প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩০

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩০
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটি তখন মাত্রই বাসায় ফিরেছে৷ আবির সাধারণত তার ফেরার একটু পরই ফিরে। কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম হলো। আবির আগে আগেই ফিরল। অথচ অন্য রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকাতে ছুটি তা খেয়ালই করল না। নিজের মতো করেই দরজার লক খুলে ডুকে পড়ে আগে এক মগ কফি করল। অতঃপর চুমুক দিয়ে একটু সময় নিয়ে কফি শেষ করল। এর পরমুহুর্তেই কাপড় নিয়ে রুমের সাথে এডজাস্ট করা ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ওয়াশরুমটা কাঁচের তৈরি। এমনি ওয়াশরুম গুলো ফ্রস্টেড গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হলেও এটাতে ভেতর থেকে পর্দা দেওয়া ছিল। পর্দা না দিলে বাইরে থেকে ও দেখায় ভেতরের সব৷ ছুটি যে এসেছে তা আবির খেয়াল করেছে শুরু থেকেই।

এতক্ষন আড়াল থেকে দেখছিল। যেহেতু একটু পরই সে এক ইভেন্টের উদ্দেশ্যে বের হবে তাই তৈরি হতে যখন নিজের রুমে প্রবেশ করল এবং মনে আগ্রহও থাকল ছুটি কি করছে এতক্ষন তা দেখার জন্য তখনই ওয়াশরুমের পর্দার এক ফাঁকে চোখে পড়ল ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা ছুটিকে। মুখে পানি দিচ্ছে। অতঃপর ঝর্নার নিচে দাঁড়াল চোখ বুঝে।পোশাকটা শরীরে বেশ এঁটে আছে যেন। আবির নিজের প্রিয়তমা নারীর আড়ালে এভাবে দাঁড়িয়ে কার্যকলাপ দেখাতে বেশ মজা পেল যেন। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এক মুহুর্ত তা দেখে বসে থাকল বিছানার এক কোণে। অতঃপর মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে ক্রমেই।ছুটি যখন ড্রেস চেঞ্জ করে নিতে যাবে ঠিক তখনই আবির চোখ বুঝে নিল। শুকনো ঢোক গিলে সে। ছুটি তার স্ত্রী। দেখার অধিকার তার আছে সে জানে৷ তবুও কারোর আড়ালে কারের এতটাও প্রাইভেসি নষ্ট করা উচিত নয় বোধহয়। এতক্ষন সে মজা করেই ছুটিকে পরে জ্বালাবে বলে তাকিয়ে দেখছিল। অতঃপর সে চোখ বুঝেই অন্য পাশে ফিরে বিড়বিড় করে বলল নিজ মনে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এই মেয়েটা আমায় ভালো থাকতে দিবে না। এমন কেন? এমন কেন এই মেয়েটা? এক নিমিষেই আমার মাথা পাগল করে দেয়! এই বেয়াদব মেয়েটা কি জানে তাকে দেখলে আমার হৃদয়ে কেমন পাগল পাগল বোধ হয়!”
কথাটুকু বলতে বলতেই দেখা গেল সে শুকনো ঢোক গিলল। যেহেতু এখন সে বের হবে নিজের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করল। ছুটির প্রতি ঝুঁকবে না এখন। ঝুঁকলেই বিপদ। বের হওয়া আর হবে না। এমনটা মনকে বুঝিয়েই দ্রুত নিজের ফর্মাল পোশাক নিয়ে তৈরি হতে লাগল। অতঃপর তাকে আরেকটু নিয়ন্ত্রনহীন বানাতে দেখা মিলল ছুটি সদ্যই গোসল সেরে বের হয়েছে।

চুলগুলো টাওয়ালে বাঁধা। পরনে কেবল একটা লং শার্ট এবং স্কার্ট। বুকে ওড়না নেই। সাদা শার্টটার উপরের বোতামটা খোলা থাকাতেই গলা এবং গলার নিচাংশে কিছুটা অংশ পানিতে ভেজা দেখা মিলল।আবির ভ্রু কুঁচকেই তাকায়। সে নিজেকে এত চেয়েও ভদ্র সাঁজাতে পারছে না এখন। অথচ বিয়ের আগের আবির কতোটা সংযত ছিল। ছুটির প্রতি এত প্রেম থাকা সত্ত্বেও সে কতোটায় এড়িয়ে চলত এই মেয়েটাকে। এখন কেন পারে না? আবিরের মন চাইল বরাবরের মতো অভদ্র রূপে ফিরতে । করলও তাই। অতঃপর শেষমেষ নিজেকে এইটুকু কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা না চালিয়ে পেছনে থেকে এক মুহুর্তেই আঁকড়ে ধরল ছুটিকে। ভেজা চুল গুলো খুলে দিল টাওয়াল ছাড়িয়ে। অতঃপর ভেজা কাঁধে, গলায় নাক ঘষতে ঘষতেই গলার অদ্ভুত টোন এনে বলল,

