প্রেমের সমর পর্ব ১৩

প্রেমের সমর পর্ব ১৩
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সুহার চোখেমুখে রাগের আভাস। দৃষ্টিতে আগুনে জ্বলসে যাওয়ার মতো পূর্ভাবাস। সুহা রাগে ফোঁসফোঁস করে। তীর্যক ভ্রু করে তাকিয়েই প্রথমে খপ করে স্বচ্ছর সে হাতটাকেই চেপে ধরল যে হাতটা স্বচ্ছ সুহার গালে ছোঁয়াল। এমনভাবেই ধরল যে সুহার হাতের নখ গুলো ধেবে গেল স্বচ্ছর হাতের তালুতে। সুহা ঠোঁট বাকিয়েই বলে,
“মেয়ে দেখলেই ছুুঁতে ইচ্ছে করে না? ঘুমে থাকার সুযোগ নিচ্ছিলেন না অস্বচ্ছ সাহেব?”
স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলে। হাতের দিকে চেয়ে সুহার নখ ধাবানো দেখে হালকা হেসে পাল্টা প্রশ্ন করল ,
“ তুমিও আমায় ছুঁয়েছো সুহাসিনী। সুযোগ নিচ্ছো? ”
সুহা উঠে বসে। পরনের ওড়না ঠিক করে শক্ত স্বরে বলে উঠল মুহুর্তেই,
“ সুযোগ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না আমি। ”

“ তাহলে ছুঁয়েছো কেন?”
সুহা দাঁতে দাঁত চেপে তাকায়।বলে,
“ মেরে ফেলার জন্য!”
কথাটা বলেই সুহার টনক নড়ল। এতক্ষন ঘুম থেকে উঠেই স্বচ্ছকে দেখে এসব প্রতিক্রিয়া করেছিল। এখন যেন মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠল। বিভ্রান্ত স্বরে বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে,
“ এক মিনিট! আমার রুমে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে কে আপনাকে? আমার রুমে ঢোকার সাহস হলো কি করে আপনার? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হাসে। হাতে সুহার নখের চাপ গুলো দেখতে দেখতেই পরমুহুর্তেই সুহার দিকে তাকায়।ঠোঁট এলিয়ে ভাব নিয়ে বলে,
“ আমি তো বরাবরই সাহসী সুহাসিনী! সাহসীদের আর নতুন করে সাহস করার কি আছে বলো? ”
“ এসব বড় বড় কথা আমার সামনে বলবেন না। মেরে দিব জাস্ট। ”
“ মেরে দাও। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুহা এবারে দুই হাতে চেপে ধরে স্বচ্ছর গলাটা। চোখের দৃষ্টিতে যেন আগুন ঝরছে মেয়েটার। সুহা চোখে আগুন ঝরানো দৃষ্টিতে তাকিয়েই স্বচ্ছকে দুই হাতের শক্তি দিয়ে ঠেলে ফেলল। মুহুর্তেই বেচারা স্বচ্ছ খাট ছেড়ে পড়ে গেল রুমের ফ্লোরে। কোমড়ে বোধহয় ব্যাথাও পেল। সুহা হাসে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“ ভাববেন না মেরে দিতে পারব না। ”
স্বচ্ছ অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কোমড়ে হাত রেখে ভ্যাবাচ্যাকা দৃষ্টিতে বলে,
“ নির্দয় রমণী তুমি। মনে দয়ামায়া নেই। ব্যাথা পেলাম তো। কোমড়টা ভেঙ্গে দিলে সুহাসিনী! ”
সুহা ফোসঁফাঁস করে বলে,
“ মাথাটাই ফাটিয়ে দেওয়া উচিত ছিল না কি? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে বলে,
“ প্লিজ ফাঁটিয়ে দাও। ”
সুহা মুখ ভেঙ্গায়। বলে,
“ নাটক! ”

