বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩১

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩১
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আজকে আদিব আর রাইমার বিয়ে। সকাল থেকে বাড়িতে সবার মাঝেই চরম ব্যস্ততা। তবে ঔষধ আর গতরাতের ধকলের জন্যে অনিমার ঘুমটা একটু দেরীতেই ভাঙল। রাতে পরে থাকা হলুদ শাড়িটা না পাল্টেই লম্বা হাই তুলতে তুলতে গার্ডেন এরিয়াতে গিয়ে দেখল রাইমাকে গোসল করানো হচ্ছে। গোসল বলতে ঐ একটু তেল, হলুদ ছুঁইয়ে জল ঢেলে দেওয়া। অনিমাও ওদের সাথে যোগ দিল। রাইমাকে ওরা বারবার বিভিন্ন কথা বলে লজ্জায় ফেলছে। আর বেচারি সত্যিই লজ্জা পেয়ে একদম গুটিয়ে যাচ্ছে।

ওখানকার কাজ সেড়ে রাইমাকে গোসলে পাঠিয়ে অনিমা, জাবিন, অরুমিতা, স্নেহা ওরা ওপর পাশে এসে দেখে আদিবকে সবাই জোর করে ধরে রেখেছে। ওরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারল না। সবাই মিলে বেচারার সাথে এরকম জবরদস্তি করার মানে কী? তাই আরেকটু এগিয়ে যেতেই ব্যাপারটা বোধগম্য হলো ওর কাছে। সবাই আদিবকে তৈলাক্ত হলুদ মাখিয়ে গোসল করাবে কিন্তু আদিব সেটা করবেই না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদ্রিয়ান, আশিস, নাহিদ, তীব্র সবাই ওকে জোর করে ধরে রেখেছে। একপ্রকার জোর করে আদিবকে হলুদ মাখানো হলো। অভ্র খুব দায়িত্ব নিয়ে সবগুলো মুহূর্তকেই ক্যামেরা বন্দি করে নিচ্ছে। অনিমারা সবাই খিলখিল করে হাসছে এই দৃশ্য দেখে। আদ্রিয়ানের চোখ হঠাৎ অনিমার ওপর পরতেই আদ্রিয়ান থমকে গেল। হালকা অগোছালো শাড়ি, খোলা চুল, মুখে ঘুমঘুম ভাব। আদ্রিয়ানকে ঘায়েল করার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট।

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান বুকে হাত দিয়ে কিছু একটা বোঝালো। অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। এমনিতেই এই লোকটা সবসময় ওকে লজ্জায় ফেলতে প্রস্তুত। কালকেও হলুদের ব্যাপারটা নিয়ে অস্বস্তিতে পরেছে ও। ও ওপরে যেতেই সবাই মিলে যেকে ধরছে যে গালে হলুদ কীকরে এলো। অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছিলনা। আদ্রিয়ানের কড়া নির্দেশ ছিল যে হলুদ মোছা যাবেনা। তাইতো এভাবেই সবার সামনে আসতে হল। সবাইকে কোনরকমে বুঝিয়ে দিলেও ওরা যারা আদ্রিয়ানের ব্যাপারটা জানে সবাই আন্দাজ করতে পেরেছিল। বেচারীকে এই নিয়ে ভীষণ জ্বালিয়েছেও।

অনিমার চোখ অরুমিতার দিকে পরতেই ও খেয়াল করল যে অরুমিতা একবার আশিসের দিকে তাকিয়েছে কিন্তু পরে আর তাকায়নি। অথচ আশিস একটু পরপরই অরুমিতার দিকে কেমন একটা শুকনো মুখ করে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা খটকা লাগলেও পরে অনিমা তেমন গুরুত্ব দিলোনা। তবে বলা বাহুল্য তীব্র আর স্নেহার তথাকথিত ব্রেকাপ এখন ও চলছে। অভ্র ছবি তুলতে তুলতে এগোচ্ছে হঠাৎ জাবিনের সাথে ধাক্কা লাগে। অভ্র বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। ভাবছে না জানি এই মেয়ে আবার কী চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। অভ্রর ধারণাকে সত্যি করে জাবিন রেগে বলল,

” বারবার আপনার ধাক্কাটা আমার সাথেই লাগে কেন শুনি? পছন্দ-টছন্দ হয়ে গেছে না-কি? চান্স মারছেন?যত যাই করুণ আমি এত সহজে পটছি না ওকে?”
” ইন ইউর ড্রীম।”
কথাটা বলে অভ্র কেটে পরল। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে এই মেয়েকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। স্যারের বোন বলে ছেড়ে দেয়। ওদিকে জাবিন বোকার মত তাকিয়ে রইল। এভাবে অপমান? সেদিন শুধুশুধুই এর প্রশংসা করছিল। প্রশংসার যোগ্য নয় এ। লোকটা একটা আস্ত বজ্জাত।

