প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৪৭+৪৮
Nabila Ishq
সদরঘাট। সাব্বির শেখ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন একটি তিনতলা সাদা লঞ্চের সামনে। শ্যাম বর্নের বেঁটেখাটো লোক। গম্ভীর মুখশ্রীর অধিকারী। কন্ঠের স্বরও ভদ্রলোকের গম্ভীর। মুখ জুড়ে দাঁড়ি। ঢিলাঢালা প্যান্ট-শার্ট পরে আছেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলে রুস্তম। চোখমুখে ভয়ার্ত’তা লেপ্টে। আঁড়চোখে নিজের বাবার দিক তাকাল। সাব্বির সাহেব অন্ধকার মুখে বললেন, ‘এতগুলা ছেলেপেলে, মাইয়ালোক মিল্লা জাইতাছ বাজান। কোনো আকাম-কুকাম কইরা এই বাপের মুখে চুলকানি মাইখা দিও না।’
‘কি যে বলোনা। সবাই বিবাহিত আব্বা। কী হইবো! আর এখানে কেউ পোলাপান না। সবাই ত্রিশের উপরে।’
‘ওইযে পুচকে মাইয়াডা। ওইডাও ত্রিশের উপরে? বাপেরে কি খুকি পাইয়া নিছো? ওইঠা কেডা? একটুখানি মাইয়া। মনে হয় উর্ধ্বে গেলে ক্লাস টেনে পড়ে। এই মাইয়া কই যায়?’
‘অতটাও ছোট না আব্বা। অরু অনার্সে উঠবে এইবার। তন্ময়ের বউ। বুঝছ? গেজাও কম।’
‘কি কইলি বান্দির পো। আমি গেজাই?’
‘আরে আব্বা! আমি তো এম্নেই বলতাছি।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রুস্তম আলগোছে সরে দাঁড়ালো কানে থাপ্পড় পড়ার আগে। তার বাবার স্বভাব ভালো না৷ হাতের কাছে পেলেই চড় দিয়ে বসে৷ এতো বড়ো ছেলে সে।অল্প বয়সে বিয়ে হলে পোলাপান থাকতো দশ বছরের। অথচ তার বাবার বোধগম্য নেই৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুস্তম হাতে মাইক নিল। সেখানে মুখ লাগিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচাল, ‘সবাই ল্যাগেজ নিয়ে উঠে পড়৷ কাউন্টার থেকে ক্যাবিনের চাবি সঞ্চয় করে নে। লঞ্চ ছাড়া হবে এগারোটা বিশে। বাকি কথা হবে ভেতরে।’
নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাবে মোট চল্লিশজন৷ সবগুলো একই ব্যাচের। তবে তেমন কাছের নয় অনেকেই। এই কয়েকবার একসঙ্গে বসে চা-পানি খাওয়া হয়েছে হয়তো।
বা হুট করে ক্যাম্পাসে দেখা হয়েছে। সঙ্গে হায়-হ্যালো করে নিলো। এমন! তবে এই চল্লিশজনের মধ্যে, বন্ধুবান্ধবদের আলাদা বিভাগ রয়েছে। বড়ো, ছোটো দল বেঁধে থাকে একেকজন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বন্ডিং এবং বড়ো দল তন্ময়দের। ছেলেমেয়ে মিলিয়ে তারা চৌদ্দজন বন্ধুবান্ধব। সেসময় ভার্সিটিতে রাজ করে বেরিয়েছে একসাথে। ক্যান্টিনে কাঁধে কাঁধ ঘেষে আড্ডা দিয়েছে কতশত বার। ক্যাম্পাসে পা দুলিয়ে বসে জমবেশ চায়ের কাপে চুমুক বসিয়েছে। খুব সুন্দর অমায়িক স্মৃতি সেসব। এখনো সপ্তাহে একবার হলেও রেস্তোরাঁয় আড্ডা বসায় সকলে মিলে। নাহলে হুটহাট কল করে কথা বলে সীমাহীন।
বন্ধুদলের সবথেকে শান্তশিষ্ট গম্ভীর তন্ময়কেও আসতে বাধ্য হতে হয়। না আসলে দেখা যাবে তন্ময়ের অফিসে চলে এসেছে সবগুলো। সেই কী তুলকালাম দৃশ্য সৃষ্টি করবে, তা না ভাবাই উত্তম!
