বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৪)
shanta moni
“শুভ্র দুষ্ট হেঁসে রোদের নাক টেনে বলে…!
শুভ্র: সাত দিনের তো ব্যাপার যাব আর আসবো। একটু অপেক্ষা করো বউ!
শুভ্রের কথায় মুখ অন্য দিকে ফিরে তাকায় রোদ! শুভ্র রোদের গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বলে..!
শুভ্র: ওলে আমার ৪০০ গ্রাম বউ, রাগ করে মুখ ফুলিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।
_কথা গুলো বলেই রোদের গালে আলতো কামড় বসায় শুভ্র। রোদ টলমল চোখে শুভ্রের দিকে তাকায়, শুভ্র রোদকে ছেড়ে রোদের দুই গালে হাত দিয়ে আদুরে স্বরে বলে..!
শুভ্র: খুব আরজেন্ট কাজ বউ, এই জন্য যেতে হচ্ছে। মন খারাপ করেনা বউ। আসার সময় চকলেট নিয়ে আসবো।
“রোদ কোনো কিছু বলেনা। শুভ্র রোদকে ছেড়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে। এমন সময় পিছন ফিরে আবার তাকায়।
শুভ্রের কেনো জানি যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু অফিসের জরুরি কাজ। সে না গেলে কেউ সমাধান করতে পারবেনা। সেই জন্য মূলত যেতে হচ্ছে।
রোদ শুভ্র দিকে তাকিয়ে আছে টলমল চোখে। শুভ্র তাকাতেই মাথা নিচু করে ফেলে রোদ। শুভ্র ধীর পায়ে এগিয়ে আসে রোদের দিকে। রোদকে এমন অবস্থায় দেখে খারাপ লাগলেও। মনে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে এটা ভেবে যে। তার ছোট্ট ফুল তার জন্য ছটফট করছে। ঠিক সে যেই রকম ছটফট করে। শুভ্র রোদের কাছে এসে দাঁড়ায় রোদ মাথা নিচু করে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুভ্র রোদের মুখ ধরে নিজের দিকে তাক করিয়ে বলে…!
শুভ্র: বউ….
“রোদ ছলছল চোখে তাকায় শুভ্রের দিকে। কান্না করার জন্য মুখ ফুলে গেছে। ঠোঁট দুটো মৃদ কাঁপছে, শুভ্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। এক হাত দিয়ে রোদের কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে। রোদের দিকে এগিয়ে ফিসফিস করে বলে..!
শুভ্র:- “বউ তুমি যদি না যেতে দাও, তো যাবো না।
“রোদ খুঁশি হয়ে শুভ্রের চদেয় দিকে তাকায়। শুভ্র দুষ্ট হেঁসে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে..!
শুভ্র:- তবে আমার একটা শর্ত আছে।
“রোদের হাঁসি মুখ’টা চুপসে যায়। শুভ্র রোদের গাল টেনে বলে..!
শুভ্র: এই সাত দিন, হানিমুন চলবে রুমে। আর হ্যা রুম থেকে এক সেকেন্ড জন্য বেড় হতে পারবে না।
-রোদ রাগী চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে, নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে..!
রোদ:- অসভ্য লোক! ছাড়ুন আমাকে!
সব সময় আজে বাজে চিন্তা নিয়ে ঘুরেন ছিহহহ!
_শুভ্র রোদের কোমর আরো শক্ত করে ধরে, দুষ্ট হেঁসে বলে…!
শুভ্র: এমন বউ থাকলে, আজে বাজে চিন্তা না বউ। সব সময় হালাল চিন্তা আসে।
রোদ বিড়বিড় করে বলে…!
রোদ:- অসভ্য লোক, এই অসভ্য লোকটাকে যাওয়ার জন্য বারন করেছিলাম ছিহহহ! যে সব সময় আজে বাজে চিন্তা নিয়ে ঘুরে।
রোদ ছোটাছুটি করছে, আর বলছে..!
রোদ: আপনি যেখানে যাচ্ছিলেন সেইখানে যান প্লিজ। আমাকে ছেড়ে দিন।
“শুভ্র বাঁকা হেঁসে বলে…!
শুভ্র:- না বউ, আমি কোথাও যাবো না।
আজকে পাসা খেলবো।
রোদ: অসভ্য লোক ছাড়ুন আপনি। আর এইখান থেকে যান।
শুভ্র শব্দ করে হাসে। এক টানে রোদের মুখ, নিজের মুখ বারবর এনে। এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে। রোদের দিকে। রোদও শান্ত হয়ে যায়। শুভ্র কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে। শব্দ করে চুমু খায় রোদের কপালে। তারপর বলে…!
শুভ্র: সাবধানে থেকো। আর হ্যা ফোন নিজের সাথে সাথে রেখো। আমি কল দেওয়ার সাথে সাথে যেনো রিসিভ হয়।
শুভ্র কথা গুলো শেষ করে। রোদকে ছেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। এইবার আর পিছন ফিরে তাকায় না। এইবার যদি পিছন ফিরে তাকায় তাহলে হয়তো। বউ ছেড়ে আর যেতেই পারবে না।
দুইদিন পর
_“আজ দুইদিন হলো শুভ্র কানাডা আছে। দুইদিনে রোদের সাথে কোনো কথা হয়নি। রোদ কেমন হাসফাস করছে। কতোবার যে ফোন চেক করছে। তার হিসেব নেই। এইদিকে শুভ্র বিদেশে আসার পর থেকেই এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যে খাওয়া দাওয়া সময় টুকু পাচ্ছে না। বিকার ৪:০০ টা কি ৪:৩০ হবে। দুপুরে জামা কাপড় ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিয়ে ছিল রোদ। সেই গুলো আনতে যাচ্ছে ছাদে। মন মরা হয়ে ছাদে উঠে রোদ। জামা কাপড় গুছিয়ে নিজের সাথে নিয়ে নামতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কেউ রোদ বলে ডেকে উঠে..!
“রোদ সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়।
_সামনে অয়নকে দেখে প্রথমে ভরকে গেলেও। পর মূহর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে। ছাদ থেকে নেমে যেতে নেয়। এমন সময় অয়ন দ্রুত পায়ে হেঁটে রোদের সামনে পথ আগলে দাঁড়ায়। রোদ আমতা আমতা করে বলে…!
রোদ:- কি করছেন ভাইয়া পথ ছাড়ুন..!
অয়নের চেহারা কেমন ফেকাসে চোখ দুটো অসম্ভব লাল। অয়ন বলে…!
অয়ন: যদি না ছাড়ি..!
“রোদ রাগী চোখে তাকায় অয়নের দিকে,
অয়নের দৃষ্টি করুন। রোদ সরে গিয়ে অন্য দিক দিয়ে যেতে নেয়। এমন সময় অয়ন রোদের হাত টেনে ধরে বলে..!
অয়ন: তুমি আমার হয়ে যাওনা রোদ প্লিজ!
“রোদের সহ্যের সীমা পাড় হয়ে যায়। অয়নের ধরা হাত ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়িয়ে ঠাসসসস করে থাপ্পড় মারে অয়নের গালে তাঁরপর বলে..!
রোদ:-“যে সতিত্ব আমি আমার স্বামীকে দিয়েছি। সেটা আমি অন্য পুরুষকে কখনোই দিতে পারবো না। আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। আমার সব কিছু আমার স্বামী।
“অয়ন রোদের কথায় তাচ্ছিল্য হাঁসে তারপর বলে…!
অয়ন: কোন স্বামীর কথা বলছো। যে তোমাকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয়নি।
“রোদ মুচকি হেঁসে অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে…!
রোদ:-“আমার স্বামীর দেওয়া কষ্টও আমার কাছে সুখ মনে হয়।
_আর এটা হচ্ছে ভালোবাসা। এই সব আপনি বুঝবেন না।
অয়ন: রোদ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
রোদ ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে..!
রোদ: নিম্নতম লজ্জা থাকলে এই কথা বলতে না। সত্যি যদি আমাকে আপনি ভালোবাসতেন, তাহলে আপনি চাইতেন আমি যেখানে সুখি সেইখানে থাকতে।
রোদ একটু থেমে আবার বলে…!
রোদ:- নিজের ভালোবাসার মানুষের সুখের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করাকেও ভালোবাসা বলে..!
“আর আপনি কিনা, আমাকে জোর করে নিজের ভালোবাসা চাচ্ছেন। এটাকে কখনোই ভালোবাসা বলে না। আর এই ভাবে কখনো কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পাবেন না আপনি।
“রোদ তপ্ত নিশ্বাস ফেলে পুনরায় আবার বলে উঠে…!
রোদ: আপনাকে আমি আমার ভাইয়ের চোখে দেখছি সব সময়। আর আপনি কিনা ছিহহ। আপনার মতো নিকৃষ্ট মানুষকে ঘৃনা করা যায়। কখনো ভালোবাসা যায় না।
রোদ কথা গুলো বলে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না। দ্রুত পায়ে নেমে আসে ছাদ থেকে।
_অয়ন পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে আছে। রোদ যেতেই ঠাসসস করে বসে পরে নিচে। আকাশের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট স্বরে বলে উঠে…!
অয়ন: হে আল্লাহ আমায় সে ঘৃণা করে। তাহলে তার জন্য এতো ভালোবাসা কেনো দিলে আমার হৃদয়ে। এই যন্ত্রনা আমি আর সইতে পারছি না মাবুদ।
অয়ন ছাদ থেকে নেমে এসে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে শব্দ করে দরজা লাগায়। অয়নকে দরজা লাগাতে দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠে জুঁই। কিছুক্ষণ আগেই চুপিচুপি লুকিয়ে অয়নের রুমে এসেছিল। অয়নকে রুমে না দেখে। রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল জুঁই। এমন সময় অয়নকে দরজা লাগাতে দেখে ভয়ে জরসড় হয়ে এক কোনে দাঁড়ায়। অয়ন রুমে ডুকে ওয়াশরুম যাওয়া দেয়। তখনি মনে হয় রুমে কেউ আছে। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে জুঁই। রাগে কপাল কুচকে ফেলে।
অয়ন জুঁইয়ের সামনে এসে ধমক দিয়ে বলে…!
অয়ন: এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যা…? এখানে কি তোমার?
“অয়নের ধমকে জুঁই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়। জুঁইয়ের কান্না দেখে অয়নের মেজাজ চটে যায়। অয়ন জুইয়ের দুই বাহু চেঁপে ধরে দেয়ালের সাথে চোখ লাল করে তাকায় জুঁইয়ের দিকে, জুঁইয়ের কান্না থেমে যায়। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে।
_অয়ন তাকিয়ে আছে জুঁইয়ের দিকে..!
অয়ন কিছু দিন যাবত দেখছে, জুঁই তার পিছনে পড়ে আছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অয়নকে দেখা। চুপিচুপি অয়নের রুমের আসে পাশে ঘুর ঘুর করা। অয়নকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা। সব কিছু খেয়াল করছে অয়ন। অয়ন বয়স এতোটা কম টা যে বুঝবে না। এই সবের মানে কি! অয়ন জুঁইকে শক্ত করে চেঁপে ধরে। জুঁই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে। অয়ন রাগী কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে…!
অয়ন: এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? আমার পিছনে ঘুর ঘুর কেনো করছো?
জুই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।
“জুঁইকে চুপ করে থাকতে দেখে অয়ন আবার ধমক দিয়ে বলে…!
অয়ন: এই মেয়ে কথা বলছো না কেনো?
_“জুঁই ভয়ে কেঁপে উঠে, কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে…!
জুঁই:- “ভালোবাসি…!
অয়ন:- হোয়াট…?
জুঁই চোখ খুলে অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে..!
জুঁই: ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি,
_অয়নের হাত আগলা হয়ে আসে। জুঁই চোখ ছোট ছোট করে তাকায় অয়নের দিকে। অয়ন জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে..!
অয়ন: এই মেয়ে থাপ্পড় দিয়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দিব। বিয়াদব মেয়ে, যাও এখান থেকে..!
“জুঁই অয়নের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠে..!
জুঁই:- “এই মিয়া আপনি কাকে বিয়াদব বলছেন হ্যা। ভালোবাসা চাইছি আপনার বাপের সম্মতি চাইনি।
_অয়ন রাগী চোখে তাকায় জুঁইয়ের দিকে তাঁরপর বলে..!
অয়ন: বিয়াদব মেয়ে মুখে মুখে তর্ক করছো আবার হ্যা। এই টুকু মেয়ে আসছে ভালোবাসা নিয়ে।
_জুঁই অয়নের দিকে এগিয়ে এসে বলে..!
জুঁই: ভালোবাসা নিয়ে আসবো না৷ তো কি নিয়ে আসবো বেগুন হ্যা..!
অয়ন: এই মেয়ে তোমাকে তো আমি…!
“অয়ন আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই জুঁই অয়নের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে..!
