্ড সুন্দরী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সে, এজন্যই তো এত অহংকার তার।
এদিকে রাওফিনের এমন কথাই মুখ চেপে হাসছে তিহু । মুহূর্তটা কে আরো বেশি উপভোগ্য করতে এক ঝলক নীলের দিকে তাকালো সে তবে,নীল ভাবলেশহীন ভঙ্গিমায় মোবাইল স্ক্রলে ব্যস্ত,তিহু তার এমন অনুভূতি শূন্যতায় মুখ বাঁকালো। পরক্ষণেই মাহার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,,
—’দেখেছো বড় জা? আমার ভাসুর কিন্তু সেই রোমান্টিক. তাকে পেলে অবশ্যই তুমি জিতবা।
মাহা কটমটিয়ে তাকাতেই তিহু সরে আসলো সেখান থেকে। তখনও মুখে দুষ্টু হাসি বিরাজমান। মূলত সব জেনে অভিনয় করার মজাটাই আলাদা।

বিয়ে বাড়িতে শতশত লোকের ঢল। তবে তার মাঝে বিশেষভাবে তৈরি বর যাত্রীদের অবস্থান। বর-কনেও সেখানেই উপস্থিত। পুষ্পসজ্জিত বিশাল আসনে বসে আছে তারা। চারিদিকে আলোকরশ্মির ঝলকানি, আর বাহারি ফুলের সুবাসে বাতাসের ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।
বিবাহের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ পূর্বে।মির্জা বাড়ির কর্তারা ‌কুহেলিকার বাবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। প্রবীণ প্রাণগুলো কুহেলিকা আর সৌভিকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে।নীল সামান্য বিচ্ছিন্ন। মূলত সে কথা বলতে বলতে বেশ দূরে চলে গেছে। তিহু তাকে এমন দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,—’বিয়ে বাড়িতেও এসে এত কাজ!

হঠাৎ খেয়াল করলো সৌভিক আর কুহেলিকার সঙ্গে কিছু অপরিচিত মুখ, হয়তো তারা কুহেলিকার বন্ধু মহলের কেউ। নিহিতরা দূরে দাঁড়িয়ে। জুনাইয়ার ছবি তুলে দিচ্ছে তার হাজবেন্ড আদিত্য। রাওফিনও ঘুরছে মাহার পিছু পিছু। ব্যাপারটা দেখে অজানা কারনেই মন খারাপ হয়ে গেল তিহুর। হঠাৎই একজন ক্যামেরাম্যান তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,
—’আপনার একটা ছবি তুলে দিবো মিস?
তিহু নীলের ওপর রাগ থেকে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে ভেসে আসে এক গমগমে পৌরুষিক কণ্ঠস্বর,,

—’সি ইজ নট মিস। ইজ মাই ওয়াইফ। মিসেস ওয়াহাজ খান।সো স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম হার।
নীলের কন্ঠে তার দিকে ফিরে তাকালো তিহু সহ ক্যামেরাম্যানটা।সে হতভম্ব হয়ে নীলের দিকে তাকালো,,—’নীল স্যার আপনি?
—’ইয়েস মি।
—’স্যরি স্যার অ্যাকচুয়ালি আমি জানতাম না…
‘শাট আপ এন্ড আউট।’——তাকে কথা শেষ করতে দিলো না নীল। রীতিমতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ক্যামেরা ম্যানটাও ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দ্রুত প্রস্থান করল সেখান থেকে। সে চলে যেতেই তিহু মুখ কুঁচকে বলল,,
—’আপনি ওনাকে তাড়িয়ে দিলেন কেন? কি সুন্দর আমার ছবি তুলে দিচ্ছিল।

—’তোমার সাহস কি করে হয় আমার জিনিসে অন্য কারও নজর দিতে সাহায্য করার।
—’মানে?
—’মানে কয়টা ছবি লাগবে তোমার? ১০০ টা এনাফ নাকি হাজারটা লাগবে?
—’কি বলছেন?
তার কথার জবাবে নীল ফোন অন করল। গ্যালারিতে প্রবেশ মাত্র ভেসে উঠল তিহুর শ-খানেক ছবি। প্রত্যেকটি আজকে তোলা, বিয়ে বাড়িতে থাকা তার প্রত্যেকটি সুন্দর মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করেছে নীল। এক একটা ছবি তোলার ধরন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, বরঞ্চ তাদেরও হার মানাবে;কারণ এতে যে মিশে আছে নীলের অতস্পর্শী মহাপ্রণয়।তিহু বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,,,

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৩

—’আপনি না ফোনে কথা বলছিলেন?
নীল ফোন অফ করতে করতে বলল,,—’তোমাকে একদিন বলেছিলাম মনে আছে? আমি যেখানেই থাকি যাই করি পৃথিবীর বুকে যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস চলমান রইবে ততক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টি সীমানার মধ্যেই থাকবে।

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here