অরু তন্ময়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। একপ্রকার লেপ্টে আছে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের চিহ্ন। নাকের ডগায়ও খানিক ঘাম ফুটে আছে। তন্ময়ের হাত অরুর কাঁধে। শক্ত করে ধরে আছে। অন্যহাতে ল্যাগেজ। খুব কোলাহল চারিপাশে। তাদের সামনে সাব্বির সাহেব। তন্ময় হেসে সামনাসামনি দাঁড়ালো। সালাম জানালো। সাব্বির সাহেব গম্ভীরমুখের একটু পরিবর্তন এলো। তিনি তন্ময়ের পাশে থাকা একটুখানি অরুকে দেখে নিলেন। গম্ভীর স্বরে শুধালেন
‘নাম কী?’
অরু ভয় পেল। দুরুদুরু কাঁপতে থাকা বুক নিয়ে বলল,’আরাবী।’
‘বংশ নাম?’
‘আরাবী শাহজাহান।’
সাব্বির সাহেব থমকে গেলেন। পরপর ধমকে উঠলেন, ‘ওই মাইয়া! জামাইর বংশের নাম কইবা কেন? আমাগো ধর্মে তো এইটা নাই। তুমি কইবা তোমার আব্বার বংশের নাম। বুঝলা?’
অরু কাচুমাচু ভঙিতে তন্ময়ের আরও পেছনে চলে গেল। ভয়ে তার রুহ উড়ে যাবার যোগাড়। এতবড় ধমক তো তাকে তন্ময়ও দেয়নি কখনো। অন্যদিকে তন্ময় হেসে উঠলো। শব্দময় উজ্জ্বল, উচ্ছ্বাস হাসি। রুস্তম পাশেই ছিলো। সে তার বাবার উদ্দেশ্যে অতিষ্ট স্বরে বলল, ‘চাচাতো ভাইবোন এরা। ওর আব্বার বংশের নামই বলছে। এখন তুমি যাও আর দাঁড়ায় থাকিও না। মেলা রাত হইছে।’
সাব্বির সাহেব আঁড়চোখে অরুকে আরেকটি বার দেখে নিলেন, ‘ওহ! পারিবারিক মনে হয়। ভালোই। মিল্লা-মিশ্যা থাইকো। ঝগড়াবিবাদ কইরো না।সাবধানে যাও। আগাও… ‘
তন্ময় ভয়ার্ত অরুকে নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো। লঞ্চে উঠতে নিয়ে থমকে দাঁড়ালো। মাথা নত করে প্রশ্ন করলো, ‘কিছু খেতে ইচ্ছে করছে? নিয়ে নিব এখান থেকে কিছু?’
‘ লাগবে না। আমি সব নিয়েছি।’
অরু নিজের ফুলোফুলো ব্যাগটা দেখাল। সত্যিই সে দুনিয়ায় সব নিয়ে নিয়েছে। খাবার থেকে ধরে চা’টাও নিয়েছে ফ্ল্যাক্সে। মোট দুটো ফ্ল্যাক্স। অন্যটায় গরম পানি। তন্ময়ের জন্য কফি বানাতে হয় কি-না! সুমিতা বেগমও অনেকরকম খাবার প্যাক করে দিয়েছেন। জবেদা বেগম পিছু নেই। এতসব খাবার দিয়েই মুলত ব্যাগ ভর্তি। তাই তার কাপড়চোপড় তন্ময়ের ল্যাগেজে নিতে হয়েছে।
মাহিন তন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা এখন লঞ্চের ভেতর। সিঁড়ির সামনে, দোতলায় উঠবে। মাহিন তন্ময়ের কাঁধ জড়িয়ে বলল,’মাম্মা দেখ পোলাপান কেম্নে লাইন মারতেছে! আইজকা তুফান ছুটব ক্যাবিনে। ওই দেখ ফয়সালরে। শালায় একটু আগে শীলার সাথে ফষ্টিনষ্টি করল। এখন আবার সাথীর সাথে। ছ্যাহ!’
রিহান তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, ‘অবিবাহিত গুলা মুলত লাইন মারতে আইছে।’
পাশে দাঁড়ানো অবিবাহিত মাহিন ছোট চোখে তাকাল। রিহান লাজুক হেসে সরে গেল। অযুহাত সরূপ শুহানিকে কাজে লাগালো। মুলত তার নাম ডাকতে ডাকতে হাঁটা ধরেছে। নাহলে মাহিন উল্টাপাল্টা কিছু একটা বলে ‘দিবে। ছেলেটার মুখে একদম লাগাম নেই।
রুস্তম দৌড়ে এসেছে। হাতে চাবি। মোট তেরোটা। সম্পুর্ন দোতলার ক্যাবিন গুলো নিয়েছে তারা। সিরিয়াল সমেত। একেকজনের হাতে চাবি ধরিয়ে দিল। বলে গেল লঞ্চ ছাড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ডিনার করলে নিচ তলায় চলে যেতে। খাবার ব্যবস্থা আছে। চা-পানির স্টল খোলা আছে প্রয়োজনে।
তন্ময়ের ক্যাবিন নাম্বার সাতাশ। বড়ো লাক্সারিয়াস খোলামেলা ক্যাবিন। অরুর মস্তিষ্ক জ্বলতে শুরু করেছে। এতক্ষণ মাথায় আসেনি। দুজন একসাথে থাকবে? বুকের ভেতর তোলপাড় মুহুর্তে শুরু হলো। গলাটা শুকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে গেল। তন্ময় ব্যস্ত পায়ে পুরো ক্যাবিনে পা চালালো। ল্যাগেজ পাশে রেখে সোফায় বসলো। সামনে টিভি স্যাট করা। একটা মিনারেল ওয়াটার বোতল রাখা টি-টেবিলে। সেটা হাতে নিল। ঢাকনা খুলে ঢকঢক শব্দে খেয়ে নিল। অরু তখনো চুপসে দাঁড়িয়ে। তন্ময় ভুরু উঁচু করলো, ‘কী?’
অরু মাথা দোলাল। কিছুই হয়নি। তবে কিছু একটা সে ঠিকই অনুভব করছে। বলার সাহস নেই। ধীর পায়ে বিছানার একপাশে বসলো। কি করবে? আঁড়চোখে তন্ময়কে দেখল। তন্ময় ব্যস্ত হাতে মোবাইল টিপছে। খুব মনোযোগ! অরু ভাবলো সে কী ড্রেস পরিবর্তন করবে? নাকি এভাবেই থাকবে। সে তো লঞ্চ ছাড়ার সময়টা দেখতে চায়। তা কী বলবে মুখ ফুটে?
অয়ন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে একটানে। পাশে বসে থাকা শাবিহার দিক ফিরে তাকাচ্ছে না। সম্পুর্ন ধ্যান সামনে। গম্ভীর করে রেখেছে মুখশ্রী। শাবিহা শতাংশ বার বলেছে গাড়ি থামাতে। কে শুনে কার কথা! অয়ন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। গাড়ি অলরেডি শহরের বাইরে চলে এসেছে। আশেপাশের সবকিছু শান্ত এবং নির্জন। গাছপালা দু’দিকে সমানতালে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। আকাশে গোলাকার চাঁদ। উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গাড়ি থেমেছে। সামনে বড়ো পুকুর। ঘাষের মেলা। হিমশীতল বাতাস। কাঁচ নামানো। অয়ন চোখবুঁজে মাথা স্টেরিংয়ে রেখেছে। শাবিহা আঁড়চোখে তাকাল। জড়তার কারণে ভালোভাবে
অয়নকে দেখতে অবদি পারেনি। কতটা অনুভব করেছে জানে? কতটা হৃদয় ব্যাকুল ছিল জানে? জানে না। শাবিহা জানতেও দিবে না।
অয়ন মাথা ওঠাল। চুলগুলো কপাল থেকে দু’হাতে উপরে উঠিয়ে দিল। তাকাল শাবিহার দিক। মুহুর্তে চোখাচোখি হলো। শাবিহা নজর ফিরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে তাকিয়ে। অয়ন হাত বাড়িয়ে শাবিহার থুতনি চেপে ধরলো। মুখটা নিজের দিক ঘুরিয়ে নিয়েছে। কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করেছে সে। চোখ জোড়া লাল। শুকনো ঠোঁট। নিজেকে ঠান্ডা করার আপ্রান চেষ্টা। স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করার অসম্ভব প্রচেষ্টা, ‘মিস করেছেন আমাকে?’
সেই আপনি সম্বোধন। শাবিহার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, এই হুট করে আপনি সম্বোধন করার কারণ। তার উপর অতিরিক্ত অভিমান হলেই আপনি বলতে থাকে। আর তা তীরের ন্যায় ছুটে লাগে তার বুকে। রক্তাক্ত করে দেয় ভেতরটা। শাবিহা মুখটা সরাতে চাইল। পারলো না। অয়ন দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলো না। তবে উত্তরের আশায় ঝুকে রইলো। জবাব শোনার জন্য ব্যকুল সে। শাবিহা জবাবে অন্যকিছু বলতে চাইল, ‘বাসায় যাব। গাড়ি ঘুরা….’
অয়নের ঠোঁট শব্দ করে ছুয়ে গেছে শাবিহার ঠোঁট। গাঢ় চুমু দিয়ে বলল, ‘জবাব শুনতে চাই। অন্যকোনো কথা নেই। বলুন শাবিহা। ডিড ইউ মিসড মি?’
শাবিহা চোখ রাঙিয়ে তাকাল। রাগান্বিত হবার চেষ্টা। তবে সত্যি বলতে অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে পারছে না সে৷ রাগ তো ভুলেও নয়। অয়নের প্রতি বিন্দু পরিমাণ রাগ নেই। আছে সীমাহীন ভালোবাসা, অনুভূতি আর ব্যাকুলতা। অয়ন থুতনি ছেড়ে দিল। দু’হাতে শাবিহাকে বুকে টেনে নিল। শক্ত করে চুমু খেল কপালে। কন্ঠের স্বর কাতর শোনালো, ‘খুব মিস করেছি। রাতভর ঘুমাতে পারিনি। তোমাকে ছাড়া ভালো নেই। একটুও না। আমার সাথে এমন করো না শাবিহা। আমি শান্তিতে বাঁচতে পারবো না।’
শাবিহার কঠোর করতে চাওয়া হৃদয় মুহুর্তে গলে গেল। ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভঙ্গিতে ছটফট করতে লাগল। হাত দুটো অয়নকে জড়িয়ে ধরার জন্য ব্যাকুল। চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল আনমনে। অয়ন মাথা এগিয়ে এনে তাকাল। ডান হাতে মুছে দিল চোখের জল। চুমু খেল চোখে, ‘আমি জানি আমাকে মিস করেছ। খুব কেঁদেছ। একদম ভালো ছিলে না। আমিতো আমার শাবিহাকে চিনি।’
‘কেন এলে আবার? আমি কী করবো!’
‘কিচ্ছু করতে হবে না। সব আমি করবো। সবকিছু ঠিক করবো। কাঁদে না।’
অজস্র ক্ষুদ্র চুমুতে রাঙিয়ে দিল শাবিহার মুখশ্রী। ব্যাকুল হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে বুকে টেনে নিচ্ছে একটু পরপর। শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো গুছিয়ে নিয়েছে। সেই কী আদুরে অনুভূতি।
অরুকে বলতে হলো না নিজের ইচ্ছের বিষয়টি। তন্ময় নিজেই বলেছে অরুকে ফ্রেশ হয়ে নিতে। ছাদে যাবে তারা। লঞ্চ ছাড়বে একটু পর। বাতাস উপভোগ করবে বসে। সেখানে সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অরু দ্রুত পায়ে ফ্রেশ হয়ে ফিরেছে। চুল ঝুটি করে নিয়েছে। তন্ময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অরুকে দেখতেই বলল, ‘ইয়ারফোন নিয়ে আয়।’
অরু ছুটে গেল ভেতরে পুনরায়। ল্যাগেজ খুলে ইয়ারফোন নিল। দ্রুত পায়ে তন্ময়ের সামনে দাঁড়ালো। ইয়ারফোন এগিয়ে দিল। চোখমুখে আগ্রহ। তন্ময় নিজের ফোনে ইয়ারফোন স্যাট করলো। একটা হিন্দি গান ছেড়ে দু’কানে ঢোকাল। সাউন্ড মেপে অরুর দু’কানে ঢুকিয়ে দিল। তীব্র শব্দ। অরু বোকার মতো তাকিয়ে। তন্ময় ধমকের সুরে বলল, ‘ভুলেও ইয়ারফোন কান থেকে সরাবি না। মনে থাকবে?’
অরুর চোখমুখ বিরক্তিতে ভরে গেল। অসহ্য! কানে ইয়ারফোন রাখতে হবে কেন? সেভাবেই তন্ময়ের সাথে বেরোলো। সামনে রিহান আর শুহানি দাঁড়িয়ে। তর্ক করছে। মাহিন ফোনে কথা বলছে। ধীরে তারা এগোচ্ছে সিঁড়ির দিক। ছাঁদে উঠবে। রিহান দুষ্টু স্বরে বলল, ‘একটা জিনিস খেয়াল করেছিস তোরা?’
সৈয়দ শুধালো, ‘কী?’
‘তন্ময়ের বিয়ের পরের ট্রিপ এটা। সাথে বউ। মনে হচ্ছে না হানিমুনে বেরিয়েছে।’
মাহিন ফোন রেখে এগিয়ে আসলো , ‘দ্বিতীয় হানিমুন হবে এটা। প্রথমটা তো চট্টগ্রামে সেড়ে ফেলেছে নিশ্চিত। নারায়ণগঞ্জ হবে দ্বিতীয় হানিমুন। বাই দা ওয়ে দোস্ত, প্রিপারেশন কেমন?’
‘মানে কনড….’
শুহানি ধমকের সুরে বলল, ‘থামবি? অরু এখানেই। বাচ্চা মেয়ে একটা!’
এইমাত্র সকলে খেয়াল করলো অরু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে। চোখমুখে লজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই। পরপর দেখল মেয়েটার কানে ইয়ারফোন। হাতে সেলফোন। মাহিন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। রিহান আওড়াল, ‘মেয়েটাকে পাকতে দিবে না বলে শপথ নিয়ে রেখেছে তন্ময় চাচা! একটু চালাকচতুর হতে হয়। কিছু-মিছু জানতে তো হইব।’
তন্ময় হাসলো। স্মিথ হাসি। অনিমেষ ভঙ্গিতে বলল, ‘জানতে হবেনা। এভাবেই পারফেক্ট।’
আকাশ পরিষ্কার। কালো আকাশ জুড়ে লক্ষ্য লক্ষ্য নক্ষত্র। রয়েছে গোলাকার সাদা ফকফকে চাঁদ। চাঁদের সৌন্দর্য আজ দ্বিগুণ রূপে জ্বলজ্বল করছে যেনো। আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিপাশ। সম্পুর্ন ছাঁদ জুড়ে মানুষের হাঁটাহাঁটি, হাসাহাসি, তর্কবিতর্কের তীব্র শব্দ।
ছাঁদের মধ্যখানে গোলাকার ভঙ্গিতে চেয়ার বসানো হয়েছে। চেয়ার গুলোর মধ্যেস্থানে বড়ো টেবিল। টেবিল জুড়ে রয়েছে নানান প্রকার খাবার। ইব্রাহিম সমান তালে খেয়ে চলেছে। চোখমুখ শক্ত। পাশে রুস্তম বসে। সেও চোখমুখ ক্রোধে ললাটে রূপ ধারণ করে খেয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। দুজন একসময় দাঁড়িয়ে পড়লো। যেমন তর্কাতর্কি এখনম মারামারির পর্যায়ে আসবে। দুজন মুখোমুখি ছুঁইছুঁই হয়ে। চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে একে অপরের পানে। তন্ময়, মাহিন, সৈয়দ তারা ছাঁদে উঠেছে কেবলই। মাহিন চেঁচাল, ‘কি রে! এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যেমন চুম্বনে লিপ্ত হবি দুজন! একটা রুমের চাবি কী দিব?’
অপ্রত্যাশিত কথায় ভড়কে গেল ইব্রাহিম। নাকমুখ কুঁচকে গেল মুহুর্তে। সাপের ন্যায় ফোসফোস করে সরে এলো। রুস্তম কম কীসে? সোজাসাপটা তেড়ে গিয়েছে মাহিনের দিক। কিছু বোঝাপড়া এখনই করবে সে। মাহিন দৌড় লাগিয়েছে। হেঁসে উঠেছে বাকি সকলে। খোলামেলা শব্দময় হাসি একেকজনের।
তন্ময় ছাঁদে উঠতেই, তাকে এ-সে অনেকেই ডাকছে। এতদিন পর দেখা৷ ডাকাডাকি স্বাভাবিক। তন্ময় হেসে বলেছে, ‘আসছি।’ অরুকে চেয়ারে বসতে ইশারা করলো। অরু বসবে না। সে ঐ কোণায় গিয়ে রেলিঙের পাশে দাঁড়াবে। নদীর পানি দেখবে। লঞ্চ ছাড়ার মুহূর্ত উপভোগ করবে। শব্দ করে বললো, ‘ওপাশে যাই আমি?’
‘না। বোস।’
অরু কিছুই শুনতে পেল না। তীব্র গানের শব্দ। এতো মানুষ, অথচ একটি শব্দ তার কানে আসছে না। অরু ভাবলো এক কানের ইয়ারফোন খুলে ফেলবে। কিন্তু তন্ময় একটু পরপর চেক করছে। কানের দিক ভালোভাবে তাকাচ্ছে। আশ্চর্য! এতো কেয়ারফুল হবার কী আদৌও প্রয়োজন আছে?
অরু তন্ময়ের চোখ রাঙানো দেখে বসলো এক কোণে। চুপচাপ বসে। হাত দুটো সামনে। তন্ময় হাতের ইশারায় ঠাঁই বসতে বলে, তারপরই অন্যদিকে হাঁটা দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর শব্দ করে অরুর পাশে এসে বসলো সৈয়দ। অপরপাশে শুহানি এসে বসেছে। সামনে রিহান আর মাহিন বসে। অরু চারপাশ হতে ঘেরা। বোকার মতো তাকিয়ে আছে। শুহানি অরুর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে নিল। হেসে শুধালো, ‘কি গান শুনছ অরু?’
অরু নাম বললো, ‘তেরি কাসাম।’
মাহিন হতাশ গলায় বলল, ‘আহারে! তুমি এভাবে অন্যের গান কেন শুনবে বলোতো? তোমার ভাইয়া থেকে হয়ে যাওয়া সাইয়া কিন্তু খুব ভালো গান গায়। সেদিন শুনলে না? এই ছেলে ভার্সিটির কতো মেয়েদের কানে কানে গিয়ে গান গেয়েছে, বলে শেষ করা মুশকিল। তোমার কানে গান গেয়েছে?’
অরুর উজ্জ্বল মুখশ্রী বড্ড অসহায় দেখাচ্ছে। শুহানির ভীষণ মায়া হলো। সে অরুকে পাজাকোলে চেপে নিল। ধমকের সুরে মাহিনকে বলল, ‘চুপ থাক তুই!’
‘তোর নোংরা বাম হাত ঢোকাবি না। খবরদার। কথা বলতে দে। তো অরু! বলো গান গেয়ে শুনিয়েছে কানে কানে?’
অরু মাথা নাড়াল, ‘না।’
‘ইশ! ওই মেয়েটাকে দেখ। ওইযে জিন্স-টপ পড়ে। তন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়ে। আমাদের ক্লাস টপার ছিল। তন্ময়ের জন্য পাগল। এই মেয়েকে কিন্তু তন্ময় কানে কানে গান শুনিয়েছে। আমার নিজের চোক্ষে দেখা।’
অরুর বিশ্বাস হলো না মোটেও। তার গম্ভীর শান্তশিষ্ট তন্ময় ভাই, এমনটা আদোও করতে পারে? অরু বলল, ‘সত্যি?’
‘হু। এখানে উপস্থিত অনেক মেয়ের সাথেই লাইন ছিলো বুঝলে। সব গোপনে। গোপনীয়তা বজায় রেখে চলত ছেলেটা। দেখতে তো ভোলাভালা। টেম্পো চালাতে জানে, সেটা কে জানত বলো!’
অরুর মুখ ভোঁতা হয়ে আছে। সেই মুখ আরও ভোঁতা করতে রিহান বলল, ‘আরে মাহিন তোর শীলার কথা মনে আছে? ওই মাদবরের নাতনি’টা। ওটার সাথে তো তন্ময় ভালোই ঘনিষ্ঠ হয়েছিল! মনে পড়ে?’
মগজধোলাই হওয়া অরুর চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেল। মাহিনের মুখের ভঙ্গিমা দেখে তার সব কথা সত্য মনে হতে লাগলো। নিমিষেই চোখজোড়া জ্বলতে শুরু করলো। এরজন্য কী তন্ময় তার কানে ইয়ারফোন দিয়েছে? যাতে সে এগুলো না শুনতে পায়? মাহিন আলগোছে উঠে গেল। তন্ময় আসছে তাড়াহুড়ো পায়ে। রিহান ও ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিকসেদিক তাকিয়ে কেটে পড়েছে। অরুর পাশে শুধু শুহানি বসে। সে নরম সুরে বলল, ‘ওদের কথা বিশ্বাস করো না। ফাজলামো করছে তোমার সঙ্গে। তুমিতো জানো, তন্ময় কেমন! তবে কানে কানে গান শোনার আবদার খানা করতেই পারো। এটা কিন্তু আমিও পার্সোনাল ভাবে উপভোগ করেছি। রিহান থেকে। অনুভূতি খুব স্বচ্ছ এবং দারুণ। ট্রায় করতেই পারো।’
অরু তাকাল অসহায় নয়নে। শুহানি শব্দ করে হাসছে। তন্ময় সামনে আসতেই বলল, ‘দোস্ত তোর বউয়ের মগজধোলাই করে গেছে ওই দুজন। সামলা তাহলে। আমি একটু আসছি।’
তন্ময় বিরক্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানো মাহিন, রিহানকে চোখও রাঙাল। ছেলেগুলোর জ্বালায় সে বাঁচবে না বেশিদিন। অরুর ভোঁতা মুখশ্রী খানায় দৃষ্টিপাত করে প্রশ্ন করলো, ‘কি হয়েছে?’
‘কিছুনা।’
‘কী বলেছে?’
অরু চুপ রইলো। তন্ময় হাত বাড়াল, ‘দেখি আয়।’
অরু উঠে দাঁড়ালো। তন্ময়ের হাত ধরলো। চুপচাপ সঙ্গে হাঁটছে। তার হঠাৎ মন খারাপ হলো। সে জানে মাহিনের কথা সত্য নয়। তাও কেন মন খারাপ হচ্ছে?
দুজন এসে দাঁড়িয়েছে ছাঁদের এক কোণে। এখানটা বড্ড নিরব। নিরবতা ভাঙলো রুস্তমের গলার স্বরে। লঞ্চ ছাড়া হবে এক্ষুনি। পরপরই শোনা গেল লঞ্চ ছাড়ার তীব্র শব্দ। অরু ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়লো সেই শব্দে। তাকিয়ে থাকলো নদীর পানির দিক। পানির উচ্ছাস অবস্থা। উথালপাতাল গাঢ় ঢেউ। দিশেহারা, অবিকল ভাবে মেতে চলেছে।
ধীরে লঞ্চ চলতে শুরু করেছে নদীর বুকে। সেই কী অদ্ভুত অনুভূতি! অরু এবার রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালো আরেকটু কাছে গিয়ে। মাথাটা নিচু করতে চাইল। তন্ময় দিল না। সে অরুর পেছন দাঁড়িয়ে। স্বাস্থ্যসম্মত দু’হাত দুপাশে দেওয়া। দূর থেকে মনে হচ্ছে, অরু তন্ময়ের বাহুতে আটকে। তবে কাছাকাছি তেমনটা মোটেও নয়। দুজনের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে কিছুটা। অরু আঁড়চোখে পেছন তাকাল। তন্ময় তখনো নদীর দিক তাকিয়ে। তবে অরুর নজর ঠিক উপলব্ধি করলো, ‘কী?’
‘হু।’
‘বল।’
‘আপনি কখনো প্রেম করেছেন?’
প্রশ্নটা করতেই অরুর বুকের উঠানামার গতি বেড়ে গেল। ভেতরটা ধুকপুক করছে। তন্ময় সময় নেয়নি। মুহুর্তে জবাব দিল,’না।’
‘কখনো করেননি?’
‘কখনো না।’
অরুর হুট করে খারাপ হয়ে যাওয়া মন স্বতঃস্ফূর্ত হলো মুহুর্তে। জ্বলজ্বল চোখে ফিরে চাইল। তন্ময়কে পলক ভরে দেখে বলল, ‘আপনি কখনো কানে কানে গান গেয়ে শুনিয়েছেন?’
‘তোর মাথায় কী ঢুকিয়েছে এরা! কানে কানে গায় কীভাবে! আশ্চর্য!’
কানে কানে কীভাবে গান গায় তাই জানে না?শুহানির বলা কথাগুলো অরুর মস্তিষ্কে জড়াল ভঙ্গিতে লেপ্টে এলো। কানে কানে গান শোনার এক আলাদা অনুভূতি আছে। শুহানিকে রিহান শুনিয়েছে। অরুরও আগ্রহ জেগেছে এবিষয়ে। সে চাচ্ছে তন্ময়ও তাকে গেয়ে শোনাক। কেন শোনায় না! অরুও উপভোগ করতে চায় ওই অনুভূতি। নজর ফিরিয়ে নদীর দিক তাকাল। নদীতে চাঁদের ঝলক। আসমানের প্রতিভাব। দেখা মিলছে উপচে পড়া রূপের।
বেশ খানিক্ষন বাদে কানের কাছে উষ্ণ নিশ্বাসের স্পর্শ পেল অরু। কোমরে শক্ত হাতের ছোঁয়া। জামার ভেতর দিয়ে গিয়েছে সেই হাত। মুঠো করে ধরেছে সেখানে। অরু চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো সঙ্গে সঙ্গে। তন্ময় বলল,’খুব জ্বালাতন করিস!’
অরু কষ্ট পেল। জ্বালাতন তো তাকে করা হচ্ছে। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,’ছাড়ুন। আমি কী বলেছি শোনাতে!’
