প্রেমের সমর পর্ব ২৯

প্রেমের সমর পর্ব ২৯
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সন্ধ্যার একটু পরের সময়টা তখন। স্বচ্ছ চায়ের টং দোকানটায় বসা। পাশাপাশি এসে বসেছে ততক্ষনে রোহানও। একটা আদা চায়ের জন্য দোকানদারকে বলেই স্বচ্ছকে রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করেই বলে,
“ ডিভোর্সের এপ্লাইটা সুহা আমার জন্যই করেছিল বড়ভাই! আপনি বোধহয় জানেনও না আমাদের বিয়েটা হয়ে যাওয়ার কতোটা পসিবিলিটি ছিল! শুধু মাঝখান থেকে এক্সিডেন্টটা হয়েই তালপাক পাকিয়ে দিয়েছে। ”
স্বচ্ছর গা জ্বালা করে রোহানের সেধে এসে বলা কথাটা শুনে।রোহানের কথা বলার ভঙ্গিটা দেখে ইচ্ছে হয় এক ঘুষিতে চোয়াল ভেঙ্গে দিতে। স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চাপে। এক হাত দিয়ে রোহানের পিঠে চাপড় মেরে কাঁধে হাত রাখে। যেন অনেক কালের সুসম্পর্ক তাদের। তারপর ক্রুর হেসে বলে,

“ গ্রেট জব ছোটভাই। তো তারপর বল, টং দোকানে বসে হ্যাংলার মতো অন্যের বউ দেখার জন্য তাকিয়ে ছিলি কেন? তাকাবি আর? চোখ উপড়ে নিব এরপর তাকালে। ”
রোহান এই পর্যায়ে হাসে। উত্তরে বলে,
“ বড়ভাই দেখি খুবই ইনসিকিউরড ফিল করছেন বউ নিয়ে। ”
স্বচ্ছ ভ্রু উঁচিয়ে শুধায়,
“ তোর মতো গর্দভের কথাতে ইনসিকিউরড ফিল করব? আমি জানি আমার বউ আমায় ভালোবাসে। তোর দুই মিনিটের কথাতে আমি রেগে গিয়ে বউ ছেড়ে দিব তা ভাবাটা বোকামো!”
কথাটা বলেই পরমুহুর্তে আবার কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,
“ তোর পরিবার কাল সুহাদের বাড়ি গিয়েছিল না? কি ছ্যাঁ’চড়া রে তুই ! সাথে তোর পরিবারটাও! আমি তো ভাবতেই পারি না ছোট চাচীর বোনটা এমন এক ছ্যাঁ’চড়া ছেলের জম্ম দিয়েছে। ”
রোহান যেন এতক্ষনে গিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট হলো। উত্তরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ আম্মা তুলে কথা বলবেন না ভাই। কষ্ট লাগে। ”
স্বচ্ছ খোঁচা দিয়ে শুধায়,
“ নিজেকে সেভাবে বানিয়েছিস কেন শুনি? ”
রোহান ততক্ষনে মুখ ভার করে উত্তর করে,
“ কিভাবে বানিয়েছি?সত্যিই তো বলছি। আপনি তো সুহাকে ভালোবাসেন না অতোটা, ভালোও রাখতে পারবেন না আমার মতো করে।শুনেছি আপনাদের বিয়েটাও খেলনা বিয়ে ছিল। তাহলে? শুধু জেদের টানে এমনটা করছেন কেন বলুন? দিয়ে দিন না সুহাকে আমায়।”
স্বচ্ছর এই পর্যায়ে পুরো শরীর টগবগ করে রাগে। হাত নিশপিশ করে। ইচ্ছে করে রোহানের মুখশ্রীটা কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে এবড়োথোবড়ো করে দিক। স্বচ্ছ রোহানের কলার চেপে ধরে এই পর্যায়ে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“শুধুমাত্র চাচীর দিকে তাকিয়ে তোকে আবার কে’লাতে পারছি না। নয়তো এখনই তোর হাড্ডি গুলো গুড়ো গুড়ো করতাম। একজন হাজব্যান্ডের কাছে তার বউকে চাইছিস? তোর সাহস কত নির্লজ্জ! ”
রোহান হালকা হেসে ততক্ষনে শুধায়,
“ ভালোবাসা লজ্জ্বা মানে না বড়ভাই! ”
স্বচ্ছ হাসে। রোহানের কলার ছেড়ে বুঝানোর ন্যায় সুন্দর করে বলে,
“ ভুল ভালোবাসা বেসেও লাভ নেই জানিস তো? তোর ক্ষেত্রেও লাভ দেখছি না। তুই বরং হাল ছেড়ে দে।”

