বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৫
shanta moni
“ অয়ন পিছনে দাঁড়িয়ে আছে, রোদ কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সেদিন রাতে কথা মনে পড়ে যায়। অয়ন ভাইয়ের জন্য শুভ্র তাকে অনেক বাজে কথা বলেছিল। এমন কি মেরেও ছিলো। রোদ অয়নকে এড়িয়ে যেতে নেয়। অয়ন গিয়ে রোদের হাতটা চেঁপে ধরে রোদ হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।
রোদ: অয়ন ভাই প্লিজ হাতটা ছাড়ুন?
অয়ন: রোদ প্লিজ আমার কিছু কথা আছে। একটু শোনো তাঁপর ছেড়ে দিব।
রোদ: আমি আপনার কোনো কথায় শুনতে চাই না, অয়ন ভাই প্লিজ ছেড়ে দিন আমায়।
অয়ন: প্লিজ রোদ একটু শোনো, আমি জানি শুভ্রকে তুমি ভালোবাসো কিন্ত শুভ্র তোমাকে ভালোবাসে না রোদ। শুভ্রের কাছে তুমি কখনোই ভালোবাসা পাবে না। শুভ্র তোমাকে সারা জীবন কষ্ট দিবে।
রোদ: প্লিজ ভাইয়া হাতটা ছাড়ুন, আর এই সব বাজে কথা বলা বন্ধ করুন।
অয়ন: রোদ প্লিজ তুমি শুভ্রকে ডির্ভোস দিয়ে আমার কাছে চলে আসো। আমি তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।
রোদ এতক্ষণ কিছু না বললেও এইবার যেনো আর অয়নের কথা সহ্য করতে পারে না। হাত জামটা দিয়ে ছাড়িয়ে জোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অয়নের গালে অয়ন গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদ রাগি চোখে তাকিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোদ: আমার স্বামী আমাকে কষ্টে রাখুক, বা সারা জীবন আঘাত করুক, সে আমার স্বামী, দরকার হলে সে আমাকে খুন করে নদীতে বাসিয়ে দিক। তারপর আমি তাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবো না।
রোদের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে, আবার বলে উঠে,
রোদ: সে খারাপ হোক বা ভালো হোক, সে আমার স্বামী আর আমি তার স্ত্রী, এটাই সত্যি,
অয়ন: রোদ প্লিজ আমাকে একটু বুঝো,,
রোদ হাত দিয়ে অয়নকে থামিয়ে তারপর আবার বলে।
রোদ: আমার স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষ আমার জীবনে আসার আগে যেনো আমার মৃত্যু হয়।
মরিচিকার পিছনে ছুটছেন অয়ন ভাই, ভুল যায়গায় নিজের মূল্যবান সময়’ নষ্ট করবেন না,
অয়ন: ভালোবাসা কি ভুল রোদ,
রোদ: ভালোবাসা ভুল নয়, তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা ভুল। সব কিছু যেনে শুনে একজন বিবাহিত মেয়েকে ভালোবাসা ভুল।
রোদ একটু থেমে আবার বলে শুরু করে,,
রোদ: অয়ন ভাই, শুভ্র ভাইয়ের সাথে আমার জীবন জড়ানো। এক জীবনে সে ব্যতীত অন্য পুরুষকে আমি চাই না। আমি তার বাম পাঁজরের অর্ধাঙ্গানী আর সে আমার স্বামী, তবে আমাদের সম্পর্ক সে মানুক বা না মানুক, এটা চরম সত্য আমি তার স্ত্রী। আর এই চরম সত্যকে কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না।
কথা গুলো বলেই রোদ যেতে নেয়। এমন সময় অয়ন রোদের হাত টেনে ধরে বলতে থাকে।
অয়ন: আমি এই সব মানি না, আর তোমাকে আমার চাই মানে চাই।
রোদ: প্লিজ ভাইয়া হাতটা ছাড়ুন,
রোদ হাত মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে। ছাড়ানোর জন্য কিন্তু অয়ন হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে আছে।
অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরছে শুভ্র, সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে নেয়। কিন্তু এমন সময় চোখ পড়ে রোদ আর অয়নে দিকে, অয়ন রোদের হাত ধরে আছে,সেটা দেখেই যেনো ধপ করে রাগটা উঠে যায়।রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বলসে পড়ছে শুভ্রের মাথার রগ ফুলে গেছে রাগে, রেগে গিয়ে অয়নকে মারতে থাকে, অয়ন কিছু বলার সুযোগ পযন্ত পায় না৷ ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দেয়, নাকে হাত দিয়ে নিচে পড়ে আছে অয়ন, রোমান তাড়াতাড়ি এসে শুভ্রকে থামায়। শুভ্রকে অন্যদিকে ঠেলে দিয়ে,
রোমান গিয়ে অয়নকে ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। বাড়ির মানুষ কেউ এই বিষয়টা জানলে সমস্যা হবে।
শুভ্র রাগি চোখে তাকায় রোদের দিকে তাকায়, রোদ মাথা নিচু করে আছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,শুভ্র রোদের হাত ধরে টানতে টানতে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যায়। রোদকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। রোদের যেনো এখন সব কিছু অসহ্য লাগছে, রোদ বিছানা থেকে উঠে কিছু না বলেই যেতে নেয়। শুভ্র রোদের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে এনে চুল চেঁপে ধরে, নিজের মুখের কাছে এনে বলে,
শুভ্র: কি বলেছিলাম তোকে আমাকে পোড়াতে আসিস না, কিন্তু তোর তো দিন দিন সাহস বেড়েই যাচ্ছে হ্যা, আমার অবাধ্য হস। বেয়াদবের বাচ্চা।
রোদ নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে
রোদ: ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন আমায়,
শুভ্র: বাহ মুখে মুখে র্তক করাও শিখে গেছিস না,
রোদ: আহ চুল ছাড়ুন বলছি, আর আপনার সাথে আমার তর্ক করার কোনো ইচ্ছে নেই। ছাড়ুন আমি রুমে যাব।
শুভ্র রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে, তারপর বলে,
শুভ্র: চুপ থাক শালি, তোকে কি বলছি সেইটার উত্তর দে, তুই ওইখানে তোর নাগরের সাথে কি করছিলি হ্যা।
রোদ: আমি আপনাকে সব কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই, ছাড়ুন আমাকে,,
শুভ্র: অবশ্যই বাধ্য তুই, আমার সব কিছুতেই বাধ্য,
রোদ: নাহ আমি বাধ্য নই, যেতে দিন আমায়,
শুভ্র: কোথাও যেতে পারবি না তুই, তোকে এইখানে থাকতে হবে,
রোদ: আমি আপনার মতো লোকের সাথে থাকবো না, ছাড়ুন,
বলেই রোদ শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে নেয়, শু়ভ্র আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না।
ঠাসসস করে চর বসিয়ে দেয়। রেগে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে, রাগে রি রি করতে বলে,
শুভ্র: তোর আজকে থেকে এইখানে থাকতে হবে,তোর ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুন। আর যদি থাপ্পড় না খেতে চাস তো চুপচাপ এখানে থাক।
কথা গুলো বলে শুভ্র আর দাঁড়ায় না,
রাগে ধব ধব পা ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে দরজা লক করে চলে যায়।
রোদ দৌড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে, কিন্তু কোনো ভাবেই কেউ দরজা খুলছে না। আর না কারো সারা শব্দ পাচ্ছে।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে দরজা ঘেঁসে বসে পড়ে,
সে কোনো ভাবেই এই মানুষটার সাথে একই রুমে থাকতে চায়না, শুভ্রের দেওয়া প্রতিটা আঘাত সে চাইলেও ভুলতে পারবে নাহ। আর না এক সাথে কখনো থাকতে পারবে।
শুভ্র ছাদে দাড়িয়ে আছে, হাতে সিগারেটে
শুভ্র নিজেই বুঝতে পারছে না, তার সাথে কি হচ্ছে, কেনোই বা এমন করছে সে রোদের সাথে,,
হটাৎ পিছন থেকে রোমান শুভ্রের কাঁধে হাত রাখে, শুভ্র পিছন ফিরে তাকায়, রোমানকে দেখে আবার আগের মত দাঁড়ায়, রোমান শুভ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
রোমান: কেনো করছিস এমন শুভ্র, তুই তো বলেছিলি, যে রোদকে ভালোবাসিস না তাহলে কেনো অন্য কারো সাথে দেখে সহ্য করতে পারিস না,
শুভ্র : বাজে কথা বাদ দে রোমান,
রোমান: এই সব মোটেও বাজে কথা না শুভ্র, তুই রোদ ভালোবেসে ফেলেছিস, আর যার জন্য এমন করছিস।
শুভ্র: তুই ভুল ধারনা নিয়ে আছিস। ওই মেয়ের প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা নেই।
রোমান; তাহলে এই সব কেনো করছিস, আর রোদকে কেনোই বা নিজের রুমে আটকে রেখেছিস।
শুভ্র: ইচ্ছে হয়েছে তাই, আর ওই মেয়ে কষ্ট দেবার জন্য হলেও আমার প্রেয়োজন ওকে,আমি কষ্ট দিব ও কাঁদবে তবুও ওকে আমি অন্য কারো কাছে যেতে দিব না, আর না অন্য পুরুষের ছায়া ওর জীবনে পড়তে দিব।
শুভ্র কথা গুলো বলে আর দাঁড়ায় না, ছাদ থেকে নিচে চলে আসে।
রাত ১২:০০
রুমে ডুকতেই চোখ পড়ে রোদের দিকে ফ্লরে দুই হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। গায়ে একটা সাদা মাটা থ্রী পিস, তারপর সৌন্দর্য যেনো কম পড়ছে না।
শুভ্র ধীর পায়ে গিয়ে রোদের পাশে এক হাঁটুতে বড় দিয়ে বসে, কান্না করার জন্য চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। ঠোঁট দুটো কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠছে। শুভ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে, কোনো একজন কবি বলে গিয়ে ছিলেন, যখন কেউ ঘুমায় তখন তাকে সব থেকে নিষ্পাপ দেখায়। রোদকে কোলে করে নিয়ে বিছানার উপর শুয়ে দিয়ে রোদের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ফ্রেশ হতে, ১০ মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বেড় হয়ে, বিছানার উপর এক নজর তাকায়, তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৪
সকাল ১০:০০
রোদের ফোনে কল আসতেই, ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে যাবে এমন সময় কারো কান্নার শব্দে ধমকে যায় রোদ, বুকের ভিতর ধক করে ওঠে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,,