প্রেমের সমর পর্ব ২৮
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
একটু আগেই গোসল সেরে বের হয়েছে স্বচ্ছ। পরনে তখন শুভ্রা রঙা টিশার্টরআর টাউজার। চুলগুলো বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অল্পবিস্তর পানি। স্বচ্ছ একহাতে চুৱগুলোতে ঝাড়া দেয়। ভেজা তোয়ালেটা খাটের এককোণায় ছুড়ে মেরে বেলকনিতে যেতেই নিতেই রুমে এল সুহা। হাতে তার গরম কফির মগ। সুহা হাত বাড়ায়৷ কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
“ আন্টি পাঠাল। আপনার জন্য৷ ”
স্বচ্ছ কেমন করে যেন তাকায় সুহার মুখে আন্টি ডাক শুনে। বলে,
“ দুদিন পর ছেড়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছো না মনে মনে? এইজন্যই তো বিয়ের চারবছরেও আমার আব্বু আম্মুকে তুমি আঙ্কেল আন্টি ডাকো। ”
সুহা ছোটশ্বাস ফেলে। কফির মগটা স্বচ্ছর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“ চারবছরে তো জানা ছিল না আপনার সাথে আমার আদৌ সংসার হবে কিনা! চারবছর ধরে তো জানতামই না আপনি ফিরবেন কিনা, ফিরলেও আদৌ বউ হিসেবে মেনে নিবেন কিনা। তবুও উনারা আমায় যথেষ্ট স্নেহ করতের স্বচ্ছ। আপনার কাজের জন্যই বোধহয় কখনো আমায় আম্মু আব্বু ডাকার অনুরোধ করেনি। আমিও ডাকিনি। চারবছর যাবৎ আঙ্কেল আন্টি ডেকে এসেছি তাই এখনও অভ্যেসটা পাল্টাচ্ছে না। কিন্তু আপনি আপনার আম্মুকে জিজ্ঞেস করে আসুন? আমি সত্যিই উনাকে আম্মু ডাকি এখন। মাঝেমাঝে আন্টিও ডাকি। ”
স্বচ্ছ হাসে এবারে। তাকিয়ে দেখে সুহাকে। সুহার চুলও ভেজা দেখাচ্ছে। বোধহয় চুল শুকোয়নি। মুখটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। স্বচ্ছ কফির মগে চুমুক বসায়। বলে,
” ডেকে লাভটা কি হবে?যাকে আম্মু ডাকছো তার ছেলেকে তো জীবনে রাখার পরিকল্পনা নেই তোমার। অন্য কাউকে রাখতে চাইছো! অন্য কাউকে মনে জায়গা দেওয়ার সুযোগ খুঁজছো।”
ফের একই অভিযোগ! রোহানের সাথে ছাদের কথা বলার মুহুর্তটার পর থেকেই স্বচ্ছ আবোল তাবোল বকছে। সুহার প্রথমে রাগ হলেও পরমুহুর্তে যখন বুঝতে পারে স্বচ্ছ তার চেয়ে দ্বিগুণ রেগে আছে এবং পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ পর্যায়ে আছে তখনই তার রাগ নিভে যায়। উল্টে স্বচ্ছকে বুঝাতে সুযোগ খুুজল যে সে কেবল স্বচ্ছকেই ভালোবাসে। তাই তে সুহা ছোটশ্বাস ফেলে শুধায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ মনে আপনাকে জায়গা না দিলে চারবছর যাবৎ অপেক্ষায় থাকতাম না। এমন কি এখনও এখানে পরে থাকতাম না স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বলে,
”বাহ! খুশি হবো নাকি কথাটা শুনে?”