“ আমায় বের হতে হবে এই মুহুর্তে, অথচ তুই আমার প্রেমপ্রেম অনুভূতি এনে আমায় মেরে দেওয়ার চেষ্টা করছিস ছুটি। সাংঘাতিক মেয়ে তুই! ”
ছুটি শাওয়ার শেষে তখনও আবিরকে খেয়ালই করে উঠেনি। আকস্মিত এই ছোঁয়া এবং এই কথাগুলো কানে বাঁজতেই সে শিউরে উঠে। প্রিয় পুরুষের স্পর্শ বুঝে উঠে চোখ বুঝে নেয় সে। আবিরের ঠোঁটজোড়া তখন লাগামহীন ভাবে বিচরণ করছে ঘাড় কাঁধময়। হাত দুটো সাদা মিহি শার্টটার আড়ালে গিয়ে পৌঁছে ছুটির উদরে। ছুটি চোখ বুঝে এই পুরুষটার পাগলামো সহ্য করে। অতঃপর খেয়াল হলে আবিরের একটা ইভেন্ট থাকার কথা ছিল আজ। সেটা মনে করেই একটা সময় পর মিহি স্বরে বলল,
“ বের হতে হবে বললেন তো। দেরি হবে আপনার। ”

আবির বোধহয় নিজের মধ্যে তখন নেই। থাকলেও নিজের স্বত্ত্বা তখন প্রেয়সীতে মাতেয়ারা হতে ব্যস্ত। অন্য কোন কিছুকে সে এর চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইল না। দিল ও না। সে মাতাল মাতাল অনুভূতিকে সে রুখে দিল না একবারের জন্য ও। বরং প্রশ্রয় দিল। উম্মাদের মতো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে লাগল মেয়েটাকে। কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস স্বরে বলল,
“ আজ আর বের হওয়া সম্ভব না। তুই আমার বের হওয়াটাকে আটকে দিলি ছুটি।”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে শুধায়,
“ আমি? ”
“ তো কে? তুই ই তো অলটাইম আমার সর্বনাশটা ঘটাস। আমার শরীর মন সবকিছুতে পাগল পাগল অনুভূতি এনে দিস। ”
ছুটি এই কথাটায় হতাশ হলে যেন। উদরে বিচরণ কারী হাতদুটো এলোমেলো হতেই সে চেপে ধরল শক্ত করে। শুধাল,

“ আমি সর্বনাশ ঘটাই? ”
“ অবশ্যই! আমার উচিত এখন ইভেন্টে পার্টিসিপ্যান্ট করা, তা না করে আমি বউয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে পড়ে আছি তোর মধ্যে। ”
ছুটি বুঝল আবিরকে হয়তো সত্যিই এখন পাঠানো যাবে না। ভদ্র আবির অভদ্র হলে উচতি অনুচিত ভুলে যায়। যেমন এখন যে তার যাওয়া উচিত সেটা সে মাথাতেই নিচ্ছে না। বউ তো তার আছে। চলে যাচ্ছে না। ছুটির নিজেরও এই পুরুষটার সান্নিধ্যে পাগল পাগল লাগল, কোমর এক ভালো লাগা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল মনে। তবুও সে কিছুটা নিরাস স্বরে জানাল,

“ লেইট হবে আপনার। এক্ষুনিই আপনার যেখানে যাওয়ার ওখানে যাবেন। আমাকে ছাড়ুন। বিরক্ত হচ্ছি। ”
আবির এই ধাপে ভ্রু কুঁচকায়। কপাল কুঁচকে নেয়। ছুটি বিরক্ত হচ্ছে? তার ছোঁয়াতে? তার ভালোবাসাতে? ছুটি? সে বিশ্বাস করতে পারল না। ছুটিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাকাতেই সে এর বিপরীত দেখতে ফেল। প্রেমে আধ ডুবো এক তরুনী মনের দেখা মিলল যেন। আবির জানে সে ছুটিকে খুব ভালো বুঝে। তাই তো আবারও আঁকড়ে নিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

