বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১
রানী আমিনা
শিরো মিদোরি…..
একদা যেথায় হাজারো রঙে আবৃত প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে গেয়ে উঠত মৃদু সঙ্গীত, বর্তমানে সেখানটা ডুবে আছে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়!
সবুজ হারিয়েছে তার রঙ, বিবর্ণতায় ছেয়ে আছে গাছের পাতা। নির্জীব শাখাগুলো শূন্যে হাত বাড়িয়ে যেন ছুতে চাইছে কিছু, অথচ কিছুই নেই— নেই বাতাস, নেই কোনো শীতলতা!
সাগর হতে বয়ে আসা বাতাস হয়ে আছে উষ্ণ, হরিৎ বনভূমি বিবর্ণ। রঙ হারানো রেড জোনের ভেতর থেকে মাঝে মাঝেই ডেকে উঠছে শকুনের ঝাঁক, গাছের মগডাল হতে ভরদুপুরের নিরবতা ভেঙে ভেসে আসছে তাদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ।
আশি হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শিরো মিদোরির বিশাল রেড জোনের ভেতর বীরদর্পে, সমস্তকিছুকে ছাপিয়ে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদা রঙা এক প্রকান্ড প্রাসাদ, রঙ হারানো সবুজের ভেতর তাকে দেখাচ্ছে বেমানান!
গায়ে তার যেন ক্লান্তির ছাপ, যেন নিজের হৃদস্পন্দন হারাতে বসেছে সে। প্রকান্ড রাজকীয় বারান্দায় এই মুহুর্তে নেই কেউ, করিডোরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছেনা কোনো পদধ্বনি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অভ্যস্ত জীবন থেকে আচমকাই নতুন মানুষ, নতুন নিয়ম, নতুন শাসনের ভিড়ে হাপিয়ে উঠেছে দেমিয়ান প্রাসাদ, যেন এই প্রাসাদ, এই দ্বীপ এই আকস্মিক পরিবর্তন কিছুতেই গ্রহণ করতে পারছে না!
শিরো মিদোরি পেয়েছে নতুন বাদশাহ, চারদিকে ছেয়ে গেছে নতুন নতুন মুখে, কিন্তু তার আত্মা এখনো যেন খুঁজে ফিরেছে তারই প্রয়াত বাদশাহকে, তারই বেগমকে— যাদের নিষ্ঠুরতম অনুপস্থিতি এক অব্যক্ত শূন্যতা হয়ে হাহাকার করে চলেছে প্রাসাদের প্রতিটি কোণায় কোণায়! এক অদৃশ্য অতীত যেন অশরীরীর মতো ঘুরে ফিরে খুঁজে চলেছে তার বর্তমানকে।
দ্বীপের আকাশ এখনো নীল, সমুদ্রের ঢেউ এখনো নিয়ম করে আছড়ে পড়ছে তীরে। প্রাসাদের করিডোরে ছোট্ট ফুলের বাগানে থাকা রঙ বেরঙের ফুলের গাছ গুলোতে এখনো ফুটছে ফুল, সুগন্ধিতে ম ম করছে।
শুধু নেই সেই ফুলের মালকিন, নেই তার মালিক! নেই তাদের গর্বিত পদচিহ্ন, নেই সে রাজকীয় ছায়া, নেই সে ভালোবাসার স্পন্দন।
সাগরের ঢেউগুলো আজ গম্ভীর, বৃক্ষরাজি কাঁপে না আগের মতো৷ করিডোরের ছোট্ট বাগানে ফোটা প্রতিটি ফুলের গন্ধে, সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউয়ে এখনো ধ্বনিত হয় হয় তাদের নাম; অস্পষ্ট, কিন্তু অবিনশ্বর!
