বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৭

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৭
shanta moni

বাড়ির সব মেহমান কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। রোদ ভয়ে কাঁপছে টলমল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে।
শুভ্র: থার্ট ক্লাস একটা মেয়ে। আমি যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি।
বলেই রাগে ধপ ধপ পা ফেলে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আজকে রোদ অনেকটা কষ্ট পেয়েছে। ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে। আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো। তাহলে কবেই নিজেকে শেষ করে দিত। আশে পাশের মানুষ কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। রোদের বুক ফেটে কান্না আসে। দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে বেডের উপরে শুয়ে কাঁদতে থাকে। তাঁরপর বলে।

রোদ: আচ্ছা আমি এতটাই অপছন্দের যে সবার সামনে অপমান করতে একবার ও ভাবলেন না। শুভ্র ভাই।
এইদিকে…🍁🍁
নিলা রোদকে খুঁজে। খুঁজতে খুঁজতে হটাৎ একটা রুমের কাছে এসে দাঁড়ায় রুমের দরজা হালকা
চাপানো।ভিতরে ঢুকে আসে পাশে তাকায়।
নিলয় গায়ে সন্ধ্যায় জুস ফেলে দৌড় দেয়। সেই বাচ্চাটি। নিলয় আজ গোসল করতে করতে জীবন শেষ। পুড়ো শরীর কেমন শ্যাট শ্যাটে হয়ে আছে।
তাই এই রাতের বেলা গোসল করে। কোমরে তোয়ালে পেচিয়ে বের হচ্ছিল নিলয়। রুমে এসে তোয়ালে খুলে আবার পেচাতে যাবে। এমন সময় সামনে থেকে জোরে চিৎকার করে কেউ। সামনে নিলাকে দেখে হাত থেকে তোয়ালে নিচে পড়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর নিলা অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে যায়। নিলয় নিলাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে। দৌড়ে নিলার কাছে যায়৷ একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুম যায়। চেঞ্জ করে এসে নিলার মুখে পানির ছিটে দেয়। পিট পিট করে চোখ খুলে নিলা। সামনে নিলয় দেখে নাহহহ বলে জোরে চিৎকার দিয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।
নিলয় কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তারপর বলে

নিলয় : হে আল্লাহ তুমি আমার কপালে কোন শনির দশা লাগিয়ে দিছো। আমার মানসম্মান আর থাকলো না। এই মেয়ের সামনেই কেনো আমার ইজ্জতের ফালুদা করতে হলো।
নিলয় আবার নিলার মুখে পানি দেয়। নিলা চোখ খুলে নিজের দিকে নিলয়কে ঝুকে থাকতে দেখে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আর রাগি চোখে তাকিয়ে বলে।
নিলা: অসভ্য লোক৷ আগে আপনাকে জানতাম আপনি হাদারাম। এখন’ তো দেখছি আস্ত একটা লুচু ছিহ।
নিলয় : এই মেয়ে নিজে আমার সতিত্ব হরন করে। আবার আমাকেই লুচু বলতে আছো হ্যা। তুমি পুরুষ নির্যাতন করছো। আমি তোমার নামে মামলা দিব। তোমার জন্য আমার কারো সাথে বিয়ে হবে না।
নিলা রেগে বলে।

নিলা: আপনার মতো অসভ্য লোক। আমি একটাও দেখিনি। ইচ্ছে করতে আছে। পচা ডোবায় চুবিয়ে মারতে। অসভ্য লোক। বলেই রাগে গজ গজ করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আসলে নিলা রোদকে খুঁজে। শুভ্র রোদকে থাপ্পর মারছে। সেটা সে পড়ে শুনছে শুনেই রোদের রুমে ছুটে আসে। কিন্তু সেখানে পায় না। তারপর ছাদে গিয়ে দেখে।সেখানে না পেয়ে বাড়ির সব রুমে খুঁজতে থাকে। তখনি হটাৎ নিলয় রুমে ডুকে যায়। কিন্তু সে যানতো না যে ওই টা নিলয়ের রুম তাহলে জীবনেও ওই গাঁধার রুমে যেতো না।
নিলা আবার রোদের রুমের দিকে হাঁটা দেয়। রুমে গিয়ে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফুলে উঠছে। কিছুক্ষণ পর পর ঘুমের মধ্যে ঠোঁট কেঁপে উঠছে। এক’ মনে নিলা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে।
নিলা: আচ্ছা এতো মায়া ভরা একটা মেয়েকে কিভাবে আঘাত করে। এই বাড়ির লোক গুলো। একটুও কি মায়া লাগে না। নিলা কথা গুলো বলে রোদের পাশে রোদকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।

