বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৪
shanta moni
সময় এখন দুপুর গড়িয়ে বিকালের কাছাকাছি, রোদ শুভ্রের রুমেই বসে আছে’ দুপুরের খাওয়া দাওয়া রুমেই করেছে, হেনা বেগম কয় একবার এসে দেখে গেছে। সকালের ঘটনা এখনো মনে করলে ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। শুভ্র হটাৎ এমন পরিবর্তন এই ভাবে হুটহাট কাছে চলে আসা, সব কিছুই যেনো রোদ সকে আছে, সকালে শুভ্রের এমন বেগতিক আচরণ ছন্ন ছাড়া স্পর্শ কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। রোদের ছোট্ট মাথায় কোনো ভাবেই, এতো চাঁপ নিতে পারেনি। তাই অতিরিক্ত ভয় সেন্সলেস হয়ে গেছে।
শুভ্র যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রোদের জ্ঞান ফিরে, হেনা বেগম তো কান্নাকাটি করে পুড়ো বাড়ি মাথায় তুলেছে। রোদের সকালের কথা এখনো মনে পড়লে, অদ্ভুভূত শিহরণে পুড়ো শরীর কেঁপে ওঠে। তবে শুভ্র কাছে এলে রোদের শুভ্রের করা প্রতিটা আঘাতের কথা মনে পড়ে যায়। কোনো ভাবেই সে শুভ্রকে কাছে টানতে পারে না। রোদ আস্তে করে শুভ্রের বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়, এখন শরীর ঠিক আছে, তাই এখন উচিত নিজের রুমে চলে যাওয়া৷ রোদ আস্তে করে হেঁটে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। শুভ্রের রুম থেকে বের হতে দেখে রিয়া রোদকে, কিছুদিন যাবত সে খেয়াল করছে, শুভ্রের আচরণ ব্যবহার সব কিছু পালটে গেছে। মনে মনে রাঁগে ফুঁসে ওঠে রিয়া, যে করেই হোক শুভ্রের কাছ থেকে এই রোদকে দূরে সরাতেই হবে, সারা জীবনের জন্য। আর যে করেই হোক শুভ্রকে আমার চাই চাই, কথা গুলো বলে রিয়া নিচে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ায়, এতো ডিপ্রেশন এতো জামেলা সে আর নিতে পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিলার সাথেও আজ অনেক দিন হয়ে গেলো, দেখা হয়না। কালকে নাকি মামা বাড়ি থেকে আসবে।
এইদিকে রুহি, কিছুদিন যাবত খেয়াল করছে, যে রোমান তাকে এড়িয়ে চলছে, কেনো সেটা তার অজানা নয়, তবে মনে মনে কেনো জানি রুহি রোমানের এই ভাবে এড়িয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। রুহি ছাদে দাড়িয়ে কথা গুলো ভাবছে আর আচার খাচ্ছে, রুহি তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে,
রুহি: সব পুরুষ সৌন্দর্য পূজারি, এখন হয়তো তার মোহ কেটে গেছে, তাই এড়িয়ে যাচ্ছে। যানি তো আমি সব পুরুষ দিন শেষে রুপটাই খোঁজে।
কথা গুলো বলতে বলতে, রুহি চোখের কোনে পানি চলে আসে।
আসলেই মেয়ের রুপ না থাকলে কিছুই না, এই সমাজ সবার আগে রুপটাই দেখে, গুনের কোনো দাম নেই।
বুক ফেটে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুহি, মনে মনে বলে উঠে,
রুহি: মন থেকে বের করে ফেল রুহি, ওই লোকের কথা, তুই কখনোই তার যোগ্য হতে পারিস না।
ছাদের এক অপর প্রান্তে দাঁড়ানো রোমান, লুকিয়ে লুকিয়ে তার বোকা নারীকে দেখছে, কিছু কথা তার কানে এসেছে, কষ্ট তারও হচ্ছে রুহিকে এই ভাবে এড়িয়ে চলতে, কিন্তু সাময়িক একটু কষ্ট সহ্য করলে, যদি তার প্রিয় মানুষটাকে সারা জীবন জন্য পেয়ে যায়। তাহলে এই কষ্ট সে সহ্য করবে। তবে রুহি যতদিন নিজ থেকে তার কাছে না, আসবে ততদিন এই ভাবে এড়িয়ে চলবে।
দূরে থাকবে। যতই কষ্ট হোক নিজের মনের অনুভূতি সে ধমিয়ে রাখবে। কথা গুলো মনে মনে বলেই ছাদ থেকে সরে যায় রোমান।
রুহি কেনো জানি মনে হলো পিছনে কেউ আছে, পিছন ফিরে তাকাইতে দেখে কেউ নেই। পাশে থাকা ফোন হাতে নিয়ে দেখে কয়টা বাজে, বিকাল,৪:০০ টা কাছাকাছি, রুহি আচারের বোয়াম রেখে, ছাদ থেকে ধীর পায়ে নেমে আসে।
_নিলয়ের পুড়ো বাড়ি ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানো শেষ যে, তার শুভ্র ভাই বিড়াল মারছে, নিলয়ের কথার আগামাথা কেউ বুঝতে পারছে না। রুহি সারাদিনে রোদের কাছে যায়নি। সকালে কি কি হয়েছে, তাও তার অজানা দৌড়ে রোদের রুমে যায়। রোদ বেলকনিতে বসে উপন্যাস বই পড়ছে। রুহি রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, রোদ মুচকি হাঁসে, রুহি গিয়ে রোদের সামনে থাকা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। হাঁসি হাঁসি মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
রুহি: ভাবিজী কি শুনছি গো, কিসের বিড়াল মারার কথা বলছে নিলয় ভাইয়া।
রোদ রুহির এমন কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে৷ রুহি জোড়ে শব্দ করে হেঁসে দেয়, রুহি পুনরায় বলে উঠে,
রুহি: লজ্জা পেতে হবেনা ভাবি, আমি তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডও তাই ননদী মনে না করে, বন্ধু মনে করে বলো।
রোদ মাথা তুলে তাকায় রুহির দিকে, আস্তে করে বলে উঠে,
রোদ: সে রকম কিছু না, রুহি।
রুহি: আচ্ছা একটা কথা বলো তো, তোমার সাথে ভাইয়ার সব কিছু কি ঠিকঠাক হয়েছে।
রোদ: তেমন কিছুই না,
রোদ এইটুকু বলে চুপ হয়ে যায়।
রুহি রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
রুহি: বন্ধু মনে করে বলো আমায়, সবকিছু।
রোদ মাথা নিচু করে আছে, আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে বলে, এ্যাক্সিন্ডেট পর থেকে শুভ্রের এমন পরিবর্তন, হুট করে বদলে যাওয়া। সব কিছু রুহি মনোযোগ দিয়ে শুনে, আসলে সেদিন হসপিটালে, শুভ্র ভাইয়ার পাগলামো সে দেখছিল। রুহি রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
রুহি: তুমি কি সব কিছু ভুলে ভাইয়া মেনে নিয়েছো রোদ।
রোদ চুপ করে আছে, কোনো কথা বলছে না, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে,
রোদের চুপ করে থাকাই সব কিছু বুঝে যায়, রুহি, রোদের কাছে গিয়ে হাতে হাত রেখে বলে উঠে,
রুহি: আমার চোখের দিকে তাকা রোদ,
রোদ আস্তে করে রুহির দিকে তাকায়,
রুহি রোদের চোখে পানি মুছে দিয়ে, শক্ত কন্ঠে বলে উঠে
রুহি: চোখের পানি অনেক মূল্যবান রোদ, যেখানে সেখানে চোখের পানি ফেলবি না,
আর একটা কথা মন দিয়ে শোন
শুভ্র ভাইয়া যতই আমার আপন ভাই হোক, সে তোর সাথে অন্যায় করেছে, প্রতি নিয়ত, তাই এতো সহজে তাকে মাফ করিস না। সে যে আমার ভাই বলে সব কিছুতে পার পেয়ে যাবে। এটা মোটেও না।
রুহি একটু থেমে পুনরায় আবার বলে উঠে,
রুহি: পুরুষ মানুষ সহজে কোনো জিনিস পেয়ে গেলে, তার কদর করে না।
শুভ্র ভাই তোকে যে কষ্ট দিয়েছে, ভুল বুঝে, সে যদি সেই সমান কষ্ট অনুভব না করে, তাহলে আবার তোকে অন্যের কথা শুনে ভুল বুঝবে আঘাত করবে।
তাই বলছি, নিজেকে সব কিছুতে দুর্বল করিস না, শক্ত কর নিজেকে, আর যতটা সম্ভব ভাইয়া এড়িয়ে চল। আমি জানি তুই ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু এখন সময় টা ভালোবাসা দেখানোর না।আবেগ ধুয়ে ফেল, বিভেগ দিয়ে কাজ কর।
রোদ রুহির কথায় মাথা নাড়ায়,রুহি রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, বলে উঠে,
রুহি: ভাইয়াকে একটা শাস্তি দেওয়া, দরকার বুঝছিস। আমার মিষ্টি একটা ভাবিকে কষ্ট দিছে তাকে তো তার শাস্তি পেতে হবে।
রুহি রোদের কানে কানে কিছু একটা বলে, রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। রোদ রুহির বলা প্রতিটা কথা ভাবে, আসলে রুহি তো কোনো ভুল কথা বলেনি,
সহজে কাউকে পেয়ে গেলে, তার মূল্য কেউ দেই না।
রোদ বসা থেকে উঠে, বাসার পাশে আজান ধ্বনি ভেসে আসছে, রোদ মাথার কাপড়টা ঠিকঠাক মতো দেয়। আজান শেষ হলে, ওয়াশরুম যায় অজু করে নামাজ পড়তে, মাগরিবের নামাজ শেষ করে বিছানার উপর বসে, চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে৷ সারাদিনে আর শুভ্রের দেখা পাইনি, রোদ রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে ড্রয়িং রুমে আসে। রোদ কিচেনে পা বাড়ায়, কিচেনে মীরা বেগম ছিলেন, রোদকে দেখে, হাতের কাজ রেখেই, কিচেন থেকে বেড়িয়ে যায়। রোদ পিছন ফিরে তাকায় মীরা বেগম চলে যাচ্ছেন, চোখে আটকে আছে, পানি, কোনো রকম নিজেকে সামলায় রোদ।
রোদ আর কিচেনে থাকে না, সেও বেড়িয়ে আসে, ড্রয়িং রুম পেড়িয়ে সিঁড়ি দিকে যেতে নিবে, এমন সময় কারো ডাকে পিছন ফিরে তাকায়, অয়ন দাঁড়িয়ে আছে, অয়নের মুখে মৃদ হাঁসি, অয়ন রোদ অনুরোধ স্বরে বলে উঠে
অয়ন: রোদ আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে,খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
রোদ অয়নকে এড়িয়ে যেতে, চাইলেও অয়ন পানি চাওয়াতে কিচেনে যায়। আসে পাশে কোনো সার্ভেন্ট নেই, যে তাদের বলবে, দ্রুত পায়ে কিচেনে গিয়ে, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বেড় করে অয়নকে দেয়। কিছুদিন ধরে অয়নকে সেরকম বাড়িতে দেখা যাইনি, একবার শুনেছিল। কোন কাজে নাকি সিলেট গেছে, তারপর আর কোনো কিছু জানেনা, আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করেনি। রোদ পানি দিয়ে চলে যেতে নিবে, এমন সময় অয়ন বলে উঠে,
অয়ন: রোদ কেমন আছো তুমি,,?
রোদ পিছন ফিরে তাকায়, আস্তে করে বলে উঠে,
রোদ: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া,
রোদ কথা শেষ করে আর দাঁড়ায় না, অয়নের এমন ঘোর লাগানো দৃষ্টি তাকে অস্তিতে ফেলে, সে এতটাও অবুঝ না যে এই দৃষ্টি মানে বুঝবে না, মেয়ে মানুষ ছেলেদের চোখের দৃষ্টি দেখলে বলে দিতে পারে, সে কেমন।
রোদকে এই ভাবে এড়িয়ে যেতে দেখে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে অয়ন। অয়ন মনে মনে বলে উঠে
অয়ন: মন যারে চায়, ভাগ্য তারে পায়না,
মানুষটাকে ভালোবাসি, তবে তাকে ছুয়ে দেখা তার কাছে যাওয়ার অধিকার আমার নেই।
কেউ পেয়ে অবহেলা করে, আর কেউ হাজার বার চেয়েও পায়না।
অয়ন সোফা থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে নিজের রুমে হাঁটা দেয়। নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে ডুকে ফ্রেশ হতে।
রাত ৯:০০ কি ৯:৩০
রোদ এশার নামাজ শেষ করে বিছানার উপর বসে আছে, ভিষন মনে পড়ছে, তার মামনিকে, মামনির ছবি বুকের সাথে চেঁপে ধরে আছে। হটাৎ কারো হাঁসির শব্দে সামনে তাকায়, রিয়া রোদের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে, রোদ চোখ সরিয়ে চোখের পানি মুছে, ছবিটা ঠিক স্থানে রেখে বিছানার উপর বসে, রিয়া রুমের ভিতরে ডুকে রোদকে বলে উঠে,
রিয়া: রুপ দেখিয়ে তো ভালোই শুভ্রকে বস করেছিস।
রোদ ভ্রু কুচকে তাকায় রিয়ার দিকে,
রিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বলে উঠে,
রিয়া: যতই ছল চাদরি করিস, শুভ্রকে আমি আমার করবোই। তোর ওই রুপের জালে বেশি দিন বেঁধে রাখতে পারবিনা।
রোদ রিয়ার কথা শুনে হাঁসে, রোদকে হাঁসতে দেখে রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়। রেগে গিয়ে বিছানা থেকে রোদের হাত টেনে ধরে দাঁড় করায়।
রিয়া: তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলব, তোর জন্যই শুভ্র আমার থেকে দূড়ে সরে গেছে।
কথা গুলো বলেই, রোদকে থাপ্পড় মারতে নেয়। রোদ হাত ধরে ফেলে, রিয়ার হাত মোচড় দিয়ে ধরে, রিয়া ব্যথায় আহহহ বলে চিৎকার করে উঠে, রোদ রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে উঠে,
রোদ: হাত অনেক বড় হয়ে গেছে , কথায় কথায় গায়ে হাত তুলতে আসিস , বয়সে বড় বলে এতো ক্ষন সম্মান দিয়ে চুপ থেকেছি। আর কি যেনো বল্লি আমি শুভ্র ভাইকে আমার রুপ দেখিয়ে ফাঁসিয়েছি, এ আমি আমার স্বামী রুপ দিয়ে, না হয় যা ইচ্ছে হবে, তা দিয়ে ফাঁসাবো তাতে তোর কি হ্যা, তোর মত তো বিবাহিত বেডা পিছনে পড়ে থাকিনি, তোর তো লজ্জা সরম কিছুই নেই,একটা বিবাহিত পুরুষের পিছনে পড়ে আছিস হ্যা।
রিয়া নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে , বলে উঠে
রিয়া: আমি শুভ্রকে আমার করে ছাড়বোই,
রোদ হেঁসে দেয়, তারপর বলে উঠে,
রোদ: ওটা আমার খাওয়া মা**** সেই টার দিকে কেনো তোর নজর পরলো হ্যা।
রোদ রিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে, হেঁসে বলে উঠে,
রোদ: তোর মতো নোংরা মেয়ের দিকে শুভ্র চৌধুরী কখনোই হাত বাড়াবে না। এই টুকু আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আর দিবা স্বপ্ন দেখা বাদ দে, যা আমার রুম থেকে,
রোদ রেগে বেলকনিতে চলে যায়। রিয়া রাগে দুঃখ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
রোদের সব কিছু যেনো অসহ্য লাগছে, সে যতই চুপ থাকে, মানুষ তাকে ততই আঘাত করে। রাত ১১ টা রোদ রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে, হাঁসি বেগম খাবার টেবিলে রাগি চোখে তাকিয়ে ছিল, রোদের দিকে কিন্তু আরাফ চৌধুরী থাকাতে কিছু বলেনি৷ রোদ হাঁসি বেগমকে সে রকম পাত্তা দেইনা, খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসে। এখন রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে ভালো লাগছে না, বলে ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। অনেক দিন হয়ে গেলো, ছাদে আসেনি। রাত ১২ টার কাছাকাছি শুভ্র রোমান কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি আসে। শুভ্র গোসল করে বেড় হয়ে। ধুশর রঙের গেঞ্জি সাথে ট্রাউজার গায়ে,, মাথার চুল গুলো ভেজা, রুমে ডুকে বউকে খুঁজে কিন্তু সে ভালো করেই জানে যে তার বউ তো আর তার রুমে থাকার মানুষ নয়৷ সুযোগ পেলেই পাখির মতো উড়াল দেয়।
শুভ্র রুম থেকে বেড়িয়ে রোদের রুমে যায়। হেনা বেগমের রুমে গিয়ে দরজা খুলে তাকায় এখানেও তার বউ নেই। পুড়ো বাড়ি খুঁজে কোথাও তার বউ নেই।
কপালে চিন্তার ছাঁপ এতো রাতে বউ কই গেলো। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাঁসে, দৌড়ে রুমে চলে যায়। হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে, দ্রুত পায়ে ছাদে উঠে, রোদ ছাদের এককোনে দাড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, রোদ হটাৎ হকচকিয়ে উঠে, শুভ্র আস্তে করে বলে উঠে,
শুভ্র: শান্ত হও বউ আমি তোমার এক মাত্র জামাই এভাবে ছোটাছুটি করোনা। শান্ত হয়ে থাকো তো একটু।
রোদ শুভ্রের কথা শুনে ছোটাছুটি আরো বেড়ে যায়। শুভ্র বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলে।
শুভ্র: সমস্যা কি তোর, লাফালাফি করছিস কেনো৷ চুপচাপ ধারা,
রোদ শক্ত কন্ঠে বলে উঠে
রোদ: ছাড়ুন বলছি,
শুভ্র: ছাড়বো না, কি করবি
রোদ: অসহ্য লাগছে ছাড়ুন,
শুভ্র: তোর যেমন লাগার লাগুক আমার ভালোই লাগছে৷
রোদ শুভ্রের হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়। শুভ্র কোনো শব্দ করে না।
শুভ্রকে না ছাড়তে দেখে রোদ শুভ্রের হাত থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। শুভ্র হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে আর এক হাত দিয়ে রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
শুভ্র: এতো রাতে কি, বউয়ের কামড়া কামড়ি করতে ইচ্ছে করছে নাকি৷ ইচ্ছে করলে চলো রুমে যাই।
রোদ শুভ্রের কথা শুনে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে, আস্তে করে বলে।
রোদ: শুভ্র ভাই
রোদের এমন করুন কন্ঠে শুভ্রের পুড়ো শরীর কেঁপে ওঠে, আস্তে করে বলে উঠে,
শুভ্র: হুম বল,,
রোদ: কেনো এমন করছেন, প্লিজ এই রকম করবেনা।
শুভ্র রোদের গলায় মুখ দিয়ে আস্তে করে বলে উঠে
শুভ্র: কি করছি আমি,,
