বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬২

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

সকালের মিষ্টি মৃদু রোদের আলো চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে। সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল তাই সকালটা একটু বেশিই উজ্জ্বল। থাই গ্লাস দিয়ে আসা আলোয় রোদের সেই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পরেছে আদ্রিয়ানের রুমে। অনিমা গোসল করে বের হয়ে দেখে আদ্রিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। অনিমা চুল থেকে টাওয়েল টা সরিয়ে চেয়ারে মেলে রেখে আস্তে আস্তে গিয়ে আদ্রিয়ানের বরাবর ফ্লোরে বসল। আদ্রিয়ান খালি গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল অবধি পরে আছে, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির সাথে এই এলোমেলো রূপ, বেশ লাগছে দেখতে। একদম ইনোসেন্ট। অনিমা মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের চুলে হাত বুলিয়ে, কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। চোখ বন্ধ রেখেই আদ্রিয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে হাসল। চোখ না খুলেই বলল,

“একটা অবলা ছেলেকে এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে সুযোগ নিচ্ছো? এটা কী ঠিক, জানপাখি?”
অনিমা হালকা চমকে উঠল। আদ্রিয়ান জেগে ছিল? ও বুঝতেই পারল না? কী সাংঘাতিক লোক! ও মুখটা কাচুমাচু কর‍ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আজ না আপনি স্টুডিওতে যাবেন? আমাকেও তো ভার্সিটিতে ড্রপ করে দেবেন না-কি। উঠুন লেট হয়ে যাবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের ওপর ফেলে দিলো। অনিমা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে।আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
” সকালটা বউয়ের এমন মিষ্টি আদর দিয়ে শুরু হল। বউকে আদরটা রিটার্ন না করলে খুব খারাপ দেখাবে ব্যাপারটা।”
বলে আদ্রিয়ান অনিমার গালের কাছে থেকে ভেজা চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে শব্দ করে একটা চুমু দিল। এরপর অনিমার নাকে নাক ঘষে বলল,

” এবার ঠিক আছে।”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” আপনি দিন দিন চরম অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন রকস্টার সাহেব।”
” বউয়ের সাথে করব না তো কী অন্যকারো সাথে করব?”
অনিমা আদ্রিয়ানের পেটে হালকা আঘাত করে বলল,
” মেরে ফেলব কিন্তু!”
আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিল। অনিমা গাল ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে।

ন’টার দিকে আবরার মেনশনে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট টেবিলে খেতে বসছে। সবাই বসার পর অভ্র এসে বসল। সবাই টুকটাক কথা বললেও অভ্র অনেকটা চুপচাপ বসে আছে চোখমুখ শুকনো দেখাচ্ছে। যেটা আদ্রিয়ানের চোখ এড়ায়নি। কারণ ও অভ্রকে খুব ভালোভাবেই চেনে। গত দুই সপ্তাহ যাবতই দেখে আসছে, অভ্র আগের মত কথাবার্তা বলছে না। তাই কথার মাঝে বারবার অভ্রর দিকে তাকাচ্ছিল। কিন্তু জাবিন এখনো নামেনি আজ। মিসেস রিমা কয়েকবার ডাকার পর জাবিন নিচে নেমে এলো। রোজকার মত ওর চোখ দুটো আজও লালচে হয়ে আছে। মিসেস রিমা বললেন,

” কী ব্যাপার? কয়েকদিন যাবত দেখছি প্রায়ই সকালবেলা তোর চোখ লাল হয়ে থাকে। কী হয়েছে?”
কথাটা শুনে সবাই তাকাল জাবিনের দিকে। কিন্তু অভ্র তাকায় নি। জাবিন একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
” তেমন কিছু না মা। আসলে কয়েকদিন যাবত একটু রাত জেগে পড়ছিতো তাই।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কীসের পড়া? এখনো তো এডমিশনই নিস নি।”
” আরে টেক্সট বুক না গল্পের বই পড়ছিলাম আরকি।”

