প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৬

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৬
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আবিরের পরনে দেখা গেল একটা সাদা তোয়ালে ব্যাতীত অবশিষ্ট কোন পোশাক নেই। বাইরে বেশ ঠান্ডা পরা স্বত্ত্বেও রুম হিটারের কারণে ততোটা ঠান্ডা বোধ হচ্ছে না বোধহয়। আবির মাত্রই গোসল সেরে বের হলো। ভেজা চুলগুলো কপালে পড়েছে। ছুটি তখন কিচেনটায় ব্রেকফাস্ট তৈরির জন্য গিয়েছিল।সকাল সকাল উঠেই গোসল সেরে সে শাড়ি পরেছে। সে শাড়িটা যেটা আবির কাল রাতে পরাতে লেগে অর্ধেক পথেই আবার সিদ্ধান্ত বদলে নিয়েছিল। ছুটি আর যায় হোক আবিরের শাড়ি পরার সে অনুরোধটা পূরণ করার উদ্দেশ্যে শাড়ি পরল। প্রিয় পুরুষের দেওয়া শাড়ি! আজ কতগুলো দিন পর সে ফুরফুরে মনে আনন্দ চিত্তে শাড়ি পরেছে। ছুটি মনে মনেই হাসল। ব্রেকফার্স্ট রেডি করে এসে আবিরকে এরূপ অবস্থায় দেখে মিনমিনে চাহনিতে তাকাল। সুদর্শন দেখাচ্ছে পুরুষটাকে। বেহায়া মন টানছে। বেহায়া দৃষ্টিও ঘুরিফিরে পুরুষটার খালি শরীরের আটকাতে চাইছে। ছুটি আড়ষ্টতার ন্যায় দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে বলল,

“ আপনি কি পোশাক পরে প্রথমদিন অফিসে যাবেন জানি না তাই আর বের করে রাখিনি। ”
আবির মৃদু হাসে ছুটির আড়ষ্টতা স্বরূপ দৃষ্টি দেখে। দু পা এগিয়ে এসে ছুটির দিকে আসতে আসতে বলে,
“ অমন ভাবে দৃষ্টি অন্য দিকে রাখার কারণ কি? আমি কি তোর নতুন বিয়ে করা বর? ”
“ না। ”
আবির ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে। সরু চাহনি ফেলে অবলোকন করে ছুটিকে। শাড়িতে সুন্দর দেখাচ্ছে।স্নিগ্ধ লাগছে। এই মেয়েটাকে সবসময়, সব রূপেই এতোটা মানানসই লাগে কেন আবিরের কাছে? আবির বুঝে উঠে না। তবর ঠোঁট কামড়ে হেসে জানায়,
“ বিয়ের এতদিন পর এসেও এমন আড়ষ্টতা দেখালে তো মানুষ আমায় সন্দেহ করবে। ভাববে আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। ”
ছুটির কান গরম হয়ে উঠল। বিড়বিড় করে বলল কেবল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ ভাবলে ভাবুক। ”
আবির শুনে। তবে বিপরীতে উত্তর করে না। এগিয়ে আসে ছুটির দিকে। শাড়ির সাথে সাথে গলায় একটা পাতলা ওড়নাও জড়িয়েছে মেয়েটা। আবির ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
“ শাড়ি পরে গলায় ওড়না কে জড়ায়? ”
ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে ওড়না সরিয়ে গলার একদিকে একটা ক্ষত দেখাল। যেটা আবিরেরই করা।ছুটি তা দেখিয়ে ছোটস্বরে জানাল,
“ গলায় দাগ বসে গিয়েছে। একটু পর উইলি আর এলিনা আসবে। দেখলে খারাপ ভাববে।”
আবির হাত বাড়ায়। ক্ষতটায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“ ভাবুক না, সমস্যা কি তোর? ”
ছুটি সরু চোখে তাকায়। প্রশ্ন ছুড়ে,
“ জ্বালাচ্ছেন? ”