নিলা জড়িয়ে ধরতেই রোদ নিলাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে।
রোদ: নিলা আমার এই যন্ত্রনা আর সহ্য হয়না। ইচ্ছে করে নিজে শেষ করে দিতে। বাঁচতে ইচ্ছে করেনা আমার নিলা।
রোদের কান্না দেখে নিলার চোখে পানি এসে পড়ে। রোদের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে।
নিলা : দেখবি একদিন সব ঠিক হয়ে গেছে। আর চুপচাপ অন্যায় মেনে নিস না রোদ। তুই যত ভেঙে পড়বি। কষ্ট পাবি। মানুষ তোকে আরো কষ্ট দিবে। আঘাত করবে। তাই প্রতিবাদ কর। অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করিস না।
রোদ কান্না করতে করতে বলে।

রোদ: কার সাথে প্রতিবাদ করবো। যে হাত আমাকে ধরে রাখার কথা ছিল। যেই বুকে আমাকে আগলে রাখার কথা ছিল। যার সাথে আমার সারাজীবন কাটানোর কথা ছিলো। তার সাথে প্রতিবাদ করবো।
নিলা আর কিছু বলে না চুপচাপ রোদকে জড়িয়ে ধরর শুয়ে থাকে।
সকাল ৮:০০
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে রোদ।
ফজরের নামাজ পড়ে। রুমে বসে আছে।
আজকে নীরার গায়ে হলুদ।
রোদ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সামনে হাসি বেগম কে দেখে থেমে যায়। হাসি বেগম রাগান্বিত হয়ে বলে।
হাসি বেগম : নবাব জাদি ঘুম ভেঙেছে আপনার। তাহলে বাড়ির কাজ গুলো করুন।
রোদ মাথা নিচু করে। রান্না ঘরে চলে যায়।

এইদিকে..
শুভ্র রুমে ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে রিয়া রুমে ঢুকে। শুভ্রের পাশে শুয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
হটাৎ শুভ্রের ঘুম ভেঙে যায়। সামনে রিয়াকে দেখে রাগে চোয়াল শক্ত করে ধাক্কা দেয়। রিয়া ধাক্কার তাল সামলাতে না পেড়ে নিচে ফ্লোরে পড়ে যায়।
বেড থেকে উঠে রিয়ার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে রাগে রি রি করতে বলে।
শুভ্র: তোমার মতো গায়ে পড়া মেয়েদের এই শুভ্র চৌধুরী এক সেকেন্ড সহ্য করবে না।
কালকে বাসায় মেহমান ছিলো তাই কিছু বলিনি। কিন্তু আজ দেখছি সাহস আরো দ্বিগুন বেড়ে গেছে৷
রিয়া দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে।

রিয়া: শুভ্র আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমি এই ভাবে আমাকে বলতে পারো না।
শুভ্র আরো রেগে যায়। রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে। এমন সময় রিয়া এসে জড়িয়ে ধরে।
রাগে যেনো শুভ্রের শরীর কাঁপছে রিয়ার হাত ধরে টেনে সামনে এনে ঠাসসসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে।
শুভ্র: তোর মতো সস্তা মেয়ের প্রতি এই শুভ্র চৌধুরী কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আর এই শুভ্র চৌধুরী সস্তা জিনিসের প্রতি ছুটে না। দূড়ে থাক আমার থেকে। তা না হলে মুখে একটা দাঁত মুখে থাকবে না। হাতে এনে দেব। বলেই ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রিয়ার গাল যেনো অবশ হয়ে আছে। গালে হাত দিয়ে বলে। তোমাকে আমার চাই শুভ্র যে কোনো মূল্যে। এতোদিন এর সাজানো খেলা তো আমি শেষ করে দিতে পারি না। বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বাড়ির ছাদে নীরার গায়ে হলুদ উপলক্ষে পুড়ো ছাদ সুন্দর করে সাজিয়েছে। শুভ্র আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে৷ কারন হেনা বেগম তাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে। কারন বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে সেই উপলক্ষে ভাইদের সাথে থাকা দরকার। এই বাড়িতে হেনা বেগম ছাড়া কারো কথায় শুনে না শুভ্র।