যে রয়্যাল ফ্লোরে কিছু বছর আগেও দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতো শিরো মিদোরির একমাত্র শেহজাদীর খিলখিলে হাসি, বাতাসে মিশে যেত পরাক্রমশালী বাদশাহর গুরুগম্ভীর ভারী কন্ঠস্বর— সেখানে এখন কেবলই এক নির্জীব নীরবতা।
কিন্তু এই ভরদুপুরেই দেমিয়ান প্রাসাদের রয়্যাল ফ্লোরের প্রকান্ড বারান্দায় হঠাৎ দেখা মিললো এক অবয়বের।
পেছনে হাত বেধে ধীরপায়ে হেটে চলেছে এক রাজসিক পুরুষ; দীর্ঘ, সুগঠিত অবয়ব।
শরীরের প্রতিটি রেখা জুড়ে তার শক্তিমত্তার প্রতিচ্ছবি, প্রশস্ত কাঁধ, দৃঢ় বুক, মসৃণ কিন্তু সুঠাম পেশি যেন এক শিল্পীর নিখুঁত সৃষ্টি।
ধারালো মুখাবয়বের ওপর খোদাই করা গভীর, তীক্ষ্ণ পার্পল রঙা চোখ জোড়া শিকারির মতো করে চেয়ে আছে। ঘন কালো, অবিন্যস্ত চুল গুলোর কিয়দংশ ছড়িয়ে আছে শুভ্র ললাটপরে।
খাড়া নাক ও শক্ত চোয়াল তার ব্যক্তিত্বকে করে তুলেছে আরও কঠোর, আরও অভিজাত। স্বল্প বাঁকানো ঠোঁট জোড়াতে খেলে চলেছে রহস্যময় হাসি। হয়তো সেটা তৃপ্তির হাসি, বিশাল সাম্রাজ্যের গদিতে অধিষ্ঠিত হওয়ার!
অবিকল প্রাক্তন বাদশাহর ন্যায় আদলের অধিকারী পুরুষটির সাথে প্রাক্তন বাদশাহর খুব অল্পই অমিল আছে। অমিলের ভেতর অত্যন্ত প্রকট বাহ্যিক অমিল হলো তার শরীরের বর্ণ।
প্রয়াত বাদশাহ যেখানে ছিলেন চন্দ্রহীন রাত্রির ন্যায় বর্ণের সেখানে তার বিপরীতে বর্তমান বাদশাহ সমুদ্রের তলদেশের শঙ্খের শুভ্রতার ন্যায়।
বর্ণের সাথে সাথে তাদের মনস্তাত্ত্বিক অমিলটাও ঠিক আমাবস্যা আর পূর্ণিমার রাতের মতোই— কখনোই হয়তো মেলবার নয়।
দীর্ঘকায় সুপুরুষটি হাটতে হাটতে করিডোরের ফুলের বাগানের নিকট গিয়ে থমকালো কিছুক্ষণের জন্য, মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে রইলো রঙিন ফুলগুলো। কেমন যেন নিষ্প্রাণ, এত রঙে রঙিন থাকা সত্বেও যেন জীবন নেই তার!
এমন সময় রয়্যাল ফ্লোরের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো হেরেমের দাসীদের প্রধান নিয়ন্ত্রক, ইয়াসমিন। অত্যন্ত বিনীত পদক্ষেপে হেটে, আনত নয়নে এগিয়ে এসে সে দাড়ালো সুপুরুষটির থেকে নির্দিষ্ট দুরত্বে। মৃদুস্বরে আনুগত্যপূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, কিমালেবের কন্ট্রোলার ফাইসাল আমির আপনার জন্য কিছু দাসী উপহার পাঠিয়েছেন৷ আপনি যাকে……”
বাকি কথা শেষ করতে পারলোনা ইয়াসমিন। তার পূর্বেই শিরো মিদোরির বর্তমান বাদশাহ জাজিব ইলহান দেমিয়ান বলে উঠলো,
“আমার দেখার প্রয়োজন নেই ইয়াসমিন৷ তুমি এখানে অনেক দিন ধরেই আছো, মেয়েদের ন্যাচার সম্পর্কে তুমি বেশি ভালো ধারণা রাখো। তোমার যাকে ভালোলাগে আজ রাতের জন্য তাকেই প্রস্তুত করে নিয়ে এসো।”
“আপনি যা বলবেন ইয়োর ম্যাজেস্টি।”
বলে আনুগত্য জানিয়ে ইয়াসমিন রয়্যাল ফ্লোর থেকে প্রস্থান করার উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ালো৷
বারান্দার বিরাট প্রবেশদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বুক চিরে উঠে এলো তার।এই দেমিয়ান প্রাসাদ, যে প্রাসাদে তার বেড়ে ওঠা এক শুভ্র মানবী আর তার কৃষ্ণবর্ণের পুরুষের ছায়াতলে, সেই প্রাসাদ আজ তার নিকট বিষের ন্যায়।
শুধু পার্থক্য এটুকুই, প্রকৃত বিষে প্রাণীর তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয় কিন্তু এই বিষ তাকে তিলে তিলে মারছে, রোজ অল্প অল্প করে মরতে হচ্ছে তাকে!
