প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৪
নওরিন কবির তিশা
আকাশে আজ ফাল্গুনী আবীর ছড়িয়ে পড়েছে,বাতাসে পলাশের গন্ধ আর মনের কোণে গোপন সুরের গুঞ্জন। ভোরের নরম আলোয় কুয়াশার ওড়না সরে গিয়ে প্রকৃতির লাবণ্য বেরিয়ে এসেছে।শিমুল আর পলাশের ডালে ডালে লাল রঙের আগুন লেগেছে,প্রকৃতি যেন তার পুরোনো জীর্ণ বসন বদলে এক নতুন রঙে সেজেছে।
কোকিলের কুহুতান আজ কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে আগমনী সুর হয়ে।পুরোনো পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতার দল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে । পত্রে পত্রে আজ নতুন প্রাণের বার্তা। আজ পহেলা ফাল্গুন। ফাগুনের রং লেগেছে সমগ্র ঢাকা জুড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ধীরে ধীরে এসে থামল Rolls-Royce Phantom মডেলের কালো গাড়িটি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো এলাকার জনপ্রিয় নেতা সাহেব ওয়াহাজ খান নীল। তার পরনে আজ গতানুগতিক শুভ্র পাঞ্জাবির পরিবর্তে, নীল পাঞ্জাবির রঙ্গিন ছটা, যা তার শৈল্পিক দেহে ছড়াচ্ছে এক অনন্য মুগ্ধতা।
কতদিন পর যে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সে পা রাখল তার ঠিক নেই। প্রতি অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রিত হয় তারা, তবে আসার সময় কই? বিশেষ অনুষ্ঠানাদি ব্যাতিত কোথাওই যাওয়া হয় না তার। কিন্তু আজকের এই আসাটার কারন, সম্পূর্ণ ভিন্ন। লোকচক্ষে, তাদের প্রিয় নেতা এসেছে, তাদেরই আমন্ত্রণে।
তবে নীল জানে, সে এসেছে শুধুমাত্র সেই, মহীয়সিনীর খোঁজে, এজন্যই আশার ব্যাপারে আগাম কোনো বার্তা সে পাঠায়নি। যদি তার আসার কথা জানতে পেরে, সেই মেয়েটিই না আসে? তাই এমনই হুট করে, আজ হাজির হয়েছে সে এখানে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
গাড়ি থেকে নেমে অতি সাধারণ লোকের মতোই সে হেটে প্রবেশ করছিল,বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুল তলার দিকে। আজ তার সাথে একটা বডিগার্ডও নেই। সম্পূর্ণ সাধারণ স্বাভাবিক একজনের মতোই এসেছে সে। সে যখন প্রায় এগোচ্ছে ঠিক তখনই পিছন থেকে, দ্রুত ছুটে আসা কারো সাথে ধাক্কা লাগলো তার। নীল দ্রুত পিছন ঘুরে দেখল, উচ্চতায় তার কাঁধসম,এক রমণী,সুদীর্ঘ অক্ষিপল্লব বিশিষ্ট ডাগর ডাগর চক্ষু মেলে চেয়ে আছে তার দিকে। রমনীটির সৌন্দর্য যেন সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকেই বদলে দিচ্ছে, এতটাই আবেদনময়ী লাগছে তাকে। তবে নীলের মনে হচ্ছে সে আগেও কোথাও এই মেয়েটিকে দেখেছে। সে যখন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটিকে বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত। ঠিক তখনই মেয়েটি বলে উঠলো,,
———“সরি সরি! আই এম রিয়েলি সরি আসলে আমি একটু তাড়াহুড়ায় আছি তো, এজন্য আপনাকে দেখতে পাইনি। আই এম রেলি সরি ফর দ্যাট!”
