বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১
shanta moni
সাত বছর পর বাড়ি ফিরছে চৌধুরী বাড়ির তিন ছেলে,,,
শুভ্র চৌধুরী,,অয়ন চৌধুরী,,নিলয় চৌধুরী,,
বাড়ি ফিরছে বল্লে ভুল হবে,,
পড়াশোনা শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে তিন ভাই,,,,
চৌধুরী বাড়িতে আজ খুশির আমেজ,,, সবাই খুশিতে আজ আত্মহারা,,,,
নাতি আসার খুশিতে
নাতিদের পছন্দের রান্না করছেন হেনা বেগম,,, সে আজ ভীষণ খুশি,,, আজ এত বছর পর তার তিন নাতি দেশে ফিরছে,, তার খুঁশি দেখে কে,,,
মনে মনে হেনা বেগম বলে
আজ যদি বড় বউমা থাকতো,,,, কতই না ভালো হতো,,, বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন,,,
রান্না শেষ করে শিড়ি বেয়ে চলে আসেন উপরে একটা রুমে,,, কোনো কিছু না ভেবেই রুমের ভিতরে চলে যান,,,
বিছানা উপর পেটে বালিশ চেপে ধরে শুয়ে আছে এক রমনী,,,,হাত খোপা করা চুল গুলো খুলে এলো মেলো হয়ে আছে,,, মুখ সুকনো চেহারা ফেকাসে,,,, তার পর মনে হচ্ছে জান্নাতের কোনো অপ্সরা শুয়ে আছে,,,
হেনা বেগম এই রুপ দেখে ভয় হয় ভীষণ,,, এই মেয়ের রুপ তার জীবনের কাল না হয়,,,,
তার মেয়ের ভাগ্যের মতো যেনো এই মেয়ের ভাগ্য না হয়,,,এই রুপ তার মেয়ের জীবনের কাল হয়েছিলো,,
রুপ গুন কিছু না মানুষ দিন শেষে হেরে যায়,, ভাগ্যের কাছে,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন হেনা বেগম,,,
সারারাত পেটে ব্যাথার জন্য ঘুমাতে পারেনি,,,রোদ
ফজর এর আগে আগে ঘুমিয়েছে,,,,
আস্তে করে ডাকে,,,,হেনা বেগম
রোদ রোদ এই রোদ ওঠ ওনেক বেলা হয়ে গেছে,,,
পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় রোদ,,,,
হেনা বেগম বলে,,,
পেটে ব্যাথা কমছে এখন,,,,
হুম আগের থেকে অনেক টাই কমছে নানু,,
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয়,, এখন,,, ১০:৩০ বেজে গেছে,,,
নানু এতো বেলা হয়ে গেছে,, তুমি আমাকে ডাকোনি কেনো,,, কতো কাজ আছে বাড়িতে,,, সে গুলো করতে হবে,,,,
কথা গুলো বলেই রুম থেকে বের হতে যাবে,,, তখনি হেনা বেগম বলে
রোদ দাঁড়াও,,,,
রোদ প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকিয়ে বলে,,,,
নানু বাড়িতে অনেক কাজ আমি চাইনা আমার জন্য এই বাড়িতে কোনো জামেলা হোক,,,,
হেনা বেগম বলে,,,,
তুমি আজকে রুম থেকে কোথাও বের হবে না,,, রুমের ভিতরে থাকবে,,,, আর তোমার কোনো কাজ করতে হবে নাহ,, সময় মতো খাবার আমি রুমে পাঠিয়ে দেব,,,,
রোদ অবাক হয়ে বলে
কেনো দাদি,,,,
হেনা বেগম বিরক্ত হয়ে বলে,,,
মুখের উপর প্রশ্ন করা আমার পছন্দ নয় রোদ,,,
তার পর বলি শুনো
শুভ্র দেশে আসছে,,,,আর যদি তোমাকে এই বাড়িতে দেখে তো তুল কালাম করবে,,,,
শুভ্র কথা শুনতে মনে মধ্যে ছ্যাত করে উঠে,,,
হেনা বেগম এই কথা বলেই রুম থেকে চলে যান,,,,
সকাল ১১:২৩ মিনিট এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে তিন ভাই,,,আরাফ চৌধুরী (শুভ্র বাবা) আরিফ চৌধুরী (অয়ন এর বাবা) আকরাম চৌধুরী (নিলয় বাবা)
✈️ ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
