বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩২
shanta moni
শুভ্র রোদের পাশে শুয়ে পড়ে, রোদকে নিজের কাছে টেনে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, শুয়ে আছে, মনে হচ্ছে এতো বছরের খালি বুকটা পরিপূর্ণ লাগছে’ রোদের কোনো নড়াচড়া নেই ‘ সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
ভোরে আলো ফুটে নতুন এক সকালের সূচনা করে, পূর্ব আকাশে আজকে সূর্য তেজটা যেনো একটু বেশি, বাহিরে থেকে থেকে ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে ‘ রুমের পর্দা গুলো বাতাসের দুলছে’ সূর্যের কিরন এসে পড়ে রোদের চোখে মুখে, নাক মুখ কুচকে ফেলে রোদ’ পিটি’পিট করে চোখ খুলে তাকায়, এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি’ আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠতে নেই” কিন্তু কারো শক্ত বাঁধনে নিজেকে আবিষ্কার করে’ আস্তে আস্তে মনে পড়ে যায়’ কালকে রাতের কথা’ রোদ শুভ্রের দিকে তাকায় রোদকে দুই হাতে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে’ খালি গায়ে ফর্সা বুকের লোম গুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে’ গালে খোঁচা খোঁচা চাঁপ দাড়ি গুলো বেশ মানিয়েছে’ রোদ আন মনে বলে উঠে,
রোদ: মাশাল্লাহ, আল্লাহ সৃষ্টি কতোই না, সুন্দর, অনেক যত্ন করে বানিয়েছে, এই মানুষটাকে”
রোদের কিছু একটা মনে আসতেই, চুপ হয়ে যায়’ মনে মনে বলে উঠে
রোদ: দিবা স্বপ্ন দেখিসনা রোদ, এই লোক কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারেনা” আর না কখনোই এই মানুষটার দেওয়া প্রতিটা আঘাত তুই কখনো ভুলতে পারবি। সে সুধু আঘাত দিতে যানে।
রোদ কথা গুলো ভেবেই আস্তে করে শুভ্রকে ছাড়িয়ে উঠতে নেয়”
এমন সময় শুভ্র রোদকে টান দিয়ে নিজের সাথে শুয়ে নেয়’ রোদের যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে, শুভ্র ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুভ্র: এই ভাবে কাঁপা-কাঁপি করো না, বউ
আমার খুব বাজে কিছু করতে ইচ্ছে”
রোদ জমে যায় শুভ্রের কথা শুনে শিড় ধারা বেয়ে ঠান্ডা স্রত বয়ে যায়।
রোদ ছটফট করতে থাকে,কিন্তু শুভ্রের ছাড়ার কোনো নামই নেই।
শুভ্র কাছে আসলেই যেনো তার পুরনো আঘাত গুলো তাজা হয়ে উঠে’
দম বন্ধ হয়ে আসে, ইচ্ছে করে মরে যেতে” হটাৎ শুভ্রের এমন পরিবর্তন কেনো জানি রোদ মেনে নিতে পারছে না’
সকাল ৭:০০ টা রোমান রুহিকে খুঁজতে ছিলো’ এই রুহিকে সে হাতের নাগালে পাই না৷ এমন সময় চোখ পড়ে অপ্রকাশিত কিছু দেখে ফেলে জোরে চিৎকার দেয়” রোদ শুভ্র ছিটকে দূরে সরে যায়।
কিছুক্ষণ আগে
শুভ্র ঘুম থেকে উঠে, রোদকে রুমে থাকতে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়, এই ফাকে রোদ রুম থেকে বেরিয়ে আসে’
শুভ্র ওয়াশরুমে ডুকে কিছু একটা ভেবে তাড়াতাড়ি রুমে আসে’ এসে দেখে রোদ রুমে নেই’ রোদকে রুমে না পেয়ে টি-টেবিলে লাথি মারে” রুমে দরজা আনলক ছিলো, কিন্তু সে খেয়াল করেনি, তার পাখি, রুমের দরজা খোলা পেয়ে উড়াল দিছে’ শুভ্র দ্রুতে পায়ে রুমে বাহিরে যায়। রোদ বেশি দূর যায়নি’ দ্রুত পায়ে হেঁটে রোদকে পিছন থেকে কোমর ধরে উপরে তুলে নেয়!
হটাৎ শূন্য আবিষ্কার করে রোদ নিজেকে’ ভয়ে চোখ মুখ খিচে ফেলে”
রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে কোমর চেঁপে ধরে বলে উঠে
শুভ্র: কোথায় যাচ্ছো পাখি’
রোদ ছুটার জন্য ছটফট করতে থাকে’
কিন্তু শুভ্রের শক্তির কাছে পেরে উঠে না’
শুভ্র রোদের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, রোদ নিজের ছোটাছুটি করা বন্ধ করে দেয়। কোমর এমন ভাবে চেঁপে ধরেছে, মনে হচ্ছে হাড় গোড় গুরো করে ফেলবে’ কোমরে ব্যাথায় চোখে পানি টলমল করছে,
আচমকা শুভ্র রোদকে আরো নিজের সাথে চেঁপে ধরে ঠোঁটের কাছে এগোতে নেয়’ এমন সময় কারো চিৎকারে দুইজন ছিটকে দূরে সরে যায়’
রোমান হা করে তাকিয়ে আছে, রোদ লজ্জা ভয় তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যায়।
শুভ্রের বিরক্তিতে কপাল কুচকে আছে,
এই সব গাঁধা গুলোর কাজই তার পার্সোনাল মোমেন্ট ব্যাগরা দেওয়া। শুভ্র রোমানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় রোমান মুখ হা করে তাকিয়ে আছে,
শুভ্র বিরক্তিতে চ শব্দ করে বলে উঠে
শুভ্র: মুখ হা বন্ধ কর শালা, তা না হলে পুড়ো গ্রাম মুখের ভিতরে ডুকে যাবে।
রোমান মুখ সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়, মেকি হাঁসি দিয়ে বলে উঠে,
রোমান: আমি তোর শালা হতে যাবো, কেনো, তুই আমার শালা হবি।
শুভ্র ভ্রু কুচকে তাকায়
রোমান আমতা আমতা করে বলে
রোমান: আসলে আমি, বলতে চাইছি, যে
আমার তো কোনো বোন নেই, যে তুই বিয়ে করে তারপর আমাকে শালা বানাবি, আর থাকলেও সে রকম তোর কোনো চাঞ্জ নেই, যে তুই বিয়ে করবি, কারন তুই বিবাহিত, কিন্তু তোর তো বোন আছে, আর আমিও অবিবাহিত, তাই আমি তোকে নিঃসন্দেহে শালা বানাতে পারি।
শুভ্র রোমানের দিকে রাগি চোখে তাকায়, রোমান বোকার মতো হাঁসে, শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় বলে উঠে”
রোমান: আমি তো এমনি বলেছিলাম।
কথা গুলো বলে আর দাঁড়ায় না, তাড়াতাড়ি কেটে পড়ে শুভ্রের কাছ থেকে।
শুভ্র রোমানের যাওয়ার দিকে তাকায়, তারপর নিজের রুমে চলে যায়, ফ্রেশ হতে।
সকাল ১০ টা ছুঁই ছুঁই নীলা আসে চৌধুরী বাড়িতে, নীলাকে সেদিন বাড়ি থেকে বেড় করে দেওয়ার৷ এক সপ্তাহ পর নীলার বাবা মা নিতে আসে, নীলাকে”
নীলা প্রথমে রাগ করলেও, রোদের কথায় চলে যায়, নিজ বাড়িতে।
নীলা বাড়ির ভিতরে ডুকতে যাবে এমন সময় কারো গুন গুন শব্দ পিছন ফিরে তাকায়, গুন গুন শব্দ অনুসরণ করে”
বাড়ির পিছনে দিকে যায়।
পিছন ফিরে লুঙ্গি উপরে ধরে দাড়িয়ে কেউ কিছু একটা করতে আছে, আর গান গাইছে,,
🎵~লঙ্গি খুইলা খাইরা মু*****🧍♀️
🧍♀️🎵~তুমি আমার হইতা যদি, 🥱🧍♀️
🎵~ভাইসা যাইতাম মু****** জোয়ারে”
😳~নয়নও ঘুরাইয়া খুঁজি 😳
~~তোমারে তোমারে🤧🤧
নীলা গান শুনে অজ্ঞান হবে হবে অবস্থা,
