বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৩

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৩
shanta moni

‘রোদ ভয়ে ঢোগ গিলে, এ আল্লাহ কোন বিপদে পড়ে গেলাম। শুভ্র দুষ্ট হেঁসে রোদের দিকে, এক পা দু পা করে এগোতে এগোতে বলে…
শুভ্র: এখন কই পালাবি ৪০০ গ্রামের বাচ্চা। কি বলিস আমার সিস্টেম সমস্যা, হ্যা,, আজ বুঝাবো আমি কি জিনিস।
রোদ ভয়ে আসে পাশে তাকায়, তার পালানো কোনো পথ পাচ্ছে না। শুভ্রকে গায়ে আধ খোলা শার্ট খুলে ফেলে দিতে দেখে রোদ আরো ভয়ে সিঁটিয়ে যায়।
রোদের হটাৎ চোখ যায়, ওয়াশরুমের দরজা দিকে, ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে
আবার শুভ্রের দিকে তাকায়, কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে দরজা লাগায়। ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে যে শুভ্রের বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগে, শুভ্র ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়, দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে,
শুভ্র: এই ৪০০ গ্রাম, দরজা খোল!

রোদ: খুলবো না…!
শুভ্র: যতই দরজা বন্ধ করে বসে থাকিস। আজকে তোকে আমি ছাড়বো না, দরজা খোল,,
রোদ রেগে গিয়ে দাঁত কটমট করে বলে
রোদ: বুইড়া খাটাস শখ কতো, আসছে আমার সাথে বা*সর করতে হুম,,খুলবো না দরজা
শুভ্র: আমি বুড়ো, এই ৪০০ গ্রাম দরজা খোল, তোকে আজকে একটা আচার মেরে শেষ করে ফেলবো। দরজা খোল
রোদ: এহহ আসছে আমাকে শেষ করে ফেলবে, এইখান থেকে যা বুইড়া খাটাস,,
শুভ্র রোদকে রাগতে দেখে নরম স্বরে বলে উঠে,,
শুভ্র: এমন করেনা পাখি, দরজা’টা খোল, আমাকে পাগল করে এই ভাবে লুকিয়ে থাকিস না।
শুভ্রকে এমন নরম হতে দেখে রোদ বিশ্বজয়ের হাঁসি দেয়, তার প্লান কাজ করেছে তাহলে। ঠিক হয়েছে এখন কষ্ট পাক হুম, মনে মনে কথা গুলো ভাবে রোদ, শুভ্র আবার দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,
শুভ্র: লক্ষি বউ, সো*না বউ আমার দরজা খোল পাখি, আমাকে পাগল করে এভাবে লুকিয়ে থাকিস না, দরজা খোল পাখি..!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোদ ওয়াশরুমের ভিতর থেকে বলে উঠে,
রোদ: এহহ আসছে দরজা খোল পাখি, এতোদিন কোথায় ছিলি শা*লা, এই সাত বছরের তো বউ আছে, সেটা মনেও পড়েনি, এখন আসছে দরজা খোল পাখি, বা*লের পাখি সর এখন থেকে লু*চ্চা শা*লা।
রোদের এমন কথায় শুভ্র অবাক এ কোন রোদকে সে দেখছে, ছোট বেলায় যেমন চঞ্চল ছিলো। মুখে যা আসতো তাই বলতো, সেই ছোট্ট রোদ,
শুভ্র পুনরায় দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে,
শুভ্র: দরজা খোল, আমি বা*সর করবো,
রোদ: মুড নেই,
শুভ্র: হোয়াট?
রোদ: বললাম তো এখন মুড নেই, এই বুড়ো লোকের সাথে বা*সর করার।
শুভ্র রেগে গিয়ে বলে,

শুভ্র: দরজা খোল শা*লি,
রোদ: খুলবো না শা*লা, কি করবি,
শুভ্র: সাহস অনেক বেড়ে গেছে নাহ, দাঁড়া তোর কি অবস্থা করি দেখ।
শুভ্রের এমন কথায় ভয় পেলেও প্রকাশ করে না।
শুভ্র আবার বলে উঠে,
শুভ্র: দরজা খোল,৪০০ গ্রামের বাচ্চা,
কি বলছিলি, আমার সিস্টেম সমস্যা, হারবাল খাবো। আজ তোকে দেখাবো তার সিস্টেম সমস্যা, দরজা খোল শা*লি!
রোদ: তো কি বলবে, বুড়ো হাতি একটা,
সত্যি তো বলছি, খুলবো না দরজা।
রোদ: ভালোই ভালোই বলছি দরজা খোল রোদ। আর এখন যদি দরজা না খুলিস তো যেদিন তোকে ধরবো পুড়ো চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলে যাবি।
রোদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,

রোদ: আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি, খুলবো না দরজা,
শুভ্র: আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো রোদ।
দরজা ভাঙার কথা শুনতে রোদ ভয় পেয়ে যায়। মনে মনে সাহস নিয়ে বলে,
রোদ: আপনি দরজা ভাঙলে বাড়ির সবাই জেগে যাবে৷ নানু মা আসবে, আর সবাই আসলে আমি বলে দিব যে,
শুভ্র আর কিছু না বলতে দিয়ে বলে
শুভ্র: আমি কাউকে ভয় পাই নাকি, হ্যা আর আজকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আর কি বলবি তুই হ্যা,,,
রোদ ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলে

রোদ: বলবো আপনার সিস্টেম সমস্যা, আপনি হিজড়া,
শুভ্র রোদের কথা শুনে জোরে লাথি মারে ওয়াশরুমে দরজায়,মনে মনে বলে
শুভ্র: সিস্টেম সমস্যা ঠিক ছিলো, এখনতো বউ আমাকে হিজড়া বানিয়ে দিল।
রোদ ভিতর থেকে শব্দ পায়, কেউ জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে,
রোদ দরজা পাশে কান দিয়ে শুনে শুভ্র আছে কিনা, কিন্তু বাহির থেকে কোনো সারা শব্দ পায় না।
রোদ বিড়বিড় করে বলে,
হিজড়া বলাতে রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নাকি, নাহ রুমেই আছে, রোদ এই সব ভাবছিলো, আর দরজা কান পেতে শুনছিলো, বাহিরে শুভ্রের কোনো সারা শব্দ পায় কিনা। আশ্চর্য বিষয়ে হলো রোদ শুভ্রের কোনো সারা শব্দ পায় না।

এইভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা মত ওয়াশরুমে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো। রাতও অনেক হচ্ছে, রোদের ঘুমও পাচ্ছে, সারা রাত তো আর ওয়াশরুমে থাকা সম্ভব না। রোদ দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতে যায়। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে উকি দেয়, রুমে মধ্যে কাউকে না দেখে, স্তির নিশ্বাস ফেলে এক হাতে পড়নে পড়ে থাকা প্যান্ট অন্য হাতে ব্যাগ ধরে, রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যেতে নেয়।
কিছু দূর থেতেই, নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করে, রোদ ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। শুভ্র রোদকে এক হাত দিয়ে কোমর ধরে, শূন্যে তুলে ফেলে।
রোদ চেচিয়ে বলে উঠে,

রোদ: আম্মা বাঁচাও,,
শুভ্র রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে
শুভ্র: এখন কই যাবি হ্যা,,আমার মুখে মুখে তর্ক করা নাহ, আজ তো তুই গেলি।
রোদ ছোটাছুটি করতে করতে বলে,
রোদ: ছেড়ে দিন, আমায় আমি নানু কাছে যাব, নানু কই তুমি,,
শুভ্র: চুপ থাক, ৪০০ গ্রামের বাচ্চা,
একটা আচার মারবো, আর একটা কথা বললে।
রোদ ভয়ে সাথে সাথে চুপ করে যায়। শুভ্র
কোলে করে নিয়ে বেডের উপর এক রকম জোরে ঠাসস করে ফেলে দেয়।
রোদ বিছানা থেকে পিছতে পিছতে বলে,
রোদ: আমি কিন্তু নানু’কে বলে দেব।
শুভ্র ঠোঁট কামড়ে হাঁসে তাঁরপর বলে
শুভ্র: কি বলবে সো*না

রোদ: অসভ্য লোক, দূরে থাকেন।
শুভ্র: সরি আপাতত তোমার কথা রাখতে পারছি না। কাছে আসো,,
রোদ: নাহহহহহহহহহহহ
শুভ্র: এখন চিৎকার করছিস কেনো হ্যা, ধরলাম না তার আগেই ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা করিস কেনো।
কথা গুলো বলেই শুভ্র বিছানার দিকে এগিয়ে আসে, রোদ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে
রোদ: আমার কাছে আসবে না, বলে দিচ্ছি৷ আমি কিন্তু..
শুভ্র কোনো কথা না বলতে দিয়ে রোদের এক পা খপ করে ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে,, দুষ্ট হেঁসে গানের মতো গেয়ে উঠে,,
শুভ্র: আজ পাষা খে*লবো শ্যাম,,
রোদ ভয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে বার বার ঢোগ গিলছে, আর ভাবছে এই হাতির কাছ থেকে কি ভাবে বাঁচা যায়।

রোদ হটাৎ করে মাথা ধরে চিৎকার করে উঠে বলে,
রোদ: শুভ্র ভাই আমাকে বাঁচান, শুভ্র ভাই ওই বাজে লোক গুলো আবার এসেছে।
বলেই সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে যায়।
শুভ্র রোদের এমন হটাৎ সেন্সলেস হওয়াতে গাবড়ে যায়। রোদকে ধরে গালে হাত দিয়ে বলে উঠে,
শুভ্র: এই রোদ জান, রিল্যাক্স আমি আছি, কিছু হবে না। কি হলো ওঠ জান,
এই রোদ,,
শুভ্রের ভয়ে হাত পা কাঁপছে, শুভ্র রোদকে বিছানার কাছে রেখে টি-টেবিলে কাছে যায়। পানি আনতে এই দিকে রোদ চোখ খুলে দেখে, সব, এই সুযোগে পালাতে হবে। আস্তে করে উঠে এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শুভ্র হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লরে পড়ে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, তার মানে এই বিচ্ছু মেয়ে তাকে বোকা বানিয়েছে। শুভ্র রাগে বিড়বিড় করে বলে

