প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩৬
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
একদম হুট করে এসেই অনুমতিবিহীন রোহান রাহার হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করল। এরপর চোখমুখ শক্ত রেখে হুট করেই কোলে তুলল রাহাকে। আকস্মিক ঘটনায় রাহা প্রথমে চমকে গেলেও পরের দফায় সে অফিসের সকলের সামনে এমন দৃশ্য ভেবে দ্রুত প্রতিবাদ করল। রোহানকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
“ এসব কি অসভ্যতা রোহান? নামান বলছি। সবাই কি ভাবছে? ছিঃ ছিঃ!”
রোহান শুনল না। রাহাকে নিয়ে একেবারে গাড়িতে বসল। অতঃপর গাড়ি চালিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বাসার সামনে আসল। তারপর কি বুঝে গাড়ি থেকে না নেমেই রাহার দিকে সরাসরি দৃষ্টি ফেলল। বলল,
“ একটা কথা বলব নবনী, রিয়েক্ট করবে না।”
“ কি? ”
রোহান গম্ভীর স্বরে জানাল,
“ হয়তো এ বাসা ছেড়ে চলে যাবে নয়তো এই বাসায় আমার বউ হয়ে থাকবে সারাজীবনের জন্য। কোনটা বেছে নিবে? ”
রাহা ফ্যলফ্যাল করে তাকায়। উত্তরে বলে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ আপনার বউ হয়েই তো আছি। ”
রোহান হাসল। কিছুটা ফিসফিস করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“ নাটক নাটক বউ না, সত্যি সত্যিই বউ। ”
রাহা এবারেও বোকার মতো বলল,
“ সত্যি সত্যিই তো আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। ”
রোহান ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে। ফের বলে,
“ এই বাসা ছেড়ে যাচ্ছো না এটাই তো মতামত তোমার? ”
“ তা কখন বললাম? ”
রোহানের উরুউরু মনটা আবারও গম্ভীর হলো। বলল,
“ যাচ্ছো তাহলে? ”
রাহা মুহুর্তেই বোমা ফাটানোর ন্যায় একটা উত্তর দিল,
“ আজকে যাওয়ার কথা ছিল আপুর বাসায়।”
রোহানের মুখচোখ শক্ত হয়ে এল। সে ভাবল রাহা সত্যি সত্যিই তাকে চাইছেে।তাই বোধহয় যায় নি। কিন্তু যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা ছিল এটা তো সে জানত না। বলল,
“ তাই নাকি? এই বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাহলে নিয়ে নিয়েছো? ভেরি গুড! চলো, দিয়ে আসি তোমায়। ”
রাহা মুহরর্তেই রোহানের মুখ চোখ পরখ করে শুধাল,
“ রেগে গেলেন নাকি? ”
রোহান হেসে বলে,
“ রাগব কেন? তুমি চলে যেতে চাইলে তোমাকে আটকানোর অধিকার আমার নেই। যদি থাকতে তাহলে অধিকার আমি গড়ে নিতাম। যায় হোক, তোমাকে এখানে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমি তোমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে দিতে বলছি আম্মুকে। পরবর্তীতে যাতে জিনিসপত্রের জন্য তোমাকে এই বাসা আর না মাড়াতে হয় ! ”
রাহা মুহুর্তেই একটু গলা উঁচিয়ে বলল,
“ মানে? আমাকে একেবারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন নাকি? আশ্চর্য!”
“ আমি পাঠাচ্ছি না, তুমি নিজে যাচ্ছো নবনী!”
“ মোটেই না। আমি শুধু স্নিগ্ধকে আর সিয়াকে দেখতে যাব ভাবছিলাম আজ। আপনি তো আমায় চিরজীবনের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ”
রোহান কথাটার উত্তর বুঝে উঠে হাসল। সে তো ভাবল রাহা একেবারেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। হেসে বলল,
“ চিরজীবনের জন্য থাকবে নাকি?ক্যারেক্টারল্যাস মানুষের সাথে তো তোমার থাকার ইচ্ছে নেই নবনী! ”
রাহা আবারও বলল,
“ অবশ্যই! একটা ক্যারেক্টারল্যাস ছেলের সাথে কেন থাকব? থাকার প্রশ্নই উঠে না। ”
” এই জন্যই বলছি চলে যাও। ”
রাহা মুখ কুঁচকাল। মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
“ আপনাকে কি চরিত্রবান পুরুষ বলে প্রশংসা করতে হবে মিঃ রোহান ফারাবী? ঢং করছেন না? তবে ঐ সাদিয়ার সাথে কম মিশবেন। নয়তো আমি সত্যিই আপনাকে ক্যারেক্টারল্যাসই ভাবব!”