বিকাল ৫:০০ টা
নীরাকে পর্লারের লোক সাজাতে আসছে। বাড়ির মেয়েরাও সাজে। অহনা রোদকে বসিয়ে রেখেছে। তার কারন হলো রোদকেও তাদের সাথে সাজতে হবে। সবাইকে সাজাতে সাজাতে রাত ৮:০০ টা বেজে যায়।
বাসন্তী রঙের ভিতরে সোনালি পাইর দেওয়া রঙের শাড়ি পড়িয়ে রোদকে সাজিয়ে দেয়। পার্লারের মেয়েরা রোদকে সাজিয়ে বলে।
আপনার উপর যেনো। কারো নজর না লাগে ম্যাম খুব সুন্দর আপনি। রোদ মুচকি হাঁসে।
ছাদে স্টেজ সুন্দর করে। সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে নীরাকে। চারপাশে অনেক লোক রোদ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন রোদের পাশে আসে। আস্তে করে রোদকে ডাকে। রোদ পিছন ফিরে তাকায়
অয়ন বলে : খুব সুন্দর লাগছে রোদ তোমাকে। ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ এইভাবে তাকিয়ে দেখি।
চাঁদও তোমার সৌন্দর্য দেখে হিংসা করবে রোদ
রোদ লজ্জা পেয়ে মুচকি হাঁসে। আর অয়ন এটা ওটা বলে রোদকে হাঁসাচ্ছে। আর রোদের দিকে অপলোক ভাবে তাকিয়ে আছে।

ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদে আসছিলো শুভ্র। হটাৎ অয়নের সাথে রোদকে এই ভাবে হাসতে দেখে যেনো পুড়ো শরীর রাগে কেঁপে উঠে।
শুভ্র ভেবে পায় না। এই মেয়ে তার সামনে আসলে ভয়ে কাঁপে মুখ দিয়ে কথা বের হয়না। কিন্তু এখন কি রকম অয়নের সাথে হাঁসছে লজ্জা পাচ্ছে।
শুভ্র আবার বলে উঠে
নো নো নো শুভ্র এই মেয়ে জাহান্নামে যাক। তাতে তোর কি। যার সাথে ইচ্ছে কথা বলুক। হাসুক তাতে তোর কিচ্ছু না। কিন্তু সে মুখে কথা গুলো বল্লেও মনে মনে রাগে তার শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
শুভ্র রাগে নিচে চলে যায়৷ আর একটু সময় এখানে থাকলে। এই মেয়েকে সে আবার ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারবে।
রোদ মিস্টি প্লেট আনতে ছাদ থেকে নিচে যাচ্ছিলো রোদ। হটাৎ রোদ এর হাত টেনে কেউ অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়৷ ভয়ে কেঁপে ওঠে রোদ। শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে অন্ধকারে সেই ব্যক্তি।
রোদ চিৎকার করে ভয়ে ভয়ে বলে।

রোদ: কে কে আ পনি
রোদ ভয়ে থর থর করে কাঁপছে৷ শরীর ঘেমে যাচ্ছে।
হটাৎ নিজের পেটে কারো স্পর্শ পেতে। যেনো পুড়ো শরীর শিউরে ওঠে৷ রোদ ভয়ে কেঁদে উঠে।
অন্ধকারে ব্যক্তি রোদকে নিজের সাথে চেপে ধরে।
গলায় জোরে কামড় বসায়। রোদ জোড়ে আহহ বলে চিৎকার করে উঠে৷

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৬

চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। হটাৎ হাতে কিছু একটা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে অন্ধকার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রোদ ধাক্কার তাল সামলাতে না পেড়ে নিচে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরিয়ে আসে। গলায় কামড়ের যায়গায় ভিষন জ্বালা করছে। হাতে কাগজের দিকে চোখ পড়তেই। কাগজ খুলে কাগজের লেখা গুলো দেখে চমকে যায় রোদ?

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here