প্রেম ও অসুখ পর্ব ১০

প্রেম ও অসুখ পর্ব ১০
নবনীতা শেখ

সাঁঝ একটা ফেইক আইডি খুলেছে। নাম দিয়েছে সন্ধ্যাবতী। এই একাউন্ট দিয়েই সে তার লুকোচুরির খেলাটা চলমান রাখবে। স্বামী তো এমনি এমনি স্বামী হয়ে যায় না। তাকে টেস্টের ওপর রাখতে হয়। এই যেমন ধরুন, মাঝেমধ্যেই ফেইক আইডি দিয়ে একটু গুতিয়ে দেখা! আবার পকেট থেকে না বলে পয়সা সরালে কেমন করে, তা দেখা! মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করা, “চা খাবে?”
আবার এরকম অনেক ব্যাপার আছে। এতসব তো করার মতো সুযোগ সাঁঝের আসেনি। তাই হাতের নাগালে যেটা আছে, সেটাই সই!

সে আইডি খুলে টুকটাক গুছিয়ে নিল। প্রোফাইল পিকচারে দিলো একটা পদ্মফুলের ছবি। কভারে তার হাত-পায়ের ছবি। অন্যান্য তথ্য দিলো না। এই তো, এটুকু করেই সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বসল উনসত্তর হাজার ফলোয়ার বিশিষ্ট হেলথ নিয়ে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বয়ান দিতে থাকা ডাক্তার অনয় আহমেদ হৃদকে।
আর তারপর? তারপর ওভাবেই সঙের মতো পড়ে রইলো। জনাব যে তার ফলোয়ারলিস্ট চেকই করেন না, তা তো রানিসাহেবার অজানা। মোটামুটি সোশ্যাল সাইটে সাহেব একটু পরিচিত বটে। স্বাস্থ্যটিপস, হেলদি লাইফ স্টাইলের কারণ তো আছেই। সেই সাথে একটা ড্যাম কুল পার্সোনালিটি বহন করা অবিবাহিত থার্টি এইজড পুরুষটি একটা বড়ো সংখ্যক মেয়েরই কল্পনা করা বাস্তবিক পুরুষ!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাঁঝ ব্যাপারটা এই দেড়মাসে বার বার টের পেল, আর প্রতিবারই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতে লাগল। মেয়েরা কমেন্টবক্সে কী ন্যাকামো করে বাবারে! এই ফ্রেন্ড, ওই ফ্রেন্ডকে ট্যাগ দেয়! মেনশন করে কী লজ্জাজনক কথা! শরমে নাকি রাগে, কী কারণে যে কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে লাগে সাঁঝের, বেচারি তা টের পায় না।
সাঁঝ পুরো একটা দিনে অগণিতবার দেখে গেল, লোকটার তরফ থেকে কোনো নোটিফিকেশন এসেছে কি না! তার অনুসন্ধানে এক বালতি জল ও এক খাবলা গোবর। সাঁঝ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গোবল জল বানিয়ে তা নেপে নিল। এরপর আরও.. আরও গভীরভাবে দু’চোখ টানটান করে, একহাতে ক্রমাগত প্রোফাইল রিফ্রেশ করে দেখে যেতে লাগল “Request Cancel” থেকে “Friends” আসছে না কেন!
সে বুঝতে পারল, তার বুদ্ধি হাঁটুতে। সাঞ্জিনা আফরিন এক চরম লেভেলের উজবুক। তার নির্বুদ্ধিতা আকাশ ছুঁলো। এক বুক কষ্ট নিয়ে সে টের পেল, তার মতো অতিক্ষুদ্র প্রাণী, তার ওপর ফেইক আইডি, সাহেবের চোখের তলানিতেও তা পড়েনি। বুকের ব্যথা ও মনের অসুখ, তখন গভীর রাত, সাঁঝ ভীষণ আবেগী হয়ে অনুভূতির সর্বোচ্চ উপলব্ধি থেকে একটা টেক্সট করল। একটা কবিতা বলা যায় একে? নাকি প্রস্তাবনা? বা অনুমতি? নাকি ঐশ্বরিক প্রেমের এক অতিসত্বর বহিঃপ্রকাশ?