গ্লাসের দরজা ধীরে ধীরে খুলে গেল।
হাজারো মানুষের ভিড়ের মাঝেই যেন মুহূর্তে নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
প্রথমে বেরিয়ে এলেন শুভ্র চৌধুরী—
গাঢ় কালো শার্টে মোড়া, সানগ্লাসে ঢাকা ঠান্ডা দৃষ্টি।
লম্বা দেহ, শক্ত গঠন, ঠোঁটে কোনো হাসি নেই।
তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন চারপাশে কাঁপন ধরাচ্ছে।
মুখে স্পষ্ট গম্ভীরতা—যেন এই পৃথিবী তাকে ভয় পায়।
তার কিছুটা পেছনে হাঁটছে অয়ন চৌধুরী—
পরনে হালকা নীল শার্ট, কাঁধে ব্যাগ।
চোখে গভীরতা, ঠোঁটে মৃদু এক রহস্যময় হাসি।
যেনো সবকিছু সে খুব ঠান্ডা মাথায় পর্যবেক্ষণ করছে।
গম্ভীর বড় ভাইয়ের ছায়ায় থেকেও অয়নের আলাদা একটা আকর্ষণ আছে।
সবশেষে আসে নিলয় চৌধুরী—
ডেনিম জ্যাকেট, হুডি মাথায় দিয়ে চুল এলোমেলো করে রাখা।
হাসলেই টুক করে ডিম্পল পড়ে গালে।
চঞ্চল ভঙ্গিতে হাত নেড়ে সবার দিকে তাকায়,
মনে হয় যেনো এই এয়ারপোর্টটাই তার নিজের স্টেজ।
তিনজন একসাথে হেঁটে বেরিয়ে আসে,,,,
আরাফ চৌধুরী শুভ্র কে জড়িয়ে ধরতে আসলে,,,
শুভ্র পাশ কাটিয়ে চলে যায়,,,,
শুভ্র বাবার চোখে পানি চিকচিক করছে,,,
অয়ন এসে চাচা কে জড়িয়ে ধরে আর আস্তে করে বলে,,,
শুভ্র এখন রেগে আছে চাচা জান,,,, আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে,,,,,তুমি কষ্ট পেয়েও না
অয়ন নিলয়
সবার সাথে কুসল বিনিময় করে ,,,
কিন্তু শুভ্র কারো সাথে কোনো কথা বলে না,,,,,
সবাই এসে গাড়িতে বসে,,,,গাড়িতে সবাই চুপচাপ
চৌধুরী ভিলা,,,
কালো রঙের ঝকঝকে প্রাইভেট কারটি এসে থামল চৌধুরী বাড়ির বিশাল লোহার গেটের সামনে।
দুই পাশে সবুজ গাছের সারি, আর মাঝ বরাবর পাকা রাস্তা ধরে গাড়ি ঢুকে গেল ভেতরে।
চৌধুরী বাড়ি—তিন চলা বিশিষ্ট সেই প্রাচীন অথচ রাজকীয় স্থাপনা, যার প্রতিটি দেওয়ালে যেন শানের ছাপ।
প্রথম চলায় বিস্তৃত বারান্দা, সাদা পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে প্রশস্ত ড্রয়িং রুম—ঝাড়বাতির ঝলক, নরম সোফা আর পুরোনো দিনের ছবি সাজানো দেয়াল।
একপাশে কাঠের আলমারি, তার ওপরে রাখা পিতলের শো-পিসগুলো যেন বাড়ির ঐতিহ্যের সাক্ষী,
গাড়ি থেকে নেমে,,, বাড়ির ভিতরে ডুকে যায় শুভ্র,,,
দরজা সামনে দাড়িয়ে আছে,,, হেনা বেগম,,,,হাসি বেগম,,অয়ন এর আম্মু,,,,আর মীরা বেগম,,,, নিলয় এর আম্মু,,,,, আর নীরা,, অয়ন এর বোন,, অহনা,,, আর টিনা,,,নিলয় বোন,,,
তার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,, বাড়ির সব সার্ভেন্ট,,,
শুভ্র দাদির সামনে এসে তাকে সালাম করে,,,, তার পর জড়িয়ে ধরে,,,,,,
তার পর কিছু না বলেই উপরে নিজের রুমে চলে যায়,,,
দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন হেনা বেগম,,
আর এই দিকে,,,অয়ন এসে সবার সাথে কুসল বিনিময় করে,,,,
নিলয় কথা জিজ্ঞেস করে সবাই,,অয়ন বলে,,
আমার পিছন পিছন তো আসলো,,,
আর এই দিকে নিলয় ফেইবুক লাইভে দেখাচ্ছে তাদের বাড়ির,,ঘুরে ঘুরে আশে পাশে,,,,
লাইভ দেখাতে দেখাতে হঠাৎ পা পিচলে কাঁদার ভিতরে পড়ে যায়,,,,
