প্রেমের পাঁচফোড়ন পর্ব ৯+১০
Afnan Lara
শান্ত ঔষুধের প্যাকেটটা আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
তারপর কিছুক্ষন থেমে বললো যাও বাসার দিকে যাও
আহানা মাথার ঘাম মুছতে মুছতে বললো কয়টা বাজে?
৩টা ২০,কেন?
বাই
আহানা কিছুটা জোরেই হেঁটে পিউদের বাসার দিকে রওনা হলো
শান্ত পিছন পিছন একটু গিয়ে বললো কোথায় যাও তুমি?
আহানা শান্তর প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে গেলো
এই মেয়েটা ধন্যবাদ দিতে জানে না,!
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে বাসায় ফিরে আসলো
আন্টি আপনার চেনা জানা কেউ আছে যাদের টিউটর লাগবে?
জানি না ঠিক,কেন তুমি পড়াবে?
হ্যাঁ আন্টি যদি বলতেন তাহলে আমার উপকার হতো
আচ্ছা পেলে জানাবো তোমাকে
পিউকে পড়িয়ে আহানা এবার গেলো আকাশদের বাসায়,আকাশ ৩য় শ্রেণির ছাত্র,তাকে পড়িয়ে এবার আহানা আর হাঁটতে পারছে না মনে হয় এখনই পড়ে যাবে,তাও আস্তে আস্তে হেঁটে বাসায় ফিরলো,বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে পানি নিয়ে খেয়ে বিসকিট মুখে দিলো,সাথে সাথে বমি এসে গেলো,সকালে একটা বিসকুটের পরে আর কোনো খাবার পেটে পড়েনি,বমি হওয়ারই কথা,বাথরুম থেকে বেরিয়ে আহানা কেঁপে কেঁপে রান্নাঘরে গিয়ে ভাত বসালো আর আলু সিদ্ধ করতে দিয়ে এসে বিছানায় বসলো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিরে শান্ত কি ভাবস এতো?
আসলে নওশাদ ভাবতেসি আহানা মেয়েটা মনে হয় কিছু লুকাচ্ছে
লুকালেও কি না লুকালেও কি,তোর কি তাতে?
হুম সেটাই,আমিও না! কোথাকার কোন মেয়ের জন্য ভাবতেসি,হুদাই সময় নষ্ট!
শান্ত রুমে এসে আলমারি থেকে টি শার্ট নিতে গিয়েই ফ্লোরে কি যেন ঝুন ঝুন শব্দ করে পড়লো
শান্ত নিচে ঝুঁকে হাতে নিয়ে দেখলো সেই নীল কাঁচের চুড়ি যেটা সেদিন শান্ত ঘাস থেকে নিয়েছিল,এটা তো আহানার
শান্ত চুড়ি গুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো,আবার কি মনে করে সেগুলো তুলে এনে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো
খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে,কালবৈশাখী হতে পারে,বৈশাখ মাস তো
আহানা জানালা সব আটকিয়ে বসে আছে,কনিকা আপু ডিউটিতে,মীম আপুকে তো দেখিই না অনেকদিন,কারেন্ট গেলো চলে,অনেক খুঁজে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসলো আহানা,মোমবাতিটা নিভার আগেই সব সেরে ফেলতে হবে,আগুন বাড়িয়ে দিয়ে ভাত রেঁধে নিলো আহানা,আলুর ভর্তা করে খাটের উপর বসে পেট পুরে ভাত খেলো,এবার ভালো লাগতেসে,আর আলু ২টা আছে,পেঁয়াজ ২টা,কাল চলবে,পরশু কি করবো?কেউ তো ধার ও দিবে না
মোমবাতিটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লো আহানা,মেঘ খুব জোরে জোরে ডাকতেসে
শান্ত বারান্দার গ্লাস খুলে বের হয়ে চোখ বন্ধ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিজতেসে
কি গো মা?ভালো আছো?হুম ভালো তো থাকবেই তোমার ছেলে সবসময় তোমার খেয়াল রাখে,মা জানো আমার না কেন জানি আজ মন ভালো নেই,কি কারনে ভালো নেই ঠিক বুঝতে পারতেসি না আমি,তুমি জানো মা?
জানো বাট বলবে না,কারন তুমি চাও আমি যেন নিজের মন খারাপ নিজেই ঠিক করি,কারোর হেল্প না নিয়েই,হ্যাঁ বেশি ভিজবো না এভাবে বকা দিতে হবে না আমাকে😒
বৃষ্টি কমে গেছে,শান্ত হাত দিয়ে চুলের থেকে পানি গুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বের হয়ে রুমে ফিরে আসলো,তোয়ালেটা নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে
ঐ মেয়েটা ঔষুধ খেয়েছে কিনা কে জানে!বেয়াদব একটা মেয়ে কথা শুনে না একদম,কত বড় সাহস হলে মানুষ prescription রোডে ফেলে দিতে পারে!