সুহা কপাল কুঁচকে উত্তর করে,
“ এত খোঁচা দিয়ে কথা শোনান কেন স্বচ্ছ? আমার সাথে সত্যিই তিহানের ঐ কাজিনের কিছু নেই। কিছুই না। আপনার সাথে আমি মোটেও নাটক করছি না। তবুও যদি মনে হয় আমি নাটক করছি, ওকে ফাইন। চলে যাচ্ছি আমি আমার বাসায়। এমনিতেও আমায় দেখলে আপনার অসহ্যই লাগছে তাই না? ”
স্বচ্ছ ভ্রু উঁচায়। টানটান স্বরে বলে,
“ কেন? ও বাসায় গিয়ে যাতে তোমার দাদাজানের কথামতো ঐ রোহানের বাচ্চার সাথে বিয়েটা করে নিতে পারো তাই? শোনো সুহাসিনী, তুমি আমার বউ মানে, একান্তই আমার। এবং আমি জানিও তোমার মনে কেবল আমিই আছি। কিন্তু, যদি অন্য কাউকে মনে প্রবেশ করার চিন্তাও করো না? মে’রে কবরে রেখে আসব। ”
স্বচ্ছ কথাগুলো রাগান্বিত স্বরে বলেই গিয়ে বসে বেলকনিতে। একহাতে কফির মগটা নিয়ে চুমুক বসায় আরামে।আর তখনই ঠিক চোখ পড়ে নিচে চা দোকানটায় বসে থাকা রোহানের দিকে। এদিক পানেই বোধহয় তাকাচ্ছে। স্বচ্ছ তা দেখে বিরক্ত হয় যেন৷ টগবগ করে রক্তকণিকা সমূহ। রাগে বিরক্তে স্বচ্ছ কফির মগটা ছুড়ে ফেলে বেলকনির ফ্লোরে। বিড়বিড় স্বরে বলে,
“ শা’লা এই হ্যাংলা, ক্যারেক্টারল্যাস কুত্তাটার জন্য এক সেকেন্ডও দেখি মেজাজ ভালো রাখতে পারছি না। শুধু শুধুই মাথা খারাপ লাগে এই শা’লাকে দেখলে। ”
স্বচ্ছ বিড়বিড় স্বরে বলেই একটা সিগারেট নিয়ে তাতে আগুন ধরায়। জ্বলন্ত সিগারেটটা দুই আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে ঠোঁটে ছোঁয়ায় মুহুর্তে। অপরদিকে রুমে বসে থাকা সুহা ততক্ষনে বেলকনিতে কিছুর আওয়াজ পেয়ে কৌতুহলী হয়ে তাকায়। দু পা বাড়িয়ে আসতে নিতেই চোখে পড়ে বিছানায় পড়ে থাকা ভেজা তোয়ালেটা। সুহা একহাতে তোয়ালেটা নিয়েই বেলকনিতে আসে। স্বচ্ছকে আরামে বসে থেকে সিগারেট ফুকতে দেখে কপাল কুঁচকে আসে তার। একটা ছেলে কিভাবে এত সিগারেট ফুকতে পারে? বুকে যন্ত্রনা হয় না? স্বাস্থ্যের দিকটাও তো ভাবতে পারে। ছেলেটা এমন কেন? সুহা রাগ দেখিয়ে মুহুর্তেই টেনে নেয় স্বচ্ছর মুখের সিগারেটটা। টানটান গলায় বলে উঠে,
“ এতকালও কি এভাবেই সিগারেট টানতেন? ফুসফুস আদৌ ভালো আছে আপনার?নাকি দিনরাত এত সিগারেট ফুঁকে ফুসফুস, হার্ট সবকিছু বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন? ”
স্বচ্ছ তাচ্ছিল্য টেনে হাসে যেন। শুধায়,
“ ফুসফুসের কথা বলতে পারছি না, তবে হার্টের বারোটা টা তো এখানে এসে তোমাকে ভালোবেসেই বাজল।”
সুহা তখনো এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেটটা ধরে রেখেছে। শক্ত গলায় শুধায়,
“ আমাকে ভালোবেসে নয়।দিনরাত এসব অখাদ্যে মেতে আছেন বলেই বারোটা বাজছে।এই বিদ্ঘুটে গন্ধময় নিকোটিনে সুখটা কি বলুন? লাভটাই বা কি হচ্ছে বলুন? কি শান্তি পান এসবে?”
স্বচ্ছ মুখ গম্ভীর করে হাত বাড়ায়। সিগারেট নেওয়ার উদ্দেশ্যে বলে,
“ তুমি বুঝবে না সুহাসিনী। দিয়ে দাও সিগারেটটা। ”
সুহা দেয় না। বরং জেদ ধরে বলে,
“ আগে বলুন, কি শান্তি পান?”
“ খুব শান্তি! বুঝানো যাবে না।অন্তত জ্বালা তে মেটে। ”
“ কি এত জ্বালা আপনার?বলুন,শুনি। তবুও সিগারেট ছুঁবেন না আর। ”
স্বচ্ছ এই পর্যায়ে ক্রুর হাসে। সুহার দিকে তাকিয়ে চোখে হেসে শুধায়,
“ সিগারেট না ছুঁলে তোমায় ছুঁতে দিবে নাকি সুহাসিনী? ”
আকস্মিক কথাটা শুনে সুহা চুপ থাকে। কথাটার অর্থ বুঝে উঠে কান জোড়া উষ্ণ অনুভব হয় তার। সুহা তবুও উত্তর দেয় না। ভাবে সে। এই একমাসের মতো সময়ে সে স্বচ্ছর সাথে একঘরে থেকেছে। এক বিছানায় ঘুমিয়েছে। কিন্তু স্বচ্ছ কখনে তাকে কামনা নিয়ে চায়নি।কখনে কামুক নজরে ছুঁয়ে দেখেনি। শুধু চুমু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল স্বচ্ছর জ্বালানোটা। অথচ স্বচ্ছর তো অধিকার আছে তাকে ছোঁয়ার। স্বামী হয় তার। সুহা এই পর্যায়ে অন্য পাশ ফিরে ভেজা তোয়ালেটা মেলে দিতে লাগে বেলকনিতে থাকা দড়িটায়। ধীর স্বরে বলে,
“ আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি আমি স্বচ্ছ, একঘরে থাকছি আপনার সাথে। স্বামী হিসেবে আপনি আপনার অধিকার ফলাতেই পারেন। সেইক্ষেত্রে ছুঁতেও পারেন আমায়।জিজ্ঞেস করার কিছু নেই এতে। ”
স্বচ্ছ এবারে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে৷ সে জানে এই মেয়েটা তাকে ভালোবাসে। এই যে এক্ষুনি এই কথাটা বলল এটাও বলে দেয় যে সুহা মেয়েটা তাকে ভালোবাসে। সেদিনকার হসপিটালে অপারেশনের আগ মুহুর্তে বলা কথাগুলোও বলে সুহা তাকে ভালোবাসে। শুধু মাঝখান থেকে তালগোল পাকিয়ে দিল রোহনটা বেয়াদবটা। যার কারণে বউয়ের সাথে ঝগড়াজাটিও হয়ে গেল তার। স্বচ্ছ মনে মনে রোহানকে কয়েকটা গা’লি দেয়। পরমুহুর্তেই সুহার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াল। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা সুহাকে পেঁছন থেকেই আচমকা আগলে নিল। এক কামিজের ভেতর দিয়ে ছুঁয়ে দিল সুহার মসৃন উদর।আঁকড়ে ধরল শক্ত করে। অপর হাতে সুহার ভেজা চুল গুলো কাঁধ থেকে সরিয়ে নিয়ে নিঃশব্দে চুমু খেল। একটা নয়। বার কয়েক চুমু দিয়ে সেভাবেই কাঁধে ঠোঁট রেখে শুধাল,
“ ছুঁয়ে দিলাম। নেহাৎ তুমি বললে তাই।”
সুহা তখন অনুভূতিতে নাজেহাল। অন্যদিনের সুহা আর আজকের সুহাকে একদমই ভিন্ন দেখাল যেন। অন্য দিনের সুহা লজ্জ্বা লুকিয়ে রাগ দেখাতে পারত। এক সহস্র অনুভূতিকে দামাচাপা দিয়ে ছ্যাত করে উঠতে পারত। কিন্তু আজকের সুহা তা পারল না। বরং যতবারই স্বচ্ছ ঠোঁট ছুঁইয়ে সুহার কাঁধ ছুুয়ে গেল ততবারই সে কেঁপে কেঁপে উঠল। মসৃন উদরে স্বচ্ছর হাতের ছোঁয়াতে হাঁসফাঁস লাগল। নিঃশ্বাস ঘন ঠেকল তার।স্বচ্ছ চুম খেল আলতো ভাবেই অথচ তার অনুভূতি বইয়ে দিল সুহার লোমকূপে কূপে। সুহা সামলাতে পারে না যেন। স্বচ্ছ তখনও কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে আছে। শেষ চুমুটা মুখ ঝুঁকিয়ে গলার দিকেই বসাল সে। পরপরই দাঁত দাবিয়ে একটা কামড় বসাল।সুহা দাঁতে দাঁত চাপে।ব্যাথায় চিনচিন করে উঠে। স্বচ্ছ এমনই ভাবে দাঁত বসাল যে ব্যাথা পেতে বাধ্য। সুহা সহ্য করার চেষ্টা চালাল ঠিক কিন্তু এর পরপরই মনে পড়ল যে তারা দিনের বেলাতেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেে।কেউ তাকালে? তাদের এই অবস্থায় দেখলে? সুহা হাঁসফাঁস স্বরে বলে উঠে,
“ব্যাথা পাচ্ছি স্বচ্ছ, ছাড়ুন।”
স্বচ্ছ হাসে তখন। কামড় ছেড়ে সুহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিচেল স্বরে বলল,
“ তুমি ছুঁতে বললে কেন? এখন কামড়াতে ইচ্ছে করলে আমি কি করব?”
সুহার তখন লজ্জ্বায় মুখ কান লাল হয়ে উঠে যেন। সাথে উষ্ণ অনুভূতি! সুহার গাল কান উষ্ণ ঠেকে। উত্তর দিতে পারে না যেন। অপরদিকে স্বচ্ছর সামনে নিজের এহেন দশা দেখে নিজেরই মাটির নিচে লুকোতে মন চাইছে যেন। সুহা হাঁসফাঁস করে তখন। অপরদিকে স্বচ্ছ তাকে আরেকটু লজ্জ্বায় ফেলতে শুধায়,
“ এভাবে লাল হয়ে লোভ বাড়াচ্ছো সুহাসিনী! ”
ঠিক পরমুহুর্তেই আবার দুই হাতে আগলে ধরে সুহার মুখ। বলে উঠে বহু আকাঙ্ক্ষিত কন্ঠে,
“ ক্যান আই কিস ইউ সুহাসিনী? জাস্ট ওয়ান টাইম! ”
সুহা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় এবারে। কাঁপা স্বরে উত্তর করে,
“হ্ হু?”
স্বচ্ছ এই পর্যায়ে আর অপেক্ষা করে না। দড়িতে মেলে দেওয়া তোয়ালেটা নিজেদের আড়াল করার মতো করে টেনে দিল যাতে রাস্তা থেকে মানুষ না দেখে। তারপর একমুহুর্তও দেরি না করে আঁকড়ে নিল সুহার নরম অধর। স্বচ্ছ বোধহয় তখন দিশেহারা। উম্মাদ অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে সুহার ঠোঁটজোড়া সে ছাড়তেই চাইল না যেন। সুহার ঠোঁট তখন পুরুষালি পুরু ঠোঁটের দখলে। তারপর অনেকটা সময় পর সে ছাড় ফেল। হাঁপাতে লাগল নিজের মতো। পরমুহুর্তেই আবার লজ্জ্বায় লাল নীল হয়ে উঠল মুখচোখ। স্বচ্ছ তা দেখে হালকা হাসে। কৌশলে চুমু দেওয়ার মাঝখানে সুহার হাত থেকে কেড়ে নিল জ্বলন্ত সিগারেটটাও। প্রায় শেষের দিকেই। স্বচ্ছ সে অংশটুকুতেই ঠোঁট ছুইয়ে বলে,
“বাহ! ভালোই উন্নতি হয়েছে আমার বউয়ের। আগে কাছে আসলে রেগে মার বসাতে আসত, আজকাল লজ্জ্বায় লাল হয়ে উঠছে! ”
সুহা বোধহয় এবারেও লজ্জ্বায় নুইয়ে যেত। কিন্তু যখনই দেখল স্বচ্ছ কৌশলে তার হাত থেকে সিগারেটের অংশটুকু নিয়ে নিয়েছে তখনই রাগে ফোঁসফোঁস করে। বলে,
“ আপনারও উন্নতি হয়েছে। মাঝেমাঝে চুমু দিতেন আপনি। তখন তো মনে হতো এই আদুরে চুমুর মতোই আপনার ভালোবাসাটাও আদুরে৷ অথচ, এখন তো দেখছি সুকৌশলে ছলনা করেও চুমু দিতে পারেন। যেমনটা আগে ছলনা করে ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। চার বছর আগে!”
“ আপাতত একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।তাই নিকোটিনেই শান্তি খুঁজছি। যখন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব তখন তোমাতে শান্তি খুঁজব নাহয়। ঠিকাছে?”
কথাটুকু বলেই স্বচ্ছ মুখের নিকোটিনের ধোঁয়াগুলো ছুড়ে দিল সুহার মুখের উপর। সুহা তাতে রেগে তাকায়।বলে,
“ এখনও কিছু করছি না স্বচ্ছ। সিগারেটের প্রসঙ্গ নিয়ে কোন স্টেপ নিচ্ছি নাহ। শুধু আপনার এই ত্যাড়ামো শেষ হোক তারপর দেখাব।
স্বচ্ছ এবারেও বাঁকা হাসে। উত্তরে বলে,
” কি দেখাবে সুহাসিনী? তুমি চাইলে ত্যাড়ামি শেষ করে এই মুহুর্তেই দেখতে পারি আমি।প্লিজ দেখাও। ”
সুহা দাঁতে দাঁত চেপে শুধায় এবারে,
“ অস্বচ্ছ মন! ”
স্বচ্ছ হেসে উঠে শব্দ করে। বলে,
” কি করব! এমনিতেও খু্ব একটা স্বচ্ছ তো তুমি আমায় ভাবো না সুহাসিনী। ”
ছুটি সব জিনিসপত্র নিয়ে নিজ বাসাতে চলে এসেছে। আজকাল কোনকিছুই ভালো লাগে না তার। ঘুম হয় না ঠিকমতো। শারিরীা, মানসিক উভয় অবনতির কথা শোনামাত্রই তার আম্মু নির্দেশ দিয়েছে বাসায় ছুটে যেতে। ছুটিও অবশ্য তাই করল। কারণ আজকাল ওখানে তার দমবন্ধ লাগত। রাহাকেও অসহ্য লাগতে শুরু করেছিল। একটু থেকে একটুতেই রাহার প্রতি চিরচিরে রাগ জম্মাতে শুরু হয়েছিল। আর সে রাহার সাথেই একসাথে থাকতে গিয়ে বারংবার কান্না পেত তার। বারংবার মনে হতো সে কেন পেল না আবির ভাইকে? কেন রাহাকেই আবির ভাই পছন্দ করল? ছুটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।বাসায় এসে সর্বপ্রথমই যত্ন করে নিজেকে শাড়িতে সাঁজিয়ে নিয়ে চোখে কাজল টানে। তারপর ঘুরঘুর করতে করতে ছাদে উঠে। এর ঠিক পাশাপাশি বিল্ডিংটাই আবিরদের। আগে প্রায়সই দেখা হতো আবিরের সাথে এই ছাদে।ছুটি তখন শাগি পরতে পারত না। অথচ কত ইচ্ছে ছিল শাড়ি পরে এই লোকের সামনে হাজির হবে সে। এই লোক তাকিয়ে থাকবে ড্যাবড্যাব করে৷ এখন অবশ্য তা কেবলই স্বপ্ন। আজ চারবছর তো হলো আবির ভাইয়ের সাথে এই ছাদে তার দেখাই হয় না। ছুটি দীর্ঘশ্বাস টানে। আবিরদের ছাদটায় আবিরের দাদীকে বসে থাকতে দেখে হাসে আলতো। কার্নিশ ঘেষে বলে,
“ কেমন আছো বুড়ি?সব ভালো তো? ”
আবিরের দাদী তখন আলতো হাসে৷ ছুটিকে পরখ করে দেখতে দেখতেই মিষ্টি হেসে বলে,
” কি মিষ্টি দেখতে লাগছে রে তোকে শাড়িতে। না জানি বউ হলে তখন তোকে কতোটা সুন্দর মানাবে রে ছুটি। ”
ছুটি দুঃখ লুকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসে এবারে। বলে,
“ বউ হতে তো বহু দেরি। ”
” আমার নাতিটা ভালোয় ভালোয় পড়াটা শেষ করে দেশে ফিরলেই বিয়ে দিয়ে দিব। মানে, তোর মতো একটা মেয়ে খুঁজেই বিয়ে দিব আরকি। কি বলিস হুহ?”
