বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৮

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৮
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

চোখের সামনে এরকম অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে যাবে। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরীর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি। অনিমার বাবাকে চোখের সামনে জীবিত দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন ওনারা। তারওপর সে না-কি আবার অনিমার বাবা? এতোটাই অবাক হয়েছেন যে শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আদ্রিয়ান একটু হেসে পেছন থেকে কবির শেখের দু-কাধে হাত রেখে বলল,

” কী হল মামা? আমার শশুরমশাইকে দেখে তোমরা এরকম মিউট হয়ে গেলে কেন?”
আদ্রিয়ানের কথায় কবির শেখ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলেন। একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার হাসান কোতয়ালের দিকে তাকালেন। হাসান কোতয়াল অনিমাকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। অনিমা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই দুজনের দিকে। ওই দুজন মানুষকে ও একদমই সহ্য করতে পারেনা। রঞ্জিত চৌধুরী এখনো অলমোস্ট হা করে তাকিয়ে আছেন। কবির শেখ শুকনো এক ঢোক গিলে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” উনি চিপ রিপোর্টার হাসান কোতয়াল না? যিনি পাঁচবছর আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছিলেন?”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
” মামা! তুমিও না! এতো বুদ্ধিমান মানুষ হয়েও বোকার মতো কথা বলে যাচ্ছো। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ উনি জীবিত, সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। আর তুমি বলছ মারা গেছেন?”
এবার রঞ্জিত চৌধুরী মুখ খুললেন। উনিও কম্পিত কন্ঠে বললেন,

” কিন্তু খবরে তো তাই বলেছিল। আর ওনার আইডি কার্ডসহ লাশ সবই পাওয়া গেছিল।”
এবার হাসান কোতয়াল হেসে বললেন,
” আরে নিউসপেপারে লেখা সব কথা সত্যি হয়? আর সবাইতো জানে মুখ বোঝা যাচ্ছিলনা লাশের। ওটা আমি ছিলামনা।”
কবির শেখ এবার স্বাভাবিক হয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,
” কিন্তু এই পাঁচবছর সামনে আসেন নি কেন আপনি?”
হাসান কোতয়াল হেসে বললেন,

” সব প্রশ্নের উত্তর কী দেওয়া যায়? সময় এলে জেনে যাবেন। যাই হোক, আপনি তাহলে আদ্রিয়ানের মামা। আমার মেয়ের মামাশশুর, কবির শেখ। আর উনি আদ্রিয়ানের খালু, রঞ্জিত চৌধুরী। তাইতো?”
রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ আবার অবাক হলেন। হাসান কোতয়াল এতো স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন কীকরে? যেন সব নরমাল। তবে কী সেসব দিনের কথা ভুলে গেছেন তিনি? কিন্তু এইমুহূর্তে পরিস্থিতি সামলাতে ওনারাও হাসিমুখে হাসান কোতয়ালের সাথে কুশল বিনিময় করে নিলেন। হাসান কোতয়াল মিসেস লিমার সাথেও পরিচিত হয়ে নিলেন। আদ্রিয়ান ওনাদের হাত ধরে বলল,

” অনেক পরিচয়পর্ব হয়েছে এবার চল বস। খেতে খেতে সবাই আড্ডা দাও।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠল। সবাই আড্ডায় মেতে উঠল।কিন্তু কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী বারবার আড়চোখে হাসান কোতয়ালকে দেখছেন। কিন্তু হাসান কোতয়ালের আর সেসবে পাত্তাই নেই। উনি ওনার মতো আলাপ করে যাচ্ছেন সবার সাথে। সকলের হাসি আনন্দের মধ্যে কেউ আর বাকি ঘটনা জানার ইচ্ছা প্রকাশ করল না। যাতে করে এই কথা ঐ অবধি-ই চাপা পরল।

সাড়ে সাতটার দিকে সবাই চলে গেল। কবির শেখ, রঞ্জিত চৌধুরী, মিসেস লিমা ওনারা সবাই বেড়িয়ে যাবেন একটু পরেই। ওনাদেরকে থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু ওনারা থাকতে পারবেন না আজ। এটাই বললেন। মানিক আবরার ব্যাক্তিগতভাবে রঞ্জিত চৌধুরীকে খুব একটা পছন্দ করেন না তাই আর বারণ করেন নি। অদ্ভুতভাবে রিক দরকার ছাড়া একটাও বাড়তি কথা বলেন নি নিজের মামা বা বাবার সাথে। যেটা কবির শেখের চোখে কিছুটা হলেও পরেছে। ওনারা রাতে ডিনার করে চলে গেলেন। রয়ে গেল শুধু রিক আর স্নিগ্ধা। ওরাও কাল সকালে চলে যাবে। কিন্তু রিকের ইচ্ছেতেই আজ রাতটা এখানে থাকা হল ওদের।