সকাল হতেই আহানা উঠে পড়লো,আজ আর ভার্সিটিতে যাবে না ঠিক করেছে,বই নিয়ে পড়তে বসলো তারপর মনে করলো বাসায় থাকলে তো খিধা লাগবে বারবার,তার চেয়ে বরং ভার্সিটিতে যাই,রুপার সাথে কথা বললে বেশ লাগবে,খিধা লাগলেও টের পাবো না
কালকের পান্তা ভাত নুন দিয়ে মেখে খেয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলো আহানা,বড় এক বোতল পানি নিয়ে বের হলো,বাসা থেকে
বের হওয়ার আগেই দেখা হলো তারেক রহমানের সাথে,উনি আহানাকে দাঁড়াতে বললেন
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,কেমন আছেন?
ওয়ালাইকুম আসসালাম,ভালো আছি,তোমাকে একটা কথা বলার জন্য দাঁড়াতে বলেছি
জ্বি বলেন
পাশের একটা কলেজের দুটো মেয়ে এখানে থাকার জন্য বারবার রিকুয়েস্ট করতেসে,ওরা বলেছে ১বছরের টাকা advance ও করে দিতে পারবে,তুমি তো ২মাসের ভাড়া দাও নি এখনও,১মাসের মধ্যে ২মাসের টাকা জোগাড় করে দাও নাহলে আমি তোমাকে বাদ দিয়ে ঐ দুটো মেয়েকে বাসা ভাড়া দিয়ে দিব,বুঝেছো আশা করি?
আহানা চুপ করে থেকে বললো আচ্ছা
চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে আহানা,আজকে যে করেই হোক একটা টিউশনি খুঁজে বের করতেই হবে
ভার্সিটিতে এসে রুপাকে অনেক খুঁজলো,ফকিন্নি আজও আসে নাই,ওরে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না
আহানা গালে হাত দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,কাল যে বৃষ্টি হয়েছিল তার কারণে ক্যামপাসের ঘাস সবুজ থেকে আরও সবুজ হয়ে গেছে,কি সুন্দর লাগতেসে,মনে হয় সকল গ্লানি দূর হয়ে গিয়েছে
দূরে তাকাতেই আহানার চোখে পড়লো একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ
আহানা খুশিতে আটখানা হয়ে মুখটা তুলে ভালো করে দেখলো গাছটা,আরে এটা তো এতদিন দেখিই নাই আমি,যাওয়ার সময় কাছে গিয়ে একবার দেখে আসবো
আহানা এবার ক্যামপাসের মাঝখানে বটগাছটার দিকে তাকালো
শান্ত বটগাছের তলায় নওশাদ,সূর্য,রিয়াজ আর তমালের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেসে
আহানা ওদের দেখে ব্রু কুঁচকে চোখ ফিরিয়ে নিলো
কিরে শান্ত ভাই কাউকে খুঁজিস নাকি?
নাহ তো,ক্যামপাসটা দেখতেসি, ভালো লাগতেসে
নওশাদ আর সূর্য দাঁত কেলিয়ে চোখ টিপে বললো হুম অনেক জোস😂
আহানা ক্লাস থেকে বের হচ্ছে না,রুপা নেই শুধু শুধু ক্যামপাসে গিয়ে কি লাভ,তাই সে একা বসে আছে ক্লাসে
সবাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যামপাসে ঘুরাঘুরি করতেসে,অবশ্য ক্লাসে ও কয়েকজন আছে তারা তাদের কাজে ব্যস্ত,কেউ পড়তেসে,কেউ গান গাইতেসে,কেউ বা খাচ্ছে
শান্ত ভাই তোমার সখিনা আসতেছে
শান্ত সানগ্লাসটা পরে শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে আহানাদের ক্লাসরুমের দিকে চলে গেলো
কিরে এলিনার কথা শুনে শান্ত ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে কেন গেছে?
কি হলো তমাল?শান্ত কই?আমাকে দেখে নাই নাকি?ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিল
না আপু জানি না তোমাকে দেখেছে কিনা,মনে হয় ওয়াসরুমে গেছে,ও আসলে বলবো তোমার সাথে কথা বলতে
ওকে ফাইন
শান্ত ক্লাসরুমে ঢুকে একদম মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো
সবাই শান্তকে দেখে তাদের কাজ ফেলে তাকিয়ে আছে
আহানা শান্তকে দেখেনি,চুপচাপ টেবিলে মাথা রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে,কৃষ্ণচূড়া গাছটা তাকে টানতেছে,ওর প্রিয় ফুল কৃষ্ণচূড়া,আজ অনেক গুলো কুড়িয়ে নিব যাওয়ার পথে
এসবের জন্য আসো এখানে?পড়া নাই লেখা নাই হুদাই বসে থাকো তোমরা!!
আহানা চমকে মাথা তুলে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত ওর দিকে তাকাতে তাকাতে চলো গেলো
আহানা কিছু না বুঝে পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই বই নিয়ে পড়তে বসে গেছে,যারা খাচ্ছিলো এতক্ষণ তারা খাবার হাতে রেখেই গড়গড় করে পড়া শুরু করে দিয়েছে
আজব তো লোকটা! এমন করে কেন,কত বড় সাহস আমাদের ক্লাসে এসে আমাদেরই ধমক দেয়
কিরে শান্ত ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গেছিলি কেন?
কেউ পড়ালেখা করে না ঠিকমত তাই ধমক দিয়ে আসলাম
তোর জরিনা আসছিল বলসে তোর সাথে নাকি কিসের কথা আছে
উফ!!আচ্ছা আমি কি মেয়েটাকে বলসি আমি ওরে লাইক/লাভ করি?তাহলে এরকম করে আমার পিছে লেগে আছে কেন?
