প্রেমের সমর পর্ব ২৩

প্রেমের সমর পর্ব ২৩
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

প্রায় পনেরো ষোলো দিন পার হওয়ার পরই স্বচ্ছকে বাসায় আনা হলো।স্বচ্ছর মাথায় তখনও ব্যান্ডেজ। হাতের এবং বুকের দুয়েক জায়গায় ক্ষত৷ ডান হাতটায় হাড় ভেঙ্গেছে৷ ডক্টর বলেছে আপাতত সে বিপদমুক্ত।তাই তো বাসায় আনা। তবে এই কয়েকটাদিন সুহা প্রত্যেকটা সময় স্বচ্ছর সাথে ছিল। স্বচ্ছর সব কাজে সাহায্য করেছে। মাঝে কত কি বিষয় নিয়ে রাগ হলো, ঝগড়া হলো। সুহা মনে মনে হাসে। স্বচ্ছর জন্য গরম করা খাবারটা নিয়ে রুমে ডুকল। স্বচ্ছ শুঁয়ে আছে। চোখ বুঝা হলেও সুহার উপস্থিতি টের পেয়েই বোধহয় ঠোঁট এলিয়ে হাসল স্বচ্ছ। ধীরস্বরে বলে,
“ বলেছিলাম আমার প্রেমে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আটকাব তোমাকে সুহাসিনী? আটকালে তো শেষে? ”
সুহা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। একটা মানুষ অসুস্থ থেকেও যে কতোটা শয়তানি মাথায় রাখতে পারে তা এই কয়দিনে সুহার জানা হয়ে গেছে। ছোটশ্বাস ফেলে সে স্বচ্ছর দিকে এগোল। বলল,

“ তো কি আটকাতে দেখেছেন? সুপার গ্লু নাকি ফেবিকল আঠা?”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে যেন। চোখে খেলে যায় দুষ্টুমি। বলে,
“ চুমুর আঠা। ”
সুহা এবারে ফোঁস করে উঠে। কেমন করে তাকিয়ে রাগ প্রকাশ করে। সঙ্গে সঙ্গেই স্বচ্ছ হালকা আওয়াজ তুলে হাসে। বলে,
“ কে যেন বলেছিল আমায় চুমুর ঋণ শোধ করতে হবে? সত্যি বলব? আমি কিন্তু শুধু তোমার চুমুর ঋণ শোধ করার জন্য বেঁচে ফিরেছি। কেবল সুযোগটা দাও সুহাসিনী, প্রমিজ করছি, এইটুকুও ঋণ বাকি রাখব না আমি। ”
সুহার নিজের কপালেই নিজে চড় মারতে ইচ্ছে হলো। কোন দুঃখে সে সেদিন স্বচ্ছকে চুমু দিয়েছিল? কোন দুঃখে সে সেদিন কথাগুলো বলেছিল? এখন রোজ রোজ স্বচ্ছ কথা শুনাবে। রোজ রোজ সুহাকে হারিয়ে দিবে এই কথাটা দিয়ে। সুহা সেদিন লজ্জ্বা না পেয়ে কথা গুলো বললেও আজ তার লজ্জা হচ্ছে। তবে সে প্রাণপন চেষ্টা চালাল সে লজ্জ্বামুখো মুখ প্রকাশ না পাওয়ার। রাগ নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ চুমু নিয়ে খব দক্ষ মনে হচ্ছে আপনাকে। কয়জনকে চুমু দিয়েছেন এর আগে? ”
স্বচ্ছ আকাশ থেকে মাত্র পড়া এক শিশু যেন এমনভাবেই তাকাল। বিস্মিত স্বরে উত্তর করে,
“ ছিঃ ছিঃ বউ! কিসব বলে বেড়াচ্ছো এসব। আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে চুমু তো দূর জড়িয়েও ধরিনি। বিশ্বাস করো সুহাসিনী৷ ”
সুহা বাঁকা চোখে তাকায়। খাবারে চামচ দিয়ে স্বচ্ছর মুখে দিতে দিতে বলে উঠে,
“ দেখে তো মনে হয় না এতোটা ভোলাবালা ভদ্র ছেলে আপনি। ”
স্বচ্ছ খাবার মুখে নেয়।ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“ তো কি মনে হয়?তিন বাচ্চার বাপ আমি? নাকি তিন মেয়ের জামাই আমি? ”
“ তিন মহিলার শ্বশুর লাগে। ”
স্বচ্ছ ফের ফুঁসফুঁস স্বরে বলে উঠে,