“মন্দতা মনকে গ্রাস করেছে,
সঞ্জীবিত সুরে সুখ ভেসেছে।
অস্তিত্বে এক অকস্মাৎ লহরী তুমি,
শোনো!
প্রেম ও অসুখের সন্ধি হয়েছে।”
রিপ্লাই পেল পরদিন মধ্যরাতে। তখন সাঁঝ গভীর ঘুমে। হৃদের সাথে তার কন্ট্যাক্ট নাম্বারেই কথা হয়। রাতে কথা বলতে বলতে মেয়েটা কখন যে ঘুমে কাদা, কেউ টের পায়নি.. সকালে ঘুম ভাঙল তার, নোটিফিকেশনের এহেন-তেহেন অবস্থা দেখে সাঁঝ বিড়বিড় করল,
-“জমিদারের বেটা! ফোনের ট্যাকা বেশি হয়ে রাখছে তোমার? অবশ্য ডাক্তার মানুষ। স্ত্রীকে হাত খরচের জন্য ত্রিশ হাজার দেও। তোমারে তো জমিদার না, “রাজামশাই! হুকুম করুন” বলে আমার লাফানো উচিত।”
সাঁঝ তা বলতে চেয়েও বলল না। দেখল কল কেটেছে শেষরাতে। আর তার ঘন্টাখানেক আগেই জনাব টেক্সটের রিপ্লাই দিয়েছে।

“Would you like to be my Virtual Wife?”
ছোট্ট একটা বাক্য। আটটা শব্দ মোটে। কোনো ন্যাকামো নেই, অনুভূতির বাড়তি প্রকাশ নেই। তবু সাঁঝের বুকের ভেতরটা ঝংকার দিয়ে উঠল। আর তারপরই মস্তিষ্ক চেঁচিয়ে উঠল,
-“স্বামী, তুমি জনে জনে বউ বানিয়ে বেড়াও নাকি?”
সাঁঝ তা লিখতে পারল না। অত্যন্ত কষ্টের সাথে কাঁদো কাঁদো মুখে বিড়বিড় করতে করতে টাইপ করল,
-“I would!”

প্রেমাসুখের ভার্চুয়াল সূত্রপাতও এরপর ঘটেই গেল। আচ্ছা, হৃদ এ কথা কেন বলল? ও কি সঙ্গহীনতায় ভুগছে? আহারে! বেচারা স্বামী! বিবাহিত বউ থেকেও তুমি ব্যাচেলর লাইফ কাটাচ্ছ, কিং সাইজের বেডে কুইন ছাড়া ঘুমাচ্ছ! হৃদের মনের দুঃখ সাঁঝ বুঝল। ভাগ্যিস সে নিজেই টেক্সট দিয়েছিল! নয়তো তো বেচারা আরেক জনদরদীকে তার ভাগেরটা দিয়ে দিত। আচ্ছা.. ভার্চুয়ালে কি আরও বউ বানিয়ে রেখেছে নাকি? কী জানি!
এতসব ভাবনার মাঝে তার ফোনে সেট করা এলার্ম লাফিয়ে বেজে উঠল। থতমত খেল সাঁঝ। হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল বিছানার ওপর। এলার্মের টপিকে লেখা উঠল, “দাদাশ্বশুরের মনোরঞ্জন।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাঁঝ। ভোর হয়েছে। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে থ্রিপিস পালটে একটা লাল ও গোলাপি সমবায়ের তাঁতের শাড়ি পরে নিল। নাকে একটা ছোট্ট নাকফুল, হাতে দুটো সোনার বালা। নিজেকে আয়নায় দেখে তার কী যে আনন্দ লাগল!
বিয়ের তৃতীয় মাসে নিজেকে আক্ষরিকভাবেই তার স্বামীর বউ হিসেবে মন থেকে মানতে পারছে সাঁঝ। সেই সাথে তার জন্য সাজতে পারছে, তাকে মনে করে লজ্জাও পেতে পারছে। এই যে, এত এত পরিবর্তন! একদিনে ঘটেনি নিশ্চয়ই…