কিছুক্ষণ পরেই সবাইকে হলুদ দিয়ে মাখিয়ে দেওয়ার খেলা শুরু হল। যে যাকে পারছে একপ্রকার হলুদ স্নান করিয়ে দিচ্ছে। অনিমাদের দিকে কেউ এখনও আসেনি তবে আসছে। হঠাৎ করেই অনিমা নিজের কোমরে স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল। কোমরের উন্মুক্ত অংশটায় তাকিয়ে দেখে হলুদের ছড়াছড়ি। ও দ্রুত পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হঠাৎ পেছন থেকে কানের কাছে কেউ ফিসফিসিয়ে বলল,
‘বলেছিলাম না প্রথম অধিকার আমার।’

অনিমা চোখ বন্ধ করে ফেলল। একটুপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখল আদ্রিয়ান যাচ্ছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে বাঁকা হেসে একটা চোখ টিপ মারল ও। অনিমা চোখ নামিয়ে হেসে দিল। লোকটা সত্যিই আস্ত এক পাগল। ততক্ষণে জাবিন ওরাও যোগ দিল এতে। সবাই বেশ মজা করে খেলছে। তবে অনিমা খেয়াল করল যে আদ্রিয়ানকে কেউ হলুদ লাগাতে পারছেনা।

ও এদিক ওদিক পালাচ্ছে শুধু। অনিমা ভাবল একে তো এভাবে বেঁচে যেতে দেওয়া যায় না, কিছুতেই না। কিছু একটা করতেই হবে। অনিমা জাবিন, অরু আর স্নেহাকে ডেকে কানে কানে কিছু একটা বলল। ওরা এবার আদ্রিয়ানের পেছনে পরেছে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে ধরে ফেলা তো এতো সহজ নয়। আদ্রিয়ান পালিয়ে একটু দূরে গিয়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে হালকা জোরে শ্বাস নিচ্ছে ফোনটা বেড় করতে যাবে এমন সময় কেউ ওর দু গাল ভর্তি করে হলুদ লাগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান হকচকিয়ে তাকিয়ে দেখল অনিমা খিলখিলিয়ে হাসছে। যে হাসি আদ্রিয়ানকে বারবার মারে। আদ্রিয়ান চোখ ছোট করে বলল,

” জানপাখি, এটা কী ঠিক হল?”
অনিমা হাসতে হাসতে বলল,
” একদম ঠিক হয়েছে! এই নিয়ে দু-দুবার আমার গায়ে হলুদ মাখিয়েছেন। আমি অতি সুন্দরভাবে তার শোধ তুললাম।”
বলে দৌড়ে পালাতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এসে গাছের সাথে চেপে ধরে বলল,
” কোথায় যাচ্ছো বেবি? আমার সবকিছুরই অর্ধেক ভাগ তোমার। নিজের ভাগটুকু না নিয়ে চলে গেলে হবে?”

অনিমা কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান নিজের গাল অনিমার গালের সাথে জোরেই ঘষে দিল। আদ্রিয়ানের হালকা খোঁচা দাঁড়িতে ব্যাথা পেয়ে অনিমা ‘আহ’ করে উঠল। আদ্রিয়ান পিঞ্চ করে বলল,
” লাগল বুঝি?”
অনিমা একগাদা বিরক্তি নিয়ে বলল,
” রকস্টার সাহেব? আপনি জানেন আপনি খুব খারাপ একটা লোক?”
” হ্যাঁ জানিতো ভীষণ খারাপ। কিন্তু এই খারাপ মানুষটাও কারো মায়ায় জরিয়ে গেছে। কোন এক মায়ারাজ্যের মায়াবিনী রাজকন্যা তাকে বশ করে নিয়েছে।”

অনিমা সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল। অাদ্রিয়ান ওর আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
” এইযে সে সকালে এরকম এলোমেলো ভাবে বেড়িয়ে চলে আসে। তুমি কী জানো তার এমন হুটহাট ঘায়েলকারী রূপ আমাকে মেরে ফেলে? একদম মেরে ফেলে।”
অনিমা আবার চোখ তুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ভ্রু নাচাতেই ও মুচকি হেসে আবারও চোখ নামিয়ে নিয়ে আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে চলে গেল। এই লোকটার সামনে আর থাকা যাবেনা। এর একেকটা বাক্য ভীষণই ভয়ংকর, ওর সর্বস্ব কাঁপিয়ে রেখে দেয়।

আদিব আর রাইমার বিয়ে ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে। সারাদিন অনেক হৈ হুল্লোড় করেই কেটেছে সবার। রাতে সবাই ফ্রি হয়ে যে যার যার মত শুতে চলে গেছে। সবাই আজ সত্যিই খুব ক্লান্ত তাই। অরুমিতা জল খেয়ে রুমে শুতে যাচ্ছিল হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল। অরুমিতা তাকিয়ে দেখে আশিস দাঁড়িয়ে আছে। অরুমিতা চলে যেতে নিলেই আশিস দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বলে,

” অরু প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
অরুমিতা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
” প্রথমত অরুমিতা হবে। আর দ্বিতীয়ত কথা বলার মত কোন সম্পর্ক হয়তো আমাদের মধ্যে নেই। তাইনা?”
” কোনদিনও ছিলোনা?”
” ছিল তো। আপনার জন্যে টাইমপাস আর আমার জন্যে ভুল। যাই হোক অতীত ঘাটবোনা আমি। আসছি।”
অরুমিতা যেতে নিলেই আশিস বলল,
” আ’ম সরি। আমি জানি আমি…”

” আমি আগেও বলেছি যে আমি অতীতকে ভুলে গেছি। তাই এসব নিয়ে মাথা না ঘামানোটাই ভালো হবে। ভালো আছি আমি। তাই দয়া করে আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না।”
আশিসকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অরুমিতা ওর রুমে চলে গেল। স্নেহা ঘুমিয়ে পরেছে। অরুমিতা ফোনে আশিসের পাঠানো আনসিন মেসেজটা দেখল। স্ক্রিনে তাকিয়ে ভাবলো সেদিনের কথা যেদিন এই আপরিচিত আশিসের সাথেই চ্যাটিং এ প্রথম কথা হয়েছিল:

কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোন চেক করতে গিয়ে আবার সেই আইডি থেকে মেসেজ দেখে অবাক হয়েছিল ও। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি তোমার ফ্রেন্ডের বিএফ এর কাজিন হই। তোমার সাথে জরুরি কথা ছিল।’ তখন ওর মনে একটু কৌতূহল জেগেছিল। লোকটা কী বলবে? এরপরেই অরুমিতা রিপ্লে করেছিল। ফরমালি কিছু কথাবার্তাও বলেছে।

পরে জানতে পেরেছিল যে সত্যিই ওর রুমমেটের বিএফ এর কাজিন হয়। পরে চ্যাটিং এর মাধ্যমেই টুকিটাকি কথা হওয়া শুরু হয় ওদের মধ্যে। যা ধীরে ধীরে বাড়তে সাথে। এরপর দুজনের মধ্যেই বেশ ভালো বন্ডিংও হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন আশিস অরুমিতাকে প্রপোজ করে বসে। অরুমিতা অবাক হয়েছিল। আশিসকে যে ওর পছন্দ না সেরকম কিছুই না কিন্তু হঠাৎ এভাবে প্রপোজ করাতে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
স্নেহার ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে অরুমিতা। স্নেহা ভাঙা কন্ঠে বলে,

” কীরে? বসে আছিস কেন? ঘুমাবিনা?”
অরুমিতা মাথা নেড়ে চুপচাপ শুয়ে পরল। অতীতের কথা ও আর ভাববে না। যা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। ও ওর বর্তমানে বাঁচবে। পেছনে ফিরে আর তাকাবেনা।

বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান শেষ। আজ অনিমারা সবাই ফিরে যাবে এখন। বিকেলে আদিব আর রাইমা চট্টগ্রাম যাবে ওদের দেশের রাইমাদের বাড়ি। নাহিদ আদ্রিয়ানদের সাথে ওদের বাড়িতে যাবে। ওখানেই আপাতত থাকবে ও। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়োতে যাবে তখনই আদিবের দাদি অনিমা আর আদ্রিয়ানকে ডেকে পাঠাল। ওরা দুজনেই বেশ অবাক হল। হঠাৎ ওদের আবার কেন? ভেতরে গিয়ে দেখে আদিবের মাও বসে আছে। ওরা গিয়ে দাঁড়াতেই আদিবের দাদি বলল,

” তোমরা যে মামাতো ফুপাতো ভাই বোন নও সেটা আমি দুদিন দেখেই বুঝে গেছি।”
আদিবের মাও বলল,
” হ্যাঁ সেই। তোমাদের আচরণ, অনিমার ভাইয়া বলতে এতো সংকোচ। সব দেখে এমনিতেই বুঝে গেছিলাম। যাই হোক বিয়ে কবে করছ?”
আদ্রিয়ান মাথা চুলকে একটু হেসে বলল,
” আসলে…”
আদিবের দাদি বলল,