“ অথচ তোর মন বলছে তোর আমাকে চাই। উল্টোপাল্টা বলে মাথা খারাপ করবি না বোকাপাখি। ”
ছুটি ফের এই পুরুষটাকে ছাড়াতে ধাক্কা দিল। দূরে সরে বলল,
“ দূরে সরুন! যেখানে যাওয়ার দ্রুত যান।আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না, আছি। ”
আবিরের কেন জানি এই ধাক্কাটা ভালো লাগল না। ছুটি কি তার প্রতি প্রেম হারিয়ে ফেলছে? তার ছোঁয়াতে বিরক্ত হচ্ছে? পুরুষালি ইগোতে বড্ড লাগল যেন এই প্রত্যাখাস। তবুও শুধাল,
“ তুই কোথাও চলে না গেলেও আমার এখন তোকে লাগবে। বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করবি না। আমি জানি তোর মন ও চায় এইমুহুর্তে তোর আমার কিছু একটা ঘটুক। একশো ভাগ সম্মতি তোর আছে।রাইট তো? ”
ছুটি অন্যদিক ফিরল।মিহিস্বরে শুধাল,

“ ইভেন্টে পার্টিসিপেন্ট করে আসুন। এরপর আমাকে লাগলে আমি ভেবে দেখব কিছু একটা ঘটুক তা চাই কিনা। ”
আবির এবারও ভ্রু কুঁচকে নিল। ভেবে দেখবে মানে? যে মেয়ে সে বলতে আজীবন পাগল সে মেয়ে তার কাছে ঘেষতে হবে কিনা এটা ভেবে দেখে? বাহ! আবিরের ইগোতে এবার পুরোপুরি লাগল যেন। শুধাল,
“ ভেবে দেখবি মানে? তুই আমার কাছে আসতে ভেবে চিন্তে আসিস? আমি কি তোর অসুবিধা হলে কাছে ঘেষি? আমি তোর মন বুঝি না? কি বুঝালি তুই কথাটা দ্বারা? জোরজবরদস্তি করি আমি?তুই দয়া করে আমার কাছে আসিস? ”

ছুটি ছোটছোট চোখে তাকায়৷ কি বলল,কি হয়ে গেল। আসলেই তো খারাপ লাগার কথা পুরুষটার। সে ওভাবে না বলে বুঝিয়ে বললেই বোধহয় হতো। ওভাবে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে না দিলেও তো পারত৷ বুঝানোর ন্যায় বলল,
“ তেমন কিছু না। প্লিজ বুঝুন, আপনার দেরি হচ্ছে।এমন করলে তো জব আর থাকবে না আপনার। ”
“ না থাকলে নেই। লাগবে না জব! বাংলাদেশ ফিরব আমি। কিচ্ছু লাগবে না আমার।”
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়৷বলল,

“ মানে? ”
“ নাথিং! ”
“ তার মানে যাবেন না ইভেন্টে? তাই তো? ”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ আমার লাইফে তার চেয়েও বড় ইভেন্ট আয়োজিত হয়ে গেল এই মুহুর্তে। আমার বউ নাকি আমার কাছে আসতে হলে ভেবে চিন্তে দেখে আমায় সিদ্ধান্ত জানাবে? হাও চমৎকার বাক্য!আমি কাছে ঘেষলে সে বিরক্তবোধ করছে! ওয়াও! এর চাইতে বড় ইভেন্ট আর আছে? ”

বাইরে বর্ষণ হচ্ছে ক্রমশ।বাসায় আজ সিয়া একা। বাকি মেয়েরা বাইরে গেছে। সিয়া জানালার ধারে তাকিয়ে নির্নিমেষ তা তাকিয়ে দেখল। নিরব থাকা এক বালিকার দুঃখ কি কখনো কেউ বুঝে উঠেছে এই পর্যন্ত? কেন সে সাদের প্রেমের পড়ল? কেন সে সাদকেই মন দিতে গেল? সিয়া ছোটশ্বাস টানে। হুট করেই মন খারাপ ভুলতে সে ব্যাগ থেকে বের করল একটা লাল পেড়ে কালো শাড়ি । সেটা গায়ে জড়িয়েই কপালে একটা টিপ গুঁজল,চোখে কাজল আর পায়ে আলতা। এই মন খারাপের বর্ষনেও সে এই সাঁজ নিয়ে আয়না দেখল। হাসল মৃদু। অতঃপর পা বাড়িয়ে রান্নাঘরটায় গেল। একবার সাদ বলেছিল তার বর্ষার মাঝে খিঁচুড়ি খেতে দারুণ লাগে। তারপর কত কষ্ট করে যে সিয়া খিঁচুড়ি রান্নাটা শিখল।সিয়া হাসে। আজও ইচ্ছে হলো সাদের জন্য খিঁচুড়ি করতে।যেই ভাবা সেই কাজ। গেল রান্নাঘরে।