স্নিগ্ধ ঘুমিয়ে আছে সিয়ার পাশে। দুইজনেই ঘুমাচ্ছে। এতক্ষন দুইজনের কত কত কার্যকলাপ।সুহা ওদেরকে একবার দেখে হাসল। সিয়াটা কতটা হাসিখুশি প্রাণবন্ত! কে বলবে এই মেয়েটা সুইসাইড করতে চায়? সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুমে এসে সময় দেখে বুঝল রাত দশটা।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড়ো হাওয়া! অথচ স্বচ্ছ ফিরেনি এখনো। কিছুটা চিন্তা হতেই সে কল করল স্বচ্ছকে। অন্যপাশ থেকে স্বচ্ছ কল তুলল না। সুহার কপালে চিন্তারেখা যখন একটু গাঢ় হলো ঠিক তখনই কলিংবেল বাঁজল। সুহা দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। অতঃপর দরজা খুলে ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বচ্ছকে দেখে কপাল শিথীল করল। শান্তস্বরে শুধাল,
“ কল দিলাম, ধরলেন না তো। ”
স্বচ্ছ অল্প হাসে সুহাকে দেখে। বলে,
“এসে গেছিলাম তো,তাই। ”
“ ওহ। ”
স্বচ্ছ রুমে এসে ভেজা শার্টটা খুলতে নিতে নিতেই বলল,
“ সিয়া কি করছে? সারাদিন ভালো ছিল?
সুহা উত্তর দিল,
“ হ্যাঁ, হাসিখুশিই ছিল। এখন তো ঘুমোচ্ছে। ”
“ স্নিগ্ধ কোথায়? আম্মুর কাছে? ”
“ আম্মুও ঘুমিয়েছে। স্নিগ্ধও সিয়ার সাথে ঘুমাচ্ছে। ”
স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। ফের শান্ত গলায় বলে,
“ আমি ভেবে পাই না, সিয়াটা এমন কেন করল সুহাসিনী? ওকে কি আমরা কম আদরে রেখেছিলাম? ”
সুহা অল্প হাসল। স্বচ্ছর ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“ ছোটমানুষ তো ও। করে ফেলেছে। এরপর থেকে আর করবে না। ”
“ তুমি শিওর করবে না? ”
সুহা হেসে বলে,
“ শিওর! এবারে ফ্রেশ হয়ে আসুন স্বচ্ছ, খাবার বাড়তে যাচ্ছি৷”
সুহা কথাটা বলেই তোয়ালে দিল স্বচ্ছকে। পা বাড়াতে নিল কিন্তু পা বাড়ানো হলো না। স্বচ্ছ হাত আগলে ধরল। টান দিয়ে নিজের সাথে আগলে নিয়ে জড়িয়ে ধরল সুহাকে। পরমুহুর্তেই নাক ঘষল সুহার ঘাড়ে। শুধাল,
“ সুহাসিনী? আমার বোধহয় তোমাকে ভালোবাসা প্রয়োজন। ক্লান্তি মিটে যদি… ”
সুহা হাসল। স্বচ্ছর চোখে চোখ রেখে শুধাল,
“ ক্লান্তিতে মানুষের ঘুম পায় স্বচ্ছ। আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে? ”
“ হচ্ছে, কারণ সামনে তুমি আছো। ”
“ ফ্রেশ হয়ে…”
“ সবসময়ই ফ্রেশ সুহাসিনী! ”
কথাটা বলেই হাসল স্বচ্ছ। ঠোঁট এগিয়ে আঁকড়ে ধরল সুহার পাতলা ঠোঁটজোড়া। অতঃপর কিয়ৎক্ষন সেই ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে ডুবতেই কানে এল পাশের রুম থেকে স্নিগ্ধর কান্নার আওয়াজ। সুহা মুহুর্তেই ঠেলে সরিয়ে দিল স্বচ্ছকে। দ্রুত পায়ে দৌড়ে চলে গেল রুমের বাইরে। স্বচ্ছ সেদিকে ছোটছোট চোখে তাকায়। বিড়বিড় করে,