শুন শান্ত এলিনার মত অনেক মেয়েই তোর জন্য পাগল,সবাই তো আর গলায় ঝুলতে পারে না,এলিনার দাপট বেশি তাই তোর কোলেও উঠে গেছে,কদিন পর তো!
নো ওয়ে!আমি জীবনেও ওরে বিয়ে করবো না,ওর প্রতি আমার কোনো interest নেই
ছুটি হয়ে গেছে আহানা টিউশনির দিকে যাচ্ছে তারপর মনে করলো এখনও ৩০মিনিটের মত সময় আছে,আমি গিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটা দেখে আসি বরং☺
আহানা গাছটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,কি অপূর্ব!এত সুন্দর কেন,লালে লাল হয়ে আছে চারিদিকটা
আহানা খিলখিল করে হেসে নিচে বসে ঝরে যাওয়া ফুলগুলো কুড়াতে লাগলো,গোটা ফুল ও নিচ্ছে আবার ঝড়ে যাওয়া পাপড়িও নিচ্ছে
ব্যাগের একটা সুতা খুলে গিয়ে ঝুলতেসে কদিন ধরে,আহানা সেটা ছিঁড়ে নিয়ে ফুলগুলোর গোড়ায় গিট্টু দিয়ে দিয়ে একটা ফ্লাওয়ার ক্রাউন বানালো,তারপর সেটা মাথায় দিলো,সুতাটা মাথায় লাগিয়ে কানের নিচ দিয়ে নিয়ে গলার পেছনে গিট্টু দিয়ে আটকালো,আয়না হলে ভালো হতো,দেখতে পারতাম কেমন লাগতেসে আমাকে☺
তারপর তার নজরে পড়লো দূরে একটা লেক,সেখানে এসে পানির উপর মাথা নিয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে
উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ আমার,অবশ্য গায়ের রঙের সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারনা নেই,আশ্রমের সেই মা টা বলেছিল আমার গায়ের রঙ নাকি উজ্জ্বল শ্যামলা
আমার মুখে কোনো মেকআপ নেই,নেই কোনো লিপস্টিক,কাজল তো দূরেই থাক,অবশ্য একবার আমি ঠোঁটে লিপস্টিক দিসিলাম,হিহি সেটা ছিল মজার ঘটনা,মীম আপু বিটের তরকারি রান্না করেছিল,উনি বিট কাটার সময় আমি একটা ছোট্ট বোতলের ছিপিতে করে বিটের রস নিয়ে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে সেই রঙ লাগিয়েছিলাম ঠোঁটে,আমাকে কি সুন্দর লাগতেছিলো সেদিন
লিপস্টিক দিলে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে
আহানা পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে হাসতেসে,তার বাসায় আয়না নেই,ফোনের ক্যামেরায় মাঝে মাঝে নিজেকে দেখে সে,আজ পানিতে দেখতেসে
দুনিয়ায় কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে,আমি তো তাদের নখের যোগ্য ও না
মুখটা ফ্যাকাসে করে হাত দিয়ে আহানা পানিটা ঘোলায় দিয়ে উঠে আসলো
শান্ত বাইক নিয়ে সেই পথ দিয়ে বাসায় ফিরতেসিলো আহানাকে দেখলো গাছের নিচ থেকে নিজের ব্যাগটা নিতেসে
ও এখানে কি করে?
শান্ত বাইক থেকে নেমে তাকিয়ে আছে আহানার দিকে
আহানা শান্তকে দেখেই থেমে গেলো
শান্তর দিকে আহানা ফিরে তাকাতেই ওকে দেখে শান্ত কিছুটা চমকে গেলো কারন ওর মাথায় খুব সুন্দর করে কৃষ্ণচূড়ার একটা ক্রাউন,বাজারে কত ফুলের ক্রাউন সে দেখেছে,গোলাপ,গাঁধা আরও কত কি তবে এমনটা এ প্রথম দেখলো
প্রকৃতির পরীরা যেমন কৃত্রিম পন্যের বাইরে সাজে ন্যাচারালি ঠিক তেমনটা আজ আহানাকে লাগতেসে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চললো
শান্ত সামনে গিয়ে ওর পথ আটকালো
আহানা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
সে কিছু বলার আগেই শান্ত বললো ঔষধ খেয়েছিলা?
হুম!
ব্যাস শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলো,আর একটা কথাও বললো না একটি বার তাকালো ও না
ওমা এটা জিজ্ঞেস করার জন্য বাইক এখানে ব্রেক করলো,আজব লোক তো!আজব লোক আজগুবি তার কাজকর্ম
শান্ত কিছুদূর গিয়ে ভাবলো আহানা প্রতিদিন এই পথ দিয়ে কই যায় দেখবো একটু
শান্ত বাইক ঘুরিয়ে আহানাকে ফলো করলো,আহানা একটা বাসায় এসে সেই বাসার কলিংবেলে চাপ দিলো
শান্ত উঁকিবুকি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতেসে ভেতরে কি হচ্ছে,পরক্ষনেই বাসার সামনের রুমের জানালা দিয়ে আহানাকে সে দেখতে পেলো
একটা ছোট্ট মেয়েকে টেবিলে বসিয়ে পড়াচ্ছে
ওহ তাহলে টিউশনি করাতে আসে এখানে
শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলো তার বাসার দিকে
আহানা বাসায় ফিরার সাথে সাথে আসলো রুপার কল
কিরে রুপা আজ ভার্সিটিতে আসলি না কেন?
একটা অনুষ্ঠানে গেসিলাম,কাল আসবো সিউর
আচ্ছা
চুলটা বেঁধে আলু একটাকে ১০টুকরা করে কেটে ভাজলো আহানা
হিহি,ভর্তা করলে ২টা আলু লাগে,আর আজ ভাজি করায় ১টা লাগলো,এই ১০টুকরো আলু দিয়ে আমার আজকে ভালো খাবার জমবে,গরম ভাত উইথ আলু ভাজা
বাকি যে আলু আছে সেটা কাল ভেজে নিব,পরশু পেঁয়াজ আর ভাত,তার পরেরদিন ও পেঁয়াজ আর ভাত,ব্যাস আগামী ৩দিনের মেনু রেডি,তারপর থেকে কি হবে!টিউশনি না পাওয়া পর্যন্ত খালি ভাত আর নুন খাবো,হুম ডান☺
আলু ভাজা দিয়ে গরম ভাত খুব মজা করে খেলো আহানা,এই বুদ্ধি আগে আসলে আমার আরেকটা আলু বেঁচে যেতো,ঘরে তো তেল ছিল,ফ্রুটোর বোতলের এক বোতল তেল আছে,কনিকা আপুর থেকে একটা ডিম ধার নিয়ে একদিন খাব ভেজে,না থাক তেল শেষ হয়ে গেলে বেতন পাওয়ার পর তো তারেক আঙ্কেলকে সব টাকা দিয়ে দিতে হবে,উনি ২মাসের ৮হাজার টাকা পান,৬হাজার টাকা পরেরমাসে বেতন পেয়ে উনাকে দিয়ে বলবো বাকি ২হাজার দিতে দেরি হবে,যাই হোক তেল এত খরচ করা ঠিক হবে না,আমি বরং ডিমটা সিদ্ধ করে নিব,তাই ভালো হবে
বুয়া!চিকেন কই?আমার চিকেন ছাড়া খাবার খেতে মন চায় না জানো না!
আইতাছি,মুরগী হইতে একটু দেরি হইসে,রান্নাটা শেষ,নেন খান
শান্ত ফোনে গেমস খেলতে খেলতে আরেক হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে হঠাৎ আহানার কথা মনে পড়লো,আগের মত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিছে নাকি কে জানে,হুহ আমার কি!
পরেরদিন ভার্সিটিতে আসতেই আহানা তো অবাক,তাদের ক্লাস রুম কেমন জড়ো হয়ে আছে স্টুডেন্টের ভিড়ে
রুপা আহানাকে দেখে খুশি হয়ে ওর হাত ধরে টেনে জড়ো হওয়া লোকালয়ের ভিতরে ঢুকে গেলো
হাই রুপা!হাই আহানা
হাই!
শুনো আমার এই শুক্রবারে বিয়ে,তোমরা দুজনেই আসবা এই নাও কার্ড
রুপা তো কার্ড পেয়ে লাফাতে লাফাতে সিটে চলে গেলো
আহানা মিরাকে অভিনন্দন জানিয়ে রুপার পাশে এসে বসলো
কিরে?মিরার বিয়ে,আমরা নাচগান করবো,তুই এমন মুখটা বাংলার পাঁচ করে রাখছিস কেন?
তুই যাইস আমি যাব না
কিন্তু যাবি না কেন?
আমার কাছে শাড়ী বা ভালো ড্রেস নেই,কি করে যাবো?আর মিরাকে গিফট ও তো দিতে হবে,খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না,সেই টাকা নেই আমার কাছে,তাই যাব না
ওহ এই কারন?ধুর বোকা,আমি তোকে আমার একটা জামা দিব,আর গিফট আমি দিয়ে দিব আমার আর তোর হয়ে
তাও আমি কিছু না দিলে কেমন হবে ব্যাপারটা,বাদ দে,আমি যাব না,তুই যা
দরকার হলে গিফট তুই চুজ করিস,টাকা আমি দিব,তাহলে দুজনের দেওয়া গিফট হবে,তাও প্লিস আমার সাথে বিয়েতে attend করিস
আচ্ছা দেখি
শান্ত কি সমস্যা তোমার?তুমি আমাকে ইগনোর করতেসো কেন?কাল রিয়াজকে বললাম তোমাকে বলতে আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে,আর তুমি কিনা কথা না বলেই বাসায় ফিরে গেলা?আমাকে একবার কল ও করলে না
শুনো এলিনা আমি আগেও বলেছি এখনও বলতেসি আমরা জাস্ট নরমাল ফ্রেন্ড এর চেয়ে বেশি কিছু না
বেশি কিছু আমি জানি,তুমি বলতে চাও না,বলতেও হবে না,আমি শুনতে চাই না
শান্ত ভাইয়া!