মুখ ভেঙ্গিয়ে কথাটা বলার সাথে সাথেই যেন সুহা মস্তিষ্কে খেলে গেল আরো একটা প্রশ্ন। দ্বিতীয়বার টনক নড়ল। মুহুর্তেই শুধাল,
“ এক মিনিট, এটা আমার বাবার বাসা।ঠিকানা মনে থাকার তো কথা নয় এতদিন। তো? ঠিকানা কে দিয়েছে আপনাকে? ”
স্বচ্ছ হাসে। ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো শুঁয়ে পড়ে বলে উঠে,
“ ভালোবাসা থাকলে ঠিকানা এমনি এমনিই চলে আসে সুহাসিনী! ”
সুহা বিড়বিড় করে রাগ ঝাড়ে। ঘড়িতে দেখে রাত দুটোর উপরে। বিড়বিড় স্বরে বলে উঠে,
“ রাত দুটোর উপর! ”
স্বচ্ছ শুনে। মাথার নিচে ওভাবেই হাত রেখে আরাম আয়শ করে শোঁয়ে সে। বলে,
“ ভালোবাসার কাছে রাত দুটো তো কিছুই নয়। ”

সুহা এবারে চুপ থাকে। কিয়ৎক্ষন পায়চারি করে ভাবে স্বচ্ছকে কি করা যায়?পরমুহুর্তেই রুম ছেগে বেরিয়ে বুঝে সবাই ঘুমোচ্ছে। ঘুম থেকে ডেকে তোলাটাও ভালো দেখায় না। সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাসায় তাদের রুম তিনটেই। দাদা দাদী একঘরে, তার আম্মু একঘরে আর সে আর বোন একঘরে। কিন্তু এখন তো বিপাকে সে। স্বচ্ছকে কোথায় ঘুমোতে দিবে এই রাতে? সুহা রাগে হাসফাঁস করতে করতে পুণরায় রুমে এসে বলে উঠে,
“ তিহানের কাজিনকে মেরেছেন কেন? ওকে যেভাবে মেরেছেন আপনাকে ও যদি সেভাবে মেরে বসিয়ে রাখি ভালো হবে? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে উত্তর দেয়,
“বউয়ের হাতের মাইর হলে অবশ্যই ভালো হবে। আমি রাজি মার খেতে। ”
সুহা নাক ফুলায়। টানটান স্বরে বলে,
“ উনাকে স্যরি বলবেন, এক্ষুনিই। ”
স্বচ্ছ ও টানটান স্বরে এবারে জানায়,
” বলব না। ”
দৃঢ়স্বরে উত্তর আসে,
” বলবেন। ”
“ না, বলব না সুহাসিনী। ”

সুহা জ্বলন্ত চাহনিতে তাকায়। যেন ভস্ম করে দিবে স্বচ্ছকে। বলে,
“ আমি এক্ষুনি তাকে কল করব।হয় আপনি তাকে স্যরি বলবেন নয়তো আমি এক্ষুনি তাকে কল করে বলব আমি বিয়ের প্রস্তাবটা এক্সেপ্ট করে নিয়েছি। ”
স্বচ্ছর রাগ হয় এবারে। নাক লাল হয়ে আসে। উঠে দাঁড়িয়ে সুহার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে শোনায়,
“ চুপচাপ ছিলাম এতক্ষন। ভেবেছিলাম ভালো ভালো কথা বলে বউকে ভাগে আনব। ভালোবাসব। কিন্তু না, তুমি তো ভালো কথার মেয়ে নয় সুহাসিনী। ত্যাড়ামি তোমার শিরায় শিরায় মিশে আছে। ”
“ যখন সহজ ছিলাম তখন ঠকিয়ছিলেন স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ উত্তর দেয়না। পকেট থেকে সুহার পাঠানো নোটিশ বের করে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে সুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“ তোমান সো কল্ড ডিভোর্স নোটিশ সুহাসিনী। আশা করি দ্বিতীয়বার এই সাহস করবে না। ভালো হবে না তাহলে। ”
সুহা জেদ নিয়ে বলে,
“ খারাপটা কি হবে তা আমিও দেখে ছাড়ব।”
স্বচ্ছ আর উত্তর করল না। এতদূর জার্নির পর শরীর এলিয়ে দিতে বিছানার এককোণে টানটান হয় শুঁয়ে পড়ল। বালিশে মাথা রেখে যখন চোখ বুঝল ঠিক তখনই সুহা ঝাঝালো স্বরে বলে উঠল,
“ বিছানায় শুঁয়েছেন কেন? একটু আগের আচরণ ভুলে গিয়েছেন? আমি কিন্তু মোটেও অবলা নারী নই স্বচ্ছ। প্রতিবাদ করতে জানি। ”
স্বচ্ছ সেভাবেই চোখ বন্ধ রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। উত্তরে বলে,
“ বউয়ের প্রতিবাদ মানে পিওর ভালোবাসা সুহাসিনী। এইটুকু সহ্য করা যায়।”
সুহার কথা শুনছে না রাগে জেদে সুহা ফোঁসফোঁস করল। তাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ রাগ হচ্ছে। ”