“ কপাল আমার! ”
মাঝখানে প্রায় তিনমাস সময় গিয়েছে! তিনমাস! সিয়া এই তিনমাস কোন যোগাযোগ করেনি সাদের সঙ্গে। একটা কল অব্দি দেয়নি সে, একটা ম্যাসেজও না। আজ কি বুঝে সে আগের বাসাটায় গেল বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করার বাহানা দিয়ে। যদিও তার জিনিসপত্র আগেই তার আব্বু আম্মু নিয়ে এসেছিল। সিয়া বারবার চাইল একবার যদি এখানে সাদের সাথে দেখা হয়ে যায়? একবার যদি সাদের দেখা পায়? অথচ পেল না। মাঝপথে দেখা মিলল নিলয়ের সাথে। যে নিলয় সিয়ার পিছুপিছু ঘুরত, সে নিলয় এমন একটা ভাব দেখাল যেন সে চিনেই না সিয়াকে। সিয়া ভ্রু কুঁচকায়।সাদের খোঁজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে থেকেই কথা বলল,
“ কেমন আছেন? ”
নিলয় উত্তর করল,
“ খুব ভালো ছোট আপু। ”
ছোট আপু? সিয়া কপাল কুঁচকায় এবারে। পা বাড়িয়ে হাঁটে। অপরদিকে নিলয় যেতে যেতেই বিড়বিড় করে,
“ যাওয়ার সময় সাদ যে ঝগড়াঝামেলা করে গেল এই মেয়ের সাথে না মেশার জন্য। আরেহ আমি কি সিরিয়াসলি এই মেয়ের সাথে রিলেশনে যেতাম নাকি?জাস্ট পটাতেই তো চেয়েছিলাম। সাদ তো এই নিয়ে ঝগড়া করে চলেই গেল। বন্ধুত্বটা নষ্ট হলো মাঝখান দিয়ে। আমি কি জানতাম এই মেয়ের সাথে সাদের কিছু চলছে? জানলে আমি সাদের গার্লফ্রেন্ডের দিকর তাকাতাম? কক্ষনো না! আর যায় হোক বন্ধুর প্রেমিকা নিয়ে টানাটানি করার মতো ছ্যাঁচ’ড়া আমি নই। ”
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতেই নিলয় এগিয়ে যেতে নিল। পেছন থেকে সিয়া ফের বলল,
“ শুনুন? ”
নিলয় তাকায়। বলে,
“ হ্যাঁ।”
সিয়া নিজেকে না দমিয়ে এবারে বলেই ফেলল,
“ সাদ ভাই কেমন আছে? ”
সেদিনের পর সাদের সাথে মোটামুটি একটা ছোটখাটো ঝামেলা নিলয়ের হয়েছিল। সাদ বারবার সিয়ার সাথে তাকর মিশতে বারণ করছিল। মেস ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়েও৷ অতঃপর এক পর্যায়ে ঝামেলা গুরুতর হলে সাদ বলে বসে সিয়ার সাথে তার কিছু আছে। তাই নিলয়কে এতবার নিষেধ করছে। সে থেকে নিলয় ধরেই নিয়েছে যে এরা প্রেমিক প্রেমিকা। অথচ সাদ কেমন আছে সেটা তাকে জিজ্ঞেস করছে কেন সিয়া? নিলয় ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ সাদ তো এখানে থাকে না আর। চলে গেছে মাস তিনেক আগে। কেন? তুমি জানো না? ”
সিয়ার মুখটা মুহুর্তেই নিভে এল। বলল,
” না তো। কোথায় গেছে?”