ছাদের রেলিং ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনিমা। একটা জাম রঙের শাড়ি জড়ানো গায়ে, খোলা চুলগুলো বাতাসে হালকা দুলছে। সত্যিই সময় যখন সবকিছু কেড়ে নিতে পারে, ঠিক তেমনই এক ঝটকায় সবকিছু এ ফিরিয়েও দিতে পারে তার প্রমাণ ও আজকে পেল। একসময় ও নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আজ ওর কাছে সবকিছুই আছে। এতো ভালো শশুর বাড়ি, আদ্রিয়ানের মত স্বামী, আর এখনতো নিজের বাবাকেও ফিরে পেয়েছে।

তাইতো আজ ফজরের আগে আগে নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কোটিকোটি শুকরিয়া জানিয়েছে ওকে সব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে। চোখ বন্ধ করে শান্তির একটা লম্বা শ্বাস ফেলল ও। তখনই পেছন থেকে কেউ ‘নীলপরী’ বলে ডেকে উঠল। অনিমা পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে রিক দাঁড়িয়ে আছে। রিকের ওপর অনিমার আগের জমানো অনেক রাগ, অভিমান থাকলেও, ঐ তিনদিন রিক যেভাবে একজন প্রকৃত বন্ধুর মত ওর পাশে ছিল এরপর আর সেই রাগ বা অভিমান নেই অনিমার। সবটাই মিটে গেছে। তাই মুচকি হেসে বলল,

” কিছু বলবেন?”
রিক একটু এগিয়ে এসে অনিমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
” আমি আজ চলে যাচ্ছি।”
” ওহ।”
ছোট্ট করে বলল অনিমা। রিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু বলতে চাই। শুনবে?”
অনিমা রিকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর নরম গলায় বলল,
” জি বলুন।”

” তোমার সেই দিনটার কথা মনে পরে? সেদিন রাতে বাইরে ভারি বর্ষণ হচ্ছিল। বাজ পরছিল ঘনঘন। আমি তখন নাইট ক্লাব থেকে বাড়ি ফিরছিলাম গাড়ি করে। হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে এসে পরল একটা মেয়ে। একটুর জন্যে এক্সিডেন্ট হয়নি। আমি অনেক রেগে গেছিলাম এভাবে গাড়ির সামনে এসে পরাতে। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই মেয়েটা দ্রুত এসে আমায় আকড়ে ধরে কান্নামাখা কন্ঠে বলেছিল, ‘ প্লিজ আমাকে বাঁচান। ওরা মেরে ফেলবে আমাকে।’ আরও অনেক কথা বলছিল কিন্তু ওর কান্নার জন্যে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি। পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাইনি। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে আমার ওপর ঢলে পরেছিল। ”

অনিমা শুধু তাকিয়ে আছে রিকের দিকে কারণ ও জানে রিক ওর কথাই বলছে। রিক আবার বলতে শুরু করল,
” মেয়েটাকে নিয়ে কী করব? কোথায় যাবো? বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই দু-তিনটা গাড়ি আসতে দেখে বুঝেছিলাম ওরাই মেয়েটাকে মারার জন্যে খুঁজছে। কিন্তু আমি তখন একা ছিলাম, ওদের সাথে পেরে উঠতাম না। কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছিল মেয়েটাকে বাঁচানো প্রয়োজন। তাই মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরেও গাড়িগুলো আমাদের পিছু নিচ্ছিল।

ওদের দৃষ্টি থেকে আড়াল হওয়ার জন্যে আমি গাড়ি চালিয়ে কোথায় পৌছে গেছিলাম নিজেও জানিনা। যখন দেখলাম ওরা আমাদের পিছু নিচ্ছেনা তখন গাড়ি থামাই। মেয়েটা তখনও অজ্ঞান ছিল। পুরো ভিজে গেছিল, ঠান্ডায় কাঁপছিল ও। পুরো শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছিল। আমি আশেপাশে খুঁজে একটা অর্ধেক তৈরী হওয়া বাড়ি দেখতে পাই। যেটার ছাদ দেওয়া হলেও দেওয়াল দেওয়া হয়নি। ঐ ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ওটাই অনেক ছিল। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে সেখানেই গেছিলাম।