আবির হাসে এবারে। নিজের ভেজা চুলগুলো একহাতে ঝেড়ে নেয়। ছুটির কাছাকাছি দাঁড়ানোতে জলের ছিটেফোটে পড়ে ছুটির মুখেও। আবির ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ একদম নয়, বরং জ্বলছি। বাহিরের দেশে এসেও বাংলাদেশী শাড়ি পরিহিত বউ দেখে হৃদয় জ্বলেপুড়ে ছারখার।অথচ এখন আমায় বউ রেখে বেরুতে হবে। বড্ড জ্বালাচ্ছিস। ”
“ আপনি বলেছিলেন শাড়ি পরতে। কাল পরা তো হয়ে উঠে নি তাই ভাবলাম আজ সকালে পরা যেতে পারে।তাই ।”
আবির ফের হেসে জানাল,

“ পরা হয়ে উঠে নি না, আসলে তোকে শাড়ি পরাতে পরাতে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে পরে শাড়ি পরানো হয়নি তা বল। ”
“ বাজে বকছেন। এসব ছাড়া কি মাথায় আপনার কিছুই ঘুরে না? ”
“ বাজে বকছি? অথচ তুই সকালেও আমার কাছে বাচ্চার আবদার করলি? কাল রাতে শাড়ি পরানোর আবদার করলি। এসব আবদার করে করেই তো মাথা নষ্ট করিস। ”
ছুটি মুহুর্তেই বিরোধিতা করে জানাল,
” শাড়ি পরানোর আবদার আমি করেছিলাম? ”

“ ইচ্ছে করেই তো প্রথমে পরিসনি যাতে আমি পরিয়ে দেই, আর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে তোর মাঝে ডুব দিই। ”
ছুটি ক্রমশ লজ্জ্বায় লাল হচ্ছিল। ফর্সা গাল রক্তিম হয়ে উঠছিল। কান উষ্ণ হয়ে উঠছিল। এই পুরুষের কথা গুলো আজকাল তাকে মারাত্মক ভাবে লজ্জ্বায় ফেলতে সক্ষম! ছুটি প্রসঙ্গ পাল্টানোর কথা ভাবে। বলে,
“ কথা না বলে তৈরি হয়ে নিন। লেট হবে পরে।”
“ ঐ যে তুই আছিস। লেট হলেও একমাত্র তোর জন্য ই হবে। ”
“চলে যাব? আপনি বললে চলে যেতে পারি।”
“ সেটা বলার সাহস তো এখনও আমার হয়নি৷ তার চেয়ে বরং থেকে যা, দিনে রাতে আমার দুশো একবার করে মাথা নষ্ট কর, কয়েকবছর পর আমার বাচ্চার মাও হয়ে যেতে পারিস। সমস্যা নেই।আমি কিছু মনে করব না। ”
ছুটি মুহৃর্তেই ভ্রু কুঁচকায়। শুধায়

“ কয়েক বছর পর বাচ্চার মা হবো? ”
আবির কিছুটা ঝুঁকে এবার। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
” এখনই হবি? ”
ছুটি উত্তর করতে পারে। একরাশ লজ্জা এসে ছুঁয়ে যায়। তবে আবির হেসে আবারও শুধাল,
“ এখনও বউকেই ভালোবেসে শেষ করতে পারিনি, বাচ্চাকে কিভাবে এক্সট্রা ভালোবাসা দিয়ে সামলাব বল? তাছাড়া এই ভীনদেশে আপনি একা মা হওয়ার জার্নিটা সামলাতে পারবন না। পারলে আমি অবশ্য অপেক্ষা করতাম না। ”

সিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে একটা ভাড়া বাসায় উঠার জন্য বেশ কয়েকদিনই হলো পরিবারে জানিয়েছে। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও অবশেষে মেয়ের মানসিক অবনতির দিক খেয়াল করে মত দিলেন তারা। স্বচ্ছও অবশেষে না করল না। বোনটা বড্ড আদুরে তার। সিয়া খুশি হলো। বেঁছে বেছে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য সাদ যে বিল্ডিং এ থাকে ওখানেই গেল। টুলেট ঝুলছে। স্পষ্ট লেখা আছে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে। সিয়া নিচে লেখা নাম্বারটায় কথা বলল। জানাল সবটা। অবশেষে কথা বলে যখন পাকাপোক্ত প্রায় তখনই কল রেখে মুদু হাসল সে। তারপর পথ এগোতে নিয়ে হুট করেই শুনল,

“ আবারও এসেছো এখানে? কেন? ”
সিয়া ঘুরে তাকাল। সাদ! গম্ভীর পুরুষটা! সিয়া একনজর তাকাল। একদম স্বাভাবিক স্বরে উত্তর করল,
“ এলাকা টা তো আপনার নয় সাদ ভাই। এমনিই এসেছি একটু দরকারে। ”
সাদ বিনিময়ে ফের বলল,
“ কি দরকার? ”
সিয়া কৌতুহল দেখে হালকা হাসে। বলে,
”আপনাদের বাসার নিচে একটা টু-লেট ঝুলছে। দেখেছেন?”
”দেখেছি। তা নিয়ে তোমার কাজ কি সিয়া? ”
“ ভাবছি ভাড়ায় উঠব। ”
সাদ প্রশ্ন ছুড়ে,
“ কোথায়? ”
” আপনাদের বাসার ঠিক উপরের বাসাটায়। ”

“ কি জন্য? ”
“ এমনিই, যাতে আপনি আর এই এলাকায় দেখলেই চলে যেতে বলতে না পারেন।”
সাদ এবারে গম্ভীর দৃঢ় স্বরে জানাল,
“ পিঁছু ছেড়ে দাও আমার। ”
সিয়া উত্তর করল,
“ কে বলল আপনাকে যে আমি আপনার পিছু নিয়েছি? ”
“ শিওর নাও নি? ”
দৃঢ় স্বরে আওয়াজ আসে,
“ শিওর! ”
“ না নিলেই মঙ্গল! নিজের মতো থাকো। ”
এটুকু বলেই সাদ ফের বাসার দিাে পা বাড়াতে নিল। অথচ সাদের পোশাক, বেশ দেখে মনে হয়েছিল সাদ কোথাও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে যেন। সিয়া মুহুর্তেই বলে,
“ আবার বাসায় চলে যাচ্ছেন যে? যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন সেখানে যাবেন না নাকি? ”
সাদ ফিরে না আর তার দিকে। ওভাবেই যেতে যেতে বলল,
“ যাব না। ”

জ্বরে যে মেয়েটা মাথা অব্দি উঠাতে পারে না,বিছানায় এলিয়ে আছে সে মেয়েটাকে রোহান কিছুটা সময় মনোযোগ দিয়ে দেখল। এই মেয়েটার রূপে আটকায়নি সে, রূপে আটকালে তো প্রথমেও আটকাতে পারত! তবে সর্বোপরী এই মেয়েটার মাঝে সত্যিই এমন কিছু আছে যে রোহানকে অবশ্যই আটকাতেই হলো। রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। হাত দিয়ে রাহার জ্বর পরখ করে। শরীর উষ্ণ! জ্বরের আগমন ঘটেছে আবার ও। রোহান বুঝতে পারল মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে। ছোটশ্বাস ফেলে তার কষ্ট কমানোর বুদ্ধি খুঁজল। একটা বাটিতে জল নিয়ে জলপট্টি দিল বার কয়েক। যদি জ্বর যায় এতে? এই মেয়েটা তো সকাল থেকে মেডিসিন নেওয়া তে দূর একটু পানি অব্দিও খায় নি। সুখ নাকি তেঁতো ঠেকছে।রোহান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থেকে এসবই ভাবল। এরই মধ্যে রোহানের মা গরম গরম এক বাটি স্যুপ নিয়ে হাজির হলো। বলল,