বলে জাবিন দ্রুত খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আদ্রিয়ান আর কিছু বলল না। অভ্র এবার একপলক তাকাল জাবিনের দিকে। সেদিন ছাদে অভ্র ভালোবাসার কথা বলার পর জাবিন থমকে গেছিল কিছুক্ষণের জন্যে। ও তো বিশ্বাসই করতে চায়নি যে অভ্র কারো কাছে কমিটেড। ও কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলেছিল,
” তুমি মিথ্যে বলছো।”
অভ্রর সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল যে,
” তোমাকে শুধু শুধু মিথ্যে বলার কোন কারণ নেই আমার কাছে। আমি সত্যিই কমিটেড।”

জাবিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে সরে আসে ও। এরপর দুদিন চলে যায়। এই দুদিন জাবিন অভ্রর সাথে কয়েকবার কথা বলেছে কিন্তু অভ্র শুনেও শোনেনি, আবার কখনও বলতে চাইলেও অভ্র জাবিনকে সেই সুযোগটা দেয়নি। রাতে বাড়ি ফিরে অভ্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে জাবিন বসে আছে ওর বিছানায়। জাবিনকে এভাবে নিজের রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে জিজ্ঞেস করেছিল, এখানে কী করছে? জাবিন সেদিন পাগলামোর সব সীমা পেরিয়ে গেছিল।

পাগলের মত কান্নাকাটি করছিল। বারবার অভ্রকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথাই বলছিল, শুধু একবার বল তুমি মিথ্যে বলছ। এরকম হতে পারেনা। তুমি অন্যকারো হতে পারোনা। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। ভালোবাসি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি!” অভ্র কোনভাবেই বোঝাতে পারছিল না জাবিনকে। শেষে বাধ্য হয়েই একটা চড় মেরে দেয় জাবিনের গালে। জাবিন একদম চুপ হয়ে যায়। অভ্র ঝাঝালো কন্ঠে বলেছিল,

” লজ্জা করছেনা তোমার? আমি বারবার বলছি আমি কমিটেড, কেউ আছে আমার জীবনে তবুও তুমি এসব বলছ? আর হঠাৎ তুমি তুমি কেন করছ? পার্মিশান নিয়েছ আমার? আমি তোমার ভাইয়ের পিএ তোমার না। কতবার বলব? তুমি আদ্রিয়ান আবারার জুহায়েরের বোন জাবিন! এরকম হ্যাংলামো তোমাকে মানায় না। প্লিজ যাও এখান থেকে। যাও!”

জাবিন কিছুক্ষণ চুপচাপ অভ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে এসছিল রুম থেকে। এরপর ও আর ইচ্ছাকৃত অভ্রর সামনে যায়নি। আর না কোন কথা বলেছে। দু সপ্তাহেই চেহারাটাই বদলে গেছে মেয়েটার। নিজেরই খারাপ লাগছে এখন অভ্রর। অপরাধবোধ হচ্ছে ভীষণ। কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। কদিন হয়তো কষ্ট পাবে। এরপর এমনিই সব ঠিক হয়ে যাবে।

অনিমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দিয়ে সোজা স্টুডিওতে গেল আদ্রিয়ান। ওখানে আদিব?আশিস আর নাহিদ আগে থেকেই বসে ছিল। আদ্রিয়ান আগে নিজের নতুন গানের রেকর্ডিং টা সেরে নিল। বরাবরের মত আদ্রিয়ানের এবারের পার্ফরমেন্সেও ডিরেক্টর বেশ খুশি হল। লাঞ্চ করার জন্যে ওদের বসানো হয়েছে ওখানেই। ওরা তিনজন হাসি আড্ডায় মেতে থাকলেও আশিস একটু অন্যমনস্ক আছে। আদ্রিয়ান কথা থামিয়ে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কয়েকমাস যাবতই খেয়াল করছিস এমন দেবদাস টাইপ হয়ে বসে থাকিস হঠাৎ হঠাৎ। সমস্যা কী?”
আশিস একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
” কী আর সমস্যা হবে এমনিই।”
আদিব বলল,
” বললেই হলো এমনি? তোকে চিনিনা আমরা? তুই এরকম মোটেই ছিলিস না।”
নাহিদ বলল,
” সেটাই আমি ইউ এস থেকে ফিরে একদম অন্যরকম আশিসকে দেখছি। সমস্যা কোথায়?”
আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” শোন, আমার শুরু থেকেই তোর কিছু কিছু কার্যকলাপ পছন্দ নয়। আমি তোকে আগেও অনেক বোঝাতাম যে এমন কিছুই করে বসিস না যার ফল ভুগতে হয় পরে। আমার চোখ এড়ানো এতো সহজ নয়। আমি চাইলে এমনিই জেনে নিতে পারি কী ঘটিয়েছিস। কিছু বলার থাকলে এখনই বলে দে।”

আশিস মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। কীকরে বলবে ও অরুমিতার সাথে এতোটা জঘন্য অন্যায় করেছিল। আদ্রিয়ানের সামনে কনফেস করার মত সাহস ওর নেই। তাই চুপ করে রইল। আদ্রিয়ানও আপাতত আর কিছু জানতে চায়নি। ওদের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান গাড়ি ঘোরালো। ওকে এখন একবার ওর গ্যাং এর কাছে যেতে হবে। কিছু কাজ বাকি আছে। অভ্রকে সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানে। হাসান কোতয়ালকেও কল করে বলে দিয়েছে আসার জন্যে।

কিন্তু কিছু কেনাকাটা প্রয়োজন ওখানে যাওয়ার আগে তাই ওর গার্ডদের নিয়েই একটা মলে ঢুকলো। আদ্রিয়ানের মলে থাকার সময়টুকু অনেককের সাথেই সেলফি নিতে হয়েছে। যদিও সীমিতই দিয়েছে। পরে গার্ডরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছে। ঐ শপিং মলের সাথেই জয়েন্ট একটা রেস্টুরেন্ট আছে। আদ্রিয়ান বেড় হয়ে আসার সময় হঠাৎই সামনে কবির শেখ পরল। দুজনেই দুজনকে দেখে থমকে গেছে প্রায়। কবির শেখ হালকা ঘাবড়ে গেছেন আদ্রিয়ানকে দেখে। তবে আদ্রিয়ান মুহুর্তেই সামলে নিয়েছে নিজেকে। আদ্রিয়ান কবির শেখকে আগা গোড়া একবার স্কান করে নিল। বেশ শুকিয়ে গেছে চোখ-মুখ। আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

” আরে মা_মা! কেমন আছো? হঠাৎ এতোদিন পর মুখদর্শন করানোর ইচ্ছে হল তাহলে?”
কবির শেখ কিছুক্ষণ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” নিজেরই মামাকে এভাবে হেনস্তা করে তার মুখদর্শন করার ইচ্ছে ছিল বুঝি? এখন আর মামা ডাকটা তোমার মুখে মানায় না।”
আদ্রিয়ান একটু শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,
” আরে মা__মা। অনেককিছু তো তোমার মুখেও মানায় না। কিন্তু কী আর করার বল? রক্তের টান! যাই হোক, জেল তো আর হয়নি তোমার। আমার খালুজানের মতো। খোলাই আছো! শুধু ক্ষমতায় একটু ভাটা পরেছে তাইনা?”

কবির শেখ একটা কুটিল হাসি দিয়ে বলল,
” ভাটা যেমন পরে, সময়মতো জোয়ারও কিন্তু আসে ভাগ্নে! আর প্রবল জোয়ার কিন্তু সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সময় সমান যায়না। তোমার দুর্বল জায়গা, আর সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত করার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গাটা কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। সেটা তুমিও জানো।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে কবির শেখের দিকে তাকিয়ে থেকে একটু এগিয়ে গেল ওনার দিকে। কবির শেখ আদ্রিয়ানের চেয়ে হাইটে অনেকটা কম হওয়ায় আদ্রিয়ান হালকা ঝুকে বলল,
” জোয়ারের তেজ যতবেশিই থাকুক না কেন, শেষমেশ তাকে সমুদ্রের সীমাতেই ফিরে আসতে হয়। বেশিক্ষণ ভাসাতে পারেনা। কারণ এটাই ওর আসল জায়গা। ঠিক সেভাবেই নিজের জায়গাটা বুঝে নাও। যতক্ষণ আঘাতটা আমার ওপর থাকবে ততক্ষণ শুধু ততটুকুই শাস্তি পাবে যতটা অন্যায় করেছো। কিন্তু ওর গায়ে যদি একটু আচড় লাগে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। এটা মাথায় রেখো। মা__মা।”
বলে আদ্রিয়ান টিশার্ট থেকে সানগ্লাসটা বের করে চোখে দিয়ে চলে গেল। কবির শেখ ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে।