নিলয় উত্তরে বলল,
” এই শহর ছেড়ে ওর নিজের শহরে চলে গিয়েছে।”
এই তিনমাসে রোহান আর রাহার সম্পর্কটা সুন্দর হয়েছে আগের চেয়েও অনেকটাই। কখনো সূক্ষ্ম অপ্রকাশিত প্রেম,কখনো টুকরো টুকরো অনুভূতি, কখনো হুটহাট বেসামাল স্পর্শ! রাহার মাঝেমাঝে মনে হয় এই রোহান পুরুষটা চমৎকার! মাঝেমাঝেই মনে হয় সে এই পুরুষটার প্রেমে ডুবুডুবু হয়ে মরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই তার আপসোস হয়। কেন রোহান তার প্রতি প্রেম প্রকাশ করে না? মাঝেমাঝে তার মনে হয় রোহান তার খুব যত্ন করে, খুব ভালোবাসে। তার প্রতি রোহানের অনুভূতি খুবই গাঢ়! অথচ এসবের কিছুই তো রোহান প্রকাশ করে না মুখে। যদি তার প্রতি অনুভূতি থাকেও তবে কেন প্রকাশ করল না এখনো? বিয়ের আগে অতোশতো শর্তর জন্য কি? কি প্রয়োজন ছিল দুইজনের অতগুলো শর্ত রাখার?
এই শর্ত গুলোর জন্য কি তারা স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন কাঁটাবে কখনো? রোহান সে শর্তগুলো ভাঙ্গবে বলেও কোন সাড়াশব্দ আর করেনি সেসব সম্বন্ধে। রাহা এসবে ভাবতে ভাবতেই গোসল সেরে ভেজা চুলগুলো মেলে দিল পিঠময়। বিছানার এককোণে রোহানকে ল্যাপটপে মনোযোগী হয়ে কিছু দেখতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে । তারপর আশপাশে ঘুরঘুর করল কিয়ৎক্ষন। কিন্তু রোহান একবারও চোখ তুলে চাইল না৷চাইল না বললে ভুল, রোহান তাকিয়েছে অনেকবারই তবে রাহার আড়ালে। অন্যদিকে রাহার কৌতুহল বাড়ে। কি এমন দেখছে এই ছেলে ল্যাপটপে ? পাশে গিয়ে দুয়েকবার উঁকি দিয়ে দেখার প্রেচেষ্টা চালায় সে।
রোহান তা বুঝে নিজে নিজেই আড়ালে হাসে। মেয়েটাকে সদ্য গোসল করে বের হলে তার কাছে আস্ত আদর আদর একটা বাচ্চা লাগে। মুখটা কি তুলতুলে পুতুলের ন্যায়। ইচ্ছে হয় টুপ করে টেনে এনে দুয়েকটা চুমু বসিয়ে দিতে। এই তিনমাসে অলেরেডি দশ-এগারো দিন যে সে এই কান্ডটা ঘটিয়ে ফেলেছে তা ভেবেই রোহান প্রতিবার নিজেকে সংযত করে। তাকায় না অব্দি, তাকালেই যেন সর্বনাশ। অথচ এই মেয়েটা যেন তা মানতে নারাজ। একদম তার সামনে এসেই ঝুঁকে দেখল ল্যাপটপের স্ক্রিন। মুহুর্তেই মিষ্টি এক সুভাস নাকে এসে লাগল রোহানের। ভেজা চুলের ভাজে উম্মাদনা ভেসে বেড়াচ্ছে যেন। রোহান চোখ বুঝল। ততক্ষনে রাহা দূরে গিয়েছে। জানালার ধারে গিয়ে ভেজা চুলগুলো সামনে এনে বাইরে তাকাল।
রোহান তখনই চোখ বুঝে শুকনো ঢোক গিলে। মসৃন পিঠ আর কাঁধের কিছুটা দৃশ্যমান হতেই সে সংযত হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ছিটকে সরে গেল। রোহান এগোল ঠোঁটে ক্রুর হাসি নিয়ে। দৃষ্টি মারাত্মক নেশালো যেন।অতঃপর সদ্য গোসল সেরে আসা রমণীটির কোঁমড় আঁকড়ে ধরে দুইজনের দূরত্ব গুঁছাল। নিজের দিকে ঘুরিয়ে অপর হাতে প্রিয় নারীর আদুরে মুখে হাত বুলাতে বুলাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে শুধাল,
“ আর ইউ ট্রাইয়িং টু সিডিউস মি ডিয়ার?
লিসেন, এভাবে ভদ্র রোহান ফারাবীর যৌবনের চাহিদা বাড়াতে থাকলে কিন্তু বিপদ তোমারই।বুঝে নিও! ”
রাহা দৃষ্টি স্থির করল রোহানের চাহনিতে। রোহানের অদ্ভুত বাঁকা হাসিটা কোথাও যেন ছুঁয়ে গেল তাকে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো। হৃদস্পন্দন বাড়ে। রোহান হাসল। এই পর্যন্ত হয়ে যাওয়া বার কয়েক ভুলের মতো এবারও সে মুখ নামিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল রাহার মুখে চোখে। বার কয়েক চুম্বন এঁকে হালকা হেসে শুধাল,
“ আমার কি উচিত তোমাকে বিপদে ঠেলে দেওয়া নবনী?”