“ দেখি সর। ওকে এটা খাইয়ে দিই। সকালে থেকে তো কিছু খেল না। ”
রোহান সরল না। বরং বলল,
“ আমাকে দাও আম্মু। খাইয়ে দিচ্ছি আমি।”
তার মা প্রশ্ন করল,
“ পারবি? ”
“ পারব না কেন? অবশ্যই পারব। ”
“ ঠিকাছে। ”
কথাটুকু বলেই রোহানের হাতে দিল। বলল,
” আস্তে ধীরে যত্ন নিয়ে খাওয়াবি। কোন বকাঝকা করবি মেয়েটাকে। এমনিতেই কি ভীষণ জ্বর! ”
রোহান মাথা নাড়াল। রোহানের মাও নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেল। রোহান স্যুপের বাটিটা একপাশে রেখে রাহার দিকে তাকাল। এক হাতে রাহার গাল আলতো ছুঁয়ে ডাকে,
“এই মেয়ে? নবনী? উঠো। একটু উঠে বসো।”
রাহা শুনে। গুঁটিশুটি মেরে শুঁয়ে আছে। রোহান ফের মুখে হাত রেখে বলে,

“ নবনী? ”
রাহা এবারে অস্ফুট স্বরে উত্তর করল,
“ হু। ”
“উঠো। ”
রাহা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় ঘুম ঘুম দৃষ্টিতে। মাথা ব্যাথা হচ্ছে তার৷ চোখগুলোকেও তীব্র জ্বালা করছে।জানাল,
“ইচ্ছে হচ্ছে না। মাথাটা খুব যন্ত্রনা করছে। ”
রোহান ছোটস্বরে বলল,
“ করবে না আর। খাওয়ার পর মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। তারপর তৈরি হয়ে ডক্টরের কাছে যাবে। একটু উঠো এখন। ”
রাহা ফের চোখ বুঝে নেয়। রোহান আবারও ডাকল,
“নবনী?”
রাহা এবার খুব কষ্টে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল। রোহানও সাহায্য করল। পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসাল। রাহা কোনভাবে বলল,

“ উঠলাম।”
রোহান দেখল। হাতে স্যুপের বাটিটা নিয়ে চামচ ধরে খাবার এগিয়ে ধরে বলল,
“ হা করো। ”
রাহা নাক সিঁটকাল।জানাল,
“ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”
রোহান গম্ভীর আওয়াজেই জানাল
“খেতে ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে । ”
“ তবু ইচ্ছে করছে না।”
রোহান এবার কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরেই বলল,
হা করো। এক্ষুনি শেষ করবে এটা। ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৫

রাহার চোখ এবারে কেমন টলমল করে জ্বরের মধ্যে। আকস্মিক হা করে সে। রোহান চামচ দিয়ে খাবার বাড়ায় আর সে মুখে তোলে। এভাবে করে যখন পুরো বাটিটা খালি হওয়ার পথে ঠিক তখনই রাহার পেট থেকে পুরোটা খাবার উগড়ে আসল তার নিজের শরীর এবং রোহানের শরীরের উপরে। রাহার চোখ তখন গোলাটে। শরীর কাঁপছে কেমন। বুঝতে পারে শরীরের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে সে। রোহান চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এই প্রথমবার সে কোন মেয়েকে অসুস্থ অবস্থ্য় খাওয়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর এমন একটা কান্ডে সে যখন হতবিহ্বল হয়ে তাকাবে ঠিক সেই মুহুর্তেই রাহাকে শরীর এলিয়ে পড়ে যেতে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। কলিজায় কেমন যেন করে উঠল মেয়েটার এমর অবস্থা দেখের।ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত সে বমিমাখা শরীরেই মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে শুধাল,
“ নবনী? ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৭