প্রেমের সমর পর্ব ১২
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
নিজের সামনেই নিজের বউয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসাটা ঠিক কতখানি অপমানের তা স্বচ্ছ বুঝে উঠল না। শুধু চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে থাকল ফ্লোরের দিকে। স্বচ্ছর বাবা শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর স্বরে জানালেন,
“ কি বলো? সব ঝামেলা শেষ করতে রাজি তো তুমি নাকি? ”
স্বচ্ছ গম্ভীর ভাবে তাকায়। সুহা বিবাহিত এটা জানার পরপরই তিহানের সেই কাজিন তার বাবা মাকে নিজের আশা ভঙ্গের কথা জানাল। অথঃপর তার বাবা মা খোঁজ নিয়ে জানল যে সুহা আর স্বচ্ছর নামমাত্রই বিয়ে হয়েছিল। এইছাড়া আর কোন সম্পর্কই নেই। এমনকি বিয়ের সম্পর্কটাও খুব তাড়াতাড়ি বিচ্ছিদে পরিণত হবেে।ব্যস! উনারা যেন সুযোগ পেয়ে বসলের। হুড়মুড় করে স্বচ্ছর বাবামার কাছে সুহার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন। স্বচ্ছ তা দেখে দাঁতে দাঁত চাপে। বলে,
“ কিসের ঝামেলা আব্বু?বিয়ে হয়েছে, বউ চাইছি৷ এসব তোমার কাছে ঝামেলা মনে হলো আব্বু? ”
শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় জানায়,
“ সুহার পরিবার চায় না ও তোমার সাথে সংসার করু। শুধু ওর আম্মুর একটু মত আছে। নয়তো ওর দাদা দাদী তোমার নামই শুনতে পারে না। আমাদের খুব বড়বড় কথা বলার মুখও তুমি রাখো নি স্বচ্ছ। কাজেই কি করতে পারি? উনারা চাচ্ছেন অন্যত্র্য বিয়ে দিকে। তার মানে তিহানের খালাত ভাই রিফাতও দারুণ একটা ছেলে। নিঃসন্দেহে সুহার সাথে ওর খুব ভালো মানাবে। ”
স্বচ্ছ কপাল কুঁচকে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ ছিঃ আব্বু! তুমি বাপ হয়ে ছেলের সামনে ছেলের বউকে অন্য কারোে সাথে ভালো মানাবে এটা বলছো? ছিঃ!”
শাহরিয়ার সাহেব শান্তস্বরে বললেন,
“ তুমি সত্যিই এবার সিরিয়াস? সত্যিই সুহাকে নিয়ে ভাবছো তুমি? নাকি এটাও তোমার হেয়ালিপনা? ”
“ তোমার কি মনে হয় আব্বু? ”
“ কিছুই মনে হচ্ছে না। তুমি মনে হওয়ার মতো কোন রাস্তাই রাখোনি। ”
স্বচ্ছ রেগে নিজের রুমে চলে যায় এবারে। রুমে এসেই রাগ হাঁসফাঁস করতে করতে সাদাফকে শুধায়,
“ তুই বল? ঐই ছেলের কি মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া উচিত? ”
সাদাফ বন্ধুকে আরেকটু প্রশ্রয় দিয়ে গদগদ স্বরে বলে উঠে,
“ অবশ্যই বন্ধু! সাথে মাথাও ফাটানো উচিত। ”
স্বচ্ছর হাতে একটা খাম। দুইঘন্টা আগে পেয়েছে সে এই খাম। ভেতরের কাগজটা পড়ে যা বুঝল এটা ডিভোর্সের নোটিশ। স্বচ্ছর চোয়াল শক্ত হয়। কালই বিয়ের জন্য প্রস্তাব এল ঐ তিহানের কাজিনের থেকে আর আজ কিনা ডিভোর্সের নোটিশ? স্বচ্ছ মেনে নিবে? রাগে হুড়মুড় করতে করতে গেল তিহানের সে কাজিনটার কাছেই। দাঁতে দাঁত চেপে প্রথমেই দুটো দানবীয় চড় বসাল ছেলেটার গালে। পরপর ইচ্ছে মতো মার দিল। আকস্মিক আক্রমনে বোধহয় ছেলেটা হতভম্ব! অথচ স্বচ্ছর খেয়াল নেই। রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে কোথা থেকে একটা স্ট্যাম্প খুঁজে এনেও মারল। তারপর বোধহয় রাগ মিটল। অনেকটা সময় পর ছেলেটার কলার টেনে শাসিয়ে বলল,
“ অন্যের বউকে বিয়ে করার সাহস করবি না। মনে থাকবে? নাহলে কিন্তু পরিণতি আরো খারাপ হবে। ”
কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ ফের বাসায় এল। রাগে হাঁসফাঁস করছে সে। শরীর ঘামছে। অতঃপর অনেকটা সময় পর নিজেকে শান্ত করে কল লাগাল সুহাকে। একনাগাড়ে অনেকগুলো কল দিয়ে যখন রিসিভড হলো তখন গম্ভীর গলায় বলল,
“ একটা খাম এসেছে সুহাসিনী। ”
“ তো? পড়েছেন খামের ভেতরে থাকা কাগজ? ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে জানায়,
“ আমার এখন রাগ হচ্ছে। এতদূর যাওয়া বোধহয় তোমার উচিত হয়নি।আমাকে? আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছো সুহাসিনী?”
সুহা বাঁকা স্বরে বলে,
“ আপনি কোথাকার কোন মহারাজা অস্বচ্ছ সাহেব যে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার সাহস দেখাতে পারব না? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ ওয়েট, জাস্ট ওয়েট সুহাসিনী! তোমার মনের মহারাজা হয়ে দেখাব। ”
“নিজেকে কি ভাবেন? এতোটা আস্থা কেন নিজের প্রতি? ”
“ কারণ আমি আমিই! ”
সুহা হাসে। তাচ্ছিল্যের হাসি। বলে,
“ আর আমি খুবই স্বস্তা? খুবই মূল্যহীন? তাই না? ”
স্বচ্ছ চুপ থাকে এবারে৷ অনেকটা সময় চুপ থাকে। কপালে স্লাইড করে রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। অতঃপর অনেকটা সময় পর বলে,
“ স্বস্তা হলে তোমার পিছু পড়তাম না সুহাসিনী। মূল্যহীন হলে তোমার জন্য এক ছেলেকে মেরে আধমরা করে বাসায় ফিরতাম না। ”
সুহা আতঙ্কিত হয়। সেদিন সাদকে যেভাবে মেরেছে এরপর এই কথাটা অবিশ্বাস্য নয়৷ আতঙ্কিত স্বরেই বলে উঠে,
“ কাকে মেরেছেন? কাকে মেরে আধমরা করেছেন স্বচ্ছ? ”
“ তোমার প্রেমিককে!তিহানের খালাত ভাইকে। ”
সুহা অবাক হয়ে বলে,
“ কি?”
“ হু।”
সুহার রাগ হয়।একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে,
“এসব কি ধরণের পাগলামো স্বচ্ছ?এসব কি আমায় দেখানোর জন্য? নাকি নিজের স্বার্থে ফাটল পড়ছে তাই?ইগোতে লেগেছে? শুধু শুধু তিহানের খালাতো ভাইকে মেরে হাত পা নাক ফাটানোর মানে কি জানতে পারি?নাকি ঢং করছেন?”
স্বচ্ছ এবারে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। উত্তর দেয়,
“ ঢং যদি হয় তোমার জন্য তবে ঢংই করলাম নাহয়। ”
স্বচ্ছ প্রায় রাত দুটোর পরই শ্বশুড়ের বাসার সামনে এসে পৌঁছাল। চারদিকে তখন অল্প নিরবতা। স্বচ্ছ এপাশ ওপাশ চায়। পরমুহুর্তে ফোন বের করে একজনকে কল দেয়। সে আর কেউ নয়, রাহা। নাম্বারটা স্বচ্ছ ছুটির থেকেই নিয়েছে। তাও বহু বার বলার পরে। তারপরে রাহার সাথে একবার কল করে ভাব জমিয়েছে খুব করে। অতএব এই মাঝ রাত্রিতে এসে শালিকাকে কল করা। রাহাও গদগদ হয়ে বেলকনিতে আসে৷ দুলাভাইকে দেখে নেচে নেচে নিচে এসে গেইটও খুলে দেয়৷ তারপর স্বচ্ছ পা বাড়ায়৷ যেতে যেতেই রাহা বলে,
“ আপু তো ঘুমমম ! দাদা দাদীও ঘুম। আম্মা জেগে আছে শুধু।”
“ মানে শ্বাশুড়ি আম্মু? ”
“ হু হু। আপনার শ্বাশুড়ি আম্মুই। ”
স্বচ্ছ অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। শুধায়,
“ যদি যেতে না দেয় বউয়ের কাছে? ”
রাহা হেসে উঠে বলে,
“ দিবে দিবে। আম্মুর তেমন কোন অসুবিধা নেয়। আম্মু শুধু চায় আপু যাতে ভালো থাকে। এবার সেটা আপনার সাথে কিংবা অন্য কারোর সঙ্গে।”
কথাগুলো বলতে বলতেই বাসার দরজায় আসল দুইজনে। অথচ স্বচ্ছ ঢুকে না। প্রথমে রাহাই গিয়ে মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে এল। তারপর বলল,
“ আম্মু অনুমতি দিয়েছে। ভেতরে আসুন দুলাভাই। ”
স্বচ্ছ বাসায় পা রাখে। এদিক সেদিক চোরের মতো চোখ বুলিয়ে শুধায়
“ কোথায় শ্বাশুড়ি আম্মু? ”
রাহা হাসে। উত্তরে বলে,
“ রুমে চলে গেছে। আপনি চাইলে আপুর রুমে যেতে পারেন দুলাভাই। দেখুন মানাতে পারেন কিনা। আমি কিন্তু খুব খুশি হবো আপনাদের জুটিটা একসাথে থাকলে। ”
প্রেমের সমর পর্ব ১১
স্বচ্ছ পা বাড়ায় ধীর পায়ে।দূর থেকে দেখা যায় সুহার ঘুমন্ত মুখ। স্বচ্ছ আরো আস্তে পা বাড়ায় যেন বউয়ের ঘুম না ভাঙ্গে। এই প্রথম সে একঘরে ঘুমন্ত সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সুহা নিশ্চিয় জেগে গেলে তেতে উঠবে? তার উপর একগাধা রাগ দেখাবে নিশ্চয়? স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। খাটের এককোণায় বসে ড্যাবড্যাব করে তাকায় সুহার দিকে। মেয়েটা জেগে থাকলে যেমন রাগ দেখায় এখন ঠিক ততোটাই শান্ত, শীতল মনে হচ্ছে। আদুরে লাগছে। স্বচ্ছর ইচ্ছে মেয়েটার নরম গালে হাত বুলাতে। অথচ হাত এগোয় না। যদি বউ জেগে যায়?কিন্তু ঐ যে? মস্তিষ্ক আর মনের মত্যে যুদ্ধে অবশেষে মনকে মানাতে পারল না। আলতো হাতে যখন সুহার গাল ছোঁয়াল ঠিক তখনই সুহা জেগে উঠল। স্বচ্ছর তখন যাচ্ছে তাই কান্ড! হবে কি একটু পর?না জানি তার মাথাটাই না ফাটিয়ে দেয় এই মেয়!