প্রেম তুমি দ্বিতীয় খণ্ড পর্ব ৪৮

প্রেম তুমি দ্বিতীয় খণ্ড পর্ব ৪৮
ফাবিহা নওশীন

প্রিয়া আর দিশা মিলে জোর করে অর্ষাকে শাড়ি পরাচ্ছে। দর্শনের বাবা-মায়ের সাথে আজ প্রথমবার তো দেখা হচ্ছে না। আজ হঠাৎ শাড়ি পরে সেজেগুজে গেলে কি ভাববে? অর্ষার ভীষণ লজ্জা লাগছে কিন্তু খালা মনির কঠোর নির্দেশ শাড়ি পরতে হবে। শাড়ি পরেই আজ ওদের সামনে যেতে হবে। বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।
“অর্ষা, এমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে শাড়ি পরা সুন্দর হবে।”
প্রিয়ার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল অর্ষা।

“তোদের শাড়ি পরানো শেষ হবে না? এতক্ষণ লাগে একটা শাড়ি পরাতে?”
“তুই ঠিক করে না দাঁড়ালে কী করে হবে?”
প্রিয়া আঁচলটা ঠিক করে দিচ্ছে। দিশা কুচিটা হাত দিয়ে ধরে ঠিক করে দিল। ওকে সাজিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে প্রিয়া বলল,
“মাশাল্লাহ, কেউ চোখ সরাতে পারবে না। আয় মেক আপ করিয়ে দেই।”
“আটা ময়দা ছাড়াও উনারা আমাকে দেখেছে তাই এসব মেখে ওখানে গিয়ে লাভ নেই।”
“ধুর! দিশা চলো তো। ও নিজে নিজে সাজুক অথবা বসে থাক।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওরা যেতেই অর্ষা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। শাড়িতে ভালোই লাগছে। মেক আপ যে ও করে না তা নয় কিন্তু আজ লজ্জা লাগছে দর্শনের বাবা-মায়ের সামনে মেক আপ করে যেতে। যদি ভাবে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে আছে তাই নরমাল সাজেই যাবে। ও নিজে টুকটাক সাজগোজ করে নিল।
অর্ষা নার্ভাসনেস নিয়ে নিচে গেল। দর্শনের বাবা-মা চা খেতে খেতে অর্ষার খালা-খালুর সাথে কথা বলছে। অর্ষাকে দেখে দর্শনের পাশে বসতে বলল। অর্ষা দর্শনের পাশে বসতেই দর্শনের মা হাসতে হাসতে বলল,
“দেখেছো কি ভুল করেছিলাম? নিজের ছেলের পছন্দ করা মেয়েকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য ঘটকালি করছিলাম। ভাগ্যিস কথা আগায়নি। তাহলে আমার ছেলের যে কি হত।”

বলেই আবার হাসতে লাগল। সাথে সবাই হাসছে।
দর্শনের বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
“তবুও তো তখন তোমার ছেলে মুখ খুলেনি। চুপচাপ শুনে গেছে। এই দাঁড়াও দাঁড়াও অর্ষার তো আবার ডাক্তার ছেলে পছন্দ না। এখন উপায়?”
অর্ষার খালু বলল,
“তাহলে আর কি করার। বিয়ে ক্যান্সেল। আপনার ছেলে তো আর আমাদের মেয়ের জন্য প্রফেশন চেঞ্জ করবে না।”

অর্ষা আর দর্শন লাজুক ভঙ্গিতে একে অপরের দিকে তাকাল। সবাই ওদের নিয়ে মজা করছে। তবে অর্ষার মনে এখনো সেই চিন্তা রয়ে গেছে। বারবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে। আয়ান চোখের ইশারায় বারবার ওকে শান্ত হতে বলছে। অবশেষে অর্ষা আর দর্শনের বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো আয়ান আর দিশার বিয়ে যেদিন হবে সেদিন। দুই ভাইবোনের বিয়ে এক দিনেই হবে।

অর্ষা আর দর্শন ছাদে এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে। দর্শন খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলে অর্ষা মন খারাপ করে বলল,
“দর্শন, আমার টেনশন হচ্ছে। আসল বিষয়টা এভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত হলো?”
“ওহ অর্ষা, তুমি সব বিষয় নিয়েই অধিক পরিমাণে চিন্তা করো। এখন এসব নিয়ে ভেবো না। সব ঠিক হবে। এখন আমাকে জড়িয়ে ধরে একটু ভালোবাসো তো।”
বলেই দর্শন, অর্ষাকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে।

দর্শন-অর্ষা, দিশা আর আয়ানের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিয়ের কেনাকাটা শেষ। দর্শন শুধু চাইছে বিয়েটা যেন ভালোমতো হয়ে যায়। কেউ যেন কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে। অর্ষার খুশি যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে। ওকে কথা দিয়েছে অনেক সুখে রাখবে। ওর চোখে কখনো পানি আসতে দেবে না। অর্ষা কিছুক্ষণ পর পর ওকে কল করে উচ্ছাসিত কন্ঠে বিয়ে, বিয়ের কেনাকাটা, সাজগোজ, কি কি প্ল্যান করেছে এসব নিয়ে কথা বলে। মনে হচ্ছে আগের সেই উচ্ছাসিত অর্ষা।

“এই, দর্শন লেহেঙ্গা তোমার পছন্দ হয়েছে?”
দর্শন মৃদু হেসে বলল,
“তোমার পছন্দ হলেই হবে। তোমার বিয়ে তোমার পছন্দের সব পরবে।”
“তাতে কি? পরছি তো তোমার জন্য। তাই তোমার পছন্দটাই জরুরী। তোমার পছন্দ না হলে এত সাজগোজ সব বৃথা।”
“সাজগোজ এমনিতেও সব বৃথা যাবে।”
অর্ষা চোখ বড়বড় করে বলল,
“কেন কেন?”

দর্শন বাকা হেসে বলল,
“বাসরঘরে ঢোকার পর কিছু থাকবে না-কি?”
অর্ষা চোখ বড়বড় করে,
“শয়তান! ফোন রাখো তুমি। তোমার সাথে কথা নাই।”
অর্ষা কল কেটে দিল। দর্শন ফোনের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে। এসব না বললে অর্ষাকে থামানো যেত না। হাসপাতালে আছে। কাজের কত চাপ। কিন্তু অর্ষার কথাই শেষ হচ্ছে না। ওর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দায়িত্বের কাছে ইচ্ছে কিছুই না।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। দুই পরিবার এক সাথে বিয়ের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেননা প্রতিপক্ষে ছেলে মেয়ে দু’জন আছে। সকল কাজের সুবিধার্থে হলুদ যার যার মতো হলেও বিয়ের অনুষ্ঠান এক সাথে হচ্ছে। দিশা আর অর্ষা এক সাথে বউ সাজছে। অর্পার খুব কষ্ট হচ্ছে। ওর বিয়েটা যদি এই চান্সে হয়ে যেত কত মজা হত। এ নিয়ে রুশানের সাথে ওর ঝগড়া লেগেছে কয়েকবার। রুশান বারবার বুঝিয়েছে সবার বিয়ে এক সাথে হলে মজাটা কম হত। ওদের বিয়ে হবে আরেকবার মজা করতে পারবে।

অর্ষা আর দিশা লাল বেনারসি পরে, ভারি গয়না পরে বরদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা হাসি হাসি মুখ করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। অর্ষার খালা দূর থেকে দেখে চোখের পানি মুছছে। আজকে উনি অনেক খুশি। ছেলের বিয়ের খুশির চেয়ে অর্ষার বিয়ে হচ্ছে এটা দেখেই উনার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা মরা মেয়েটাকে আর কষ্ট পেতে হবে না। ওর চোখে আর পানি আসবে না। নতুন একটা পরিবার পাবে, ভালোবাসার মানুষ পাবে। বিয়ে পরানো শেষে দুই পরিবারের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেল। কেননা দুই পরিবারই তাদের পুত্রবধূকে আমন্ত্রণের পাশাপাশি মেয়েদের বিদায় দিয়েছে। তাদের মেয়েরা অন্যকারো ঘরের আলো হয়ে চলে যাচ্ছে।

ফুলে ফুলে সাজানো ঘরে অর্ষা বসে আছে। মনে হচ্ছে ও ফুলের রাজ্যের রাজকন্যা। চারদিকে বিস্ময় নিয়ে দেখছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এক বছর আগেও ভাবেনি জীবনে কখনো এই দিনটা আসবে। যাকে ভালোবেসেছিল তাকেই নিজের করে পাবে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে অর্ষা ভাবনা বাদ দিল। হালকা আলোয় দর্শনকে দেখতে পাচ্ছে। অর্ষা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। দর্শনকে দেখে ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কেন জানেনা ওকে দেখে হঠাৎ কান্না পেয়ে গেল। দর্শন হঠাৎ ওকে কাঁদতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বিচলিত হয়ে ওর চোখ মুছতে গেলে অর্ষা ওকে থামিয়ে দিল।

“তোমাকে আরেকটু দেখি দর্শন।”
অর্ষা আবার কাঁদতে লাগল।
“কাঁদছো কেন?”
অর্ষা গালে হাত রেখে মুখমণ্ডল ছুয়ে দিয়ে বলল,
“সবকিছু আমার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।”
দর্শন ওর হাতটা বুকের বামপাশে রেখে আলতো চাপ দিয়ে বলল,
“এখন ফিল করো। জলজ্যান্ত মানুষের হার্টবিট। আমি স্বপ্ন নই, আমি তোমার বাস্তবতা।”
“তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? কখনো আমাকে কষ্ট দিবে না তো?”

“দূর পাগলি ছেড়ে দেওয়ার জন্য কি বিয়ে করেছি? জীবনে সব পাব কিন্তু অর্ষাকে হারালে কোথায় পাব? একবার হারিয়ে শিক্ষা হয়ে গেছে। আর হারাতে চাই না। শুধু ভালোবাসতে চাই। বাসরঘরে কান্নাকাটি কেন? চোখের পানি মুছো।”
দর্শন আলমারি খুলে একটা বক্স বের করে অর্ষার কাছে এল। অর্ষা বক্সটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে। বক্সের উপরে একটা লাল গোলাপ। অর্ষা বক্সটা খুলে দুটো নুপুর পেল। হাতে তুলে বিস্ময় নিয়ে দর্শনের দিকে তাকাল।
দর্শন মুচকি হেসে বলল,
“আমি চাই এগুলো সব সময় তোমার পায়ে ঝনঝন আওয়াজে ঝড় তুলুক। আর সেই ঝড়ে আমি মাতোয়ারা হই।”

দর্শন নুপুর দুটো ওর পায়ে পরিয়ে দিল। তারপর পকেট থেকে আরেকটা বক্স বের করে অর্ষাকে দেখাল। অর্ষা বক্সটা নিয়ে দেখতে চাইলে দর্শন বক্সটা সরিয়ে ফেলে বলল,
“এটা তোমাকে দেখানো যাবে না। এটা আমার মেয়ের। আমাদের রাজকন্যার।”
অর্ষার মনটা খারাপ হয়ে গেল। দর্শন বাচ্চার কথা বলছে। দর্শন অর্ষার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,
“দেখো,আমাদের বেবি হবে। নয়তো হঠাৎ এই ছোট নুপুর জোড়া আমার কেন পছন্দ হবে? আর কেনই-বা আমি নিয়ে আসব?”
অর্ষা বক্সের দিকে তাকাল। একটা ভালো লাগা ওকে ছুয়ে গেল। মুখে একটা আভা ছড়িয়ে পড়েছে। দর্শনের দু গালে হাত রেখে বলল,

“আজ থেকেই ট্রাই করি।”
তারপর দর্শনের ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিল। দু’জনে সীমাহীন ভালোবাসার অতলে হারিয়ে গেল।
অর্ষা ঘুমাচ্ছে। স্বপ্ন দেখছে ছোট্ট এক পরীর। তখনই মনে হচ্ছে কেউ ওকে দোলাচ্ছে। কিঞ্চিৎ বিরক্তি কপালে ফুটে উঠল। ওর পরীটাকে আদর করতে দিচ্ছে না।
“অর্ষা, উঠ। এগারোটা বেজে গেছে। উঠো না।”
অর্ষা ঘুমঘুম চোখে দর্শনের দিকে তাকাতেই বুঝল স্বপ্ন দেখছিল ও।
“কী হয়েছে?”

“এগারোটা বাজে বেবি।” দর্শন মুখ বাকিয়ে বলল।
অর্ষা ধরফর করে উঠে বসল। ঘড়ির দিকে চেয়ে ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এত বেলা হয়ে গেছে বাইরে সবাই কি ভাবছে। অর্ষা দাঁত খিঁচিয়ে বলল,
“আগে ডাকোনি কেন?”
“আরে, আমার ঘুমই ভাঙলো মাত্র। তুমি আমাকে রাতে ঘুমাতে দিয়েছো যে সকাল সকাল উঠব?”
দর্শন শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল। ওর ঠোঁটের কোণে মিটমিটে হাসি।
অর্ষা ওকে ধাক্কা মেরে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

প্রেম তুমি দ্বিতীয় খণ্ড পর্ব ৪৭

(রেগুলার গল্প না দেওয়া, এই বিষয়টা আমার কাছেও সত্যিই বিরক্তিকর। ট্রাস্ট মি আমিও চাই রেগুলার গল্প দিতে, আগের মতো কিন্তু প্রতিবারই কোন না বাঁধা এসে যায়। এত লেট করেন কেন? রেগুলার গল্প দিতে না পারলে গল্প লিখেন কেন? আমি এটেনশন নিতে চাই ব্লা ব্লা। এসব অনেক বার শুনেছি। আমি সব সময় আমার সর্বোচ্চটা দিতে চাই কিন্তু পারি না। যাইহোক আগামী পর্বে গল্প শেষ হবে তারপর আমি রিলিফ। ?)

প্রেম তুমি দ্বিতীয় খণ্ড পর্ব ৪৯