শুভ্র: নারী অভিনয় জন্য সেরা রেহহহহ
তবে এই অভিনয় জন্য তোকে তো নোবেল আমি অবশ্যই দিব রোদ, রেডি থাকিস।
রোদ নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে এসে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে,
আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছে ওই হাতির কাছ থেকে, তা না হলে আজই হয়তো ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যেতো। রোদ মনে মনে পন করে জীবনে আর এমন কাজ করতে যাবে না৷ আর না শুভ্রের সামনে যাবে।
সকাল ৮:০০ টা,
নীলা আসছে চৌধুরী বাড়িতে, কিছুক্ষণ আগেই, একটা জিনিস নিলা খেয়াল করছে নিলয় নীলাকে দেখলে লুকাচ্ছে বিষয়টা কেমন সন্দেহ জনক,

নীলা নিলয়ের কথা মাথা থেকে ঝেঁড়ে রোদের রুমের দিকে যায়। নীলাকে সেদির পর থেকে আর রং নাম্বারে লোকটা কল দেইনি৷ যার জন্য নীলা খুঁশি, যে বেডা জন্মের শিক্ষা পেয়েছে।
এইদিকে নিলয় কানে খুব কম শুনছে, একটা কথা দুই তিন বার বলবে শুনবে, হটাৎ এইভাবে কানে কেনো কম শুনছে মীরা বেগম জিজ্ঞেস করলেও নিলয় এরিয়ে যায়, মিথ্যা বলে।
রোদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
নিলা পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলে
নীলা: জানু এতো মন দিয়ে কার কথা ভাবছিস।
রোদ নীলাকে দেখে মুচকি হাঁসে,রোদ বলে,
রোদ: কেমন আছিস নীলা,
নীলা: আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই,,?
রোদ: আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

নীলা রোদ গল্প করছে এর মধ্যে রুহি আসে, রুহি চোখ মুখ ফেকাসে, কেমন যেনো চেহারায় চিন্তার ছাপ, রোদ রুহির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,
রোদ: রুহি ঠিক আছিস তুই, এমন দেখাচ্ছে কেনো তো, কিছু কি হয়েছে?
রুহি মলিন হাঁসে, রোদ নীলাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলে
রুহি: না কিছু হয়নি, ঠিক আছি আমি,
রাতে ঘুম হয়নি, এই জন্য হয়তো এমন দেখাচ্ছে,
রোদ নীলা আর কিছু বলে না।
তিনজন মিলে গল্পে মশগুল হয়ে যায়।

রাত ৯:০০ কি ৯:৩০ হবে
রোদ হেনা বেগমের সাথে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে গল্প করছিলো।
এমন সময় সামনে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে, কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিতেই, দেখে শুভ্র দাঁড়িয়ে, শুভ্রের কোলে একটা মেয়ে পাশে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা, সাথে আরো একটা মেয়ে রোদের বয়সি হবে। শুভ্র মুখ দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শুভ্র দরজা থেকে সামনের দিকে এগিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে যায়। রোদের দিকে এক নজর তাকায়ওনি যে রোদ এখানে আছে কি না।
রোদের বুকের বা পাশে চিন চিন করে ব্যাথা হচ্ছে, চোখের পানি টলমল করছে, নিজেকে সামলে হেনা বেগমকে উদ্দ্যেশ করে বলে,
রোদ: নানু আমি রুমে গেলাম,

কথা বলে আর দাঁড়ায় না, সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় উপরে।
রোদ মনে ভিতরে যেনো অস্থিরতা বাড়ছে বার বার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে শুভ্র মেয়েটাকে নিয়ে নিজের রুমে কি করছে।
রোদ নিজের কৌতুহল ধমিয়ে রাখতে না, পেড়ে,পা টিপে টিপে শুভ্রের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়, দরজা হালকা চাঁপানো, রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা ধরে খুলে, চোখের সামনে শুভ্রকে অন্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে দেখে, সাথে সাথে নিজের মুখ চেঁপে ধরে,
দরজা থেকে সরে যায়। নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকায়। এতোক্ষণে আটকে রাখা কান্না বেড়িয়ে আসে। হু হু করে কেঁদে উঠে,

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪২

কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে,
রোদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
রোদ: আমি আসলেই বোকা, ভালো একটু ব্যবহার ভালো ভাবে দুইটা কথা বলাতে, আমি সব কিছু ভুলে গেছিলাম।ভেবেছিলাম, আমাকে হয়তো সে ভালোবাসে, কিন্তু না, আমার মতো মানুষকে ঘৃণা করা যায়, ভালোবাসা যায় না কখনো।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here