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেই, রেশমি চুড়ি আবৃত দুহাতে পরনের শাড়িটি, উঁচু করেই সে দৌড় লাগালো, বকুলতলার উদ্দেশ্যে। নীল তখনো চেয়ে আছে রমনীটির পানে তার ফর্সা দেহটা আবৃত লাল পেড়ে বাসন্তী রঙা শাড়িতে। তবে অতি আশ্চর্যের বিষয় হলো রমণীটির চুল। সু দীর্ঘ কেশরাজের অধিকারীনি সে। নীল আগে কখনো এত লম্বা চুল দেখেনি। খুব বড়জোর মুন্নির চুলগুলো, তাও তো কোমরসম, তবে রমণিটির চুল হাঁটু থেকেও ২ ইঞ্চি নিচ ছুঁয়েছে যেন। রমণীটি দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতেই ধ্যান ভাঙল নীলের।
এতক্ষণ এমন বোকা দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকার জন্য, নিজেকে হাজারটা ভৎসনা জানালো সে। অতঃপর পা বাড়ালো বকুলতলার উদ্দেশ্যে।
বকুলতলা প্রাঙ্গণ আজ যেন এক নতুন রূপে সেজে উঠেছে। পলাশ আর শিমুলের স্নিগ্ধ রঙ তার চারিধারের ছড়িয়ে আছে অপার্থিব মুগ্ধতা নিয়ে। গাছের শাখায় শাখায় নবকিশলয়ের উঁকিঝুঁকি। আর এই রঙের উৎসবে নবীন প্রাণেরা যেন এক অনির্বচনীয় সুরে মেতেছে।
সাধারণত পহেলা ফাল্গুন,পহেলা বৈশাখ এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো বকুলতলাতেই আয়োজিত হয়। কোনো বিশেষ জমকালোভাবে নয় তবে,এক অনবদ্য সৌন্দর্যের ঝলকানি নিয়ে, প্রতিটা নব প্রাণ জেগে ওঠে নবদিনের উচ্ছ্বাসে।
আজও তার ব্যতিক্রম নয় বকুলতলাতেই আয়োজিত হয়েছে ফাল্গুন অনুষ্ঠানের। তবে একটু অন্যরকম আঙ্গিকে,উন্মুক্ত জনশ্রুতের জন্য আসনের পাশাপাশি, আসন সজ্জিত হয়েছে সকল শিক্ষকের জন্য। মঞ্চের ঠিক বিপরীত ধারে বসে আছে শিক্ষকবৃন্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে উদ্বোধনী নৃত্য। শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক পুলকিত দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে উপস্থিত জনস্রোতা।
নীল এগিয়ে গেল ভার্সিটির প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। এদিকে নীলকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সকলে। নৃত্যশিল্পীরা তখনও রিহার্সাল রুমে, বাকি সকলে নীলকে দেখে একপ্রকার অবাক হয়ে,ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার আসনের জন্য। নীল সবাইকে শান্ত করে উপস্থিত সাধারণ জনগণের মতোই একটা সাধারন চেয়ারে বসলো। উপস্থিত সকল ছাত্ররা তার পাশে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
কেউবা মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তার পানে এটাই তো তাদের নেতার বিশেষত্ব, যেকোনো জায়গায় যেকোনো মানুষের সাথেই সহজে মিশে যান তিনি।তবে বসার আগে সে প্রিন্সিপালের সাথে একান্তে কিছু একটা বলল। প্রিন্সিপাল সামান্য হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
মুহূর্ত কয়েকের মাঝে শুরু হল উদ্বোধনী নৃত্য।বেজে উঠলো ফাল্গুনের এক অতি পরিচিত গান,,,
“ফাগুনের ও মোহনায় (মিউজিক)
ফাগুনের ও মোহনায়….
মন মাতানো মহুয়ায়….
রঙ্গীনি বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়…..
ফাগুনের ও মোহনায়….”
শুরু হলো এক ঝাঁক রমণীর এক অনবদ্য নৃত্য পরিবেশনা। সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে তবে নীলের চোখ যেন আটকে গেছে এক রমণীর পানে। সকালের সে মেয়েটি না? হ্যাঁ সেইতো! মেয়েটা এত ভালো নাচ জানে। মাইন্ড ব্লোইং। নীলের দৃষ্টি যেন সরছেই না। হঠাৎই কোত্থেকে জানি একদল তরুণ তরুণী এসে তাদের সবার ওপর রঙিন আবির ছড়িয়ে দিল।
কেশবতী সেই মেয়েটির স্রোতস্বিনীর বিক্ষিপ্ত তরঙ্গের ন্যায় এক ঝাঁক কেশরাজি রঙিন হয়ে উঠল আবিরের রঙে। নীলের এক অদ্ভুত রকম অনুভূতি হল মেয়েটিকে এই রুপে দেখে। যা আগে কখনো তার কঠোর হৃদয়ে দোলা দেয়নি।
নাচ শেষে মঞ্চ থেকে নেমে তিহু নিজের বিক্ষিপ্ত কেশরাজিকে যখন বাঁধনে আনতে আর তার ওপর ছড়িয়ে থাকা আবীর গুলো সরাতে ব্যস্ত। ঠিক তক্ষণাৎ ভার্সিটির একজন স্টাফ এসে বলল,,
———“তিহু!”
তিহু:“কিছু বলবেন আন্টি?”
মহিলাটি সামান্য হেসে বলল,,
———“তোমাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছে!”
তিহু অবাক হয়ে বলল,,
———“আমাকে?”
সালমা:“হুম তোমাকেই!”
তিহু বেশ অবাক হল। প্রিন্সিপাল হঠাৎ তাকে কেন ডাকতে যাবে? আর আজকে তো? যাইহোক সে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে । সালমাকে বিদায় জানিয়ে,এগিয়ে চলল প্রিন্সিপালের রুমের দিকে।
প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এসে সামান্য থমকালো সে।সেখানে এসি অন করা। শীত চলে গেছে ঠিকই তবে এখনও এসি চালাবার মত ততটা গরম পড়ে নি। গলা খাঁকারি দিয়ে মিহি কন্ঠে, দরজার অপর পাশ থেকে সে বলল,,
———“মে আই কাম ইন স্যার?”
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের ইজি চেয়াটাতে উল্টো দিকে ফিরে বসে আছে কেউ একজন। সে উত্তর না দিয়ে বরং নিজের হাতের ইশারায় তিহুকে ভেতরে আসতে বলল।তিহু সামান্য ভ্রু কুঁচকে ভেতরে গেল।
বেশ ঠান্ডা লাগছে তার। তবে রুমে কোথাও নেই প্রিন্সিপাল স্যার। সে একবার আশপাশটাকে ভালো করে তাকালো। কিন্তু কোথাও নেই তিনি। আর চেয়ারে বসা মানবটাও সে তখন থেকে উল্টো দিকে ফিরে বসে আছেন। তিহুর এবার মেজাজ খারাপ হতে শুরু করল। কথা বলবে না তাহলে ডেকেছে কেন? সে গমগমে কণ্ঠে কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে একটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,,
———“ইন্ট্রোডিউজ ইয়োরসেলফ।”
তিহু ভ্রু কুঁচকে বলল,,,
———“কি?”
অপর পাশে থাকা আগন্তুকটি বলল,,,
———“ইংরেজি বোঝনা? ওকে ফাইন, তোমার পরিচয় দাও! নাম কি তোমার?”
তিহুর মেজাজ এবার সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেল। সে ইংরেজি কেন বুঝতে পারবে না? সে তো ঐ লোকটার অহেতুক প্রশ্নে বলেছিল,,,“কি?” কিন্তু এই লোকটা কি কৌশলে তাকে অপমান করলো? এমনিতেই এই ঠান্ডা হাওয়ায় শীত শীত করছে তার তার ওপর এই লোকের এমন কথায় রাগে শরীর রি রি করে উঠল তার। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল,,,
———“আমি কেন ইংরেজি বুঝতে যাব না হ্যাঁ?আই নো ইংলিশ ভেরি ওয়েল, কিন্তু আপনি এটা বলুন আমি কেন আমার পরিচয় আপনাকে দিতে যাব?”
আগন্তুক লোকটি ফের থমথমে কণ্ঠে বললো,,,
———“কারণ আমি জানতে চাই।”
তিহু মুখ বাঁকিয়ে তার কথা বিকৃত করে বলল,,,
———“কারণ আমি জানতে চাই। আপনি জানতে চাইলেই কি আমার পরিচয় আপনাকে দিতে হবে?”
আগন্তুকটি:“অফ কোর্স!”
তিহু:“কেন? আপনি কে বে?”
আগন্তুকটি:“তোমার ভুয়া জামাই বে!”
তিহু চমকে তাকালো। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে সে বলল,,,
———“মানে?”
নীল ইজি চেয়ারটা ঘুরিয়ে তিহুর দিকে ফিরতে ফিরতে বলল,,,
———“মানে আমি এমপি ওয়ালিদ খানের একমাত্র ছেলে ওয়াহাজ খান নীল। যার ভুয়া বউ হিসাবে তুমি ভার্সিটিতে ত্রাস ছড়িয়ে বেড়াচ্ছ। এম আই রাইট?”
নীল,তিহু একে অপরকে দেখে দুজনেই অবাক হলো। একজনেরও চিনতে বাকি রইল না,অপরকে। সকালে হালকা মেকআপের দরুন নীল তিহুকে চিনতে না পারলেও এখন বেশ ভালো করেই চিনতে পেরেছে অসভ্য মেয়েটিকে। দুজনে একসঙ্গে বলল,,
তিহু:“আপনি?”
নীল:“ইউ?”
নীল দ্রুত ইজি চেয়ারটা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তিহু অবাক হয়ে বলল,,,
———“আপনিই ওয়াহাজ খান?”
নীল:“জাস্ট শাট আপ। ইউ লায়ার, সেদিন আমার সাথে ওরকম রাফ বিহেভ করছ আর আমার পরিচয় নিয়েই পুরো ভার্সিটিতে ত্রাস ছড়াচ্ছ?”
তিহু একটা শুকনো ঢোক গিললো। এবার কি হবে? মানে যার পরিচয় নিয়ে ও এতদিন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে, সেটা আর কেউ নয়, সেই লোকটাই যাকে সে আগের দিন যাচ্ছে না তাই করে কথা বলেছিলো?তিহু চোখ বড় বড় করে মনে মনে বলল,,
———“তিহুরে!আজকে তুই শেষ!”
তারপর সে দ্রুত নীলের দিকে তাকিয়ে,কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়া পেছনদিকে দৌড় দিতে গেলেই, নীল খপ করে ধরে বসল তার নরম কোমল হাতটা।তিহু অপর হাত দ্বারা নিজের শাড়ির আঁচল খামচে ধরে তীব্র বেগে চোখ দুটি খিচে বন্ধ করে, নীলের দিকে ফিরল। তারপর বড় একটা শ্বাস নিয়ে, এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো,,
———“সরি,আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আই রিয়েলি সফট দ্যাট। আমি আর কখনো কোথাও মিথ্যা কথা বলবো না। প্লিজ এই ব্যাপারটা ভার্সিটির কাউকে জানাবেন একদম থাকবেনা। প্লিজ আর….”
সে আর কিছু বলতে গেলেই নীল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,
———“জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট। যে প্রশ্ন করছি তার বাইরে একটাও কথা যেন না শুনি। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
তিহু চোখ দুটো বন্ধ রেখেই বলল,,,,
———“আচ্ছা!”
নীল তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,,
———“ইন্টারভিউজ ইওরসেলফ? এট ফার্স্ট টেল মি ইওর নেম।”
তিহু একনাগাড়ে বলতে লাগলো,,,
———“আমার নাম নুরাইন হক তিহু। বাবা নওশাদ হক, মা তৈয়িবা জামান, দাদা নুরুজ্জামান হক…”
সে আর কিছু বলতে যাবার আগেই নীল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,
———“সাট আপ। আমি শুধু তোমার নাম জানতে চেয়েছি । তোমার চৌদ্দগুষ্টির বায়োডাটা না!”
তিহু:“শুনেছেন তো আমার নাম? তাহলে এবার আমি যাই!”
নীল:“হুম শুনলাম, নুরাইন! ইন্টারেস্টিং!আই লাইক ইট!”
তিহু:“তাহলে এবার আমি যাই!”
নীল তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,,,
———“হুমম। যাবেই তো। কিন্তু আমার নামে যে মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়েছো! তার শাস্তির কি হবে?”
নীলের এমন কাছাকাছি এগিয়ে আসায় ভীত তিহু দুই কদম পিছিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলল,,,
———“ম-মানে?”
নীল:“মানে…”
নীল এগোচ্ছে, ভীত তিহু পিছিয়েই চলেছে। হঠাৎই কংক্রিটের দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা লাগে তার। পিঠে দারুন ব্যাথা লাগার দরুন,তার গোলাপে অধরজোড়া কচি কিশলয়ের ন্যায় কেঁপে ওঠে। তবে নীল স্থির নেই। সে এগিয়েই চলেছে। হঠাৎ,যখন তাদের মাঝে আর মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান, তখনই নীল ঝুঁকতে শুরু করল। তিহু জোরে এক নিশ্বাস নিয়ে, শ্বাস আটকে চোখ বন্ধ করে,দাঁড়িয়ে থাকলো। কি করবে বুঝতে পারছে না সে? ভয়ে আর রুমে চলমান শীতলতায় শরীর আড়ষ্ট হয়ে আসছে তার। হঠাৎই নীল একদম ঝুঁকে তিহুর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,
———“এর কি শাস্তি দেওয়া উচিত? এনি আইডিয়া?”
তিহু দ্রুত বেগে মাথা নাড়িয়ে বলল,,
———“না!”
নীল বাঁকা হেসে বলল,,,
———“বাট আই নো!”
তিহু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। তা দেখে নীল আলতো হাতে তার চুলগুলো পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে মুখটা একেবারে তার কানের পিছনে নিয়ে গিয়ে বলল,,
———“মিথ্যাটাকে সত্যি করা!”
প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৩
তিহু ফের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে। নীল আর কোনো কথা না বলে তাকে ছেড়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে।তিহু তখনও তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। লোকটা মাত্র কি বলল? যাই বলুক,তার কি? এখন শুধু তার এটা যেন প্রয়োজন লোকটা বাইরে তার মান-সম্মানের বারোটা বাজালো নাকি?
তিহু দ্রুত দোতলার ব্যালকনি দিয়ে নিচে তাকালো। না নীল কিছুই করেনি। সে নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে ভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে। তিহু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।।। কিন্তু হঠাৎই তার মনে পড়ল লোকটির বলা শেষ কথাটা,,,“মিথ্যাটাকে সত্যি করা!” মানে কি? ফের চিন্তার রাজ্যে পাড়ি জমাল তিহু।