এই রকম বিচ্ছিরি সুন্দর গান, কে গাইছে
নীলা গান শুনে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়।
পিছন থেকে শব্দ আসতেই নিলয়,
পিছনে ফিরে তাকায়, নীলাকে দেখে তাড়াতাড়ি নিজের লঙ্গি ঠিক করে,
নিলয় আসলে, লুঙ্গি পড়ে টিকটক ভিডিও বানাতে আসছিলো, বাট তখন তাকে প্রকৃতি ডাকে সারা দিতে হয়।
আর মনের সুখে গান গাইছিল। কিন্তু এই মেয়ে এখানে আসলো, কি করে বুঝেনা, সে, আর অজ্ঞান বা হলো কেনো,
নিলয় নীলার গালে হালকা করে থাপ্পড় মারে, চোখ উল্টে দেখে, মরে টরে গেলো, নাকি। নিলা চোখ খুলে তাকায় নিলয়কে, দেখে আবার চিৎকার দেয়।
নিলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, নিলার দিকে, এই মেয়ের সমস্যা কি বার বার অজ্ঞান হচ্ছে কেনো, মীরগি ভ্যারামে ধরলো নাকি। নিলয় আর কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়ে লাগায় বাড়ির দিকে,
বাড়ির সবাইকে ডেকে আনে, সবাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে৷ এই নিলয় কি সেজে আছে, একে যে কেউ এই অবস্থায় দেখলে, জ্ঞান হারাবে, আর হলো তাই, রোদ রুহি দৌড়ে নিলার কাছে যায়। নিলার চোখে মুখে পানি দিয়ে জাগিয়ে তোলে, নীলা আশে পাশে তাকায়, কাউকে না, দেখতে পেয়ে স্ততির নিশ্বাস ফেলে। রুহি রোদ মিলে নীলাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়।
সূর্য এখন পচ্চিম আকাশে সময় ৪:০০ কি ৪:৩০ হবে, রুহি ছাদে দোলনায় বসে কোলে উপর আচারের বৈয়াম রেখে হাত দিয়ে আচার খাচ্ছে, চামচ থাকতেও হাত দিয়ে আচার খাচ্ছে। কেনো জানি তার চামচ থেকে হাত দিয়ে আচার খেতে ভালো লাগে।
রোমান সারাদিন রুহির কোনো খোঁজ পাই না, কেমন জানি তাকে এগিয়ে চলে সব সময়। এই মেয়ের কি এতো সমস্যা বুঝে না। তবে এটা সে ভালো করে জানে।
রুহি তাকে ইচ্ছে করেই, ইগনোর করছে।
রোমান হাতে গিটার নিয়ে ছাদে উঠে,
ছাদে উঠে রুহির দিকে চোখ যায়।
একজন শ্যামকন্যা লম্বা কালো চুল গুলো কোমর অবধি ছেড়ে দিয়ে, দোলনায় বসে আচার খাচ্ছে, একদম বাচ্চাদের মতো করে। রোমান অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে, রুহির দিকে কোনো ভাবেই তার দৃষ্টি ফিরছেই না। একজন শ্যামবর্নের নারী তার মতো একজন পুরুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে, এই মেয়েকে না দেখলে, রাতে তার ঘুম হয়না। কিন্তু এই মেয়ে তাকে কবে বুঝবে। যে তার এই শ্যামবর্ন চেহারা তাকে পাগল করে দিয়েছে।
রোমান কথা গুলো ভেবেই মুচকি হাসে,
মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসতেই রুহিকে বলে উঠে,
রোমান: এই কালো পেত্নী,
রুহি চোখ তুলে সামনে দিকে তাকায়,মুখ ফুলিয়ে চোখ গোল গোল করে, রোমানকে বলে উঠে
রুহি: এই পচা আলু, নাগিনী সাপিনী বর, কাকে কালো পেত্নী বলছেন। আপনি কালো পেত্নী আপনার বউ কালো পেত্নী।
রোমান: হুম আমার বউ কালো পেত্নী এটা ঠিক বলেছো।
রুহি রোমানের কথার মানে না বুঝেই বলে উঠে
রুহি: হ্যা আপনার বউ কালো পেত্নী।
রোমান দুষ্ট হাসে, রুহির দিকে দু কদম এগিয়ে এসে বলে উঠে,
রোমান: তা কি করছে আমার কালো পেত্নী বউ,
রুহি: এই আপনি কাকে বউ বলছেন।
রোমান: তুমি ছাড়া কি কেউ আছে এখানে,
রুহি আসে পাশে তাকায়, না তো, কেউ নেই, সে ছাড়া এখানে, তার মানে এই লোক তাকে পেত্নী বউ বলেছে।
রুহি রাগে উঠে চলে যেতে নেয়।
রোমান রুহি হাত টেনে ধরে, রুহি রাগে রোমানের দিকে ফিরে কিছু বলছে নিবে।
রোমান রুহির ঠোঁটে হাত দিয়ে রুহিকে চুপ করিয়ে দেয়। রোমানে স্পর্শে রুহি কেঁপে ওঠে, রোমান মুচকি হাঁসে। রোমান রুহির ঠোঁট থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। তারপর রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
রোমান: কবে গ্রহন করছো আমায়, আমার প্রিয়তমা।
রুহি ভ্রু কুচকে তাকায় রোমানের দিকে, রোমান তাকে কি বলছে এবং কি বোঝাতে চাইছে, সেটা তার অজানা নাহ। রুহি মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে রোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে
রুহি: যেটা কখনো হবার নয়, সেটার পিছনে অযথা সময় নষ্ট করবেন না, ভাইয়া, আপনার মতো কাউকে খুঁজে নিন। তাহলে আপনি ভালো থাকবেন।হাত ছাড়ুন যেতে দিন আমায়।
রোমান রুহির কাছে এসে রুহির গালে হাত রেখে করুন স্বরে বলে উঠে,
রোমান: তোমার মতো না, আমার তোমাকেই চাই, রুহি এভাবে আমার ভালোবাসা প্রত্যাখান করো না প্লিজ।
রুহি নিজের গাল থেকে রোমানের হাত সরিয়ে দু কদম পিছিয়ে রোমানকে তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে
রুহি: আমি আপনার সামনে কোনো দিক দিয়ে পারফেক্ট নই ভাইয়া। আমার না আছে, রুপ না আছে গুন, সব দিক দিয়েই শূন্য আমি, আমার মতো একটা কালো মেয়েকে, আপনার মতো একজন সুর্দশন পুরুষের সামনে কখনোই মানায় না’ ভাইয়া।
রোমানের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে, এই মেয়েকে কি করে বুঝাবে সে,
রোমান রুহিকে পুনরায় বলে উঠে
রোমান: কেউ কারো জন্য পারফেক্ট নয়, রুহি, ভালোবেসে তার প্রিয় মানুষটাকে পারফেক্ট করে নিতে হয়।
রোমান একটু থেমে আবার বলে উঠে
রোমান: আর সত্যি কারের ভালোবাসা কখনো রুপ গুন খুঁজে না।
রুহি হেঁসে উঠে, রোমান ঠাট্টা স্বরে বলে উঠে
রুহি: দিন শেষে সবাই রুপ টাই খোঁজে, আর এটাই চরম সত্য’ যেইখানে কবি নিজেই সৌন্দর্য প্রেমে পড়ে ছিলো। সেখানে আপনি কোন খ্যাতের মুলা।
রোমান মুখ ছোট হয়ে যায়। সে কি ভাবে এই বোকা নারীকে তার অনূভুতি কি করে বুঝাবে, কি করলে বুঝবে যে, সে তাকে কতটা ভালোবাসে।
রুহি ছাদ থেকে যেতে নেয়। রোমান রুহির হাত টেনে ধরে, বলে উঠে