ঘড়িতে সাতটা বাজে। সাঁঝ উঠে নিচতলায় এলো। আফিয়া বেগমসহ সকলে ওকে দেখে ভীষণ চমকে গেলেন। একদেখায় চোখ সরিয়ে নেওয়ার মতো দুষ্কর সুন্দরী সাঁঝ কোনোদিনও ছিল না। বলা বাহুল্য, হৃদের পাশে সাঁঝকে বিশেষ মানাতো না বলেও পরিবারের একপাক্ষিক সদস্যদের গোপনে ছোঁড়া কিছু মন্তব্যও রয়েছে। মেয়েটার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। ছোট্ট মুখটায় প্রতিফলিত আছে তার আত্মগরিমা, অভিমান ও সরলতার মিশ্রণ।
কিন্তু মেয়েটাকে যখন গভীরভাবে লক্ষ করা যায়! বিশেষ করে সবসময় টলটমে চোখদুটোর দিকে একটুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে! বিশেষ কিছু তো আছে এ মেয়ের মধ্যে। সেই বিশেষ কিছুটা এতটাই বিশেষায়িত যে, সহজে কেউ বুঝতে পারে না।

এই যেমন এখন গুছিয়ে একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে, চুলগুলো খোঁপা করে রেখেছে, মুখে আহামরি প্রসাধনী নেই, সামান্য স্বর্ণ আর এই তো.. সর্বাঙ্গে উপচে পড়ছে স্বঅভিমান! আফিয়া বেগমের ধারণা, হৃদের পাশে এই মেয়ে ছাড়া আর কাউকেই মানাতো না। এই মেয়েটা না থাকলে হৃদকে সে আজীবন ব্যাচেলর কমিটির সভাপতিই বানিয়ে রাখতেন নিশ্চিত।
সাঁঝ বলল,
-“চা বানাই? খাবে তোমরা?”
বাড়ির বউ-বাচ্চারা কেউ সকালে চা খায় না। রান্না বসানো হয়েছে। আফিয়া বেগমের কিছু বলার আগেই ছোট চাচি বলে উঠলেন,

-“পরে আসো, বউ। দেখো না কাম করতেছি?”
আফিয়া বেগম দ্রুতহাতে ভাজা মাছগুলো নামিয়ে কড়াইটা সরিয়ে সাঁঝকে বললেন,
-“আমি বানিয়ে দিচ্ছি, মা।”
সাঁঝ এগিয়ে গেল, মুচকি হেসে বলল,
-“না, মা। আমি বানাচ্ছি। দাদুর জন্য বানাব।”
-“ওহ আচ্ছা। তাহলে তুমিই বানাও। আমি সব এগিয়ে দিচ্ছি।”
বাকি জা-দের মুখের বিদিকিচ্ছিরি মার্কা অভিব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখলেন না আফিয়া বেগম। ওদিকে তাদের কোঁচকানো চোখ-মুখ যেন শব্দ করেই বলছে,
-“আর কারো পোলারা বিয়ে করে না? একাই পোলা বিয়া করাইছে দুনিয়াতে।”
অথচ দুই বউয়ের কারোরই সাহস নেই, বড়ো বউয়ের মুখের ওপর একটা শব্দ করা। কাজেই চুপ থাকাই ভালো। সাঁঝ ব্যাপারগুলো লক্ষ করল। সেই সাথে সংসার জীবনের প্রথম টিপস নিয়ে নিল! নিজেকে ঠিক ওরকম বানাও, লোকে একটা কথা বলতে গেলেও যেন শতবার ভাবে! যেমনটা তার স্বামী ও শাশুড়ির সুদৃঢ় ব্যক্তিত্ব!
সাঁঝ চা বানিয়ে আবু বকর সাহেবের রুমে চলে এলো। দরজায় নক করল সে। মৃদু আওয়াজে বলল,