“ শ্বশুর? ওটা তো তোমার ভিলেইন দাদাজানকে লাগে সুহাসিনী। ডেঞ্জারাস মানুষ তুমি আর তোমার দাদাজান। ”
সুহা চুপ থাকে একটু। স্বচ্ছকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,
“ দাদাজান ভালো মানুষ।উনি আমাদের ভালো চায় বলেই ওরকম করেছেন। ”
“ তেমন ভালো চাওয়ার মানে কি যেখানে বর থেকে বউ দূরে থাকবে? অসুস্থ মন মানসিকতা তোমার দাদাজানের! খালি সুস্থ হতে দাও। তোমার দাদাজান থেকে তোমার দাদীকে যদি দূরে না আনি। ”
সুহা এই পর্যায়ে বিরক্ত হয় যেন। একটা ছেলে অসুস্থ অবস্থায় এতোটা বকবক কেন করবে? এখনও তো পুরোপুরি সুস্থ নয়। মাথায় চাপ পড়লে? সুহা বিরক্ত স্বরেই বলে,
“ দাদাজান আপনার মতো ছাগল প্রজাতির পুরুষ নয়। নিজের বউ নিজের আওতায় রাখতে জানে সে। ”
স্বচ্ছ কেমন করে তাকায় এবারে। বউ সামলাতে অক্ষম সে? এমন অপবাদ দিল তাকে? এমন অপবাদ স্বচ্ছর সহ্য হবে। গা টগবগ করল। বলল,

“ আমি জানি না?”
সুহাও উত্তর করল,
“ অবশ্যই জানেন না। ”
স্বচ্ছ এবারে ভ্রু বাঁকিয়েই তাকায় সুহার দিকে। শোনায়,
“ তাই নাকি?দেখাব পারি কিনা?”
স্বচ্ছ সেভাবেই ভ্রু বাঁকিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে থাকল কথাটা বলে। পরপরই সুহার মাথার পেছনে বাম হাতটা দিয়ে এগিয়ে আনল নিজের দিকে। পরমুহুর্তেই ঠোঁট এগিয়ে নিতে যাবে সুহার মুখের দিকে ঠিক তখনই সুহা সরে গেল। রেগে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

“ গলা চেপে ধরব বলে দিলাম একদম। এমনিতে তো রোগী হিসেবে আছেন তখন শ্বাসকষ্টের রোগী বানিয়ে দিব। ”
স্বচ্ছ নিরব কষ্ট নিয়ে চেয়ে থাকে। সাদাফের কথাটা বারবার মনে পড়ছে যে, “এই ডেঞ্জারাস মেয়েটা রোমান্সের সময় তোর কি অবস্থা করবে বন্ধু?” স্বচ্ছর এখন সত্যিই মনে হলো যে তার কপালে প্রেম নেই। সত্যিই নেই। যা আছে তা কেবল মারামারি আর বউয়ের শাসানো স্বর!স্বচ্ছ যখন মিনমিনে চোখে চেয়ে আছে ঠিক তখনই সুহার চোখ পড়ল স্বচ্ছর মুখে এবং শার্টে। আকস্মিক টেনে নেওয়াতে চামচের খাবারটুকু স্বচ্ছর মুখে এবং শার্টে পড়েছে। সুহা ছোট শ্বাস টানে। বলে,
“ আপনার জন্য এমনটা হলো। খাবারটুকু নাহলে পড়ত না এভাবে। এবার শার্টটা চেঞ্জ করাতে হবে।”
স্বচ্ছ বাঁকা স্বরে শোনায়,
“ নিজেই তো বউ আওতায় রাখার কৌশল দেখাতে বলেছো। ”
সুহা তখন রাগে ঝলঝল করে বলে উঠে,