অয়ন নিলয় কে আসতে না দেখে এই দিকে আসছিল,,, কিন্তু এসে দেখে কাদার উপরে পড়ে গেছে,,,পুড়ো গায়ে কাঁদা মেখে একাকার,,
নিজের হাসি আর আটকে রাখতে পারে না,,,,হো হো করে হেসে উঠে,,,অয়ন
নিলয় পড়ে যাওয়াতে,,,ফোন টা হাত থেকে পড়ে আছে নিচে,,,,
অয়ন ফোন হাতে নিয়ে দেখে এখনো লাইভ চলছে,,,
তাড়াতাড়ি ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে বলে,,
সো গাইস আপনাদের প্রান প্রিয় ক্রাশ এর অবস্থা দেখুন,,,
বাড়িতে আসার খুশিতে সে মাটিতে গড়াগড়ি করছে,,,
নিলয় তাড়াতাড়ি এসে ফোন টা কেরে নেয়,,, তার পর লাইভ টা কেটে দিয়ে বলে,,,
হেই bro কি করলে,,,আমার আর মান সম্মান রাখলে,,না,,
হাসি থামিয়ে অয়ন বলে,,,
বাড়িতে এসে সবার সাথে দেখা না করে লাইভ করছিস,,,তাই উপর আল্লা অভিশাপ দিছে বুঝছিস,,,
তাই তোর এই অবস্থা হয়েছে,,,আর এই ভাবে কাদায় গড়াগড়ি খাওয়া দেখিয়ে ভালোই করছি,,, তোর আইডি ভিউ বারবে,,,,
নিলয় মুখ কালো করে,,,
বাড়ি দিকে হাটা দেয়,,,,
অয়ন বলে রাগ করিস না আমি জাস্ট মজা করছি,,,,
চল বাসায় ভিতরে চল,,,,
..🍁🍁পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজ ফলো দিয়েন🍁🍁
রাত ১২:৩০
বাসার ছাদে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে রোদ,,,
সারাদিন সে রুম থেকে এক মিনিট এর জন্য বের হয়নি রুমেই ছিলো,,,খাবার টা রুমে দিয়ে গেছে তার নানু,,,
তাই সবাই ঘুমাতে চুপিচুপি ছাদে এসেছে,,,
রোদ অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবতে থাকে,,,,তার পর আন মনে বলে উঠে,,,,
আচ্ছা কতোদিন এই ভাবে লুকিয়ে রাখতে হবে ওই লোক এর কাছ থেকে,,,
আমার জীবন টা কেনো এমন হলো,,,
আব্বু আম্মু এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কেনো আমায় একা রেখে চলে গেলে,,,,
আমাকে কেনো নিয়ে গেলে না তোমাদের সাথে,,,,,
এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর কেউ স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসে না কেউ না,,,,
আমাকে কেউ ভালোবাসে না,,, তোমাদের মতো করে,,,
আমার জীবন টা একটা অভিশাপ হয়ে গেছে,,,,,, জানো,,, আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না আমার,,,,
বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে,,,, রোদ,,,,
গভীর রাতে কান্না শব্দ চার দিকে জীম মেরে আছে,,,
হটাৎ
রোদ কেনো জানি মনে হচ্ছে তার আশে পাশে কেউ আছে,,,
রোদ পেছন ফিরে তাকায় তখন ছাদের দরজা সামনে থেকে একটা ছায়া সরে যায়,,,,
কিছু ভয় পায় রোদ,,,,ভয়ে ঢোগ গিলে,,,,তার পর আস্তে করে ছাদে দরজা পাশে আসে,,,,,, কিন্তু কেউ নেই,,,,
ভয়ে ভয়ে নিচে নেমে যায়,,,,রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে,,,,
সকাল ৮:৩০
ঠাসসসসসসস করে থাপ্পড় পড়ে রোদ এর গালে,,,
থাপ্পড় একটু বেশি জোরে পড়ে,,,,ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে,,,গালে পাঁচ আঙুল ছাপ পড়ে গেছে,,
টলমল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে রোদ,,,,,