মেয়েটাকে পিলারের সাথে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে ওর ভেতরে পরে থাকা পুরনো কিছু কাঠ ভেঙ্গে, লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ওকে আগুনের পাশে নিয়ে বসিয়ে, হাতের তালু ঘসে ঘসে অনেক কষ্টে টেমপারেচ্যার স্বাভাবিক করি। আধঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছিল ওর। জ্ঞান ফেরার পর ভয়ে সিটিয়ে ছিল। আমাকেও খুব ভয় পাচ্ছিল। একদম গুটিয়ে বসে ভয়ে ভয়ে দেখছিল আমাকে। ঐ ভীত চোখেই আমি আমার সর্বনাশ দেখেছিলাম। ভেজা লেপ্টে থাকা চুল, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখে জমে থাকা বিন্দূ বিন্দু পানি, নীল গ্রাউন পরা ভয়ে গুটিয়ে থাকা পিচ্চি মেয়েটা মুহূর্তেই আমার হৃদয়ের সবটা দখল করে নিলো। তখনই বুঝে গেছিলাম যে ফেসে গেছি।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকাল রিকের দিকে। এসব কী বলছে কী রিক? কেন বলছে? রিক বলল,
” অনেক কষ্টে তোমাকে বুঝিয়েছিলাম যে আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। এরপরের দিন তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলাম। তুমিও এসছিলে আমার সাথে কোন আপত্তি না করেই। বিশ্বাস কর,সেই থেকেই আস্তে আস্তে প্রেম নামক অনুভূতি গ্রাস করছিল আমাকে। ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমাকে। আর সময়ের সাথে সাথে সেটা গভীর হয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা বাবা তোমাকে পছন্দ করতেন না।

আর তুমিও বাবা আর মামাকে দেখলে ভয় পেয়ে যেতে। তবুও সব ভালো চলছিল। ধীরে ধীরে তুমি আমাকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবতে শুরু করলে। আমি, তুমি, সিগ্ধু তিনজনের একসঙ্গে হাসি-মজায় বেশ ভালো সময় কাটছিল। একপর্যায়ে যখন আমি তোমাকে বিয়ের কথা বললাম তখন তুমি, সময় চাইলে। পরে রাজি হয়েছিলে ঠিকই কিন্তু তোমার মধ্যে যে বিয়েটা নিয়ে যথেষ্ট কনফিউশন ছিল আমি বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম সময়ের সাথেসাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

ভালোবাসিতো! তাই যেকোন মূল্যে তোমাকে নিজের করে রাখতে চেয়েছিলাম, ব্যাস! কিন্তু হঠাৎ তোমার ব্যবহার বদলে গেল। দিন দিন এগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছিলে তুমি। শুধু তাই না আমার সাথে অকারণেই খারাপ ব্যবহার করতে। আমার নরমাল কথাটাও তোমার এবনরমাল লাগত। আমাকে বিয়েটাও ভেঙ্গে দিতে চাইলে কোন কারণ না বলেই। এগুলো দিন দিন অসহ্য হয়ে যাচ্ছিল আমার জন্যে। আমি পারছিলাম না মানতে। তোমাকে ভালোভাবে বোঝাতে গেলে আরও মিসবিহেভ করতে আমার সাথে। আমি এমনিতেই শর্ট টেমপার তাই ধৈর্য ধরতে পারিনি। একপর্যায়ে আমিও তোমার গায়ে হাত তুলেছি।

বেশ কয়েকবার তুলেছি। কিন্তু ট্রাস্ট মি। ততবার অপরাধবোধ কাজ করেছে আমার মধ্যে। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি তোমার ওরকম ইগনোরেন্স আর অদ্ভুত ব্যবহারে। এরপর বিদেশে যেতে হল আমাকে। সেখানেও ফোনে ঠিক করে কথা বলতেনা আমার সাথে। আর ফিরে এসে আমার বাবা মামার কাছে শুনলাম, তুমি পালিয়ে গেছ। জানো তখন কতটা কষ্ট হয়েছিল? কতটা আঘাত পেয়েছিলাম আমি?”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিকের গলা কেঁপে কেঁপে উঠছে। এসব কী বলছে? রিক কী তাহলে জানতোনা কিছু? তাহলে নিজে কেন স্বীকার করেছিল সব? রিক আবার বলল,
” কোথায় কোথায় না খুঁজেছি তোমাকে। পাগল হয়ে গেছিলাম প্রায়। শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। অবশেষে খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে। সেই ভাই, যাকে আমি নিজের আপন ভাইয়ের মতই ভালোবাসি। সেদিনের চেয়ে বেশি অসহায় এর আগে কোনদিন লাগেনি আমার।

সব রাগ তোমার ওপর গিয়ে পরেছিল। মনে হয়েছিল সবকিছুই তোমার জন্যে হয়েছে। তুমিই খেলেছ আমাদের দুজনকে নিয়ে। কিন্তু না! তোমার কাছ থেকে যা শুনলাম তাতে আমি আমার সব ভাষাই হারিয়ে ফেললাম। ছলনা তুমি না, আমার নিজের বাবা-মামাই করেছে আমার সাথে। মিথ্যে তুমি না, ওরা বলেছিল আমাকে। আর যেই ইনজেকশনের কথা তুমি বলছিলে না। সেটা ডক্টর প্রিফার করেছিল তোমার জন্যে। তুমি বারবার সেন্সলেস হয়ে যেতে তাই। সেটা শুধু একসপ্তাহের জন্যেই ছিল।

আমি ভেবেছিলাম তুমি সেটার কথাই জিজ্ঞেস করছ তাই ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। আমি জানতামই না যে তোমাকে আর কোন ইনজেকশন দেওয়া হত, তাও রোজ। আর তোমাকে কোন পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তার এরেঞ্জমেন্ট তো দূর সে সম্পর্কে আমি কিছু জানতামও না। আমি ভালোবাসি তোমাকে। তাই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম কারো কুর্কম ঢাকার জন্যে না, নীলপরী।”

অনিমা স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। তারমানে ও প্রথম যেটা ভেবেছিল সেটাই সত্যি? ঐ লোকগুলো আবার সেই নোংরা খেলা খেলেছে। ও এবার করুণ দৃষ্টিতে তাকাল রিকের দিকে। রিকের চোখ লাল হয়ে আছে। সে চোখে পানি টলমল করছে। রিক আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল,
” এটা ভেবোনা যে আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই বা তোমার কাছ থেকে কিছু এক্পেক্ট করছি। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি, সত্যিই ভালোবাসি। এই সত্যিটুকু না জানাতে পারলে আমি মরেও শান্তি পেতাম না। তুমি চাইবেনা জানি, কারণ তুমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসো, অনেকটা বেশিই ভালোবাসো।

কিন্তু তুমি চাইলেও আমি তোমাকে আমি এক্সেপ্ট করতে পারবোনা কারণ আদ্রিয়ান তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আমি তোমাকে ছাড়া এই কয়েকমাস কাটিয়ে দিতে পেরেছিলাম। তোমাকে অন্যের সাথেও মেনে নিতে পেরেছি যেটা আদ্রিয়ান পারবেনা। ওর ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা কিচ্ছু না। তবে এটা ভেবোনা আমি মহান হয়ে ত্যাগ করছি।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৭

আদ্রিয়ানের জায়গায় অন্যকেউ হলে আমি তাকে খুন করে হলেও তোমাকে নিজের করে নিতাম। কিন্তু এখন পারবনা। কারণ আমি জানি আমার চেয়েও অনেকবেশি ভালো থাকবে তুমি ওর কাছে। আর এরচেয়ে বেশি আমার কিচ্ছু চাইনা। সরি, তোমার সাথে যা যা মিসবিহেভ করেছি তার জন্যে। আ’ম রিয়েলি সরি।”

কথাগুলো বলে রিক পকেটে হাত ঢুকিয়ে পেছাতে পেছাতে বলল,
” আর হ্যাঁ, আমাকে কিন্তু আগের মতই নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে হবে। আদ্রিয়ান কী বলেছে জানোতো? বন্ধু হিসেবে আমি বেস্ট। ঐ পাগলটাকে সামলে রেখো। তোমাকে ছাড়া ও নিঃস্ব। তুমি না থাকলে ও মরে যাবে। আর ওকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমার। আসছি হ্যাঁ? কথা হবে পরে। ভালো থেকো। জানি থাকবে। আদ্রিয়ান আছেতো!

এটুকু বলে রিক উল্টো ঘুরে দ্রুতপদে চলে গেল। অনিমা স্তব্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সেদিকে। এরপর ঘুরে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সত্যিই রিককে কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল ওর। কিন্তু কেন জানি আজ সব কথা গলায় আটকে গেল। কিছুই বলা হলোনা। রিকের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এসব কথা ও জানতোই না। অযথাই মনে রাগ পুষে রেখেছিল যেখানে ছেলেটা নিজেই ভুক্তভোগী। এখন শুধু একটাই প্রার্থনা করছে ও, অনিমা নামক এই অতিতকে পেছনে ফেলে রিক যেন ভবিষ্যতের দিকে হাসিমুখে এগিয়ে যেতে পারে। এমন কেউ যাতে ওর জীবনে আসে যে ওকে ওর নীলপরীর চেয়েও বেশি ভালো রাখবে।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৯