রোমান: তুমি হয়ো জানো না, হে আমার বোকা নারী, তোমায় আমার চোখে কতটা সুন্দর আর মোহনিও লাগে, আমি প্রতিটা মূহুর্তে তোমার এই শ্যামবর্ন চেহারা দেখে মোহিত হই। আজ হয়তো বুচ্ছো না, কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবে।আর আমি সেই দিনের অপেক্ষা আছি।
রোমান কথা গুলো শেষ করে আর দাঁড়ায় না, রুহির হাত ছেড়ে ছাদ থেকে দ্রুতে পায়ে নেমে যায়।
রুহি এখনো সেই একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার রোমানের বলা কথা গুলো, কানের কাছে বাজছে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা,
বসার গড়ে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, নীলা কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে চলে গেছে, রোদ আজকে সারাদিন রুমের ভিতরে ছিল।
মাগরিবের নামাজ পড়ে বিছানার উপর পা তুলে বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে শুভ্রের হটাৎ পরিবর্তন , মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রোদ। মন থেকে কেনো জানি শুভ্রের প্রতি ক্ষমা শব্দটা আসছে না। আর সে মাফ করলেও, রুহু কখনো মাফ করবে কিনা জানা নেই, তারপর শুভ্রের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই।
আর শুভ্রের মতো কঠোর মনের মানুষ তাকে কখনোই ভালোবাসতে পারেনা। হয়তো আমার উপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে, তার জন্য এই সব নাটক করছে, তা না হলে এতো দিন বাজে ব্যবহার করা লোকটা হুট করেই এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে, সেটা কেনো জানি হজম হচ্ছে না, রোদের।
শুভ্র কথা ভাবতে ভাবতে রোদের চোখের কোনে পানি বেয়ে পড়ে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখে পানি মুছে, রোদ বলে উঠে
রোদ: একটা মেয়ের স্বামী ভালো হলে, তার সুখের কোনো কুল কিনারা থাকে না। আর যদি স্বামী খারাপ হয় তাহলে দ্বিতীয় কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয়না।
রোদ একটু থেমে আবার ভাঙা গলায় বলে উঠে,
রোদ: বিয়ের পর প্রতিটা মেয়ের স্বামী হয়, একমাত্র আপন জন প্রিয় মানুষ, কিন্তু সেই স্বামী যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়৷ দূরে ঠেলে দেয়।তার থেকে হতভাগি নারী আর কেউ হতে পারে না।
ঘড়ির কাঁটা দশটার ঘরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে, বাড়িতে ডুকে শুভ্র সারাদিন অনেক ব্যস্তায় কেটেছে, তার উপরে রোমান অয়ন কেউ যাইনি অফিসে, নিলয়ের কথা তো বাদ দিলাম, সে তো ব্লক ভিডিও নিয়ে পড়ে আছে, কবে সে ভাইরাল হবে, সেই সব চিন্তা।
শুভ্র বাড়ির ভিতরে ডুকে, রোদ খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার দিচ্ছিলো, বাসার সবাই ডিনার করছে, শুভ্র রোদের দিকে এক পলক তাকেই যেনো, সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই শেষ। রোদ হালকা মিষ্টি কালারের উপরে সুতির কাচ করা একটা থ্রি পিচ পড়ে আছে, মাথায় ওড়না আরাই পেচ দেওয়া।মুখে কোনো সাজ সজ্জা নেই।এতেই যেনো কোনো অপ্সরা থেকে কম লাগছে না। শুভ্র টেবিলের দিকে এগিয়ে রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
শুভ্র: রোদ দশ মিনিটের মধ্যে এক কাপ কফি নিয়ে রুমে আয়।
কথা গুলো বলে শুভ্র আর দাঁড়ায় না’
নিজের রুমে চলে যায়। খাবার টেবিলে আরাফ চৌধুরী, বাদে সবাই ছিল। রিয়া রাগে ভুসছে,সবার খাওয়া হতেই, রোদ কফি বানিয়ে সার্ভেট দিয়ে শুভ্রের রুমে পাঠিয়ে দেয়। শুভ্র গোসল করে, কালো ট্রেরাউজার সাথে ছাই রঙের গেঞ্জি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়। সে কোনো কিছু ভাবতে পারছে না, তার এই মূহুর্তে বউ নামক ভিটামিন দরকার, শুভ্র সামনে সার্ভেন দেখেই, রাগে ফুসতে থাকে৷ এই ৪০০ গ্রামের বাচ্চা, কতো সাহস নিজের না এসে সার্ভেট পাঠিয়েছে, একে তো আমি আজ,
শুভ্র রাগে ধব ধব পা ফেলে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে রোদের রুমে হাঁটা দেয়।
কিন্তু রোদের রুম খালি, কিছু একটা ভেবে ডয়িং রুমে যায়, কিন্তু সেখানেও রোদ নেই৷ শুভ্র পুড়ো বাড়ি হন্নে হয়ে খুঁজে কিন্তু রোদ কোথাও, নেই
শুভ্র দাদির কথা মনে আসতেই, হেনা বেগম রুমে দিকে হাঁটা দেয়,
শুভ্র নিজে নিজে বলে উঠে
শুভ্র: পাখি কোথায় লুকাবে হুম, পাতালে লুকালেও সেখান থেকে খুঁজে বেড় করবো, তারপর আমার খাঁচায় বন্ধি করে, সারাজীবন রেখে দিব।
শুভ্র হেনা বেগমের রুমে কাছাকাছি আসতেই, দেখে হেনা বেগম তার দিকে আসছে,
হেনা বেগম সামনে দাঁড়িয়ে শুভ্র হেনা বেগমকে বলে উঠে,
শুভ্র: দাদি বউ কই আমার।
হেনা বেগমের কপাল কুচকে তাকায়,
তারপর বলে উঠে
হেনা বেগম : বউ মানে,কার বউ, কিসের বউ
শুভ্র: যে বউ নিয়ে রাতে ঘুমাই সেই বউ, আর আমি আমার বউয়ের কথাই জিজ্ঞেস করছি,অন্য কারো বউয়ের কথা তো আর জিজ্ঞেস করবো না।
হেনা বেগম শুভ্রের ত্যারা কথা শুনে রেগে যায়,পুনরায় বলে উঠে,
হেনা বেগম : তোর আবার বউ আসলো কোথা থেকে,
শুভ্র: আকাশ থেকে টুপ করে পড়ছে, আর আমি ধরেছি, সেই ভাবে বউ আসছে।
হেনা বেগম রেগে গিয়ে বলে,
হেনা বেগম : তা তোর বউ তুই খুঁজে নে, আমায় কেনো বলছিস।আর আমি কি কার বউ কোথায় যায়, তার খবর রাখি নাকি।
শুভ্র: ওকে তাহলে আমার বউকে আমি খুঁজে নিচ্ছি। সর সামনে থেকে,
শুভ্র হেনা বেগমের দরজা দিকে যায়।
হেনা বেগম তাড়াতাড়ি এসে দরজা সামনে দাঁড়ায়, শুভ্র ভ্রু কুচকে তাকায়,
তারপর বলে,
শুভ্র: রুমে যেতে দাও, দরজা আকরে দাড়িয়েছে কেনো।
হেনা বেগম : এখানে আমার নাতনি আছে, কারো হারিয়ে যাওয়া বউ নেই, তাই রুমে যাওয়া যাবে না। আমার নাতনি ঘুমাচ্ছে, তার ঘুম নষ্ট হবে।