যেহেতু দুই তিনজন মেয়ে একসাথে থাকে এই তাই তেমন জিনিসপত্র তাদের নেই। কয়েকটা হাড়িপাতিল এই যা। সিয়া ছোটপাতিলটায় খিঁচুড়ি চাপাল। রান্নার সব উপকরণ না মিললেও যা যা পাওয়া গেল তা দিয়েই রান্না করল সে। শেষে পাতিল নামাতে গিয়ে তার হাতে গরম পাতিলটা লেগে অল্প পুড়েও গেল হাতে। সিয়ার বোধহয় ব্যাথাটা বোধগম্যও হলো না। ছোট্টশ্বাস ফেলে সে বক্সে বুনা খিচুড়ি নিল। তারপর কি বুঝেই পা বেয়ে নিচে গেল। সিঁড়ি বেয়ে সাদদের বাসাটায় গিয়েই কলিংবেল বাঁজাল। এবং পরমুহুর্তে দরজাটা খুললও সাদ। সিয়াকে এই অবস্থায় দেখে কিঞ্চিৎ চোখ নামিয়ে তাকায় সে৷মেয়েটার প্রতি তার সদ্য মায়া জম্মাচ্ছিল।

আদুরে এক অনুভূতি বোধহয় জমাট বাঁধছিল হৃদয়ে।হয়তো ভালোবাসা না তা, তবে একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রনা যেহেতু সে জানে সেহেতু এই মেয়েটার একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রনা দেখেও তার অপরাধবোধ হতো। যন্ত্রনা হতো। কত বুঝাল মেয়েটাকে। যাক অবশেষে ভাগ্যিস মেয়েটা বুঝতে শিখেছে। সাদ ছোটশ্বাস টানে। তাকিয়ে দেখে সিয়া শাড়ি পরেছে। পরনের শাড়িটায় খুব ভালো মানাল তাকে নাকি সিয়াকে সবসময়ই শাড়িতে অপরূপ বোধ হয় তা সাদ বুঝে উঠল না। সেদিনও সিয়াকে শাড়িতে দেখে সে এইটুকু স্বীকার করেছে এই মেয়েটা সত্যিই সুন্দরী এক রমণী। সেই প্রথমই সে অনুভব করেছে সেই এই পৃথিবীতে কত সুন্দর এক রমণীকে অবহেলায় রেখেছে। সাদ চায়নি অবহেলায় রাখতে তবুও অবহেলিত হতে হয়েছে। এইজন্য তো সে কত বুঝাল মেয়েটাকে। সাদ কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,

“ কিছু বলবে সিয়া? কিংবা কিছুর দরকার?”
সিয়া হাসল। মিষ্টি করে জানাল,
“ খিঁচুড়ি রান্না করেছিলাম সাদ ভাই। বাইরে বর্ষা। বর্ষা আর খিঁচুড়ি কম্বিনেশন টা ভালো তাই না?”
গম্ভীর স্বরে উত্তর এল,
“ হু ভালো। ”
সিয়া হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে বলল,