তিনটি বছর, দীর্ঘ তিনটি বছর ধরে সে মাতৃহারা, পিতৃহারা! তার আদরের ভাইগুলো কে কোথায় আছে সে জানেনা। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ‘দ্যা রয়্যাল জ্যু’ নামক কামরাটি এখন জাজিব ইলহানের দুজন খাসবাদীর দখলে। কামরার এতদিনের ঐতিহ্যবাহী নামটাও আজ কালের পরিক্রমায় মিলিয়ে গেছে।
তার প্রচন্ড হাসিখুশি পরিবারটা আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোথাও কেউ নেই আজ তার, এত বিরাট প্রাসাদে আজ সে একা, সম্পুর্ন একা!
ইয়াসমিন দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতেই রয়্যাল ফ্লোরে বাদশাহর জন্য নির্ধারিত কামরার সম্মুখে দন্ডায়মান, ইলহানের ব্যাক্তিগত দেহরক্ষী ধীরপায়ে এগিয়ে এসে দাড়ালো ইলহানের পাশে। ইলহান ফুলগুলোকে দেখছিলো তখনো, দৃষ্টি না তুলেই বলল,
“বলো ইযান।”
ইযান নামক যুবকটি কিছুটা ইতস্তত করে অতঃপর গলা খাকারি দিয়ে বলল,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, হেরেমে গুলবাহার নামক একটা মেয়ে আছে শুনেছেন হয়তো। মেয়েটি দারুণ সুন্দরী। শেহজাদা নামীর আসওয়াদ তাকে বহির্বিশ্ব থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আপনি চাইলে ত……”
“বয়স কতো?”
ইযানের কথা শেষ করতে না দিয়েই শুধালো ইলহান, ফুলের দিক থেকে দৃষ্টি তুলে রাখলো ইযানের মুখের ওপর। ইযান কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“হবে হয়তো, তেইশ বা তার বেশি।”
“আঠারোর ওপরে চলবেনা ইযান। আর তা ছাড়া সে বহির্বিশ্বের মেয়ে, তার গর্ভে আমার সন্তান এলে সেও শেহজাদী আনাবিয়া ফারহার মতো জেদী, রাগী, তেজি হবে। এই রিস্ক আমি কখনোই নিবোনা।”
পরক্ষণেই আবার শরীর ঘুরিয়ে ইযানের দিকে ফিরে ইলহান শুধালো,
“কেমন সুন্দরী?”
“আমি একদিন ইয়াসমিন কালবীর সাথে দেখেছি তাকে, প্রচন্ড সুন্দরী মনে হয়েছে আমার কাছে।”
ইলহান দুকদম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“শেহজাদীকে দেখেছো কখনো?”
“নেগেটিভ ইয়োর ম্যাজেস্টি, এই সৌভাগ্য কখনো হয়নি।”
ইলহান একটা বড় শ্বাস ফেলে কামরার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
“গুলবাহার কে একবার আমার সামনে নিয়ে এসো, যদি সে শেহজাদী আনাবিয়া ফারহার থেকেও সুন্দরী হয় তবে আমি তাকে গ্রহণ করবো।”
সমুদ্র তীরের কোল ঘেঁষে থাকা সেইফ জোনের ভেতর অবস্থিত ওয়ার্কিং জোন পুরোপুরি নিস্তব্ধ! সকলেই যে যার কাজ করে চলেছে নিরবে। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই৷
ওয়ার্কিং জোনকে ওয়ার্কিং জোনের মতো করেই ছেড়ে দিয়েছেন বাদশাহ ইলহান, এদিকে তার কোনো মনোযোগ নেই। তার ভাইয়ের তৈরি কোনো নিয়মকানুনই সে রাখতে চায় না, তাই আসামী দেরকে ভালো হওয়ার সুযোগ দেওয়ার চাইতে মরতে দেওয়াই তার নিকট বেশি পছন্দনীয়।
বর্তমানে ওয়ার্কিং জোন তাই ছেয়ে গেছে অরাজকতায়।
এখানের আসামীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। গত তিন বছরে কতগুলো আউটসাইডার তাদের হাতে খুন হয়েছে গোনাগুনতি নেই।
সেখানে এখন তাদেরকে দেখাশোনার জন্য, তাদের নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেউ নেই। শুধুমাত্র মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রাসাদ থেকে নামমাত্র রেশন যায় সেখানে, সেটাও পরিমাণে খুবই সামান্য!
সেইফ জোন এবং রেড জোনের ভেতরের কাটাতারের বেড়া গুলো অনেক আগেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। ব্লু জোনে নেই কোনো গার্ড, নেই কোনো নিরাপত্তা। রেড জোনের খতরনাক প্রাণী গুলোর কিছু অংশ তাই এখন মাঝে মাঝেই হানা দেয় সেইফ জোনের ভেতর৷
খাবারের অভাব, পোশাকের অভাব, নিরাপত্তার অভাব সবকিছু মিলিয়ে তাই সেইফ জোনের বাসিন্দারা এখন হয়ে উঠেছে হিংস্র।
রেড জোনের ভার সম্পুর্ন শেহজাদীর ওপর হওয়ায় এই ভেঙে যাওয়া বর্ডার সারিয়ে তুলতে অপারগ ইলহান। লাইফট্রি শেহজাদীকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আর কোনো সাড়াশব্দই দেয়না, নির্জীব হয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে রেড জোনর ভেতর।
দেমিয়ানদের ইতিহাসে বাদশাহ পরিবর্তনের ন্যায় ঘটনা এখনো পর্যন্ত কখনো ঘটেনি, তাই এর ফলাফল কি জানেনা ইলহান, ঘাটাঘাটিও করতে যায়নি সে। লাইফট্রি কখনো তার আহ্বানে সাড়া দিবে কিনা সেটাও তার অজানা। তাই আপাতত সম্পুর্ন শিরো মিদোরিই পরিণত হয়েছে এক রেড জোনে৷
অ্যানিম্যাল টাউনেও এসেছে অরাজকতা৷ ভাগাভাগি হয়ে গেছে এতদিনের একত্রে থাকা পশুকূল। কারণে অকারণেই তারা নিজেদের ভেতর কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে যখন তখন!
ঠিক পূর্বের ন্যায়, যখন তাদের মাথার ওপর ছিলোনা কোনো মালিকের ছায়া, তারা ছিলো মুক্ত স্বাধীন, জংলীর ন্যায়!
সেইফ জোনের ভেতর এই মুহুর্তে বিক্ষিপ্তাবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দলে দলে কাজ করছে কয়েক দল ছেলেমেয়ে, নারী পুরুষ। আর অন্য কয়েকদল বসে আছে ডাইনিং এরিয়া ও লাইব্রেরি এরিয়া জুড়ে।
সেইফ জোনের বাসিন্দারা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে গেছে দুভাগে। একদল হয়ে উঠেছে এখানের এলিট শ্রেণী, অন্যদল হয়েছে এলিট শ্রেণীর দাস।
ভয়ানক আসামী গুলো স্থান পেয়েছে এলিট শ্রেণিতে, আর সাধারণ আসামী গুলো পরিণত হয়েছে তাদের দাসে। এলিট শ্রেণী এদের নাম দিয়েছে মাইল্ড প্রিজনার্স।
বর্তমানে এলিট শ্রেণীদের নির্যাতনের শিকার এই মাইল্ড প্রিজনার্স গুলোই দলে দলে ছড়িয়ে কাজ করে চলেছে ওয়ার্কিং জোনে। এবং এলিট শ্রেণীর প্রধান থিয়োডর ব্রাউন তার ছেলেদের দিয়ে তদারকি করছে যেন মাইল্ড প্রিজনার্স গুলোর একটাও কাজে ফাঁকি দিতে না পারে৷
শার্লট এবং ফাতমা বর্তমানে রাতের রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ ওদের সাথে আউটসাইডার্স এবং ওয়ার্কার্স মিলে যোগ দিয়েছে আরও বেশ কিছু মানুষ।
ব্রায়ান তার সাথে একদল ছেলেকে নিয়ে সম্পুর্ন সেইফ জোন পরিষ্কার করছে। দুপুরের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ এলিট শ্রেণীরা ফেলে রেখে গেছে যেখানে সেখানে। কাজটা তারা প্রতিনিয়ত ইচ্ছে করেই করে যেন মাইল্ড প্রিজনার্স দেরকে আরও বেশি সময় খাটানো যায়।
ব্রায়ান শার্লট দুজনেই এলিট প্রিজনার্স দের ভেতরেই ছিলো। থিয়োডর নিজেই নিয়েছিলো ওদের দুজনকে। কারণ হিসেবে দেখা যায় ব্রায়ানকে থিয়োডর সমঝে চলে বেশ। ব্রায়ান ছেলেটা চুপচাপ থাকলেও প্রচুর হিংস্র, হঠাৎ হঠাৎই ক্ষেপে যাওয়া তার অন্যতম স্বভাব। তাই ব্রায়ানকে কোনো ভাবেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বানাতে চায়নি থিয়োডর৷
কিন্তু এলিট শ্রেণীর এমন নির্মমতা আর নির্যাতন লক্ষ্য করে ব্রায়ান নিজেই শার্লটকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে এলিট শ্রেণী থেকে। বর্তমানে মাইল্ড প্রিজনার্সদের হয়েই ওয়ার্কিং জোনে কাজ করে চলেছে সেও৷
কিন্তু ব্রায়ান মাইল্ড প্রিজনার্সদের গ্রুপে চলে যাওয়ার পরও থিয়োডর তাকে ঘাটায় না৷ অন্যদের ওপর যতযা-ই করুক ব্রায়ানের ওপর কোনোভাবেই ছড়ি ঘুরাতে যায়না সে।
কিচেনে অন্যদেরকে রান্নার প্রস্তুতিতে লাগিয়ে দিয়ে শার্লট আর ফাতমা বের হয়েছে পানির ব্যাবস্থা করতে। কিচেনের পেছনেই তাদের পানি সংগ্রহের স্থান। পর পর সারি সারি বসানো ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করার জন্য দুটো বিশাল বিশাল সাইজের কন্টেইনার বটোল নিয়ে ওরা এগোলো কিচেনের পেছন দিকে।
পানির এরিয়ার থেকে কিছুটা দূরেই মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় ফলের গাছ। এ সমস্তই ব্রায়ান আর অ্যানার হাতে লাগানো।
অ্যানার হাতে লাগানো গাছ গুলো ফলের ভারে নুইয়ে পড়ছে, ব্রায়ানের গুলোতে নেই কোনো ফল; শুধু ব্রায়ানের হাতে লাগানো নয়, কোনো গাছেই বর্তমানে ফল নেই। থাকলেও খুবই স্বল্প! শুধুমাত্র অ্যানার হাতের ছোয়া লাগানো গাছ গুলোতেই যেন বাম্পার ফলন ধরেছে।
পানির বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়ানো শার্লট ফল গুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে ঢোক গিললো একটা। সকাল থেকে শুধুই একটা রুটি খেয়েছে সে। দুপুরে কিছুই জোটেনি, এলিট ওয়ালারাই সব খেয়ে ফেলেছে।
ক্ষিদেয় পেটটা চো চো করছে এখন ওর, আর এ সময়ে এমন টসটসে ফল দেখে ক্ষিদেটা যেন মোচড় দিয়ে উঠছে পেটের ভেতর।
ফাতমা গ্যালন বোটল গুলোর মুখ খুলে সামান্য ঝুকে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে শার্লটের দিকে তাকালো, শার্লটকে ফল গুলোর দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া হলো ওর খুব!
ছোট মেয়েটা ক্ষিদে সহ্য করতে পারেনা, ব্রায়ান নিজে না খেয়ে বোনকে খাওয়ায়। আর সেখানে আজ একটা ছোট পোড়া রুটি আর এক গ্লাস পানি ছাড়া মেয়েটির পেটে কিছুই পড়েনি!
সোজা হয়ে দাড়ালো ফাতমা, সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে একবার তাকিয়ে শার্লটের দিকে ঝুকে চাপা সুরে জিজ্ঞেস করলো,
“ফল পেড়ে দেবো? খাবি?”
ফাতমার কথায় চমকে তাকালো শার্লট, ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“এলিটরা দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে ফাতমা! জানোই তো ওরা ছাড়া ফল খাওয়ার কারো রাইট নেই! আর ভাইয়া শুনলে খুব রাগ করবে, জানোই তো ভাইয়া ওদের দুচোখে দেখতে পারেন!”
“কিচ্ছু হবেনা, তুই এদিকে নজর রাখ আমি পেড়ে দিচ্ছি। জামার তলে লুকিয়ে ফেলবি, কেউ দেখতে পাবে না।”
শার্লট দ্বিধায় পড়লো৷ একদিকে পেটের ভেতর ক্ষিদের চোটে ঘুর্ণিঝড় বয়ে চলেছে, অন্যদিকে এলিটরা। যদি দেখে যে মাইল্ড দের কেউ ফলের গাছ হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে তবে তার বিচার বসানো হবে সাথে সাথেই! শাস্তি কি হবে সেটা শুধু মাত্র থিয়োডরই জানে! তার মনমর্জি মতো শাস্তি দেওয়া হবে।
শার্লট শুকনো মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবনায় মশগুল হয়ে গেছে দেখে ফাতমা বলল,
“চিন্তা করিস না, কিচ্ছু হবে না। আমি গাছে উঠতে পারি দ্রুত, এই উঠবো আর এই নামবো, কেউ দেখবে না৷ এলিন মেয়েটা গর্ভবতী, ওকেও কয়েকটা দেওয়া যাবে। বেচারি বাচ্চা পেটে নিয়েও খাবার জন্য কিছু পায়না!”
ফাতমা আর শার্লটের সম্মতির অপেক্ষা করলো না, এগিয়ে গিয়ে তরতর করে উঠে পড়লো গাছে। গাছগুলো বেশি লম্বা নয়, মাঝারি। তবুও বেশ খানিকটা!
শার্লট ফাতমার গাছে ওঠার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ ওর খুব করে মনে পড়লো অ্যানার কথা! দুটো বছর যে ওরা সবাই পঞ্চদ্বীপের শেহজাদীর সাথে কাটিয়েছে ভাবলেই ওর অবাক লাগে।
এই জন্যই শার্লট ভাবতো, এত সুন্দরী, এতটা বোল্ড, এতটা তেজী, জেদি, একরোখা মেয়ে কিভাবে ওদের কাছে এসে পড়লো? ওর মনে পড়ে অ্যানার সেই মডেলদের ন্যায় কোমর দুলিয়ে মাথা উঁচু করে সোজা হেটে চলে, যেন পৃথিবীর কাউকে সে পরোয়া করেনা।
এই চলার ভঙ্গিমার জন্য আড়ালে আবডালে কত কথাই না শুনিয়েছে মেয়েরা ওকে! সবাই বলতো, ভাব দেখে মনে হয় পঞ্চদ্বীপের শেহজাদী। কিন্তু সত্যি সত্যিই সে যে শেহজাদীই বের হবে সেটা তো ওরা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেনি!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শার্লট। আজ অ্যানা ওদের মাঝে থাকলে এসব কিছুই হতোনা। শার্লটের ক্ষিদে পেয়েছে শুনলে সে এই শিরো মিদোরির সমস্ত ফল এনে জড়ো করে ফেলতো ওর সামনে!
এ কাজও করা লাগতো না, অ্যানা থাকলে থিয়োডর কখনো এসব করার সাহসই পেতোনা, অ্যানার একটা চাহনিই যথেষ্ট হতো থিয়োডরকে দমিয়ে ফেলার জন্য!
শার্লট ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে চারদিকে নজর বুলালো, যেন কেউ হুট করে চলে না আসে৷ ফাতমা গাছে উঠে বেশ কয়েকটা ফল পেড়ে ছুড়ে দিলো নিচে, শার্লট সাথে সাথেই সেগুলো দু’হাতে কুড়িয়ে নিয়ে নিলো নিজের পোশাকের ভাজে। ভালো ভাবে আড়াল করলো যেন কেউ দেখলেও বুঝতে না পারে।
ফাতমা আবার তরতরিয়ে নেমে এলো সেখান থেকে। নামতে গিয়ে হাতের কাছে খানিকটা ছিলে গেছে, কিন্তু শার্লটের মুখের হাসির কাছে এই সামান্য ব্যাথা কিছুই না।
বটোল গুলো প্রায় ভরে এসেছে। এগুলো দুজনে মিলে একটা একটা করে নিয়ে যাবে। ভারী বোতল গুলো একা একজন নারীর পক্ষে ওঠানো সম্ভব না।
ফাতমা বোতলের মুখ গুলো হাতে তুলে নিতে নিতে বলল,
“এখানে কেউ নেই, একটা খেয়ে ফেলা। বাকিগুলো মাঞ্জারে গিয়ে খাস৷”
শার্লট খুশি হলো প্রচন্ড। পোশাকের ভাজের ভেতর থেকে একটা ফল বের করে ট্যাপের পানিতে ধুয়ে নিলো ও, চকচক করে উঠলো চোখ জোড়া। ক্ষিদেটা আরও বেড়ে গেলো যেন।
কিন্তু ফলটা ধুয়ে মুখে দেওয়ার আগেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো ইলোরা, থিয়োডরের বর্তমান প্রেমিকা।
শার্লটের হাতে ধৌত করা ফলটা দেখা মাত্রই ভ্রু কুচকে এলো ইলোরার। মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে ও এগিয়ে এলো শার্লটের দিকে।
ইলোরাকে দেখা মাত্রই জমে গেলো শার্লট আর ফাতমা। হাতের ফল ওর হাতেই রয়ে গেলো, ঠোঁটস্পর্শ করলো না। সাক্ষাৎ ডাইনী টা নেমে এসেছে যেন ধরায়।
ইলোরা এসে শার্লটের হাত থেকে ফলটা ছো মেরে নিয়ে বলে উঠলো,
“ফল ছিড়েছো!? সাহস তো কম নয় তোমার!”
নিরুত্তর রইলো শার্লট, এই মুহুর্তে হঠাৎ ইলোরা চলে আসবে সেটা ও ভাবেইনি! শার্লটকে চুপ থাকতে দেখে ইলোরা আবার বলল,
“ফ্রুটসের ওপর শুধুমাত্র এলিটদের অধিকার আছে এটা কি তুমি জানোনা শার্লট? তোমার ভাই তোমাকে এত কিছু শিখিয়েছে, তোমাকে বলে নাকি সবচেয়ে ইনোসেন্ট আর ভদ্র মেয়ে, এই তার নমুনা? অন্যের জিনিস চুরি করে খাচ্ছো?”
শার্লটের শুকনো মুখটা আপনা আপনিই নত হয়ে গেলো, যে ক্ষিদেটা পেয়েছিলো সেটা ইলোরার কথাতে নিভে গেলো একদমই। ইলোরা আপাদমস্তক শার্লটকে আর একবার দেখে নিয়ে এগিয়ে এসে শক্ত হাতে শার্লটের শরীর হাতড়াতে হাতড়াতে বলল,
“দেখি, আর কতগুলো নিয়েছো?”
শার্লটকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতড়াতেই বেরিয়ে এলো আরও পাঁচ ছয়টি ফল। ধুপ ধাপ করে সেগুলো পড়ে গেলো মাটিতে। ইলোরা সেদিকে তাকিয়ে ভর্ৎসনার গলায় বলে উঠলো,
“ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এমন আদর্শবান ভাইয়ের বোন কিনা শেষ পর্যন্ত ফল চুরি করলো?
তোমার তো খুব ক্ষিদে দেখছি! সকালেই না একটা আস্ত রুটি গিললে? আর এখন দুপুর পার হতে না হতেই আবার গেলার ডাক এসেছে? একটা না দুইটা না এত্তগুলো ফল! সেটাও আমাদের! লজ্জা করেনি ফলের গাছে হাত দিতে?”
শেষোক্ত কথাটা তাচ্ছিল্যের সাথে ঘৃণাভরে বললো ইলোরা। নত মুখে থাকা শার্লটের চোখের কোণে পানি এসে ভিড় করলো সাথে সাথেই৷ ফাতমা এগিয়ে এসে শার্লটের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওর কোনো দোষ নেই ইলোরা, ফল গুলো আমিই পেড়েছি। ও শুধু কুড়িয়েছে। আপনি যা বলার আমাকে বলুন।”
“আরে বাবা! ফ্রেন্ডশিপ! প্রাণের বন্ধুর দোষ কত সুন্দর ভাবে নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিলো, ইশ, অনেক বড় মন!”
ফাতমার দিকে দুকদম এগিয়ে এসে আবার বলল,
“শুনো ফাতমা, আগেই একদিন তোমাদেরকে সাবধান করেছি, যে আমার সাথে চালাকি করতে আসবেনা। আমি ইলোরা, থিয়োডরের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড!
এর আগের বার তোমরা আমাকে শেহজাদীর মাঞ্জারের পোশাক চুরির অপবাদ দিয়েছিলে না? এবার তোমাদের দুজনকে আমি শায়েস্তা করবো। শাস্তি আজ তোমরা দুজনেই পাবে, তুমি পাবে ফল পাড়ার শাস্তি, আর শার্লট পাবে ফল কুড়ানোর শাস্তি!”
তীক্ষ্ণ চোখে ফাতমার দিকে তাকিয়ে বলল ইলোরা। শার্লট এতক্ষণ চুপ করে শুনলেও এবার চোখের পানি মুছে হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
“এগুলো শেহজাদীর হাতে লাগানো গাছ, এতে তোমার বা তোমাদের একচেটিয়া কোনো অধিকার নেই৷ এটা সবার! আর আমি কোনো চুরি করিনি, নিজের ন্যাজ্য অধিকার আদায় করেছি।”
“চুরি করেছো আবার বড় বড় কথা!”
ফাতমার দিক থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে শার্লটের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইলোরা, কিছুক্ষণ শকুনি চীখে তাকিয়ে থেকে ফল গুলো নিয়ে ঘুরে চলে যেতে নিলো আবার মিটিং জোনের দিকে।
“আসল চোর তো তুমি! আমরা না হয় আজ পেটের দায়ে ফল চুরি করেছি, আর তুমি কি করেছিলে?
থিয়োডরের সাথে ডেট করার জন্য শেহজাদীর পোশাক চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলে, আবার বলো আমরা নাকি অপবাদ দিয়েছি!
সেদিন এ কথা থিয়োডরের কানে গেলে তোমাকে প্রেমিকা বানানো তো দূর, তোমার দিকে ফিরেও তাকাতোনা! চোর কোথাকার! কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ ধরা খাওয়ার পরও সেই পোশাকই আবার চুরি করে নিয়ে আসে!
সেই চুরির পোশাক পরেই তো তুমি থিয়োডরের সামনে গেছিলে, জানিনা ভেবেছো? তোমার যে যোগ্যতা আর স্বভাব তাতে তোমার কারণে শেহজাদীর পোশাকটাই অপবিত্র হয়ে গেছে!”
ফাতমা শার্লটকে চুপ করাতে চাইলো, কিন্তু শার্লট চুপ হলোনা, কন্ঠে তেজ মিশিয়ে আবারও বলে উঠলো,
“আজ যদি তুমি এই ফলের ইস্যু নিয়ে কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করো তবে আমিও থিয়োডরকে বলে দেবো শেহজাদীর পোশাক চুরির কথা! গার্লফ্রেন্ড গিরি বেরিয়ে যাবে, জুতোর বাড়ি মেরে তোমাকে দূর করে দেবে থিয়োডর!”
শার্লটের কথাতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো ইলোরা, এইটুকু মেয়ের মুখে এত বড় কথা! ওকে নাকি বলে চোর! ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে খিচিয়ে বলে উঠলো,
“কি বললি তুই আমাকে? আমি চোর, না? জুতোর বাড়ি দিয়ে থিয়োডর বের করে দিবে আমাকে?”
“হ্যাঁ, তুমি চোরই! থিয়োডর ব্যাতিত এখানের সবাই জানে তুমি শেহজাদীর পোশাক চুরি করেছিলে, কিন্তু তোমার এই জঘন্য ডাইনী স্বভাবের জন্য কেউ থিয়োডর কে কিছুই বলেনি, যদি আবার ডাইনীর মতোন সত্যি রক্ত চোষা শুরু করো তবে তো আর সেইফ জোনেও কেউ বাঁচতে পারবে না।
থিয়োডরের উচিত তোমাকে ধরে জুতার বাড়ি মেরে রেড জোনে রেখে আসা, তুমি সেটারই যোগ্য, আর সেখানেই তুমি তোমার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বংশধরদের খুঁজে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
“এত সাহস তোর! আমি ডাইনী, না? বেয়াদব মেয়ে!
আজ তোর একদিন কি আমার একদিন! কে কাকে বের করে আমিও দেখবো। তোকে যদি আমি আজ রেড জোনের ভেতর ফেলে কুকুর দিয়ে না খাইয়েছি তবে আমার নামও ইলোরা নয়! চল আমার সাথে, তোর ফম খাওয়ার শখ জনমের মতো আজ বের করে দেবো!”
দাঁতে দাঁত চেপে খপ করে শার্লটের হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং এরিয়ার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল ইলোরা। শার্লট মাটিতে পা চেপে ধরে আটকে থেকে হাতটা ছাড়াতে চাইলো ইলোরার হাত থেকে, কিন্তু ইলোরার শক্ত মুষ্টি থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হলো পুরোপুরি।
শার্লটকে এভাবে টেনে নিয়ে যেতে দেখে ফাতমাও ছুটলো ইলোরার পেছন পেছন। কন্টেইনার বটোল গুলো ওভাবেই পড়ে রইলো সেখানে।