মিরা?কি হইসে বলো
ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,শুক্রবারে বিয়ে,আপনি প্লিস আসিয়েন,আপনি আসলে আমি অনেক খুশি হবো,প্লিস প্লিস
এলিনা আপু তুমিও আসিও শান্ত ভাইয়ার সাথে
congratulations মিরা♥আমি অবশ্যই আসবো
থ্যাংকস ভাইয়া,থ্যাংক ইউ সো মাচ,কার্ডটা নিন
ওয়াও দেখলে সবাই জানে আমি আর তুমি কাপল আর তাই আমাদের একসাথে ইনবাইট করেছে
সেখানে তুমি কিনা আমাকে অস্বীকার করতেসো?
শান্ত কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো
এই তুই সারাদিন কার সাথে এমন কথা বলিস দেখি?
আহানা রুপার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলো নওশাদ লেখা,ওমা নওশাদ??কে এই নওশাদ?
আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে এক দৌড় দিলো
দাঁড়া আহানা,মজা করিস না প্লিস,আমার ফোন দে,আহানা!!
দিব না,আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবো
আহানা রুপার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে আর দুম করে এক ধাক্কা লেগে গেলো শান্তর সাথে,দুজনেই নিচে পড়ে গেলো
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!এটা কি তোমার বাসা নাকি?এরকম পাগলের মত দৌড়াচ্ছিলে কেন,পুরো জ্যাকেট নোংরা করে দিসে আমার
আহানা জিহ্বায় কামড় দিয়ে তাকিয়ে আছে,সে নিজেও ঘাসের উপর পড়ে গিয়ে বসে আছে
শান্তর মেজাজ এমনিতেও গরম ছিল তার উপর আহানা আরও গরম করে দিসে
রেগে উঠে দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলতে লাগলো সে
আহানা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো
শান্ত তার জ্যাকেটটা খুলে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
আহানা ব্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত বললো এটা ধুয়ে শুকিয়ে কাল এনে আমাকে দিবে
রিং ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুইবা বুঝছো?অন্য ডিটারজেন্টের ঘ্রান আমার পছন্দ না
আজব তো!আমি কেন ধুবো?
কেন মানে?তোমার জন্য আমি মাটিতে পড়ে গিয়ে আমার জ্যাকেট নোংরা হয়ে গেছে সো তুমি ধুয়ে শুকিয়ে এনে দিবা আমাকে বুঝছো!
আহানা ভেঁংচি দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো
শান্ত মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে
শান্ত এদিকে আয় আজকে ফুটবল ম্যাচ আছে,জয়েন হবি না?
আসতেসি!
শান্ত গিয়ে নওশাদ,রিয়াজের সাথে ফুটবল ম্যাচে জয়েন দিলো
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে
আহানা হেঁটে হেঁটে টিউশনির দিকে যাচ্ছে,আজ আর ঐ পথে শান্ত আসেনি,যাক বাবা বাঁচলাম,আহানা খুশিতে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হেঁটে যাচ্ছে,একটা গলি পার হলেই একটা বিরাট বড় মাঠ পড়ে
শান্ত সেখানেই ফুটবল খেলতেসে
আহানা জ্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে শান্তকে বকতে বকতে যাচ্ছে মাঠটার পাশ দিয়ে
শান্ত কিক মার!!
শান্ত জোরে সোরে কিক মারলো বল গোল পোস্টে না ঢুকে আরেক দিকে গেলো,তাও যে দিকে গেলো সেদিকে আহানা ছিল
বল গিয়ে একদম ওর গায়ে পড়লো,মনে হয় কেউ পাথর মেরেছে
আহানা দুম করে পড়ে গেলো রোডের উপর
ইস রে,জনগনরে আঘাত করলি শেষমেষ এবার তুই সামলা,মনে হয় কোনো মেয়ের গায়ে পড়েছে,আমি বল নিতে যামু না,লোকজন ডেকে এবার কেয়ামত করবে
তুই চুপ থাক নওশাদ,আমি যাচ্ছি
শান্ত মাথার চুল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো
আহানা বল সরিয়ে জামা ঝাড়তেছে রাস্তায় বসে বসে
ওহ তুমি!দাও বল দাও
আপনি?আপনি আমার গায়ে বল মেরেছেন?
ইচ্ছে করেই এমন করেছেন তাই না?সকালের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিলেন?
চুপ!আমার বল দাও
আহানা বল নিয়ে উঠে দাঁড়ালো,তারপর নিজের গায়ের ওড়নাটা খুলে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
শান্ত চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে
ওড়না দিতেছে কেন আমাকে মেয়েটা?
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্রু নাচিয়ে বললো কি?তোমার ওড়না আমাকে দিচ্ছো কেন?
সকালে আমার জন্য পড়ে গিয়ে আপনার জ্যাকেট নোংরা হয়েছিল তাই আমাকে সেটা ধুইতে দিসিলেন
হুম তো?