“ আপনার বন্ধু কোথায়? উনি বলেছিলেন খিঁচুড়ি খেতে উনি বেশ পছন্দ করেন। ”
সাদের হুট করেই মাথা খারাপ লাগল। এই মেয়েটাকে এত বলার পরও সে নিলয়ের সাথেই ঘুরঘুর করছে। তার সামনেই। আজকাল তার মেজাজ খারাপ খারাপ লাগে। কানের কাছে নিলয়ও সারাক্ষণ বলে বেড়ায় সিয়ার এইসেই সম্পর্কে৷ সিয়াও নিলয়কে খুঁজে। কেন খুঁজে? সাদের তখন কেমন যেন ইর্ষা হয়৷ কেন হয় সে নিজেও জানে না। বলে,
“ এই জন্যই রান্না করেছো? ”
“ হ্যাঁ, হ্যাঁ। এইজন্যই। উনাকে একটু ডেকে দিবেন? উনার জন্য খিঁচুড়ি আনলাম। ”
সাদ হুট করেই একটা মিথ্যে বলল,
“ ওর পেট খারাপ করছে। খিঁচুড়ি খেতে পারবে না। ”
“ পারবে, আপনি একটু তাকে ডেকে দিন না।”
সাদ ডাকল না। যদিও নিলয় বাসাতেই আছে। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে কারণ আজ শুক্রবার! সাদ একবার পিছু ফিরে জানাল,

“ বাসায় নেই। বাইরে গেছে ও।আমার কাছে দিয়ে যেতে পারো। দিয়ে দিব পরে। ”
সিয়া এগিয়ে ধরে বলল,
“ আচ্ছা, মনে করে দিবেন কিন্তু। ”
“ হু। ”
সাদ নিল। সে মুখে বললেও সে মোটেও এই বাক্সটা নিলয়কে দিবে না। মুখ গম্ভীর রাখল। পরমুহুর্তেই খেয়াল করল সিয়ার হাতের দিকে একটু লালচে পোড়ার মতো হয়ে আছে। বলল,
“ হাত পুড়ল কিভাবে? ”
সিয়া তাকাল। একটা হাসি দিয়ে বলে,
“ পাতিল নামাতে বোধহয়। ”
সাদ শক্তস্বরে বলল,

“ কেউ খিঁচুড়ি পছন্দ করে বললেই তার জন্য রান্না করতে হবে এমন কোন কথা নেই। দাঁড়াও। ”
এটুকু বলেই সে রুমে গেল। একটা মলম আনল। তা থেকে একটু খানি নিয়ে সিয়ার হাতটা টেনে লাগাতে লাগল। এবং বলল,
“ এরপর থেকে সাবধানে কাজ করবে। একা একা কিছুই তো ঠিকভাবে করতে পারো না, তবুও এসেছো একা থাকতে। ”
অতঃপর যখন লাগানো শেষ তখন সিয়া এক টুকরো ভালো লাগার অনুভূতি নিয়ে পিছু ঘুরল। তার সত্যিই ভালো লাগছে। মন খুশি লাগছে। এই খুশিটা প্রকাশ করে ফেললে যে হেরে যাবে। সে চলে যেতে নিতেই সাদ ফের বলে,
“ শোনো? এরপর থেকে আর ব্যাচেলর বাসার সামনে ঘুরফির করবে না। এভাবে সেঁজেগুজে তো একদমই নয়। ”
সিয়া ঘাগ বাঁকিয়ে তাকায়। বলে,

“ কেন? ”
সাদ শুধায়,
“ লোকে খারাপ বলবে। আমি চাই না তোমার নামে কেউ খারাপ বলুক সিয়া। ”
“মনে রাখলাম। ”

রাহা টিপটিপ পায়ে রোহানদের অফিসে গেল। যেহেতু বিজন্যাস পার্টনার তার দাদাজানও সেহেতু আসার অধিকার তার আছেই তো।সে পরিচয়েই সে আসল। সে যে রোহানের স্ত্রী তা বলল না। মুখে মাস্কও লাগাল এই কারণে।পরনে একটা ফতুয়া আর স্কার্ট পরেই এল। গলায় জর্জেট ওড়না জড়ানো। অতঃপর পা বাড়িয়ে একে একে অফিসটা দেখতে লাগল সে। রোহানের কেবিনটা কোনদিকে তাও খুঁজল। অতঃপর খুঁজেও পেল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো কেবিনটা কাঁচের, আর বাইরে থেকেই সবটা দেখা যায়। যার দরুণ দেখা গেল রোহান কোন একটা মেয়ের সাথে কিছু আলোচনা করছে। রাহা বাইরে বসেই তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। কিসের মিটিং চলছে ভেতরে?এক পর্যায়ে মেয়েটা রোহানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েই কিছু একটা দেখাতে নিতেই চুলগুলো খুলে গেল। এ তো রীতিমতো মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে চুল গুঁছিয়ে নিতে গিয়েই রোহানের দিকে ঝুঁকে পড়তে নিল। মুহুর্তেই রোহান চেয়ার পিছিয়ে পিছু হটে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটা উষ্ঠা খেয়ে পড়তে নিল। রোহান হেসে হাত এগোল। উঠতে বলল বোধহয়। আবার পরমুহুর্তেই দেখা গেল হাত সরিয়ে নিল। রাহা এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে এসব দেখে যাচ্ছে। কিসের মিটিং? এতো রীতিমতো প্রেম চলছে। রাহার মাথা খারাপ লাগে। রোহানের পি এ টাকে খোঁজ করে ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞেসও করল,