“ আমি? ”
স্বচ্ছও বলে,
“ তো কি আমি? ”
“ আপনার ভূত! ”
কথাটা বলেই পানি আর কাপড় আনল। পরপরই স্বচ্ছর শার্টের বোতামে হাত রাখল। বোতাম গুলো খুলতে যখন ব্যস্ত তখনই স্বচ্ছ হাসে। ফের বলে,
“ দুদিন আগে আমায় তো ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছিলে। দুদিন পর এখন আমার শার্ট খুলতে জিজ্ঞেসও করো না লজ্জ্বা পাওয়া তো দূর! ”
সুহা কথায় কান দেয়না। বরং বলে,
“ হসপিটালেও আপনার শার্ট চেঞ্জ করেছি। শুধু পুরোপুরি চেঞ্জ করার বেলায় আবির ভাই আর সাদাফ ভাই সাহায্য করত৷ ”

“ তুমি চাইলে তুমিও তো করতে পারতে। করো নি।”
সুহা সরু চোখে তাকায়।ইচ্ছে হয় এই ছেলেটার মুখে আঠা লাগিয়ে দিতে। রাগ নিয়ে বলে,
“ করলে তখন বলতেন বেহায়ার মতো সুযোগ লুফে নিচ্ছি। ”
স্বচ্ছ বলে,
“ শার্ট চেঞ্জ করানো টাও তো একপ্রকার সুযোগ নিচ্ছো। আমার সুন্দর বুক, পিঠ,গলা ড্যাবড্যাব করে গিলে নাও চোখ দিয়ে। বুঝি না আমি? ”
সুহা এবারর হাত থামায়। রাগের সহিত বলে,
“ নিজেই চেঞ্জ করুন।পরবর্তীতে করাব না আর। ”
স্বচ্ছ হাসে এবারে। সুহার হাতটা সেভাবেই বাম হাত দিয়ে চেপে রেখে বলে,
“ উহ!করাবে সুহাসিনী। বর হই তোমার। ”

সুহা তাকায়৷ স্বচ্ছর হাস্যোজ্জ্বল চাহনি বা কথাটাতে বোধহয় কিছু ছিল যা সুহাকে মানিয়ে নিল একমুহুর্তে। সুহাও আর রাগ দেখাল না। কোন কিছুই বলল না। নজর সরিয়ে দ্রুত কাজে লাগল। শার্ট খুলে কাপড় ভিজিয়ে মুঁছে দিতে লাগল যে যে জায়গায় শরীরে লেগে। মুখ মুঁছিয়ে গলায় নামল। তারপর হুট করেই সুহা অন্যমনস্ক হলো। তাকাল স্বচ্ছর দিকে। দৃষ্টিটা তার দিকেই তখনো। কেমন যেন দৃষ্টিটা। যেন কতকালে আগ্রহ এই চোখজোড়ায়। সুহা তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরায়।শুকনো ঢোক গিলে গলায় হাত রাখতেই চোখে পড়ে স্বচ্ছর গলার উঁচু জায়গাটা। অ্যাডামস অ্যাপল! স্বচ্ছে শুভ্র গলাটায় সুন্দর মানাচ্ছে। আলাদা আকর্ষণ!সুহার যেন ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। অবশ্য তা করল ও সুহা। হাত দিয়ে ছুঁয়ে নিল উঠা নামা করা অ্যাডামস অ্যাপল! একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিক পানে।স্বচ্ছ সে দৃষ্টি খেয়াল করে নিজেই সুহার হাতটা সেখানে চেপে ধরে৷ বলে,
“এভাবে তো একটু আমার দিকেও তাকাতে পারো সুহাসিনী। একটু তো দয়া করতেই পারো নির্দয় রমণী! ”
পরপরই আবার বলে,
“ অ্যাডামস অ্যাপল!তুই আমার শরীরের অংশ হলেও তোর প্রতি আমার হিংসে হচ্ছে৷”
সুহা মুহৃর্তেই হাত সরায়। পরক্ষণেই স্বচ্ছর শার্টটা নিয়ে পা এগুলো ওয়াশরুমের দিকে।