এখন আপনার কিক করা বলের কারনে আমি পড়ে গিয়ে আমার ওড়না নোংরা হয়ে গেছে,আপনি ধুয়ে আনবেন বাসা থেকে,শুকিয়ে আনবেন,কেমন?আর হ্যাঁ যেকোনো ডিটারজেন্ট হলেও চলবে আমার,ইটস ওকে
শান্ত রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেলো ওর দিকে
আহানা একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো নাহলে এক কাজ করেন আপনার জ্যাকেটটা নিয়ে যান,আমিও আমার ওড়না ফেরত নিব
শান্ত রেগে দাঁতে দাঁত চেপে আহানার ওড়না মুঠো করে ধরলো
গুড বয়!
তুমি এই অবস্থায় টিউশনিতে যাবে?ওড়না ছাড়াই?
না তো!আমার তো অন্য উপায় আছে,এক মিনিট!
আহানা তার চুলের খোঁপা থেকে কাঠিটা খুলে ফেললো,সাথে সাথে খোঁপা খুলে গিয়ে ওর পিঠের নিচ পর্যন্ত চুলগুলো মেলে গেলো
আহানা চুল দুভাগ করে সেগুলো তার সামনে নিয়ে আনলো
তারপর হেসে বললো ব্যাস,হয়ে গেলো না?
আহানা হাসতে হাসতে চলে গেলো
শান্ত অবাক হয়ে আহানার চলে যাওয়া দেখতেসে,তারপর বলটা নিয়ে ফিরে আসলো মাঠে
রিয়াজ আর নওশাদ ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে
হোয়াট?
কিরে ভাই তোর হাতে মেয়েদের ওড়না কেন?
সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়লো
শান্ত মুখ ফুলিয়ে বললো কিছু না
ওড়নাটা নিয়ে তার স্পোর্টস ব্যাগে ঢুকিয়ে বসে পড়লো চেয়ারে,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার
কিরে বললি না ওড়নাটা পেলি কই,আর সেটা ব্যাগে ঢুকালি কেন?
কিছু না বাদ দে,খেলা শেষ,আমি যাই
শান্ত ব্যাগ নিয়ে বাইকে উঠে বাসায় ফিরে আসলো
বাসায় ঢুকেই ওড়নাটা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে
এই মেয়েটার এত এত সাহস আসে কোথা থেকে,আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেয়?বেয়াদব মেয়ে
আহানা শান্তর কথা মনে করে হাসতেসে বসে বসে
ম্যাম কি হয়েছে?হাসতেসেন কেন?
না কিছু না,অংকটা লিখে আমাকে দেখাও
বাসায় এসে শান্তর জ্যাকেটটা নিয়ে ভাবলো বাসায় তো রিং পাউডার নেই,ওগুলার দাম যে বেশি,আমি তো সাবান দিয়ে জামা কাপড় ধুই,এখন কি করবো,আচ্ছা থাক সাবান দিয়েই ধুই,কি আর করার
পানিতে ভিজানোর আগেই আহানার মনে হলো জ্যাকেটের পকেটে কিছু একটা আছে
হাত ঢুকিয়ে আহানার চোখ কপালে উঠে গেলো,৫হাজার টাকা,বাপরে বাপ এত টাকা নিয়ে মানুষ ভার্সিটিতে আসে আবার ভুল করে ফেলেও যায়
আহানা টাকা গুলো তার ব্যাগে রেখে দিলো,কাল শান্তকে দিয়ে দিবে
তারপর জ্যাকেটটা ধুয়ে উঠানে মেলে দিয়ে আসলো
আলু ভেজে সেটা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে বিছানায় বই নিয়ে বসলো সে
হঠাৎ পিউর মায়ের নাম্বার থেকে কল আসলো
আহানা কিছুটা ভয় পেয়ে রিসিভ করলো,না জানি বলে আর পড়াতে হবে না,আহানার গা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে
উনি বললেন একটা টিউশনির খোঁজ পেয়েছেন,তার খালাতো বোনের মেয়েকে পড়াতে হবে,ক্লাস ওয়ানে পড়ে,সব বিষয় পড়াতে হবে,২হাজার টাকা দিবে
আহানা তো খুশিতে অবাক,অনেক ধন্যবাদ জানালো পিউর মাকে,উনি ঠিকানাটা বলে দিলেন,আহানা নোট করে নিলো সেটা
আহানা খুশি হয়ে গেলো অনেক,কি যে ভালো লাগতেসে তার,মুখে প্রকাশ করে বুঝানো যাবে না,মনে হচ্ছে ২হাজার না ২লাখ বেতন
উনি বললেন ভোর ৬টায় পড়াতে হবে,যার মেয়েকে পড়াবে সে চায় তার মেয়ে যেন সকাল সকাল উঠা হেভিট করে নেয়,তাই এই টাইম ফিক্সড করেছেন
আহানা হ্যাঁ বলে দিলো
পরেরদিন ভোর ৪:৩০এ উঠে গেলো আহানা,খুশিতে চোখে ঘুম নেই তার
নামাজ পড়ে এসে সব গুছিয়ে ঠিক করে রাখলো,৫টা ৩০এ বাসা থেকে বের হলো,ভয় লাগতেসে একা একা হেঁটে যেতে,এত দূর উফ,একটা টাকাও নেই যে একটা রিকসা নিব,অবশ্য এ সময়ে রিকসা পাওয়াও টাফ,গলির পর গলি হেঁটেই চলেছে আহানা,ঠিকানার বাসাটা আসতেসেই না,মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ ঘুরা হয়ে গেছে
অবশেষে বাসাটার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,ইয়া বড় ১০তলা বিল্ডিং,কি standard রে বাবা,মনে তো হয় কোটিপতিরা থাকে
পিউর মা বলেছেন ৫তলায় বাসা যাকে সে পড়াবে
লিফটে করে ৫তলায় গিয়ে এবার পড়লো কনফিউশনে
২টা ইউনিট,কোনটা ঐ মেয়েটার বাসা কে জানে,পিউর মা তো বলেন নাই কোন ইউনিট
মনে হয় দরজায় সূর্যমুখির ফুল সহ টব আটকানো এই ইউনিট হবে
আহানা গিয়ে দরজা নক করলো,কারোর কোনো response নাই,আবারও নক করলো,ওমা!এবারও response নাই কোনো
শান্ত হাই তুলতে তুলতে বিছানা থেকে নামলো,উফ নওশাদ,রিয়াজ সূর্য!!গন্ডারের মত ঘুমাচ্ছিস কেন,কলিংবেল বাজতেসে কানে শুনস না তোরা?আমি আমার রুম থেকে শুনতেসি,আর তোরা সামনের রুমে থেকে শুনস না?ধুর!