স্বচ্ছ তাকায়। মেয়েটার মুখচাহনিতে সত্যিই রাগ ঝরে ঝরে পড়ছে।নাক ফুলে উঠছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাখা। স্বচ্ছর কাছে এই দৃশ্যটাও অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য মনে হলো। মেয়েটাকে রাগতে দেখলেও তার সুন্দর লাগছে।বুক চিনচিন করছে ভালো লাগার আবেশে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না। প্রথমে যখন সুহাকে রাগতে দেখেছিল তখন তো তার এতোটা ভালো লাগে নি। বরং মেয়েটাকে বেয়াদব মেয়ে হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। তাহলে এখন? নিজের বউ বলে জানে বলে?স্বচ্ছ বুঝে না। হেসে বলে,
“ রাগলেও তোমাকে সুন্দর দেখতে লাগে। বুঝে উঠছি না এটাই কি প্রেম প্রেম অনুভূতি?”
“আপনার মাথা।”
কথাচা দাঁত দাঁত চিবিয়ে বলেই সুহা আবার বুঝানোর ন্যায় করে বলে উঠে,
“ স্বচ্ছ! বিছানা ছেড়ে নামুন। আপনি আমি দুইজনে এক বিছানায় ঘুমানো যাবে না। আর যেহেতু সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে সেহেতু রুমের ব্যবস্থা করাও যাচ্ছে না। ”
স্বচ্ছ হেসে বলে,

” হাজব্যান্ড ওয়াইফ তো আমরা। এক বিছানাতেই নাহয় ঘুমালাম। ”
সুহা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“ আপনার ঘুম নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। আমি এখন ঘুমাব। সুতারাং আপনি বিছানা ছেড়ে নামবেন এক্ষুনি, এবং নিচেই ঘুমাবেন।”
“ নিচে?”
“ অবশ্যই। ”
স্বচ্ছ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“ নির্দয় রমণী! আমার জন্য এইটুকু ভালোবাসাও মনে রাখলে কি এমন ক্ষতি হতো শুনি? ”
“ অনেক ক্ষতি। ”

স্বচ্ছ রাতে নিচেই ঘুমাল। কোনদিন নিচে না ঘুমানো ছেলেটাই বউয়ের কথা রেখে নিচে ঘুমিয়েছে। এখন ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে। সুহা ঘড়ি দেখে। দিনের বারোটা বাঁজে। অথচ স্বচ্ছ তখনও ঘুম। সুহা তবুও ডাকে না। অথচ সুহা ডাকে নি তো কি, সুহার দাদাজান সে দায়িত্ব নিয়েছে। নিজের বাঁশের লাঠিটা নিয়ে সুহার ঘরে গিয়েই যখন স্বচ্ছকে ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখল ঠিক তখনই লাঠি দিয়ে বসাল এক ঘা ছেলেটার পিঠে। স্বচ্ছ তখনও ঘুমে। আচমকা আঘাতে হুড়মুড় করে উঠে বসতেই শ্রবণ হলো,
“ কিরে হতচ্ছাড়া! চারবছর আমার নাতনিকে ঘুরিয়ে এখন ঢং দেখাতে এসেছিস? আমার নাতনিকে জ্বালাচ্ছিস? মে’রে একেবারে পিঠের চামড়া উঠিয়ে নিব।”

প্রেমের সমর পর্ব ১২

বেচারা স্বচ্ছ ঘুমের মধ্যেই আতঙ্কে উঠে বসল। পিঠে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,
“ এবার বুঝা যাচ্ছে আমার বউটা এমন ডাকা’ত কেন! সব এই বুড়োরই জিনের দোষ! এক ডাকা’ত দাদা আরো ডাকা’ত নাতনি!”

প্রেমের সমর পর্ব ১৪