প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৫

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৫
নওরিন কবির তিশা

খান মহলের সকালটা আজ একদম অন্যরকম। ছুটির এই দিনে,সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ির সব কর্তারা ড্রয়িং রুমে যেন এক ছোটখাটো আলোচনা সভা বসিয়েছেন। আর বাড়ির কর্তীরা এদিকে মেতেছেন গল্পে। হঠাৎ বাড়ির ছোট কর্তী অর্থাৎ ওয়ালিজামান খানের সহধর্মিনী, তার বড় যা,আবার তারই বড় বোন অর্থাৎ ওয়ালিদ খানের সহধর্মীনির উদ্দেশ্যে বললেন,,

———“আপা, আমাদের নীল তো বড় হল। ওর বিয়ের ব্যাপারে কি ভাবছিস?”
তৎক্ষণাৎ পাশ থেকে নীলের বড় ফুফু বলল,,
———“হ্যাঁ রে সূচনা, আমাদের নীলটার জন্য তো এখন কাউকে লাগে। না মানে ওকে আর কতদিন একা একা রাখবি?”
মির্জা সূচনা হেসে বললেন,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

———“তুই আমায় বলছিস রৌশানা? আমাদের রাওফিন ও তো বড় হলো। ওর ব্যাপারে কিছু ভাব। আর সবচেয়ে বড় কথা রাওফিনের বিয়ে না করিয়ে তুই ভাবলি কি করে নীলের বাবা ওর ব্যাপারে কিছু ভাববে।”
রৌশনারার মুখমণ্ডল যেন মুহূর্তেই ঢেকে গেল কালো মেঘে। মলিন হেসে তিনি বললেন,,,
———“আর রাওফিনের বিয়ে! এমনিতেই দেশে আসেনা, আর বিয়ের কথা শুনলে তো কখনোই আসবেনা।”
বড় বোনের এমন কথায় তার কাঁধে হাত রেখে ছোট বোন রুমিন আরা বলল,,
‌ ———“মন খারাপ করিস না আপা। দেখবি ইনশাআল্লাহ একদিন আমাদের রাওফিনও সবটা বুঝতে পারবে। আর সেদিন তোর আচরণটা, হয়তো একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে মাতৃত্বের দিক থেকে তা কোনো দিক দিয়ে ভুল ছিল না। হয়তো তোর জায়গায় আমরা থাকলে আমরাও একই কাজই করতাম।”
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো রৌশানারার বুক চিরে। মলিন হেসে সে বলল,,

———“কিন্তু সেটা আমি ওকে কিভাবে বোঝাবো বল? সেদিনের পর থেকে নাতো ও আমার সাথে ভালো করে কথা বলেছে, না তো আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে।”
মির্জা সূচনা:“রৌশানা একটা কথা বলি, কিছু মনে করিস না। তবে সত্যি বলতে কি, ওর বয়সটাই ওইরকম ছিল। তবে তুই সেদিন ওকে ওভাবে না বলে একটু বোঝাতে পারতি।”
রৌশানারা:“আমি হাজারটা চেষ্টা করেছিলাম ওকে বোঝানোর। তবে ও তো আমার সাথে ঠিক মত কথাই বলেনি, আর তার কিছুদিন পরেই তো।ও চলে গেল।”

মির্জা সায়মা: “আচ্ছা আপা, ও কি ফেরার কথা কিছু বলে না?”
রৌশানারা:“ও প্রয়োজন ব্যতীত আমার সাথে কথাটাও বলে না।”
মির্জা সূচনা:“আশাহত হস না রৌশানা। ওর সাথে আমার কাল রাতেও কথা হয়েছে, ও আমাকে কথা দিয়েছে আর কিছুদিনের মধ্যেই ও ব্যাক করতে চায়। তবে এ কথাটা বলা বারণ ছিল বলে আমি তোদের বলিনি।”
ছেলের আগমনী বার্তায় চোখ মুখ যেন চিকচিক করে উঠল রৌশানারার। মির্জা সূচনার দিকে ফিরে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সে বলল,,

———“সত্যি বলছিস সূচনা?”
মির্জা সূচনা হালকা হেসে ভ্রু নাড়ালো।রৌশানারার আনন্দে চোখ বেয়ে অশ্রুকনারা গড়িয়ে পড়ল। এতদিন পর তার একমাত্র ছেলে বাংলাদেশে আসবে জানতে পেরেই খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে তার।