রাহা কেঁপে উঠে যেন। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“ হ্ হ্ হু?”
রোহান ঠোঁটে সে বাঁকা হাসিটা রেখে শুধাল,
“ তোমার একটা ছোট্ট স্নিগ্ধ চাই, তাই তো? ”
রাহা উত্তর করতে পারে না। লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠে যেন তার। অথচ এই বাচ্চার বিষয়টা সে একদিন লজ্জা না পেয়েই বলেছিল। রোহান হেসে ফের বলে,
“ তোমার ইচ্ছেটা আমার পূরণ করা উচিত বলো? ”
” মানে? ”
রোহান ফের বলল,
“মানে হলো, বিয়ের সমস্ত শর্ত মুঁছে নিতে চাইছি মিসেস রোহান ফারাবী। সম্পূর্ণ রূপে আমার মিসেস হতে আপনার কোন প্রবলেম নেই নিশ্চয়? আরো ক্লিয়ার করে বলছি, আপনাকে দেখে আজকাল আমার খুবই সংযতহীন হতে ইচ্ছে হয়। আপনার সামনে এক উম্মাদ প্রেমিক হিসেবে ধরা দিতে ইচ্ছে হয়। আমার কি উচিত নয় আপনাকে নিজের করে চাওয়া?”
রাহা উত্তর করতে পারে না। টের পায় তার গাল উষ্ণ হয়ে উঠেছে। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। রোহান রাহাকে চুপ থাকতে দেখে থুতনিতে আঙ্গল ঠেকায়। বলে,
” নবনী? তোমার অনুমতি ব্যাতীত এগোব না আমি। যদি তুমি চাও তবেই এগোব। উত্তর দাও। ”
রাহা বেশ কিছুটা সময়ই চুপ থাকল। সামনের অস্থির পুরুষটার অস্থিরতা সম্বন্ধে একবারও চিন্তা না করে চুপ থাকল। অতঃপর বলল,
“ ভালোবাসেন আমায়?অনুভূতি আছে আমার প্রতি? ”
রোহান গাঢ় স্বরে জানায়,
“ তুমি এর উত্তরটা জানো।”
রাহা আসলেই জানে? হ্যাঁ। জানে তো। তবুও সে চায় রোহান বলুক। মুখে বলুক।
বলল,
“ জানি না। ”
রোহান হাসে ঠোঁট বাঁকিয়ে। বলে,
“ জানো ডিয়ার! নাও আন্সার মি।”
রাহা শুকনো ঢোক গিলে। বলে,
“ যদি আমার প্রতি আপনার অনুভূতি থাকে তবেই এগোবেন…. ”
রোহান হাতের বাঁধন শক্ত করল। কিছুটা ঝুঁকে কানের কাছে ফিশফিশিয়ে বলল,
“ বেশ! এগোলাম। ”
রাহা ফের বলতে নিল,
“ যদি আমাকে ভালোবাসেন ত…..”
রোহান মুহুর্তেই নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়াল রাহার গলার কাছে। দাঁতের ছাপ বসিয়ে কাঁমড় বসিয়েই উত্তর দিল,
“ ভালোবাসা মুখে না বলে কাজে বুঝাতে হয় নবনী। এতগুলো দিনেও তুমি তা বুঝে উঠোনি তা বললে ভুল। সুতারাং, আমি উত্তরটা হ্যাঁ’ই পেলাম তাই তো? ”
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩৫
রাহা উত্তর করতে পারল না। শুধু চোখমুখ খিচে ব্যাথা সহ্য করে নিল। অপরদিকে রোহান উত্তরটা হ্যা পেয়ে হাসল। নিজের বিয়ে করা বউটিকে সত্যি সত্যিই নিজের করে নিতে মরিয়া হলো। ফিসফিসিয়ে রাহার কানের কাছে বলল,
“ শেষমেষ তাহলে রোহান ফারাবীর জীবন যৌবনের চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব তোমায় নিতেই হচ্ছে? ”