তন্ময়ের গম্ভীর কন্ঠের ধীর হাসির শব্দ শোনা গেল।
‘ওহ!’
‘সরুন।’
‘তুই তো দিব্বি আমাকে জোরপূর্বক চুমু খেতি। এখন আমি ধরতে পারবো না? সার্টিফিকেট পেয়েও?’
‘কী!’
অরু আশ্চর্যের শেষ সীমানায় চলে গেল। কীসব বলছে! সেই কবে অরু গালে একটা চুমু দিয়েছিল, সেটা নিয়ে বসে আছে। তখন তো অরু ছোট, অবুঝ ছিল। অনুভূতির চাদরে ঢেকে কয়েকটি ভুল স্টেপ নিয়েছিল। তাই বলে এভাবে বলবে? সেও তো অরুর সাথে কতকিছু করেছে। অরু তো বলতে যায়নি, ‘আমি কখনো এমন করিনি। মানে.. মাত্র একবার।’
‘একবার? আচ্ছা ওই একবার কেন চুমু খেয়েছিলি?’
অরু দিশেহারা হয়ে পড়লো। কেন খেয়েছিল! না খেলে এতকিছু তো শুনতে হতো না। দুঃখিত গলায় বলল, ‘ভুল হয়ে গেছে।’
‘শাস্তি তো পেতে হবে।’
হঠাৎ কানের কাছটায় নিশ্বাসের ইঙ্গিত পেল। কেঁপে উঠলো অরু। এভাবে কানে মুখ নিয়ে রেখেছে কেন! পরপর নরম ঠোঁটের ছোঁয়া। দম আটকে রাখল অরু। ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারছে না। রুদ্ধশ্বাস ফেলে নড়েচড়ে উঠলো তন্ময়ের বাহুতে। কিন্তু সরতে পারলো না। তন্ময় শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে। ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে যাচ্ছে কানের লতিতে। বিচরণ করছে সেখানে। পরপর সেই চিরচেনা গম্ভীর স্বরে সুরের তাল শুনতে পেল। ভীষণ কাছ থেকে। খুব ধীরে। অরুর উথালপাতাল ধুকপুক বেড়ে গেল শত গুনে।
‘যাব তেরি উঙলিয়া মুঝকো ছু যাতি হে,
তু কাহি খোয়াব দিল মে জাগা যাতি হে,
ইতনি বে-রাঙ ভী তো নেহি জিন্দেগী,
হার মুলাকাত মুঝছে এ কেহ যাতি হে..
তেরি-হি বাহো মে, ফানাহো-মে,
রেহনা মুঝে হার দাম ছাদা,
তেরি-হি ইয়াদো-মে, নিগাহো মে
রেহনা মুঝে হার দাম ছাদা…
তেরি জুলফ যাব ভী বিখার যাতি হে,
অ্যা হাসি তু হাসি, ওর হো যাতি হে,
যো কিতাবো-মে পাঢতে রাহে আজ তাক,
ওহ পারি হাম-কো তুঝ মে নাজার আতি হে,
রাত তিনটা পঁয়ত্রিশ। অরু সোফায় বসে। হাতে কফির মগ। ধীরে কফিটুকু খাচ্ছে। চোখজোড়া জ্বলছে রীতিমতো। মাথাটাও ভাড় হয়ে আছে। এমন গান শুনিয়েছে লোকটা যে অরু দু’দন্ড আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি ছাঁদে। হাঁটু কেঁপে ভেঙে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস তন্ময় ধরে রেখেছিল নাহলে তো পড়ে যেতো। বুকের ভেতর এখনো সমানতালে কাঁপছে। গলাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে।
প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৪৫+৪৬
তন্ময় একটা পঁয়তাল্লিশে বেরিয়েছে। বাহির থেকে রুম লক করে গিয়েছে। সঙ্গে ভেতর থেকেও করতে বলেছে অরুকে। সেলফোন দিয়ে গিয়েছে দরকার পড়লে কল করতে। অরুর প্রয়োজন পড়েনি। সে চুপচাপ বসে থাকলো পুরো সময়। লঞ্চ নারায়ণগঞ্জের ত্রিসীমা চলে এসেছে। দূর থেকে দেখা মিলছে বড়ো অট্টালিকার। গাছপালা, ঘন জঙ্গল সবই আবছা দৃশ্যমান। অরু বারান্দার চেয়ারে বসে তাকিয়ে রইলো। বুকে হাত চেপে রাখল। চোখ বুঝল।
