বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৮

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৮
shanta moni

“রিনা খান ঠাসসস করে ফ্লোরে বসে পড়ে’ তার এতো দিনের একটু একটু করে জমানো টাকা সব নিয়ে গেলো। সব টাকা নিয়ে গেলো। রিনা খান আহাজারি করেই যাচ্ছে এক নাগাড়ে, জেরিন রিনা খানের এই রকম আহাজারি শুনে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। রিনা খানকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে তার কাছে যায়। রিনা খানকে এতো করে বলছে উঠে যেতে কিন্তু এতো বলেও হাত ধরে টানাটানি করেও রিনা খানকে এক চুল পযন্ত নড়াতে পারে না। জেরিন বিরক্ত হয়ে, বলে…! ”

জেরিন: হোয়াই হ্যাপেন..? কি হয়েছে মাম্মা এই ভাবে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছো
কেনো?
রিনা খান থেমে গিয়ে জেরিনকে একটু আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে। জেরিনের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট, জেরিন নিজের মায়ের কাছে এসে, পাশে বসে আস্তে করে বলে…!
জেরিন: মাম্মা সামন্য কিছু টাকার জন্য এমন করোনা। আমরা যে কাজে এসেছি, সেটা হয়ে গেলে, বস্তুা বস্তা টাকা পাবো। আর সেটা দিয়ে সারা জীবন বসে খেতে পারবো। তুমি উঠে আসো! চলো রুমে চলো!
“রিনা খান জেরিনের কথায় শান্ত হয়! তারপর চলে যায়! নিজের রুমে।
“গভীর রাত চারদিকে শুনশান নীরবতা”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুইজন কপোত কপতি বসে আছে নদীর এক কিনারে, থেকে থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে তাদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। আর সেই ঠান্ডা বাতাসে রোদ কেঁপে উঠছে!
“শুভ্র রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে! এই কিছুক্ষণ আগেই রোদকে কালো শাড়ি সাথে কিছু অর্নামেন্স দিয়ে।
নিজ হাতে সাজিয়ে আনে। রোদকে আয়না দেখতে দেইনি শুভ্র যে কেমন সাজিয়েছে” রোদ অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শুভ্র কোনো কিছুই বলেনি! রোদ শুভ্রকে জিজ্ঞেস করতে করতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে, গাড়িতে ঘুমিয়ে যায়। আর যখন ঘুম ভাঙে তখন নিজের চোখ বাঁধা অবস্থায় পায়। প্রথমে ভয় পেয়ে ছটফট করলেও
শুভ্রের কথা শুনে শান্ত হয়ে যায়।

শুভ্র সেই কখন থেকে রোদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে আছে। শুভ্র হাতের ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে, মুচকি হাঁসে তাঁরপর রোদের চোখের কালো কাপড় টা খুলে দিতেই, সামনে বড় বড় অক্ষরে লিখা উঠে,
Happy Birthday টুনটুনি পাখি
রোদ অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আকাশে ফানুস উড়ে যাচ্ছে। কেমন যেনো আকাশ জলমল করছে। নদীর পানি জলমল করছে, দেখতে চারপাশ’টা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
“শুভ্র রোদের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে..!
শুভ্র: “Happy Birthday, মিসেস শুভ্র,
Many many happy returns of the day, my madness…!”

রোদ স্তব্ধ হয়ে যায়! অবাক হয়ে চারপাশে সব কিছু দেখছে, শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে হাঁসে, রোদের এক হাতে শক্ত করে কোমর চেঁপে ধরে নিজের কাছে এনে, মুখের কাছে পড়ে থাকা চুল গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।
“রোদের শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহারোন ভয়ে যায়। রোদ চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেঁসে বলে..!
শুভ্র: আহ বউ দেখি এখনি লজ্জা পাচ্ছে!

কিছু তো শুরুই করলাম নাহ! তার আগেই এমন কাঁপাকাঁপি রোদ শুভ্রের কথা শুনে চট করে শুভ্রের থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। শুভ্র রোদকে এমন করতে দেখে, পুনরায় আবার হাঁসে! রোদ মাথা নিচু করে কাঁচুমাচু করতে থাকে’ শুভ্র রোদের দিকে এগিয়ে রোদের হাত ধরে একদিকে নিয়ে যায়। একটা টেবিলে কেক রাখা, চারপাশে বোমবাতি জ্বলছে, হালকা লাইটিং করা, পরিবেশ’টা অসম্ভব সুন্দর’ রোদের জীবনে আজকের রাত’টা স্বপ্নের মতো লাগছে, মনে হচ্ছে ঘুম ভাঙলেই সব ভেঙে যাবে। রোদ শুভ্রের প্রতিটা কাজে, আচারনে বার বার অবাক হচ্ছে। বিস্ময় চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোদকে ইশারা করে কেক কাটতে, রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে কেক কেটে, এক টুকরো কেক শুভ্রের মুখের দিকে এগিয়ে দেয়। শুভ্র রোদের হাত ধরে, রোদের মুখে কেক দেয়। রোদ কেক মুখে নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র দিকে‚ শুভ্র রোদের ঠোঁটে লাগা কেকের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাঁসে, রোদের দিকে এগিয়ে রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই, রোদের ঠোঁটে লাগা কেক নিজের খেয়ে নেয়।
রোদ প্রথমে অবাক পড়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। শুভ্র হুট করেই রোদকে কোলে তুলে নেয়। রোদ কিছু বলতে যাবে শুভ্র বলে…!

শুভ্র: হুসসসস কোনো কথা না..!
“রোদ চুপ করে যায়। শুভ্র রোদকে নিয়ে একটা সাদা কাপড়ে গেড়া চারদিকে একটা রুমের মতো করে সাজানো, সব কিছুই, বাহির কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবে উপরে দিকটা, একদম ফাঁকা, জোসনা ভরা আকাশ দেখা যাচ্ছে।
চাঁদের আলোয় পুড়ো যায়গা জলমল করছে। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সুন্দর একটা বেডের উপর ফুল দিয়ে ড্রকারেশন করা। সাদা পর্দা গুলো বাতাসে দুলছে। চারদিকে ফুলের গন্ধে মমো মমো করছে! শুভ্র রোদকে বেডের উপর বসিয়ে বলে উঠে
শুভ্র: কেমন লাগছে বউ?
রোদ আস্তে করে বলে…!”
রোদ: হুম সুন্দর!
শুভ্র রোদের দিকে একটু এগিয়ে ঝুঁকে বলে,

শুভ্র: আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল! বউকে নিয়ে রাতে খোলা আকাশের নিচে বা*সর করবো! আজ সেই দিনটা সত্যি হয়েছে।
রোদ বা*সরের কথা শুনতেই ভরকে যায়। ভয়ে ভয়ে শুভ্রের দিকে তাকায়!
শুভ্র রোদের চাহনি বুঝতে পেরে, বলে..!”
শুভ্র: আজকে কোনো বাহানা চলবে না বউ। আজকে আমি বা*সর করেই ছাড়বো!
রোদ ভয়ে ভয়ে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে..! ”
রোদ: অসভ্য লোক, তাহলে আপনি এই মতলবে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?
শুভ্র রোদের দিকে এগিয়ে এগিয়ে আসতো আসতে বলে,
শুভ্র: মতলব বলো, আর যাই বলো, আমি তোমাকে আজ আর ছাড়ছি না। আজকে ১৬ আনা যায়গায় ২০ আনা উসুল করবো।
রোদ ভয়ে কান্না করার উপক্রম, শুভ্রের হাব ভাব ভালো ঠেকছে না। রোদ ভয়ে সিটিয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে

রোদ: আমি বাড়ি যাবো” আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন! নানু কই তুমি? আমাকে নিয়ে যাও!
রোদ বেড থেকে উঠে চলে যেতে নিবে, এমন সময় শুভ্র খপ করে রোদের হাত চেঁপে ধরে বলে…!
শুভ্র: কোথায় যাচ্ছো সো*না? কি বলেছিলে আমার সিস্টেম সমস্যা, হারবাল খাবো আমি? আজকে তার প্রমান দিব, কার সমস্যা আর কে হারবাল খাবে।
রোদ ভয়ে কেঁদে দেয়। শুভ্রের কাছ থেকে ছোটাছুটি করতে থাকে, কিন্তু সে রকম সফল হয় না।
“শুভ্র রোদকে নিজের সাথে শক্ত করে চেঁপে ধরে ফিসফিস করে বলে।
শুভ্র: পাগলামি করিন না বউ! আমার অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে দে। প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি?
“রোদ কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারেনা।

শুভ্রের বেগতিক ছন্ন ছাড়া স্পর্শ কেঁপে ওঠে রোদ। ভয় লজ্জা সব কিছু ঝেঁকে ধরে। শুভ্রকে আটকাতে চেয়ে পারছেনা।
শুভ্র রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোলে করে বেডের কাছে নিয়ে যায়। শুভ্র রোদকে বেডে শুয়াতেই রোদ অধৈর্য হয়ে কিছু বলতে যাবে। কিন্তু শুভ্র ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। রোদ ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে! শুভ্রের প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছে’ শুভ্র রোদের দিকে এক নজর তাকায়, রোদ ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। ঠোঁট দুটো থর থর করে কাঁপছে শুভ্র রোদের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আবাসে নিজের ঠোঁট সাথে দখল করে নেয়। রোদের শরীরের কম্পন আরো বাড়তে থাকে! রোদের শরীরের কম্পন যেনো, শুভ্রকে আগো গভীর ভাবে টানতে থাকে, রোদের কাছে’ শুভ্র রোদের ঠোঁট ছেড়ে, রোদের কপালে শব্দ করে চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠে

শুভ্র: বউ আজকে ভয়ংকর কিছু করে ফেলবো, তোর সাথে একটু সহ্য করে নিস।
শুভ্র রোদের শাড়ির আচল ধরতেই রোদ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে..!”
রোদ: প্লিজ আমি আপনার স্পর্শ সহ্য করতে পারছিনা। ছেড়ে দিন আমায়?
শুভ্র: এখন থেকে সহ্য করে নাও, বউ
আজকের পর থেকে তোমার এই স্পর্শ সহ্য করতে হবে।
রোদ: আমার শরীর…..
আর কিছু বলতে পারে না। শুভ্র মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়।
রোদের ভয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। রোদ নিজের ভারসাম্য আর ঠিক রাখতে পারেনা” সেন্সলেস হয়ে যায়!

শুভ্র কিছু একটা বুঝতে পেরেই, রোদকে সাথে সাথে ছেড়ে দেয়। রোদের কাছ থেকে এক রকম ছিটকে দূরে সরে যায়।
কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর, শুভ্র নিজেকে স্বাভাবিক করে রোদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে…!
শুভ্র: শালার কপাল ছেহহ! বউয়ের শরীর খারাপের আর সময় পেলো না। আজকেই হতে হলো।
“জীবনে হয়তো বা*সর করা, আর হবে না।
শুভ্রের রোদের দিকে তাকিয়ে, দেখে রোদ সেন্সলেস হয়ে গেছে। শুভ্র পুনরায় বিড়বিড় করে বলে…!”
শুভ্র: এই ৪০০ গ্রামকে নিয়ে আর যাই হোক আমার বা*সর হবে না। সারাজীবন দেবদাস থাকতে হবে। বা*লের কপাল..!”

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৭

বউ ছোঁয়ার আগেই সেন্সলেস, বা*সর করতে গেলেই সব সমস্যা অসুস্থতা বউকে ঘিরে ধরে।
শুভ্র নিজের প্রতি বি-রক্ত রোদ, তাহলে এতোক্ষণ ধরে, এই কথা’টা বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সে শোনেনি।
‘কতো কিছু চিন্তা করে এসেছিল। বউটাকে নিয়ে, দুজন মিলে আজকে অন্য রকম এক রাত কাটাবে, কিন্তু এটা কি হলো। চোখের সামনে মিষ্টি রাখা, কিন্তু সে খেতে পারছেনা।
শুভ্র রোদের দিকে এগিয়ে গিয়ে, রোদের শাড়ি ঠিক করে, মুখের টেপ খুলে কোলে তুলে নেয়। মনের দুঃখে বউকে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। বা*সর তো আর হবে না। তাই এখানে থেকে মনের জ্বালা বাড়ানোর দরকার নাই।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here