শান্ত মাথা চুলকাতে চুলাকতে গিয়ে দরজা খুললো
আহানা মুচকি হেসে সালাম দিতে গিয়ে চোখ বড় করে ফেললো শান্তকে দেখে
তুমি!!
আপনি?!
তুমি এখানে কি করো?আমার বাসার ঠিকানা পেলে কই?
আপনার বাসা এটা আমি জানতাম না,আমি তো এখানে একটা মেয়েকে পড়াতে এসেছিলাম
ওহ,তো আমাকে দেখে তোমার মেয়ে মনে হয়?
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনার সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট!
আহানা ঘুরে আরেক ইউনিটে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাত ধরে টান দিলো
কি?
আমার জ্যাকেট কই?
আমার বাসায়,এখনও শুকায় নাই,যে বস্তা মার্কা জ্যাকেট আপনার,ভার্সিটিতে আসার সময় নিয়ে আসবো,হাত ছাড়ুন আমার
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো
আহানা ডান পাশের ইউনিটে নক করতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুললেন,তার সাথে একটা ছোট্ট বাবু
বাবুটা মুচকি হেসে বললো তুমি বুঝি আমার মিস?
আহানা হেসে দিয়ে বললো হুম
তার মা তাকে ধমক দিয়ে বললো আপনি করে বলতে
মেয়েটা ভয় পেয়ে বললো আপনি,তারপর আহানার পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছ
Santuuuuuuu
ওলে আমার মিষ্টিইইইইইই
শান্ত এগিয়ে এসে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো
মিসেস মিশু হক বললেন আসো ভিতরে আসো
উনি আহানাকে নিয়ে চলে গেলেন
শান্ত ভিতরে এসে মিষ্টিকে সোফায় বসালো,নিজেও বসে গেলো
এই বান্দরটার সাথে মিষ্টির এত ভাব?বাপরে,আমি তো ভাবলাম উনার মুখ দিয়ে তেতো কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয় না
মিস এই হলো আমার Santuuu ভাইয়া,আমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দেয়
হুহ এরে আমি চিনবো না!হারে হারে চিনি
ওকে মিষ্টি তুমি পড়ো আমি যাই
শান্ত বাই বলে চলে আহানার দিকে তাকিয়ে গেলো
মিস আপনি বসো,আমি বই নিয়ে আসি
আহানা মিষ্টির কথা শুনে হাসতেসে
শান্ত রুমে এসে বিছানায় শুয়ে তো পড়লো কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই,এপাশ ওপাশ করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,পকেট থেকে সিগারেট একটা নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরালো
সিগারেট বেশি খাওয়া হয় না তার!এটা সম্পূর্ন মনের উপর ডিপেন্ড করে,মন চাইলে খাই নাহলে খাই না,নেশা না যে দিনে ৫/৬বার খাবো
মিষ্টিকে পড়াতে বেশ লেগেছে আহানার,৭টা পর্যন্ত পড়িয়ে বাসা থেকে বের হলো সে
শান্ত সিগারেটের ধোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়তেসে,ব্রিক ফিল্ড আমি,হাহাহা
তারপর হঠাৎ ওর নজর গেলো নিচের দিকে,আহানা বাসা থেকে বের হয়ে ফোন বের করে কাকে যেন কল করতেসে
শান্ত ৫তলার উপরে দাঁড়িয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা গম্ভীর করে সিগারেটটা আহানার সামনে ছুঁড়ে মারলো উপর থেকে
আহানা ফোন নিয়ে রুপাকে ফোন করলো আজ আসবে কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য কিন্তু ফকিন্নিটা মনে হয় ঘুমাচ্ছে,হঠাৎ সামনে কিছু পড়েছে বুঝতে পেরে আহানা নিচে তাকালো,একটা সিগারেটের অর্ধেক অংশ পড়ে আছে,এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে,আহানা চমকে উপরে তাকালো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা ভাব নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
বেয়াদব একটা!