সন্ধ্যার একটু পরই এসেছে স্বচ্ছ।লোক আনিয়ে বেলকনির মাপজোখ করেছে কিছুটা সময়। উদ্দেশ্য বেলকনিতে থাইগ্লাস লাগানো। চারদিকে যেভাবে শকুনের উপদ্রব দেখা দিচ্ছে বউ যদি ফসকে যায়? স্বচ্ছ লোকগুলোকে সবকিছু বলাবলি করে বুঝিয়ে দেওয়ার পর যখন লোকগুলো চলে গেল তখনই আলো নিভিয়ে দিল বিছানায় শুঁয়ে চোখ বুঝে রইল। মাথাটা ধরেছে সামান্য। অন্যসময় হলে হয়তো সুহাকে জ্বালাতন করার উদ্দেশ্যে সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলত। মাথাটা টিপে দিতে বলত। কিন্তু এখন বিপরীত। বরং স্বচ্ছ এখন সুহাকে এড়িয়ে এড়িয়েই চলার চেষ্টা চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার খোঁচা দিয়ে কথাও শোনাচ্ছে। তবুও বেশির ভাগ সময় সে সুহাকে এড়িয়েই চলছে বলতে গেলে। স্বচ্ছ শ্বাস ফেলে। মাথা চিড়চিড় করলেও সুহাকে একটা ডাক পর্যন্ত দিল না সে। সুহাও তখন সিয়ার সাথে গল্পগুজব করছিল বাইরে।

স্বচ্ছর হুট করে জ্বালানো কমিয়ে দেওয়াটা যেন তার সহ্য হচ্ছে। হুট করে কথা কম বলাটাও অপছন্দনীয় ঠেকছে। আর অবহেলা কিংবা এড়িয়ে চলাটা তো বুকে সরাসরিই আঘাদ করে তার। এই একটা মাস কত পাগলামো দেখাল ছেলেটা! কতোটা জ্বালাতন করল। ইচ্ছে করেই তাকে রাগাত। সুহার এখন মন খারাপ হয় এসব ভেবে। কান্না পায় কেমন জানি যখন স্বচ্ছর এড়িয়ে চলাটা দেখে। সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।রুমে এসে বাতি নিভিয়ে স্বচ্ছকে শুঁয়ে থাকতে দেখে চুপ থাকে সুহা। মনে প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ কি হলো? এতোটা নিরব পরিবেশ? স্বচ্ছই বা এত তাড়াতাড়ি না খেয়ে ঘুমিয়ে গেল? সুহা ধীর পায়ে পা বাড়ায় যাতে স্বচ্ছ ঘুমালেও ঘুম না ভাঙ্গে।

এগিয়ে গিয়ে বিছানার এককেণে বসেই সর্বপ্রথম হাত রাখে স্বচ্ছর কপালে। তাপমাত্রা বুঝার চেষ্টা চালায়।জ্বর এল না তো? নাহ! শরীরের তাপমাত্র টুকু তো স্বাভাবিকই আছে। তাহলে? মাথা ব্যাথা করছে কি? সুহা হাত এগিয়ে এবারে স্বচ্ছর চুল ছুঁয়ে দেখে। মাথায় হাত বুলাতে লাগে।এক হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অন্য হাতে স্বচ্ছর মুখে রাখতেই চোখ বুঝে থাকা স্বচ্ছ বলে উঠে,
“ তুমি আমার কাছে সত্যিই ভালো থাকবে না সুহাসিনী? সত্যিই কি আমি তোমায় ভালো রাখতে পারব না? ”
সুহা ফিটফিট করে তাকায় এবারে। গালে রাখা হাতটা মুহুর্তেই সরিয়ে নেয় সে। স্বচ্ছর বলা কথাগুলো কেমন যেন শোনায়। যেন স্বচ্ছর কন্ঠে সহস্র বিষাদের উপস্থিতি! সুহা ছোট শ্বাস টানে এবারে। স্বচ্ছর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে উত্তর দেয়,