জুঁই: ভালোবাসি, জানি আপনি এই টাই বলবেন।
“অয়ন জুঁইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে..!
অয়ন: এই মেয়ে ছাড়ো আমাকে! ছাড়ো বলছি!
“জুঁই অয়নের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে…!
জুঁই:- “না গো একবার যখন ধরেছি, আর ছাড়ছি না তোমায়!
অয়ন: এই মেয়ে এই রকম পাগলামি করছো কেনো? ছাড়ো আমাকে!
জুঁই অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে পা উঁচু করে, গালে টুপ করে চুমু খেয়ে। অয়নকে ছেড়ে দৌঁড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অয়ন গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জুঁইয়ের যাওয়ার দিকে।
অয়ন বিড়বিড় করে বলে…!
অয়ন : এক কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম হ্যা। এই মেয়ের সাথে দুই মিনিট থাকলে। নিরগাত পাগল হয়ে যাবো।
রাত: ১২:৪০
_অন্ধকার রুমে বসে আছে রোমান। হাতে এক জলন্ত সিগারেট, চুল গুলো এলোমেলো, গায়ে পড়া আধখোলা শার্ট।
আজ অনেক দিন হয়ে গেছে রুহি রোমানের দেখা নেই। রোমান অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু রুহিকে দেখতে পযন্ত পাইনি রোমান। আর রুহি এইদিকে নিজেকে সারা দিন ঘর বন্দি করে রাখছে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছে না। চোখ মুখ ফেকাসে হয়ে গেছে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। আগের সেই চঞ্চল রুহি আর নেই। অনেক টাই চুপচাপ হয়ে গেছে।
রাত ১:০০ টা,
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে রোদ। কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না রোদের। হটাৎ ফোনের শব্দ বিছানা থেকে উঠে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন হাতে নেয়। ফোনে স্কিনে শুভ্রের নামটা ভাসছে, শুভ্রের কল দেখে রোদের চোখের কোনে পানি টলমল করছে।
_ফোন বাজতে বাজতে কেঁটে যায়। ফোন কেটে যেতেই রোদের মন খারাপ হয়ে যায়। মিনিট খানিক যেতেই আবার ফোন বেজে উঠে। রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে। কানে ধরে।
শুভ্র ক্লান্তি স্বরে বলে উঠে…!
শুভ্র: বউ
“শুভ্রের কন্ঠ স্বর পেয়ে রোদ কেঁপে ওঠে..! রোদের সারা শব্দ না পেয়ে শুভ্র আবার বলে উঠে…!
শুভ্র: ফুল ঘুমিয়ে গেছো!
রোদ শুভ্রের কথায় ফুপিয়ে উঠে..!
রোদকে কাঁদতে দেখে, শুভ্র বিচিলিত হয়ে বলে উঠে..!
শুভ্র: জান কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো পাখি? কি হয়েছে তোমার জান?
“রোদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে, শুভ্র ব্যস্ত হয়ে বলতে থাকে।
শুভ্র: কি হয়েছে পাখি। কাঁদছো কেনো? এইতো আমি! প্লিজ লক্ষি বউ আমার কাঁদে না।
“রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলে…!
রোদ: কিচ্ছু হইনি আমার!
শুভ্র: মিস করছো আমাকে..!
“রোদের কান্না থেমে যায়। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে বলে…!
রোদ: নাহ আমি কেনো মিস করবো।
শুভ্র মৃদ হেঁসে বলে উঠে..!
শুভ্র: তাহলে কাঁদসিলে কেনো হু?
রোদ আমতা আমতা করে বলে…!
রোদ: এমনি…..!
শুভ্র: তাই নাকি….!
রোদ: হুম…!
কিছুক্ষণ দুইজনে চুপ করে থাকে। রোদও কিছু বলছে না। শুভ্রও চুপ করে আছে।
জোরে শ্বাস ফেলে শুভ্র বলে উঠে..!
শুভ্র: ভয়ংকর প্রেম পাচ্ছে বউ..!
রোদের সর্ব অঙ্গ কেঁপে ওঠে, শুভ্র ফোনের অপর পাশ থেকে নেশালো কন্ঠে বলে উঠে…!
শুভ্র: ভয়ংকর কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে বউ। খুব বেশি ভিটামিন অভাব হচ্ছে বউ।
রোদ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে…!
রোদ: কি,,, কি সব বলছেন আপনি?
শুভ্র: ভয়ংকর প্রেম প্রেম পাচ্ছে বউ। কাছে আসো বউ!
“শুভ্রের কথায় রোদের কান দিয়ে গরম দোয়া বেড় হচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনো কথায় বলতে পারছে না। শুভ্র আবার বলে উঠে…!
শুভ্র: বউ কই তুমি,কাছে আসো বউ!
“রোদ আর কোনো কিছু শুনতে পারেনা। ফোন কেটে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
মুখে বালিশ চেঁপে। এই দিকে শুভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে মৃদ হাঁসে।
রোদ লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। মনে হচ্ছে শুভ্র তার সামনে আছে। শুভ্রের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় রোদ!
”সাতদিন হয়ে গেছে শুভ্র বাংলাদেশে নেই। কালকে রাতে শুভ্রের সাথে কথা হয়েছে। আজকে সকাল ১০ টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরবে। রোদও অনেক খুশি। সকাল থেকে মুখে হাঁসি লেগেই আছে।
ড্রয়িং রুম পেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিল রোদ। সময় টা ঠিক ১২ টার কাছাকাছি৷ হটাৎ রোদের পা থেমে যায়। টিভিতে একজন মহিলা নিউজ পড়ছে।
“বাংলাদেশ টাইম সকাল ১০ টা কানাডা থেকে যে ফ্লাইটি বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সেই বিমানটি মাঝ পথেই ব্ল্যাস্ট হয়। আর গোপন সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান শুভ্র চৌধুরীও সেই ফ্লাইটে ছিল। এখন পযন্ত কারো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রোদ চিৎকার করে ফ্লোরে বসে পড়ে…!
“রোদের চিৎকারে ড্রয়িং রুমে এসে পড়ে। হেনা বেগম রোদের কাছে এগিয়ে এসে বিচলিত হয়ে বলে উঠে…!
হেনা বেগম: কি হয়েছে রোদ?
রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে টিভির দিকে ইশারা করে রোদ। হেনা বেগম টিভির দিকে তাকাতেই দেখে। সব টিভি চ্যানেলে শুভ্রের ছবি দেখাচ্ছে। হেনা বেগম ফ্লোরে বসে পড়ে। সবাই অবাক, রোদ পাথরের ন্যায় বসে আছে। রোদের মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছেন। বাড়ির সবাই বিচলিত। শুভ্রের ফোনে কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। সব টিভি চ্যানেলে টপ নিউজ শুভ্র চৌধুরী প্লেন দুঃঘটনায় মারা গিয়েছে। এক মূহুর্তেই যেনো অন্ধকার নেমে এসেছে চৌধুরী বাড়িতে। রোদ ফ্লোরে বসে আছে। হেনা বেগম সেন্সলেস হয়ে গেছে। রোদ উঠে গিয়ে টিভির সামনে গিয়ে, টিভি ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। বির্কট শব্দ টিভিটি ফ্লোরে পড়ে ভেঙে যায়। রোদ চিৎকার করে বলে উঠে…
রোদ: এই সব কিছু মিথ্যে আমার শুভ্র ভাইয়ের কিচ্ছু হয়নি। এই এই সব কিছু মিথ্যা সব মিথ্যা।
_রোদের কাছে এগিয়ে আসে নীলা। রোদকে জাপটে ধরে বলে…!
নীলা: প্লিজ শান্ত হ, রোদ। কিছু হয়নি ভাইয়ার প্লিজ শান্ত হ প্লিজ।
রোদ নীলাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে। নীলাকে জড়িয়ে ধরে বলে…!
রোদ: আমার শুভ্র ভাইয়ের কিচ্ছু হয়নি। কিছু হতে পারেনা।
নীলা: নাহ কিছু হয়নি ভাইয়ার তুই শান্ত হ প্লিজ।
রোদ: শুভ্র ভাই কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। কি নিয়ে বাঁচবো আমি নিলু।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৩)
কথা গুলো বলতে বলতে সেন্সলেস হয়ে যায় রোদ…!
রাত ১২ টা কি সাড়ে ১২টা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় রোদ। চোখের সামনে শুভ্রকে দেখে। উঠে বসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে…!
“কাঁদতে কাঁদতে বলে…!
রোদ: আপনি কোথায় গিয়েছিলেন।
প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না শুভ্র ভাই। সত্যি বাঁচবো না।