-“দাদু, আসব?”
ও-ধার থেকে শক্ত কণ্ঠে জবাব এলো,
-“না।”
সাঁঝ তবুও গেল। জানালার সামনের একটা চেয়ারে বসে আছেন তিনি। হাতে খবরের কাগজ। চোখে সোনালি চৌহদ্দির চশমা। তিনি টের পেলেন সাঁঝ প্রবেশ করেছে। তবে কিছু বললেন না।
সাঁঝ গুটিগুটি পায়ে ভেতরে চলে এলো। চায়ের কাপটা সামনের টি-টেবিলে রেখে আরেকটা চেয়ার টেনে তার পাশে বসল। শান্ত স্বরে ডাকল,
-“দাদু..”
বকর সাহেব এদিকে তাকাতেও অনিচ্ছে প্রকাশ করল,
-“আমার নাতিদের সংখ্যা সীমিত।”
-“আমি আপনার বড়ো নাতির বউ।”

বকর সাহেব এবার তাকালেন। এবং দুই সেকেন্ড দেখেই চোখ সরিয়ে নিলেন। তার এমন মুখভঙ্গি স্পষ্টত বলছে, “ওহ আচ্ছা কন্যা? তোমার সুবুদ্ধি উদিত হয়েছে? এতদিন তবে কাকে ধার দিয়ে রেখেছিলে?”
তবে শব্দ অপচয় করলেন না তিনি। সাঁঝ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগল,
-“দাদু, আমরা মানুষ..জন্মের পর থেকেই ভুল করতে থাকি। ভুল থেকে শিখতে থাকি। ভুলের ঊর্ধ্বে তো নই। আমার যখন বিয়ে হলো, আমার বয়স ছিল আঠারো। আমি জানি, অন্যান্য মেয়েরা ষোলোতেই যথেষ্ট ম্যাচিউর হয়ে ওঠে, সংসার সামলানোর মতো জ্ঞান তাদের ওই বয়সেই হয়ে যায়। আবার কিছু মেয়ে আছে, যাদের বিশ বছরেও ম্যাচিউরিটি আসে না। আমি দ্বিতীয় ক্যাটাগরির মেয়ে। তাই যখন এই বাড়িতে প্রথম পা ফেলেছিলাম..”
সাঁঝ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আবু বকর সাহেবের মুখের দিকে একবার তাকাল। তার চেহারার কাঠিন্য আস্তেধীরে কোমল হয়ে উঠছে। তবে এখনো শক্ত থাকার অভিনয় করে যাচ্ছেন। সাঁঝ ব্যাপারটা লক্ষ করে বলল,

-“আমি যখন এই বাড়িতে প্রথম পা ফেলেছিলাম, তখন আমার বয়স আঠারো থাকলেও, মানসিক দিক থেকে অপরিপক্ক ছিলাম। বাড়ির বাইরে প্রথম পা ফেলা! মা-বাবা, ভাই ছাড়া প্রথম কোথাও আসা.. কেমন মিশ্র অনুভূতি হয়েছিল! আমি সংসার সামলানোর মতো পরিণত হইনি তখনো। কিছু সমস্যার মুখোমুখি হলাম। বুক ফেটে চিৎকার আসছিল। বাবা-মা, ভাইয়া.. কাউকেই আশেপাশে পেলাম না। মনে হচ্ছিল, তারা আমাকে এক নির্জন দ্বীপে একা ফেলে চলে গেছে। আমার কেউ নেই। কোথাও নেই। আমি পালিয়ে গেলাম..”
সাঁঝের শব্দগুলো ভীষণ নির্লিপ্ত। তার কণ্ঠ স্থির। খুব সাবলীলভাবে বলে যাচ্ছে। আবু বকর সাহেব চায়ের কাপটা হাতে তুলে চুমুক দিলেন। রাশভারি কণ্ঠে বললেন,

-“ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
সাঁঝ তড়িঘড়ি করতে লাগল,
-“আমি আরেকটা বানিয়ে আনি..”
-“প্রয়োজন নেই। ভালো হয়েছে এটা..”
সাঁঝের বুকের ভেতরে ঝড়, মুখে স্মিত হাসি,
-“দাদু, আমাকে মাফ করেছেন তো?”
আবু বকর সাহেবের মুখের সম্পূর্ণ কাঠিন্য গায়েব হয়ে গেছে। তিনি শান্ত কণ্ঠে বললেন,
-“আমার সাথে তুমি কোনো অন্যায় করোনি, মাফ চাওয়ার প্রসঙ্গও ওঠে না। অন্যায় যার সাথে করেছো, সে কি মাফ করেছে? তুমি কি মাফ চেয়েছো?”
সাঁঝ দু-ধারে মাথা নেড়ে নেতিবাচক উত্তর দিলে, আবু বকর সাহেব বললেন,

-“তোমরা ছোট মানুষ, তাই বোঝো না এগুলো। একটা উপদেশ দেই.. শুনো। স্বামীর মনে কষ্ট দেওয়া লাগে না। তোমার স্বামী তোমার একমাত্র নির্ভরতার স্থান। বাবা-মা যতই আপন হোক না কেন, তাদের কাছে তুমি কেবল আমানত মাত্র। যেই মুহূর্তে তুমি কবুল বলেছো, সেই মুহূর্তে তুমি পুরোপুরি তোমার স্বামীর দায়িত্বে চলে এসেছো। তার কথা শুনবে, তাকে শ্রদ্ধা করবে, ভালোবাসবে।”
বকর সাহেব থামলেন। চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললেন,
-“পুরুষ মানুষ বেশি কিছু চায় না। তারা কেবল একটা ঘর চায়। কংক্রিটের দেয়ালগুলোর ভেতর মায়ায় বোনা ঘর। কেবল এটুকু সে পেলে, তুমি দুনিয়াতেই গোটা এক স্বর্গ পেয়ে যাবে। বুঝতে পেরেছো?”
সাঁঝ ওপর-নিচ মাথা নাড়ল,
-“জি। বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ, দাদু।”
-“তোমার স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে নিয়ো।”
-“আচ্ছা।”

সাঁঝ আরও কিছুক্ষণ সেখানে বসে রান্নাঘরে চলে এলো। মনটা বেশ ফুড়ফুড়ে হয়ে আছে তার। এরপর কোমরে আঁচল গুঁজে পাকা গিন্নি সেজে রান্নায় সাহায্য করতে লাগল।
সারারাত ভরে কান্না করেছে ঊর্মি। সকালে খেতে বসার সময় দেখা গেল, মেয়েটার চোখ-মুখ ফুলে আছে। কী করুণ দেখাচ্ছে! সাঁঝের মোটেও করুণা পেল না। পাশের বাসার ভাবির মতো ঊর্মির মামাতো ভাবি তাকে উদ্দেশ্য করে ভরা মেহফিলে মর্জিনাকে বলে উঠল,

প্রেম ও অসুখ পর্ব ৯

-“ফুপি আম্মা! একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না। যুবতী মেয়েমানুষ বেশিদিন ঘরে রাখা লাগে না। জিনে আছড় করে। আপনার মেয়ের বয়স তো বাইশ বছর হলো। বিয়েশাদি দেবেন না?”
মর্জিনা মুখ ভেংচিয়ে বলল,
-“দেবো না কেন? আমার মেয়েটা অনেক সুন্দর। পোলা মাইনষের লাইন লেগে যায়।”
সাঁঝ ফিক করে হেসে উঠল,
-“জি, আপনার মেয়ে মাশাআল্লাহ সুন্দর আছে। খালি একটু ছ্যাতছ্যাত করে। ওগুলা সমস্যা না। ওঝা দিয়ে কয়েকটা ঝাড়ুর ফু দেওয়ালেই ঠিক হবে। আমি কাল ওঝা ডাকি, আর পরশু ঘটক। আফটার অল, ওর বড়োভাবি লাগি! একটা দায়িত্ব আছে না?”

প্রেম ও অসুখ পর্ব ১১