“ আলো নিভিয়ে চোখ বুঝে শুঁয়ে থেকে কি এসবই ভাবছিলেন? ”
স্বচ্ছ তখনও চোখ বুঝে আছে। গম্ভীর স্বরে বলে,
” যেটা বলেছি তার উত্তর দাও। তোমাকে আমার চাইতেও অন্য কেউ আরো বেশি ভালো রাখতে পারবে? ঐ রোহান পারবে?কি হলো বলো? ”
সুহা হাসে এবারে। মৃদু হাসি৷ স্বচ্ছর মাথায় গতিশীল হাতটা স্থির করে উত্তর দেয়,
” অন্য কেউ তো চাইলে আপনার চাইতেও শত সহস্রগুণ ভালো রাখতে পারবে স্বচ্ছ। কিন্তু সে শত সহস্র গুণ ভালো রাখলেও আমি ভালো থাকব কিনা তা হলো প্রশ্ন। বুঝলেন? ”
স্বচ্ছ তখন বোকার মতো চোখ মেলে তাকায়। শুধায়,
“ ভালো রাখলে ভালো থাকবেনেই বা কেন?”
“ কারণ মানুষ যার সাথে ভালো থাকতে চায় তাকে না পেলে অন্য কারোর সাথে মন থেকে ভালো থাকতে পারে না। পারলেও হয়তো পরবর্তীতে মানিয়ে নিতে নিতে ভালো থাকতে হয়। ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই ফের প্রশ্ন ছুড়ে,

“ তুমি কি আমার সঙ্গে ভালো থাকতে চাও না সুহাসিনী? ”
সুহা উত্তর দেয়না। যদি সে বলেও থাকতে চায় তবুও এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ কি তা বিশ্বাম করবে? সুহা নিরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে কিছুটা ক্ষণ। উত্তর দেয় না। কারণ তার ভাবনা মতে স্বচ্ছ হয়তো তাকে সেদিনকার এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী করে। হয়তো ভাবে সেই এক্সিডেন্টটা ঘটিয়েছে। নাহলে সেদিন ওভাবে জিজ্ঞেস করত তাকে?অথচ সুহা তো এই স্বচ্ছ নামক মানুষটার এইটুকু ক্ষতির কথাও ভাবতে পারে। এইটুকু খারাপ হোকও চায় না। সুহা কিভাবে বুঝাবে তা? সুহার মন খারাপ হয় স্বচ্ছ তাকে এমনটা ভাবে ভেবে। তাই তো প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে উত্তর করল,
“ মাথা ব্যাথা করছে আপনার? তাহলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ঘুমান। ”
স্বচ্ছ শুধায়,

“ এড়িয়ে যাচ্ছো তুমি। ”
সুহা ক্লান্ত চাহনিতে তাকায়। একটু হেসে বলে,
“ কারণ আপনার খুঁজতে থাকা সেই প্রশ্নের উত্তরটা না পাওয়া অব্দি আপনি আমাকে দোষীই ভাববেন স্বচ্ছ।এক্সিডেন্টের পেছনের মানুষটা আমিই ভাববেন।এদিকে আমার কাছেও তো কোন উপযুক্ত প্রমাণ নেই বলুন।আপাতত আপনার চোখে আমি একপ্রকার খু’নী হিসেবেই আছি তাই না?আর সে খু’নীই আপনার সাথে ভালো থাকতে চায় এটা শুনলে আপনি হাসতেন৷ ভাবতেন আমি অভিনয় করছি। তাই এড়িয়ে গেলাম। কারণ সত্যিটা বললেও আপনি পাত্তা দিবেন নাহ। ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই শুধায়,
” তোমায় অবিশ্বাস করিনি আমি।তোমায় খু’নীও ভাবিনি সুহাসিনী। ট্রাস্ট মি! ”

সুহা হাসে। এই পর্যায়ে কন্ঠ রোধ হয়ে আসে। কান্না পায়। নিজেকে বিনা দোষে অভিযুক্ত হিসেবে দেখছে সে, স্বচ্ছ বিনা কারণেই তাকে অভিযুক্ত করর এড়িয়ে যাচ্ছে কি নিদারুণ ভাবে। তাহলে এই এক মাস এতোটা ভালোবাসা দেখানোরই কি দরকার ছিল? কি প্রয়োজন ছিল? সুহা কান্না আটকানো স্বরে উত্তর দেয়
“ কিন্তু আপনার কাজকর্ম বুঝাচ্ছে যে আপনি আমায় অবিশ্বাসই করছেন স্বচ্ছ। সত্যি বলব? আমি আপনাকে মারার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না স্বচ্ছ৷ আমি মা’রার হলে আপনাকে সরাসরিই মা’রতাম, আমার স্বভাবে অতোটা বেইমানি নেই যে আমি আপনাকে ওভাবে মারতে চাইব। ”
স্বচ্ছ হাত বাড়ায় এবারে। সুহার গালের পাশে একহাত রেখে বলে,
“ তোমায় তো এইজন্য দোষারোপ করিনি সুহাসিনী।আমি জানি তুমি আমায় মা’রার কথা ভাবতে পারো না। আমি জানি তুমি আমার ক্ষতি করবে না সুহাসিনী! ”

সুহার এই পর্যায়ে সত্যিই কান্না পেল যেন। চোখ টলমল করে৷ সুহা নিজেকে এতোটা ভঙ্গুর হিসেবে বোধহয় কখনোই কল্পনা করেনি। কখনোই এভাবে কারোর সামনে কেঁদে ফেলা মেয়ে হিসেবে ভাবেনি সে। তবুও কেঁদে দিল। চোখ গড়িয়ে পানি পড়ল। নিজেকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপনের জন্যই বলল,
” আমি, আমি সত্যিই আপনার ক্ষতি করতে চাই না স্বচ্ছ।কখনোই চাই না। সেখানে আপনাকে মে’রে ফেলার কথাটা ভাবা তো আমার জন্য দুঃসাধ্যময় কাজ। আমি যা করিনি তার জন্য আমি শাস্তি পাচ্ছি তবুও । কেন আমায় শাস্তি পেতে হবে বলুন? ”

“ তোমায় শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না আমি সুহাসিনী। তুমি তো প্রাণ হও আমার। ”
সুহা এই পর্যায় ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। উঠে যেতে নিতেই স্বচ্ছ সুহা উঠতে দিল না। উল্টে সুহার কোলে মাথা রাখে এগিয়ে। সুহার হাতটা মাথায় রেখে শুধায়,
“ হাত বুলিয়ে দাও। তোমার কান্না সুন্দর বোধ হচ্ছে না সুহাসিনী! ”
সুহা অন্য পাশ ফিরে কান্না থামাতে চায়৷ চোখ মুঁছে। বলে,
“ আমি এতোটা অবহেলা বোধহয় নিতে পারছি না। সত্যিই পারছি না। ”
স্বচ্ছ চোখ বুঝে। দুই হাতে সুহার কোমড় আঁকড়ে ধরে মাথা রাখে সুহার কোল ঘেষে। বলে,

“ তোমায় অবহেলা করার সাধ্য নেই আমার।”
সুহা আচমকায় বলে,
“ আমার সাথে কি গেইম খেলছেন ? আবারও ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়ে পালিয়ে যাবেন রাইট? এক মাস নিশ্চয় আমাকে আপনার প্রতি দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছেন তাই না?”
স্বচ্ছ এবারে হাসে। বলে,
“ তুমিও তো বিশ্বাস করছো না আমায়। ”
“ কারণ আপনি আমার উপস্থিতি পছন্দ করেন না স্বচ্ছ।এড়িয়ে যান আমায়। ”
স্বচ্ছ হাসে। শুধায়,
“ তুমি আজকাল ধরা দিয়ে দিচ্ছো, ছোঁয়ার অধিকার দিচ্ছো নিজ থেকেই, আশপাশে থাকছো। এড়িয়ে না গেলে তো বিপদ আমারই বলো।”
সুহা এই পর্যায়ে টানটান গলায় শুধায়,
“ দূরে থাকলেই খুশি? ”
উত্তর আসে,
“তুমি তো দূরেই থাকতে চাইলে সবটা সময়।তাই সুযোগ দিলাম আপাতত। পরবর্তীতে ছাড় দিব না আর সুহাসিনী। ”
সুহা চুপ থাকে। স্বচ্ছ ততক্ষনে সুহা হাতটা মাথায় চেপে রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
“ মাথায় হাত বুলাও। বড্ড যন্ত্রনা! ”

আবিরদের বাসা থেকে হুট করেই ছুটিদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসল। বিয়েটা ঠিক করে রেখে ছেলে দেশে ফিরলেই বিয়েটা সম্পন্ন করবে এমনটাই প্রস্তাব রাখা হলো। ছুটির বাবা মা দুইজনেই এই প্রস্তাবে খুশি হলেন। জানেন তারা যে, তাদের বোকা মেয়েটি কবে থেকেই এই আবির ছেলেটাকে মন দিয়ে বসে আছে৷এতকাল যে এত বিয়ের প্রস্তাব কিংবা পাত্রপক্ষকে উপেক্ষা করে এসেছে তাও যে কেবলই এই আবির ছেলেটার জন্য তা তাদের জানা কথা৷ তাই তো আবিরদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে খুশিই হয় দুইজনে।খুশি না হওয়ার ও তো কারণ নেই। ছেলে ভালো, ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়েছে, পাশাপাশি আয়ও করছে। সুন্দর ফিউচার!তার উপর পাশাপাশি বাসা। মেয়ে যদি দেশেই থাকে তো তাদের কতোটা সুবিধা হবে। দিনে চব্বিশঘন্টার মধ্যে চব্বিশ ঘন্টাই মেয়েকে চোখে চোখে দেখতে পারবেন।

ছুটির বাবা মা সবটা বুঝে শুনে একলাফে রাজি হতে গিয়েও শুধুমাত্র মেয়ের মত নেওয়ার জন্যই উনারা কিছু জানালেন না শেষমেষ। অবশেষে ছুটির বাবা তোফায়েল আহমেদ যখন বাড়ি ফিরলেন তখন আস্তেধীরেই ছুটিকে সবটা খুলে বললেন। ভাবলেন তার মেয়ে খুশিতে একলাফ মেরে জানাবে যে সে রাজি। অথচ ঘটল ভিন্নটাই! তোফায়েল আহমেদের আশায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়েই ছুটি জানায় সে আবির ভাইক পছন্দ করে না। আবিরকে সে বিয়েও করতে চায় না। আকস্মিক এই উত্তরটার পরেও ছুটির মা খুব বুঝাল ছুটিকে। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। ছুটি নিজের সিদ্ধান্তেই স্থির থাকল। উল্টে জানাল মাসখানেকের মধ্যেই সে বিয়ে করবে। তাও অন্য ছেলেকে। বাবা মা যেন পাত্র দেখে তার জন্য ।

প্রেমের সমর পর্ব ২৮

আকস্মিক ছুটির এহেন সিদ্ধান্তে তার পরিবার বিস্মিত হলেও মেনে নিল। ইনিয়ে বিনিয়ে আবিরের পরিবারকে জানাল যে ছুটি রাজি নয় বিয়েটায়। ব্যস! এই খবরটা পৌঁছে গেল আবিরের কানেও। আবির ততক্ষনে রেগে আগুন। দুই দুইবার বিয়ের প্রস্তাবে না করেছে ছুটি। আবির সে অপমান সহ্য করতে না পেরে হুড়মুড় করে কল দেয় ছুটিকে। অপর পাশ থেকে কল রিসিভড না হওয়াতে রাগ দ্বিগুণ হয় তার। অবশেষে শেষমেষ যখন রিসিভড হয় তখনই রাগে ধমক মেরে বলে,
“ ভাব দেখাচ্ছিস আমার সঙ্গে ছুটি? অবহেলা দেখাচ্ছিস? এতকাল যে আমি তোকে অবহেলা করেছি তার প্রতিশোধ নিতে চাইছিস? নাকি অন্য কাউকে ভালো লেগেছে? আমার প্রতি আর মন টানছে না তাই তো?”

প্রেমের সমর পর্ব ৩০