রাত এগারোটা বাজে। অনিমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লোশন লাগাচ্ছিল হাতে। তখন পেছন থেকে আদ্রিয়ান আলতো করে জড়িয়ে ধরল ওকে। কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
” বিয়ের পর থেকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে তোমাকে। একদম অন্যরকম।”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে আয়নায় আদ্রিয়ানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কেন? বিয়ের আগে সুন্দর লাগতোনা বুঝি? ওও তা কেন লাগবে? আশেপাশের এতো সুন্দরী সুন্দরী হিরোয়িন আর গায়িকা ঘুরে বেড়ালে আমার মত একটা শ্যামবর্ণের মেয়েকে সুন্দর কেন লাগবে? স্বাভাবিক! ঠিকই আছে। কিন্তু এখনো তো ওমনই আছি। আমার স্কিনটোন তো আর ব্রাইট হয়নি। ওও বুঝেছি সারাদিন সুন্দরী মেয়ে দেখে চোখের ব্রাইটনেস বেড়ে গেছে তাইনা?”

বলে ঝাড়া দিয়ে আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে আওয়াজ করে লোশনের টিউবটা টেবিলে রাখল। আদ্রিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলল,
” আরে আমি সেটা মিন করেছি নাকি? আমিতো জাস্ট বললাম __”
অনিমা আদ্রিয়ানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,
” হয়েছে! আর বাহানা দিতে হবেনা। সব বুঝেছি আমি। এতোই যখন সুন্দরী পছন্দ তখন আমায় জোর করে বিয়ে করেছিলেন কেন শুনি?”

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই বাইরে থেকে আওয়াজ এলো কথাবার্তার। অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই ভ্রু কুঁচকে ফেলল। একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে কী ব্যাপার সেটা দেখার জন্যে দুজনেই নিচে গেল। নিচে গিয়ে দেখে রিক নেশা করে এসছে বাড়িতে। শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে। স্নিগ্ধা আর মিসেস লিমা একসাথে ধরেও দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছেনা।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬১

মানিক আবরার, রিমা, নাহিদ, জাবিন, অভ্র সব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনিমাও অবাক হয়ে গেল। ও তো জানে রিক ড্রিংক করা ছেড়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান দৌড়ে গিয়ে ধরল রিককে। মিসেস লিমা আর স্নিগ্ধা ছেড়ে দিল। আদ্রিয়ান অনিমাকে সহ সবাইকে রুমে যেতে বলে রিককে নিয়ে ওর রুমে এলো। পেছন পেছন স্নিগ্ধাও এলো। রিক নিজে নিজেই আবোলতাবোল বলে চলেছে। আদ্রিয়ান রিককে শুইয়ে দিতেই রিক চোখ বন্ধ রেখেই একটা ঢোক গিলে ভাঙা গলায় বলল,

” আ’ম সরি স্নিগ্ধু। আমি নেশা করতে চাইনি। খেতে চাইনি এসব। কিন্তু__ কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছিল। বুকে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছিলো। আমি পারছিলাম না। নীলপরীকে আদ্রির সাথে দেখলে এতো কষ্ট কেন হয় আমার? কেনো সহ্য করার ক্ষমতা পাচ্ছিনা? কেন? কবে পারব আমি? কবে? আমি পারতে চাই। খুব করে পারতে চাই! পারতে__ চাই।”

বলে একদম চুপ হয়ে গেল। স্নিগ্ধার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। এতোদিন রিকের এই আহাজারি শুধু ও দেখতে পেতো। আজ আদ্রিয়ানও দেখে ফেলল। কী ভাবছে আদ্রিয়ান? অস্বস্তি কাটাতে ও তখনই চলে এলো ঐ রুম থেকে। আদ্রিয়ানের চোখ ছলছল করছে। এক অদ্ভুতরকম কষ্ট হচ্ছে ওর এখন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিককে চেঞ্জ করিয়ে, ঠিককরে শুইয়ে দিয়ে, লাইট অফ করে চলে এলো ঐ রুম থেকে। সাথে করে নিয়ে এলো চরম মানসিক অশান্তি।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬৩