বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৮
shanta moni
রোদের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা হাতে নিয়ে আবার দেখে।
রোদ কিছুই বলছে না। যেনো পাথরের নেয়। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। হেনা বেগম যাচ্ছিল। ছাদে রোদকে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধাক্কা দিয়ে বলে।
হেনা বেগম : এই রোদ এখানে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছিস, কেনো কিছু কি হইছে?
রোদ আস্তে করে বলে।
রোদ: নানু কিছু হয়নি।আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে। আমি রুমে যাই। তোমরা ওই দিকটা একটু দেখো।
হেনা বেগম বিচিলিত হয়ে বলেন?
হেনা বেগম : কি হয়েছে রোদ? বেশি শরীর খারাপ লাগছে তোর ডাক্তার ডাকবো।
রোদ শান্ত কন্ঠে বলে?
রোদ: নানু তেমন কিছুই হয়নি। একটু খারাপ লাগছে। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
হেনা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
হেনা বেগম : আচ্ছা ঠিক আছে। তুই যা গিয়ে রেস্ট নে৷
বলেই হেনা বেগম উপরে ছাদে চলে যায়৷ আর রোদ নিজের রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ ঝরনা ছেড়ে দেয়।গায়ে পানি পড়তে থাকে। নিজের হাত দিয়ে গলায় কামড়ের দাগে ঘসতে থাকে। আর ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে রোদ ঝরনার নিচে বসে পড়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এইদিকে ছাদে
নিলয় নিলাকে দেখলেই মুখ লুকাচ্ছে। আর নিলা হেসে ঘুটি ঘুটি হচ্ছে। নিলয় মনে মনে বলে_
নিলয়: বালের কপাল জীবনে কোনো মেয়ের কাছ থেকে এই ভাবে পালিয়ে বেড়াতে হবে। জীবনে ভাবেনি। আজ তার মানসম্মান সব প্লাস্টিক।
নিলা নিলয়কে দেখলেই দাঁত কেলিয়ে হাঁসছে। আর নিলয় লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছে না।
অহনা হেনা বেগম কে জিজ্ঞেস করে রোদের কথা হেনা বেগম বলে রোদের শরীর ভালো না। তাই সে রুমে রেস্ট নিচ্ছে। অয়ন সে কথা শুনে আর ভাবতে থাকে। রোদকে তো কিছুক্ষণ আগেই দেখলাম ঠিকঠাক তো ছিলো হটাৎ কি হলো।
সারারাত রোদ রুম থেকে বের হয়নি। অস্থিরতা তাকে সব দিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে!
রাতে শুভ্র বাসায় ছিলো না। শেষ রাতের দিকে বাসায় আসছে। কোথায় ছিলো কারোই যানা নেই।
আজকে নীরার বিয়ে। পুড়ো বাড়ি রাজকীয় ভাবে সাজানো হয়েছে। নীরা বউ সেজে স্টেজ বসে আছে। পাশে তার হাসবেন্ড নিরব একজন ডক্টর।
দেখতে মাশাল্লাহ দুইজনকে খুব সুন্দর লাগছে।
কবুল বলে বিয়ে সম্পুর্ন হয়। খাওয়া দাওয়া করে আসে বিদায়ের পালা। এই সময় টা প্রতিটা মেয়ের জন্যই কষ্টকর। নীরা অনেকটা কান্না করে সবাইকে জড়িয়ে ধরে। রোদের মাথায় হাত দিয়ে বলে। সাবধানে থাকিস বনু। রোদও অনেক কাঁদে এই বাড়ির মানুষ যতই খারাপ ব্যবহার করুক না কেনো নীরা তাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসছে। নীরাকে বিদায় দিয়ে সবাই বাড়ির ভিতরে চলে আসে। রোদের কাঁদতে কাঁদতে চোঁখ মুখ ফুলে আছে। রোদের দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে অয়ন। শুভ্রের আগের রাগটা যেনো ধব ধব করে আরো কয়েক গুন বেড়ে যায়। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
শুভ্র রাগে চোয়ার শক্ত করে আছে। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে ঠাঁটিয়ে চর মারতে। বাড়ির মেহমানরা অনেকেই চলে গেছে। অল্প কয়েক জন আছে হয়তো।
রোদ কিচেন থেকে সবার জন্য পানি আনে। হেনা বেগম কে পানি দিতে গিয়ে সেটা শুভ্রের গায়ে পড়ে যায়। শুভ্র হেনা বেগমের পাশেই বসে ছিলো। শুভ্র যেনো সুযোগ খুঁজছিলো এই মেয়েকে শায়েস্তা করার। আর সেটা পেয়েও গেলো।
রাগে চোয়াল শক্ত করে। উঠে দাঁড়িয়ে পর পর ঠাসসস ঠাসসস দুটো থাপ্পর মারে। আরাফ চৌধুরী সেখানে ছিলো। হেনা বেগম দাঁড়িয়ে যান। কারন সে ভাবেনি সামান্য একটু পানি পড়েছে গায়ে তার জন্য শুভ্র রোদকে এই ভাবে থাপ্পড় দিবে। আরাফ চৌধুরী রাগে চোয়াল শক্ত করে শুভ্রকে বলে।
আরাফ: শুভ্র সামান্য একটু পানি পড়েছে তার জন্য রোদকে তুমি এই ভাবে মারবে। এইটা আমাদের বাড়ির শিক্ষা হ্যা? দিন দিন তুমি কিন্তু বেশি বিগড়ে যাচ্ছো।
শুভ্র রাগে দাঁত কটমট করে বলে’
শুভ্র : ওর সাথে এই রকম করা উচিত। ওর মতো একটা খু
বলতে যাবে এমন সময় আরাফ চৌধুরী শুভ্র গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে। শুভ্রের চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। আরাফ চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে বলেন।
আরাফ: ব্যাস অনেক হয়েছে। আর না অনেক বলেছো তুমি। ভুলে যেও না রোদ আর তোমার সম্পর্ক
শুভ্র রাগে চিৎকার করে বলে। এই মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর কোনো জন্মে ছিলো না।
আরাফ চৌধুরী রাগি গলায় বলে।
আরাফ: আজ কে তুমি যেই কথা গুলো বলছো। এমন একদিন আসবে যেদিন তুমি এই সব কথা আর কাজের জন্য নিজেকে মাফ করতে পারবে না। মনে রেখো
শুভ্র রাগে সোফায় লাথি মেরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
রোদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফ চৌধুরী রোদের কাছে এসে বলে হেনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে.
আরাফ: অনেক হয়েছে মা। আর যাই হোক রোদকে আর আমি কষ্ট সহ্য করতে দিব না। তোমার কথা শুনে এতোদিন চুপ ছিলাম কিন্তু আজকে আর না। অনেক হইছে এখন আমি যে সিদ্ধান্ত নিব৷ সেইটা হবে ব্যাস।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
অয়নের যেনো বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। কেমন যেনো অস্থির লাগছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
আর এই দিকে রিয়া সয়তানি হাসে। কারন তার প্লান মতোই কাজ হচ্ছে।
রাত ১২:৩০
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কেনো যানি তার বাঁচতে ইচ্ছে করে না আর। রোদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।
রোদ: আচ্ছা এতো মানুষ মরে যায়। তুমি কি আমাকে চোখে দেখো না আল্লাহ। আমি যে আর এই যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে। এমন সময় পিছন থেকে কেউ হাত রাখে। রোদের কাঁধে রোদ পিছন ফিরে তাকায় দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে অয়ন কে জড়িয়ে ধরে।
কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে।
রোদ: অয়ন ভাই আমি আর এই যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ আমাকে আপনি মেরে ফেলুন। তাহলে আর কারো জীবনে জামেলা হয়ে বাঁচতে হবে না।
অয়নের বুকটা যেনো ধক করে উঠে। রোদের কান্নার শব্দ যেনো তার বুকে তীরে মতো আঘাত করছে,, অয়ন রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
অয়ন: রোদ কান্না থামাও। তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না রোদ প্লিজ।
রোদের অয়নের কথা কানে আসতেই হুস আসে। কান্না করতে করতে কি করে ফেলছে। রোদ আস্তে করে অয়নকে বলে।
রোদ: অয়ন ভাই সরি
অয়ন : সরি বলতে হবে না রোদ। আর এই ভাবে কান্না করো না প্লিজ।
মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে রোদ। তাঁরপর কিছু না বলেই চলে আসে ছাদ থেকে। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রোদ। নামাজ পড়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে রোদ।
এইদিকে শুভ্র সারাদিন বাসায় আসেনি। সকাল সকাল বাসায় ডুকছে রোদ সিঁড়ি দিয়ে নামছে৷ পিংক কালারের একটা সুতি থ্রি পিস পড়া। ওড়না আরাই প্যাচ দেওয়া। চেহারায় যেনো জ্বল জ্বল করছে। শুভ্র নিজের ধ্যান ভাঙতেই রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
রোদের সামনে এসে বলে।
শুভ্র : পাঁচ মিনিটের মধ্যে কফি নিয়ে আমার রুমে আয় রোদ। আর যদি এক সেকেন্ড লেট হয়তো। এক একটা থাপ্পড় খাবি। ফাস্ট
রোদ ভয়ে কেঁপে ওঠে। এখন আবার রুমে ডাকছে কেনো। আবার না গেলেও বিপদ।
রোদ তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে শুভ্রের রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে শুভ্র রুমে নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। ফ্রেশ হচ্ছে মনে হয়।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুচতে মুচতে বেড় হয়ে শুভ্র ওয়াশরুম থেকে। রোদ মাথা নিচু করে আছে।
শুভ্র ভেবে পায় না এই মেয়ে তার সামনে আসলেই মুখে তালা দিয়ে রাখে।
রোদ টেবিলে কফি রেখে যেতে যাবে এমন সময় শুভ্র রোদকে ডাকে। রোদের পা থেমে যায়।
শুভ্র বলে।
শুভ্র: রোদ দাঁড়া
রোদ শুভ্রের কথা শুনে পিছন ফিরে তাকায়৷ কিন্তু মুখে কিছুই বলে না। শুভ্র যেনো রাগটা আবার বেড়ে যায়। আজ এতদিন হলো আসছে। কিন্তু এই মেয়ে তার সামনে একটা কথাও বলেনি। তার সামনে আসলেই বোবা হয়ে যায়৷
শুভ্র আবার রোদের নাম ধরে ডাকে কিন্তু রোদ মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেড় হয়না। রাগে যেনো শুভ্রের শরীর জ্বলছে। রোদের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে এনে মুখ চেপে ধরে বলে।
শুভ্র: এতো তেজ না। আমার সামনে আসলেই মুখে তালা লাগিয়ে রাখিস। আর অন্য কারো সাথে তো ঠিকই হাঁসতে পারিস নাহ।
রোদের চোখ দিয়ে ব্যাথায় পানি গড়িয়ে পড়ছে।
শুভ্র ধাক্কা দিয়ে ধুরে সরিয়ে দিয়ে বলে।
শুভ্র : দূরে যাহ , আমার কাছ থেকে
রোদ চোখে পানি নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
সকাল ১০:৩০
ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো সবাই। এমন সময় আরাফ চৌধুরী বলে উঠে..
আরাফ: সবার সাথে একটা জরুরি কথা বলার ছিলো।
হেনা বেগম বলেন। কি বলবি জরুরি কথা বল।
আরাফ চৌধুরী সবার উদ্দেশ্য বলে উঠে।
আরাফ: আমি রোদের বিয়ে ঠিক করছি। আমার বিজনেস পার্টনের ছেলের সাথে। ছেলে একজন Cid অফিসার। অনেক ভালো ছেলে। আর কালকেই রোদকে তারা দেখতে আসছে।
হেনা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তাঁরপর বলে.
হেনা বেগম : কি বলছিস তুই আরাফ। তুইও কি শুভ্রের মতো পাগল হয়ে গেলি নাকি।
আরাফ চৌধুরী রাগি গলায় বলে।
আরাফ: আমি ঠিকই আছি মা। আর আমার কথার নড়চড় হবে না আর। এতদিন তুমি যা বলছো শুনেছি। কিন্তু আর না। আমি তোমাদের কারো মতামত জানতে চাইনি। আমি আমার মতামত জানালাম। আর আমি জানি রোদ মা আমার কথার অবাধ্য হবেনা।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৭
রোদের বিয়ের কথা শুনে যেনো বুকের ভিতর ধক করে উঠে। চোখে পানি টলমল করছে। মাথা নিচু করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো শুভ্র হেনা খান শুভ্রকে দেখে শুভ্রের কাছে যায়৷
তারপর বলে