রোদ : আমার থেকে দয়া করে দূরে থাকুন। প্লিজ আমাকে আপনি কিছু দিন সময় দিন তারপর আমি অনেক দূরে চলে যাবো। প্লিজ এই কয়দিন আমার থেকে দূড়ে থাকবেন প্লিজ, তারপর কোনোদিন আপনার সামনে আসবো না।
রোদের মুখে চলে যাবে কথা শুনে রাগ উঠে যায়। শক্ত করে রোদের পেট চেপে ধরে রোদ ব্যথায় আহহ শব্দ করে উঠে,শুভ্র দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে,,,
শুভ্র: খুব সখ হয়েছে আমার থেকে দূড়ে চলে যাওয়ার।
রোদ: হুম আপনার কাছে থাকতে চাই না।
শুভ্র রাগে রোদকে সামনে ঘুড়িয়ে শক্ত করে গলা চেপে ধরে, রাগে রি রি করতে করতে বলে উঠে,
শুভ্র: আমার থেকে দূড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে এইখানে জিন্দা কবর দিব।
রোদের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, এমন ভাবে গলা চেপে ধরেছে, শ্বাস নিতে পারছে না। শুভ্র রোদের গলা ছেড়ে দেয়। রোদ গলা ধরে জোড়ে জোড়ে কাঁসতে থাকে, শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
রোদ: আপনার মতো একজন নিষ্ঠুর মনে মানুষ শুধু কষ্ট দিতেই পারে, কখনো ভালোবাসতে পারেনা। আর যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে আমি থাকতে চাই না। কারো ঘৃণা নিয়ে বাঁচতে চাই না।
শুভ্র রোদের কাছে এসে রোদকে নিজের সাথে চেঁপে ধরে, রাগি চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
শুভ্র: আমি তোকে ঘৃণা করি৷ আর এই ঘৃণা নিয়ে তোকে সারা জীবন বাঁচতে হবে, আর আমার সাথে তোকে থাকতে হবে। আমি ছাড়া অন্য কারো কাছে যাওয়ার কথা মাথায় আনলে সেইখানে তোকে জিন্দা কবর দিব, মনে রাখিস।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে
রোদ: আমি থাকতে চাই না, আপনার সাথে চাই না থাকতে,
শুভ্র রাগে রোদকে ছেড়ে নিজের চুল চেঁপে ধরে কোনো ভাবে রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। এই মেয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে রাগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শুভ্র রোদের দিকে তাকায় রোদ আবার কিছু একটা বলতে নিবে, তখনি রোদকে এক হাত ধরে কোমর পেঁচিয়ে নিজের সামনে আনে, শুভ্রের চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বেড় হচ্ছে৷ রোদ এখনো ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। শুভ্র রোদের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
রোদ হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে থাকে, শুভ্র রোদের হাত এক হাত দিয়ে চেঁপে ধরে।
প্রায় ১০ মিনিট পার হয়ে যায়, শুভ্রের ছাড়ার কোনো নামই নেই, রোদের হাত পা নেতিয়ে আসে। শুভ্র রোদকে ছেড়ে দেয়। রোদ শরীর ভর সব ছেড়ে দেয়, শুভ্রের গায়ে, শুভ্রের বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। শুভ্র রোদের মাথা তুলে নিজের দিকে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
শুভ্র: আমাকে উসকানি দিস না,
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৩
তুই ছোট বলে যে তোকে ছেড়ে দিব। এটা কখনো মাথায় আনিস না। আমি আমার অধিকার ভালো করেই বুঝে নিতে জানি। আমার কাছ থেকে তুই কিন্তু ছাড় পাবি না রোদ।
কথা গুলো বলে
শুভ্র শব্দ করে রোদের কপালে চুুমু খায়।