আবিরের সাথে রাহার পরিচয়টা হসপিটাল থেকেই খুব ভালো আকারে পৌঁছিয়েছে৷ সে হিসেবেই যতদিন হসপিটালে ছিল ততদিন তাদের বিভিন্ন বিষয়েই কথা হতো৷ ছুটি দুয়েকদিন হসপিটালে গিয়ে তা দেখেছেও। তবে যে দুয়েকদিন সে এরপর গিয়েছিল সে দুয়েকদিস সে নিজ থেকে আবিরের সাথে কথা বলেনি। যদি আবির এগিয়ে এসে কথা বলত তখনই বলত তাও হেসে হেসে৷ আবির হয়তো বুঝলই না মেয়েটার মনে কতটুকু অভিমান জমা হয়েছে। আজও বুঝল না। আবির, সাদাফ, সিয়া আর রাহাকে ছুটি ছাদে কথা বলতে দেখেছে। অথচ আবির তার সাথে একবার ও নিজ থেকে যোগাযোগ করেনি এই কয়েকদিনে বিষয়টা অদ্ভুত নয়? অবশ্য আগেও করত না যোগাযোগ। সবসময়ই তো আবির ভাই তাকে ইগ্নোরই করত। কিন্তু আবির তো তাকে কয়েকদিন আগে বিয়ের প্রস্তাব দিল। সে বিষয়ে? সে বিষয়টা কি ফাও? এরপর তো আর জিজ্ঞেসও করল না। ছুটি বুঝে উঠে না আবিরকে। যখন মন খারাপ করে বিছানার কোণায় বসে আছে ঠিক তখনই রাহা বাসায় এল। ছুটিকে দেখেই বলে উঠল,

“ ছুটি আপু? তুমি কি আবির ভাইয়ার কাজিন হও? ”
ছুটি তাকাল। রাহার উচ্ছাস তার পছন্দ হলো না। কেন এতোটা হাসিখুশি উচ্ছাস দেখাবে রাহাকে? মনে মনে সে নিরাশ হলেও আগ্রহ নিয়ে বলল,
“কেন? ”
“আবির ভাই বলল তুমি তার কোন আঙ্কেলের মেয়ে হও। ”
ছুটি এবারে ছোটশ্বাস টানে। কোন আঙ্কেলের মেয়ে? অথচ ম্যাসেজে জানাল সে তাকে ভালোবাসে। ফোনে জানাল বউ হবে কিনা। সব কি মজাই করল? ছুটি ছোটস্বরে বলল,
“ ওহ! ”
রাহা হাসে। ছুটির পাশে বসে বলে,
“ আবির ভাইয়া তোমায় ডাকল আপু। কেন ডাকল বলো তো? ”
ছুটি গোলগোল চোখে তাকায়। বলে,
“ জানি না তো। তোকে বলে নি? ”
“ না। শুধু বলল তোমায় যেতে। ”
“ ওহ! ”