“ আপনাদের স্যারের সাথে মেয়েটা কে? কিসের মিটিং করছে ভেতরে? কাইন্ডলি জানাবেন।”
ছেলেটা ভদ্রভাবে উত্তর করল,
“ একটা ডিল নিয়েই মিটিং হচ্ছে। আর উনি সাদিয়া ম্যাম। আমাদের কোম্পানির না তবে উনি স্যারকে পছন্দ করেন। সবাই ভাবে উনাদের মাঝে কিছু একটা আছেও বোধহয়! ”
রাহা দাঁতে দাঁতে চাপে। বিড়বিড় করে বলতে লাগে,
”বাহ! শ্লা বেই’মান! আমারে ব্যবহার করল! এতবড় সাহস। আমি কি নিষেধ করছিলাম তোর প্রেমিকা রাখতে? বেয়াদব লোক। প্রেমিকাও রাখলি আবার আমাকেও ইউজ করল! ”
মুখে বলল,

” আমি একটু দেখা করতে চাই আপনাদের স্যারের সাথে। বলুন না একটু জলদি মিটিং শেষ করতে। ”
ছেলেটা হেসে বলল,
” এভাবে তো বলা যায় না। আপনি একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ। ”
রাহা নিরস স্বরে জানাল,
“ ওকে! ”
অতঃপর অনেকটা সময় পর সে রোহানের সাথে দেখা করার সুযোগ পেল। সুযোগ পেয়েই ভেতরে ডুকল। চেয়ার টেনে বসে শুধাল,
“ কি সমস্যা? কল তুলছিলেন না কেন? ”
রোহান ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। এই মেয়ে অফিসে কেন এসেছে তা বুঝার চেষ্টা করে। বলল,
“ হঠাৎ এখানে? আর তুমি কল দিয়েছো? এমনি সময তো দাও না? ”
“হ্যাঁ। প্রয়োজন ছিল তাই। অন্যথায় দিতাম না। ”
রোহান হাসে। বলে,

“ প্রয়োজন ব্যাতীত ও এবার থেকে ঘন্টায় একবার করে কল দিবে। ওকে? ”
রাহা ফুঁসে উঠে বলে,
“ জীবনেও না। ”
“ দিবে। না দিলে আমি লোক রাখব কল দেওয়ানোর জন্য। ”
রাহা এমনিতেই রাগে ফুলছে।জানায়,
“ আপনার কথা মতো নাকি? বেশি নাক গলাচ্ছেন আমার লাইফে। কথা ছিল আপনি আপনার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, আমি আমার লাইফ নিয়ে। ”
রোহান বাঁকা হেসে জানাল,
“আছি তো। আমার লাইফ নিয়েই ব্যস্ত আছি। ”
“ কোথায়? ক্রমশ আমার লাইফে ডুকে পড়ছেন। ”
“ তুমিও আমার লাইফ নবনী। অস্বীকার করলে চলবে?
রাহা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,

“ ফ্লার্টিং এর মহারাজা রে! একদম ভালো করেছে আপু আপনাকে পাত্তা দেয় নি।ক্যারেক্টারল্যাস পার্সন। ”
লাস্টের শব্দটা রোহানের পছন্দ হলো না যেন। শুধাল,
“ রাগিও না। খারাপ হবে তাহলে। ”
“ হতে কি বাকি আছে? শুনুন? আমি বিজন্যাস জয়েন করব। দাদাজানকে বলব আজই। ”
” গুড ডিসিসন। কিন্তু বিজন্যাসের কি বুঝো তুমি? থাকো তো গান আর পড়ালেখা নিয়ে।”
রাহা ভ্রু কুঁচকে বলল,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৯

“ কে বলল বিজন্যাস করার জন্য আমি বিজন্যাস জয়েন করব? ”
“ তাহলে? ”
উত্তর এল,
“ অন্যকিছু করতে জয়েন করব। সিক্রেট! ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩১