প্রেমের সমর শেষ পর্ব
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
ছুটির সামনে ফোনের স্ক্রিনে হাসিমুখটা সাদাফের। কিছুক্ষন আগে স্বচ্ছও কল করে তাকে একগাধা কথা বুঝিয়েছে যে আবির তার অনুভূতিকে ব্যবহার করেনি। স্বার্থের জন্য কাজে লাগায়নি৷ স্বচ্ছর কথাগুলোতে যুক্তি ছিল। ছুটি বিশ্বাসও করল। অতঃপর আবারও সাদাফ কল করে একই বিষয়গুলোই বুঝাতে লাগল। ছুটি ছোটশ্বাস টানে। বলে,
“বুঝলাম। কিন্তু সে যদি আমায় ভালোইবাসত তবে এত অবহেলা কেন করল এতগুলো বছর? হতেও তো পারত এতবছরে আমি বিয়ে করে তিন বাচ্চার মা হয়ে গেলাম। ”
ঠিক তখনই আবির রুমে এল। ছুটির কথাটা শুনে গলার আওয়াজ দৃঢ় করে বলল,
“ তুই বিয়ে করলে সে খবরটা আমি পাবই এই আত্মবিশ্বাস আমার ছিল। এবং, তোর বিয়ে যে অন্য কারোর সাথে হতেই পারে না তা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম। ”
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়৷ আবিরের সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত দেখাল সাদকেও। ছুটি ভ্রু কুঁচকে চাইতেই সাদ সামনে এসে দাঁড়াল। গড়গড় করে পাখির মতো সেদিনকার আবিরের ফোন দিয়ে রাহাকে ডাকার বিষয়টা খুলে বলল। ছুটি তা শুনে যখন ড্যাবড্যাব করে চাইএ তখনই উশখুশ করে বলল,
” জানিস তো রাহাকে ভালোবাসি। বেলকনিতে ওকে দেখতে পাব বলে কত রাত ঘুরফির করি ঐ বাসার সামনে। সেদিনও এমনই ছিল। ”
ছুটি সাদকে চেনে। খুবই ভালো বন্ধু তারা। রাহার জন্য এই ছেলেটা পাগলের মতোই পাগল তা সে জানে। কিন্তু আবির ভাইকে নিয়ে যা ভেবে সে এতকাল কষ্ট পেয়েছে তা যে আসলে সত্য নয় তা ভেবেই আপসোস হলো। এত গুলো দিন কষ্ট পাওয়া বৃথা তবে? শুধু শুধুই সে কষ্ট পেয়েছে?কিন্তু আবির ভাই তো সত্যিই তাকে অবহেলা করেছিল। হসপিটালের অবহেলাটুকু নিশ্চয় মিথ্যে নয়?ছুটি এসব ভাবতে ভাবতেই যখন বিভোর তখন সাদ বিদায় নিল। আবির তখন দুই পা এগিয়ে ছুটির সামনে দাঁড়িয়ে শুধাল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ ওদের কথাও যদি মিথ্যে মনে হয় তাহলে বল, নিজের প্রাণটাই বরং দিয়ে দেই। এই ভালোবাসাহীন এবং অবিশ্বাসে ঘেরা জীবন আর ভাল্লাগছে না। ”
বোকা ছুটি বোকার মতোই প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? ”
আবির কাছে এগোয়। আচমকা ছুটিকে কাছে টেনর হাত রাখে তার কোমড়ে।মুগ্ধ নজরে মেয়েটার চোখে দিকে তাকিয়ে বলে,
“ কারণ আমি তোকে চাইছি সে বহুকাল আগ থেকে। যখন পেলাম তখন তোর ভালোবাসা আর বিশ্বাস পাচ্ছি না। ”
ছুটি হেসে বলে,
“ আমিও আপনাকে চেয়েছিলাম বিনিময়ে আপনার বিরক্তি আর অবহেলা পেয়েছিলাম আবির ভাই। ”
আবির একটু ঝুঁকে এবারে।দুই হাতে ছুটির মুখটা আগলে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,
“ তোকে অবহেলা করার সাধ্য কোনকালেই ছিল না বোকাপাখি। হয়তো সম্মুখে অবহেলা দেখিয়েছি কিন্তু আড়ালে সেই তোকেই আমি শতভাগ গুরুত্ব দিতাম। ”
ছুটি ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইল,
“ তাই নাকি? ”
আবির শান্তস্বর এবার টানটান হয়। কিঞ্চিৎ রাগ হয়। এই যে কথায় কথায় মেয়েটা তাচ্ছিল্য করছে এটা সহ্য হয় না। কঠিন স্বরে বলে,
” আজকাল আমার প্রতি তোর বিশ্বাসটা বড্ড ঠুনকো হয়ে গেছে তাই না?কোন কথাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না? ”
ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে জানায়,
“ কিন্তু অবহেলাটা সত্যই ছিল আবিরভাই। হসপিটালে যখন আপনাকে সাপোর্ট দিতে চাইছিলাম আমি স্পষ্ট আপনার মুখে বিরক্তি দেখেছিলাম। অথচ রাহার সাথে আপনি সাচ্ছন্দ্যেই কথা বলছিলেন। ”
আবির চুপ থাকে এবারে। মনে করে হসপিটালের কথাগুলো। স্বচ্ছকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা ছিল মাথায়। সে চিন্তায় মরিয়া হয়ে ছুটির প্রতি অবহেলা বা বিরক্তি দেখিয়েছিল ভেবে আপসোস হয়। ক্ষুদ্র শ্বাস টানে শীতল স্বরে বুঝায়,
“ স্বচ্ছর অবস্থা খারাপ ছিল। জানতিস তো?সেসব শুনে সুহাও কেমন করতে লাগল। স্বচ্ছর আব্বু থাকলেও আমাকে আর সাদাফকেই বেশিরভাগটা সামলাতে হচ্ছিল ছুটি। সেদিক থেকে একসাথে স্বচ্ছ এবং সুহা দুইজনকে সামলানোটা কঠিন ছিল না? এদিক থেকে রাহা আমাদের সাহায্য করেছিল তো। সুহাকে সামলে নিতে ওর সাথে কথা বলাটা লাগত না বল?এটা অপরাধ? ”
“ আমি আপনাকে কখনোই অপরাধী প্রমাণ করিনি আবির ভাই। কিংবা কখনও এটাও বলিনি আপনি অপরাধী। ”
“কাজে কর্মে সবকিছুতেই তো বুঝিয়ে দিচ্ছিস আমি অপরাধী। ”
ছুটি তাচ্ছিল্য স্বরে জানায়,
“ হাসালেন। ”
আবির এবারে ছুটির মুখ ছেড়ে দেয়। চোয়াল শক্ত করে জানায়,
“ আজকাল খুব তাচ্ছিল্য করে কথা বলা শিখেছিস। ”
“ শিখলাম। ”
আবির টানটান স্বরে ফের জানাল,
“ তোকে কোনকালে অবহেলা করিনি আমি। যাকে সবটুকু দিয়ে চাইতাম, আড়াল থেকে সবসময় পর্যবেক্ষণ করতাম তাকে অবহেলা করা যায় না। ”
ছুটি শুধায়,
“ যায়না বলছেন? অথচ আমি আপনার মুখে তীব্র বিরক্তি দেখেছিলাম। ”
আবির কপাল ঘেষে। নিজের রাগ হচ্ছে নিজের প্রতিই।বিরক্ত লাগছে সবকিছু৷ রাগটা কপাল ঘেষে থামানোর চেষ্টা করল সে। আচমকা সুহার মুখটা আবার আগের মতো আগলে নিয়ে চুমু বসাল কপালে৷ বলল,
“ সেসময় মানসিক ভাবে ডিস্টার্বড ছিলাম। বিরক্তিটা তোর উপর নয় ছুটি, পরিস্থিতির উপর হয়েছিলাম। তুই নিশ্চয় বুঝিস প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে জেনে ঐ মুহুর্তে মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হবে? ”
ছুটি হাসে। সে সবটাই বুঝল। তবুও এতক্ষন এমনি এমনিই অভিমান দেখাল। যে অভিমান গলে গেল স্বচ্ছর ঠোঁটের ছোঁয়ায়। হেসে বলল,
“ আচ্ছা, বুঝে নিলাম। ”
আবিরও এইবারে হাসে। বহুদিন পর আজ মেয়েটার হাসিটা দেখে মনে হচ্ছে এটাই আগের ছুটি। এই মেয়েটাই তো!মাথায় চুমু এঁকে শুধায়,
“ বোকাপাখি! ”
ছুটি নরম গলায় জানতে চায়,
“ ভালোবাসেন আবির ভাই? ”
“ এইটুকু যদি এখনও না বুঝাতে পারি তবে বুঝব আমি ব্যর্থ ভালোবাসার ক্ষেত্রে। ”
“ মানুষের মনে অনেককিছুই তো থাকে। মুখে না বললে তা কি করে বুঝে নিব? ”
আবির তাকায় গাঢ় নজরে। বলে,
“ ভালোবাসি এটা মুখে বলতে হয় না। বুঝাতেই হয়। ”
ছুটিও তাকিয়ে থাকে একই দৃষ্টিতে। উৎসুক হয়ে বলে,
“ আমি আপনাকে ভালোবাসি আবির ভাই। বসন্তের সেই প্রথম হাওয়ার মতোই আপনি আমার জীবনে ফুরফুরে এক অনুভূতি, রঙ্গিন এক স্বপ্ন যাকে ছোঁয়ার ইচ্ছায় আমি দিনরাত বিষাদে ডুবতাম। ”
আবির হাসে। মেয়েটার হাত নিয়ে নিজের গালে ছোঁয়ায়। বলে,
“ ছুঁয়ে দিলি। শান্তি?
ছুটির চোখ তখন টলমল করে। কান্নারা যেন বেরিয়ে আসবে।অনেকটা সময় কান্নায় রোধ হওয়া স্বরে বলে,
“ আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরব আবির ভাই? ”
“ কে নিষেধ করল? ”
কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু ছুটির জড়িয়ে ধরতে দেরি হলো না। মুহুর্তেই প্রিয় পুরুষটির বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল মেয়েটা। আবির হাসে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ আমি অতোটা ভালো নই ছুটি। এভাবে জড়িয়ে ধরে পরে আমার মনের ভেতর অন্য চিন্তা আসলে সামলাতে পারবি? ”
ছুটি অনেকটা সময় নিশ্চুপে কাঁদে। একইভাবেই জড়িয়ে থাকে। তারপর মাথা উঠিয়ে বোকা স্বরে বলে,
“ কি চিন্তা? ”
আবির ঠোঁট বাঁকায় এবারে। এই মেয়েটা সত্যিই একটা বোকাপাখি। বলে,
“ তোর ভাষায় কোন মেয়ের সাথে হাবিজাবি করা। ”
ছুটি মুহুর্তেই চোখমুখ কুঁচকায়। বলে,
“ ছিঃ! ”
আবির মুহুর্তেই শুধায়,
“ ছিঃ কি? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আমি। চিন্তা আসতেই পারে। তার উপর যার উপর আমার অধিকার আছে, যে আমার বউ তাকে নিয়ে চিন্তা আসবে না বলছিস? ”
ছুটি দূরে সরে সঙ্গে সঙ্গেই। বলে,
“ বাইরে যাচ্ছি। ”
আবির হাত টেনে ধরে। উত্তরে বলে,
“ যাবি না। ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়েছি তোকে কাছে পাওয়ার জন্যই। এখন তুই দূরে দূরে থাকলে কি করে হবে? ”
” বাসাতেই তো আছি। ”
টানটান গলায় উত্তর এল,
“ আমার সামনেই ঘুরঘুর করবি। শোন বোকাপাখি? নিজেকে প্রস্তুত করে নে আজ রাত্রির জন্য। সময় দিলাম তিন চারঘন্টা।এরপর আর ছাড় দেওয়া হবে না। এর মধ্যে স্বচ্ছর হলুদের অনুষ্ঠানটা এটেন্ড করে আসব।”
ছুটি শুকনো ঢোক গিলে শুধায়,
“আমি? ”
“ তুই বিয়েতে যাবি। ”
ছুটি ফ্যালফ্যাল চাহনি ফেলে বলে,
“ যাব না সুহার হলুদে? ”
“না, যাবি না। ”
ছুটির মুখটা চুপসে যায়। আবির হাসে। ফের ছুটির মুখে চুমু এঁকে যেতে যেতে বলে,
“ মাথা রাখিস কেমন? ফেরার পরের সময়টুকু ভিন্ন কাটবে। পরে যদি বলিস আমি প্রস্তুত নই তখন মানা হবে না। ”
সুহার হলুদের অনুষ্ঠান। বেশ সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে সুহাদের বাড়িটা। মাঝে রোহান একপাশে এসে সিগারেট ফুকছে।মূলত সুহার দাদাজানের সাথে বিজন্যাসের খাতিরে যোগাযোগ এবং অতিথেয়তা পেয়েই সে এসেছে। অন্য দিকে আবার রাহার সাথে বিয়ের কথাবার্তা! রোহান নিজের প্রিয়তমার হলুদ অনুষ্ঠানে এসে নিশ্চুপ থাকল। বোধহয় বুক চিনচিন করছে তার। জীবনে একটা মেয়েকেই সে ভালোবেসেছিল আর সে মেয়েটিকেই অন্য কারোর ব্যাক্তিগত সম্পদ হতে হলো?বিধাতা এত নিষ্ঠুর কেন? রোহান আপসোস করে। ঠিক তখনই পেঁছন থেকে কেউ একজন আসে। বলে উঠে,
“এইযে রোহান ফোহান? এভাবে পাব্লিক প্লেসে সিগারেট ফুঁকছেন কেন?”
রোহান তাকায়। এটা রাহা। নবনী মাহমুদ রাহা। যার সাথে তার বিয়ের কথা চলমান! রোহান কেন জানি না দুয়েকবার তাকিয়েও মেয়েটার মাঝে কোন ভালো লাগা খুঁজে পায় না। ক্ষুদ্রশ্বাস টেনে জানায়,
“হোয়াট ইজ রোহান ফোহান? ”
রাহা হেসে বলে,
“ মানে রোহান ফারাবী আরকি। আপনি না তিহানের কাজিন? সে হিসেবে আপনার উচিত স্বচ্ছ ভাইয়ের হলুদে থাকা৷ আপনি এসেছেন আমার আপুর হলুদে?”
রোহান মুহুর্তেই শুধায়,
“ কারণ ওপাশ থেকে অতোটা আন্তরিক ভাবে ইনভাইট করা হয়নি যতোটা এদিক থেকে আপনার দাদাজান করেছেন। ”
রাহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“ দাদাজান আপনার প্রতি এত আন্তরিকতা দেখাবেই বা কেন? ”
রোহান সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে ফেলে দেয়। পা দিয়ে পিষে নিতে নিতে বলে,
“ সম্ভবত উনার ছোট নাতনির সাথে আমার বিয়েটা দিবেন বলে। ”
রাহা বিস্ময় নিয়ে বলে,
“ছোট নাতনি? ”
“ ইয়েস, নবনী মাহমুদ রাহা! ”
ফের বিস্মিত স্বর,
“ অ্যাাঁ!আমার বিয়ে আমিই জানি না? ”
রোহান হাসে এবার রাহার মুখটা দেখেে।বলে,
“ আপনি চাইলে বিয়েটা ভাঙ্গতেও পারবেন ম্যাম। কারণ আমি আপনার আপুকে ভালোবাসতাম। ভালোবাসতাম বললে ভুল! ভালোবাসি। ”
রাহা ভ্রু কুচকে বলে,
“ আপনি আপুকে ভালোবাসেন? তার মানে আজীবন ভালোবাসবেন?”
রোহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানায়,,
“ হয়তো! ”
রাহা মুহুর্তেই উচ্ছাস নিয়ে বলে,
“ গুড! তার মানে আপনাকে বিয়ে করলে এইসব সাংসারিক ঝামেলা অতোটাও পোহাতে হবে না বলুন? আপনি কখনো টিপিক্যাল স্ত্রী হিসেবে আমায় দেখবেন না নিশ্চয়? ”
রোহান অসন্তোষ স্বরে জানায়,
“ একদমই না নবনী। আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মানবই না দেখা তো দূর।”
রাহা ফের উচ্ছাস নিয়ে বলে,
“ গুড গুড। তাহলে বিয়েটা আপনাকেই করা যাক।
রোহান ভ্রু কুঁচকে নেয়। মেয়েটা পাগল?বলে,
“ হোয়াট? ”
রাহা বিষদ ব্যাখ্যা দেয় এবারে,
“ বিয়ের পর আপনি আপনার মতো থাকবেন, আমি আমার মতে থাকব৷ দেখুন এমনিতেও আপনাকে আজ নাহয় কাল ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবে। তখন বউ যখন আপনাকে অধিকার চেয়ে চেয়ে কান জ্বালা পালা করে ফেলবে ওটা তো যন্ত্রনার বিষয় হবে। সেইমভাবে আমিও এতকাল চাইছিলাম শুধু নামমাত্র বিয়েটাই করব এমন একটা জামাই পাই যাতে। সে আমার বিষয়ে নাক গলাবে না, আমিও কার বিষয়ে নাক গলাব না। সে তার মতো থাকবে। আমিও আমার মতোই থাকব।ধরুন সে হাজারটা মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকলেও আমি কিছু বলব না, আবার আমি হাজারটা ছেলে নিয়ে পড়ে থাকলেও সে কিছু বলবে না। সুন্দর স্বাধীন জীবনযাপন। বিয়ে করে অতো স্বাধীনতা হারাতে চাই না আমি। ”
শেষদিকটা কেমন লাগল রোহানের। হাজারটা ছেলে নিয়ে পড়ে থাকবে মানে? রোহান ফারাবীর বউ হাজারটা ছেলে নিয়ে পড়ে থাকবে বিষয়টা কুৎসিত!শক্ত স্বরে বলে,
“ গুড। কিন্তু হাজারটা ছেলে নিয়ে পড়ে থাকা যাবে না। ”
কথাটায় অধিকারবোধ প্রকাশ পেল নাকি?রাহা বুঝে না। হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
“ কথার কথা ওটা ভাই। সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন আজব?”
.
সুহার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয় এগারোটার দিকেই। যেহেতু কাল বিয়ে তাই তাড়াতাড়িই শেষ করা। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন সুহা। ফোনটা ধরা হয়নি সারাদিনেও। এখন নিল। দেখল স্বচ্ছর শতের উপরে কল। তাও এই আধঘন্টাতেই। সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কল ব্যাক করে বলে,
“কি চাই? এতবার কল করছেন কেন ভাই? ”
একে তো কল ধরেনি। তার উপর ভাই ডাকছে। স্বচ্ছ নিরব রাগ নিয়ে বলল,
“ আবার বলো। ”
সুহা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ কি? ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
“ভাই হই আমি? ”
সুহা এবারে নরম গলায় জানাল,
“ ওটা মুখে সবসময়ই থাকে স্বচ্ছ। রাগছেন কেন ওভাবে? ”
স্বচ্ছ টানটান গলায় উত্তর করে,
“ বাকি সবাইকে ভাই বলবে কিন্তু আমায় বললে একদিন আগের ঘটনাটা বারবার রিপিট করিয়ে মনে করিয়ে দিব যে আমি তোমার বর হই। মনে থাকবে? ”
সুহা বুঝতে পারে স্বচ্ছ একদিন আগের ঘটনা বলতে কি বুঝিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বলে,
“ স্বচ্ছ!”
স্বচ্ছ এই রাগকে পাত্তা দিল না। বরং বলল,
“ রাগ হচ্ছে আমার।”
সুহা কারণ না পেয়ে শুধায়,
” ভাই বলাতে?”
ফের কঠিন গলায় উত্তর এল,
“ না, তোমার হলুদে ঐ রোহান কেন আসবে? ”
সুহা এবারে বুঝতে পারল। ছোট শ্বাস টেনে জানায়,
“ দাদাজান ইনভাইট করেছে। ”
স্বচ্ছ ঠোঁট গোল করে শ্বাস টেনে বলে,
“ মানতে পারি না ওকে আমি৷ ও নিশ্চয় তোমাকে চেয়ে চেয়ে মুগ্ধ নজরে দেখেছে? আমার আগেই? আমি এখনও আমার বউয়ের সাজ দেখিনি। হতভাগা কপাল আমার।”
সুহার হাসি পায়। বলে,
“ আপসোস হচ্ছে? ভিডিও কল দিব?রাহাকে তো বলেছিলাম কিছু ছবি তুলে আপনাকে পাঠাতে। বোধহয় পাঠানো হয়নি। ”
স্বচ্ঠ হাসে এতক্ষনে গিয়ে। মৃদু হেসে জানায়,
“সমস্যা নেই, সরাসরিই দেখব। ”
“ পাগল নাকি? এতটুকু পথ জার্নি করে আসবেন? ”
স্বচ্ছ জানায়,
“ এসেছি। ”
সুহা খুশি হলো। তবুও খুশিটা না দেখিয়ে বলল,
“ কাল আবার বিয়ে। রাতে আবার ফিরতে হবে আপনাকে। বেশি জার্নি হয়ে যাচ্ছে না?শরীর খারাপ করলে? ”
“ তোমাকে দেখলে ভালো হয়ে যাব সুহাসিনী। ”
সুহা ভ্রু কুঁচকায়,
“ আমি কি মেডিসিন? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট এলিয়ে হেসে জবাব দেয়,
“ হু, আমার ব্যাক্তিগত মেডিসিন আপনি। ”
“ এতরাতে জার্নি করে এতদূর এসে এসব বলার মানে কি? কি চাই জনাবের শুনি?
উত্তর আসে,
“ তোমাকে সুহাসিনী। ”
প্রেমের সমর পর্ব ৪১
সুহা মৃদু হেসে বলে,
“ আমাকে তো সে কবেই পেয়ে গেলেন। চার চারটি বছর আগেই। ”
স্বচ্ছ শোনায়,
“ সবসময়ই পেতে চাইছি! ”
সুহাও বলে,
“ সুহাসিনী সবসময়ই আপনার স্বচ্ছ। ”