ছুটির মনের মধ্যে শত বিষাদেও যেন একটু আনন্দ আসে। আবির ভাই তাকে যেতে বলল? নিজ থেকে? আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে ছুটি যখন যেতে নেয় তখন রাহা বলে,
“ আপু? আবির ভাইয়া যদি তোমার কাজিন হয় তাহলর প্লিজ আমারে একটু সাহায্য করবা। আমি উনার ব্যাক্তিত্বে ফিদা। ”
এই একটা কথাই ছুটির আনন্দটা নাকোচ করতে যথেষ্ট। ছুটি ঢোক গিলে। কৌতুহল নিয়ে শুধায়,
” উনিও?”
রাহা লাজুক হেসে উত্তর করে,
” জানি না। তবে যেহেতু উনি বারবার আমার সাথে কথা বলছেন একটা আশা তো আমি রাখতেই পারি বলো? ”
ছুটি মেকি হাসে এবারে। বলে,
“ হ্যাঁ হ্যাঁ৷ তুই তো সুন্দরীও। অবশ্যই আশা রাখবি। ”

কথাটা বলেই ছুটি পা বাড়ায়। সঙ্গে শুকনো ঢোকও গিলে। কেন জানি না তার মনে হচ্ছে আবির ভাইকে পাওয়ার আশা তার ক্ষীণ হচ্ছে। এতকাল আবির ভাইকে একপাক্ষিক জ্বালালেও, একপাক্ষিক ভালোবেসে গেলেও কখনো তার কষ্ট লাগেনি। দিনশেষে বুঝেছে আবির ভাইকে কেউ পেলে সেই পাবে। অথচ সে ছুটিই আজ নিরুৎসাহিত। ধীর পায়ে যখন ছাদে গেল তখন ছাদ থেকে শুনতে পেল সাদাফের স্বর,
“ কি ভাই বল? ঐ ছুটি মেয়েটাকে আই লাভ ইউ তো বলেছিলি জাস্ট স্বচ্ছর বউ কোনটা তা জানার জন্য বল? মেয়েটাও কি অবুঝ! তোর পারতি পুরাই দুর্বল। নাহলে কি তোর হয়ে আমি আই লাভ ইউ বললেও মেয়ে গদগদ হয়ে খুশি হয়ে যেত?যাক! তোরই তো ভালো। মেয়েটার অনুভূতি ব্যবহার করার প্ল্যান আমার থাকলেএ কাজে তো তোর লাগল বল? মাঝখান দিয়ে স্বচ্ছর বউকে ও খুঁজে পেয়ে গেলাম। সব তো শেষই এবার কি বলে দিবি যে সেদিন ঐ ম্যাসেজটা আমি করেছিলাম জাস্ট এজ এ প্ল্যান হিসেবে? এইজন্যই ডেকেছিলি? ”

ছুটির পা স্থির তখনো। কথাগুলো কানে আসা মাত্রই সে নিচে ছুটে আসে। কান্না পাচ্ছে তার। অযথায় চোখ টলমল করছে। আবির ভাই তার মানে তার অনুভূতিকে কেবল ব্যবহার করেছে? তাও সুহাকে খোঁজার জন্য? সবটাই প্ল্যানের অংশ? কোন ভালোবাসা নেই? সত্যিই তো! ভালোবাসা যদি থাকতই তাহলে আবির নিশ্চয় তাকে এতকাল ইগ্নোর করত না। এমনকি এখনও ইগ্নোন করত না। সেদিন আবিরের চোখেমুখে বিরক্তও দেখত না সে। ছুটি কেবল ভাবে। কি বোকা সে। কি বোকা! কিভাবে ব্যবহার করতে চাইল তাকে আর সেও কি! সত্যিই তো! যে ছেলে এতগুলো দিন তাকে ইগ্নোর করেছে সে ছেলে হুট করেই তাকে ভালবেসে ফেলবে এটা কেমন না? ছুটি নিজেকে বুঝায়। চোখের পানি মুঁছে নিজেকে বারংবার বুঝায়। অতঃপর প্রায় অনেকটা সময় পরই সে আবার ছাদে গেল। আবিরকে দেখেই বলে,

“ আবির ভাই? ডেকেছিলেন? ”
আবির তাকাল। ঘড়িতে সময় দেখে বুঝল ছুটিকে ডাকার প্রায় চল্লিশ মিনিট পার হয়েছে। বলে,
“ ডেকেছিলাম। চল্লিশ মিনিট ধরে কি করছিলি বসে বসে? ”
ছুটি অন্যসময় আবিরকে দেখে হেসে হেসে কথা বললেও আজ মন চাইল না। বলল,
“ কিছু না। দুই সপ্তাহ তো পার হলো। আপনি এখনো দেশ ছাড়লেন না যে? ”
আবির এবারর ভ্রু বাঁকায়।বলে,
“ খুশি হতি দেশ ছাড়লে? ”
“ না।”
ছুটি কথাটা বলার পরপরই আবির প্রশ্ন ছুড়ে,
“ উত্তর কি আমার? ”
ছুটি যেন বুঝে উঠে না। বলে,
“ হ্ হু?”

“ ছুটি বেড়েছে আর কয়েকদিন। সে হিসেবে সময় আছে আর একদিন। কাল চলে যাব আমি,সাদাফ আর নিধি।মাঝখান দিয়ে স্বচ্ছর অবস্থা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে তোকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। এখন বলছি, তুই কি বাকি একদিনের জন্য বিয়ে করবি আমায়? ”
ছুটি হাসে।আবির জানেও না সে হাসিটায় কতোটা অবহেলা মিশে আছে? কেউ যদি বিয়ে করতেই চায় তাহলে বুঝি এভাবে প্রশ্ন ছুড়ে? এভাবে জিজ্ঞেস করে?তবুও অন্যসময় হলে হয়তো ছুটি রাজি হয়ে যেত। একদিন হোক বা এক সেকেন্ড ছুটি অবশ্যই আবিরকে চায়। তবে আজ সে রাজি না হয়ে বলল,
“ হুট করে বিয়ে? আপনার কোন প্রয়োজনে লাগবে কি এটা? ”
হুট করেই এই বাক্যটা পছন্দ হলো না আবিরের। বলে,

“ এটা কেন মনে হলো তোর? ”
“ এমনিই! ”
আবির তবুও শুধায়,
“ এমনিই?শিওর? ”
ছুটি বোকা হেসে বলে
“ বোকা হতে পারি তা বলে কি আজেবাজেকথা বলব আবির ভাই? ”
আবিরের কন্ঠ দৃঢ়,
“আমি যা বলেছি তার উত্তর দে। ”
ছুটি এবারে চুপ থাকে। কিয়ৎক্ষন পর বলে,
“ আব্বু বলে যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে আমাদের বিয়ে করা উচিত নয়। বরং যে আমাদের ভালোবাসে তাকে বিয়ে করা উচিত। ”
আবির আরেকটু দৃঢ়স্বেে বলে,

“ তো? এটা দ্বারা কি বুঝাচ্ছিস?”
ছুটি হেসে বলে,
“ মানে আমিই তো আপনাকে ভালোবাসি। ”
“ আর আমি বাসি না? ”
“ হ্যাঁ! এটাই। ”
আবিরের মেজাজ খারাপ লাগে। বলে,
“ তো কি বিয়ে করবি না আমাকে? এটাই বললি? রিজেক্ট করছিস আমার প্রোপোজাল? ”
ছুটি মুহুর্তেই মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,

প্রেমের সমর পর্ব ২২

“ না, না! আপনাকে রিজেক্ট করার কথা আমি ভাবতে পারি নাকি? তবে বিয়ের সময় তো চলে যাচ্ছে না আবির ভাই। আমার আব্বা আম্মাও আমায় কখনো জোর করবে না বিয়ে নিয়ে। আমি এক্চুয়েলি বিয়েটা ভেবেচিন্তে করতে চাই। ”
আবির মেনে নিল এবারে। তবে বলল,
” ঠিকাছে।কিন্তু অন্য কারোর হওয়ার চেষ্টা করবি না। ভুলেও না। ”

প্রেমের সমর পর্ব ২৪