ছুটির চোখেমুখে তখন বিষাদ নামে। তবুও হেসে বলে,
“ তোমার নাতি তো সুন্দর! কত মেয়ে লাইন ধরে আছে। তা এত সুন্দরী মেয়ে থাকতে আমার মতো মেয়ে খুঁজবে কেন শুনি?”
আবিরের দাদি শোনাল,
“কারণ তুই তো ছুটি। ”
ছুটি ক্লান্ত গলায় শোনায়,
“ছুটি তো কি? ছুটিরা আবিরদের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না বুড়ি। ”
ছুটি সন্ধ্যের দিকে ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিল। কিন্তু আচমকাই অনলাইনে তার আবির ভাইয়ের কল আসা দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে। সচারচর এই লোক তাকে কল করে না। খোঁজ নেয় না। ম্যাসেজ করে না। তবে এই পরপর দুইদিন কল করছে? তাও নিজ থেকে? ছুটি বিস্ময় নিয়ে কল রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে আবির বলে উঠে,
” আমি নেই আর তুই শাড়ি পরে টই টই করিস ছাদে ছাদে? কার জন্য শাড়ি পরে টই টই করিস শুনি? ”
ছুটি নিঃশ্বাস টানে। টানটান গলায় বলে উঠল,
“নিজের জন্য। সবসময় যে অন্যের জন্য শাড়ি পরে টইটই করব এমনই কেন মনে হলো আপনার?”
ছুটির টানটান স্বর শুনে আবির থমকায়। তবুও রাগ নিয়ে শুধায়,
“ শিওর নিজের জন্য?”
ছুটি ফের শান্ত স্বরে বলে,
“ মিথ্যে বলছি বলে তো মনে হচ্ছে না। ”
আবির মেনে নিল। তবে ছুটির এমন কথাবার্তা তার পছন্দ হলে না একটুও। কেমন শান্ত স্বরে, টানটান গলা! কেমন যেন! একটুও উচ্ছাস নেই কেন এই মেয়েটার কন্ঠে? একটুও আনন্দ নেই কেন? আগে তো থাকত। আবির ফের বলে,
“ ঠিকাছেে।কিন্তু তুই দাদীকে কি বলেছিস দাদীকে শুনি? এক্ষুনি বল। ”
ছুটির যেন মনে পড়ে না। বলে,
“ কি বলেছি? ”
“ ছুটিরা আবিরদের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না? এই সত্যি করে বল তো, কি চলছে তোর মনে? যদি খারাপ কিছু ঘুরে থাকে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। ”
ছুটি হেসে শুধায়,
“ অধিকারবোধ দেখান? ”
আবির গম্ভীে স্বরে জানায়,
” অধিকারবোধ হলে অধিকারবোধ।তুই তো অধিকারবোধও দেখাতে পারিস না। আজ পর্যন্ত এখানে আসার পর থেকে একটা কল ম্যাসেজ করে আমার খোঁজ পর্যন্ত নিসনি। ”
ছুটি মুহুর্তেই উত্তর দেয়,
প্রেমের সমর পর্ব ২৭
“ যদি বিরক্ত হতেন? বিরক্ত করার চাইতে চুপ থাকাটা শ্রেয় নয়?”
আবির মুহুর্তেই উত্তর দেয়,
” না শ্রেয় নয়।তুই কি জানিস? তোকে চুপ থাকলে খুব বিচ্ছিরি লাগে ছুটি। ”