” এসব আসলে নকলে ছাড়ো। তাড়াতাড়ি বিয়ে টিয়ে করে ফেল। আমরা তোমাকে চিনি তাই কিছু মনে করিনি। জানি তুমি কেমন তাই। কিন্তু লোকেতো বুঝবে না। কেচ্ছা রটাতে সময় লাগেনা। ”
তারপর অনিমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
” আর এইযে মেয়ে আমার এই ডানপিটে লাগামছাড়া নাতিটাকে তাড়াতাড়ি আঁচলে বেঁধে ফেলো তো। পরেরবছর বড় মা বলে ডাকার মত কেউ জেনো চলে আসে হ্যাঁ?”

দাদির কথা শুনে আদ্রিয়ানের কাশি শুরু হয়ে গেল। অনিমা অবাক হয়ে তাকাল। কথাটার মানে বুঝতে কিছুক্ষণ লাগল ওর। মানেটা বোঝার সাথে সাথে মারাত্মক লজ্জা পেল অনিমা। দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে চলে এল। সবাই কী পেয়েছে কী? ছুড়ি থেকে বুড়ি সবাই কী ওকে লজ্জা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে না-কি? আদ্রিয়ানের সামনে দাদি কী বলল এটা? এখন আদ্রিয়ানের সামনে কীকরে দাঁড়াবে ও? কী লজ্জা!

দুপুরে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া করে আদ্রিয়ান, অনিমা, জাবিন, অভ্র নাহিদ যে যার যার রুমে দীর্ঘসময়ের লম্বা ঘুম দিয়েছে। সবাই ক্লান্ত ছিল তাই।সন্ধ্যাবেলা ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে চা আর পাকোড়া খেতে খেতে গল্প করছে। সবটা অনিমাই বানিয়েছে। নাহিদ পাকোড়া খেতে খেতে বলল,
” ভাবী! জাদু আছে তোমার হাতে। কী টেষ্ট! মানতে হবে এডি তোর কপাল ভালো। আমার ম্যাডাম তো রান্নায র ও জানেনা। বিয়ের পর কী হবে কে জানে?
আদ্রিয়ান হেসে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩০

” তোর রান্নার হাত তো ভালো। তুমি খাওয়াবি! সবসময় বউরাই কেন রাঁধবে?”
” হ্যাঁ কপালে আমার সেটাই আছে!”
ওরা এসব নিয়ে হাসিহাসি করছে। তখন পাশ দিয়ে একজন সার্ভেন্ট স্টোর রুম পরিষ্কার করে ঝুড়িতে আবর্জনা নিয়ে যাচ্ছিল তখন ঝুড়ি থেকে একটা কাগজ পরে গেল। অনিমা কাগজটা তুলে ডাকতে যাবে তার আগেই কাগজে লেখাটা দেখে ওর চোখ আটকে গেল। মাথা প্রচন্ড জোরে ব্যাথা করে উঠল, কিছু আর্তনাদ, মাটিতে ভেসে যাওয়া রক্ত, একটা মেয়ের করুণ আকুতিমিনতি, হৃদয় গ্রাসী চিৎকার সব কানে বাজছে, চোখে আবছা ভেসে উঠছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা সব অন্ধকার হয়ে গেল ওর।

জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে ফেলল ওকে। ওরাও দাঁড়িয়ে গেল। অভ্র জাবিন অনিমাকে নিয়ে ব্যস্ত। নাহিদ দ্রুত সেই কাগজটা নিয়ে দেখল ওটা প্রায় দেড় বছর পুরোনো একটা পেপার কাট, তাও ছেড়া। হেডলাইনের অংশে একটা নাম বোঝা যাচ্ছে ‘আর্জু শারমা’। নাহিদ একটু অবাক হল। নামটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা বাঙালি নয়, সম্ভবত ভারতীয়।

কিন্তু একটা অবাঙালি মেয়ের নাম পড়ে অনিমা এমন করল কেন? ও বুঝতে পারছে নামটার সাথে অনিমা স্মৃতি জড়িয়ে আছে কোনভাবে। আদ্রিয়ানের এসবে খেয়াল নেই। ও অনিমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। অনিমাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসতেই নাহিদ পেপারটা আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে পেপারের অংশটুকু পড়ল, কিন্তু কিছু বলল না। অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে নাহিদকে কিছু একট ইশারা করে রুমের উদ্দেশ্যে হাটা দিল।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩২