বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩১
shanta moni
‘শুভ্র রোদের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে’ শুভ্র মনে মনে বলে উঠে,
শুভ্র: এই শুভ্র চৌধুরী বউ কিনা, এতো ভিতু সামান্য কিসস করাতেই অজ্ঞান” এই ভিতু বউ দিয়ে কি করে বাসর করবে সে’
শুভ্র রোদের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায়, টি টেবিল থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে রোদের মুখে পানির ছিঁটে দেয়। কিছুক্ষণ পর রোদ পিটিপিট করে চোখ খুলে। শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে আছে’ রোদের নিজের অবস্থান বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়। রোদ নিজের অবস্থান বুঝতে পেড়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে রোদ কি করছে সেই সব দেখছে’ রোদ দরজা সামনে যেতেইে শুভ্র রোদের হাত টেনে ধরে ‘ রোদ ভ্রু কুচকে তাকায় কিছু বলতে যাবে, এমন সময় শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে’
শুভ্র: আজ থেকে তুমি আমার সাথেই থাকবে রোদ। বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই, আসে ঘুমাবে
রোদ: আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না, প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
রোদ নিজেকে ছাড়া বার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।
শুভ্র রোদের এক হাতে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রোদের এক গালে হাত দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠে’
শুভ্র: আমাকে কি মাফ করে দেওয়া যায়না রোদ’ আমি অনেক গুলো সরি বউ, আর কখনো এমন করবো না” তোকে যতটা কষ্ট দিছে, সব কিছু ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোদ পাথরের মূর্তি মত দাঁড়িয়ে আছে’ মুখে কোনো কথা নেই, চোখের কোনে পানি টলমল করছে’ শুভ্র রোদকে কোনো কিছু না বলতে দেখে, রোদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে” নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। শুভ্র রোদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রোদের গলায় নিজের নাক ডুবিয়ে দেয়। আর এক হাত দিয়ে রোদের কোমর চেঁপে ধরে। রোদ আর নিজেকে সামলাতে পারে না। মনে পড়ে যায়, শুভ্র করা প্রতিটা ব্যবহার অত্যাচারের কথা, রোদ শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। আকস্মিক ধাক্কায় শুভ্র কিছুটা পিছিয়ে যায়। রোদের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, শুভ্র রোদের দিকে আবার এগিয়ে আসতে নিতেই, রোদ এক হাত দিয়ে শুভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে’
রোদ: ব্যাস মিস্টার শুভ চৌধুরী, আর এক পা আমার দিকে আগাবেন না।
শুভ্র কিছুটা অবাক হলেও, রোদের কথা না শুনে রোদের কাছে গিয়ে রোদের গালে হাত রেখে বলে উঠে,
শুভ্র: বউ প্লিজ মাফ করে দে না, অনেক অনেক সরি বউ,
রোদ শুভ্রের হাত জামটা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে।
রোদ: বাহহ একটা সরি বললেন আর সাত খুন মাফ, একটা সরি বললেন আর সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো।
শুভ্র রোদের কথা শুনে আবার রোদের কাছে আসতে নেয়। এমন সময় রোদ চেচিয়ে বলে উঠে,
রোদ: ছুবেন না আমায়, কাছে আসবে না, বলে দিচ্ছি দূরে থাকুন।
শুভ্র রোদের হাত টেনে ধরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,
শুভ্র: রোদ প্লিজ সব কিছু ভুলে আমার নতুন করে, সব শুরু করি’ সরি প্লিজ মাফ করে দে, আমায়।
রোদ : বুকে লাথি মেরে মুখে সরি বলে লাভ, কি শুভ্র ভাই, ব্যাথা তো বুকে না কলিজায় দিছেন।
শুভ্র আবার রোদের কাছে গিয়ে রোদের গালে হাত রেখে করুন কন্ঠে বলে উঠে,
শুভ্র: আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সব ব্যাথা ভুলিয়ে দেব। সব কিছু মুছে যাবে রোদ।
রোদ শুভ্রের চোখে দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
রোদ: শরীর আঘাত তো মুছে যাবে’ কিন্তু মনে যে আঘাত দিয়েছেন, সেটা কি করে মুছবো শুভ্র ভাই।
রোদের কথা গুলো শুনে শুভ্রের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে, অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে, সে তার পরিটাকে সত্যি অনেক কষ্ট দিয়েছে। শুভ্র বিচিলিত হয়ে বলে উঠে
শুভ্র: সব কিছু ভুলে কি নতুন করে শুরু করা, যায়’না রোদ,
রোদ তাচ্ছিল্য হাঁসে, দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠে,
রোদ: ভুলে যাবো, কি করে ভুলে যাবো, সাতটা বছরে প্রতিটা রাতের কথা, কি করে ভুলে যাবো, প্রতিটা রাতে বোবা কান্না দম বন্ধ কর পরিস্থিতি, আপনার শূন্যতা, আপনার দেওয়া প্রতিটা আঘাত, কি করে ভুলে যাবো, এই সব কিছু,
শুভ্র মুখে কোনো কথা নেই, রোদ শুভ্রের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
রোদ: আপনি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর, আমি হাউমাউ করে কান্না করেছি।কিন্তু সে কান্না ছিলোনা, কোনো স্বাভাবিক। ছিলো এক নিঃশব্দ তান্ডব’
সে কান্নার আওয়াজ কোনো মানুষ শুনতে পাইনি, কারন আমি কেঁদে ছিলাম, নিজত্ব রাতে অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে, আমার চোখের জল ফোঁটা ফোঁটা করে গড়িয়ে পড়ে ছিলো। কিন্তু তার শব্দ ছিলো না। আমার বুকের ভিতর বিষফোড়ন ঘটে ছিলো, অথচ তার ধ্বনি ছিলো বোবা, চার পাশে কেউ ছিলো না, ছিলো শুধু দেওয়ালের নিরবতা, আর নিশ্বাসের ভারি শব্দ,
রোদ কথা গুলো বলে ডুকরে কেঁদে উঠে, শুভ্রের চোখেও পানি,রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
রোদ: আমি চেয়ে ছিলাম, তুমি একবার হলেও চলে আসো, এসে একবার হলেও বলো, আমি কেমন আছি, একবার হলেও জানতে চাও আমি কি অবস্থায় আছি,
রোদ একটু থেমে পুনরায় আবার বলে উঠে
রোদ: হুম তুমি এসে ছিলে, তবে আমি যাকে চিনতাম সে না অন্য কেউ এসে ছিলো, আমি ভেবে ছিলাম, এই বার হয়তো আমার কষ্টের দিন শেষ। যার জন্য সাতটা বছর এই বাড়িতে কাজের লোকের মতো পড়ে ছিলাম, সুধু আপনার আশায়, কিন্ত না, আমি ভুল ছিলাম।ওই কথায় আছে না, অভাগী যেই দিকে যায়, সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়।
রোদের কান্নার বেক আরো বেড়ে যায়, কিন্তু সে চায়না, এই নিষ্ঠুর লোকটার কাছে, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে, চোখের পানি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে আবার বলে উঠে,
রোদ: আমি এতো বছর কিসের জন্য এতো শাস্তি পেয়েছি, আমি জানতাম না, সারাক্ষণ নিজের ভুল খুঁজে বেড়াতাম, কিন্তু আপনি সেদিন রাতে আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, এতোদিন আমার চোখে মিথ্যের পর্দা ছিলো সেটা সরিয়ে দিয়েছে।
রোদের কথা গুলো শুনে শুভ্রের চোখে পানি, শুভ্র রোদের কাছে গিয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরতে, রোদ শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
রোদ: আমি নষ্ট নারী, ময়লা আর্বজনা, নোংরা, আমাকে আপনি ছুঁবেন না, আমাকে ছুয়ে আপনিও নোংরা হয়ে যাবেন।
শুভ্র : রোদদদ
রোদ: প্লিজ আমার কাছে আসবেন না, আপনি , আমি পরপুরুষের সাথে সম্পর্ক করি, আপনি যদি আমার কাছে আসেন, তাহলে আপনার নাম খারাপ হবে।
রোদ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
রোদ: আমি অন্য পরপুরুষ কাছে গেছি, ডলাডলি করছি, আজে বাজে কাজ করছি, তা তো আপনি নিজেই বলেছেন, তাই প্লিজ আমার কাছে আসবেন না।
শুভ্র রোদের কাছে গিয়ে রোদের গালে ঠাসসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
রাগি চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
শুভ: তোর মুখে যদি আমি আর কোনো দিন, এই সব কথা শুনি তো তোকে আমি জানে মেরে ফেলবো।
রোদ: তো মেরে ফেলুন না,এখনো কিসের এতো অপেক্ষা করছেন।
শুভ্র জোড়ে চেচিয়ে বলে উঠে
শুভ্র: রোদদদ
রোদ: আমি বাজে খারাপ মেয়ে, আমার মতো বাজে মেয়ের সাথে আপনার মতো ভালো মানুষকে মানায় না, পরপুরুষের সাথে আমি মেলামেশা করেছি, তাই প্লিজ আপনি আমার কাছ থেকে দূড়ে থাকুন।
শুভ্র রোদের কথা শুনে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে, রোদের চুলের মুঠি ধরে চেচিয়ে বলে উঠে
শুভ্র: অন্য পুরুষ অন্য পুরুষ নাহ, অনেক সখ হয়েছে তোর, কি, কথায় কথায় দূরে থাকবেন, দূরে থাকবেন, আমি তোর কাছেই থাকবো, তোর সাহস থাকলে ঠেকাস তুই আমাকে শালি’ এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ আমাকে তোর কাছ থেকে দূরে সরাতে পারবে না, কষ্ট আমি দিয়েছি, ভালো আমি বাসবো,
কথা গুলো শেষ করে রোদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়,
রোদ রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে
রোদ পাশে থাকা ফুলদানি মিরোরে আয়না জোরে বারি দেয়, মিরোরের আয়না ভেঙে নিচে পড়ে যায়। রোদ ফ্লোর থেকে ভাঙা আয়না হাতে উঠিয়ে নেয়,
শুভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, শুভ্র বিচিলিত হয়ে রোদের দিকে এগিয়ে আসে, রোদ জোড়ে চেচিয়ে বলে উঠে,
রোদ: আপনি আমার কাছে আসলে, আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো, বলে দিচ্ছি, কাছে আসবেনা,
শুভ্র রোদের কথা কান দেয় না, রোদের সামনে গিয়ে দাঁড় হয়৷ রোদ শুভ্রের গলায় কাচের আয়না ভেঙে যাওয়া চেঁপে ধরে, কিন্তু হাইটে ছোট হওয়াতে ঠিকমতো ধরতে পারে না, শুভ্র রোদের কোমর জড়িয়ে রোদকে একটু উপরে তুলে, রোদ রেগে গিয়ে বলে উঠে,
রোদ: ছাড়ুন আমাকে, তা না হলে আমি আপনাকে এইখানে খুন করে ফেলবো।
শুভ্র হাঁসে, তাঁরপর রোদকে বলে উঠে,
শুভ্র: জামাই কোলে উঠে জামাইকে মারতে হচ্ছে বাহহহ বাহহহ।
রোদ: আমি আপনাকে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবো।
শুভ্র: হুম মেরে ফেলো,
রোদ: সত্যি কিন্তু মেরে ফেলবো, তার আগে বলছি ছাড়ুন,
শুভ্র: মেরে ফেলো তো বউ, এ জীবন রেখে কি লাভ বলোতো, এতো সুন্দরী বউ রেখে, এতোদিন বিদেশ পড়ে ছিলাম, এই দুঃখ আমি মেনে নিতে পারছি, না,
এতোদিন দেশে থাকলে হয়তো, তিন চারটা ছেলে মেয়ে বাপ হয়ে যেতাম।
রোদ শুভ্রের গলা থেকে ভাঙা আয়না নামিয়ে বলে উঠে
রোদ: আপনাকে তো কিছু করতে পারবো,না তবে নিজেকে তো শেষ করতে পারবো।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩০
মূহুর্তে শুভ্রের মুখের ভাব ভঙ্গি চেঞ্জ হয়ে যায়, রোদ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে, শুভ্র মনে কিছুটা ভয় জমে যায়৷ এই মেয়ের মাথা ঠিক নেই, যে কোনো সময় যা কিছু করতে পারে, শুভ্র রোদের হাত থেকে ভাঙা আয়নার টুকরো ধরে দূরে ছুড়ে মারে, রোদ চেচিয়ে উঠে, রোদকে আরো ছোটাছুটি করতে দেখে, শুভ্র রোদের কানের নিচে গলায় হাত রেখে আস্তে করে চাপ দেয়, রোদ আস্তে করে ডলে পড়ে শুভ্রের কোলে, শুভ্র রোদ বিছানায় শুয়ে দিয়ে, মনে মনে বলে উঠে
শুভ্র: রোদকে সে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে, যে করেই হোক সব কিছু তাকে ঠিক করতেই হবে, রোদের মন থেকে সব কিছু মুছে দিতে হবে।
সকাল ১০:০০
রোমান কিছু একটা দেখে জোড়ে চেচিয়ে উঠে,,