রোদ হেনা বেগমের রুমে আছে শুনে, শুভ্র নরম হয়ে আসে, মুচকি হেসে হেনা বেগমকে বলে উঠে,
শুভ্র: দাদি বউটাকে লাগবে, দিয়ে দাওনা প্লিজ।
হেনা বেগম : এখানে তোর বউ নেই,
শুভ্র: যেইটা আছে, ওইটাকে দাও,
হেনা বেগম : নাহ, যা তুই নিজের রুমে যাহ,
শুভ্র: দাদি শরীরে ভিটামিন কম। বউয়ের ভিটামিন খুব দরকার, তা না হলে তোমার নাতি ভিটামিনের অভাবে মরে যাবে, বউ দাও, বউকে লাগবে।
হেনা বেগম : শরীরে ভিটামিন কম থাকলে, ডাক্তারের কাছে যা, ডাক্তার ভিটামিন সিরাপ দিবে, খেয়ে শরীরে ভিটামিন হবে। যাহ এখান থেকে
শুভ্র: দাদি এই ভিটামিন বউ ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না। বউকে দাও দাদি,
হেনা বেগম : দূর হ খান থেকে, কোনো বউ পাবি না, এতো দিন বউয়ের কথা মনে ছিলো না, এখন আসছে বউ বউ করতে।
শুভ্র: ডালিং বউটাকে দিয়ে দাও, তারপর দূর হয়ে যাই।
হেনা বেগম : কোনো বউ পাবি না, রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যাহ।
শুভ্র: বউ ছাড়া ঘুম আসবে না, দাদি বউ দাও বউ নিয়ে ঘুমিয়ে যাই।
হেনা বেগম কিছু একটা ভেবে
শুভ্রের মনোযোগ সরাতে বলে উঠে,
হেনা বেগম : আরাফ এতো রাতে তুই এখানে,
শুভ্র সাথে সাথে পিছনে তাকায়, হেনা বেগম সেই সুযোগে রুমের ভিতরে ডুকে দরজা লাগায়, শুভ্র গুন অক্ষরেও বুঝতে পারেনি। তার দাদি তার সাথে এমন চালাকি করবে।
দরজা ধাক্কা দিতেই রুমের ভিতর থেকে হেনা বেগম বলে উঠে
হেনা বেগম : রুমে গিয়ে ললিপপ খা, তোর বউ আজকে আমার সাথেই থাকবে। বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই।
শুভ্র রাগে দুঃখে হেনা বেগমের রুমে থেকে সরে নিজের রুমে হাঁটা দেয়।
আজ তার বউটার জন্য মনটা ছটফট করেছে ভিষন। বউটাকে খুব আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে, তাই তো অশান্ত মনটা শান্ত করতে এতোক্ষন দাদির সাথে, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মতো যুদ্ধ করলো৷ কিন্ত শেষ মেষ হেরে গেলো। তার পরিবার মনে হয়না কখনো তার বাসর হতে দিবে,বউকে ছুঁতে গেলে বউ অজ্ঞান, তার মাঝে নতুন করে ভিলেন এসে গেছে।
ভিলেনের অভাব নেই। এখন তো নতুন করে যুক্ত হয়েছে, তার প্রান প্রিয় দাদি। শালার কপালটাই ফুটো।
শুভ্র বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে, বউটার জন্য মনটা আকুবাকু করছে। ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে নাহ।
মনে মনে শুভ্র বলে উঠে
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩১
শুভ্র: একবার হাতের নাগালে পাই, তোকে আমাকে জালানো, আমার ঘুম নষ্ট করে কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছিস নাহ, একবার পাই তোরে,তারপর দেখিস কি হাল করি।
সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারেনি শুভ্র,
আর এইদিকে রোদ শান্তি ঘুম ঘুমাচ্ছে।