———“ওফস মুন্নি আপু আর কতক্ষণ লাগাবা?”
নাহার এমন অধৈর্য পূর্ণ কন্ঠে, মুন্নি একবার তার দিকে তাকালো। মুন্নি মূলত নীলের জন্য পায়েস করছিল। পায়েস নীলের প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেইজন্য তো যেদিনই নীল বাসায় থাকে সেদিনই মুন্নি খুব যত্ন করে পায়েস বানায় তার জন্য। আজ যেহেতু ছুটির দিন । আর নীল বাসায় থাকবে, তাই সকালের নাস্তা সেরেই সে লেগে পড়েছে পায়েস তৈরিতে।
মুন্নি:“এত অধৈর্য কেন রে তুই? বলছি তো হয়ে গিয়েছে, জাস্ট চিনিটা দিলেই শেষ!”
নাহা:“আরে দ্রুত করো। দেখো আমার নেইল পলিশ টা খারাপ হয়ে গিয়েছে এখন গিয়ে আবার লাগাবো।”
মুন্নি:“তো তুই যা না। কে বারণ করেছে?”
নাহা:“তোমাকে কতবার বলবো? আমার চুলে আজকে স্পেশাল হেয়ার প্যাকটা লাগিয়ে দিবা। ভুলে গেলে আজকে শুক্রবার।”

মুন্নি পায়েসে এক চামচ চিনি দিতে দিতে নাহার দিকে ফিরে সামান্য সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
———“ব্যাপার কি রে নাহা? নিজের ব্যাপারে এত বেশি যত্নশীল কবে থেকে হলি? না মানে, আগে তো কখনো মাথায় হেয়ার প্যাক দেওয়া তো দূর, চুলগুলোও আঁচড়াতিস না । আজকে হঠাৎ?”
নাহা:“ওমা, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? আগে ভালো লাগতো না তাই করতাম না।”
মুন্নি:“তারমানে এখন ভালো লাগে বলছিস? কার জন্য রে? নিজেকে সাজাতে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস?”
হঠাৎই নাহার সামনে ভেসে উঠলো আইয়াজের মুখটা। লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করল তার ফর্সা মুখশ্রী। তা দেখে মুন্নি দ্রুত পায়েসটা ঢেকে তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,
———“কি ব্যাপার? তুই হঠাৎ ব্লাশ করতে শুরু করলি কেন? এরকমটা তো আমার হয় যখন আমি নীল ভাইয়ের কথা মনে করি। তা তোর কি কেউ আছে নাকি, আমার নীল ভাইয়ের মত?”
নীলের ব্যাপারে মুন্নির মনের কথাগুলো এ বাড়িতে একমাত্র নাহাই জানে। তাইতো মুন্নির এমন কথায় সে অনেক দূরে সরে গিয়ে বলল,,

———“ধুর, কি যে বলো না? আমার আবার কে থাকবে?”
মুন্নি:“হাহ, কতজন থাকতে পারে? সবে সবে অষ্টাদশী হলে মনে কত রং লাগে, কত বসন্তের কোকিল গান গায়! ”
নাহা:“না গো আমার মনে রং লাগে না আর বসন্তও আসে না, আরে না তো কোকিল গান গায়।”
কথাটা বলেই সে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। মুন্নি পিছন থেকে হেসে তাকে ডেকে বলল,,,
———“কিরে পালাচ্ছিস কেন?”
নাহা পিছনে না ঘুরেই দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে যেতে বললো,,
———“আমার গরম লাগছে রুমে গেলাম!”
মুন্নি:“সত্যি কথা বললে যে এই ঠান্ডার ভিতর গরম লাগে সেটা তো আমার আগে জানা ছিলো না! বাই দ্যা ওয়ে, তুই রুমে গিয়ে বসতে লাগ আমি দুই মিনিটে নীল ভাইকে পায়েসটা দিয়ে।আসছি।”
নাহা চলে গেল। মুন্নি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফের পায়েসের দিকে মনোনিবেশ করল।

একটা কাঁচের বাটিতে ‌পায়েস, অতি যত্নে হরেকরকম বাদাম আর কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে নীলের রুমের পূর্বের প্রশস্ত পথটা অতিক্রম করে সবে রুমে ঢুকছিল মুন্নি। হঠাৎই ভেসে আসা এক তীব্র পারফিউমের ঘ্রাণে থমকালো তার পদচারনা। মুহূর্তেই সে বুঝে গেল এটা ‌টম ফোর্ড স্যান্ডাল ব্লু পারফিউমের তীব্র সুগন্ধ।
আর এই সুগন্ধি শুধু নীলের রুমের সামনে থেকেই পাওয়া যায়। খানিক মুচকি হাসলো মুন্নি নিয়ে অতঃপর নিজেকে সামলে এগিয়ে চলল রুমের দিকে।
নীল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হালকা ব্রাশ আপ করছিল। তার পরনে শুভ্র পাঞ্জাবির উপর দামি কোট। হয়তো কোথাও বের হবে সে। কিন্তু আজকে ছুটির দিনে কোথায় যাবে? কি জানি? মুন্নি যখন এসকল চিন্তায় মশগুল তখনই নীল বললো,,

———“কিছু বলবি?”
নীলের কন্ঠে ধ্যান ভাঙল মুন্নির। নীল আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মুন্নির অবয়ব। তার হাতে থাকা পায়েসের বাটিটা দেখেও নীল এক প্রকার না দেখার ভান করে বলল,,
———“কিছু বলার থাকলে দ্রুত বল, আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।”
মুন্নি:“আসলে নীল ভাই,তোমাকে পায়েসটা দিতে এসেছিলাম। যদি একটু খেয়ে বলতে?”
নীল মুন্নির দিকে ঘুরে বলল,,
‌ ———“তোকে না বলেছি? নাহা,রাফা,নিরা ওদের মতো ভাইয়া বলে ডাকবি। নট নীল ভাই! আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মুন্নি সামান্য মাথা ঝাঁকালো। তা দেখে নীল বলল,,
———“গুড, আর পায়েসটা নিয়ে যা। আমার এখন সময় নেই।”
মুন্নি:“একটুও খাবানা? সকাল থেকে অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি!”
নীল:“কে বলেছে তোকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে পায়েস বানাতে? আর কখনো যেন না দেখি পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করছিস। নাও লিভ!”

নীলের এমন কথায় মুখশ্রী বিষন্নতার কালো মেঘে ঢেকে গেল মুন্নির। সারাদিন ধরে যে লোকটার জন্য এত কষ্ট করে রান্না বাঁড়া করেছে , সেই কিনা বলছে খাবেনা? আচ্ছা নীল ভাই তার সাথে এরকম কেন করে? কই নাহা,রাফা নিরা ওদের সাথে তো এমন করে না? একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসলো মুন্নির বুক চিরে।
নীল হয়তো শুনতে পারলো সেই শব্দ, তবুও কোনরকম পরিবর্তন আসলো না তার মুখশ্রীতে। মুন্নি বেরিয়ে যেতেই সে বেডসাইট টেবিলের উপর পড়ে থাকা নিজের ফোনটা নিতে গিয়ে দেখতে পারলে একটা ইয়ার রিং, তৎক্ষণাৎ তার স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠলো,এক সু শ্রী রমণীর ভীত মুখাবয়ব। এক প্রসরিত মুচকি হাসির রেখা দৃশ্যমান ‌হলো তার ঠোঁটের কোণে। দুলটাকে সযত্নে একটা বাক্সে রেখেই সে পা বাড়ালো বাইরের দিকে।

মাথার উপর নরম সূর্যরেখা। আজকে ছুটির দিন হাওয়ায় মাহা আর তিহু এসেছে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে‌। সারা সপ্তাহ পড়াশোনার চাপের মাঝে এই একটা দিনই তাদের সময় হয় নিজেদের দেওয়ার জন্য। দুজনেরই হাত ভর্তি বিভিন্ন রকম প্রসাধনী সামগ্রী আর নিত্য দিনের পণ্যে।
হঠাৎই একটা কালো গাড়ি এসে থামল তাদের সামনে। কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে মাহা ‌বলল,,
———“এই আপদ আবার কোথা থেকে উদয় হলো?”
তিহু:“দেখগে কোন বড়লোকের ছেলে হয়তো তোরে পছন্দ করছে। হেতি তার বউরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে দেবে না বলে, গাড়ি পাঠাইছে। দোস্ত আমাদেরও একটু নিস আমিও আর হাঁটতে পারতেছি না। আমার তো কেউ নেই….!”
তিহুর এমন কথায় ক্ষেপে গিয়ে মাহা বললো,,,
———“ফাও কথা বলিস না তো বা’ল।”

মাহা কি ক্ষেপিয়ে যেন বিস্তর মজা পেল তিহু। সে হাসতে হাসতে কিছু বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে আসলো এক যুবক। তিহুর দিকে ফিরে সে বলল,,
———“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।”
তিহু চিনলো না যুবকটিকে। ভ্রু কুঁচকে সালামের জবাব সে বলল,,
———“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক?”
তার মুখের কথাটি যেন কেড়ে নিল যুবকটি।
———“আমাকে আপনি চিনবেনও না, আমি ইফাজ। নীল ভাইয়ের দলের লোক।”
মাহা আর তিহু একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল।ইফাজ দ্রুত এগিয়ে এসে,তিহুর হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে,বলল,,

———“ভাবি আপনারা আসেন, আমি ব্যাগগুলো গাড়িতে রাখছি।”
ইফাজ চলে যেতেই মাহা তিহুর দিকে ফিরে বললো,,,
———“কাহিনী কি রে? এমপির ছেলের লোক আবার তোকে এতো সমীহ করছে কেন? তারা কি সব জানে নাকি? আর জানলে তো তোকে আস্তো রাখার কথা না।”
তিহু অপ্রস্তুত হেসে বলল,,,
———“গাড়ি পেয়েছিস উঠে পড়। এত প্রশ্ন কেন? দেখছিস না কি সুন্দর ভাবি ভাবি করছে। নিজের থেকে বয়সে বড় কারো মুখে ভাবি শুনতে ভালই লাগে। উঠ তো আর প্রশ্ন বাড়াস না। এমনিতেই হেঁটে হেঁটে পায়ে ব্যথা করছে।”
তিহু এগিয়ে চলল গাড়ির দিকে। মাহা তখনও সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হচ্ছেটা কি? কাল একবার, নাচ শেষে কোথায় একটা জানি হারিয়ে গেল তিহু। তারপর থেকে নিজের সোনার দুলটা খুঁজে পাচ্ছে না, আবার এখন নীলের লোক! আল্লাহই ভালো জানে এই মেয়ে কি ঘটলা পাঁকিয়েছে। এসব কথা যদি তিহুর বাবা বা চাচারা জানতে পারে, তাহলে যে কি হতে পারে সেটা কি তিহু বুঝতে পারছে না?
তিহু এগিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, পাশ ঘুরতে এসে দেখতে পেল পাশে মাহা নেই। পিছনে তাকিয়ে মাহাকে দেখে সে বলল,,

———“এই যে মিসেস নিউটন? গবেষণা পরে করিয়েন ম্যাম। এখন আপাতত এদিকে আসেন।”
মাহার মনে হাজারটা প্রশ্নের ঘূর্ণি চললেও তৎক্ষণাৎ সেগুলোকে ধামাচাপা দিল সে। এগিয়ে গিয়ে তিহুর সাথে গাড়িতে উঠে পড়লো। তারা দুজনে গাড়িতে বসতেই ইফাজ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে চললো গন্তব্যের দিকে।
অথচ তারা খেয়ালই করল না তাদের থেকে কিছুটা দূরে এই একজোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গাড়ির কাঁচ নামিয়ে তাদেরকে পরখ করতে ব্যস্ত ছিল।

———“এখানে যে টাকা আছে আশা করি তাতে আপনার, আগামী এক মাস খুব ভালোভাবে চলে যাবে চাচি। তবুও যদি আর কোনো সমস্যা হয় নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবেন। আমি আবারো সামনের শুক্রবারে আসবো। সেদিন কিন্তু অবশ্যই আপনার হাতে মাংস ভাত খেয়ে তবেই যাব।
নীলের এমন আন্তরিকতা মিশ্রিত কন্ঠ শুনে আঁখি জোড়া সজল হয়ে উঠল বৃদ্ধার। নিজে দুই সন্তানের জননী হয়েও ঠিকমতো খেতে পান না, থাকার জায়গাটা পর্যন্ত নেই। ছেলে নয় যেন কুলাঙ্গার জন্মেছেন তিনি। অথচ নিজের কেউ না হয়েও, মাত্র কয়েক মুহূর্তের পরিচিত এই ছেলেটি কি অদ্ভুতভাবে আপন করে নিয়েছে তাকে। বৃদ্ধার চোখ বেঁয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তা দেখে নীল বললো,,

———“চাচি, বলেছি না আর কোনো কান্নাকাটি না। আপনাকে আমার ছেলেরা একটা বাসায় নিয়ে যাবে,ওখানেই আপনি থাকবেন । আর আজ থেকে আপনার সমস্ত দায়িত্ব আমার।”
বৃদ্ধা অতি আদরে আলিঙ্গন করল নীলের সাথে। তার কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,,
———“তোমার ভালো হোক বাবা। আল্লাহ তোমাকে সুখী করুক। জীবনে খুব বড় হও তুমি।”
নীল মুচকি হেসে, বৃদ্ধার যত্ন গ্রহণ শেষে, আদনান,আমিন, জয় আর জাহিনকে ইশারা করতেই তারা বৃদ্ধাকে নিয়ে, রওনা হল।
তারা চলে যেতেই নীলের মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠল যেন, সে রোহিত আর রোহানের দিকে চেয়ে বলল,,,

———“ওই কুলাঙ্গার দুইটাকে বাংলার জমিনে আমি দেখতে চাই না, যাদের বাড়িতে নিজের মায়ের জায়গা হয় না, আমি ওয়াহাজ খান নীল যতদিন বেঁচে আছি বাংলার জমিনে তাদেরও কোনো জায়গা হবে না। আগামী দুই ঘন্টার মধ্যেই, ওদের র’ক্তে গোসল করতে চাই আমি।গট ইট?”
রোহিত আর রোহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলল,,,
———“জ্বী,ভাই।”
নীল: “গুড, এখন থেকেই কাজে লেগে পর। মনে রাখবে ২ ঘণ্টা মানে দুই ঘন্টাই, এক সেকেন্ডেরও হেরফের যেন না হয়।”
রোহিত:“আচ্ছা ভাই।”
কথাটা পেলেই সেখান থেকে বেরিয়ে গেল রোহিত আর রোহান।

রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট।
অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বৃহৎ রুমের কাউচে শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে আছে, পাকিস্তানি পাঠানদের মতো আকৃতির এক সুঠাম দেহি পুরুষ। বৃহৎ রুমটাতে শুধুমাত্র জ্বলছে একখানা টেবিল ল্যাম্প। নিয়ন আলোক রশ্মি ছড়াচ্ছে রুম জুড়ে। কুটিল আঁধারের মাঝে বন্দী পুরুষটির মুখমণ্ডল স্পষ্ট নয়। হঠাৎই রুমের দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।
পুরুষটি থমথমে কণ্ঠে বললো,,,

———“কাম ইন।”
২৫ বছর বয়সী এক যুবক, অতি দ্রুত পায়ে রুমে প্রবেশ করল। পুরুষটি তার দিকে না ফিরেই বললো,,,
———“যা বলেছিলাম, জানতে পেরেছিস সে ব্যাপারে কিছু?”
যুবকটি:“জ্বী ভাই। ওটা নীলেরই লোক ছিল, ইফাজ, ওর পা চা’টা কুকুরটা। আর যে মেয়ে দুইটিকে ও গাড়িতে তুলেছিল তার ভিতরকার ফর্সা করে মেয়েটি নীলেরই বাগদত্তা। এমনটাই জানতে পেরেছি।”
এমন একটা খবরের চোখ মুখে পুলক দীপ্তি ফুটে উঠল সেই হিংস্র মানবটির। উত্তেজিত কণ্ঠে সে বলল,,
———“আর ইউ শিওর?ওটা নীলেরই ফিওন্সি?”
যুবকটি:“জি ভাই!”
একটা শয়তানি হাসির রেখা ফুটে উঠল পুরুষটির চোখে মুখে। হিংস্র সেই দৃষ্টি নিক্ষেপ পূর্বক ঠোঁটের কোনের কুটিল হাসি বিদ্যমান রেখেই সে বলল,,,

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৪

———“জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ নীল খান। আই উইল কাম টু ডেস্ট্রয় ইউ। এতদিন অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করেছি, এবার আর নয়, আই উইল ফিনিশড ইউ।”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here