আহানা পা দিয়ে সিগারেটটটা রোডের সাথে পিষিয়ে দিলো দাঁতে দাঁত চেপে
শান্তর মেজাজ গরম হয়ে গেছে
মন চাচ্ছে ৫তলা থেকে নেমে এক ধোলায় দিতে যেভাবে পিষাচ্ছে মনে হয় শান্তকে পিষাচ্ছে
হুহ!
আহানা চলে গেলো ওখান থেকে
এই মেয়েটার আজকে ভার্সিটিতে গিয়ে ১২টা বাজাবো আমি
এত ভাব আর সাহস দেখানোর শাস্তি ওর পেতে হবে!
শান্ত গিয়ে বিছানায় আবারও শুয়ে পড়লো
কতবড় বেয়াদব হলে একটা মেয়ের সামনে উপর থেকে কেউ সিগারেট ফেলতে পারে!অসভ্য লোক একটা,মন তো চায় ওর জ্যাকেটে বিচুটি পাতা লাগাই দিই!
আহানা বাসায় ফিরার সময় দেখলো একটা দোকানের সামনে সবাই লাইন ধরে আছে,মহিলা আবার পুরুষ ও
একজন মহিলা হাতে ইয়া বড় ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বোরকা পরা
মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগটা ভাঁজ করে হাতের মুঠোয় রাখতেসে আবার কিসব ভেবে ব্যাগটা খুলে রাখতেসে
আহানা একটু এগিয়ে গিয়ে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপারটা কি,সবাই এমন লাইন ধরেছে কেন,উনি বললেন এখানে ১০টাকায় ১কেজি চাল দেয়,১০০টাকায় ১০কেজি
আহানা তো অবাক হয়ে গেলো উনার কথা শুনে,ইশ আমার হাতে এখন ১০টা টাকা থাকলে এক কেজি কিনে নিতে পারতাম,কি করবো,বাসায় চাল ও তো কমে আসছে
কানে হাত দিয়ে চুল সরাতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো
আরে আইডিয়া!
কানের দুল গুলো খুলে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো সে
এগুলো সে মেলা থকে ৩০টাকা দিয়ে কিনেছিল,সে আবার ফিরে এসে মহিলাটির পিছনে থাকা একটা যুবতি মেয়েকে দেখতে পেলো,মেয়েটাকে দেখে মনে হয় তেমন বড়লোক না তবে গায়ের পোশাক আশাকে মনে হয় সাজগোজ পছন্দ করে বেশি
আহানা মেয়েটাকে বললো আপু আমার এই কানের দুলটা নিবা?আমি ৩০টাকা দিয়ে নিসিলাম তুমি যত দিবে তাই নিব,প্লিস নাও না,আমি ১০/১২দিন পরেছি,এখনও নতুন আছে দেখো
মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো,কারন কানের দুল গুলো অনেক সুন্দর ছিল,আহানার পছন্দ অনেক ভালো
মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে ২০টাকা নিয়ে আহানাকে দিলো
আহানা তো মহা খুশি,মেয়েটাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে দুলটা দিয়ে ২০টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লো,খুশিতে লাফাতে মন চাচ্ছে তার,চাল কেনা হয়ে গেলে আর কোনো চিন্তা নেই,নুন দিয়ে কচলিয়ে খেয়ে মাস কাটাতে পারলেই হলো😎
২০টাকা দিয়ে ২কেজি কিনে বাসায় ফিরলো আহানা
চালগুলো তার চালের বালতিতে ঢালতে গিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার,চাল যদি ৫০% হয় বাকি ৫০% পোকাতে ভরা আর নষ্ট,এমন করে ঠকালো আমাকে?
মানুষ গরীব না হলে তো ১০টাকার জন্য লাইনে দাঁড়ায় না,আর ওরা এভাবে ঠকায় আমাদের,এর চেয়ে তো ৩৫টাকার চালই ভালো,ধুর!
মানুষ ঠকানোর জন্য বেছে বেছে গরীব মানুষ খোঁজে এরা
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল ১০টাকায় ১কেজি চাল কেন দিবে,নিশ্চয় কোনো গণ্ডগোল ছিল,এটা মাথায় ছিল না একদম
থাক এগুলা পরিষ্কার করলে যা পাবো তাও চলবে,কি আর করার,আমার জন্মই হইসে ঠকে যাওয়ার জন্য
কলিংবেল বাজতেসে
শান্ত এখনও ঘুমায়নি, ৮টা বাজে মনে হয়,বলদগুলো ঘুমায় এখনও
শান্ত গিয়ে দরজা খুললো,একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মুরগী হাতে,সম্ভবত কেটে এনেছে
কে তুমি?
আপনি শান্ত ভাইয়া?
হুম,কেন?
আমি আছমা বেগমের মেয়ে,আপনার বাসায় যে কাজ করে
ওহ আচ্ছা,কি হইসে বলো?
আম্মা কইলো মুরগী এটা রাখতে উনি ১০টার দিকে আসি রাঁধি দিব
প্রেমের পাঁচফোড়ন পর্ব ৭+৮
ওকে
শান্ত মেয়েটার হাত থেকে মুরগী নিয়ে হঠাৎ চোখ তুলে মেয়েটার কানের দিকে তাকালো,মেয়েটার কানের এই দুলটা তো একদম আহানার কানের দুলের মতন
